রকিঙ কে অ্যান্টিলৌপ এর একটা খুঁজের ভিতর। বিশাল স্প্যানিশ স্টাইলের একটা বাড়ি। কটনউড গাছগুলোর ভিতর তৈরি। পাশেই বিরাট একটা গুদাম ঘর। পাশে এক সারি করাল। সামনে একটা বিরাট পুকুর। ওটার পানি একেবারে স্বচ্ছ। টপারের পিপাসা পেয়েছে। পানিতে নাক ডুবিয়ে সে তৃষ্ণা মেটাল। দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজে মুখ তুলে চাইল রনি।
একটা মেয়ে হরিণীর মত লঘু পায়ে ওর দিকে এগিয়ে আসছে। ব্রাউন চুল, কিন্তু সূর্যের আলোয় একটু যেন লালচে আভা ছড়াচ্ছে। বয়স সতেরো হবে। অপূর্ব সুন্দরী। কেটি যা বলেছিল তা সম্পূর্ণ সত্যি।
মেয়েটা হাসল, ওর সবুজ চোখ দুটো রনিকে খুঁটিয়ে দেখছে। তুমিই ড্যাশার? বেন তোমাকে বলতে বলেছে, একটা বাঙ্ক বেছে নিয়ে জিনিস-পত্র রেখে, এলাকাটা একটু ঘুরে দেখতে। রেঞ্জের অন্য মাথায় গেছে সে, ফিরতে রাত হবে। বলেছে, তুমি হয়তো র্যাঞ্চটার সাথে কিছুটা পরিচিত হতে চাইবে।
ধন্যবাদ। রনি হাসল। ঠিকই বলেছে বেন। এলাকার সাথে পরিচিত না হতে পারলে কারও স্বস্তি পাওয়ার কথা নয়। তোমাদের কি অনেক গরু আছে?
ওর হাসিটা উবে গেল। এক সময়ে ছিল, কিন্তু এখন আর নেই। তবু বেশ কয়েক হাজার হবে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই চুরি শুরু হয়েছে।
শুনেছি। কিন্তু কর্মচারীরা এটা থামাবার চেষ্টা করে না?
ওরা চেষ্টা করেছিল ঠিকই, কিন্তু যারা চেষ্টা করল, তারা বেশিদিন টিকল না। পটাপট মারা পড়ল। মেয়েটার স্বরে তিক্ততা। এই র্যাঞ্চে একজন শক্ত ফাইটিঙ ফোরম্যানের দরকার। যে এটাকে সত্যিই চালাতে পারবে।
হয়তো। আবার হয়তো না। ওই ধরনের জিনিসে অনেক ঝামেলা আসতে পারে, যদি তোমার ফোরম্যানের ভাল বিবেচনাও না থাকে।
শেলী যদি সব সময়ে বেন-এর পক্ষ না নিত তাহলে আমরা একজন পেতাম। মেয়েটার চোখ দুটো জ্বলে উঠল। জেরি সমার্সকে কাজে নেয়ার জন্যে বেনকে আমি বহুবার বলেছি। উপযুক্ত লোক। সবাইকে ঠাণ্ডা করতে ওর বেশি সময় লাগত না। তখন আর কেউ আমাদের ওপর কথা বলতে পারত না।
সমার্স? অবাক হলো রনি। সতর্ক নজরে মেয়েটাকে দেখল সে। হয়তো কাজটার জন্যে ও-ই ঠিক মানুষ হবে। কিন্তু আমার তা মনে হয়নি, ম্যাম। অবশ্য আমি এখানে নতুন। লোকটা কি করে?
করে? মুহূর্তের জন্যে হতবুদ্ধি হয়ে রনির দিকে চেয়ে থাকল লিসা। কি বোঝাতে চাচ্ছ?
ওর পেশাটা কি? ও কি কাউহ্যাণ্ড?
হ্যাঁ, ওই কাজও করেছে সে। কিন্তু বর্তমানে কিছু করছে না।
বোঝার ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল রনি। বুঝলাম। টপারের পিঠ থেকে জিন নামাল সে। হ্যাঁ, ওটা খুব ভাল পেশা-কিন্তু ওতে টাকা নেই। মানুষ ওটা বেশিদিন করতে পারে না। টাকা ফুরিয়ে যায়। অন্য কোন পেটের ধান্ধা করতে হয়। কিন্তু হয়তো ওর বেশি টাকার প্রয়োজন নেই-বন্ধু-বান্ধবের থেকেই সেটার ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে।
মেয়েটা খেপে উঠল। কী? কেন, ওর সম্পর্কে এমন একটা কথা তুমি কিভাবে বললে?
নিষ্পাপ চেহারা রাখার চেষ্টা করল রনি। কঠিন কথাটা সে কেন যে বলেছে, তা সে নিজেও জানে না। মুহূর্তের জন্যে তার খারাপ লাগল।
কে জানে? জেরি সমার্স হয়তো এই সমাজের একজন মাথাও হতে পারে। কিন্তু ওর সহজাত প্রবৃত্তি বলছে লোকটা নীচ। এমন মনে হওয়ার বিশেষ কোন কারণ নেই–তবু মনে হচ্ছে।
হয়তো আমি ভুল বলেছি, ম্যাম। আন্তরিক হৃদ্যতার সাথেই বলল সে। কিন্তু মানুষের পেট চালাবার জন্যে সবাইকেই কিছু না কিছু করতে হয়। সে কাউবয়ের কাজ করে কোথাও, বা র্যাঞ্চের মালিক, প্রসপেক্টার, কিংবা মাইনে কাজ করে, বারটেণ্ডার কিংবা আর কিছু। ওর কিছু একটা রোজগার থাকতেই হবে। নইলে কারও পেট চলে না। জানি না, হয়তো ওর অন্য কোন আয় আছে।
নিরাসক্ত চাহনিতে রনির দিকে তাকাল লিসা। ওর প্রিয় লোক জেরি ওর ভাইয়ের বিরক্তির কারণ-আর বোনের দুশ্চিন্তা। কিন্তু যে যাই বলুক তুষোড় গানম্যান জেরিকে ওর ভাল লাগে। কাউকে ভয় পায় না, অথচ হাসি-খুশি। ভাইয়ের মত মনের জোরের কমতি ওর নেই। লিসার মনে জ্বালা, কারণ সবাই ওদের র্যাঞ্চ লুটেপুটে খাচ্ছে–ওর ভাই কিছু করছে না।
ওদের তিনজনেরই র্যাঞ্চে সমান শেয়ার আছে। সেটা বেন দিয়েছে। কিন্তু বোন শেলী সব কিছুতেই ভাইয়ের পক্ষ নেয়। এতে যে ওর মনের ভিতরে আগুন ধরে যায়, সেটা কেউ বোঝে না। র্যাঞ্চে চুরি হচ্ছে, কিন্তু ভাই কিছুই করছে না।
তোমার ঘোড়াটা সত্যিই চমৎকার। প্রসঙ্গ পাল্টাল সে।
সত্যিকার সন্তুষ্টির সাথে মাথা ঝাঁকাল রনি। ওঁর চেয়ে ভাল ঘোড়া আর হয় না। আজ পর্যন্ত অনেক ঘোড়াই আমি চড়েছি। অনেক মানুষের থেকে ওর বেশি বুদ্ধি।
তুমি কি অনেকদিন থাকবে? নাকি বেন তোমাকে কেবল গরু জড়ো করার জন্যে কাজে নিয়েছে?
