০৬.
তারমানে জিনাই ছবিটা লাগিয়েছে ফ্রিজের দরজায়, কিশোর বলল।
হ্যাঁ। আর কে লাগাবে? মুসা বলল।
অথচ কেইন আর তার কর্মচারীগুলো স্রেফ অস্বীকার করল, জিনাকে দেখেনি। ছবির দিকে না তাকিয়েই। কিন্তু সে ছাড়া ওই ফ্রিজে আর কেউ লাগায়নি তার বাবার ছবি। কোন এক সুযোগে লাগিয়ে দিয়েছে। আমাদের জন্যে সূত্র। সে জানে, ওর নিখোঁজ হওয়ার কথা শুনলে আসবই আমরা। ছবিটা ছাড়া আর কিছু আছে?
না। থাকলেও দেখিনি।
আবার ঢুকতে হবে ওই বাড়িতে, কিশোর বলল। জিনার নিরুদ্দেশের ব্যাপারে কেইনের হাত থেকে থাকলে ওই বাড়িতেই তাকে আটকে রেখেছে।
পার্টির সময় ঢুকে পড়লে কেমন হয়? সবাই ব্যস্ত থাকবে পাটি নিয়ে, আমাদের কেউ লক্ষ করবে না।
ঠিক বলেছ, পরামর্শটা পছন্দ হলো কিশোরের। এখন চলো, মোটেলে ফিরে যাই। রবিনের ফেরার অপেক্ষা করি।
গাড়িতে উঠে ফিরে চলল ওরা।
ওয়াইল্ড পাম হোটেলের সামনে এনে গাড়ি থামাল মুসা। ভ্যানটার কাছে। ফিরে এসেছে রবিন। ওদের অপেক্ষাতেই ছিল।
ব্রেক করেও সারতে পারল না মুসা, ভেতর থেকে দৌড়ে বেরিয়ে এল রবিন। ১২ বাই ১৪ ইঞ্চি একটা ছবি বাড়িয়ে দিয়ে বলল, দেখো তো, কেমন হলো?
গাড়ি থেকে নেমে এসে ছবিটা হাতে নিল কিশোর। একবার দেখেই বলে উঠল, ঠিকই বলেছিলাম। আইডেন্টিফিকেশন নম্বরই এটা।
বেশির ভাগ নম্বরই অস্পষ্ট, বোঝা যায় না, রবিন বলল। দোকানের লোকটা বলল, এরচেয়ে ভাল করার আর সাধ্য নেই তার।
ঠিকই বলেছে, একমত হলো কিশোর, এর চেয়ে ভাল আর কেউই করতে পারবে না। শেষ তিনটে সংখ্যা পড়া যাচ্ছে এখন-তিন, দুই, ছয়।
মুখ তুলে তাকাল সে। এখন আমাদের পরবর্তী কাজ রেনটাল কার এজেন্সিকে ফোন করা। শেষ তিনটা সংখ্যা মেলে, এ রকম কটা গাড়ি আছে তাদের, খোঁজ নেয়া।
মোটেলের অফিস ঘরে ঢুকল ওরা।
ওদের দেখেই বলে উঠলেন মিস্টার ব্রুক, আর বোধহয় টিকতে পারলাম! কাউন্টারের ওপর একটা কাগজ রেখে ওদের দিকে ঠেলে দিলেন তিনি। পড়ো এটা।
কি? তুলে নিল কিশোর। রেডস্টার বুকিংস। কিসের কোম্পানি?
পড়ো না, তাহলেই বুঝতে পারবে। ওরা আমার কাস্টোমার জোগাড় করে দেয়। কাস্টোমারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করে মোটেলে বুকিঙের ব্যবস্থা করে। বিনিময়ে কমিশন পায়।
কাগজটা জোরে জোরে পড়ল কিশোর: আমরা আর ওয়াইল্ড পাম মোটেলের সঙ্গে চুক্তিতে থাকতে পারছি না।
কি কারণ? জানতে চাইল রবিন।
সেটা তো আমিও বুঝতে পারছি না, ক্ষোভের সঙ্গে বললেন মিস্টার ব্রুক। ফোন করেছিলাম। জবাব দিল না। আমার কাছে একটা টাকাও পাবে না ওরা। সব পাওনা সময় মত দিয়ে দিয়েছি। কোন অভিযোগ নেই আমার বিরুদ্ধে। মোট কথা, কাজ না করার কোন কারণই নেই।
তারমানে কেউ ওদের কাজ করতে মানা করেছে, কিশোর বলল।
মনে হয়। প্রচুর টাকা খাইয়েছে, কিংবা অন্য কোন ভাবে চাপ সৃষ্টি করেছে। আমার ডক ভেঙে দিয়েছে, গাছ চুরি করেছে, এখন আমার ব্যবসার ওপর হাত দিয়েছে। জায়গাটা বিক্রির জন্যে মোটা টাকা দেয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল। আমি শুনিনি। এটাই সম্ভবত আমার অপরাধ। মনে হচ্ছে এরপর আমার বোটটার ওপর নজর দেবে। তাড়াতাড়ি ওটা মেরিনায় সরিয়ে না ফেললে-যেখানে পাহারার ব্যবস্থা আছে, ওটাও খোয়াতে হবে আমাকে।
আপনার বন্ধু কুপার কিন্তু রুখে দাঁড়িয়েছেন, কিশোর বলল। আমার মনে হয় আপনারও এত সহজে হাল ছেড়ে দেয়া উচিত হবে না।
বলার চেয়ে করা কঠিন, তিক্তকণ্ঠে জবাব দিলেন মিস্টার ব্রুক।
আজকের দিনটা অন্তত চুপ করে থাকুন। কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। শান্ত মাথায় চিন্তা করার মত অবস্থা নেই।
মিস্টার ব্রুককে চুপ করে থাকতে দেখে কিশোর বলল, আমরা আপনাকে সাহায্য করব। আমার দৃঢ় বিশ্বাস জিনার কিডন্যাপের সঙ্গেও এ সবের কোন সম্পর্ক আছে। একটা রহস্যের সমাধান হলে আরেকটারও হয়ে যাবে।
কিছু কিছু যুদ্ধ আছে, যেগুলো করে কোন লাভ হয় না, মিস্টার ব্রুক বললেন। যাকগে, আমি কোন কথা দিতে পারছি না তোমাদেরকে।
অফিস থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। সঙ্গে এল ইভা।
কিশোরের দিকে তাকাল মুসা। জিজ্ঞেস করল, এখন কি করব?
