শেরিফের পাশাপাশি হাঁটছে ক্লিফ, মোটামুটি নিশ্চিত সে, লিভারি বার্ন-এর খড়ের গাদায় অন্তত একজনকে ঘুমন্ত অবস্থায় পাবে।

কিন্তু আস্তাবলে কেউ থাকলে, তার নির্দোষ হবার কথা, অচেনা শহরে কোনও মেয়েকে রেপ করে অপরাধীর পালিয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তবে লোকটা যদি পাড় মাতাল হয় উল্টো কিছু ঘটা বিচিত্র নয়।

যতই প্রতি পদক্ষেপে সম্ভাব্য অপরাধীর সঙ্গে দূরত্ব কমে আসছে ততই অস্থির হয়ে উঠছে ফ্যারেল! দুহাত মুঠি পাকিয়ে গেছে, রাগ সামলে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। সোনিয়ার ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত চেহারা মনে পড়ছে। বারবার; ওর ভাষাহীন দৃষ্টি যেন তাড়া করছে-ক্লিফকে।

যাই হোক নির্ধারিত দিনে সোনিকে বিয়ে করবে ও। কিন্তু মেয়েদের ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা না থাকলেও এটুকু বুঝতে পারছে, মন থেকে ওকে সহজভাবে গ্রহণ করতে অনেক সময় নেবে সোনিয়া। চোখদুটো আচমকা কুঁচকে উঠল ফারেলের। সোনিয়াকে ভালোবাসে ও, নিজের করে পেতে চায়। কিন্তু খোদা জানে সেজন্যে কতদিন অপেক্ষা করতে হবে!

আকাশ-ছোঁয়া বিরাট লিভারি বার্ন-এর হলদে কাঠামো আবছাভাবে দেখা যাচ্ছে আঁধারে। এটার চিলেকোঠায় কমপক্ষে পঞ্চাশটন খড় রাখার জায়গা আছে। খড়ের মজুদ এখন শেষ হয়ে এসেছে। সুতরং চিলেকোঠা মোটামুটি ফাঁকাই থাকবে।

আস্তাবলের প্রশস্ত দরজা হাট করে খোলা, বাতাসে ঘোড়ার নাদি, চামড়া আর খড়ের গন্ধ। স্টলগুলো থেকে ঘুমন্ত ঘোড়ার নড়াচড়া টের পাওয়া যাচ্ছে।

তুমি এখানে অপেক্ষা করো, মৃদু কণ্ঠে বলল জেস স্টোন। আমি নিকোলাসকে জিজ্ঞেস করে আসি।

বিশাল দরজার সামনে অপেক্ষা করতে লাগল ক্লিফ, চোখ কুঁচকে অন্ধকার ভেদ করে, ভেতরটা দেখার চেষ্টা করছে। ও-পাশের খোলা দরজার চৌকো আকৃতি ছাড়া কিছুই চোখে পড়ছে না। ওদিকে কেউ পালানোর কসরত করলে ধরা পড়ে যাবে।

ট্যাকরুমের দরজা খুলল জেস স্টোন। খানিক পর নিকোলাসের ঘুমজড়িত কণ্ঠস্বর শোনা গেল। ধীর পায়ে ফিরে এল শেরিফ। নিকোলাস বলছে, একজন আগন্তুককে আজ চিলেকোঠায় ঘুমোতে দিয়েছে সে, ওপরেই আছে এখনও। আমি এই মই বেয়ে উঠছি, তুমি পেছন দিকে চলে যাও।

দুপাশের মই বেয়ে ওপরে উঠল ওরা, প্রবল হয়ে উঠল খড়ের গন্ধ। নতুন একটা গন্ধ লাগল নাকে-দুর্গন্ধ।

আধিভৌতিক ছায়াদের দিকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকাল ক্লিফ ফ্যারেল। টানটান হয়ে রয়েছে ওর শরীরের প্রতিটি পেশী। হারিকেন বাম হাতে চালান করে সম্ভাব্য বিপদ মোকাবেলার জন্যে ডান হাত মুক্ত করে নিল ও। সামনে থেকে স্টোনের চিৎকার শোনা গেল। কে আছ এখানে! মাথার ওপর হাত তুলে, বেরোও, জলদি!