সেটা আমি নিজেও ঠিক জানি না, জানাল রনি। ওই বিষয়ে আমাদের কোন কথা হয়নি। শুনলাম ওর লোক দরকার তাই কাজের জন্যে ওকে বললাম-সে’ও রাজি হয়ে গেল।
তুমি কি জানো আমরা কিছু লোক হারিয়েছি? প্রশ্ন করল লিসা। বেন তোমাকে বলেছে?
হ্যাঁ, সে এবং আরও কয়েকজনে বলেছে। রোদে উজ্জ্বল পাহাড়গুলোর দিকে চেয়ে লম্বা একটা বড় শ্বাস নিল রনি। তবে আমার বিশ্বাস সব রেঞ্জেই কিছু না কিছু ঝামেলা থাকে।
জিনটা বয়ে নিয়ে শেডের ভিতর নির্দিষ্ট জায়গায় ঝুলিয়ে রাখল রনি। বর্তমানে কতজন লোক কাজ করে এখানে?
মাত্র পাঁচজন। একটা সময় ছিল যখন বারো থেকে বিশজনও এখানে কাজ করেছে। লিসার স্বরটা একটু তেতো। এটাই এখানকার সব থেকে বড় র্যাঞ্চ।
ওরা কি এখানে অনেক দিন থেকে আছে?
মাত্র দু’জন। টেরি আর হ্যারি। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই টেরি আছে। হ্যারি এসেছে বছর চারেক আগে।
আর বাকি তিনজন?
তোমাকে ওদের সাথেই কাজ করতে হবে–তুমি নিজেই বিচার করে নিতে পারবে। ওরা সবাই ভাল, আর কাজের লোক বলেই আমার বিশ্বাস। কিড লেকার মাত্র দু’হপ্তা হলো আছে। বাকি দুজন মাসখানেক আগে কাজে এসেছে। রজার আর হেনরি স্যাড়ল পার্টনার।
মেয়েটা কয়েক মিনিট চুপ করে রইল। তীক্ষ্ণ চোখে চারপাশটা খুঁটিয়ে দেখছে রনি। দালান আর জমি পরিপাটি ভাবে রাখা হয়েছে। গরু যা দেখা যাচ্ছে ওগুলোর চেহারাও ভাল। বেন কেসি ফাইটার না হলেও র্যাঞ্চিঙ বোঝে।
রাউণ্ড-আপের সময়ে ঝামেলা হবে, শান্ত স্বরে বলল লিসা। তোমাকে আগে থেকে সাবধান না করাটা আমাদের অন্যায় হবে। পুবে, একটা র্যাঞ্চ আছে–ওদের দৌরাত্ব দিনদিন বেড়েই চলেছে। ওরা তিন ভাই, ব্লু মাউন্টিনের কাছে থাকে।
ঝামেলাটা কি?
ওরা রেঞ্জ চায়। বেনের ধারণা, গরু চুরিতে ওদের হাত আছে। হ্যারিরও তাই ধারণা। বিশ বছর ধরে আমাদের গরু যে জমিতে চরেছে সেখান থেকে ওরা তাদের খেদিয়ে দিচ্ছে। হ্যারি ওদের মুখোমুখি হলে ওরা তার মুখের ওপর হেসেছে। বলেছে মুরোদ থাকলে সে কিছু করার চেষ্টা করতে পারে। ওরা তিনজনই উপস্থিত ছিল। হ্যারিকে উস্কে পিস্তল বের করাতে চাচ্ছিল, তাহলে ওকে মেরে ফেললেও কেউ ওদের দোষ দিতে পারত না।
লঙই সবথেকে পাজি, আমার বিশ্বাস। কিন্তু ওদের মধ্যে বাছাবাছিতে লাভ নেই, কারণ কেউ কারও চেয়ে কম যায় না। ওরা বড়াই করে বলেছে আমাদের ওরা ভিটেছাড়া করবে।
ঘোড়ার খুরের শব্দ শুনে মুখ তুলে তাকাল রনি। দেখল তিনজন কাজের মানুষের পাশে বেন ঘোড়ার পিঠে এসে হাজির হলো। রোদে পোড়া চতুর চোখের লোকটাই টেরি হবে বলে আঁচ করল রনি। সরু কোমরের লোকটার চেহারায় পুরোপুরি টেক্সাসের ছাপ রয়েছে–ও হ্যারি ছাড়া আর কেউ হতে পারে না। ওদের সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল বেন। শেষ লোকটার বিশাল দেহ-নাম হেনরি।
আজ থেকে রনি তোমাদের সেগুলো (ফোরম্যান)। তোমরা আমাকে যেমন মানেনা, ওকেও তেমনি মানবে। ওর আদেশকে আমারই আদেশ মনে করবে। ড্যাশার! এসো আমরা ভিতরে বসে কথা বলব। ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল সে।
ভিতরে ঢুকে পকেটে হাত ঢুকাল বেন। ওর চোখ দুটো চকচক করছে। ড্যাশার, বলল সে, তোমার সম্পর্কে আমি অনেক শুনেছি। খ্রী J-এর জনসন তো কেবল তোমার গল্পই করে। এখন তুমি এখানে এসেছ এটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। ওরা তোমার সম্পর্কে যা বলে তা যদি ঠিক হয়। তাহলে আমরা এবার সত্যিই ত্রাণ পাব।
তুমি ফাইটার। আমি মানুষ চিনি, তুমি একাই একটা যুদ্ধ জিততে পারো। যুদ্ধ হলে তুমি আদেশ দেবে। র্যাঞ্চ আমি সামলাতে পারি কিন্তু ফাইটিঙ যা হয় সেটা তোমাকে সামলাতে হবে। তোমাকে সেগুন্দো করে আমার কাঁধ থেকে একটা বিরাট বোঝা নেমে গেল। এখন নিশ্চিন্ত হয়ে আমি র্যাঞ্চের কাজ দেখতে পারব। হোল্ড-আপের পর ওখানে তোমাকে দেখেই আমি বুঝেছি, জনসন ঠিকই বলেছিল–আমি দুর্বল মানুষ ফাইটিঙ সামলাতে পারি না।
তুমি কি ব্লু মাউন্টিনের ওই তিন ভাইয়ের সাথে ঝামেলার আশা করছ?