চলো, গাড়িটার খোঁজ-খবর করা যাক, জবাব দিল কিশোর। তারপর খেতে যাব কুপারস ডিনারে।
চলো, আমিও যাব তোমাদের সঙ্গে ইভা বলল।
খোঁজাখুঁজি করতে অনেক সময় গেল। লাঞ্চ করতে কুপারস ডিনারে যখন গেল ওরা, লাঞ্চের সময় পেরিয়ে গিয়ে প্রায় ডিনারের সময় হয়ে গেছে।
মজার ব্যাপার, কাকতালীয় ভাবে ওখানেই সবুজ গাড়িটার খোঁজ পেয়ে গেল ওরা। তবে ওটাই আসল গাড়িটা কিনা, নিশ্চিত হতে পারল না। যদিও শেষ তিনটে নম্বর মিলে যায়। গাড়িটার রঙ সবুজ।
গাড়িটা যে নিয়ে এসেছে, সে.ও কুপারস ডিনারে কফি খেতে ঢুকেছে। লোকটার কালো চুল। চামড়ার রঙ মোমের মত ফ্যাকাসে।
লোকটা বেরিয়ে গেলে ম্যাগিকে জিজ্ঞেস করে জানা গেল ওর নাম হারম্যান কেগ।
মাসখানেক হলো এসেছে, ম্যাগি জানাল। বিচিত্র স্বভাব। কারও সঙ্গে কথা বলে না। ঢোকে, চুপচাপ খেয়েদেয়ে বিল দিয়ে চলে যায়।
কোথায় থাকে, বলতে পারেন? জিজ্ঞেস করল কিশোর।
শুনেছি পেলিক্যান লেন-এ,ম্যাগি বলল।
আমিও তাই শুনেছি, পেছনের ঘর থেকে বেরিয়ে আসতে আসতে বলল কুপার। লোকটা চোর-ডাকাত হতে পারে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।
শুধু কি চোর, ম্যাগি বলল। শুনলাম, শিকাগো থেকে এসেছে সে। ওখানে মানুষ খুন করে পালিয়েছে।
হ্যাঁ, এ গল্প আমিও শুনেছি, কুপার বলল। কেউ কেউ বলে, আসলে লোকটা একটা বিদেশী স্পাই। বিশ্বাসঘাতকতার অপরাধে নিজের দেশের লোকেরা তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। সেজন্যে গাল আইল্যান্ডে এসে লুকিয়ে আছে।
চোর-ডাকাত-ধুনী-স্পাই, যা-ই হোক, ইভা বলল, লোকটা যে খারাপ, দেখলেই বলে দেবে যে কেউ। আরও কিসের কিসের সঙ্গে জড়িত, কে জানে!
সেটা জানতে যাওয়ার জন্যে এখনও দিনের কিছু আলো অবশিষ্ট আছে, নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল কিশোর।
চলো তাহলে, লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়াল মুসা, ফরেন স্পাই মিস্টার হারম্যান কেগ জিরো জিরো সেভেনের সঙ্গে দেখাটা সেরেই আসি।
.
০৭.
পেলিক্যান লেনে মোড় নেয়ার সময় গতি কমিয়ে ফেলল মুসা। অনেক জমিতে মলিন হয়ে আসা বিক্রয় হইবে সাইন দেখা গেল। একটা বাড়ি দেখা গেল, শূন্য, নির্জন, পরিত্যক্ত। গভীর মনোযোগে সব লক্ষ করছে কিশোর।
রাস্তার শেষ মাথা পর্যন্ত চলে যাও, মুসাকে বলল সে। হারম্যান কেগ কোন বাড়িতে আছে দেখে নেয়া যাক। তারপর খানিকটা সরে এসে রাস্তার দিকে মুখ করে গাড়ি পার্ক করো।
তাতে লাভটা কি? জিজ্ঞেস করল ইভা। অস্বস্তিতে ভরা কণ্ঠ।
মুচকি হাসল কিশোর। তাতে লাভটা হলো বিপদ দেখলে এক মুহূর্ত দেরি না করে পালাতে পারব।
একটা কটেজ টাইপের বাড়িতে থাকে কেগ। ছোট্ট একটা রঙচটা ডেকের মত বারান্দা বেরিয়ে আছে সামনের দরজার গোড়া থেকে। তার ওপরে চালা। একপাশে বড় বড় জানালা বাড়িটার, একেবারে মেঝে থেকে ছাতে গিয়ে ঠেকেছে। ফ্ল্যামিঙ্গো পাসের দিকে মুখ করা। ক্যাসটিলো কীর চমৎকার দৃশ্যাবলীর অনেক কিছুই দেখা যাবে ওখানে দাঁড়ালে। দেখার জন্যেই বানানো হয়েছে ওভাবে জানালাগুলো। দেয়ালের রঙ নষ্ট হয়ে গেছে। চলটা উঠে উঠে বিশ্রী ক্ষতের মত দেখাচ্ছে। চড়া রোদে খুব সহসাই রঙের ছিটেফোঁটাও আর থাকবে না বোঝ যায়। কেবল চারপাশ ঘিরে থাকা পামের সারির কোন পরিবর্তন নেই, বাড়িটার রুক্ষতার মাঝে মোলায়েম প্রলেপ যেন ওগুলো।
প্রবালে তৈরি, অযত্নে নোংরা হয়ে থাকা গাড়ি বারান্দায় গাড়িটা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুসাকে বলল কিশোর, তোমার জিরো জিরো সেভেন মনে হয় ঘরেই আছে।
গাড়ি ঘুরিয়ে রেখে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল মুসা। দরজা খুলে লাফিয়ে নামল মাটিতে।
রবিন, কিশোর বলল, তুমি আর ইভা গাড়িতেই থাকো। পাহারা দাও। আমরা আসছি।
মুসাকে নিয়ে বাড়িটার দিকে রওনা হয়ে গেল সে। গাড়িটার কাছে দাঁড়িয়ে খানিকক্ষণ দেখল কিশোর। তারপর দরজার দিকে এগোল।
টোকা দেয়ার আগেই খুলে গেল দরজা। দরজায় দাঁড়িয়ে আছে কেগ। তারমানে নজর রাখছিল সে।
কি চাও? ভুরু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল কেগ।
আপনার সঙ্গে কয়েকটা কথা ছিল, কিশোর বলল। যদি কিছু মনে না করেন।
আর যদি করি?
কেগের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কিশোর বলল, ভেতরে আসব?
আমার গাড়ির কাছে কি করছিলে তোমরা? কেন বিরক্ত করছ শুধু শুধু? কয়েক ইঞ্চি পিছিয়ে গেল কেগ। ওদের মুখের ওপর দরজাটা যাতে বন্ধ করে দিতে পারে।
বেশি সময় নেব না, অনুরোধ করল কিশোর।
তোমাদের সঙ্গে কথা বলার কোন দরকার আছে বলে মনে হয় না, গোঁয়ারের মত বলল কেগ। তোমাদেরকে আমি চিনিও না।
আমি কিশোর পাশা। ও আমার বন্ধু মুসা আমান।
কেগকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার বলল কিশোর, আমাদের এক বন্ধু নিখোঁজ হয়ে গেছে এ দ্বীপ থেকে।
প্যান্টের পেছনের পকেট থেকে জিনা আর ইভার যুগল ফটোটা বের করে দেখাল সে।
গভীর মনোযোগে ছবিটা দেখল কেগ। তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ করছে, কোন রকম প্রতিক্রিয়া হয় কিনা।
অবশেষে মুখ তুলে তাকাল কেগ। এদের কাউকেই দেখিনি আমি। চেনা তো দূরের কথা। দয়া করে এখন যাও তোমরা।
দেখুন, ব্যাপারটা সত্যি আমাদের জন্যে জরুরী, ছবিটা আবার পকেটে রেখে দিল কিশোর। তারপর আচমকা ঢিল ছুঁড়ে বসল অন্ধকারে। মুখ বন্ধ না রাখলে ক্ষতি করার হুমকি দিয়েছে আপনাকে ডগলাস কেইন, তাই না?
