৭.

ফাহমিদা যেদিন শামীকে ঐসব কথা বলে এবং জোবেদার সাথে রাগারাগি করে চলে যায় তার কিছুদিন পর খালাত ভাই মালেক তাদের বাড়িতে এল। একদিন থেকে পরের দিন খালাকে বলল, আম্মা ফাহমিদাকে নিয়ে যেতে আমাকে পাঠিয়েছে।

শাকেরা খানম শুনে খুশী হয়ে বললেন, বেশ তো বাবা নিয়ে যাও। এসেছ যখন তখন আরো দুচারদিন থাক। তারপর নিয়ে যেও।

মালেক বলল, অন্য সময় এসে থাকব। আজ বিকেলেই ওকে নিয়ে যেতে মা বলে দিয়েছে। আজ রাতে আমাদের বাড়িতে একটা ফাংসান আছে। ফাংসানের কথাটা সে মিথ্যে করে বলল।

শাকেরা খানম বললেন, তা হলে তো তোমার আজই যাওয়া উচিত। খাওয়া দাওয়া করে বিকেলে যেও। তোমার খালু আসুক, তাকে বলব।

আবসার উদ্দিন বাড়িতে ছিলেন না। জমি সংক্রান্ত ব্যাপারে সদরে গিয়েছিলেন। দুপুরে ফিরলেন।

খাওয়াবার সময় শাকেরা খানম স্বামীকে মালেকের কথা বললেন।

আবসার উদ্দিন বললেন, তুমি কি বল?

শাকেরা খানম বললেন, আমি আর কি বলব, খালার বাড়ি যাবে, তাতে আবার বলা-বলির কি আছে? তা ছাড়া কদিন পরে তো সে তাদের বৌ হবে।

আবসার উদ্দিন বললেন, আমিও তাই মনে করি।

বিকেলে মালেক ফাহমিদাকে নিয়ে বাড়িতে রওয়ানা দিল। মালেক গাড়ি নিয়ে। এসেছিল। সে নিজেই ড্রাইভ করে। ফাহমিদা মালেকের পাশে দরজার কাছে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখছিল। মালেক একহাতে স্টিয়ারিং হুইল ধরে অন্য হাতে ফাহমিদার হাত ধরে কাছে টেনে নিয়ে বলল, আমার কাছে বস না, তোমার গায়ের গন্ধ আমার খুব ভালো লাগে। তারপর ফাহমিদার হাত ছেড়ে দিয়ে তার কাঁধের উপর রেখে বলল, আমার খুব ইচ্ছা তোমাকে শিগ্রী বিয়ে করার। তোমার মতামতটা বলবে?

মালেক তাকে ঐভাবে টেনে নিতে তার একপাশের উন্নত বক্ষ মালেকের শরীরে ঠেকে আছে। তাতে ফাহমিদার বেশ লজ্জা পেলেও সারা শরীরে অজানা এক আনন্দের শিহরণ বয়ে যেতে লাগল। তারপর বিয়ের কথা শুনে আরো বেশি লজ্জা পেয়ে কোনো কথা বলতে পারল না।

তাই দেখে মালেক তার মাথাটা বুকে চেপে ধরে বলল, কি, কিছু বলছ না কেন?

ফাহমিদা কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে থেকে বলল, প্লীজ হাতটা সরিয়ে নিন। পথিকরা দেখলে কি ভাববে? আমার লজ্জা পাইনি বুঝি?

মালেক হাতটা সরিয়ে নিতে ফাহমিদা সোজা হয়ে বসল। তারপর বলল, আমার মতামত আপনি কি বুঝতে পারেন নি? না পেরে থাকলে আব্বা-আম্মার কাছ থেকে জেনে নেবেন।

মালেক বলল, তার আর দরকার নেই। এবার বল, এখনও তুমি আমাকে আপনি করে বলছ কেন? আর বলবে না কেমন? মনে থাকবে তো?

ফাহমিদা বলল, থাকবে।

তুমি চিড়িয়াখানা, যাদুঘর, লালবাগের কেল্লা, শিশুপার্ক দেখেছ?

ছোট বেলায় আব্বার সঙ্গে একবার শুধু চিড়িয়াখানা দেখতে গিয়েছিলাম। সে সময় শিশুপার্ক দেখতে চাইলে আব্বা বলল, পরে আর একদিন এসে দেখবি। আজ সময় হবে না।

আমি তোমাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে সবকিছু দেখাব।

সত্যি বলছেন?

হ্যাঁ সত্যি বলছি। তুমি কিন্তু আবার আপনি করে বলছ।

ফাহমিদা হেসে ফেলে বলল, ভুল হয়ে গেছে। আর বলব না। মাফ করে দিন, থুড়ি দাও।

মালেকও হেসে ফেলে বলল, মনে হয় তুমি আমাকে ঠিক আপন করে নিতে পারছ। তাই আপনি আপনি করছ।

ফাহমিদা বলল, তা ঠিক নয়। যা অভ্যেস হয়ে যায় তা পরিবর্তন করতে একটু সময় লাগে। এটা তোমার বোঝা উচিত।

মালেক বলল, তা অবশ্য ঠিক। কিন্তু যেখানে নিবীড় সম্পর্ক গড়ে উঠে সেখানে তোমারও ভুল হওয়া উচিত না।

তারপর তারা নানারকম গল্প করতে করতে একসময় বাড়িতে এসে পৌঁছাল।

মালেকের মা জহুরা খানম খুশী হয়ে ফাহমিদাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমো খেয়ে বললেন, কবে যে তোকে বৌ করে ঘরে আনব সেদিনের অপেক্ষায় রয়েছি। এই মাসের মধ্যে তোর খালুকে ব্যবস্থা করতে বলব।

ফাহমিদা লজ্জা পেলেও খালাকে কদমবুসি করে বলল, আপনি কেমন আছেন?

জহুরা খানম দোয়া করে বললেন, বেঁচে থাক যা, সুখী হও। আমি ভালো আছি।

মালেক সেখানে ছিল। বলল, তুমি যে ওকে বৌ করার কথা বললে, তা খালা খালুকে বলেছ?

