বিয়েতে রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর নাদিম মসজিদে গিয়ে দুরাকাত শোকরানার নফল নামায পড়ে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের সুখ-শান্তির জন্য দোয়া চাইল। তারপর ঘরে এসে দেখল, তার রুমের বারান্দায় মেয়েদের ভিড়। তাদের সঙ্গে জুলেখা ভাবিও রয়েছে। রুমের ভিতর হাসির রোল শুনে নাদিম বুঝতে পারল, নতুন বৌকে নিয়ে নানারকম কৌতুক চলছে। নাদিম মায়ের রুমের দিকে আসতে লাগল।
কুদ্দুসের স্ত্রী ফাহমিদা বড় জায়ের সঙ্গে বসে পান খাচ্ছিল। সে নাদিমকে আসতে দেখে উঠে গিয়ে জুলেখাকে বলল, বৌ এবার ওদেরকে ঘরের ভিতর থেকে ডেকে নিয়ে সব চলে যাও, নাদিম এসেছে।
জুলেখা সবাইকে ডেকে বিদায় করে দিয়ে নাদিমের কাছে এসে বলল, এতক্ষণ কোথায় ছিলে? বিয়ের দিন কেউ বুঝি এত রাত বাইরে থাকে? চল, ঘরে চল। নাদিমের। রুমেই বাসরশয্যা হয়েছে। জুলেখা তাকে সাথে করে রুমের দরজার কাছে এসে বলল, ভিতরে যাও। দোয়া করি আল্লাহ যেন আজকের রাত তোমাদের জন্য শুভ করেন, আনন্দের করেন, দুজন দুজনকে চিনবার তওফিক দেন। তারপর সে চলে গেল।
নাদিম কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে তক্তপোষের কাছে। এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে সাজেদার দিকে তাকিয়ে রইল।
সাজেদা তক্তপোসের উপর থেকে নেমে নাদিমকে কদমবুসি করল।
নাদিম তাকে দুহাত দিয়ে ধরে দাঁড় করিয়ে মাথায় চুমো খেয়ে বলল, আল্লাহ তোমাকে তোমার নামের অর্থমতো ধার্মিক করুক। তারপর ঘোমটা সরিয়ে চিবুক ধরে বেশ কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
সাজেদা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল। বেশ কিছুক্ষণ পর কম্পিত পাপড়ি খুলে বলল, এতক্ষণ ধরে কি দেখছেন?
নাদিম বলল, আল্লাহপাকের এক অপূর্ব সৃষ্টি দেখছি। সত্যি, তিনি তোমাকে। সৌন্দর্যের রানী করে গড়েছেন।
ছোটবেলা থেকে রূপের প্রশংসা শুনে শুনে সাজেদার বেশ গর্ব ছিল। আজ স্বামীর মুখে সেই প্রশংসা শুনে আরো গর্বিত হল। স্বামীকে খুশি করার জন্য বলল, আপনিও কম কিসে।
নাদিম বলল, আপনি করে না বলে তুমি করে বল। তারপর তাকে বসিয়ে নিজেও পাশে বসে তার নমর নিটোল হাত দুটো ধরে বলল, তোমাকে কয়েকটা কথা বলতে চাই, তুমি বিরক্ত বোধ করবে না তো?
সাজেদা বলল, না করব না, বল কি বলবে।
নাদিম বলল, জেনেছি তুমি ধনী ঘরের মেয়ে। খুব আদরে মানুষ হয়েছ। আমরা কিন্তু মধ্যবিত্ত। এখানে তোমার হয়ত সবকিছুতে বেশ একটু অসুবিধে হবে। সেগুলো মেনে নেয়ার চেষ্টা কর। আর আমার আব্বা-আম্মা এবং চাচা-চাচীদেরকে আপন। আব্বা-আম্মা ও চাচা-চাচি মনে করবে। তাদের সঙ্গে ঝগড়া তো দূরের কথা সামান্য কথা কাটাকাটিও করবে না। বিশেষ করে আম্মার সঙ্গে কোনো বেয়াদবি করো না। আম্মা আমাদের পুরো ফ্যামিলির বড় মা। ছোট-বড় সবাই তাকে মেনে চলে, ভক্তি শ্রদ্ধা করে। তুমিও তাই করবে। যা বলবে বিনা দ্বিধায় তৎক্ষণাৎ তা পালন