বেরোও! বেরোও আমার বাড়ি থেকে! চিৎকার করে উঠল কেগ।
কিন্তু নড়ল না কিশোর আর মুসা।
আমরা জানি, কেগের চিৎকারের পরোয়াই করল না কিশোর, জিনাকে কিডন্যাপ করা হয়েছে। কি বলো, মুসা?।
হঁ, মাথা ঝাঁকাল মুসা। আপনার গাড়িটার মত একটা গাড়ি দিয়ে।
আমার বিরুদ্ধে কিসের অভিযোগ আনতে চাইছ তোমরা, বুঝতে পারছি না, গলার জোর হারিয়ে ফেলেছে কেগ। সত্যি বলছি, ডগলাস কেইনের সঙ্গে কোন। সম্পর্ক নেই আমার। আমি প্রমাণ করে দিতে পারি, এখানে এ বাড়িতে দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা বসে বসে আমি ছবি আঁকি, কেবল খাবার সময়টুকু বাদে। আমি একজন আর্টিস্ট। তারপর কিশোরদেরকে আর কিছু বলার কিংবা ভেতরে ঢোকার কোন সুযোগ না দিয়ে হঠাৎ পিছিয়ে গিয়ে দড়াম করে লাগিয়ে দিল দরজা।
মুসার দিকে তাকাল কিশোর। ভুরু নাচাল, কি বুঝলে? জবাবের অপেক্ষা না করে বলল, চলো, গাড়ির নম্বরটা লিখে নিই। চাকার খাঁজের ডিজাইনগুলোও দেখব।
গাড়ির কাছে এসে নোটবুকে নম্বরটা লিখে রাখল সে। তারপর পেলিক্যান লেন থেকে এঁকে আনা ডিজাইনগুলো বের করে মিলিয়ে দেখতে লাগল।
এই দেখো, মুসাকে দেখাল কিশোর। জিনার ফেলে যাওয়া গাড়ির কাছে যে সব দাগ পেয়েছি, তার সঙ্গে একটা দাগ মিলে যাচ্ছে।
ভ্যানের কাছে ফিরে এল দুজনে। কি কি জেনে এল, জানাল রবিন আর ইভাকে।
কেগকে কি মনে হলো? জিজ্ঞেস করল ইভা।
বুঝলাম না, ডাকাত দলের সর্দার, নাকি স্পাই, জবাব দিল মুসা। তবে ডগলাসের কথা শুনে চমকে গেছে, এটা ঠিক।
তার গাড়িটার দিকে এখন নজর রাখা দরকার, কিশোর বলল। এটাই আসল গাড়িটা কিনা, যেটাকে আমরা খুঁজছি, এ ব্যাপারে এখনও শিওর হওয়া যাচ্ছে না। খুঁজলে ওরকম তিনটে নম্বর মিলে যাবে বহু গাড়ির সঙ্গে। পুরো নম্বরটা ছাড়া নিশ্চিত হওয়া কঠিন। আর চাকার ডিজাইনও মিলে যাবে লক্ষ গাড়ির সঙ্গে, কারণ কোম্পানি তো আর প্রতিটি চাকারই ডিজাইন বদল করে না। কেগের গাড়ির সঙ্গে এ সব মিলে যাওয়াটা কাকতালীয়ও হতে পারে।
খাইছে! গুঙিয়ে উঠল মুসা। খুঁজে বের করব কি করে তাহলে?
ফোনে কাজটা সারা যেতে পারে, কিশোর বলল।
তাহলে দায়িত্বটা আমাকে দিতে পারো, ইভা বলল। বসে বসে যত খুশি ফোন করতে পারব আমি।
কোন কাজ? বুঝতে পারল না মুসা। গাড়ির সবুজ রঙ আর শেষ তিনটে নম্বর মিলে যায়, এমন কটা গাড়ি আছে, রেন্টাল কোম্পানিতে ফোন করে জানার কাজ, বুঝিয়ে দিল কিশোর।
ইভাকেই দায়িত্বটা দিল সে।
মোটেলের কাছে আসতে কিশোর বলল, মনে হচ্ছে আঙ্কেল ব্রুকের সঙ্গে দেখা করতে এসেছে কেউ।
সবাই দেখল, পার্কিং লটে একটা দামী বড় গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।
মুসা গাড়িটা পুরোপুরি থামানোর আগেই হ্যাঁচকা টানে দরজা খুলে লাফিয়ে নেমে গেল ইভা। দৌড় দিল অফিসের দিকে।
তার পেছনে ছুটল কিশোর আর রবিন। গাড়িটা রেখে আসতে সামান্য দেরি হলো মুসার।
অফিসের কাছাকাছি আসতে কানে এল মিস্টার ব্রুকের কণ্ঠ, এ জায়গা বিক্রির কোন ইচ্ছেই আমার ছিল না। কিন্তু আর তো কোন উপায়ও দেখতে পাচ্ছি না।
ঘরে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। ইভা আগেই ঢুকে পড়েছে। ফিরে তাকাল নীরা লেভিন। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত জ্বলন্ত চোখে গোয়েন্দাদের দিকে তাকিয়ে থেকে আবার মিস্টার ব্রুকের দিকে ঘুরল।
ঠিক আছে, নয় লাখ ডলারই দিলাম, যান। দ্রুত চেক লিখে টেবিলের ওপর দিয়ে ঠেলে দিল মিস্টার ব্রুকের দিকে।
কিশোরের দিকে তাকালেন মিস্টার ব্রুক। খবর শুনেছ? আমার বোটটাও শেষ। মেরিনাতে সরানোর আর সুযোগ হয়নি। স্টার্ট দিতেই ইঞ্জিনে বিস্ফোরণ। তলা খসে গিয়ে তলিয়ে গেছে পানিতে। কোনমতে প্রাণে বেঁচে ফিরে এসেছি।
অস্ফুট শব্দ করে উঠল ইভা।
দীর্ঘ একটা মুহূর্ত স্তব্ধ হয়ে রইল কিশোর। কি বলবে ভেবে পেল না।
মাথা নামালেন মিস্টার ব্রুক। ভগ্ন, বিধ্বস্ত একজন বুড়ো মানুষ। মুখ তুলে তাকালেন আবার নীরার দিকে। খুব যে বেশি দিচ্ছ না, সেটা তুমিও জানো। রিসর্ট বানিয়ে এর দশগুণ পয়সা তুলে নেবে খুব সহজেই। চেকটার দিকে তাকালেন না তিনি।
দশ কি বলছেন? না বলে আর পারল না কিশোর। বিশ-তিরিশ গুণ এসে যাবে পয়লা দুএক বছরেই। তার পরেরগুলো তো ফাউ। অনন্তকাল ধরে পেতেই থাকবে।
তাড়াতাড়ি একটা দলিল বের করে বাড়িয়ে দিল নীরা। নিন, সই করে দিন।
চাচা, খবরদার! চিৎকার করে উঠল ইভা। সই দেবে না বলে দিলাম!
না দিয়ে কি করব, বল? ক্লান্ত, শুকনো কণ্ঠস্বর। তোরা চলে গেলি। বোটটা খুইয়ে এলাম। এসে দেখি স্টেট রিসর্ট ইন্সপেক্টর বসে আছে। হুমকি দিয়ে গেছে, আগামী কয়েক সপ্তার মধ্যে যদি প্রয়োজনীয় সংস্কার করাতে না পারি, মোটেলে তালা লাগিয়ে দেবে। বলে গেছে, নতুন আইন নাকি হয়েছে এ ব্যাপারে। কত আর লড়াই করব?
