১৬.

কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না, ক্যাপ্টেন বললেন, এত জরুরী সূত্রগুলো তোমাকে দিয়ে দিল কেন ও?

ঢোক গিলল ফগ। পাকা আপেলের মত টুকটুকে হয়ে যাচ্ছে গাল। ইস, হতভাগা বিচ্ছুটা! আবার ডোবাল ওকে! এই ছেলেটার কারণেই আবার অপদস্থ হতে চলেছে। জবাব খুঁজে পাচ্ছে না সে।

জবাব দিয়ে দিল ফারিহা, খুশি মনে কি আর দিয়েছে? ভেজা জিনিসগুলো পানি সহই ওর শার্টের ভেতর ঠেসে ভরে দিয়েছে।

আহ, ফারিহা, থামো তো! এমনিতেই যা অবস্থা হয়েছে ফগের, আরও বেকায়দায় ফেলতে চাইল না ওকে কিশোর। দোষটা আমারই ছিল।

আশ্চর্য! খুব বিরক্ত হলেন ক্যাপ্টেন। একজন পুলিস হয়ে তোমার এই আচরণ? শার্টের ভেতর ভেজা কাপড় ভরে শাস্তি দেয়াছি-ছি-ছি!

ঝামেলা! বিড়বিড় করল ফগ। না, স্যার…ইয়ে…আমি কি করে বুঝব কাপড়গুলো খুব জরুরী ছিল?…ওগুলো যে সূত্র, বুঝতেই পারিনি। আসলে ওই সকালে মাথাটা আমার এত গরম হয়ে ছিল…

আরে না না, বললাম তো, আবার বলল কিশোর, দোষটা আমারই ছিল। আপনার অত লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। ক্যাপ্টেনের দিকে তাকাল সে, আসলেই, স্যার, অতিরিক্ত বিরক্ত করে ফেলেছিলাম আমি মিস্টার ফগ্যাপারটকে। তারপর ফগকে বাঁচানোর জন্যে তাড়াতাড়ি আবার ওর কাহিনীতে ফিরে গেল। বলতে লাগল, কিভাবে কাপড়গুলো শুকিয়ে জুতোর বাক্সে ভরে রেখেছিল। রাতে চোর এসেছিল। কিন্তু কিছু নিতে পারেনি।

এ সব কথা ফগের কাছে নতুন। চোখ গোল গোল করে শুনতে লাগল সে।

সকালে মুসার আসার পর, কিশোর বলছে, পুতুলের পোশাকগুলো নিয়ে গিয়ে ছাউনিতে বসলাম ভালমত দেখার জন্যে। অনেকভাবে দেখেও প্রথমে কিছু পাইনি। শেষে ফারিহা কোটের হাতার ভেতর থেকে একটা খুদে রুমাল বের করল। তাতে ডেইজি ফুলের চারপাশ ঘিরে যে অক্ষরগুলো লেখা, সেগুলো এক করলে একটা নাম হয়ে যায়-ইউরিকেস। ফারিহার দিকে তাকাল সে, রুমালটা আছে সঙ্গে?

পকেট থেকে বের করে দিল ফারিহা।

চুপচাপ রুমালটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলেন ক্যাপ্টেন আর তার সঙ্গী। হাঁ হয়ে গেহে ফগ। ওর মাথায় কিছু ঢুকছে না।কিসের পুতুল? আর পুতুলের মধ্যে পাওয়া রুমালেরই বা কি অর্থ? রাতে বুড়ো ক্যামারকে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছিল, হন্তদন্ত হয়ে নদীর দিকে ছুটে যেতে দেখেছে একটা লোককে। তার হাতে কোন জিনিস ছিল। বুড়োর মনে হয়েছে, জিনিসটা পানিতে ছুঁড়ে ফেলেছে লোকটা। যেহেতু হুবারের বাড়িতে চোর আসার রাতে ঘটেছে ঘটনাটা, ফগের সন্দেহ হয়েছিল, চোরাই মালটাল বা.ওই জাতীয় কোন কিছু পানিতে ফেলেছে চোর। লুকিয়ে রাখার জন্যে। এমন জায়গায়, যেখানে জলজ গাছগাছড়া আর শ্যাওলার মধ্যে আটকে থাকবে জিনিসটা। পরে এসে তুলে নিয়ে যেতে পারবে। কিন্তু খুজতে গিয়ে যে পুতুলের পোশাকের ব্যাগ পেয়ে যাবে, আর অতি সাধারণ ওই জিনিসগুলো মূল্যবান সূত্র হয়ে যাবে, কল্পনাই করতে পারেনি। তাহলে কি আর বিচ্ছু ছেলেটাকে দেয়! উহ! রাগে এখন নিজের চুল ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে ওর।

কিশোরের দিকে মুখ তুলে তাকালেন ক্যাপ্টেন, রুমালটা দেখে কি মনে হলো তোমার?

