নাদিমের খুব বই পড়ার নেশা। ছোটবেলা থেকে স্কুলের পাঠ্যবই পড়ার পর ধর্মীয় বই ও উপন্যাস পড়ে আসছে। সেই সঙ্গে ধর্মীয় আইনের অনুশীলনও করে আসছে। সে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ার সময় নজীবর রহমানের আনোয়ারা পড়ে। তৃতীয় শ্রেণীতে শরৎচন্দ্রের দেবদাস পড়ে তিন দিন কেঁদে কেঁদে ভাত খায়নি।

তার মা আফ্রিদা জানতে পেরে অতটুকু ছেলের অনুভূতির কথা চিন্তা করে খুব অবাক হয়ে ছেলেকে বুঝিয়ে বললেন, দেবদাসের কাহিনী সত্য নয়। ওটা তো গল্প। লেখকরা কল্পনা করে গল্প-উপন্যাস লিখে। তারপর থেকে ছেলে স্কুলের বই ছাড়া অন্য বই যাতে না পড়ে সেদিকে খুব লক্ষ্য রাখল। কিন্তু কতক্ষণ আর লক্ষ্য রাখবে? সংসারের কাজের ঝামেলায় তা সম্ভব হয় না। নাদিম শব্দ করে পড়তে পারে না। খুব তেজী ছেলে। যে কোন পড়া দুএকবার পড়লেই হয়ে যায়। সেই জন্যে সে সকাল ও সন্ধ্যেয় বড়জোর এক ঘণ্টা করে দুঘণ্টা পড়ে। তাও মা এবং বাপ-চাচাদের ভয়ে। নচেৎ তার পড়া কিন্তু সন্ধ্যের পর এক ঘণ্টার মধ্যে হয়ে যায়। সকালে শুধু অঙ্ক করে। যখন ক্রমশঃ উপরের ক্লাসে উঠতে লাগল তখন তার মাও বাপ চাচারা বেশিক্ষণ পড়ার জন্য তাকে চাপ দিতে লাগল। নাদিম সেই সুযোগে স্কুলের পাঠ্য বইয়ের পড়া তৈরি করে সেই বইয়ের উপর গল্পের বই রেখে পড়ত। মাঝে মাঝে আফ্রিদা ছেলের অপকীর্তি ধরে ফেলে শাসন করত। কিন্তু ছেলের গল্প, উপন্যাস ও অন্যান্য আউট বই পড়ার অভ্যাস ছাড়তে পারল না। এ ব্যাপারে বাপ-চাচারা তাকে অনেক শাসন করেও কোন লাভ হয়নি। নাদিম যদি আউট বই না পড়ে শুধু স্কুলের পাঠ্যবই পড়ত, তা হলে প্রতি বছর স্ট্যান্ড করত। তবু তার রোল নাম্বার চার-পাঁচের মধ্যে উঠানামা করেছে। স্কুলেও সে ব্যাগে করে পাঠ্য বইয়ের সঙ্গে আউট বই নিয়ে যেত। ক্লাসের ফার্স্ট বয় এর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব ছিল। ছেলেটার নাম সুভাষ। তাদের গ্রামেরই ছেলে। তার পাশে ফাস্ট বেঞ্চে বসত। তক্তপোসের উপর স্যারের টেবিল-চেয়ার। নাদিম টেবিলের আড়ালে বসে হাই বেঞ্চের নিচে দুই ঊরুর উপর আউট বই রেখে পড়ত। সুভাষ তাকে অনেকবার বলেছে, তুই এখন এত আউট বই পড়িস না। পাঠ্য বই পড়লে অনেক ভাল রেজাল্ট করতে পারতিস। আমার চেয়ে তোর মাথা অনেক ভাল। নাদিম হেসে বলে, আমি বেশি ভাল রেজাল্ট করতে চাই না। পাস করা নিয়ে কথা। তা তো প্রত্যেক বছর করছি। একবার দশম শ্রেণীতে ক্লাস চলাকালে ইংলিশের স্যার তাকে একটা প্রশ্ন করলেন। নাদিম তখন কোলের উপর একটা উপন্যাস রেখে পড়ছিল। স্যার যে তাকে প্রশ্ন করেছেন বুঝতে পারল না। সুভাষ তাকে কুনুইয়ের গুতো মেরে ফিসফিস করে বলল, এই নাদিম, স্যার তোকে প্রশ্ন করেছেন। নাদিম তাড়াতাড়ি করে বইটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে বলল, স্যার প্রশ্নটা আর একবার বলুন।

ইংলিশ স্যারের নাম জিয়াদ। তিনি ক্লাসে ভীষণ কড়া। কিন্তু অন্য সময় মাটির মানুষ। নাদিমের কথা শুনে বললেন, ক্লাসের সব ছেলে শুনতে পেল আর তুমি পেলে না, মন কোন দিকে ছিল?