দিন, সইটা দিয়ে ফেলুন, নীরা বলল। স্টেট ইন্সপেক্টর অন্যের ঘাড়ে চাপুক।
আঙ্কেল ব্রুক, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর, সই করার আগে দলিলটা ভালমত পড়ে নিন। প্রয়োজন মনে করলে উকিলকে ডেকে আনুন।
এই ছেলে, তুমি থামো! ধমকে উঠল নীরা। বেশি ফড়ফড় কোরো না। আগে আমাদের বেচাকেনা শেষ হয়ে যাক, তারপর যত খুশি পরামর্শ দিয়ে। নইলে খারাপ হবে বলে দিচ্ছি।
পাত্তাই দিল না কিশোর। আঙ্কেল ব্রুক, একটা ফোন করব।
হাত নেড়ে পাশের ঘরটা দেখিয়ে দিলেন মিস্টার ব্রুক।
চলে গেল কিশোর।
ইভা বলল, চাচা, দোহাই তোমার জায়গাটা বিক্রি কোরো না!
দেখি তো দলিলটা? কেউ বাধা দেয়ার আগেই টান মেরে মিস্টার ব্রুকের হাতের নিচ থেকে তুলে নিল রবিন।
অ্যাই, দেখো! চিৎকার করে উঠল নীরা। ভাল হবে না…
দলিল সম্পর্কে তেমন কোন ধারণা নেই রবিনের, তবে ওদের ব্ল্যাক ফরেস্টের বাড়িটা কেনার সময় কিছু কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। পড়তে শুরু করল সে।
কলমটা টেবিলে নামিয়ে রেখে অপেক্ষা করতে লাগলেন আঙ্কেল ব্রুক। নীরার দিকে তাকাল, পড়তে আর আপত্তি কি? পড়ুক না। ভেতরে যদি কোন রকম গণ্ডগোল করে না রাখো, অত ভয় পাচ্ছ কেন?
ঠাস করে ব্রীফকেসের ডালা বন্ধ করল নীরা। মুচকি হাসল রবিন। এতটাই প্রতিক্রিয়া হলো নীরার, এমন ভঙ্গি করল, চমকে গিয়ে এক পা পিছিয়ে গেল ইভা।
বহুত নাক গলাচ্ছ সব কিছুতে! রবিনের দিকে তাকিয়ে গজগজ করতে লাগল নীরা।
হুমকি দিচ্ছেন? রাগ দমাতে পারছে না মুসা।
পাশের ঘরের দিকে তাকাল রবিন। দরজা দিয়ে দেখা যাচ্ছে কিশোরকে। ফোনে কথা বলছে। নোটবুকে কি যেন লিখে নিয়ে ফোন রেখে দিল। ফিরে এল অফিসে।
ব্যুরো অভ কমার্শিয়াল ইন্সপেকশনে ফোন করেছিলাম, জানাল সে। স্টেট রিসর্ট ইন্সপেক্টর সেজে যে এসেছিল, সে ভুয়া লোক। নভেম্বরের আগে এ মোটেল ইন্সপেকশনে আসার কোন ইচ্ছেই নেই কর্তপক্ষের।
কিন্তু আইডেনটিটি দেখিয়েছে লোকটা, বিশ্বাস করতে পারছেন না মিস্টার ব্রুক।
ওটাও নকল, দেখুনগে।
মিথ্যে কথা! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে চেঁচিয়ে উঠল নীরা। রাগ দমন করতে পারল না আর। এত অল্প সময়ে এত খোঁজ নিতে পারার কথা নয় তোমার। আমি এখন ফোন করলে ঠিক ওরা বলবে, তুমি কোন ফোনই করোনি। তোমাকে চিনতেই পারবে না ওরা।
যান, গিয়ে করে দেখুন তাহলে, সরে জায়গা করে দিল কিশোর।
নাক গলানো বিছুর দল! গালি দিয়ে উঠল নীরা। রবিনের হাত থেকে দলিলটা কেড়ে নিয়ে, টেবিল থেকে চেকটা তুলে ব্রীফকেসে ভরল। তারপর গর্ট গট করে রওনা হলো দরজার দিকে।
বেরোনোর আগে ফিরে তাকাল, ভেবো না পার পেয়ে যাবে। বাঘের মুখের গ্রাস ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছ তোমরা। এর চেয়ে অনেক বড় বড় ঘাগু লোককে… কথাটা শেষ করল না নীরা। সমস্ত রাগ যেন গিয়ে পড়ল মিস্টার ককের ওপর। পিস্তলের মত তার দিকে আঙুল তাক করে চেঁচিয়ে চলল, বুড়ো হাঁদা কোথাকার, সুযোগ দিয়েছিলাম, সদ্ব্যবহার করোনি। এখনও সময় আছে, মনস্থির করে বেচে দাও জায়গাটা। পরে এমন অবস্থা হবে, বেচার মত কিছু আর অবশিষ্ট থাকবে না।
.
০৮.
নীরা চলে যাওয়ার পর আরও কিছুক্ষণ কথা বলল ওরা। আলোচনা করল ব্যাপারটা নিয়ে। তারপর কিশোর বলল, আজ আর কিছু করার সময় নেই। রেন্টাল কোম্পানির অফিসও নিশ্চয় বন্ধ হয়ে গেছে। কাল সকালে যা করার করব।
আগের রাতে ভালমত ঘুমাতে পারেনি, সেদিন তাই সকাল সকাল শুয়ে পড়ল ওরা।
পরদিন সকালে ঝরঝরে শরীর নিয়ে ঘুম ভাঙল কিশোরের। মোটেলের অফিসে এসে দেখে কাজে লেগে গেছে ইভা। তাকে সাহায্য করছে রবিন।
অঘটনের যেন শেষ নেই, কিশোরকে বলল ইভা। কাল রাতে চাচার এক বন্ধু ফোন করেছিল। হিবিসকাস ড্রাইভে থাকে। তার সান-রমের জানালা ভেঙে ঘরে ঢুকে কে নাকি এয়ারকুলারটা নষ্ট করে দিয়ে গেছে। গেকোর কাছে রিপোর্ট করা হয়েছে। সে বলেছে কোন দুষ্ট ছেলের কাজ।
আহা, পুলিশ অফিসার বটে! দরজার কাছ থেকে বলে উঠল মুসা। ধীর পায়ে ঘরে ঢুকল।
তারমানে ওই ভদ্রলোকের জায়গাটার ওপরও নজর পড়েছে ওদের! আর কি খবর? জানতে চাইল কিশোর।
এয়ারপোর্টে কার রেন্টাল এজেন্সিতে ফোন করেছিলাম, ইভা জানাল।
কোন খোঁজ পেলে?