করবে। নানাদের অবস্থার তুলনায় আমরা কিছুই না। মুরুব্বিদের মুখে শুনেছি এবং আমার জ্ঞান। হওয়ার পর থেকে আম্মাকে যতটুকু জেনেছি, তার মতো মেয়ে পৃথিবীতে বিরল। ঐ যে দেখছ আলমারী, ওতে বিভিন্ন ধরনের প্রচুর বই আছে। সব আম্মা পড়েছে। তুমিও অবসর সময়ে পড়বে। প্রচুর জ্ঞান পাবে। আজ আর বেশি কিছু বলে বিরক্ত করব না। এবার ঘুমান যাক বলে নাদিম বালিশে মাথা রেখে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল।
সাজেদা টাউনঘেঁষা মেয়ে। প্রেমতলী গ্রাম রাজশাহী টাউনের পাশে। তার উপর ম্যাট্রিক পাস। খুব চালাক-চতুর ও বাকপটু এবং হঁচড়েপাকা। চাচাতো ভাবিদের কাছে এবং যে সব চাচাতো বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে, তাদের কাছ থেকে স্বামী-স্ত্রীর অনেক ঘটনা শুনে শুনে পাকা হয়ে গেছে। তার উপর নানা রকম আজেবাজে উপন্যাস পড়ে আরো ঝুনো হয়েছে।
নাদিম ঘুমোবার কথা বলতে বলল, আজকের রাতে কেউ ঘুমায় নাকি? এই শুভরাত তো মানুষের জীবনে মাত্র একবার আসে।
নাদিম এমনি কথার ছলে ঘুমাবার কথা বলেছিল। সাজেদার কথা শুনে ভাবল, সে নিশ্চয় বাসর রাত সম্বন্ধে অনেক কিছু জানে। কতটা জানে পরীক্ষা করার জন্য বলল, তোমার কথা ঠিক; এই রাত মানুষের জীবনে একবারই আসে; কিন্তু শুধু শুধু রাত জেগে কি লাভ? তার চেয়ে ঘুমালে অনেক লাভ।
জেগে থাকলেও লাভ আছে।
কি লাভ যদি বল তা হলে জেগে থাকতে পারি।
সে লাভ মুখে বলা যায় না।
যেভাবে বলা যায় সেভাবে বল।
মেয়েরা সেভাবেও বলতে পারে না।
কোন ভাবেই যখন বলতে পারবে না তখন আর সেই লাভের কথা না তোলাই ভালো ছিল।
নাদিমের কথা শুনে সাজেদা ভাবল, সে কি তা হলে স্বামী-স্ত্রীর মিলনের কথা জানে না? সাজেদা জেনেছে, স্বামীরা বাসর রাতে স্ত্রীর দেহ ভোগ করার জন্য নানা রকম মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে কাজ হাসিল করে। সে ব্যাপারে নাদিমের কোনো আগ্রহ নেই দেখে বেশ অবাক হল। হঠাৎ তার চাচাতো ভাবি কুলসুমের কথা মনে পড়ল, তার চাচাতো ভাই ইউনুস বাসর রাতে কেমন কৌশলে তাকে ভোগ করেছিল; সেই কথা চিন্তা করতে লাগল।
সাজেদার মতো অপূর্ব রূপসীকে স্ত্রীরূপে পেয়ে নাদিমের পঁচিশ বছরের যৌবন ক্ষুধা বাধভাঙা বন্যার পানির মতো সমস্ত শরীরে ছুটে চলেছে। এতক্ষণ লজ্জা ও সম্মানের ভয়ে এবং তাকে জানার জন্য নিজেকে কঠোরভাবে দমন করে রেখেছিল। সাজেদার কথা শুনে বুঝতে পারল, দুজনেরই অবস্থা এক। তাকে চুপ করে থাকতে দেখে বলল, কিছু বলছ না কেন? চুপ করে থাকলে তো ঘুমিয়ে পড়ব।
সাজেদা তার কথা শুনে চিন্তা করল, মেয়েছেলে হয়ে এতটা যা বলেছি, তা অন্য কেউ শুনলে বেহায়া ভাববে। আর কি বলবে, ভাবতে লাগল।
নাদিম এবার দুষ্টুমি করে বলল, ঠিক আছে, কিছুই যখন কলার নেই তখন ঘুমিয়ে পড়ছি।
সাজেদা চিন্তা করে চলেছে, সে সত্যি কিছু জানে না, না জেনেও না জানার ভান করছে? বলল, তুমি তো আলমারী ভর্তি বই পড়ে কতকিছু জেনেছ, আর আজকের রাতের সামান্য ব্যাপারটা জান না?