কিছুই না, জবাব দিল কিশোর। আমাকে অবাক করেছে নামটা।

কেন? প্রশ্ন করলেন তার সঙ্গী।

কারণ, স্বাভাবিক নাম নয় ওটা। ওই নামের কোন লোকের সঙ্গে আমার কোনদিন দেখা হয়নি। জানি, গ্রীসে গেলে ওই নামের অনেককেই পেয়ে যাব। নামটা আমাকে অবাক করেছিল কেন, বলি। এই নামের আরেক লোকের কথা আমি জানি, প্রাচীন গ্রীসে যার জন্ম, ভেনট্রিলোকুইজমের জনক বলা হয়। কি করে জানলাম নামটা, তাও বলি। একটা ভেনট্রিলোকুইজম শিক্ষার বইতে।

মৃদু স্বরে লম্বা ভদ্রলোক বললেন, বুদ্ধিমান ছেলে! কিশোরের দিকে তাকালেন, তাহলে তোমার মনে হয়েছিল ওগুলো আধুনিক কোন ভেনট্রিলোকুইস্টের পুতুলের পোশাক, যে ইউরিক্লেস নামে পরিচিত?

মাথা ঝাঁকাল কিশোর, হ্য। রুমালে নাম দেখে, ওই লোকটাকে খুঁজে বের করার কথা ভাবছিলাম। তাকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো এই রহস্যটা ভেদ করার মত কোন তথ্য পাওয়া যাবে।

আসনেই বুদ্ধিমান ছেলে,আনমনে বিড়বিড় করলেন আবার ভদ্রলোক। শুনে হয়তো খুশি হবে, তোমার অনুমান ঠিক। ইউরিকেল নামে সত্যিই একজন ভেনট্রিলোকুইস্ট আছে, আর ওই পোশাকগুলো তারই পুতুলের। হয়তো অবাক হবে শুনে এই পোশাকগুলো আমরাও খুঁজে বেড়াচ্ছি।

কেন? সত্যি অবাক হলো কিশোর। এত লোক সাধারণ একটা পুতুলের পোশাকের পেছনে লেগেছে কেন?

তুমি একটা গল্প শুনিয়েছ আমাদের, ভদ্রলোক বললেন, এবার আমি একটা গল্প শোনাই তোমাদের। তবে কথা দিতে হবে, আর কাউকে সেটা বলতে পারবে না। কোন প্রশ্ন করতে পারবে না। ইউরিক্লেসের নাম শুনে কেন অবাক হয়েছিলেন ক্যাপ্টেন রবার্টসন, জবাব পেয়ে যাবে গল্পটা শুনলে।

 সবগুলো চোখ স্থির হয়ে গেল তার মুখের ওপর, কেবল ক্যাপ্টেনের বাদে। তার চোখ সবার ওপর ঘুরছে।

কিশোর, তুমি বুদ্ধিমান ছেলে, ক্যাপ্টেনের সঙ্গী বললেন, আশা করি বুঝে গেছ আমি পুলিস না হলেও ওরকমই একটা ডিপার্টমেন্টে কাজ করি।

নীরবে মাথা ঝাঁকাল কিশোর।

আমাদের কাজ হলো, শত্রুর সঙ্গে হাত মিলিয়ে যারা দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাদের খুঁজে বের করা। অনেক লোক আছে ওরকম, বড় বড় জায়গায়, বড় বড় আসনে বসে আছে। অনেক তাদের ক্ষমতা, প্রভাব প্রতিপত্তি। তাদের বিরুদ্ধে কিছু করতে গেলে খুব সাবধানে পা ফেলতে হয় আমাদে। প্রচুর খোঁজ-খবর, সাক্ষি-সাবুদ জোগাড় করে তবেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হয়।