গাড়িটার বর্ণনা দিয়ে জানতে চাইলাম, কার কাছে ভাড়া দিয়েছে।
কি বলল? আগ্রহে সামনে গলা বাড়িয়ে দিল কিশোর।
রবিনের দিকে তাকাল ইভা। আবার ফিরল কিশোরের দিকে। হাসল। বলেছে, হারম্যান কেগ নামে শিকাগোর এক বীমার দালাল গাড়িটা ভাড়া নিয়ে গাল আইল্যান্ডে গেছে। স্টিকারে লেখা যে সিরিয়াল নম্বরটা দিল, সেটার শেষ তিনটে নম্বরও মিলে গেছে।
নিচের ঠোঁটে জোরে একবার টান দিয়ে ছেড়ে দিল কিশোর। চিন্তিত ভঙ্গিতে আনমনে বিড়বিড় করল, শিকাগোর একজন বীমার দালাল গাল আইল্যান্ডে এসে ছবি আঁকা শুরু করল কেন?
ছবি যে আঁকছে তার কি প্রমাণ? প্রশ্ন তুলল মুসা। ওটা ওর মুখের কথা। নিজের চোখে তো আর তাকে আঁকতে দেখিনি আমরা।
আমার মনে হচ্ছে, আরেকবার তার বাড়িতে যাওয়া উচিত আমাদের, কিশোর বলল। আমাদের জানতে হবে জিনা কেন কেগের গাড়ির ছবি তুলেছে।
ও হ্যাঁ, তোমাদের বলতে ভুলে গেছি-বীমার কথায় মনে পড়ল, ইভা বলল, চাচা গেছে মেইনল্যান্ডে। ওখান থেকে ফোন করেছিল। তোমাদের বলতে বলেছে তোমাদের ভ্যানের কাঁচটা সারিয়ে নেবে চাচা। যখন পারো টাকাটা দিয়ো। আর এখানে তার গাড়িটা ব্যবহার করতে বলেছে তোমাদেরকে। ওটার কিছু মেরামতি আছে। তাই নিতে ভরসা পায়নি। রাস্তাঘাটে যদি খারাপ হয়ে যায়। তোমাদেরটাই নিয়েছে।
মেইনল্যান্ডে গেছেন কেন? কোন জরুরী কাজ?
হ্যাঁ। বোটটার বীমা করানো ছিল। বীমা কোম্পানির সঙ্গে কথা বলতে গেছে।
আচ্ছা। ঠিক আছে, কিশোর বলল, আমাদের আগেই যদি আঙ্কেল ব্রুক ফিরে আসেন, তাঁকে আমাদের ধন্যবাদ জানিও, কাঁচটা ঠিক করে আনার জন্যে।
অফিস থেকে বেরিয়ে এল তিন গোয়েন্দা। মিস্টার ব্রুকের গাড়িটাতে চড়ল। ড্রাইভিং সীটে বসল মুসা।
পেলিক্যান লেনে পৌঁছে একটা নির্জন বাড়ির পেছনে গাড়ি রেখে বেরিয়ে এল ওরা। মুসাকে গাড়ির পাহারায় রেখে রবিনকে নিয়ে এগোল কিশোর।
খালি একটা জায়গা পেরিয়ে কেগের বাড়ির দিকে এগোনোর সময় আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকাল সে। ধূসর মেঘের আড়ালে লুকোচুরি খেলছে সকালের সূর্য। সাগরের দিক থেকে আসছে দমকা বাতাস। নুয়ে নুয়ে পড়ছে পাম আর পাইনের মাথা।
ঝড় আসবে, কিশোর বলল।
সুবিধেই হবে তাতে, রবিন বলল। চুরি করে আমরা বাড়িতে ঢুকতে গেলে ঝড়বৃষ্টির মধ্যে লোকের চোখে পড়ার সম্ভাবনা কম।
কেগের বাড়ির পাশের জায়গাটাতে পৌঁছে দাঁড়িয়ে গেল কিশোর। বড় একটা ঝোঁপের আড়ালে থেকে বাড়িটাতে চোখ বোলাল।
গাড়িটা নেই, রবিনকে জানাল সে।
কি করব?
তুমি এখানেই থাকো। আমি আরও কাছে গিয়ে দেখে আসি।
বেশি ঝুঁকি নিতে যেয়ো না, সাবধান করে দিল রবিন।
মাথা নুইয়ে এক দৌড়ে বাড়ি আর ঝোঁপের মাঝের খালি জায়গাটুকু পার হয়ে এল কিশোর। কটেজের একটা বড় জানালার পাশে এসে দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়াল।
কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে, কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালা দিয়ে লিভিং রূমের ভেতরে উঁকি দিল সে। মেঘে ঢাকা আকাশের প্রতিবিম্ব পড়েছে কাঁচের ভেতর। পুরোপুরি ঢাকা পড়ে গেছে এখন সূর্য। বেরোচ্ছে না আর। দেখতে দেখতে এতটাই ঘন মেঘ জমে গেছে, সকালটাকে লাগছে সূর্য ডোবা সন্ধ্যার মত।
সাবধানে সরে এসে ডেকে ওঠার দুই ধাপ সিঁড়ির প্রথমটাতে পা রাখল কিশোর। মচমচ্ করে উঠল কাঠের তক্তা। কিন্তু সেটা চাপা পড়ে গেল মেঘ ডাকার শব্দে।
দ্বিধা করল এক মুহূর্ত। মাথার ওপর বাতাসে কাত হয়ে যেন ঝুলে রয়েছে একটা নারকেল গাছের মাথা। দরজার দিকে এগোল সে। সামান্য ফাঁক হয়ে আছে পাল্লা। আস্তে করে ঠেলে সেটা আরও ফাঁক করে ঢুকে পড়ল ভেতরে।
পা টিপে টিপে চলে এল ডাইনিং রূমে। ওখানে দাঁড়িয়ে কান পাতল ভেতর থেকে শব্দ আসে কিনা শোনার জন্যে। ঘরের এক প্রান্তে সিংকের কল খোলা, ক্রমাগত পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে। কিন্তু মানুষের সাড়া পাওয়া গেল না।
কি খুঁজতে এসেছে জানে না সে। কিন্তু খুঁজতে আরম্ভ করল।
কেগ ছবি আঁকে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে হাত মোটেও ভাল নয়। কতগুলো বাজে ছবি এঁকেছে।
খানিকক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে বেরোতে যাবে, এই সময় ডাইনিং রূমের টেবিলে একটা পরিচিত জিনিস চোখে পড়ল। একটা হাতঘড়ি। তুলে নিয়ে উল্টে দেখল। কাজে এতটাই মনোযোগ, বাইরে যে গাড়ির ইঞ্জিনের শব্দ হচ্ছে, শুনতে পেল না।
কিন্তু রবিন ঠিকই শুনেছে। গাড়িটা পেলিক্যান লেনে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ইঞ্জিনের শব্দ কানে এসেছে তার। উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ল কিশোরের জন্যে। ঝোঁপটার কাছ থেকে সরে এল একটা আঙুরের ঝাড়ের কাছে। চিৎকার করে ডেকে সাবধান করে দেবে কিনা কিশোরকে বুঝতে পারছে না। কাছে চলে এসেছে গাড়িটা। গাড়ির চালকও তার ডাক শুনতে পাবে।
রবিন কিছু করার আগেই ড্রাইভওয়েতে ঢুকে পড়ল গাড়ি।
কড়াৎ করে বাজ পড়ল সাগরের পানিতে। বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা পড়তে আরম্ভ করল। সবুজ গাড়িটার দিকে দৌড় দিল সে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে এল কেগ। মুহূর্তে বৃষ্টি বেড়ে গিয়ে মুষলধারে পড়া শুরু হলো।
কেগের হাতে লম্বা কালো একটা জিনিস।
ধড়াস করে উঠল রবিনের বুক। রাইফেল নাকি?