নাদিম আবার দুষ্টুমি করে বলল, জানি না বলেই তো জিজ্ঞেস করছি। জানলে তোমার সঙ্গে এতক্ষণ বকবক করতাম না।
সাজেদারও নাদিমের সৌন্দর্যপূর্ণ সুন্দর স্বাস্থ্য দেখে তার বিশ বছরের যৌবন, চাওয়া পাওয়ার আনন্দে অধীর হয়ে উঠল। তাকে জড়িয়ে ধরে তার বুকের উপর মাথা রেখে বলল, আমি জেনেও যে লজ্জায় বলতে পারছি না।
নাদিমও তাকে জড়িয়ে ধরে টেনে নিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট রেখে বলল, তুমি বলতে না পারলেও আমি পারি।
বিয়ের চার দিন পর শিহাব মেয়ে জামাই নিয়ে বাড়ি ফিরল। দুদিন পর খুব ধূমধামের সঙ্গে খানা করে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের লোকদের খাওয়াল। সবাই জামাই দেখে খুব আনন্দিত।
শ্বশুর বাড়িতে এসে নাদিম সাজেদার আসল রূপ দেখে যেমন খুব অবাক হল তেমনি মনে মনে খুব শংকিত হয়ে পড়ল। সে বাপ-চাচাদেরকে তুমি করে বললেও মা, চাচি ও দাদির সঙ্গে তুই-তোকারি করে কথা বলছে। দোতলায় বারান্দা থেকে সবাইকে হুকুম করছে। আর একটা জিনিস নাদিম লক্ষ্য করল, ছোট-বড় সবাই যেন সাজেদাকে ভয় ভয় করছে। তার হুকুম মানার জন্য সবাই যেন তটস্থ হয়ে থাকে। এমন কি নাদিমকে খাওয়াবার সময়ও সে নিজে কোনো কিছু নিয়ে আসে না, বারান্দা থেকে অন্যকে নিয়ে আসতে বলে। তার কথা পালন করতে কেউ যদি দেরি করে, তা হলে ছোট হোক আর বড় হোক, তাকে খুব গরম মেজাজে কড়া কড়া কথা শুনিয়ে দেয়। সাজেদার এহেন রূপ দেখে নাদিমের দাম্পত্য জীবনের স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গেল। চিন্তা করল, এরকম স্বভাবের মেয়েকে নিয়ে কি করে আমি সারা জীবন কাটাব? এইসব ভেবে নাদিমের মন খুব খারাপ হয়ে গেল।
নাদিমের সঙ্গে বন্ধু রিয়াজুল ও তার এক দুলাভাই এসেছিল। দুলাভাই দুদিন থেকে বাড়ি ফিরে গেছে, রিয়াজুল আছে। নাদিমের মন খারাপ দেখে সে জিজ্ঞেস করল, কি রে, তোর মন খারাপ কেন? বৌয়ের সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছে বুঝি?
নাদিম বলল,না রে, তুই যা ভাবছিস তা নয়, তবে-বলে থেমে গেল।
থামলি কেন, বল।
কি আর বলব, সবই আমার ভাগ্য।
ভাগ্যের হাতে আমরা যখন বন্দি তখন আর মন খারাপ করছিস কেন? কি হয়েছে বল।
নাদিম একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, জানিস, ছেলেবেলা থেকে যে আশা আকাঙ্খা পোষণ করে রেখেছিলাম, তা স্বপ্নই রয়ে গেল।
রিয়াজুল বলল, মানুষ চেষ্টার দ্বারা স্বপ্নকে সফল করে। তোর কি স্বপ্ন ছিল শুনি।
নাদিম পাত্রী নির্বাচনের ব্যাপারে দাদিকে যে কথা বলেছিল, সেকথা এবং সাজেদার এখানকার সকলের প্রতি ব্যবহারের কথা বলে বলল, আমার মনে হয় আমি দাম্পত্য জীবনে কোনোদিন সুখ-শান্তি পাব না।
রিয়াজুল বলল, আরে দূর, দুদিন বৌয়ের সঙ্গে চলে সারাজীবনের কথা বলছিস কি করে? সব মেয়েরাই বাপের বাড়িতে একটু বেপরোয়া হয়ে চলে। স্বামী ঘরে কি আর সেরকম করতে পারে? তা ছাড়া তোর বৌকে নিজের মতো করে গড়ে নিবি। তুই তো হাদিস-কালাম অনেক জানিস। সেসব বলে তাকে নিজের মতো করে নেয়ার চেষ্টা করবি।
নাদিম বলল, তা তো করবই। কিন্তু তবু যেন মনে কি রকম একটা আতঙ্ক লাগছে। বড়লোকের মেয়েদের সম্বন্ধে যতটুকু জানি, সাজেদা যদি সে ধরণের হয় তা হলে আমার আশা কোনদিন পূরণ হবে না।
রিয়াজুল বলল, তুই বড় সেন্টিমেন্টাল। এত সেন্টিমেন্টাল হলে দাম্পত্য জীবনে সুখ-শান্তি হয় না। তুই কি এমন স্বামী-স্ত্রী দেখাতে পারবি, যাদের মধ্যে কোনোদিন মনোমালিন্য বা ঝগড়াঝাটি হয় না? নাদিম কিছু বলছে না দেখে আবার বলল, তুই কেন-কেউই দেখাতে পারবে না, থাকলে তো দেখাবে। তোর বৌ খুব সুন্দরী এবং বড়লোকের মেয়ে। সব ছেলেই এরকম মেয়েকে বিয়ে করতে চায়। মেয়েরা বাপের বাড়িতে যাই থাকুক না কেন, স্বামীর বাড়িতে গেলে ঠিক হয়ে যায়।
নাদিম বলল, অনেক ক্ষেত্রে তোর কথা ঠিক হলেও সব ক্ষেত্রে নয়। কম হলেও অনেকে এমন আছে যারা ঐ রকম মেয়েকে বিয়ে করতে চায় না। আমি ঐ কম দলের মধ্যে।
তা হলে তুই একে বিয়ে করলি কেন?