ওদের কথা তুমি শুনেছ? হ্যাঁ, অন্য সূত্র থেকেও ঝামেলা আসতে পারে। এখানে আমরাই হচ্ছি তরমুজ, সবাই আমাদের কেটে খেতে চায়।
পাতলা গড়নের র্যাঞ্চারের প্রতি রনির শ্রদ্ধা আরও বাড়ল। ঠিক আছে, বলল সে, আমি গোলাগুলি ছাড়াই সব সামলাবার চেষ্টা করব। কিন্তু সেটা যদি সম্ভব না হয়?
তোমার নিজস্ব বিবেচনা ব্যবহার কোরো। অস্থির ভাবে পায়চারি করছে বেন। ওরা ঝামেলা করতে চাচ্ছে, যদি চায় ওদের শিক্ষা দিয়ে দিও। কিন্তু–ওর চোখ কঠিন হলো। ওরা শুরু করলে তবেই কেবল আমরা ফাইট করব। বুঝেছ?
সত্যি কথা হচ্ছে, রনি র্যাঞ্চের জীবন পছন্দ করে। গরু আর ঘোড়া ওর অত্যন্ত প্রিয়। ঘোড়া খারাপ হোক বা ভাল কোনটাতেই তার আপত্তি নেই। ওদের সাথে খেলতে ওর ভাল লাগে।
এমনও একসময় ছিল যখন এদেশে অফুরন্ত বসতি ছাড়া রেঞ্জ ছিল। এখন সেখানে পুব থেকে মানুষ এসেছে, বসবাস করছে। কিছু নেস্টারও জুটেছে, বড় র্যাঞ্চারদের একটা-দুটো গরু চুরি করে খায়। সুযোগ পেলে পনেরো-বিশটা বা একশোটা তাড়িয়ে নিয়ে আর কোথাও বিক্রি করে দেয়।
অবশ্য ওদের মাঝে অনেক সৎলোকও আছে, যারা কেবল থাকার একটা জায়গা ছাড়া আর কিছু চায় না। এদের খারাপ চোখে দেখে না রনি। কিন্তু কিছু ক্ষমতাশালী র্যাঞ্চার, গুণ্ডা ভাড়া করে ওদের তাড়ানোর ব্যবস্থা করে।
কোন খবরের কাগজে ছাপানো হয়নি। কিন্তু বুড়ো কেসির মৃত্যুর খবর মুখে-মুখে ঠিকই অনেক দূর পৌঁছেচে। খামচি দিয়ে একটু লাভ করার আশায় অনেকেই এখানে এসে হাজির হয়েছে।
প্রথম কয়েকটা রেইড ছিল মৃদু। ওরা পরীক্ষা করে দেখছিল বাঘের বাচ্চাও বাঘ কি না। যখন বুঝল সে দুর্বল–সবাই ওকে পেয়ে বসল।
আউট-ল-দের মাঝে ওই তিন ভাইই শ্রেষ্ঠ। কঠিন বলে ওদের নাম আছে। একসাথেই বসে খাচ্ছে। খবর পৌঁছল। রনি এসেছে। খাওয়া ছেড়েই উঠে দাঁড়াল মিক। আমার কাজ আজই শেষ। আমার টাকা মিটিয়ে দাও। রনির বিরুদ্ধে দাঁড়াব না আমি। ও যে কি তা আমি টেক্সাসেই দেখেছি। পিস্তল দেখা যায় না, কিন্তু গুলি ছোটে। যেখানে মারে সেখানেই বেঁধে গুলি।
লঙ এর গুরুত্ব বুঝছে না। ড্যাশারের নাম সে আগে কখনও শোনেনি। তুমি কি ওই লোকের নাম শুনেই ভেগে যাচ্ছ?
হ্যাঁ, ওকে চিনলে তুমিও দেশ ছেড়ে পালাতে। লোকটা সৎ। কোন রকম অন্যায় সে সহ্য করে না। নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করে।
পালিয়ে যাচ্ছ? অবাক বিস্ময়ে প্রশ্ন করল লঙ। ঘটনাটা কি?
ঘটনা? লঙের দিকে তাকাল মিক। শোনো, লঙ। আমার সাহস রক্তরাঙা ট্রেইল
কারও চেয়ে কম নয়। কিন্তু আমি বোকা নই। কোন মূল্যেই আমি ওর বিরুদ্ধে দাঁড়াব না। যাহোক, আমার ইচ্ছে আমি দক্ষিণে যাব, যেখানে রোদ আছে।
আশ্চর্য, কি আবোল-তাবোল বলছ? এখন বসন্ত চলছে, মাসখানেক পরে এখানেই তুমি অনেক সূর্য পাবে।
হতে পারে। কিন্তু এখন আমার খুব ঠাণ্ডা লাগছে।
মিছেই ভয় পাচ্ছ তুমি, একটু কঠিন স্বরেই বলল সিলভার। মনে হচ্ছে তোমার হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে গেছে।
সিলভারের দিকে ফিরল মিক। তুমি ঠিকই বলেছ সিলভার। আমার পকেটে এখন চল্লিশ ডলার আছে। এখানে থাকলে, হয়তো চারশো ডলার থাকবে। কিন্তু মারা পড়লে ওই চারশো ডলার আমার কি কাজে আসবে? মনে হয় এমনও দিন আসবে যখন তুমিও ভাববে আমার সাথে চলে গেলেই তুমি ভাল করতে!