কেগ! চিৎকার করে ডাকল রবিন।
গাড়ির কাছে স্থির হয়ে গেল কেগ। রবিনের দিকে ঘুরতে গিয়েও ঘুরল না সে। অর্ধেক ঘুরেছিল, ঝটকা দিয়ে পুরো ঘুরে গেল আবার দরজার দিকে। কারণ কটেজের দরজা দিয়ে ডেকে বেরোতে দেখে ফেলেছে কিশোরকে।
তুমি! রাগে চিৎকার করে উঠল কেগ। তুমি এখানে কি করছ?
কিশোর, সাবধান! রবিনও চিৎকার করে উঠল। ওর হাতে রাইফেল!
বাজ পড়ল আবার। তার চিৎকার ঢাকা পড়ে গেল বাজের শব্দে। বাজটা পড়ল ডেকের কাছের নারকেল গাছটার মাথায়। মাথাটা চিরে দিল এমন করে, যেন মাখনে ছুরি চালাল। একটা অংশ ভেঙে গেল কাণ্ড থেকে। ডিগবাজি খেতে খেতে পড়তে লাগল ডেকের ওপর। কিশোর যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, ঠিক সেইখানে।
.
০৯.
কিশোর! বলে চিৎকার দিয়ে উঠল রবিন। আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে আছে গাছের নিচে কুঁকড়ে পড়ে থাকা কিশোরের দেহটার দিকে।
চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলে হবে না। কেগকে ঠেকাতে হবে। মুসা অনেক দূরে। ডাকলেও শুনবে না। শুনলেও লাভ হবে না। ও আসতে আসতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। যা করার তার নিজেকেই করতে হবে। কেগের পা সই করে ঝাঁপ দিল রবিন। তাকে নিয়ে পড়ল মাটিতে।
আরে কি করছ! কি করছ! ছাড়ো না! চেঁচাতে লাগল কেগ। আমার পর্দা টানানোর রডগুলোর সর্বনাশ করে দেবে তো। বাঁকা হয়ে যাবে!
কেগের পাশে মাটিতে পড়ে থাকা আঁটি বাঁধা জিনিসগুলোর দিকে ভালমত নজর দিল এতক্ষণে রবিন। পর্দা টানানোর রড? বোকা হয়ে গেছে।
এক মাস আগে অর্ডার দিয়ে এসেছিলাম বানিয়ে রাখার জন্যে, গোঁ-গোঁ করে বলল কেগ।
কেগের ঘ্যানর ঘ্যানরে কান দিল না রবিন। রাইফেল নয় জানার সঙ্গে সঙ্গে একটা বড় দুশ্চিন্তা মগজ থেকে নেমে গেল। লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল সে। কিশোরকে গাছের নিচ থেকে বের করতে হবে।
মুখে যা-ই বলুক, ওকে বের করতে রবিনকে ঠিকই সাহায্য করল কেগ। ধরাধরি করে গাছের মাথাটা সরাল কিশোরের ওপর থেকে। প্রথমে ডেকের ওপরের চালায় পড়েছিল বলে রক্ষা। চালায় পড়ে তারপর কিশোরের ওপর পড়েছে। সরাসরি পড়লে কোমর ভাঙত, কিংবা অন্য কিছু হত। মোট কথা আঘাতটা হত মারাত্মক।
ঘাড়ে সামান্য ব্যথা পেয়ে বেহুশ হয়ে যাওয়া ছাড়া আর কিছু হয়নি। জ্ঞান ফিরতেও সময় লাগল না।
ভালই আছি আমি, ঘাড় ডলতে ডলতে বলল কিশোর। ভিজে গোসল করা ছাড়া খারাপ আর কিছুই হয়নি। কাঁধে কিছু আঁচড় আর ছ্যাঁচা লেগেছে, নারকেলের ডগা ধারাল তো…
ঝাপটা দিয়ে গেল প্রচণ্ড ঝোড়ো বাতাস। বেড়ে গেল বৃষ্টির বেগ। ক্রমেই খারাপের দিকে মোড় নিচ্ছে ঝড়। ঘন ঘন বাজ পড়ছে। ক্রমাগত কালো মেঘের বুক চিরে ছুটে যাচ্ছে বিদ্যুতের লকলকে শিখা।
এখানে থাকা বিপজ্জনক, কিশোর বলল। বাজটা তখন গাছের মাথায় না পড়ে আমার মাথায় পড়লেই গেছিলাম।
ভেতরে তো যাবই, এতক্ষণে ভাষা খুঁজে পেল যেন কেগ। তবে তার আগে তোমাকে অ্যারেস্ট করানো দরকার।
মাটি থেকে রডগুলো তুলে আনল সে। একসাথে বাঁধা ছিল বলে বৃষ্টির মধ্যে দুর থেকে রাইফেলের মত মনে হয়েছে রবিনের কাছে। রাইফেলের মতই উঁচু করে ধরল এখন কেগ। বেআইনী ভাবে আমার সীমানায় ঢুকেছ তোমরা। দরজা ভেঙে আমার ঘরে ঢুকেছ।
না, দরজা ভাঙিনি, প্রতিবাদ জানাল কিশোর। দরজাটা খোলাই ছিল।
বুঝলাম, হুড়কোটা ভাঙা ছিল। তাই বলে অন্যের ঘরে ঢুকে পড়বে নাকি? চুরি করতে ঢুকেছিলে?
নাহ্, হাসিমুখে মাথা নাড়ল কিশোর। চুরি করার মত কিছু নেই ঘরে। কতগুলো পচা ছবি। ওগুলো কে নেয়।
কিন্তু কিশোরের রসিকতায় নরম হলো না কেগ। রেগে উঠল, তোমাকে আমি পুলিশে দেব!
ডেকের ওপর উঠে পড়ল আবার কিশোর। বৃষ্টি কম লাগে। মিস্টার কেগ, আপনাকে একটা কথা বলি। আপনি যে গাড়িটা চালাচ্ছেন, আমাদের বন্ধুকে কিডন্যাপ করতে ব্যবহার করা হয়েছে সেটা।
ফালতু কথা বোলো না! ধমকে উঠল কেগ।
প্রমাণ আছে আমাদের কাছে।
কি প্রমাণ?
ঘটনার সময়কার একটা ছবি। তাতে সহজেই প্রমাণ করা যাবে আপনার গাড়িটাই ব্যবহার করা হয়েছিল। এক মুহূর্ত থেমে কেগকে খবরটা হজম করার সময় দিল কিশোর। তারপর বলল, সুতরাং আমাকে ধরিয়ে দেয়ার জন্যে পুলিশ ডাকলে আমরাও ছেড়ে দেব না আপনাকে
তীক্ষ দৃষ্টিতে কেগকে লক্ষ করছে কিশোর।
ডেকে উঠে পড়ল কেগ। সরে গিয়ে রেলিঙে হেলান দিয়ে দাঁড়াল, হাল ছেড়ে দেয়ার ভঙ্গিতে।
আমি কাউকে কিডন্যাপ করিনি।
তাহলে কে করেছে?