ভাগ্য করিয়েছে।
তা হলে এখন আফসোস করছিস কেন? ভাগ্যকে মেনে নে।
তা তো নিতেই হবে। কিন্তু ভাগ্যের আঘাত বড় নির্মম হয়।
মানুষ চেষ্টার দ্বারা ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারে।
ততটুকু পারে যতটুকু তার ভাগ্যে থাকে।
তাই যদি জানিস, তাহলে মন খারপ করছিস কেন? আমি একটা কথা বলি শুন, ভাগ্যে যা আছে তা যখন হবেই তখন আর তাকে নিয়ে চিন্তা না করে ডু ইউর ডিউটি, খাও-দাও আর বৌকে নিয়ে মৌজ কর।
নাদিম হেসে উঠে বলল, তুই বুঝি তাই করিস?
তা করি বই-কি। তোর মতো আমি অত চিন্তা করে কোনো কিছু করি না।
তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু তুই যে বললি, ডু ইউর ডিউটি, সেটা কি তুই ঠিক মতো পালন করিস? খাচ্ছিস-দাচ্ছিস দোকানদারি করছিস, আর বৌকে নিয়ে ফুর্তি করছিস-এখানেই কি ডিউটি শেষ? পরকাল বলে যে একটা কথা আছে সেখানকার কথা চিন্তা করে কিছু করা-সেটাও যে ডিউটির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে; সেদিকে খেয়াল করেছিস? শুধু দুনিয়ার ডিউটি পালন করার জন্য আল্লাহপাক আমাদেরকে পাঠাননি। আখেরাতের ডিউটির জন্যও পাঠিয়েছেন।
তোর কথা অস্বীকার করব না। সব মানুষ কি সব ডিউটি পালন করতে পারে? না পেরেছে?
সব মানুষ কি করে না করে বলছিস কেন? আগে নিজে কর তারপর অন্যদের কথা বলবি। অন্যরা অন্যায় করলে তুই করবি কেন?
তোর সঙ্গে তর্কে পারব না। তবে তোর কথাগুলো খুব দামী। আল্লাহর কাছে তুই আমার জন্য দোয়া করিস, তিনি যেন আমাকে সব ডিউটি পালন করার তওফিক দেন।
শুধু তোর জন্য নয়, পৃথিবীর সব মুসলমানের জন্য প্রত্যেক নামাযের পর। মোনাজাতের সময় দোয়া করি। আর এটা করা পৃথিবীর সব মুসলমানের কর্তব্য। তুই দুছেলের বাপ হলি এখনো ঠিকমত নামায পড়িস না। আগে কি করেছিস না করেছিস, এবার থেকে ঠিকমত ধর্মের সব কিছু মেনে চলবি। ছেলেমেয়েরা বাপ-মাকে ধর্মের আইন মেনে চলতে দেখলে তারাও মেনে চলার প্রেরণা পাবে, জানিস না বুঝি, ছোটবেলায় ছেলেমেয়েরা বাপ মাকে যা করতে দেখবে তারাও তা অনুকরন করবে?
আমি তো সব সময় নামায পড়তে চাই; কিন্তু কেন জানি তা পারি না। এর কারণ কি বলতে পারিস?
এর কারণ এমন কিছু নয়, শুধু গাফিলতি অর্থাৎ অলসতা। আর এর পিছনে কাজ করছে শয়তান। তুই যদি একটা কাজ করতে পারিস, তা হলে জীবনে কোনোদিন নামায ছাড়তে পারবি না।
বল কি কাজ?
তুই যদি একচল্লিশ দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামায এক ওয়াক্তও কাজা না করে জামাতে তকবীরে উলার সঙ্গে পড়তে পারিস, তা হলে নামায ছাড়তে চাইলেও নামায তোকে ছাড়বে না। আর শয়তানও পাফিলতিতে গ্রেফতার করতে পারবে না।
সত্যি বলছিস?