অখণ্ড নীরবতা। সাড়া নেই। ডান হাত থাবা পাকিয়ে রেখেছে ক্লিফ। এই মুহূর্তে কাউকে খুন করতে পারলে আর কিছু চায় না, সে দোষী না নির্দোষ কিছু এসে যায় না। এখানে কাউকে পাওয়া গেলে, তার হাত বা মুখে সামান্য আঁচড়ের দাগ দেখলেই হয়তো বিনা দ্বিধায় খুন করে বসবে ও। অন্য কোনও প্রমাণের অপেক্ষা করবে না। কিন্তু একজন আইনের লোকের পক্ষে এ-ধরনের চিন্তাভাবনা কি শোভা পায়?

চিলেকোঠার সামনের দিকে ঈষৎ আলোড়ন ধরা পড়ল ক্লিফের চোখে। একধারের নোংরা, খড়ের বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াল এক লোক।

পোশাক থেকে খড়ের কুটো ঝাড়ল, আড়মোড়া ভাঙল; তারপর উবু হয়ে সম্ভবত টুপি কিংবা জুতোর দিকে হাত বাড়াল। কিন্তু ফ্যারেলের-তীক্ষ্ণ কণ্ঠ তাকে থামিয়ে দিল। একদম নড়ো না! মারা পড়বে!

দুপাশ থেকে এগিয়ে গেল ক্লিফ আর স্টোন। দুজনেরই ডান হাত মুক্ত, বাঁ হাতে হারিকেন। ফ্যালফ্যাল করে প্রথমে ক্লিফ তারপর স্টোনের দিকে তাকাল লোকটা।

মোটামুটি ক্লিফের সমান লম্বা, তবে ওর তুলনায় কিছুটা শুকনো। পরনে নোংরা শতচ্ছিন্ন পোশাক, খড়ের কুটো লেগে আছে। মাথায় দীর্ঘ উস্কোখুস্কো চুল, সারা মুখে দাড়ি গোঁফের জঙ্গল। কতদিন স্নান করে নি খোদা মালুম, বোটকা গন্ধ বেরোচ্ছে।

কর্কশ ঠাণ্ডা কণ্ঠে ওকে জিজ্ঞেস করল স্টোন, পিস্তল আছে, মিস্টার?

মাথা নাড়ল আগন্তুক।

এবার প্রশ্ন করল ক্লিফ ফ্যারেল, কর্কশ কণ্ঠস্বর। কী নাম?

হেলম্যান। জিম হেলম্যান।

হারিকেন উঁচিয়ে আগন্তুকের চেহারা খুঁটিয়ে পরখ করল ডেপুটি শেরিফ। ক্ষতচিহ্ন খুঁজছে। আছে, আগন্তুকের ডান গালে, জুলফির কাছে একটা কাটা দাগ।

রাগে জ্বলে উঠল ফ্যারেল; আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটল যেন। ডান হাতে ঝট করে হেলম্যানের কলার ধরল ও। শুয়োরের বাচ্চা, তোমার গাল কাটল কী করে?

বিস্ময়ে বিস্ফারিত হলে হেলম্যানের চোখজোড়া। অজান্তেই হাত বাড়িয়ে ক্ষতে আঙুল ছোঁয়াল সে। কাটা গাছের সঙ্গে ঘষা লেগে… চুপ করে গেল হেলম্যান, ঢোক গিলল।

নাকি, হারামজাদা, কারও নখের দাগ?

ক্লিফ! ওকে শান্ত করার চেষ্টা করল স্টোন।

সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল হেলম্যান। দাঁড়াও! কী করেছি বলবে তো?

