বিকেল বেলা কেসের রিপোর্ট লিখছিল রবিন মিলফোর্ড। বাইরে বসন্তের রোদ। ছোট ছেলেমেয়েরা খেলছে। একটা গাড়ির দরজা বন্ধ হওয়ার শব্দ হল। কাজ থেকে ফিরেছেন রবিনের বাবা মিস্টার মিলফোর্ড।

কয়েক মিনিট পর ঘরে ঢুকলেন তিনি। রবিনকে দেখে হাসি ফুটল মুখে। বললেন, এই যে, গোয়েন্দা। গুপ্তধন খোঁজার ইচ্ছে আছে? যে বের করতে পারবে, ওগুলো তার।

ঝট করে মুখ তুলল রবিন। হারিয়ে গেছে?

না, লুকিয়ে রাখা হয়েছে।

লোকটা তাহলে পাগল, ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল রবিন। নইলে লুকিয়ে রেখে খুঁজতেই বা বলবে কেন? আর যে পাবে তাকেই বা দিয়ে দেবার কথা বলবে কেন?

আমি তোমার সঙ্গে একমত, হাসলেন বাবা। চোয়াল ডললেন। তোমাদের মিস্টার ক্রিস্টোফারকেও এতে জড়ানো হয়েছে, তিনি তো আর পাগল নন। এই যে, লেখাটা পড়ে দেখ, একপাতা কাগজ রবিনের দিকে বাড়িয়ে দিলেন তিনি।

কাগজটা লম্বা, খবরের কাগজের গ্যালি প্রুফ, যে কাগজটায় তিনি চাকরি করেন। খবরটা কাল বেরোবে। তোমাদেরকে আগেই জানাব বলে নিয়ে এসেছি।

কাগজটায় লেখাঃ

খামখেয়ালী ধনীর চ্যালেঞ্জ
গুপ্তধন খুঁজে বের করত পারলে রেখে দাও

পারিবারিক উকিলের ধারণা, এই খেপাটে উইল যিনি করেছেন, তাঁর মানসিক রোগ ছিল।

রহস্যমানব সন্ন্যাসী ডেন কারমলের মৃত্যু হয়েছে গত রবিবার, রকি বীচে। তিনি ঘোষণা করে গেছেন, তার রেখে যাওয়া সমস্ত সম্পত্তি তারই হবে যে ওগুলো খুঁজে পাবে।

তাঁর দীর্ঘদিনের বন্ধু ড্যাম সান গতকাল এই খবর প্রকাশ করেছেন। বিশ বছর ধরে রকি বীচে বাস করছিলেন ডেন কারমল। সব সময় খুব সাদাসিধা পোশাক পরে থাকতেন এই রহস্যময় মানুষটি, বাস করতেন একটা পুরানো বাড়িতে, কিন্তু লোকের বিশ্বাস তিনি ছিলেন কোটিপতি।

ডেন কারমলের উকিল রস উড বলেছেন, শেষদিকে মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁর মক্কেলের। নইলে ওরকম উইল করতে পারতেন না। কারণ তাঁর পুত্রবধু আর এক নাতি রয়েছে। ওদের নামে নাকি একটা উইলও করা হয়েছিল আগে।

ডেন কারমলের এই আজব উইলের সাক্ষী হয়েছেন মিস্টার সান এবং আরেক বান্ধবী মিসেস ডোরা কেমপার।

প্রতিবেদনটির নিচে পুরো উইলটা লেখা রয়েছে, পড়তে পড়তে উত্তেজিত হয়ে উঠল রবিন। পড়া শেষ করে বলল, বাবা, কিশোর আর মুসাকে দেখিয়ে আনি? ডিনারের তো এখনও দেরি আছে।

হেসে মাথা ঝাঁকালেন মিস্টার মিলফোড।

ফোনের দিকে দৌড় দিল রবিন। ফোন করে বন্ধুদেরকে থাকতে বলে ছুটে বেরোল ঘর থেকে।

সাইকেল নিয়ে পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডের গেটে এসেই থমকে গেল রবিন। অনেকগুলো পুরানো মালের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন কিশোরের মেরিচাচী, তারমানে কাজ। সদর গেট দিয়ে আর ঢুকল না সে, ঘুরে চলে এল সবুজ ফটক এক-এর কাছে। ভেতরে ঢুকে, ওয়ার্কশপে সাইকেল রেখে, দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে এসে ঢুকল হেডকোয়ার্টারে।

কি ব্যাপার, নথি? দেখেই বলে উঠল কিশোর পাশা।

খাইছে, রবিন, বলল মুসা আমান, এত উত্তেজিত। ভাল খবর নিয়ে এসেছ মনে হয়?