আমি জানি না।
আপনার গাড়িটা যে ব্যবহার করা হয়েছে এটা তো ঠিক?
একটা মুহূর্ত চুপ করে থেকে ভাবল কেগ, বলবে কিনা দ্বিধা করছে। তারপর হঠাৎ বলে উঠল, গাড়িটা চুরি হয়ে গিয়েছিল।
চুরি! সমস্বরে বলে উঠল রবিন আর কিশোর।
হ্যাঁ, পাঁচদিন আগে। সৈকতের ধারে আমি তখন ছবি আঁকছিলাম।
চুপ করে তাকিয়ে রইল কিশোর।
ছবি আঁকা শেষ করে বাড়ি ফেরার জন্যে গাড়ির কাছে গেলাম, কে বলল। গাড়িটা যেখানে রেখেছিলাম সেখানে পেলাম না। চাবি আমার পকেটেই ছিল। তারমানে তার ছিঁড়ে বিকল্প উপায়ে স্টার্ট দিয়েছে।
পুলিশকে জানিয়েছেন?
না।
আপনি যে সত্যি কথা বলছেন, বিশ্বাস করব কি করে?
আমার মুখের কথাই বিশ্বাস করতে হবে তোমাদের।
হু। গাড়িটা আবার ফেরত পেলেন কি করে?
প্রথমে ভেবেছিলাম কোন ছেলে-ছোকরার কাজ। গাড়ি চুরি করে নিয়ে গেছে খানিকক্ষণ চালিয়ে মজা করার জন্যে। কিন্তু থানার সামনে দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেখি সামনের চতুরে দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে আমার গাড়িটা। নো-পার্কিং জোনে গাড়ি পার্ক করার অপরাধে তাতে একটা টিকেট লাগিয়ে দিয়েছে হেরিং গেকো।
তারমানে এমন কোথাও ফেলে গিয়েছিল চোর, যেখানে গাড়ি পার্ক করা বেআইনী, কিশোর বলল। টিকেটটা আছে আপনার কাছে?
না, তিক্ত কণ্ঠে জবাব দিল কেগ। ফাইনের টাকাটা সহ টিকেটটা গেকোর ডাকবাক্সে ফেলে দিয়েছি। মেজাজ তখন কি পরিমাণ তিরিক্ষি হয়ে গিয়েছিল কল্পনা করতে পারবে না। গাড়ি চুরি গেল আমার। হেঁটে শহরে ফিরতে হলো। ফিরে দেখি থানায়, এবং টিকেট লাগানো। কড়কড়ে বিশটা ডলার গচ্চা দিতে হলো। এখানে কি কোন আইন-কানুন আছে!
থাকবে। খুব শীঘ্রি।
দেখো, কেগ বলল, আমি কোন উৎপাত চাই না। বিশ্বাস করো, কাউকে কিডন্যাপ করিনি আমি। কে করেছে তা-ও জানি না। বিশ্বাস করো আর না-ই করো, গাড়িটা যে চুরি হয়েছিল আমার, এ কথা ঠিক।
ঠিক আছে, করলাম, কিশোর বলল। এখন ডাকুন পুলিশকে। আমাকে অ্যারেস্ট করানোর জন্যে। আপনার কথা আপনি বলবেন। আমাদের কথা আমরা বলব। দেখি পুলিশ কারটা বিশ্বাস করে।
বাদ দাও পুলিশ! বিরক্তির চূড়ান্ত হয়ে গেছি আমি। ওই গেকো গিরগিটিটার কাছ থেকে যত দূরে থাকা যায়, ততই ভাল।
তা বটে, মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ওর ছায়া মাড়ালেও ঝামেলা!
প্রচণ্ড শব্দে বাজ পড়ল আবার কাছাকাছি কোথাও। বিদ্যুৎ-শিখার আকাশ জুড়ে ছুটে বেড়ানোর বিরাম নেই। বজ্রপাতের ভয়ে ঘরে ঢুকে পড়ল কেগ।
কি বুঝলে? কিশোরের দিকে তাকিয়ে চাপাস্বরে জিজ্ঞেস করল রবিন।
কিডন্যাপিঙের সঙ্গে জড়িত থাক বা না থাক, লোকটা কোন কিছু লুকাচ্ছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই আমার।
কিশোরের জবাব শুনে চোখ বড় বড় করে তাকাল রবিন।
পকেট থেকে ঘড়িটা বের করে দেখাল কিশোর। চিনতে পারো?
কয়েকটা সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে জবাব দিল রবিন, জিনারটা না? জন্মদিনে পারকার আঙ্কেল যেটা দিয়েছিলেন তাকে?
মাথা ঝাঁকাল কিশোর।
কোথায় পেলে? জিজ্ঞেস করল রবিন।
কেগের ঘরে। টেবিলের ওপর। নিশ্চয় জিনাই রেখে গেছে। এত বেশি জিনিসপত্র ছড়ানো রয়েছে, ওসবের মধ্যে এটা আলাদা করে চোখে পড়েনি কেগের। এখন আমাদের জানতে হবে কেগের সঙ্গে কেইনের সম্পর্কটা কোথায়?
বৃষ্টির বিরাম নেই।
আকাশের দিকে তাকাল একবার কিশোর। চলো, আর এখানে কোন কাজ নেই। মুসা নিশ্চয় অবাক হয়ে যাচ্ছে, এতক্ষণ কি করছি আমরা ভেবে।
.
১০.
প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে শহরে ফিরে চলেছে ওরা।
গাড়ি চালাচ্ছে মুসা। ফুল স্পীডে চলছে উইন্ডশীল্ড ওয়াইপার। বৃষ্টি মেশানো ঝড়ো বাতাসের ঝাপটা বার বার এসে আঘাত হানছে গাড়ির গায়ে। সঙ্গে করে নিয়ে আসছে বালির কণা, কুটো-পাতা।
পেলিক্যান আর কারলুর কোণে এনে গাড়ি রাখল মুসা। কুপারের রেস্টুরেন্টের কাছে। খাওয়া দরকার।
বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্যে মাথা নুইয়ে একদৌড়ে ঘরে ঢুকল তিনজনে। খাবারের অর্ডার দিয়ে অপেক্ষা করছে এই সময় দরজায় দেখা দিল ডেপুটি গেকো। ভারিক্কি চালে এগিয়ে এসে দাঁড়াল ওদের টেবিলের কাছে।
তোমাদেরকেই খুঁজছি। তোমাদের সঙ্গে কথা আছে আমার… কিশোর আর রবিনের কাদায় মাখামাখি হয়ে থাকা কাপড়ের দিকে তাকিয়ে হাসতে লাগল গেকো। কাদার মধ্যে কুস্তি করে এসেছ নাকি?
উঁহু, মাথা নাড়ল কিশোর। বৃষ্টির সময় সাগরকে কেমন লাগে, দেখতে গিয়েছিলাম।
গোটা দুই হাঁচি দিল গেকো। হাত ঢোকাল প্যান্টের পকেটে। দেখাদেখির কাজ আমিও খানিকটা করে এসেছি। ওয়াইন্ড পাম মোটেলে গিয়েছিলাম। আরেকটা নৌ-দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে ওরা।
দুর্ঘটনা? কুঁচকে গেল কিশোরের ভুরু। ওরা ঘটাবে কেন? ইঞ্জিনের মধ্যে বোমা পেতে রেখে এসেছিল কেউ, স্টার্ট দিলেই যাতে ফাটে।
খুব বেশি জেমস বন্ডের ছবি দেখো, একটা টুল টেনে নিয়ে ওদের কাছে বসে পড়ল গেকো।
কেন, আপনার কি ধারণা? পেট্রোলের গ্যাস জমে ইঞ্জিনটা উড়ে গেছে?