স্পাই! প্রায় ফিসফিস করে বলল ফারিহা।

 শুধু স্পাই নয়, আরও অনেক ধরনের খারাপ মানুষ আছে, তাদের দিকেও নজর রাখতে হয় আমাদের। মিস্টার ইউরিক্লেস আমাদের ইনফর্মার। ওইসব খারাপ মানুষদের খোঁজ-খবর দেয়। খুব ভাল ভেনট্রিলোকুইস্ট সে। পুতুল দিয়ে কথা বলানোর খেলা দেখায়। এ জন্যে নানা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে হয় তাকে। খবর জোগাড়ের সুবিধে হয়। কনি হুবার ওর অ্যাসিসট্যান্ট।

ও, তাই! প্রায় চিৎকার করে উঠল ফারিহা।

আস্তে মাথা ঝাঁকালেন ক্যাপ্টেনের সঙ্গী। একদিন ইউরিক্লেসের এক বন্ধু এসে হাজির হলো আমার কাছে। জানাল, অপরাধীদের নামের একটা লিস্ট করেছে ইউরিক্লেস! কিন্তু শত্রুরা টের পেয়ে গিয়ে ওটা ছিনিয়ে নেয়ার জন্যে ওর পেছনে লেগেছে। লিস্টে এমন সব নাম আছে যাদের ধরার জন্যে আমরা অনেকদিন থেকে ওত পেতে আছি। দেশের ভেতরে শ্রমিক ধর্মঘট, কারখানায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, আরও নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে এরা জড়িত বাঘা বাঘা সব মানুষ। সুতরাং লিস্টটা কতখানি দামী, বুঝতেই পারছ।

গভীর আগ্রহে শুনছে সবাই।

বলে চলেছেন ক্যাপ্টেনের সঙ্গী, তাকে সন্দেহ করে ফেলেছে অপরাধীরা, এটা টের পেয়ে গিয়ে লিস্টটা পুতুলের পোশাকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলল ইউরিক্লেস। আমরা কোন সাহায্য করার আগেই একরাতে কিডন্যাপ হয়ে গেল সে। তার আগে কোনভাবে সহকারী হুবারকে নিশ্চয় পুতুলটার কথা জানিয়ে যেতে পেরেছিল। ও কিডন্যাপ হওয়ার পর পরই ওর ঘর থেকে পুতুলটা বের করে নিয়ে যায় হুবার। ওটার মধ্যে মূল্যবান কিছু লুকানো আছে, বোধহয় জানানো হয়েছিল ওকে। কিন্তু কি জিনিস, সেটা বলা হয়নি। গ্রীনহিলসে এসে নতুন বাসা ভাড়া করে পুতুলটা সহ হুবার লুকিয়ে রইল যাতে শত্রুরা ওকে খুঁজে না পায়। কিন্তু বাঁচতে পারল না। অত্যাচার করে নিশ্চয় ইউরিক্লেসের মুখ থেকে আদায় করে নিয়েছিল কিডন্যাপাররা লিস্টটা কোথায় লুকানো আছে। হুবারকে খুঁজে বের করল ওরা। রাতের বেলা হানা দিল ওর বাড়িতে।

কে এসেছে বুঝতে পারল হুবার। টের পেয়ে আর দেরি করল না। পুতুলের গা থেকে তাড়াতাড়ি পোশাকগুলো খুলে নিয়ে একটা ব্যাগে ভরে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেল বাড়ি থেকে। ওই তাড়াহুড়োর সময়ই লাল দস্তানাটা পড়ে গিয়েছিল, কিশোর যেটা খুঁজে পেয়েছে। তারপর ব্যাগটা নদীতে ফেলে দিয়ে এল হুবার। পুতুলটা লুকিয়েছে অন্য কোনখানে। হয়তো কোন খড়ের গাদায়। সেটা জরুরী নয়। কারণ লিস্টটা ওর মধ্যে নেই। ও এ সম্পর্কে কিছু জানে না, অস্বীকার করার জন্যেই সভবত এ কাজ করেছে। যাই হোক, ব্যাগটা পানিতে ফেলার কথা আজ নিয়ে জেনে গেছিল গালকাটা লোকটা। নদীতে খুঁজতে গিয়েছিল। কিন্তু ওর আগেই পেয়ে যায় ফগর‍্যাম্পারকট।

 এবারও চুপ থাকতে পারল না ফারিহা, আরেক কাজ করলেই পারত হুবার। লিস্টটা বের করে রেখে দিয়ে কাপড়গুলো ফেলে দিতে পারত।

কাছে রাখার সাহস পায়নি হয়তো।

 কিন্তু সে কি জানে না কাগজ পানিতে নষ্ট হয়ে যায়?