জহুরা খানম বললেন, সে কথা তোকে বলতে হবে না।

মালেক আর কিছু না বলে হাসতে হাসতে নিজের রুমে চলে গেল।

 রাতে খাওয়ার সময় মালেক মাকে বলল, কাল ফাহমিদাকে নিয়ে ঢাকা বেড়াতে যাব।

জহুরা খানম বললেন, বেশ তো যাবি। ওকে ঢাকার সবকিছু দেখিয়ে নিয়ে আসবি।

সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত দুজনের কেউ ঘুমাতে পারল না। মালেক ভাবছে, কবে রূপসী ফাহমিদাকে একান্ত করে পেয়ে তার রূপসুধা পান করবে। সেই চিন্তা করে অনেক রাত পর্যন্ত তার ঘুম হল না। আমেরিকায় বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে সে চরিত্র হারিয়েছে। রেগুলার মদ খেত। মাঝে মাঝে নারীদেহও ভোপ করেছে। দেশে ফিরেও প্রতিদিন রাতে মদ খেয়ে ঘুমায়। বাড়ির কেউ সে খবর জানে না। আজ মদ খেয়ে ফাহমিদাকে পাওয়ার জন্য পাগল হয়ে উঠেছিল। সে অন্য ঘরে ভাই বোনদের সঙ্গে ঘুমাচ্ছে বলে তাকে পাওয়ার আশা নেই ভেবে তার কথা ভুলে থাকার জন্য আরো বেশি মদ খেয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলল।

আর ফাহমিদা ভাবছে, সে স্কুলে পড়ার সময় যখন দুএকবার এখানে এসেছিল তখন বাড়িঘর টিনের ছিল। কারেন্টও ছিল না। এখন বিল্ডিং ও ঘরের আসবাবপত্র দেখে চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে। সে ছোট ছোট খালাত ভাইবোনদের সাথে একরুমে অন্য খাটে ঘুমিয়েছে। তারা সব ঘুমিয়ে গেছে। কিন্তু ফাহমিদার চোখে ঘুম নেই। কবে সে এই বাড়ির বৌ হয়ে আসবে, সে কথা মনে করে তার ঘুম আসছে না। ভাবল, এটাই আমার উপযুক্ত স্থান। আল্লাহ রক্ষা করছেন, যদি শামীর সঙ্গে বিয়ে হত, তা হলে সারাজীবন প্রেতপূরীতে কাটাতে হত। এ বাড়িতে যেসব আসবাবপত্র রয়েছে, শামী হয়তো সেসব কোনো দিন চোখেও দেখে নি। তার উপর খালা খালুর স্নেহ ও মালেকের ভালবাসার কথা ভেবে সে সুখের স্বপ্ন সাগরে ভেসে বেড়াতে লাগল। এইসব ভাবতে ভাবতে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ল।

পরের দিন বেশ বেলাতে তাদের দুজনের ঘুম ভাঙ্গল। গোসল করে নাস্তা খেয়ে মালেক ফাহমিদাকে নিয়ে গাড়িতে করে ঢাকা বেড়াতে বেরোল। ঢাকায় এসে তারা প্রথমে চিড়িয়াখানা দেখল। তারপর দুপুরে একটা হোটেলে চাইনিজ খেয়ে লালবাগের কেয়া ও নবাববাড়ি দেখে শিশুপার্কে ঢুকল। তখন বেলা শেষ। তাই সব আসনে চাপার সুযোগ পেল না। শুধু চরকায় ও ট্রেনে চাপল। সেখান থেকে বেরোতে সন্ধ্যে পার হয়ে গেল।

গাড়িতে উঠে মালেক বলল, বাড়ি পৌঁছাতে অনেক রাত হয়ে যাবে। দেশের যা অবস্থা, রাস্তায় কোনো বিপদ হতে পারে। তার চেয়ে রাতটা কোনো হোটেলে থেকে সকালে যাওয়া যাবে। ফাহমিদা কখনো হোটেলে থাকে নি। শুনেছে হোটেলে থাকার জন্য খুব ভালো ব্যবস্থা থাকে। সেখানে থাকার কথা শুনে খুশী হয়ে বলল, তুমি যা ভালো বুঝ কর।

মালেক গাড়ি নিয়ে মতিঝিলের একটা অভিজাত হোটেলে ডবল বেডের রুম নিল।

মালেক যখন ফাহমিদাকে স্ত্রী বলে পরিচয় দিয়ে ডবল বেডের রুম নিল তখন তার মনে কেমন যেন সন্দেহ জাগল। বয় তাদেরকে রুমে রেখে চলে যাওয়ার পর মালেককে বলল, তুমি আমাকে স্ত্রী বলে পরিচয় দিলে কেন?

মালেক মৃদু হেসে বলল, তাতে কি হয়েছে? কিছুদিনের মধ্যে তুমি তো তাই হতে যাচ্ছ।

যখন হব তখনকার কথা আলাদা। সত্যি কথা বলা তোমার উচিত ছিল।

 সত্যি কথা বললে একসঙ্গে থাকা যেত না। দুটো রুমে আলাদা আলাদা থাকতে

সেটাই তো ভালো হত। একরুমে আমি ঘুমাতে পারব না।

 মালেক মনে মনে একটু রেগে গেল। তা বাইরে প্রকাশ না করে বলল, কেন?

 কেন আবার? তা হলে সারারাত ঘুম হবে না।

মালেক খাটের দিকে তাকিয়ে দুটো খাট একসঙ্গে রয়েছে দেখে বলল, ঠিক আছে, এক বিছানায় ঘুমাতে না চাইলে আমি আলাদা ব্যবস্থা করছি।

কি ব্যবস্থা করবে? তার চেয়ে অফিসে গিয়ে দুটো রুমের ব্যবস্থা কর।

এখন আর তা সম্ভব নয়। স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে ডবল বেডের রুম নিয়েছি। আবার কি বলে দুটো রুম নেব। দুটো রুম নিতে গেল কেলেংকারীর শেষ থাকবে না। মান সম্মান নিয়ে টানাটানি পড়বে। তোমার মন এত ছোট নে? একরুমে থাকলে তোমার কি এমন ক্ষতি হবে? ওসব কথা বাদ দিয়ে কাপড় পাল্টে হাতমুখ ধুয়ে নাও। খেতে যেতে হবে। তারপর সে বাথরুমে ঢুকল।

ফাহমিদার মনে সন্দেহটা কাঁটার মত বিধতে লাগল। কিন্তু কোনো উপায় না দেখে একরকম বাধ্য হয়ে মালেকের কথা মেনে নিল। কাপড় পাল্টে খাটে বসে চিন্তা করতে লাগল, একবিছানায় ঘুমানো ঠিক হবে কিনা।

মালেক বাথরুম থেকে এসে কাপড় পাল্টাবার সময় ফাহমিদাকে চিন্তিত দেখে বলল, তোমার যদি একবিছানায় ঘুমাতে এতই সংকোচ, তা হলে আলাদা ব্যবস্থা করছি। তাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার বলল, দেখছ না দুটো খাট জুড়ে দেয়া হয়েছে। এস দুজনে ধরে আলাদা করে নিই।

ফাহমিদা খাট থেকে নেমে দুজনে ধরে খাট সরিয়ে অন্যপাশের দেয়ালের কাছে নিয়ে গেল। তারপর মালেক বলল, এবার নিশ্চিন্ত হলে তো? চল, এখন খেয়ে আসি।

খেয়ে আসার পর মালেক বলল, তুমি ঘুমাও, আমি একটু নিচে থেকে আসছি।

ফাহমিদার মন থেকে সন্দেহটা কাটল না। ভাবল, তবু তো একবিছানায় ঘুমাতে হল না। নিচে যাওয়ার কথা শুনে বলল, এখন আবার কোথায় যাবে?