সাবের নামে একটা ছেলে বলে উঠল, স্যার, ও গল্পের বই পড়ছিল।

জিয়াদ স্যার শুনে রেগে গিয়ে কয়েক সেকেণ্ড কথা বলতে পারলেন না। তারপর গম্ভীরস্বরে বললেন, স্ট্যান্ডআপ অন দা বেঞ্চ।

সেদিন সারা পিরিয়ড নাদিমকে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে থাকতে হল। ক্লাস শেষ হতে জিয়াদ স্যার যাওয়ার সময় নাদিমকে বললেন, আবার যদি কোনদিন এই কথা শুনি তা হলে চাবকে পিঠের ছাল তুলে নেব।

এরপরও নাদিম ক্লাসে আউট বই পড়া বন্ধ করে নি। তবে জিয়াদ স্যারের ক্লাসে আর কোনদিন পড়েনি।

ক্লাস সিক্স, সেভেন ও এইটে পড়ার সময় নাদিমের পর পর তিন বছর টাইফয়েড় হয়। প্রতিবারই মরতে মরতে বেঁচে গেছে। শেষবারে ডাক্তার বলেছিল, এই ছেলে বেঁচে থাকলে হয় পাগল হয়ে যাবে, না হয় যে কোন একটা অঙ্গহানী হবে। কিন্তু তার কোনটাই হয়নি। তবে সে ভীষণ একগুয়ে ও রাগী হয়েছে। নিজের মতের বাইরে কোন কিছু করে না। জোর করলে অত্যন্ত রেগে যায়। আর তার কথা না শুনলে একটা না একটা অঘটন ঘটিয়ে ছাড়ে। বড় হয়ে প্রচুর ধর্মের বই পড়ে ও ধর্মের অনুশীলন করে হঠাৎ রাগে না বটে, কিন্তু একবার যদি রেগে যায় তখন অঘটন ঘটিয়ে বসে। ক্লাস এইটে পড়ার সময় একটা অঘটন ঘটিয়েছিল। একদিন স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখল, তার ইমিডিয়েট ছোট বোন ফৌজিয়া তালের আঁটি কেটে গজা করে বের করে খাচ্ছে। নাদিম বই রেখে এসে তার গজা চাইল। ফৌজিয়া বলল, আমারগুলো দেব না, তুই কেটে খা। নাদিম তার কাছে দা চাইল। ফৌজিয়া বলল, দাঁড়া, আমি আগে এইগুলো। কেটে নিই, তারপর দেব। নাদিম বলল, যেগুলো কেটেছিস, সেগুলো খা। আমার কাটা শেষ হলে তারপর তোরগুলো তুই কেটে খাস। ফৌজিয়া বলল, না আগে আমারগুলো। কেটে নিই। নাদিম তখন রেগে গিয়ে তার হাত থেকে দাটা কেড়ে নিয়ে তার মাথায়। এক কোপ বসিয়ে দিল। ফৌজিয়া ভয়ে নিজের মাথায় হাত দিয়েছিল বলে সে যাত্রা। বেঁচে গেল। নচেৎ তার মাথার ঘিলু বেরিয়ে পড়ত। দায়ের কোপ তার হাতের উপর পড়েছিল। ফলে অনেকটা কেটে গিয়ে রক্ত বেরোতে লাগল। ফৌজিয়া তখন বাবারে মরে গেলাম রে বলে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগল। তার চিৎকার শুনে মা-চাচীরা ছুটে এল। ফৌজিয়ার অবস্থা দেখে তারা ডাক্তার আনতে পাঠাল। ডাক্তার এসে হাতের কেটে-যাওয়া জায়গাটা সেলাই করেছিল। নাদিম ভয়ে পালিয়ে যায়। রাতে ফিরলে তার আব্বা তাকে সেদিন ভীষণ মেরেছিল। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় এরকম এক ঘটনা। ঘটিয়েছিল, যা শুনলে প্রত্যেক মানুষ যেমন অবাক না হয়ে পারবে না, তেমনি তার একগুঁয়েমির পরিচয় পেয়েও অবাক হবে। এই ঘটনার সঙ্গে নাদিমের ছোট নানার সেজ জামাই নওশের জড়িত। তাই নওশেরের কথা উল্লেখ করতে হচ্ছে।