বাস্তব কথা ভাবলে সেটাই স্বাভাবিক, মহাবিজ্ঞের ভঙ্গিতে জবাব দিল গেকো। পুরানো বোট। পুরানো ইঞ্জিন। এ ধরনের ঘটনা তো ঘটতেই পারে।
হু, তা তো পারেই, ফোড়ন কাটল কুপার। কিছুদিন ধরে যে হারে স্বাভাবিক সব দুর্ঘটনা ঘটছে দ্বীপটাতে, আর কিছুদিন এ ভাবে চললে এর নাম বুক অভ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে উঠে যাবে।
ওগুলো যে দুর্ঘটনা নয়, এমন কোন প্রমাণ আছে তোমার কাছে? খেঁকিয়ে উঠল গেকো।
সে-রাতে আমার প্রোপেন ট্যাংকটা যে ফুটো হয়ে গেল, ওটার সঙ্গে যুক্ত টিউবগুলোকে টেনে খুলে বাকাচোরা করে ফেলে রাখা হলো, সেটাও নিশ্চয় দুর্ঘটনা?
র্যাকুনে করেছে, খোঁচা মারল কিশোর।
কিংবা অ্যালিগেটরে, গেকো বলল। সারা বছরই জ্বালায় ওগুলো, জানোই তো।
তারমানে আপনি বলতে চান, জিনাকেও ব্যাকুনে কিংবা অ্যালিগেটরে ধরে নিয়ে গেছে? শীতল কণ্ঠে বলল কিশোর।
মনে করিয়ে দেয়ার জন্যে ধন্যবাদ, টুলের ওপর ঘুরে বসে ওদের মুখোমুখি হলো গেকো। ওয়াইল্ড পামে ব্রুকের ভাতিজির কাছে শুনলাম খবরটা।
ইভা? শঙ্কিত হয়ে উঠল কিলোর। আবার কোন খারাপ খবর শোনাবে!
হ্যাঁ, হাসিমুখে মাথা ঝাঁকাল গেকো। কিডন্যাপিং-ফিডন্যাপিং কিছু না। তোমাদের বান্ধবী এখন মহানন্দে আরেক জায়গার সমুদ্র সৈকতে রোদ পোয়াচ্ছে।
কি করে জানলেন?
চিঠি পাঠিয়েছে। ওয়াইল্ড পামের ঠিকানায়। বিশ্বাস না হলে নিজেরাই গিয়ে দেখে এসো।
খাবার তৈরি হয়ে গেছে। নইলে তক্ষুণি উঠে চলে যেত ওরা। কোনমতে নাকে-মুখে খাবারগুলো খুঁজে, কুপারের বিল মিটিয়ে দিয়ে গাড়ির দিকে ছুটল তিনজনে।
ওয়াইল্ড পামের সামনে মুসা গাড়িটা রেখেও সারতে পারল না, ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে লাফিয়ে নেমে পড়ল কিশোর। দৌড় দিল অফিসের দিকে।
কিশোরকে দেখেই যা বোঝার বুঝে নিল ইভা। ডয়ার থেকে নীরবে বের করে দিল চিঠিটা। পোস্টকার্ডে লিখে পাঠিয়েছে জিনা।
জিনার হাতের লেখা, তাতে কোন সন্দেহ নেই, দেখতে দেখতে বলল কিশোর। দুই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মুসা আর রবিন। সিল-ছাপ্পর দেখে বলল, দুদিন আগে মিয়ামি থেকে পোস্ট করা হয়েছে।
আমাকে না জানিয়ে মিয়ামিতে চলে গেছে জিনা, বিশ্বাসই হচ্ছে না আমার! ইভা বলল। অথচ আমরা এদিকে…
যদি গিয়েই থাকে, ইচ্ছে করে যায়নি, আমি শিওর, কিশোর বলল। তা ছাড়া এটা কিডন্যাপারদের চালবাজিও হতে পারে। ওকে দিয়ে লিখিয়ে আমাদের বোঝাতে চেয়েছে লং আইল্যান্ড থেকে নিজে নিজেই মিয়ামিতে চলে গেছে সে। আর যদি জিনাই পাঠিয়ে থাকে, তাহলে কার্ডটা পাঠানোর পেছনে কোন উদ্দেশ্য আছে তার। কিছু একটা বোঝাতে চেয়েছে। ভোলা কার্ডে খোলাখুলি লিখলে শত্রুদের চোখে পড়ে যেতে পারে। সেজন্যে ইঙ্গিত দিয়ে বোঝাতে চেয়েছে। ও লিখেছে: জায়গাটা দারুণ। গতবারের চেয়ে ভাল লাগছে। ইস, তোমরা থাকলে খুব মজা হত। জিনা। মুখ তুলে তাকাল সে। বুঝতে পারছ কিছু?
বিমূঢ়ের মত মাথা নাড়ল মুসা, কিছু না। অতি সাধারণ একটা চিঠির মতই লাগছে।
রবিনের দিকে তাকাল কিশোর, তুমি বুঝেছ?
ভাবছে রবিন। হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল মুখচোখ। গতবার মিয়ামিতে যায়ইনি সে! লং আইল্যান্ডে গিয়েছিল!
ঠিক, হাসি ফুটল কিশোরের মুখে। এটা দিয়েই বোঝাতে চেয়েছে যে যা লিখেছে, তার অন্য অর্থ আছে। কার্ডের ছবিটার ক্যাপশন লিখেছে দেখো: মিয়ামির সমুদ্রতীর কখনও ঘুমায় না। চোখের পাতা সরু করে তাকাল কিশোর। এর মধ্যেও সূত্র আছে নিশ্চয়। ছবিটার কোন মানে না-ও হতে পারে অবশ্য। হাতের কাছে যা পেয়েছে তাতেই লিখে পাঠিয়ে দিয়েছে। সূর্যাস্তের দৃশ্য কিংবা ডলফিনের ছবিওয়ালা কার্ড পেলেও হয়তো তাতেই লিখত।
কি জানি! চিন্তিত ভঙ্গিতে কপাল চুলকাল রবিন। সূত্রের পর সূত্র দিয়ে যাচ্ছে জিনা। গাড়ির ছবি, কেইনের বাড়িতে ফ্রিজে তার বাবার ছবি, কেগের বাড়িতে ঘড়ি, এখন এটা! তারপরেও এগোতে পারছি না আমরা!
আজ রাতে কেইনের বাড়িতে ঢুকব আমরা, পার্টির সময়, কিশোর বলল। পুরো বাড়িটাতে খুঁজব। যদি ওখানে জিনাকে না পাই, তাহলে শিওর হয়ে যাব, ওকে মিয়ামিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সমুদ্রতীরের কোন বাড়িতে আটকে রেখেছে। মিয়ামির সমুদ্রতীর কখনও ঘুমায় না-কথাটা লেখার এই একটাই অর্থ হতে পারে!