মালেক বলল, সে কথা জেনে তোমার কোনো লাভ নেই, তুমি ঘুমাও। কথা শেষ করে সে বেরিয়ে গেল।

ফাহমিদা খাটে বসে বেশ কিছুক্ষণ তার জন্য অপেক্ষা করল। তারপর শুয়ে পড়ে ভাবল, এতরাতে কোথায় যেতে পারে? সে ফিরে না আসা পর্যন্ত জেগে থাকার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু সারাদিন ঘুরে বেড়িয়ে শরীরের ওপর অনেক ধকল গেছে; তাই কখন যে তার চোখে ঘুম নেমে এল তা সে জানতে পারল না, গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।

মালেক রুম থেকে বেরিয়ে বারে এসে অনেক্ষণ বসে বসে মদ খেল। তারপর যখন সে রুমে ফিরে এল তখন ফাহমিদা ঘুমিয়ে পড়েছে। তার খাটের দিকে তাকিয়ে দেখল, সে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে। তার যৌবনপুষ্ট উন্নত বক্ষ শ্বাসপ্রশ্বাসের সাথে সাথে উঠানামা করছে। একদিকের বুকের কাপড় সরে গেছে। মাতাল অবস্থায় নিশীথ রাতে নির্জন রুমে একটা যুবতী মেয়েকে ঐ অবস্থায় দেখে কোনো যুবক কি সংযত থাকতে পারে? পারে না। সে জন্যে আল্লাহপাক ও তার রাসুল (সঃ) গায়ের মোহররম (যাদের সঙ্গে বিবাহ জায়েজ) মেয়ে পুরুষকে এক সঙ্গে নির্জনে থাকা হারাম করেছেন। মুসলমানরা কুরআন হাদিসের কথা না জেনে এবং জেনেও না মেনে হারাম কাজ করে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সারা পৃথিবীতে আজ তাই মুসলমানদের উপর আল্লাহর গজব নেমে এসেছে।

ফাহমিদাকে ঐ অবস্থায় দেখে মালেক নিজেকে সংযত রাখতে পারল না। বাজ পাখির মতো তার বুকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। তারপর চুমোয় চুমোয় মাতিয়ে তুলে নিরব ভাষায় তাকে নতুন পথে আহ্বান করতে লাগল।

ফাহমিদা জেগে গিয়ে ভীত সন্ত্রস্থ হয়ে প্রথমে ভীষণ প্রতিবাদ করতে লাগল। নিজেকে বাঁচাবার জন্য অনেকক্ষণ ধস্তাধস্তিও করল। কিন্তু একজন বলিষ্ঠ মাতাল যুবকের সঙ্গে কতক্ষণ আর পারবে? শেষে কেঁদে কেঁদে অনেক অনুনয় বিনয় করেও কিছু ফল হল না। তা ছাড়া তার শরীরও যেন কিছু একটা পাওয়ার আশায় মেতে উঠল। শেষে শরীরের আহ্বানে সাড়া দিতে বাধ্য হল। এরপর যা ঘটার ঘটে গেল।

ফাহমিদার শরীর ও মনের তাণ্ডব যখন থেমে গেল তখন সে বাস্তবে ফিরে এল। ধাক্কা দিয়ে মালেককে সরিয়ে কাপড়টা গায়ে জড়িয়ে রূঢ়কণ্ঠে বলল, জানতাম না, তুমি একজন মাতাল ও লম্পট। আজ বুঝতে পারলাম মদ ও নারী না হলে তোমার চলে না। নারীদের সতীত্ব নিয়ে খেলা করা তোমার কাজ। তুমি খালাত ভাই বলে এবং সৎ জেনে তোমার সঙ্গে বেড়াতে এসেছিলাম। আমার মা বাবাও তাই জেনে তোমার সঙ্গে বেড়াবার সুযোগ দিয়েছে। আর তুমি কিনা এতবড় জঘন্যতম কাজ করতে পারলে? তুমি নরকের কীটের চেয়েও অধম। আমি তোমাকে ঘৃণা করি। তুমি এত বড় পাপিষ্ঠ, আমার সর্বনাশ করে ছাড়লে। তোমার সুন্দর চেহারার মধ্যে যে এরকম পশুত্ব লুকিয়ে রয়েছে, তা যদি ঘুণাক্ষরে জানতে পারতাম, তা হলে তোমার সঙ্গে বেড়াতে আসতাম না। রাতে বাড়ি ফিরতে পথে বিপদের ভয় দেখিয়েছিলে তোমার এই জঘন্য মনোবৃত্তি পূরণ করার জন্য। এরপর তোমাকে বিয়ে করার কথা ভাবতে আমার ঘৃণা হচ্ছে। বিষ খেয়ে মরব, তবু তোমাকে বিয়ে করব না। না জানি এর আগে কত মেয়ের সতীত্ব তুমি নষ্ট করেছ। তারপর মুখে হাত চাপা দিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।

ফাহমিদার কথার উত্তর দেয়ার মত অবস্থা তখন মালেকের নেই। মাতাল অবস্থায় ঐ কাজ করে তার পাশেই ঘুমিয়ে পড়ল। ফাহমিদা অনেক্ষণ ধরে কেঁদে কেঁদে যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ল তখন মালেককে তার পাশে শুয়ে থাকতে দেখে কয়েকবার ধাক্কা দিয়ে ডেকে সাড়া না পেয়ে বুঝতে পারল, সে ঘুমাচ্ছে। তখন সে বাথরুমে গিয়ে অনেকক্ষণ ধরে গোসল করল। তারপর জামাকাপড় পরে অন্য খাটে ঘুমাতে গেল। অনেকক্ষণ তার চোখে ঘুম এল না। তখন তার মানস পটে শামীর সুন্দর, সরল ও পবিত্র মুখ ভেসে উঠল। এতবছর তার সাথে মেলামেশা করলাম, কই একদিনের জন্যও সে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে আমাকে স্পর্শ করে নি। এই সব ভাবতে ভাবতে শামীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কথা মনে করে তার ভীষণ অনুশোচনা হল। মনের অজান্তে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। শেষে ভোরে দিকে ঘুমিয়ে পড়ল।