নওশের একজন হোমিওপ্যাথি ডাক্তার। দেখতে খুব সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান। মডার্ন যুবক। ধর্মকর্ম করা তো দূরের কথা, ধার্মিক লোকদের সে মোটেই দেখতে পারত না। ডাক্তার হিসেবে অল্পকিছু সুনাম থাকলেও কলেরা-বসন্তের চিকিৎসার জন্য খুব সুনাম ছিল। কলেরা-বসন্তের রোগী তার হাতে গেলে বেঁচে যাবেই-এরকম ধারণা ঐ গ্রামের ও আশেপাশের গ্রামের লোকদের ছিল। হিন্দুপাড়ার লোকেরা তাকে দেবতার মত সম্মান করত। হিন্দুদের সঙ্গে তার বেশি চলাফেরা। হিন্দুদের অনেক কুমারী যুবতী তাকে বিয়ে করার জন্য পাগল। সে মুসলমান বলে তারা মনের বাসনা প্রকাশ করতে পারে না। নওশের ডিসপেনসারী বন্ধ হবার পর হিন্দু পাড়ায় বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে প্রতিদিন অনেক রাতে বাসায় ফিরত। তার আসল বাড়ি রাজরাড়ী। রাজশাহীর শহরতলী মহেশবাথানে তার ডিসপেন্সারী। বিয়ের পর সে স্ত্রীকে নিয়ে এখানে বাসা ভাড়া করে থাকে।

নওশেরের স্ত্রী মায়মুনা অত্যন্ত ধার্মিক। কিন্তু দেখতে তেমন ভাল না। লম্বা, রোগা ও গায়ের রং কাল। তার আব্বা অনেক টাকা-পয়সা ও জিনিসপত্র যৌতুক দিয়ে নওশেরকে জামাই করেছেন। তারপরেও তিনি এই ডিসপেনসারী করার খরচ দিয়েছেন। তবু মায়মুনা স্বামীকে নিজের করে পায়নি। সে ভাবে তার স্বামী দেখতে খুব সুন্দর আর সে দেখতে খারাপ তাই স্বামী তাকে পছন্দ করে না। মায়মুনা স্বামী কি জিসিন এবং স্বামীর মন জয় করার মতো শিক্ষা, কুরআন-হাদিস এবং বিভিন্ন বই-পুস্তক পড়ে অর্জন করেছে। সেই শিক্ষা অর্জনের ফলে স্বামীকে যেমন মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসে, তেমনি তার সেবাযত্নও করে। স্বামী যে সময় মত ঘরে আসে না, খাওয়া-দাওয়া করে না, গভীর রাতে নেশা করে বাসায় ফিরে, সেজন্যে কোনদিন তার কাছে এতটুকু কৈফিয়ত চায় না, এতটুকু রাগও দেখায় না। বরং নেশাগ্রস্ত স্বামীর সেবাযত্ন করে। স্বামী যেদিন বাসায় খায় না, সেদিন মায়মুনাও খায় না। সে যতক্ষণ না ফিরে ততক্ষণ কুরআন পড়ে, হাদিস পড়ে, বিভিন্ন ধর্মীয় বই ও ভাল গল্প উপন্যাস পড়ে। স্বামী ফেরার পর তার জামা-জুতো খুলে দিয়ে ঘুমাবার ব্যবস্থা করে দেয়। তারপর তাহাজ্জুদের নামায পড়ে আল্লাহপাকের দরবারে দুহাত তুলে দরবিগলিত চক্ষে দোয়া করে-হে গফুরুর রহিম, তুমি এই ভূমণ্ডল ও আকাশমণ্ডলীর একমাত্র প্রভু। এই দুই জাহানের মধ্যে সমক্ষক কেউ নেই। তুমি সর্বশক্তিমান ও সর্বজ্ঞ। তুমিই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা ও পালন কর্তা। তোমার ইচ্ছা ব্যতিরেকে কারো এতটুকু কিছু করার অধিকার নেই। তুমি যা ইচ্ছা তাই করতে পার। তোমার কোন কাজে এতটুকু বাধা দেয়ার কারো ক্ষমতা নেই। তুমি তোমার সৃষ্ট জীবের মনের কামনা-বাসনা সম্বন্ধে সম্পূর্ণ ওয়াকেফহাল। হাদিসে পড়েছি- তোমার পেয়ারা নবী (দঃ) বলেছেন, আল্লাহ তাঁর বান্দার মনের নেক মকসুদ পূরন করেন। তোমার কালাম পাকে পড়েছি, তুমি যাকে ইচ্ছা কর। তাকে হেদায়েৎ দান কর। তোমার ইচ্ছা ব্যতীত কেউ হেদায়েৎ প্রাপ্ত হয় না। আমি তোমার এক গোনাহগার বান্দী এবং তোমার পেয়ারা হাবিবের (দঃ) নগণ্য উম্মত। আমি তোমার কাছে ফরিয়াদ করছি, আমার স্বামীকে হেদায়েৎ দান করে তোমার ও তোমার হাবিবে পাকের (দঃ) প্রদর্শিত পথে চালিত কর। আমি তোমার কাছে ঐশ্বর্যের সুখভোগ চাই না। চাই শুধু আমার স্বামীর হেদায়েৎ। হাদিসে আরো পড়েছি, কোন মুসলমান যদি অন্য মুসলমানের জন্য দোয়া করে, তা হলে তুমি তা কবুল করে থাক। আমি কুরআন-হাদিসের উপর পূর্ণ একিন রেখে ফরিয়াদ করছি, আমার দোয়া কবুল করে আমাকে ধন্য কর।