তিন দিন রেঞ্জটা ঘুরে ভাল করে চিনে নিল রনি। একবার ব্ল্যাক স্যাণ্ড ডেজার্টের দিকেও গেছিল। কিন্তু ঘাস নেই বলে গরু ওদিকে যাবে না। কিন্তু বেশির ভাগ সময়েই সে কাটাল, হে স্ট্যাক ভ্যালি, আর দূরের ব্লু মাউনটিনের আশেপাশে। পুরো এলাকাটা খুঁটিয়ে দেখছে সে। রেঞ্জের পুরোটাই সুন্দর করে রাখা হয়েছে। শান্তি পেলে বেন কেসি উন্নতি করবে এতে কোন সন্দেহ নেই।
র্যাঞ্চ বাড়িটা অ্যান্টিলৌপের পশ্চিম ঢালে। কিন্তু ছোট একটা গিরিপথ ধরে সহজেই পুবের বিশাল রেঞ্জে পৌঁছা’নো যায়। ওখানে ওদের প্রচুর গরু চরে। ওই রেঞ্জ নিয়েই তিন ভাইয়ের সাথে কে র্যাঞ্চের বিরোধ। কেবল গরুই চুরি করছে না–ওরা নিজেদের গরু কে রেঞ্জে চরাতে শুরু করেছে।
দক্ষিণে কে-র্যাঞ্চের গরু পোকার গ্যাপ আর কাউ ক্রীক ক্যানিয়ন, আর পশ্চিমে ব্ল্যাক স্যাণ্ড ডেজার্ট পর্যন্ত চরে বেড়ায়। টেরির কথায় রনি জানল দক্ষিণ-পুবে কর্ন প্যাঁচ নামে একটা আউটল গ্রাম আছে। মাঝেমাঝে ওটা শূন্য থাকে, আবার কখনও লোক গিজগিজ করে। আর
এখন? প্রশ্ন করল রনি।
লোকজনে ভরা, বিষণ্ণ মুখে জানাল টেরি। নতুন শিকার ধরার আগে কয়েটিরা যেমন একজোট হয়, ঠিক তেমনি। কিন্তু হিউবার্ট ভাইয়েরা আমার মতে সাধারণ আউটলর চেয়ে অনেক বেশি কঠিন। ওরা প্রত্যেকেই শক্ত লোক, আর জঘন্য রকম নীচ। বিবাদে ঝাপিয়ে পড়তে ওরা ওস্তাদ। ওদের দৌরাত্মে ব্লু ক্লে সাইডহিলে কেউ টিকতে পারেনি!
ওদের দেখা পেলে আমরা ওদের সাথে কথা বলব, সহজ স্বরে বলল রনি।
তোমাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না, টেরি শুষ্ক স্বরে বলল। ওই যে ওরা আসছে।
পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নিচে নেমে এল হ্যারি। ওই যে, লঙ হিউবার্ট তার লোকজন নিয়ে আসছে, জানাল সে।
ওরা সংখ্যায় চারজন। আরোহীরা দ্রুত এগিয়ে এল। রনি ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে ওদের দিকে এগিয়ে গেল।
হাওডি, ঠাণ্ডা স্বরে বলল সে। আমি ধরে নিচ্ছি তুমিই লঙ হিউবার্ট।
ওদের মধ্যে সবথেকে লম্বা আর চিকন লোকটা মুখ বাঁকিয়ে ওর দিকে বিদ্বেষের চোখে তাকাল। তুমি ঠিকই ধরেছ, কিন্তু তোমরা থ্রী এইচ এর রেঞ্জে রয়েছ।
আমি যতদূর জানি এটা কে-রেঞ্জ, হেসে জবাব দিল রনি। শুধু এটাই নয়, ব্লু পর্যন্ত পুরোটাই ওদের জমি। থ্রী-এইচ আসার বহু আগে থেকেই ওরা এখানে আছে। রেঞ্জটা তোমাদের কি করে হলো?
কৈফিয়ত আমি দেব না! বিচ্ছিরি শব্দ তুলে জোরে হেসে উঠল লঙ। বুড়ো কেসি বেঁচে থাকতে সে গায়ের জোরে প্রতিবেশীদের সব জায়গা কেড়ে নিয়েছিল। এখন বুড়ো মরেছে, সুতরাং তোমরা যেতে পারো–আর ফিরো না!
ঘোড়ার পিঠে বসেই ঠাণ্ডা নীল চোখে থ্র-এইচ রাইডারদের একেএকে খুঁটিয়ে দেখল রনি।
লঙ, নিচু স্বরে বলল সে, এটা রকিঙ কে-রেঞ্জ। আগেও ছিল, এখনও আছে। ব্লু মাউনটিনসের ওপাশে প্রচুর জমি রয়েছে। তোমরা গরু চরাতে চাইলে, আর কেউ নিয়ে। য়ার আগেই তোমাদের ওখানে যাওয়া উচিত। তুমি আর তোমার ভাইয়েরা শান্তিতে থাকতে চাইলে সেটা সম্ভব। কিন্তু তোমরা যুদ্ধ চাইলে অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই–এখনই শুরু করতে পারো।
অ্যাঁ? কথাগুলো রনি এত নিচু স্বরে বলেছে যে কথার মর্ম উপলব্ধি করতে লঙের কিছুটা সময় লাগল। যখন বুঝল, রাগে ওর মুখটা লাল এবং ভীষণ হয়ে উঠল। কিন্তু সেই সাথে একটা ঠাণ্ডা অনুভূতিও জাগল। পরিস্থিতিটা ওদের অনুকূলে আছে বলা যায় না। সাঙ্ঘাতিক লোক বলে রনির নাম আছে। টেরি আর হ্যারির থেকেও কোন দুর্বলতা আশা করা যায় না। গানম্যান না হলেও ওরা পাশাপাশি দাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত ফাইট করবে। লঙ বোকা নয়। সেই যে ওদের তিনজনেরই প্রথম টার্গেট হবে এটা সে জানে। ইতস্তত করছে হিউবার্ট।
ঘোড়াটাকে এগিয়ে নিয়ে রনি ওর খুব কাছে গিয়ে দাঁড়াল। আমার কথা কানে গেছে তোমার? যুদ্ধ, না শান্তি, কোনটা চাও তোমরা? যুদ্ধের কথা তুমিই প্রথম তুলেছ। অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। মনস্থির করে নাও। যুদ্ধ চাইলে তোমাদের তাই দেয়া হবে।
লঙের পিছনে, একটু বাম দিকে বিষণ্ণ চেহারার একটা লোক গোড়ার পিঠে বসে আছে। উঁচু গালের-হাড়ের ওপর ছোটছোট দুটো চোখ। চোয়ালটা ভারি আর নিষ্ঠুর। ওকে আমার হাতে ছেড়ে দাও, লঙ, অনুনয় করে বস-এর অনুমতি চাইল সে। অনেক বড় বড় কথা—