বেলা সাতটার সময় মালেকের ঘুম ভাঙ্গল। উঠে বসে দেখল, ফাহমিদা অন্য খাটে ঘুমাচ্ছে। সে যে সারারাত কেঁদেছে তা তার ঘুমন্ত মুখে বেশ স্পষ্ট ফুটে রয়েছে। তার এই মুখচ্ছবি মালেকের কাছে খুব সুন্দর বলে মনে হল। তৃপ্তির হাসি হেসে বাথরুমে গোসল করতে গেল। গোসল করে এসে জামা কাপড় পরে ফাহমিদাকে জাগাবার জন্য গায়ে হাত দিয়ে তার নাম ধরে ডাকতে লাগল।

ফাহমিদা জেগে গিয়ে উঠে বসে খুব রাগের সঙ্গে বলল, তুমি আর কখনো আমাকে ছুঁবে না। আমাকে এক্ষুনি বাড়ি পৌঁছে দাও। তোমার মতো লম্পটের সাথে আর একণ্ড থাকতে ইচ্ছা করছে না।

মালেক রেগে গেলেও ধৈৰ্য্য হারাল না। বলল, কালরাতেও অনেক কিছু বলে গালাগালি করেছ। আবার এখনও তাই শুরু করে। বলি, এত তোমার অহংকার কিসের, রূপের? আমেরিকায় তোমার চেয়ে হাজার গুণ বেশি রূপসী মেয়ের যৌবন সুধা পান করেছি। তাদের তুলনায় তুমি কিছুই নও। যাকগে, যা হওয়ার তা হয়ে গেছে। এটা তো একটা সাধারণ ব্যাপার। একে নিয়ে এত কান্নাকাটি, ঝগড়াঝাটি ঠিক নয়। তা ছাড়া কয়েকদিন পর যখন তুমি আমার বৌ হতে যাচ্ছ তখন এত দ্বিধা বা সংকোচ কেন? আমেরিকার ছেলেমেয়েরা এটাকে একটা দৈহিক ব্যাপার মনে করে। এটা তাদের কাছে গৌণ ব্যাপার। আসল হল মন। যেখানে মনের মিল সেখানে গৌণ ব্যাপার নিয়ে তারা কোনোদিন মাথা ঘামায় না।

ফাহমিদা কর্কশ কণ্ঠে বলল, এটা আমেরিকা নয়, বাংলাদেশ। আর তারা মুসলমানও নয়। যদি তাদের মধ্যে কেউ মুসলমান থেকেও থাকে, তবে তারা মোনাফেক।

মালেকও রাগের সঙ্গে বলল, বাংলাদেশের অত বড়াই করতে হবে না। এখানেও উচ্চশিক্ষিত ছেলেমেয়েরা বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে ডেটিং করে। বিয়ের আগে সিলেক্ট করা পাত্র-পাত্রীরা বেড়াতে যাওয়ার নাম করে এইসব করে। আর তারাও মুসলমান ঘরের ছেলেমেয়ে।

ফাহমিদা বলল, তোমার কথা যদি সত্য হয়, তা হলে বাংলাদেশের মুসলমানরাও মোনাফেক হয়ে যাচ্ছে। অতি শীঘ এই দেশের উপর আল্লাহর গজব নেমে আসবে। অত কথা শুনতে চাই না, তুমি এক্ষুনি বাড়ি নিয়ে যাবে কিনা বল, নচেৎ আমি নিজেই তার ব্যবস্থা করব।

মালেক ভেবেছিল, আজ দিনে আর একবার তাকে ভোগ করে বিকেলে বাড়ি ফিরবে। ফাহমিদার কথা শুনে চিন্তা করল, বেশি চাপাচাপি করলে হিতে বিপরীত হবে। তাই রাগকে সংযত করে বলল, নিচে গিয়ে নাস্তা খেয়ে আসি চল। তারপর বেরোন যাবে।

ফাহমিদা দৃঢ়স্বরে বলল, তুমি খেয়ে আসতে পার, আমি কিছু খাব না।

মালেক তার দৃঢ়স্বর শুনে আর কিছু না বলে নাস্তা খেতে একা বেরিয়ে গেল। আধঘণ্টা পর ফিরে এসে দেখল, ফাহমিদা রেডী হয়ে বসে আছে। সে নিজের জামাকাপড় ব্রিফকেসে ভরে নিল। তারপর হোটেল ছেড়ে দিয়ে ফাহমিদাকে সঙ্গে নিয়ে গাড়িতে উঠল।

টঙ্গিবাড়ি যাওয়ার রাস্তা আলদিবাজার থেকে অল্প দূরে। গাড়ি যখন আলদিবাজারের কাছাকাছি এল তখন ফাহমিদা বলল, আমাদের গ্রামের রাস্তার মোড়ে আমকে নামিয়ে দেবে।

মালেক বলল, কেন?

ফাহমিদা অগ্নি দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলল, কেন জিজ্ঞেস করতে তোমার লজ্জা করল না? যা বলছি তাই কর। তারপর দরজার লক খুলে একটু ফাঁক করে বলল, যদি গাড়ি না থামাও তাহলে লাফ দেব।

মালেক ফাহমিদার অগ্নিমূর্তি দেখে ভয় পেল। তার ইচ্ছা ছিল বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মাকে বলবে আজকালের মধ্যে বিয়ের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু তার মতিগতি দেখে ভাবল, সে যদি সত্যিই লাফ দেয়, তা হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে বলল, আমাদের বাড়িতে যখন যাবে না তখন তোমাকে রাস্তার মোড়ে নামাব কেন? একেবারে তোমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিই। খালা খালুকে বলব, তারা যেন আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা তাড়াতাড়ি করেন।

ফাহমিদা গর্জে উঠল, তুমি ভেবেছ এরপরও আমি তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হব? আমাদের বাড়িতে আর কষ্ট করে যেতে হবে না। আমি তাদেরকে তোমার চরিত্রের গুণাগুণ করে আজই খালা খালুর কাছে আমাদের বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার খবর পাঠিয়ে দিতে বলব। তোমার মতো মদখোর, মাগী খোর ছেলের সঙ্গে জেনে শুনে আমার মা বাবা বিয়ে দেবে ভেবেছ?

ততক্ষণে আলদিবাজারের রাস্তার মোড়ে গাড়ি পৌঁছে যেতে ফাহমিদা চিৎকার করে বলল, গাড়ি থামাও বলছি নচেৎ যা বললাম তা সত্যি সত্যি করে ফেলব।

অগত্যা মালেক গাড়ি থামাতে বাধ্য হল। ফাহমিদা নেমে যেতে বলল, তোমার জন্যে আমার দুঃখ হচ্ছে। এই সামান্য জিনিস নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করবে জানলে বিয়ের আগে তোমার গায়ে হাত দিতাম না। তুমি পাড়াগাঁয়ের মেয়ে বলে কলেজে পড়লেও তোমার মনের সংকীর্ণতা কাটে নি। তবে এত বাড়াবাড়ি না করলেও পারতে। যাচ্ছ যাও, শেষ মেস একটা কথা না বলে পারছি না, তুমি খালাত বোন বলে ছেড়ে দিলাম, অন্য কেউ হলে লাশ হয়ে গ্রামে ফিরত। তারপর সে গাড়ি ছেড়ে দিল।

জহুরা খানম ছেলেকে একা গাড়ি থেকে নামতে দেখে আতঙ্কিত স্বরে বললেন, কিরে ফাহমিদা কোথায়?