মায়মুনা বিয়ের পর থেকে একইভাবে স্বামীর সেবাযত্ন ও আল্লাহপাকের কাছে ঐভাবে ফরিয়াদ করে আসছে।

একদিন নওশেরের ঘুম ভেঙে যেতে দেখল, মায়মুনা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ঐসব মোনাজাত করছে। নওশের বেশ রেগে গিয়ে বলল, অত কান্নাকাটি কিসের, আমার পিয়াস লেগেছে, পানি খাব।

স্বামীর গলা শুনতে পেয়ে মায়মুনা তাড়াতাড়ি মোনাজাত শেষ করে জগ থেকে এক গ্লাস পানি ঢেলে নিয়ে এনে দিল।

নওশের ঢকঢক করে পানি খেয়ে গ্লাস দেবার সময় বলল, আমার নিষেধ সত্ত্বেও নামায-রোযা কর, আমি কিছু বলি না। কিন্তু রাতে না ঘুমিয়ে যে সারারাত এইসব কর তাতে কি লাভ হচ্ছে?রং নিজের শরীর নষ্ট করছ। কঠিন অসুখে আক্রান্ত হয়ে পড়বে।

মায়মুনা বলল, হলে আর কি হবে, মরে যাব-এই তো? তাতে কি হয়েছে, মরতে তো একদিন সবাইকে হবে।

নওশের বলল, আচ্ছা বল তো, আজ কত বছর আমাদের বিয়ে হয়েছে?

চার বছর।

সেই থেকে তো রাত জেগে জেগে নামায পড়ে কুরআন পড়ে কতরকম দোয়া কর। কই তোমার একটা দোয়াও কি আল্লাহরুল করেছে? করেনি। তবু কেন ঐসব কর?

তুমি কুরআন-হাদিস বা ধর্মীয় কোন বই পড়নি, তাই ঐ রকম বলছ। হাদিসে আছে, হযরত নবী পাক (দঃ) বলেছেন, আল্লাহপাক ঈমানদার বান্দাদের কোন ইবাদত যেমন বিফল করেন না, তেমনি তাদের দোয়াও বিফল করেন না। তবে বান্দারা যা চায়, তা তার জন্যে অমঙ্গল হবে জেনে তৎক্ষণাৎ কিছু দেন না। তিনি যখন দোয়াটা ভাল মনে করেন তখন দেন। সেটা ইহকালেও হতে পারে অথবা পরকালেও হতে পারে।

নওশের বলল, তুমি তোমার কুরআন-হাদিস নিয়ে থাক, আমার ওসব দরকার নেই। কথা শেষ করে সে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।

আল্লাহপাক কাকে কখন কোন অসিলায় হেদায়েত করেন তা মানুষের বোঝার অসাধ্য। একদিন নওশেররা কয়েকজন মিলিত হল এক হিন্দু বন্ধুর বাড়িতে। খাওয়া দাওয়ার পর নেশা করার জন্য সিদ্ধি বেঁটে ঘোলের সঙ্গে মিশিয়ে খেল। তারপর বেশ কিছুক্ষণ তাদের সঙ্গে তাস খেলে বাসায় ফিরল। ঐভাবে সিদ্ধি খেয়ে বন্ধুর বাড়িতেই নেশা ধরেছিল। এতক্ষণে সেটা আরো বেশি ধরেছে।

বাসায় এলে মায়মুনা বলল, আজ তোমাকে যেন অন্য রকম দেখাচ্ছে, তোমার কি শরীর খারাপ?