ওর কথাটা শেষ হলো না। রনির উল্টো হাতের ঘুসি খেয়ে জিনের ওপর টলে উঠল আংশিক টাকমাথা লোকটা। পাদানি থেকে ওর ডান পা ছুটে গেছে। একটু ঝুঁকে ওর পাটা হেঁচকা টানে উপরে তুলল ড্যাশার। আছাড় খেয়ে সশব্দে মাটিতে পড়ল সে। লোকটা সামলে ওঠার আগেই লাফিয়ে ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল রনি। পরক্ষণেই শার্টের কলার ধরে ওকে ধুলো থেকে টেনে তুলে প্রচণ্ড একটা ডান-হাতি ঘুসি মেরে লোকটাকে আবার মাটিতে ফেলে পিছিয়ে এল।
প্রচণ্ড ঘুসিতে কুতকুতে চোখের লোকটার ধাঁধা লেগে গেছে। মাথা আঁকাল সে। পরিস্থিতিটা কিছুটা পরিষ্কার হতেই মুখ দিয়ে ঘোৎ করে একটা শব্দ তুলে লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। হাত ঘুরিয়ে বাম হাতের ঘুসিতে ওর গাল হাড় পর্যন্ত চিরে গেল। ডান হাতের বিরাশি-সিক্কা ঘুসিটা থুতনির ওপর পড়তেই মুখ থুবড়ে ধুলোর ওপর পড়ল সে।
পিছিয়ে এসে রনি দেখল, হ্যারির রাইফেলটা জিনের ওপর রাখা। বিপক্ষ দলের বাকি লোকজনকে কাভার করে রেখেছে। অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটানো লোকটার দিকে দেখিয়ে সে বলল, দেখতেই পাচ্ছ, লঙ, ও লড়তে চেয়েছিল–মনে হচ্ছে ওর সাধ মিটেছে।
রেহাই পাবে না তুম! ভীষণ খেপেছে লঙ, কিন্তু সতর্কও হয়েছে। এখন ওর জেতার সম্ভাবনা আরও কমেছে। ধুলোয় লুটানো লোকটা নড়ছে না। যদি সে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়াতেও সক্ষম হয়, গোলাগুলির যুদ্ধ সামলাতে পারবে না।
তোমার ভাইদের জানিও, এখানে বার জন্যেই যথেষ্ট রেঞ্জ আছে। তোমাদের গরু রু-ওপাশে চরালে, আর আমাদের গরু খেদিয়ে নিলে, কোন বিরোধ হবে না। আমরা বিরোধ চাই না, কিন্তু ঝামেলা সামলাবার ক্ষমতা আমাদের আছে।
মার-খাওয়া লোকটা উঠে বসেছে। মাথা ঝাঁকিয়ে কুয়াশা কাটাবার চেষ্টা করছে। কয়েক সেকেণ্ড পর রোষের সাথে রনির দিকে তাকাল। পরেরবার, রাগী কুকুরের মত দাঁত বের করল সে, গুলির লড়াই হবে!
অপেক্ষা কেন? ওর দিকে ঘুরে দাঁড়াল ড্যাশার। তোমার কোমরে পিস্তল রয়েছে। মরতে চাইলে ওদিকে হাত বাড়াও।
অনেকক্ষণ রনির দিকে তাকিয়ে রইল লোকটা। খুনের নেশা ওর চোখে। আগ্রহ আর উত্তেজনায় হাতের আঙুল মাঝেমাঝে লাফাচ্ছে। ধীরে চোখ থেকে খুনের নেশাটা কেটে গেল। এখন না, বলল সে। পরে।
ঠিক আছে, তাই হবে। লঙের দিকে চোখ ফেরাল ড্যাশার। আমি যদি তোমাদের কোন রাইডারকে কখনও এই রেঞ্জে দেখি, ঘোড়া হারাবে সে। হেঁটে ফিরতে হবে। কথাটা মনে রেখো!
কি? হুঙ্কার ছাড়ল লঙ। আগুন ঝরছে ওর চোখে। আম্পর্ধা! তোমাকে আমি—
রনির হিম-শীতল নীল চোখের দিকে চেয়ে ঢোক গিলল লঙ। কথাটা শেষ করতে পারল না। ঠিক আছে, আমন্ত্রণ জানাল ড্যাশার, ইচ্ছে থাকলে কিছু শুরু করো। তুমি ঘোড়ার পিঠে চড়ে, নাকি তার পিঠে উপুড় হয়ে ফেরো, তাতে আমার কিছু আসে যায় না।
ওরা ফিরে গেলে খিলখিল করে হেসে উঠল হ্যারি। ওহ! লঙের চেহারাটা লক্ষ করেছিলে? এই প্রথম কেউ একজন হিউবার্টের মুখোমুখি পঁড়িয়ে তাকে ভয়ে পিছিয়ে যেতে বাধ্য করল। এটা ওরা সহজ ভাবে নেবে না!
টেরি দাঁত বের করে হাসল, কিন্তু ওর চোখে দুশ্চিন্তা। উচিত শিক্ষা হয়েছে ওদের, স্বীকার করল সে। কিন্তু ওরা এখন লোকজন নিয়ে গোলাগুলির জন্যে তৈরি হয়ে আসবে। ওদের কাউহ্যাণ্ডের সংখ্যা আমাদের চেয়ে বেশি।
ওরাও নিজেদের র্যাঞ্চের পথে রওনা হলো। রেঞ্জের চারপাশ ভাল করে খুঁটিয়ে দেখছে রনি। এই নেভাডা স্টেটটা অন্যান্য স্টেটের তুলনায় শুকনো। বসন্তকালটাই এখানকার সব থেকে ভাল সময় হলেও ততটা সবুজ নয়। যেসব জায়গায় উইন্টার ফ্যাট জন্মেছে সেগুলো হালকা ধূসর রঙ দেখে দূর থেকেই চেনা যায়। ওগুলোই এসব এলাকার সবচেয়ে ভাল চারণভূমি। কেসির রেঞ্জে উইন্টার ফ্যাট বেশি জন্মায়। ওগুলোর দখল, বিরোধের একটা মূল কারণ। সাথে কিছু অন্যরকম স্বার্থও জড়িত আছে।
কিছুক্ষণ নীরবে পথ চলার পর রনি প্রশ্ন করল, শহরে কোন বেকার ভাল রাইডার আছে? আমি এমন লোক কাজে নিতে চাই যারা ফাইট করবে।
কাঁধ উঁচাল হ্যারি। হয়তো দু’জন পাওয়া যাবে। শর্টি মাইক শহরেই আছে। দারুণ ফাইটার। কিন্তু বেন কেসির হয়ে কাজ করবে না সে। দু’বার প্রত্যাখ্যান করেছে। বুড়ো কেসির সাথে ওর কিছু সংঘর্ষ ঘটেছিল।
কঠিন কিছু?
না, কিছু কথা কাটাকাটি মাত্র। শর্টির ভয়-ডর বলতে কিছু নেই। যেকোন বিপদের মুখে গুলি ছুঁড়তে-ছুঁড়তে সে এগিয়ে যেতে পারে। জেমস হার্টের সাথে ওর খুব ভাব ছিল। ওর একটাই দোষ কাজ না থাকলে মদে চুর হয়ে থাকে।
আর যখন কাজ করে?
কখনও ছুঁয়েও দেখে না। মানুষটা ঝগড়া-প্রিয়। কিন্তু ফাইটিঙের জন্যে ওর মত লোক তুমি কমই পাবে।
জেতে?