মালেক গম্ভীর স্বরে বলল, তাকে তাদের বাড়িতে রেখে এসেছি।

তাকে নিয়ে এলি না কেন?

যে আসবে না তাকে আনব কেমন করে?

জহুরা খানম ছেলের মন খারাপ দেখে ভাবলেন, ফাহমিদা আসে নি বলে মন খারাপ হয়ে আছে। বললেন, ঘরে গেছে ভালো কথা। তাতে তুই মন খারাপ করছিস কেন? আমি তোর আব্বাকে বলে যত শিঘী পারি তাকে বৌ করে আনার ব্যবস্থা করছি।

মালেক, কিছু না বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেল।

এদিকে ফাহমিদাকে ঐ অবস্থায় একা ফিরতে দেখে শাকেরা খানম আতঙ্কিতস্বরে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন, কিরে তোর চেহারা এরকম কেন? তুই একা এলি নাকি?

 এতটা পথ দুপুরে প্রখর রোদে হেঁটে এসে ফাহমিদার ফর্সা মুখ টকটকে লাল হয়ে গেছে। সে খুব ক্লান্তি বোধ করছিল। মায়ের কথার উত্তরে শুধু বলল, তোমার গুণধর ভাগ্না পাকা রাস্তার মোড়ে নামিয়ে দিয়ে গেছে। তারপর সে দাঁড়াল না, নিজের রুমের দিকে চলে যেতে লাগল।

শাকেরা খানম বেশ অবাক হয়ে বললেন, চলে যাচ্ছিস কেন? দাঁড়া মালেক এল না কেন?

ফাহমিদা দাঁড়াল না। যেতে যেতে বলল, কেন এল না তা আমি কি করে বলব? সে এলে জিজ্ঞেস করো।

শাকেরা খানম মেয়ের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ভাবলেন, নিশ্চয় মালেকের সঙ্গে কোনো ব্যাপারে মনোমালিন্য হয়েছে। ফাহমিদা এখন রেগে আছে। রাগ পড়লে পরে জিজ্ঞেস করা যাবে, এই কথা ভেবে নিজের কাজে মন দিলেন।

বিকেলে শাকেরা খানম মেয়ের রুমে গিয়ে দেখলেন, ফাহমিদা কাপড় পাল্টাচ্ছে। জিজ্ঞেস করলেন, কোথায় যাবি?

ফাহমিদা বলল, একটু জোবেদার কাছে যাব।

শাকেরা খানম আবার জিজ্ঞেস করলেন, মালেক এল না কেন তখন বললি না যে?

ফাহমিদা কাপড় পড়া শেষ করে মালেকের ক্রিয়া কলাপ যতটা সম্ভব বলে কেঁদে ফেলল। তারপর সামলে নিয়ে বলল, একটা মদখোর, মাগী খোর ছেলের সাথে তোমরা যদি আমার বিয়ে দাও, তা হলে আত্মহত্যা করব।

শাকেরা খানম মেয়ের মুখে মালেকের চরিত্রের অবনতির কথা শুনে খুব অবাক হলেন। বললেন, সত্যি সে যদি ঐরকম ছেলে হয়, তা হলে তোর আব্বাকে বলে বিয়ে ভেঙ্গে দেব।

ফাহমি কিছু না বলে জোবেদাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য বেরিয়ে পড়ল।

জোবেদা তাকে দেখে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠল। ঝাঝালো স্বরে বলল, তোকে না আমাদের বাড়িতে আসতে নিষেধ করেছিলাম? আর তুইও তো সেদিন আসবিনা বলে গরম দেখিয়ে চলে গেলি। আজ আবার হঠাৎ কি মনে করে? শামী ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ শুনে খুশী হতে এসেছিস বুঝি?

ফাহমিদা জোবেদার কথা শুনে চমকে উঠে কেঁদে ফেলল। তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে বলল, কি বললি, শামী নেই? আল্লাহ গো তুমি একি খবর শোনালে? আমি যে তার কাছে মাফ চাইতে পারলাম না। সে না মাফ করলে আমি যে তোমার কাছেও মাফ পাব না। তারপর জোবেদাকে ছেড়ে দিয়ে তার দুটো হাত নিয়ে নিজের গলায় চেপে ধরে বলল, তুই আমাকে গলা টিপে মেরে ফেল। আমি যে কত বড় ভুল করেছি, তা হাড়ে হাড়ে বুঝতে পেরেছি। সেই জন্য তো তোর কাছে ছুটে এলাম শামী ভাইয়ের কাছে। মাফ চাইতে যাব বলে। আর তুই যে কথা শোনালি তা কি সত্যি? বল জোবেদা বল।