নওশের মাঝে মধ্যে মদ খেলেও বাসায় এসে কোনদিন মাতলামি করে না। চুপচাপ শুয়ে পড়ে। সে আজ প্রথম মদ না খেয়ে সিদ্ধি খেয়েছে। সিদ্ধি যারা শখ করে। খায়, তারা পানের সঙ্গে চিবিয়ে খায়। তাতে অল্প নেশা হয়। আর বেঁটে শরবত করে খেলে ভীষণ নেশা হয়। তাই সবার মতো নওশেরেরও তাই হয়েছে। সিদ্ধি খেয়ে নেশা হলে চুপচাপ থাকে। কিন্তু একবার যদি কোন কারনে কথা বলতে আরম্ভ করে, তা হলে শুধু হাসতেই থাকবে। কেউ কেউ হাসতে হাসতে হার্টফেল করে। অবশ্য যাদের হার্ট খুব দুর্বল থাকে তারাই হার্টফেল করে। আবার অনেকে বমি করে অজ্ঞান হয়ে যায়।

বাসায় ফিরে নওশের স্ত্রীর কথা শুনে নেশার ঘোরে বলল, আমার শরীর খারাপ। হয়নি প্রিয়তমা। এস, তোমাকে নিয়ে আজ ফুর্তি করি। এই কথা বলে সে মায়মুনাকে জড়িয়ে ধরে আদর করতে লাগল।

মায়মুনা বুঝতে পারল, সে নেশার ঘোরে এরকম বলছে। কারন আজ চার বছরের মধ্যে সুস্থ অবস্থায় কোনদিন এভাবে কথাও বলেনি আর আদরও করেনি। বলল, ঠিক আছে অত ব্যস্ত হচ্ছ কেন? আগে জামা-কাপড় পাল্টাও।

নওশের সব সময় ইস্ত্রিকরা দামী জামা-কাপড় পরে। কোন জামা-কাপড় একবারের বেশি দুবার পরে না। স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে বলল, তাড়াতাড়ি লুঙ্গি দাও। সেদিন সে সাদা পাজামা-পাঞ্জামীর উপর উলের জ্যাকেট পরেছিল। মায়মুনা আলনা থেকে লুঙ্গি আনতে গেলে নওশের জ্যাকেট খুলে আলনার দিকে ছুঁড়ে দিল। তারপর প্রথমে পাঞ্জাবীটা ও পরে গেঞ্জীটা টান দিয়ে ফড়ফড় করে ছিঁড়ে গা থেকে খুলে মেঝেয়। ছুঁড়ে দিয়ে খিল খিল করে হাসতে হাসতে বলল, কই-লুঙ্গি দাও।

মায়মুনা বেশ অবাক হয়ে স্বামীকে জড়িয়ে ধরে বলল, এত হাসছ কেন?

নওশের বলল, হাসব না তো কি কাঁদব? তারপর মায়মুনার শাড়ী ধরে ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলল, কি দারুণ আনন্দ লাগছে। তোমার শাড়ি-ব্লাউজও ছিঁড়ে দিই, তুমিও আনন্দ পাবে।

মায়মুনা ভয় পেয়ে তাকে নিরস্ত করার চেষ্টা করতে করতে বলল, না-না ছিড়ো। এগুলো তো আজ কিনে এনেছ।

নওশের তার বাধা মানল না। জোর করে শাড়ি-ব্লাউজ খুলে হাসতে হাসতে ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে ফেলল।

মায়মুনা বিবস্ত্র হয়ে লজ্জায় ও ভয়ে তাড়াতাড়ি খাট থেকে নেমে আলনা থেকে অন্য একটা শাড়ি গায়ে জড়িয়ে খাটের কাছে যখন এল তখন নওশের বমি করতে শুরু করল। মায়মুনা স্বামীকে ধরে খাটের কিনারে এনে দুহাতে মাথাটা ধরে রাখল। নওশের অনেকটা বমি করে নেতিয়ে শুয়ে পড়ল। মায়মুনা শাড়িটা ভালো করে পরে প্রথমে স্বামীর মুখ ও শরীর পরিষ্কার করল। তারপর বিছানা ও ঘরের মেঝে পরিষ্কার করে হাত পাখা দিয়ে তার মাথায় বাতাস করতে লাগল। তখন শীতকাল। তাই বৈদ্যুতিক পাখা চালাল না। ফজরের আযান হতে নামায পড়ে এসে পাশে বসে স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে তার হেদায়েতের জন্য আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করতে লাগল। এক সময় তার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে নওশেরের গালে কয়েক ফোঁটা পড়ল। মায়মুনা তাড়াতাড়ি আঁচল দিয়ে মুছে দিল।