ফিফটি-ফিফটি। কিন্তু তাতে ওর কোন আক্ষেপ নেই। ওর রক্তের সাথেই মিশে আছে মারপিট। ইউনিয়নভিলে একটা লোক ওকে তিনবার হারিয়েছিল। এর পর থেকে প্রতি শনিবারে ওখানে লোকটার বিরুদ্ধে লড়তে যেত শর্টি। শেষে অতিষ্ঠ হয়ে লোকটা ওর থেকে দূরে থাকার জন্যে দেশ ছেড়েই চলে গেছে।
হাসল রনি। হয়তো শহরে গিয়ে শর্টির সাথে কথা বললে কিছু কাজ হতে পারে।
ওকে কোথায় পাওয়া যাবে?
মলি ব্রাউনের ওখানেই ও বেশি সময় কাটায়। বাকিটা নেভাডা সেলুনে।
একটা সরু ধোয়ার রেখা উঠতে দেখে, আকৃষ্ট হয়ে ওরা ওদিকে এগোল।
কিড লেকার তার আগুন থেকে মুখ তুলে চাইল। রাইফেলটা ওর পাশেই রাখা–কোমরেও পিস্তল ঝুলছে। পাতলা গড়নের কম বয়সী বেটপ একটা ছেলে। কিন্তু ওর হাসিটা সরল আর বিশদ। হাওডি! বলল সে। নেমে, বসো! কফি গরম আছে–খাবারও তৈরি হচ্ছে। রনির দিকে একটা চোরা-চাহনি দিল। ওখানে কি ঘটেছে তা আমি দেখেছি। আমি কাছেই ছিলাম।
মনোযোগ দিয়ে নতুন চোখে রনি ছেলেটাকে খুঁটিয়ে দেখল।
কাছেই মানে? কোথায় ছিলে তুমি?
তিনশো গজ দূরে একটা পাথরের আড়ালে। আমার রাইফেল সর্বক্ষণ লঙ হিউবার্টের দিকে তাক করা ছিল।
মাথা হেলিয়ে কিড লেকারের দিকে ইঙ্গিত করল টেরি। রাইফেলে ছেলেটার হাত ভাল, রনি। ওকে আমি তিনশো গজ দূরে ছুটন্ত অ্যানটিলৌপ শিকার করতে দেখেছি। ঠিক মাথায় লেগেছে গুলি।
ওটা কিছু না। লজ্জা পেয়েছে লেকার। শ্যুটিঙ করেই সারা জীবন কেটেছে আমার।
টিনের কাপে কফি ঢেলে ড্যাশারের দিকে এগিয়ে দিল হ্যারি। এই কফি সম্পর্কে তোমাকে আগেই সাবধান করছি, বলল সে। একবার, কফি শেষ হওয়ার পর তলানিটা আমরা পরীক্ষা করে দেখেছি। দেখা গেল চল্লিশ ভাগ কফি, চল্লিশ ভাগ ক্ষার, দশ ভাগ সোনা আর বাকি দশ ভাগ মিশ্র পদার্থ আছে ওর ভিতর।
এদিককার লোকজন, গভীর সুরেই বলে চলল সে, এই কারণেই সব সময়ে কফির শেষে তলানিটা পরীক্ষা করে দেখে। অনেক কাউহ্যাণ্ডই এভাবে সোনা পেয়ে বড়লোক হয়ে গেছে।
নাক দিয়ে অবজ্ঞাসূচক একটা শব্দ করল টেরি। ওর কথায় তুমি কান দিও না। উদ্ভট সব গল্প বানিয়ে বলা ওর অভ্যাস।
আমি গল্প বানাই? কক্ষণও না! প্রতিবাদ জানাল হ্যারি। চুপ করে বসে তোমার কফি খাও, বিরক্ত টেরি বলল।
একটু হেসে রনি তার নিজের কফিতে চুমুক দিল। কফির স্বাদ আর গন্ধে নাক কুঁচকাল সে। ওতে সোনা আছে কি না সেটা বোঝ না গেলেও, ক্ষার যে প্রচুর আছে এটা সত্যি। মনেমনে হাসল আবার। ক্যাম্পে কফি থেকে যত সোনার গুঁড়ো সে গিলেছে, তা একসাথে জড়ো করলে তার আজ নিজেরই একটা র্যাঞ্চ হতে পারত।
রনির দিকে ফিরল টেরি। ড্যাশার, আমি এই টেক্সান টার্কির সাথে একটানা দুবছর কাজ করেছি। এখন আমাকে কিড বা আর কারও সাথে জুটি বেঁধে কাজ করতে দেয়া যায় না? ওর গল্পে আমার মাথা খারাপ হওয়ার জোগাড় হয়েছে।
ভাল কথা, হঠাৎ মুখ তুলে মন্তব্য করল লেকার, আমি শুনলাম জেরি সমার্স নাকি গোস্ট মাউন্টিনে সোনা পাওয়ার আশায় কিছু জমি কিনেছে! ওটা কর্ন প্যাচের পুবে।
সমার্স? ভুরু কুঁচকাল টেরি। আমি ধারণাই করতে পারিনি সে একজন মাইনার।
গোস্ট মাউন্টিন? কৌতূহল মেটাতে প্রশ্ন করল ফোরম্যান। এমন অদ্ভুত নাম কেন? রক্তরাঙা ট্রেইল
ওখানে নাকি ভূত আছে। স্টার সিটি ছিল ওখানকার একটা মাইনিং টাউন। ১৮৬৮তে ওটা খালি হয়ে গেল। কিন্তু দু’জন লোক মাইন শাক্ট দিয়ে নিচে পড়ে যায়–ওদের খুঁজে পাওয়ার আগেই ওরা খাবারের অভাবে মারা পড়েছিল। লোকে বলে ওখানে নাকি ভূত দেখা গেছে। আমার ধারণা ওটা কর্ন প্যাচের লোকেরাই রটিয়েছে।
শুনেছি কর্ন প্যাঁচ নাকি কঠিন জায়গা, মন্তব্য করল রনি।
মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানাল টেরি। যেকোন সময়েই বিপজ্জনক। ওখানে বিল ওয়াটসন, একটা স্টোর, সেলুন আর জুয়ার আড্ডা চালায়। আউটলদের একটা নিরাপদ আখড়া। লোকটা সাপের থেকেও বিষাক্ত। নল কাটা একটা শটগান সবসময়েই কাছে রাখে। লোকে বলে ড্র পোকারে বিল ওস্তাদ।
চার, কি পাচজন আউটল ওখানে থাকে। তিনজন সবসময়েই থাকে। কিন্তু ওদের সংখ্যা বর্তমানে বিশেরও বেশি। সবাই কঠিন লোক।
বিদ্যুত লেফটি বর্তমানে ওখানে এসে হাজির হয়েছে, জানাল হ্যারি। টেক্সাসের বিগ বেণ্ডের লোক সে।
ওকে আমি চিনি, রনি বলল, ট্যালি মাউন্টিন দলের লোক।
টেক্সাসের হ্যারির চোখ দুটো চকচক করে উঠল। তুমি এলাকাটা চেনো? শাফটার থেকে একটু নিচে বান্ট ক্যাম্পে আমার জন্ম।
চিনি, মুচকি হেসে বলল ড্যাশার। ওটা ফ্রেসনো ক্যানিয়নের কাছে।
ঠিক বলেছ, দাঁত বের করে হাসল হ্যারি। যেন একজন দেশী ভাইয়ের দেখা মিলেছে। আশ্চর্য!