ফাহমিদা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে জেনে জোবেদা চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, তুই বড় দেরি করে ফেলেছিস। কয়েকদিন আগে যদি তোর ভুল ভাঙত, তা হলে শামী ভাই হয়ঙ্গে বেঁড়ে যেত। এখন যা অবস্থা এই আছে তো এই নেই। আমি রায়হান ভাইয়ের জন্যে অপেক্ষা করছি। সে প্রতিদিন আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় শামী ভাইকে দেখতে। আজ আসতে এত দেরি করছে কেন কি জানি? জানিস, যেদিন তুই শামী ভাইকে ঐসব কথা বলে বিদায় করে দিলি, সেদিন থেকে শামী ভাই আহার নিদ্রা ত্যাগ করে শুধু তোর নাম বিড়বিড় করে বলত। তারপর কয়েক দিনের মধ্যে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ল। আমি ও রায়হান ভাই কত করে তোকে ভুলে যাওয়ার জন্য বুঝিয়েছি। ওর বাবা যত রকমের চিকিৎসা আছে, সব করিয়েছেন, তাবিজ তদ্বীরও অনেক করিয়েছেন। এই সব করাতে গিয়ে জমি জায়গা বিক্রি করে একরকম নিঃস্ব হয়ে গেছেন। শেষে হাসপাতালে ভর্তি করে দিয়েছেন। হাসপাতালের ডাক্তাররা বলে। দিয়েছেন, শামী ভাই আর বাঁচবে না, যে কোন সময় মারা যাবে। তবু যতক্ষণ শ্বাস। ততক্ষণ আশ, এই কথা ভেবে চিকিৎসা চলছে। ডাক্তাররা তার ভালবাসার কথা শুনে বলেছেন, যদি মেয়েটির সঙ্গে বিয়ে দেয়া সম্ভব না হয়, তা হলে অন্য একটা ভালো। মেয়ে দেখে বিয়ে দেন। নচেৎ ওকে বাঁচান যাবে না। ডাক্তারের কথা শুনে ওর বাবা রায়হান ভাইয়ের সঙ্গে পরামর্শ করে আব্বার কাছে এসে আমার সঙ্গে শামী ভাইয়ের বিয়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন। ওনার সঙ্গে রায়হান ভাইও এসেছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, জোবেদা তুমিই একমাত্র শামীকে বাঁচাতে পার। আমি বললাম, বলুন কি করতে হবে। রায়হান ভাই বললেন, তুমি শামীকে বিয়ে কর। আমাদের বিশ্বাস, তুমি তোমার প্রেম ভালবাসা দিয়ে শামীর মন থেকে ফাহমিদার কথা ভুলতে পারবে। আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম, তাই যদি আপনারা মনে করেন, তা হলে শামী ভাইকে বাঁচাবার জন্য আমি রাজি। কিন্তু আব্বা কিছুতেই রাজি হল না। বলল, একটা মৃত্যু পথযাত্রী ছেলের সঙ্গে জেনেশুনে বিয়ে দিয়ে আমার মেয়ের জীবন নষ্ট করতে পারব না। আর লোকজন শুনলে আমাকে কি বলবে আপনারা ভেবে দেখেছেন? আমি আমার নিজের কাছেও ছোট হয়ে যাব। না না, এ প্রস্তাব আমি কখনই মেনে নিতে পারি না। আপনারা চলে যান। আব্বার কথা শুনে আমি রায়হান ভাইকে গোপনে বললাম, আব্বাকে রাজি করাবার দরকার নেই। শামী ভাইকে দেখতে আমি তো হাসপাতালে যাই। আজ যখন যাব তখন সেখানেই বিয়ে পড়িয়ে দেবেন। আপনারা আগের থেকে হাসপাতালে কাজী সাহেবকে হাজির রাখবেন। ওনারা সবকিছু করেছিলেন। আমিও গিয়েছিলাম, কিন্তু শামী ভাই কিছুতেই রাজি হলেন না। সবাই অনেক করে বোঝাল। তাতেও কিছু হল না। শেষে লজ্জা সরমের মাথা খেয়ে আমি তার পায়ের উপর পড়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম, শামী ভাই, তুমি জান কিনা জানি না, আমি তোমাকে বহুদিন আগে থেকে নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালবাসি। তুমি ফাহমিদাকে ভালবাস জানতে পেরে তা কোনোদিন তোমাকে জানাইনি। আর কোনো দিন জানাতামও না। তোমার অবস্থা দেখে আজ বাধ্য হলাম। তুমি আমাকে বিয়ে করে দেখ, আমি আমার প্রাণের বিনিময়ে হলেও প্রেম ভালবাসা দিয়ে এবং সেবা শুশ্রূষা করে তোমাকে ভালো করে তুলবই। শাম। ভাইয়ের তো নড়াচড়া করার ক্ষমতা নেই। তাই শুধু চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, আমি তা জানি জোবেদা। কিন্তু এতদিন যখন সেকথা গোপন রেখেছিলে তখন প্রকাশ করা তোমার উচিত হল না। তুমি নিশ্চয় জান, ফাহমিদাকে আমি কত ভালবাসি। তাকে ছাড়া জীবনে অন্য কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে কখনও যে তাকাইনি তাও তুমি জান। এতকিছু জেনেও কেন এরকম করলে? আমার হায়াত যত দিন আছে ততদিন ফাহমিদা ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের কথা আমি ভাবতে পারব না। তা ছাড়া মনে হচ্ছে আমার হায়াৎ আর বেশি দিন নেই। তার আগে যদি একবার ফাহমিদাকে দেখতে পেতাম, তা হলে শেষ বাসনা পূরণ হত। তারপর ফাহমিদার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়তে দেখে তাকে জিজ্ঞেস করল, এবার বল দেখি, তোর ভুল ভাঙ্গল কি করে? তোর খালাত ভাইয়ের সঙ্গে তো বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। তার গাড়িতে চড়ে একদিন তোকে কোথায় যেতেও দেখলাম। এই কয়েক দিনের মধ্যে কিসে কি হল বল?

জোবেদার কথা শুনতে শুনতে ফাহমিদার চোখ থেকেও অঝোরে পানি পড়ছিল। তখন তার মনে হল, আমি বেশি লোভের বশবর্তী হয়ে শামীকে ফিরিয়ে দিয়েছি বলে আমার সব স্বপ্ন আল্লাহপাক ধূলিস্যাৎ করে দিলেন। সে জোবেদার কথার উত্তরে তার খালাত ভাই মালেকের চরিত্রের সব কিছু খুলে বলল। তারপর জোবেদার গলা ধরে জড়িয়ে কেঁদে কেঁদে বলল, আমাকে শামীর কাছে নিয়ে চল। আমি তার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইব। সে ক্ষমা না করলে আল্লাহও আমাকে ক্ষমা করবে না।

জোবেদা বলল, শামী ভাই একদিন আমাকে একটা খাম দিয়ে বললেন, ফাহমিদার সঙ্গে যদি কখনও তোমার দেখা হয়, তা হলে তাকে দিয়ে বলল, এটা যেন সে মেহেরবাণী করে পড়ে। দাঁড়া, সেটা তোকে এনে দিচ্ছি। তারপর একটা বাক্স থেকে খামটা বের করে এনে তার হাতে দিয়ে বলল, আমাকে পড়ার অনুমতি দিয়েছিলেন। আমি পড়েছি। তোর জিনিস তুই পড়ে দেখ।

ফাহমিদা খাম থেকে একটা কাগজ বের করে দেখল, তার দুপৃষ্ঠায় লেখা দুটো কবিতা। পড়তে শুরু করল, প্রথম পৃষ্ঠার কবিতার নাম অহঙ্কারীনি, কবি আব্দুস শামী।

পাঁচ বছর পূর্বের কথা,
মনে আছে কি তোমার?
সেদিন তুমি প্রহর গুণেছিলে
 অপেক্ষায় ছিলে আমার।
 আজ তুমি আমায় দেখে
অভিনয়ের স্বরে ডাক,
 রাস্তা ঘাটে আমায় দেখে
অবহেলা দেখিয়ে থাক।
 আধুনিকা মেয়েরা এত যে পাষাণী
জানতাম না আমি এর পূর্বে,
 হামসে খুব সুরতওয়ালী কৌন হ্যায়।
এই কথা ভেবে চল বুক ফুলিয়ে গর্বে।
রূপসী ও ধনবতী কন্যা বলে
গরিবে করেছ যথেষ্ট অপমান,
রূপ নিয়ে শুধু চোখ ঝলসান যায়।
মনকে জয় করা যায় না কখন।
হ্যাঁ, আছে একদল মানুষ নামের কলংক
হিংস্র মেজাজের পশু, রূ
প দেখলে পাগল হেয় যায় তারা।
হুঁশ বুদ্ধি তাদের ঠিক থাকে না কিছু।
তোমার মত অহঙ্কারী ম্যাডাম
শত শত আছে বাজারে সমান।
আশ্রয় তাদের পতিতালয়ে।
তাদের শরীরের উপর দিয়ে যায় কত ঝড় তুফান।
রূপের গর্ব যদি থাকে তোমার ওগো রূপসী
একবার যেয়ে দেখ না সেখানে,
অহঙ্কার তোমার হবে চূরমার।
শত রূপবানের ভক্ষণে।