সত্যি না মিথ্যা তা করলেই জানতে পারবি।
ঠিক আছে, ইনশাআল্লাহ কাল থেকে শুরু করব।
না কাল থেকে নয় আজ থেকেই। কোনো কাজ কাল করব বলে ফেলে রাখতে নেই। এটা মনীষীদের কথা।
ঐ দিন যোহর থেকে রিয়াজুল সেই যে নামায পড়তে শুরু করল তারপর সারাজীবনে আর কোনোদিন পরিত্যাগ করেনি।
সেদিন রাতে ঘুমাবার সময় নাদিম স্ত্রীকে বলল, তোমাকে কয়েকটা কথা বলছি, সেগুলো মনে রেখে মেনে চলার চেষ্টা করবে।
সাজেদা যে কদিন শ্বশুর বাড়িতে ছিল, সে কদিন স্বামীর কাছ থেকে হিতোপদেশ শুনে শুনে বিরক্ত হয়েছে। তখন ভয়ে লজ্জায় কিছু বলেনি। আজ স্বামীর কথা শুনে বুজতে পারল, এখন আবার হিতোপদেশ দিবে। তাই বিরক্ত বোধ করে বলল, তুমি শুধু আমাকে কুরআন-হাদিসের কথা বলে উপদেশ দাও। আমি কি তোমার সঙ্গে বা তোমাদের বাড়ির সকলের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করি? বিয়ের রাত থেকে অনেক উপদেশ শুনিয়েছ, আর কত শোনাবে?।
নাদিম স্ত্রীর কথা শুনে মনে আঘাত পেয়ে দীঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, কুরআন হাদিসের কথা শুনতে তোমার ভালো লাগে না।
ভলো লাগবে না কেন? কিন্তু তুমিই বল, ভালো কথা কি সব সময় শুনতে ভালো লাগে?
ভালো সব সময় মানুষের কাছে ভালো লাগে। তবে তাদের কাছে ভালো লাগে না, যারা ভালোকে গ্রহণ করতে চায় না। যাকগে, এ প্রসঙ্গ এখন থাক, আমার ঘুম পাচ্ছে। বলে সে পাশ ফিরে চোখ বন্ধ করল।
নাদিমের কথায় সাজেদা অসন্তুষ্ট হল। সে বড় লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বেলে এসে তার পাশে শুয়ে পড়ল।
চারদিন পর নাদিম শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এল। যদিও শ্বশুর, শাশুড়ী, দাদি শাশুড়ী ও সাজেদা তাকে এত তাড়াতাড়ি আসতে দিতে চায়নি। ওনারা অনেক বাধা দিয়ে আরো কয়েকদিন থাকতে বলেছিল; কিন্তু নাদিম সাজেদার স্বভাব চরিত্র দেখে-শুনে মনে খুব আঘাত পেয়েছে বলে সেখানে তার এক দণ্ড থাকতে মন চাইল না। সবার অনুরোধে রিয়াজুলও তাকে আরো দুএকদিন থাকতে বলেছিল, সে শুনেনি।
আসার সময় সাজেদা স্বামীকে অনেকবার থাকতে বলে যখন বিফল হল তখন। কদমবুসি করে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, আমি যদি কোনো দোষ করে থাকি তবে মাফ করে দিও। তারপর জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠে বলল, কবে আসবে। বল?
সাজেদার কথায় ও কান্নায় নাদিমের মন একটু নরম হল। বলল, আল্লাহ যখন রাজি হবেন তখন আসব। তারপর তাকে আদর করে চলে এসেছে।
মাস দুয়েক পর নাদিমের শালা লিয়াকত তার ফুপাতো ভাই ইয়াকুবকে সাথে করে নাদিমকে নিয়ে যেতে এল।
নাদিম যখন তাদের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি গেল তখন আফ্রিদা ছেলেকে বৌমাকে নিয়ে আসার কথা বলে দিল।
নাদিম শ্বশুরবাড়িতে তিনদিন থেকে সাজেদাকে নিয়ে বাড়ি ফিরল। এবার তাকে নিজের মতো করে গড়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে লাগল।