কাপটা ধুয়ে উঠে দাঁড়াল রকিঙ K-র ফোরম্যান। তুমি কি টহল দিয়ে এই এলাকার দেখাশোনা করছ, বাছা?
হ। অন্য কাউহ্যাণ্ডদের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখল, ওরা ঘোড়ার পেটি বাধায় ব্যস্ত। হঠাৎ সে নিচু স্বরে বলল, রনি, হয়তো কথাটা তোমাকে বলা আমার ঠিক হচ্ছে না, কিন্তু আমার বিশ্বাস, এটা তোমার জানা উচিত। মিস লিসা কেসি মাজুবা ক্যানিয়নে এটা লোকের সাথে প্রায়ই দেখা করতে যায়। আমি ঝামেলা শুরু করতে চাইনি বলেই ভয়ে বেনকে জানাইনি।
সেটা ওর নিজস্ব ব্যাপার, মন্তব্য করল সে। এখানে আমাদের কাজ কেবল রেঞ্জ আর গরু দেখা।
হ্যাঁ। ছেলেটার মুখ লাল হলো। কিন্তু লোকটা সত্যিই খারাপ সে হচ্ছে পিস্তলবাজ, জেরি সমার্স!
নামটা শুনে একটু থমকাল ড্যাশার। কিড লেকারের অনুভূতি বুঝতে পারছে সে। সমার্স নোকটা হয়তো ভাল হতে পারে, কিন্তু মলির দোকানে দেখা সুদর্শন লোকটাকে তারও ভাল মনে হয়নি। মানুষ চিনতে তার কদাচিৎ ভুল হয়।
আমি-র্যাঞ্চে কিছু কথা আমার কানে এসেছে, যেচেই সে রনিকে জানাল। মেয়েটা ওর সাথে দেখা করুক এটা বস্ মোটেও চায় না। কথাটা কিছুদিন আগে বেন নিজেই বলেছে। জেরিকে র্যাঞ্চ থেকে বের করে দিয়েছিল সে। বেনের মুখের ওপরই তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বেরিয়ে গেছিল সমার্স।
মাথা ঝাঁকাল রনি। ঠিক আছে, কিড। এ সম্পর্কে আর কারও সাথে আলাপ কোরো না। ব্যাপারটা আমার একটু ভেবে দেখতে হবে।
র্যাঞ্চে ফেরার পথে রনি আপন মনেই ভাবছে এটা তার কোন ব্যাপার নয়। এতে নাক গলানো তার উচিত নয়কোন মতেই না। পুরোটাই হয়তো ছেলেটার কল্পনা। লিসার প্রতি লেকারের দুর্বলতা থাকা অস্বাভাবিক নয়। আর লিসা যে সুদর্শন সমার্সের প্রতি কেন আকৃষ্ট, সেটা বোঝা খুব সহজ।
ট্রেইল ধরে দু’মাইল পথ নীরবে চলার পর রনিই প্রথম মুখ খুলল। জেরির সম্পর্কে তোমরা কিছু জানো?
লোকটা খারাপ, নিচু স্বরে জানাল টেরি। গত বছর ইউনিয়নভিলে সে একজনকে মেরেছে…বিনা কারণে লোকটার সাথে ঝগড়া করে খেপিয়ে ওকে হত্যা করেছে। এর আগে তিনজনকে যে ও হত্যা করেছে, সেটা আমি জানি। এমন আরও দু’জন আছে, যাদের ব্যাপারে আমার ওকেই সন্দেহ হয়। ওর পার্টনার ডাকি–সেও প্রায় ওর মতই খারাপ।
গরু জড়ো করার কাজ শুরু হতে এখনও কয়েকদিন বাকি, এবং তার প্রস্তুতিতে ওদের হাতে অনেক কাজ। সবাই মিলে কাজ করেই তা শেষ করতে হবে। রাউণ্ডআপে ঝামেলা হতে পারে, কিন্তু তা নিয়ে রনির ভাবনা নেই। সব শেষ হলে পরে, হিসেব মিলিয়ে দেখবে সে। রকিঙ কে কত গরু হারাল, আর অন্যান্য র্যাঞ্চাররা কতটা লাভ করেছে, তা থেকেই ব্যাপারটা খোলাসা হয়ে যাবে। তবে রাউণ্ডআপের সময়ে এমন কিছু ঘটতে পারে, যার ফলে খুব দ্রুত পরিস্থিতি র্যাঞ্চ-ওয়ারের দিকে এগোবে।
সাবধানের মার নেই, তাই সবদিক বিচার করে আগে থেকে তৈরি থাকাই ভাল। শহরে গিয়েশটি মাইকের সাথে কথা বলে দেখতে দোষ নেই। যতটুকু সে শুনেছে তাতেই বুঝেছে সত্যিকার ফাইটার শর্টি। বর্তমানে এমন লোকই তার দরকার। যত ফাইটিঙ লোককে সে রকিঙ কে-তে নিতে পারবে, বিপদের সম্ভাবনাও ততই কমবে।
তাছাড়া লঙের রাইডারকে পিটানো, আর লঙকে সবার সামনে ওভাবে অপমান করায় ওদের সাথে মোকাবিলা ইতোমধ্যেই আসন্ন হয়ে উঠেছে। তবে এটা ওদের বুঝিয়ে দেয়া গেছে যে রকিঙ কে, ওট খাওয়া মোটা ভেড়া পোষে না-কিছু চাইলে সেটা ওদের লড়েই নিতে হবে। এতে যারা কঠিন তাদের চেষ্টায় ভাটা পড়বে না, কিন্তু রাউণ্ডআপ শেষ না হওয়া পর্যন্ত চুরিটা কমবে।
এর মধ্যে জেরির ভূমিকা যে কি সেটা আঁচ করতে পারছে না। এবং পরের ব্যাপারে নাক গলানোর অভ্যেস ওর নেই।
র্যাঞ্চে যাওয়ার পথে স্টেজ ডাকাতি নিয়ে ভাবতে গিয়ে সায়মন হত্যার কথা মনে হলো ওর। সে জেনেছে সায়মন মারাত্মক পিস্তলবাজ ছিল। লোকটা কোথায় যাচ্ছিল? কে মেরেছে ওকে? কে এমন লোক, যে সায়মনের মত তুখোড় লোককে গুলি করার সুযোগ দিয়েও নিশ্চিত ছিল, সে ওকে সহজেই হারাতে পারবে? এমন লোক ক’জন থাকতে পারে? বেশি নয়। ওকে খুঁজে বের করা তাই কঠিন হবে না। লোকটা চরম আত্মবিশ্বাসী এবং প্রচণ্ড অহঙ্কারী। সে নিষ্ঠুরও বটে। সম্ভবত একই লোক জেমসকেও হত্যা করেছে।