ফাহমিদা প্রথম পৃষ্ঠার কবিতাটা শেষ করে দ্বিতীয় পৃষ্ঠার কবিতাটা পড়তে লাগল। কাবতার নাম

হে প্রভু

তোমার করুণা কাম্য মোদের
দাও হে শক্তি দাও হে প্রভু,
 থাকিতে পারি যেন মোরা
 মিলন লগ্নাপেক্ষায় শুধু।
হে প্রভু, বিচলিত না হই যেন,
মোদের অন্তরে দাও সে শক্তি
 মোরা যে দুর্গম পথের যাত্রী
কেটেছে কত দিবা রজনী।
 অকুল সাগরে আল্লাহ, তুমি ভরসা
তুমিই মোদের একমাত্র আশা।
তোমারি নামে করেছি শপথ।
 চিরকাল আমি ভুলব না তারে,
এই বিশ্বাস থাকে যেন মোর উপরে
হে আল্লাহ তুমি সেই জ্ঞান দাও গো তারে।
হে প্রভু আমি যে নিঃস্ব
কি দিয়ে সুখী করব তারে,
আছে শুধু পবিত্র ভালবাসা,
সেটাই স্থান পায় যেন তারই অন্তরে।

ফাহমিদা কবিতাটা পড়ে ভাঁজ করে খামের ভিতর রাখল। তারপর চোখের পানি ফেলতে ফেলতে জোবেদার দিকে তাকিয়ে বলল, শামীর কথাই ঠিক, আজ আমার রূপের সকল অহঙ্কার চূর্ণ হয়েছে। তারপর আবার বলল, কিরে, আমাকে শামীর কছে নিয়ে যাবি না?

জোবেদা বলল, হ্যাঁ নিয়ে যাব। আর একটু অপেক্ষা কর, রায়হান ভাই আসুক।

এমন সময় রায়হান জোবেদাদের সদরে এসে তার হোট বোন জয়তুনকে দেখতে পেয়ে জোবেদাকে ডেকে দিতে বলল।

জয়তুন জোবেদার কাছে গিয়ে বলল, আপা তোমাকে রায়হান ভাই ডাকছেন।

জোবেদা এতক্ষণ ফাহমিদার সঙ্গে নিজের রুমে কথা বলছিল। ছোট বোনের কথা শুনে ফাহমিদাকে সঙ্গে নিয়ে সদরে এল।

জোবেদার সঙ্গে ফাহমিদাকে দেখে রায়হান বেশ অবাক হল। সেই সঙ্গে রাগে তার চোয়াল দুটো আপনা থেকে শক্ত হয়ে উঠল। কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যে সামলে নিয়ে জোবেদাকে উদ্দেশ্য করে বলল, তাড়াতাড়ি এস, এমনি অনেক দেরি হয়ে গেছে।

ফাহমিদা রায়হানের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছে। সে একরকম ছুটে এসে বসে পড়ে তার পায়ে হাত রেখে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বলল, রায়হান ভাই; আমি আমার ভুল বুঝতে পেরে আপনাদের কাছে ছুটে এসেছি। আমাকে বোনের মতো মনে করে ক্ষমা করে দিয়ে শামীর কাছে নিয়ে চলুন। আমি তার কাছে ক্ষমা চাইব। আমার বিশ্বাস, সে নিশ্চয় আমাকে ক্ষমা করবে। তারপর সে ফুলে ফুলে কাঁদতে লাগল।

রায়হান কঠিন পাথরের মত চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।

জোবেদা বলল, আপনি ওকে ক্ষমা করে দিন রায়হান ভাই। সত্যি সত্যি ওর ভুল ভেঙ্গেছে। তাই আমার কাছে এসে সেকথা জানিয়ে কান্নাকাটি করে শামী ভাইয়ের কাছে যাওয়ার জন্য ছটফট করছে। অপরাধী যখন নিজের অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা চায় তখন তাকে ক্ষমা করাই তো মহত্ত্বের লক্ষণ। আল্লাহপাক ক্ষমা প্রার্থীকে ক্ষমা করেন। আর যারা ক্ষমা প্রার্থীকে ক্ষমা করে তাদেরকে ভালবাসেন। এটা হাদিসের কথা। হাদিসে আরো আছে, রাসুলুল্লাহ (সঃ) বলিয়াছেন, এমরানের পুত্র মুসা (আঃ) জিজ্ঞাসা করিয়াছিলেন, হে প্রভু! তোমার নিকট সর্বাপেক্ষা সম্মানিত ব্যক্তি কে? আল্লাহ বলিলেন, ক্ষমতাশীল হইয়াও যে ক্ষমা করে। এসব কথা আমি মুগ্ধ হয়ে আপনাকে আর কি বলব। আপনি তো আলেম লোক। আপনাকে এই সব বলে বেয়াদবি করে ফেললাম। সে জন্য ক্ষমা চাইছি।

রায়হান ফাহমিদাকে দেখে ভীষণ রেগে গিয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল। কারণ তারই জন্য প্রীয় বন্ধু শামী আজ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। জোবেদার কথা শুনে তার রাগ পড়ে গেল। বলল, জোবেদা, হাদিসের কথা বললে বেয়াদবি হয় না। বলে। বরং আমার উপকার করলে, তোমার কথা শুনে রাগ পড়ল। নচেৎ ফাহমিদাকে হয়তো যাতা বলে অপমান করে তাড়িয়ে দিতাম। তারপর ফাহমিদার হাত ধরে তুলে দাঁড় করিয়ে বলল, তুই বড় দেরি করে ফেলেছিস বোন। আয় আমাদের সঙ্গে। এই কথা। বলে হাঁটতে শুরু করল।

আজ সকালে ডাক্তার শামীর আব্বাকে বলে দিয়েছেন, আপনার ছেলের কোনো সখ সাধ থাকলে মিটিয়ে দিন। তার অবস্থা ভালো নয়। আমরা তো যথাসাধ্য চেষ্টা করলাম। কিন্তু হায়াৎ মউতের ব্যাপার আল্লাহপাকের হাতে। আমরা বুঝতে পারছি। কয়েক ঘণ্টা তার আয়ু আছে। আত্মীয়-স্বজনদের খবর দিন।

আব্দুস সাত্তার নিজেও তা বুঝতে পেরেছেন। ডাক্তারদের কথা শুনে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে বাড়িতে গিয়ে সবাইকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছেন। তারা আর বাড়ি যায় নি।

রায়হান, জোবেদা ও ফাহমিদা তখনও হাসপাতালে গিয়ে পৌঁছায় নি। শামী। একবার করে কাতর চোখে সবাইয়ের দিকে তাকিয়ে নিরাশ হয়ে চোখ নামিয়ে নিচ্ছে। কিছু বলতে গিয়েও বলছে না।

মাসুমা বিবি তা বুঝতে পেরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ছেলের মুখের উপর ঝুঁকে পড়ে জিজ্ঞেস করলেন, বাবা, তুমি কি কাউকে দেখতে চাচ্ছ?