জবাব না দিয়ে নীরবে কাগজটা কিশোরের হাতে দিল রবিন। জোরে জোরে পড়তে লাগল গোয়েন্দাপ্রধান। প্রতিবেদন শেষ করে উইল পড়লঃ,

আমি, ডেন নিকোলাস কারমল ঘোষণা করছি যে আর দশজন স্বাভাবিক সুস্থ মানুষের মতই সুস্থ রয়েছি আমি। আমার আত্মীয় এবং তাদের বন্ধুদেরকে আমি পছন্দ করি না, কারণ ওরা অতিমাত্রায় লোভী, হিংসুক, স্বার্থপর। আমার মতে ওরা খারাপ লোক। কাজেই আমার সারা জীবনের কষ্টার্জিত সম্পদ ওদেরকে দান করে যাবার কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না।

এটা আমার শেষ ইচ্ছের দলিল। আমার পুত্রবধু, ভাগ্নে এবং ভাগ্নি প্রত্যেককে ১.০০ (এক) ডলার করে দান করে গেলাম। বাকি যা সহায় সম্পত্তি থাকবে, ওগুলো নির্দিধায়, খুশিমনে দিয়ে গেলাম যে আমার লুকানো ধন খুঁজে বের করতে পারবে তাকে। কারণ প্রচুর মাথা খাঁটিয়ে যে বের করতে পারবে, তারই ভোগ করার অধিকার থাকবে ওগুলো।

গুপ্তধন পেতে চাইলে তাকে এই ধাঁধার সমাধান করতে হবে–
হোয়্যার দ্য ওয়াইন্ড ডগস লিভস, দ্য বটল অ্যান্ড স্টপার
শোজ দ্য ওয়ে টু দ্য বিলাবং।

অ্যাবাভ দ্য আপলস অ্যাণ্ড পেয়ারস অল অ্যালোন
দ্য লেডি ফ্রম ব্রিসটল রাইডস ফ্রম আ ফ্রেণ্ড।

অ্যাট দ্য টেনথ বল অভ টোয়াইন, ইউ অ্যাণ্ড মি
সি আওয়ার হ্যাণ্ডসাম মাগ অ্যাহেড।

ওয়ান ম্যানস ভিকটিম ইজ অ্যানাদারস ডারলিন,
ফলো দ্য নোজ টু দ্য প্রেস।

হোয়্যার মেন বাই দেয়ার ট্রাবল অ্যান্ড স্ট্রাইফ,
গেট আউট ইফ ইউ ক্যান।
ইন দ্য পশ কুইনস ওল্ড নেড, বি ব্রাইট
অ্যাণ্ড দ্য নেচারাল অ্যান্ড দ্য প্রাইজ ইজ ইওরস।

কে ভাবতে পেরেছিল বৃদ্ধ ওই মানুষটির এত টাকা? পাশা গড়িয়ে দাও লুটের মাল তোমার।

আমার সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক হবেনঃ ড্যাম সান, যে আমাকে পছন্দ করত; সিংক অ্যাণ্ড ওয়াটারস, যারা টাকা পছন্দ করে; ডেভিস ক্রিস্টোফার, যার তৈরি ছবি আমি পছন্দ করতাম, আর যিনি নিজে রহস্য খুব পছন্দ করেন।

নাটকীয় ভঙ্গিতে পড়া শেষ করে মুখ তুলল কিশোর। একান ওকান হয়ে গেছে হাসি।

খাইছে! বিড়বিড় করল মুসা, মরা মানুষের ধাঁধা! কিশোর, ওটা সত্যি সত্যি উইল, না কোন পাগলের রসিকতা?