সাজেদা ধনী ঘরের সন্তান। তার উপর সে হওয়ার পর অনেক বছর আর কোনো ভাইবোন হয়নি। ফলে বাপ মার ও বাড়ির সকলের কাছে খুব আদরের। যখন যা আবদার করেছে পেয়েছে। ঘরের কোনো কাজকর্ম করা তো দূরের কথা, এক গ্লাস পানি পর্যন্ত নিজে ঢেলে খায়নি। কারো হুকুম পালন করে সে মানুষ হয়নি, বরং হুকুম চালিয়ে মানুষ হয়েছে। মাছ-মাংস ছাড়া একবেলাও ভাত খায়নি। দামি দামি জামা কাপড় পরে মানুষ হয়েছে। রান্না-বান্নাও কিছু শিখেনি। বিয়ের পর এই দুমাসের মধ্যে তার মা তাকে কিছু কিছু রান্নার কাজ শিখিয়েছে। সেই সাজেদা শ্বশুরবাড়িতে এসে খুব অসুবিধে বোধ করতে লাগল। নাদিমের কথায় ভোরে উঠে ফজরের নামাযের পর কুরআন শরীফ পড়তে হচ্ছে। বাড়িতে সে মাঝে মাঝে পড়লেও কোনোদিন ফজরের নামায পড়েনি। শীতকালে তো অনেক বেলা পর্যন্ত লেপের তলায় ঘুমিয়ে থাকত। একান্নবর্তী পরিবারে বৌ হয়ে এসে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হচ্ছে। নাদিমদের মুদি বাজার ছাড়া অন্য কোনো বাজার করা হয় না। সব রকমের তরকারী নিজেরা চাষ করে। যে মৌসুমে যে তরকারী চাষ হয়, সে সময় সেই তরকারী খায়। যেমন-বেগুনের সময় বেগুন, তেঁড়সের সময় বেঁড়শ, পুঁইশাকের সময় পুঁইশাক, ডাটা শাকের সময় ডাটা শাক, আলুর সময় আলু। তবে আলু ওদের প্রচুর হয়। কিছু বিক্রি করে বাকিটা সারা বছর ধরে খায়। মেহমান-কুটুম এলে পুকুরে জাল ফেলে মাছ ধরে, ঘরের মুরগি জবাই করে। তা ছাড়া মাছ মাংস বড় একটা হয় না। তবে বর্ষার মৌসুমে মগরীতে নানারকম মাছ পড়ে। সে সময় প্রতিদিন মাছের তরকারী রান্না হয়। সাজেদা যখন শ্বশুরবাড়ি এল তখন পুঁইশাকের সময়। যেমন বিক্রি করা হচ্ছে তেমনি দুবেলা পুঁইশাকের তরকারী রান্না হচ্ছে। পুইশাক সে কোনোদিন খায়নি। এখন বাধ্য হয়ে খেতে হচ্ছে। কিন্তু এই তরকারী দিয়ে ভাত খেতে খুব কষ্ট হয়। দুচার গাল খেয়ে উঠে পড়ে। প্রথম আফ্রিদা বুঝতে পেরে ডিম ভেজে দিত।
সাজেদার সঙ্গে তার দাদি এসেছিলেন। তিনি যতদিন ছিলেন, ততদিন ঐ তরকারীর সাথে আলাদা কিছু ভাল তরকারী রান্না করে দেয়া হয়েছে। উনি খাওয়ার পর যা অবশিষ্ট থাকত, তা দিয়ে সাজেদা ভাত খেত। তিনি পনের দিন থেকে চলে গেছেন। তারপর থেকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সাজেদার খুব অসুবিধা হতে লাগল। সকালে আলাদা কোনো নাশতা তৈরি হয় না। সবাই বাসি ভাত খায়। নাদিম স্কুলে যাবে বলে গরম ভাত হয়। সাজেদার ভাত খাওয়ার অভ্যেস নেই। সে জন্য না খেয়ে থাকে।
নাদিম জানতে পেরে একদিন সাজেদাকে বলল, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু আমি কি করব বল, আলাদাভাবে কিছু করা সম্ভব নয়। এক কাজ কর, ঘরে তো মুড়ি থাকেই; সকালে সরষের তেল মাখিয়ে মুড়ি খেও। তারপর আমি যখন স্কুলে যাওয়ার সময় ভাত খাব তখন আমার সঙ্গে তুমি গরম ভাত খেয়ে নিও।
সাজেদার ছোটবেলা থেকে চা খাওয়ার অভ্যেস। নাদিমদের বাড়িতে কেউ চা খায়। বলে তর ব্যবস্থা নেই। স্বামীর কথা শুনে বলল, তুমি চা-চিনি এনে দিও; আমি শুধু মুড়ি খেতে পারি না, চা দিয়ে খাব।
নাদিম বলল, ঠিক আছে, আমি আম্মাকে বলে তার ব্যবস্থা করব।
সাজেদা বলল, কেন তুমি কিনে এনে আমাকে দিতে পার না?
না, পারি না, কারণ আমি বেতনের সব টাকা আম্মার হাতে দিয়ে দিই।
বিয়ের আগে না হয় দিয়েছ, এবার কিছু কিছু হাতে রাখলেই পার।
কথাটা শুনে নাদিম একটু রেগে গেল। বলল, না তাও পারি না, কারণ গোটা সংসারের আয় যেমন আম্মার কাছে জমা থাকে, তেমনি সমস্ত খরচের দায়-দায়িত্ব আম্মার হাতে। আর কখনও এরকম কথা বলবে না।
তা হলে তুমি তোমার স্ত্রীর শখ-সাধও মেটাতে পারবে না?
যখন তোমার কোনো শখ-সাধ হবে তখন চেয়ে দেখো, মেটাতে পারি কিনা।
কি আর দেখব, আম্মার কাছ থেকে টাকা চেয়ে মেটাবে-এই তো?