লোকটার কলার ছেড়ে দিল ফ্যারেল; নইলে, জানে, হারিকেন ফেলে বা হাতুও উঠিয়ে আনবে ও, হত্যা করার চেষ্টা করবে আগন্তুককে।

তোমাকে আমাদের সঙ্গে যেতে হচ্ছে, রূঢ় কণ্ঠে বলল স্টোন।

কেন? কসম, খোদার, কী দোষ করেছি বলো?

হাত দিয়ে ওকে সামনে ঠেলে দিল জেস স্টোন। ক্লিফের সন্দেহ হলো বাধা দেয়ার চেষ্টা করবে লোকটা। করুক, মনে মনে প্রার্থনা করল ও।

কিন্তু সিদ্ধান্ত বদলাল আগন্তুক। অসংলগ্ন পা ফেলে সামনে এগোল। লোকটার টুপি আর জুতো তুলে নিল ক্লিফ। অনুসরণ করল ওকে।

মই বেয়ে স্টোন নীচে নামল আগে, ওর পেছনে হেলম্যান, জুতো আর টুপি নীচে ফেলে সব শেষে নামল ফ্যারেল। হেলম্যানের পায়ের দুটো মোজাই ভেঁড়া, আঙুল দেখা যাচ্ছে। জুতো পরে নিল সে, টুপিটা মাথায় চাপাল। ফের ওকে ধাক্কা দিল স্টোন। ওদের আগে আগে লিভারি বার্ন ছেড়ে বেরিয়ে এল হেলম্যান।

নিজেকে বঞ্চিত মনে হচ্ছে ক্লিফের; ফলে আরও খেপে উঠছে। ও যাকে খুঁজছে, সে হেলম্যান নয়। নিষ্ঠুর হিংস্র গোঁয়ার কেউ হবে অপরাধী; যাকে দেখলে স্পষ্ট বোঝা যাবে একমাত্র তার পক্ষেই সোনিকে অপমান করা সম্ভব। কিন্তু হেলম্যানের মাঝে অসহায় একটা ভাব ছাড়া কিছু নেই।

জেলহাউসে পৌঁছুল ওরা। হেলম্যানের কয়েক কদম পেছনে থেকে তীক্ষ্ণ চোখে তাকে জরিপ করছে ফ্যারেল। আগে ভেতরে ঢুকে বাতি জ্বালল স্টোন। তারপর হেলম্যান ঢুকল, পেছনে ফ্যারেল।

হাতের হারিকেন নেভাল ও, নিভিয়ে দিল স্টোনেরটাও। বন্ধ করল দরজাটা।

এবার, ব্যাটা, কথা বল। সারা রাত ছিলে কোন চুলোয়?

ক্লিফ, স্টোন তারপর আবার ক্লিফের দিকে তাকাল হেলম্যান। কেন, ওই চিলেকোঠাতেই। দশটার পর থেকেই ওখানে ছিলাম!

নিকোলাস তোমাকে উঠতে দেখেছে?

স্ট্যাবলম্যান? একশোরার! আমার কাছ থেকে ম্যাচের কাঠিগুলো সে-ই তো কেড়ে রাখল।

তার আগে? কর্কশ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল ডেপুটি শেরিফ ফ্যারেল।

স্যালুনে, বাট স্যালুনে।

মদ গিলছিলে?

ঈষৎ লাল হলো হেলম্যানের চেহারা। শুধু এক গ্লাস বিয়র খেয়েছি। একটা নিকেল ছিল, সেটা দিয়েই বিয়র কিনেছি, খেয়েছি ফ্রি-লাঞ্চ কাউন্টারে।

মেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই কতদিন?

মেঝের দিকে চেয়ে জবাব দিল হেলম্যান। অনেকদিন। আমার মতো, লোকের কাছে মেয়েরা আসবে কেন?

হাত দুটো দেখি?