নওশেরের ঘুম পাতলা হয়ে এসেছিল। মায়মুনা আঁচল দিয়ে গাল মুছে দেয়ার সময় ঘুম ভেঙ্গে গেল। তাকিয়ে মায়মুনাকে পাশে বসে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করল, কি ব্যাপার-কাঁদছ কেন? মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমোওনি।

মায়মুনা চোখ মুছে বলল, না এমনি একটু। তারপর কয়েক সেকেণ্ড বিরতি দিয়ে আবার বলল, গত রাতে বাসায় ফিরে তুমি বমি করছিলে। তোমার শরীর খারাপ দেখে ঘুম আসেনি। তাই বসে বসে তোমার মাথায় বাতাস করছিলাম।

নওশের ঘরের মেঝেয় নতুন জামা-কাপড়ের স্তূপ দেখে আবার জিজ্ঞেস করল, ওগুলো ঐরকম অবস্থা হল কি করে?

তুমি নেশার ঘোরে করেছ। তারপর বমি করে ঘুমিয়ে পড়েছ।

 নওশের খুবই আশ্চর্য হয়ে বলল, সত্যি বলছ, আমি ঐ সব করেছি?

আমাকে কি কোনদিন মিথ্যে বলতে শুনেছ?

নওশের অনেক্ষণ মায়মুনার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তার ভাবান্তর হল। বলল, কাল খুব শখ করে ঐসব জামা-কাপড় কিনেছিলাম। যখন আমি ঐগুলো নষ্ট করছিলাম তখন বাধা দিলে না কেন?

আজ চার বছরের মধ্যে তোমার কোন কাজে বাধা দিয়েছি কি?

নওশের স্ত্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে তার যে ভাবান্তর শুরু হয়েছিল এখন তার কথা শুনে মনের মধ্যে অনুশোচনার উদ্রেক হতে শুরু করল। তখন তার বিগত দিনের কথা মনে পড়তে লাগল।

নওশের অবস্থাপন্ন বাবার তৃতীয় সন্তান। আই.এ. পাস করে হোমিওপ্যাথিক ডিগ্রী নিয়ে প্রথমে নিজেদের গ্রামে প্র্যাকটিস শুরু করে। বছর খানেকের মধ্যে বিয়ে করে শ্বশুরের টাকায় মহেশবাথানে ডিসপেনসারী করেছে। মেয়ে কাল বলে শ্বশুরের কাছে যখন যা আবদার করেছে তিনি তা দিয়েছেন। তবু নওশের স্ত্রীকে ভালোবাসা তো দূরের কথা তার সঙ্গে এতটুকু ভাল ব্যবহারও করেনি। সব সময় অবহেলা করে এসেছে। স্বজ্ঞানে কোনোদিন তার সঙ্গে দৈহিক মিলনও করেনি। অথচ মায়মুনা কোনদিন ভুলেও তার প্রতি কোনো কটুবাক্য বলেনি, কোনদিন রাগ করেও কিছু বলেনি। সব সময় মধুর ব্যবহার করে এসেছে। কোন কোনদিন নেশার ঘোরে কত অত্যাচার করেছে, তার শরীরকে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে, কখনো টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি। আশ পাশের বাসার কাউকে স্বামীর দুর্ব্যবহারের কথা এতটুকু জানতে দেয়নি। দেশ থেকে বাপ ভাই অথবা আত্মীয় স্বজন কেউ এলে তাদের কাছে হাসিমুখে থাকে। এমনভাব দেখায় যেন স্বামীর কাছে কত সুখে আছে। অথচ সে খুব ধনী ঘরের মেয়ে। ইচ্ছা করলে বাপ-ভাইকে স্বামীর অত্যাচারের কথা বলে ছাড়কাট করিয়ে নিতে পারত। অশিক্ষিতও নয়। ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছে। হঠাৎ নওশেরের মনে হল, এই মেয়ে কি মানবী, না অন্য কিছু? মানবী না হলে এতদিন এতকিছু সহ্য করেছে কি করে? কোনদিন তার মুখে বিরক্তি, বিষাদ কিংবা রাগের চিহ্ন দেখেনি কেন?