শামী কোনো কথা না বলে মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল, আর তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল।

এমন সময় রায়হান ওদেরকে নিয়ে এসে বলল, চাচি আম্মা, আপনি একটু সরুন তো?

মাসুমা বিবি সোজা হয়ে পাশে সরে বসলেন। রায়হানের গল্প পেয়ে শামী তার দিকে তাকিয়ে বলল, দোস্ত চললাম, কোনো দোষত্রুটী করে থাকলে ক্ষমা করে দিস। তারপর মা বাবার দিকে তাকিয়ে বলল, আমি তোেমাদের নানান নালায়েক হেলে। তোমাদের মনে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমার চিকিৎসার জন্যে মেরা নিঃস্ব হয়ে গেছ। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আমার জন্য আল্লাহপাকের কাছে দোয়া করো, তিনি যেন আমাকে নাজাত দেন। তারপর জোবেদাকে দেখে বলল, তোমার মনেও অনেক কষ্ট দিয়েছি। তুমিও আমাকে ক্ষমা করে দিও।

ফাহমিদা এতক্ষণ জোবেদার পিছনে ছিল। তাকে শাম দেখতে পাই নি। সে আর থাকতে পারল না। শামীর কাছে এগিয়ে এসে দরবিগলিত সক্ষে কাল, গম, এই হতভাগী পাপিষ্ঠাকে ক্ষমা করে দাও। নচেৎ জাহান্নামেও আমার জায়গা হবে না। তুমি না ক্ষমা করলে ইহকালে ও পরকালে আমার নাজাতের কোনো উপায় নাই। জুম আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা পাওয়ার জন্য তোমার কাছে ছুটে এসেছি। তোমাকে ছেড়ে আমি আর কোথাও যাব না। তারপর কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।

ফাহমিদাকে দেখে ও তার কথা শুনে শামীর মুখে হাসি ফুটে উঠল। কলল, তুমি সেই এলে, তবে বিদায় বেলায়। এখন যে আমি নিঃস্ব হয়ে পরপারের যাত্র। তোমাকে দেয়ার মতো আজ আমার কিছুই নেই। আছে শুধু ভগ্ন হৃদয়ের পূর্ণ ভালবাসা। তা কি গ্রহণ করবে? আর করেই বা কি হবে? যার আয়ু শেষ, তার ভালবাসার এক কানাকড়িও পৃথিবীর মানুষের কাছে মূল্য নেই। আত্মীয়-স্বজনেরা মৃত্যুর পর মাত্র কয়েকদিন মায়া কান্না কাঁদে। তারপর কালের পরিবর্তনে মানুষ বর্তমানের স্রোতে অতীতের সবকিছু ভুলে যায়।

ফাহমিদা বলল, আমি তোমার কোনো কথা শুনতে চাই না। তুমি আমাকে ক্ষমা করে এই পবিত্র পায়ে ঠাই দাও। নচেৎ আমার ধ্বংস অনিবার্য। এই কথা বলে সে শামীর দুপা জড়িয়ে আবার কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।

শামী কিছুক্ষণ নিথর হয়ে থেকে বলল, ক্ষমা তুমি পেয়েছ। আল্লাহপাক তোমাকে যেন ক্ষমা করেন। এখন কান্না থামিয়ে উঠে বস। বিদায় বেলায় তোমার মুখের হাসি দেখতে চাই। তুমি আমাকে ভুল বুঝলেও আমি তোমাকে বুঝি নি। জানতাম, একদিন না একদিন তোমার ভুল ভাঙবে। সেদিন তুমি আবার আমার কাছে ছুটে আসবে। আজ আমার কি আনন্দ হচ্ছে। আল্লাহ আমার শেষ বাসনাটুকু পূরণ করলেন। দীলে দীলে আল্লাহকে জানিয়ে আসছিলাম, শেষ মুহূর্তে একবারের জন্য হলেও যেন তোমাকে দেখান। আল্লাহ এই নাদান গোনাহগার বান্দার সেই ইচ্ছা পূরণ করিয়ে আমাকে ধন্য করলেন। সে জন্যে তাঁর পাকদরবারে শত কোটি শুকরিয়া জানাচ্ছি। এবার মরে গিয়েও আমি শান্তি পাব। তারপর কয়েক সেকেণ্ড চুপ করে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলল, দোস্ত, ফাহমিদা যদি কোনোদিন তোর কাছে কোন বিষয়ে সাহায্য চায়, তা হলে তাকে সাহায্য করবি।

শামীর কথা শুনতে শুনতে সকলের চোখ থেকে পানি পড়ছিল। তাই দেখে শামীর মুখে স্নান হাসি ফুটে উঠল। বলল, তোমরা আমার জন্যে কান্নাকাটি না করে আমার মাগফেরাতের জন্য দোয়া কর। তারপর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, আম্মা, আমাকে একটু পানি খাওয়াও তো, শেষবারের মতো তোমার হাতে পানি খেয়ে নিই।

মাসুমা বিবি তাড়াতাড়ি পানি এনে চামচে করে ছেলের মুখে দিলেন।

পানি খেয়ে শামী সকলের দিকে একবার চোখ বুলিয়ে কলেমা শাহাদাৎ পড়তে পড়তে নিথর হয়ে গেল।

রায়হান ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে ডাক্তারকে ডেকে আনার জন্য ছুটে গেল।

ডাক্তার এসে পরীক্ষা করে বললেন, উনি আর ইহজগতে নেই। ইন্নালিল্লাহে … রাজেউন।

ডাক্তারের কথা শুনে আব্দুস সাত্তার ও রায়হান ইন্নালিল্লাহে ……….. রাজেউন।.. পড়ে ফুঁপিয়ে উঠলেন, অন্যান্যরা সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল।

শুধু ফাহমিদা মুক ও বধির হয়ে পাথরের মত দাঁড়িয়ে রইল।

Super User