বিনা আপত্তিতে নির্দেশ পালন করল হেলম্যান।

উল্টো দিক।

হাত ওল্টাল হেলম্যান। আঙুলের গিঁটে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ক্ষতচিহ্ন খুঁজল ক্লিফ। সোনিয়াকে আঘাত করার সময় ওর দাঁতে লেগে কেটে থাকতে পারে। কিন্তু তেমন কিছু পাওয়া গেল না। এতে অবশ্য প্রমাণ হয় না লোকটা নির্দোষ।

স্টোন বলল, সেলে ঢুকিয়ে দাও ব্যাটাকে।

সেলব্লকের দরজার দিকে ইশারা করল ক্লিফ। হাঁটো।

আড়ষ্ট হয়ে গেল হেলম্যান। কী আশ্চর্য! কি দোষ করেছি বলবে না?

জবাব দিতে মুখ খুলল ফ্যারেল, কিন্তু আগেই কথা বলে উঠল শেরিফ। মনে করো বাউণ্ডেলের মতো ঘুরে বেড়ানোটাই আপাতত তোমার দোষ। যাও, এবার হাজতে ঢোকো।

হেলম্যানের চেহারায় স্বস্তির ছাপ পড়ল। ক্লিফের সঙ্গে হাজতের দিকে পা বাড়াল। ঢুকে পড়ল একটা সেলে। দড়াম করে দরজা আটকাল ফ্যারেল, তালা লাগাল, শেরিফের ডেস্কের ওপর ছুঁড়ে ফেলল চাবিটা।

ওর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল স্টোন। নাহ, আমরা যাকে খুঁজছি এলোক সে নয়।

দরজার সামনে এসে দাঁড়াল ক্লিফ ফ্যারেল, অগ্নিদৃষ্টিতে বাইরে তাকাল। তারপর হঠাৎ ঘুরে স্টোনের মুখোমুখি হলো। ছসাতজন লোক দাঁড়িয়ে আছে বাইরে।

দরজার দিকে এগিয়ে এল স্টোন। কবাটে লাগানো কাঁচের ফোকর দিয়ে উঁকি দিল। কিছু করছে না, বলল ক্লিফ, স্রেফ চুপচাপ দাঁড়িয়ে এদিকে তাকিয়ে, আছে।

জবাব দিল না স্টোন। টান মেরে দরজা খুলল। তারপর কর্কশ কণ্ঠে চিৎকার করে জনতার উদ্দেশে বলল, তোমাদের ঘরে যেতে বলেছি না!

ব্যাটা ধরা পড়েছে, তাই না, জেস?

একজনকে ধরেছি, কিন্তু ওই দোষী জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না। যাও ঘরে ফিরে যাও সবাই।

ছেলে ভুলানো কথায় লাভ নেই, জেস। তুমি ভালো করে জানো ওটাই আসল হারামজাদা!

না, জানি না। কাল আবার জেরা করা হবে ওকে। তখন যদি দেখা যায় সে নির্দোষ, ছেড়ে দেব।

চেঁচিয়ে উঠল কেউ একজন। জেলে যখন ঢুকিয়েছ, ওই শালাই দোষী?

বিদ্রূপ ঝরল জেস স্টোনের কণ্ঠে। কাউন্টি পে-রোলে তোমার নাম লেখার ভাবছি, পোমরয়, কিছু টাকা বেঁচে যাবে। একাই জুরী আর জাজের, কাজ চালিয়ে নিতে পারবে অনায়াসে। ফিরে এসে সশব্দে দরজা বন্ধ করল, স্টোন, যথাস্থানে বসাল হুড়কোটা।

দরজার দিকে ফিরল ক্লিফ ফ্যারেল। পাঁচশো মাইলের মধ্যে এত মজবুত, সুরক্ষিত জেল কোথাও নেই, ভাবল ও। দুফুট চওড়া, আগাগোড়া পাথরের তৈরি দেয়াল, চৌকো বীমের ওপর বসানো ছাদ, কমপক্ষে চোদ্দ ইঞ্চি পুরু দুই বর্গ ফুটের একেকটা পাথরখণ্ড দিয়ে তৈরি হয়েছে মেঝে। এই জেল ভেঙে আসামীকে বের করে নেবে, এমন কেউ এখনও জন্ম নেয় নি।