তার মনের ভিতর থেকে কে যেন বলে উঠল, তোমার স্ত্রী মানবী। এতদিন ঘর করছ অথচ তাকে বোঝার চেষ্টা করনি কেন? তখন তার মনে হল, আমি ওর প্রতি এতদিন খুব অন্যায় ও অবিচার করেছি। এই সব ভাবতে ভাবতে অনুশোচনায় নওশেরের চোখ দুটো পানিতে ভরে উঠল।

মায়মুনা বিয়ের পর থেকে স্বামীকে কোনদিন তার মুখের দিকে ভাল করে চাইতে দেখে নি, ভাল করে কথা বলতেও দেখেনি। ভেবেছে, সে কাল ও দেখতে খারাপ বলে এরকম করে থাকে। মায়মুনা মনে দুঃখ পেলেও বাইরে তা কখনও প্রকাশ না করে ভাগ্যের কথা ভেবে হাসিমুখে সব কিছু সবর করে চলেছে, আর মনে মনে আল্লাহর কাছে সবর করার তওফিক চেয়ে স্বামীর হেদায়েত প্রার্থনা করেছে। আজ স্বামীকে তার মুখের দিকে অনেক্ষণ তাকিয়ে থাকতে দেখে ও ভালভাবে কথা বলতে শুনে, খুশি হয়ে মনে মনে এতক্ষণ আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করছিল। এবার তার চোখে পানি দেখে বলল, তোমার কি কোন কষ্ট হচ্ছে?

নওশের কোন কথা বলতে পারল না, শুধু না-সূচক মাথা নাড়ল।

তা হলে তোমার চোখে পানি কেন-বলে মায়মুনা নিজের চোখের পানি মুছল।

মায়মুনাকে চোখের পানি মুছতে দেখে নওশের বলল, আমার কিছু হলে তোমার খুব কষ্ট হয়, তাই না?

মায়মুনা আজ স্বামীর আচরণে উত্তরোত্তর যত অবাক হচ্ছে তত তার মন এক অজানা আনন্দে ভরে উঠছে। স্বামীর প্রশ্নের উত্তরে সেও কোন কথা বলতে পারল না। আনন্দের আতিশয্যে তার গলা বুজে এল। চোখ থেকে আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল, সেই অবস্থায় হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল।

নওশের বলল, কিন্তু কেন, কেন, কেন-বলে সে থেমে গেল। অনুশোচনায় তারও গলা বুজে এল। একটু পরে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, তুমি কি জান, আমি তোমাকে পছন্দ করি না, শুধু টাকার জন্য তোমাকে বিয়ে করেছি।

হ্যাঁ, জানি। আরো জানি, রসুল্লাহ বলিয়াছেন, যদি কোন ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তির সিজদা করিবার আদেশ দিতাম, তবে আমি স্ত্রীকে বলিতাম তার স্বামীকে সিজদা করিতে। স্বামীর এতটুকু দোষ কোন মুমীন স্ত্রী ধরে না, ধরতে পারে না। সব সময় স্বামীকে সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করে।

আর আমি যদি তোমাকে সারাজীবন পছন্দ না করে এভাবে কাটাই?

তবুও আমি তোমাকে সারাজীবন স্বামীর মর্যাদা দিয়ে কর্তব্য পালন করে যাব। ভাবব, আল্লাহ পাক আমার তকদিরে দুনিয়াতে স্বামীর সুখ রাখেন নি। মোমেনা বান্দী কোনদিন স্বামীর অমর্যাদা করে না। সে আল্লাহ ও তাঁর রসূল (দঃ) কে খুশি রাখার জন্য সবকিছু সবর করে সহ্য করে। আল্লাহ কুরআন পাকে বলেছেন, আল্লাহ সাবেরিনদের সঙ্গে থাকেন। নওশেরের দিব্যচোখ আল্লাহ খুলে দিলেন। তাই স্ত্রীর কথা শুনে তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, মায়মুনা, তোমার নামের অর্থটা বলবে?

মায়মুনা বলল, ভাগ্যবতী।

নওশের বলল, সত্যিই তুমি ভাগ্যবতী। তোমার নামের অসিলায় আমার দিব্যচোখ খুলে গেছে। তুমি মানবী নও। কোন মানবীর এত ধৈর্যশক্তি থাকতে পারে না। তোমাকে অবেহলা করে, তোমার উপর অত্যাচার করে আমি খুব অন্যায় করেছি। জানি আল্লাহ আমাকে মাফ করবে কিনা-এখন বল মায়মুনা, তুমি আমাকে মাফ করেছ?