আমার তো মনে হচ্ছে আসলই, কিশোর বলল। এর মধ্যে খেপামির কিছু দেখছি না। তবে বুঝতে পারছি না উইলটা বৈধ কিনা, মানে, যে গুপ্তধন খুঁজে পাবে সত্যিই সে রাখতে পারবে কিনা। যদি বৈধ হয়ও তারপরেও কথা থেকে যায়। তার বংশধররা গিয়ে কোর্টে নালিশ করতে পারে, ডেন কারমল পাগল ছিলেন। তখন সবকিছু বিবেচনা করে কোর্ট হয়ত তাদের পক্ষেই রায় দিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু তার পরেও, চোখের তারা ঝিলিক দিয়ে উঠল গোয়েন্দাপ্রধানের, ভেবে অবাক হচ্ছি আমি, কি লুকিয়ে রেখে গেছেন ভদ্রলোক? এবং কোথায়?

মিস্টার ক্রিস্টোফার হয়ত বলতে পারবেন বৈধ কিনা, রবিন বলল।

ঠিক বলেছ, তুড়ি বাজাল কিশোর। রিসিভার তুলে ডায়াল করল। অফিসেই আছেন বিখ্যাত চিত্রপরিচালক। কেন ফোন করেছে, জানাল সে।

সর্বনাশ! আঁতকে উঠলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। খবরটা বেরোলে আমার মাথা খারাপ করে ফেলবে লোকে! আমার নাম ঢুকিয়ে দেয়ার কোন অধিকার ছিল না খেপাটে বুড়োটার। ভালমত চিনতামই না তাকে।

বুঝেছি, স্যার, অস্বস্তিতে নড়েচড়ে বসল কিশোর। কিন্তু উইলটা কি বৈধ? মানে লুকানো জিনিসগুলো যদি খুঁজে পাই…?

একটা ছবিতে ওর পরামর্শ নিয়েছিলাম, তাইতেই আমার এই সর্বনাশ…! হ্যাঁ, কি যেন বললে? বৈধ? জানি না, তবে রীতিমত পাগলামি। কোর্টে টিকবে বলে মনে হয় না। ইচ্ছে হলে এটা নিয়ে যত খুশি সময় নষ্ট করতে পার তুমি, কিশোর পাশা, তবে দোহাই তোমার, আমার সময় নষ্ট কোরো না!

লাইন কেটে দেওয়া হল ওপাশ থেকে।

নষ্ট করবে নাকি সময়? মুসা বলল। টেলিফোন লাইনের সঙ্গে যোগ করা লাউডস্পীকারে সবাই শুনতে পেয়েছে ওপাশের কথা।

খেপাটে বুড়ো, বলল রবিন। মিস্টার ক্রিস্টোফার ঠিকই বলেছেন। কারমলের উইল টিকবে না। বংশধরেরাই পেয়ে যাবে সমস্ত সম্পত্তি।

তা পাক, উত্তেজিত হয়ে বলল কিশোর। কিন্তু একটা কথা বুঝতে পারছ না কেন? কোর্ট তাদেরকে গুপ্তধনগুলো বের করে দিতে পারবে না। বের করতে হলে এই ধাঁধার সমাধান করতে হবে।

টেলিফোনের তীক্ষ্ণ শব্দে চমকে উঠল তিনজনেই। মিস্টার ক্রিস্টোফার করেছেন। বললেন, কেস বোধহয় একটা পেলে তোমরা। কারমলের আত্মীয়স্বজনেরা ফোন করেছিল এইমাত্র। তাদেরকে তোমাদের সাহায্য নেয়ার পরামর্শ দিলাম।

মানে, স্যার…!

ওরা বোধহয় এখুনি কথা বলবে তোমাদের সঙ্গে। এই পাগলামিতে আমি আর নাক গলাতে চাই না। আবার লাইন কেটে দিলেন পরিচারক। কিশোরের মনে হল এবার স্বস্তির সঙ্গে রিসিভার রেখেছেন।

পরস্পরের দিকে তাকিয়ে হাসল তিন গোয়েন্দা। নতুন আরেকটা কেস!

পরদিন সকালে স্কুলে যাবার আগে তিনজনেই আবার হেডকোয়ার্টারে মিলিত হবে, এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিদেয় হল রবিন আর মুসা। কিশোর রইল হেডকোয়ার্টারেই। ফোনের কাছে বসে একটা ব্যস্ত বিকেল কাটাতে হবে তাকে।

<

Super User