নাদিম আরো রেগে গিয়ে বলল, কিভাবে কি করব, সেটা আমার ব্যাপার। তোমাকে ভাবতে হবে না।
সাজেদা স্বামীকে রেগে যেতে দেখে আর কিছু বলল না।
নাদিম আম্মাকে সাজেদার চা খাওয়ার অভ্যাসের কথা বলায় আফ্রিদা সকালে ও সন্ধ্যায় তার জন্য চায়ের ব্যবস্থা করল।
কুদ্দুসের স্ত্রী ফাহমিদার বাপের বাড়িতে চায়ের প্রচলন আছে। ফাহমিদাও চাখোর ছিল। শ্বশুরবাড়িতে এসে অনেক কষ্টে সে অভ্যাস ছেড়েছে। বৌয়ের জন্যে দুবেলা চা হচ্ছে দেখে তার পুরোন অভ্যাস মাথাচাড়া দিয়ে উঠল। সেও সাজেদার সঙ্গে দুবেলা চায়ের পার্টনার হয়ে গেল। তাই দেখে মেজ আয়মন ও সেজ আবিদার হিংসা হতে লাগল। একদিন সকালে সাজেদা ও ফাহমিদা যখন চা-মুড়ি খাচ্ছিল তখন তাদেরকে শুনিয়ে আয়মন সেজ জা আবিদাকে বলল, হোটেল খুললেই তো ভালো হত সবাই চা খেতে পেতাম।
সাজেদা শুনতে পেয়ে ফাহমিদাকে বলল, দেখলে ছোট মা, আমরা একটু চা খাচ্ছি তাও মেজ মা সহ্য করতে পারছে না।
ফাহমিদা বলল, মেজ বুবুর কথা ধরো না, সে সব সময় ওরকম। এইভাবে দিন গড়িয়ে চলল। সেই সঙ্গে নাদিম সাজেদাকে নানারকম উপন্যাস ও ধর্মীয় বই পড়ার জন্য তাগিদ দিতে লাগল। সৎ উপদেশ দিয়ে নিজের মনের মতো গড়ার যত চেষ্টা করতে লাগল তত সাজেদা স্বামীর প্রতি রুষ্ট হয়ে উঠতে লাগল। প্রায়ই দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।
সাজেদা স্বামীর প্রতি দুটো কারণে দিন দিন রুষ্ঠ হয়ে উঠছে। প্রথম কারণ বই পড়ার তাগিদ। বিয়ের আগে বই পড়ার নেশা কিছু কিছু থাকলেও বিয়ের পর বই যেন তার কাছে দুচোখের বিষ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বই পড়ার কথা শুনলে তার মেজাজ বিগড়ে যায়। যে কারনে এখন তার বইয়ের প্রতি এত অনীহা তা হল, বিয়ের আগে গল্প উপন্যাস পড়ে স্বামী ও সংসারের যে স্বপ্ন সে দেখেছিল, বিয়ের পর তার এক কণাও বাস্তবে না দেখে এ রকম হয়েছে। আর দ্বিতীয়টা হল, সাজেদার ধারণা সে রূপসী বলে নাদিম শুধু তার দেহ ভোগ করার জন্য তাকে ভালবাসে, তা না হলে সব সময় তার দোষ ধরে কেন? কুরআন হাদিসের কথা বলে উপদেশ দেয় কেন? কোনোদিন এতটুকু গুণগান করে না কেন? প্রথমদিকে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির সকলের সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করার চেষ্টা করলেও ক্রমশ অসহ্য হয়ে উঠতে লাগল। একদিকে যেমন প্রতি রাতে স্বামীর কাছে উপদেশ শুনে কান ঝালাপালা, অপরদিকে প্রথম দিকে সবাই তাকে যে চোখে দেখত, এখন তারা অন্য চোখে দেখছে। এত খেটেও তার দুর্ণাম। মেজ শাশুড়ী প্রায়ই বলে, বড়লোকের মেয়েকে গৃহস্থ ঘরের বৌ করা ঠিক হয়নি। সেজ শাশুড়ীও তাকে দেখতে পারে না। শুধু ছোট শাশুড়ীর সঙ্গে তার মিলমিশ। ছোট শ্বশুরও বেশ স্নেহ করেন।
আফ্রিদা বৌয়ের উগ্র স্বভাব দেখে বুঝতে পেরেছে, এই বৌ নিয়ে সে যেমন সুখী হতে পারবে না, তেমনি নাদিমও জীবনে সুখ-শান্তি পাবে না। তবু নতুন বৌ; জ্ঞান কম সেই কথা ভেবে তাকে নিজেদের মতো করে গড়ে নেয়ার জন্য সংসারের কাজকর্ম ধৈর্যের সঙ্গে শেখাতে লাগল। কোনো কিছু ভুল করলে তা সংশোধন করে দেয়। কিন্তু মেজ শাশুড়ী কট কট করে সাজেদাকে কথা শুনিয়ে দেয়। সেজ শাশুড়ীও বলতে কম করে না। কোনো কাজ করতে একটু দেরি করলে বড়লোকের নবাবজাদী বলে খোটা দেয়। সেজ শাশুড়ী খুব মোটা। সংসারের কাজকর্ম তেমন করতে পারে না। কবিরন বিবি চার বৌকে তাদের কাজ নির্দিষ্ট করে দিলেও আবিদা মোটা বলে কিছু করতে পারে না। অন্য জায়েরা করে দেয়। সাজেদা বৌ হয়ে আসার পর আবিদা আগে যতটুকু করত, এখন সে সব সাজেদাকে দিয়ে করায়। আর সে শুয়ে-বসে শুধু আতখাই করে, আল্লাহ আমাকে এমন করল যে, কোনো কাজ করতে গেলে দম বেরিয়ে আসে। আয়মন তাকেও ছেড়ে কথা বলে না। তার আতখাই শুনে বলে, শুয়ে-বসে খেলে মোষের মতো গতর হবে না তো কি হবে!