র্যাঞ্চের কাছে এসে পড়েছে রনি। টেরি আর হ্যারি ওকে ছেড়ে অনেকটা এগিয়ে গেছে। রিজের মাথায় উঠে, থেমে, একটা সিগারেট তৈরি করার ফাঁকে, পুরো পরিস্থিতিটা নিয়ে ভাবছে সে–গভীর চিন্তায় মগ্ন। সমস্যাটার অনেকগুলো দিক রয়েছে। থ্রী এইচ র্যাঞ্চের তিন ভাই, কর্ন প্যাচের আউটল-এর দল, জেরি সমার্স, স্টেজ ডাকাতি এবং জেমস হার্টের খুন হওয়া।
এগুলোর মাঝে কি কোন যোগাযোগ আছে? সেটাই প্রশ্ন, কিন্তু সম্ভাবনা কম। পশ্চিমের অনেক শহরেই জেরি সমার্সের মত লোক বাস করে। সামান্য কিছু থাকলেও বড়লোকি চাল দেখিয়ে চলে। কাজ কিছুই করে না-আলস্যে, পোকার খেলে দিন কাটায়। মাঝেমাঝে ওরা রাসূলিঙও করে। জেরি লোকটা আবার নিষ্ঠুর গানফাইটার। তবে কি সেই সায়মন আর জেমসকে মেরেছে?
এত বেশি চিন্তা করছ, নিশ্চয় সিরিয়াস কিছু?
ঘুরে সে একজন লম্বা মহিলার মুখোমুখি হলো। মনে ছাপ রাখার মত চেহারা। নীরব একটা সম্রান্ত ভাব, আর আকর্ষণ আছে মেয়েটার মধ্যে।
এটা, আমার ধারণা, রনি সরল সুরে বলল, তুমি নিশ্চয় শেলী কেসি? রক্তরাঙা ট্রেইল
হ্যাঁ। তুমি এই র্যাঞ্চটা সম্পর্কে ভাবছিলে? আমি প্রায়ই এখানে এই রিজের ওপর আসি। জানি, যখন চলে যাব, এর জন্যে আমার মন কাঁদবে।
তুমি চলে যাচ্ছ?
কেবল শহর পর্যন্ত। সেভেন পাইনসের ডাক্তার হ্যাডলের সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছে।
লোকটা ভাগ্যবান।
মাঝেমাঝে মনে হয় আমি বিশ্বাসঘাতক। আশপাশের পাহাড়গুলোর দিকের সে চোখ তুলে চাইল। এতসব ঝামেলার মধ্যে র্যাঞ্চটার কি হবে ভেবে আমার খুব ভয় হয়।
আমরা একে রক্ষা করব, শান্ত স্বরে রনি বলল, তোমার ভাই একজন ভাল মানুষ।
তারপর বিকেলে যা যা ঘটেছে সব ওকে শোনাল। কেবল লিসা আর জেরির সম্পর্কে কিড তাকে যা বলেছে, সেটা চেপে গেল। মনোযোগ দিয়ে মেয়েটা সব শুনল। কেবল মাঝেমাঝে নীরবে মাথা ঝাঁকাল।
হিউবার্টদের সাথে যে আমাদের লড়াই অনিবার্য এটা আমরা সবাই জানতাম, বলল সে। লিসা ওখানে জেরিকে পাঠাতে চেয়েছিল, সেও সানন্দেই যেতে রাজি ছিল। বেন কিছুতেই মত দিল না।
মনে মনে বেনকে সুবিবেচক বলে মানল রনি, কিন্তু মুখে কিছু বলল। হঠাৎ ঘুরে ড্যাশারের মুখোমুখি হলো শেলী। তোমার এখানে একজন শত্রু আছে, নিচু স্বরে বলল সে, আমার বলতে লজ্জা লাগছে যে তোমার সেই শত্রু, আমারই বোন। তোমাকে আমার ভাই কাজে নেয়ায় সে ভীষণ খেপে গেছিল। ওকে আমি অত্যন্ত ভালবাসি। কিন্তু লিসা খুব একগুয়ে। ওর বদ্ধমূল ধারণা সমার্স ছাড়া আর কারও এই র্যাঞ্চ চালাবার ক্ষমতা নেই।
রক্তরাঙা ট্রেইল
কিন্তু আমি তো এটা চালাচ্ছি না, প্রতিবাদ জানাল সে। আমি কেবলমাত্র সেগুন্দো–বিপদ ঠেকানোর দায়িত্ব আমার।
জানি, কিন্তু লিসার সেটা মোটেও পছন্দ হয়নি। সে ভাবছে ওকে জোর করে ঠেলে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। বেন আর আমার চিন্তাধারায় খুব মিল। কিন্তু লিসা…সে সম্পূর্ণ নিজস্ব ধারায় ভাবে।
পিছন থেকে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ শুনে দু’জনেই ফিরল। মেয়েটার চুলে বিকেলের রোদ পড়ায় মনে হচ্ছে যেন আগুন ধরেছে। লিসা ঘোড়ার পিঠে বসেই ওদের দেখল। গম্ভীর মুখে ঠাণ্ডা চোখে তাকিয়ে সে বলল, হ্যাঁ ঠিক, আমি গেছিলাম। আমার মতে রনি ড্যাশারকে কখনোই কাজে নেয়া ঠিক হয়নি!
আড়চোখে রনির চোখের দিকে চেয়ে বরফ-শীতল হলো ওর চোখ। তুমি জানো ওরা কি বলছে? তুমিই জেমস হার্টকে হত্যা করেছ! তুমিই স্টেজ লুট করেছ! সায়মনকেও তুমিই খুন করেছ! একটু থামল সে। ওরা ঠিক এই কথাই বলছে, এবং ফিনলে হার্টকেও ওরা খবরটা দিয়েছে। শহরে এসেছে সে, তোমাকে খুঁজছে! তোমাকে হত্যা করবে ফিনলে! আর আমি-আগুন ঝরল মেয়েটার চোখে আমি এতে খুব খুশি হব।
<