জানালার শিকগুলো প্রায় এক ইঞ্চি মোটা, মাত্র তিন ইঞ্চি পর পর বসানো পাথরের বেশ গভীরে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ওগুলোর দুপ্রান্ত। বাইরে যাবার একমাত্র দরজা দুই ইঞ্চি পুরু ওক কাঠের তক্তায় তৈরি, ভেতর থেকে খুলে না দিলে জোর করে এখানে ঢোকা কঠিন।

ঘড়ির দিকে তাকাল ক্লিফ। রাত দুটো। ঘণ্টাখানেকের ভেতর ট্রেইল করার মতো পর্যাপ্ত আলো ফুটে উঠবে। স্টোনের উদ্দেশে ও বলল, আমাদের একজনের এখানে থাকা উচিত। তোমার আপত্তি না থাকলে আমি ট্রেইল, করতে চাই, জেস।

কাঁধ ঝাঁকাল জেস স্টোন, আপত্তির কী আছে। তোমারই তো যাওয়া দরকার।

ধন্যবাদ।

প্যসি লাগবে?

এক মুহূর্তের জন্যে দোটানায় ভুগল ক্লিফ ফ্যারেল। তারপর মাথা নেড়ে অসম্মতি জানাল। প্যসি ছাড়াই অনেক ঝামেলা সামাল দিতে হবে আমাকে। দরজার দিকে তাকাল ও। লিঞ্চিংয়ের পাঁয়তারা করছে শহরবাসীরা, ভাবল।

যেমন তোমার ইচ্ছে, বলে কিছুক্ষণ চুপ করে রইল স্টোন, তারপর নিরাসক্ত কণ্ঠে বলল, নিজে সবার বিচার করত তোমার বাবা, সেটাই তার কাল হয়েছিল জীবনে। একবার মাত্র ভুল করেছে এবং একটা ভুলই ধ্বংস করে দিয়েছে তাকে। তুমিও একই ভুল করো না যেন।

একদৃষ্টে কয়েক মুহূর্ত স্টোনের দিকে তাকিয়ে থাকল ক্লিফ ফ্যারেল। কী করবে নিজেই বুঝতে পারছে না। খানিক আগে হেলম্যানের গালে ক্ষতচিহ্ন দেখেই তাকে খুন করতে খেপে উঠেছিল ও।

অপর লোকটার মুখোমুখি হবার পর কী ঘটবে কে জানে? জানতে পারলে ভবিষ্যতে ও শেরিফ হতে পারবে কিনা বোঝা যেত।

আস্তাবল থেকে ঘোড়া নিয়ে আসি, স্টোনের উদ্দেশে বলল, ক্লিফ ফ্যারেল।

মাথা দুলিয়ে সায় দিল শেরিফ। বাইরে বেরিয়ে এল ফ্যারেল। দরজা বন্ধ করে, হুড়কো বসাল স্টোন, বুঝিয়ে দিল, জনতাকে গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করেছে।

চেঁচিয়ে উঠল পোমরয়। কোথায় যাচ্ছ, ক্লিফ?

ঘোড়া আনতে।

প্যসি নিয়ে বেরোবে?

না। আমি একাই যাচ্ছি।

ভিড়ের মাঝে হেসে উঠল কে যেন। আরেকজন বলল, বাপকা বেটা!

লিভারি বার্ন-এর দিকে এগোল ক্লিফ ফ্যারেল। ওর বাবা সব সময় যেভাবে ফিরে আসত-ঘোড়ার পিঠে পলাতক আসামীর লাশ ফেলে-ওর কাছেও তেমনি কিছুই আশা করছে শহরবাসীরা।

হয়তো সেরকম কিছুই করবে ও। কে জানে? কানের কাছে সোনির কণ্ঠস্বর বাজছে: ওকে খুন কর, ক্লিফ। খুঁজে বের করে ওকে খুন কর!