একদিন আয়মনের কোলের বাচ্চাটা ক্ষিধের চোটে খুব কান্নাকাটি করছে। আয়মন তখন ধান সিদ্ধ করতে চুলোয় জ্বাল দিচ্ছিল। আর আবিদা ঘরের বারান্দায় বসে খেজুর পাতার চাটাই বুনছিল। ছেলের কান্না শুনে আয়মন আবিদাকে শুনিয়ে বলল, চুলোয় জ্বাল দেয়ার মতো লোকও নেই, ছেলেটা ক্ষিধের জ্বালায় কেঁদে কেঁদে খুন হয়ে যাচ্ছে কারো যদি নজরে পড়ে। এই কথা বলে সে দোলনা থেকে বাচ্চাটাকে নিয়ে এসে চুলোয় জ্বাল দিতে দিতে বুকের দুধ খাওয়াতে লাগল। কিন্তু ছেলেটার তখন খুব জিদ উঠে গেছে। সে দুধ মুখে না নিয়ে চিল্লাতে লাগল।
তাই দেখে সাজেদা হাতের কাজ ফেলে রেখে সেখানে এসে বলল, মেজমা আমি জ্বাল দিচ্ছি, আপনি ওকে দোলায় বসে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে আসুন।
আয়মনের রাগ আবিদার উপর। সেই রাগ সাজেদার উপর ঝাড়ল। ঝংকার দিয়ে বলল, নিজের কাজ ফেলে রেখে কে তোমাকে দরদ দেখাতে আসতে বলেছে? তুমি তোমার কাজে যাও। আরো তো লোক আছে, তারা কি চোখে কানা, না কানে কালা?
সাজেদা আর কিছু না বলে ফিরে এসে নিজের কাজ করতে লাগল। আবিদা এবার উঠে চুলোর কাছে এসে বলল, মেজ বুবু, তুমি শুধু শুধু রাগ করছ। আমাকে তো জ্বাল দিতে ডাকলেই পারতে। যাও, বাচ্চাকে থামিয়ে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে এস।
আয়মনের রাগ তবু পড়ল না। বলল, ডাকতে হবে কেন, তুই কি বাচ্চার কান্না শুনতে পাস নি। বসে-শুয়ে তো গতরটা দিন দিন ফোলাচ্ছিস।
আবিদা তার হাত ধরে তুলে দাঁড় করিয়ে বলল, আমার অন্যায় হয়েছে মেজবুবু। তুমি যাও, বাচ্চাটা কেঁদে কেঁদে গলা শুকিয়ে ফেলল।
আয়মন গজর গজর করতে করতে চলে গেল।
আয়মন বিয়ের পর বেশকিছু দিন মৃগী রোগে ভুগেছে। চিকিৎসা করানোর ফলে এবং প্রথম ছেলে হওয়ার পর ভালো হয়েছে। কিন্তু তারপর থেকে সে ভীষণ রাগী হয়েছে। এমনি সে হিংসুটে ধরণের মেয়ে। তারপর মৃগী রোগ হওয়ার পর থেকে সামান্য কারণে খুব রেগে যায়। আর রেগে গেলে কাউকে কিছু বলতে বাকি রাখে না। তাই সে রেগে গেলে সবাই চুপ করে থাকে। তার কথায় কেউই তেমন কিছু মনে করে না। আবিদাও হিংসুটে কিন্তু হঠাৎ রাগে না। তবে বড় অলস। আফ্রিদা সাজেদাকে মেজ শাশুড়ীর মেজাজের কথা বলে তার সঙ্গে কোনো ব্যাপারে কথা কাটাকাটি করতে নিষেধ করে দিয়েছে।
<