স্বামীর কথা শুনতে শুনতে মায়মুনার মনে চির আকাঙ্ক্ষিত ধন পাওয়ার আনন্দ সাগরের ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়তে লাগল। সেও স্বামীকে বুকের মধ্যে চেপে ধরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, মাফ চেয়ে আমাকে গোনাহগার করো না। আমি মানুষ। আমারও অনেক দোষত্রুটি আছে। তুমি বরং আমাকে মাফ করে দাও। আর আমার প্রতি তুমি যা কিছু করেছ, তাতে আমি মানবিক কারণে অনেক সময় অসন্তুষ্ট হলেও সেসব মনে রাখিনি। তুমি আল্লাহপাকের হুকুম অমান্য করে অনেক অন্যায় করেছ। তাই বলব, তওবা করে তাঁর কাছে মাফ চাও। তিনি রাহমানুর রাহিম। বান্দাদের তওবা কবুল করে থাকেন।

নওশের বলল, মায়মুনা তুমি সত্যি আল্লাহর খাস বান্দী। এই তোমাকে জড়িয়ে ধরে আজ থেকে সবকিছু ত্যাগ করার প্রতিজ্ঞা করে তওবা করছি, জীবনে আর কোনদিন আল্লাহর হুকুম অমান্য করব না।

মায়মুনা প্রথমে বলল, আমিন! তারপর শোকর আলহামদুলিল্লাহ বলে বলল, আল্লাহ গো, তুমি আমার স্বামীর তওবা কবুল কর।

সেদিন থেকে নওশেরের জীবনযাত্রার পরিবর্তন শুরু হল। সব রকমের নেশা ছেড়ে দিল। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে মেলামেশা বন্ধ করে দিল। অবসর সময়ে ধর্মীয় বই কিনে পড়তে লাগল। সেই সঙ্গে নামায পড়তে শুরু করল।

বন্ধুরা তার পরিবর্তন দেখে তার কাছে এসে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে আড্ডা দেয়ার জন্য নিয়ে যেতে চেষ্টা করল। সফল হতে না পেরে তারা আস্তে আস্তে যাতায়াত বন্ধ করে দিল। শুধু বিমল ও সুখেন্দু নামে দুজন হিন্দু যুবক মাঝে মাঝে আসত। একদিন তারা জিজ্ঞেস করল, তোর এই পরিবর্তন হল কি করে বলবি? :

নওশের বলল, সে কথা পরে বলব। তারপর গোলাম মোস্তফার বিশ্বনবী বইটা একজনের হাতে দিয়ে বলল, এটা তোরা পড়।

বিমল ও সুখেন্দু দুজনেই এম.এ.। দুজনেই মহেশবাথান হাইস্কুলের শিক্ষক। বিমল ইংলিশের আর সুখেন বাংলার। এক সপ্তাহের মধ্যে তারা বইটা ফেরত দেয়ার সময় বলল, বইটা পড়ে তোদের ধর্ম ও ধর্ম প্রবর্তকের জীবনী সম্বন্ধে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

নওশের বলল, কি জানলি, ভাল না মন্দ?

 বিমল বলল, যে কোন ধর্মের আইন-কানুন সব ভাল।

সুখেন্দু বলল, যে কোন ধর্মের প্রবর্তকের চরিত্রও উত্তম।

নওশের তাদের সাহাবা চরিত বইটা দিয়ে বলল, এটাও পড়ে দেখ।

সাহাবা চরিত পড়ে তারা ফেরত দিতে এসে বলল, এত উন্নত চরিত্রের নমুনা আমাদের ধর্মগ্রন্থে নেই।

নওশের বিমলকে আল্লামা ইউসুফ আলির কুরআনের ইংলিশ ট্রানস্লেট দিল। আর সুখেন্দুকে আব্দুল হাই ও আলি হোসেনের বাংলা অনুবাদ দিয়ে বলল, এগুলোও পড়।

কুরআন ব্যাখ্যা পড়ে তাদের মন ইসলামকে আরো জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠল। তারা নওশেরের কাছ থেকে আরো বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় বই নিয়ে পড়তে পড়তে ছমাসের মধ্যে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করল। শুধু তারা নিজেরা নয়, তাদের বাড়ির সবাইকে নিজেদের মতামত জানিয়ে দুজনের বাড়ির সবাইকে নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করল।

বিমল ও সুখেন্দ, শুধু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে ক্ষান্ত রইল না। নওশেরের কথা মতো পীরের মুরীদ হয়ে তিন বন্ধুতে মাত্র দুতিন বছরের মধ্যে তরীকতের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেল।

নওশেরের ডিসপেনসারীর আলমারীতে এখন ওষুধের চেয়ে হাদিস ও অন্যান্য ধর্মীয় বই বেশি। তিন বন্ধু সংসারের প্রয়োজনীয় কাজকর্ম ছাড়া সব সময় হাদিস কেতাব অধ্যয়ন করে, আর রাত জেগে আল্লাহ পাকের ইবাদত করে।

মায়মুনা সবকিছু দেখেশুনে কেঁদে কেঁদে আল্লাহপাকের শোকর গুজারী করে।

<

Super User