সোনির ইচ্ছে তাই। ও নিজেও. তা-ই চায়।

আস্তাবল থেকে একটা বিশাল বাদামী গেল্ডিং ভাড়া করল ক্লিফ। এই শহরে এর চেয়ে শক্তিশালী, ঘোড়া আর নেই। সযত্নে ঘোড়ার পিঠে জিন চাপিয়ে জেলহাউসে ফিরে এল ফ্যারেল। ইতিমধ্যে আলোর আভাস দেখা দিয়েছে পুব দিগন্তে; ভোরের আগমনবার্তা ঘোষণা করছে।

জেলহাউসে ঢুকল ফ্যারেল। একটা রাইফেল বাছাই করল, দুবাক্স কার্তুজ নিল। অতিরিক্ত এক বাক্স কার্তুজ নিল পয়েন্ট ফোর-ফোর পিস্তলটার জন্যে। চাদর আর বর্ষাতি নিতে ভুল করল না।

বাইরে এসে স্যাডলে বাঁধল সব। রাস্তার ওধারে এখনও দাঁড়িয়ে আছে জনতা, তাকিয়ে আছে জেলহাউসের দিকে। একটা বোতল থেকে মদ খাচ্ছে পালা করে।

স্যাডলে চেপে সোনিয়াদের বাড়ির দিকে এগোল ক্লিফ। চারদিকে আবছা অন্ধকার। কী ভেবে হঠাৎ ঘুরে ডাক্তার বাড়ির পথ ধরল ও। রান্নাঘরে আলো জ্বলছে দেখে পেছনের দরজায় টোকা দিল।

 নাশতা সারছিল ডাক্তার, স্বাগত জানাল ওকে। এসো। এসো, নাশতা করে নাও।

ভেতরে ঢুকল ক্লিফ। কফি ঢেলে দিল ডাক্তার। কাপে চুমুক দিল ডেপুটি। যে প্রশ্নটা এতক্ষণ খুঁচিয়ে চলছিল, অবশেষে জিজ্ঞেস করল। ওকে কেমন দেখলে, ডাক্তার? ভালো হবে তো?

মুখ ভর্তি রুটি নিয়ে মাথা দোলাল ডাক্তার। উঠে দাঁড়াল সে। তাওয়ায় চাপানো রুটিটা উল্টে দিল। তারপর ক্লিফের দিকে না ফিরেই বলল, ঘুমের ওষুধ দিয়ে এসেছি, ঘুমোচ্ছে ও, ঘুম থেকে উঠলে মোটামুটি সুস্থ হয়ে উঠবে। দেহ-মনে মারাত্মক চোট পেয়েছে মেয়েটা, সেই সঙ্গে একটা প্রবল ধাক্কা। দৈহিক আঘাত সামলে নিতে পারলেও মানসিক ধাক্কা সামলে উঠতে স্বভাবতই সময় লাগবে কিছুটা।

বিয়েটা পিছাতে হবে না তো?

মুহূর্তের জন্যে, ফ্যারেলের দিকে তাকিয়েই দৃষ্টি সরিয়ে নিল ডাক্তার। সেটা করলে মারাত্মক ক্ষতি করা হবে মেয়েটার। যে ভাবে হোক বিয়েটা সেরে ফেল। কিন্তু শুরুতে ওর কাছ থেকে বেশি কিছু আশা করতে যেয়ো না।

কফি পান শেষে ডাক্তারকে ধন্যরাদ জানিয়ে বেরিয়ে এল ক্লিফ ফ্যারেল। খালি চোখে মাটি দেখা যাচ্ছে, ট্রেইল করার সময় হয়েছে।

<

Super User