জানে। হয়তো এও জানে, কাগজটা এমনভাবেই রাখা আছে যাতে পানি লাগতে না পারে।

ক্যাপ্টেন বললেন, এখনই বোঝা যাবে সব। কিশোর, যাও তো, ওগুলো নিয়ে এসো।

চুপ করে রইল কিশোর। মুসা, রবিন আর ফারিহার মুখেও রা নেই।

ওদেরকে এ ভাবে চুপ হয়ে যেতে দেখে অবাক হলেন ক্যাপ্টেন। কি ব্যাপার?

ওগুলো আমার কাছে নেই, স্যার, মুখ কালো করে জবাব দিল কিশোর। ছাউনিতে রেখে বেরিয়েছিলাম, ফিরে এসে দেখি দরজা ভেঙে চুরি করে নিয়ে গেছে।

.

১৭.

 মৃদু শিস দিয়ে উঠলেন ক্যাপ্টেন। সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে বললেন, যাহ্, গেল আবার হাতছাড়া হয়ে! গালকাটা লোকটাই নাকি?

তাই হবে, আর কে? চিন্তিত ভঙ্গিতে বললেন সঙ্গী। ওই লিস্ট আমাদের হাতে পড়লে ওর এবং আরও অনেকের সর্বনাশ হয়ে যাবে। নেয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছিল তাই।

এবং শেষ পর্যন্ত নিয়ে ছাড়ল। কিশোরের দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন, সব নিয়ে গেছে?

হ্যাঁ। কেবল ছোট রুমালটা বাদে। ফারিহা ওটা পকেটে রেখে দিয়েছিল।

জিনিসগুলো কোথায় রেখেছিলে, চলো তো দেখি?

ঘর থেকে বেরিয়ে সবাই রওনা হলো ছাউনির দিকে। ফগও চলল। বিষণ্ণ হয়ে আছে খুব। যে রহস্যটা তার সমাধান করার কথা ছিল, করে ফেলেছিল প্রায়, নিজের বোকামির জন্যে সেটা হাত থেকে ফসকে গেল। এটা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি।

ছাউনিতে ঢুকল সবাই। খালি জুতোর বাক্সটা দেখাল কিশোর। কিছু নেই ওর মধ্যে। আশেপাশে আরেকবার খুঁজে দেখল সবাই মিলে। কিছুই পাওয়া গেল না।

হঠাৎ মনে পড়ে গেল ফারিহার। চিৎকার করে উঠল, কিশোর, ভুলে গেছিলাম! টিটু একটা জুতো নিয়ে গিয়েছিল না?

উত্তেজিত হয়ে উঠল কিশোরও, আরে, তাই তো! ঘরের কোণের দিকে দৌড় দিল সে। বের করে আনল জুতোটা।

প্রায় ছোঁ মেরে ওর হাত থেকে ওটা নিয়ে নিলেন ক্যাপ্টেনের সঙ্গী। উল্টেপাল্টে দেখলেন। তারপর পকেট থেকে একটা ছোট ছুরি বের করে ধারাল ফলার মাথা দিয়ে খোঁচাতে শুরু করলেন জুতোর গোড়ালিতে।

খুব মজবুত করে বানানো। কেটে আলগা করতে সময় লাগল। ভেতরে একটা কুঠুরি তৈরি করা হয়েছে ইচ্ছে করে। তার মধ্যে ঠেসে ভরা হয়েছে একটা ভাঁজ করা কাগজ। মোম দিয়ে এমনভাবে বন্ধ করা হয়েছে কুঠুরির ফাঁকফোকর, পানি ঢুকতে পারেনি। বোঝা গেল জেনেশুনেই পানিতে ফেলেছিল হুবার।

চারপাশ থেকে ঘিরে আছে গোয়েন্দারা। সাবধানে ভাঁজ খুলে একনজর দেখেই পকেটে ভরে ফেললেন সেটা ক্যাপ্টেনের সঙ্গী। হাসিমুখে তাকালেন ক্যাপ্টেনের দিকে, হ্যাঁ, এটাই।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল গোয়েন্দারাও। ওদের মুখেও হাসি ফুটেছে। টিটুকে বার বার ধন্যবাদ দিতে লাগল। ওর শয়তানির যে এতটা সুফল মিলবে, কে বতে পেরেছিল।

কেবল ফগের মুখে হাসি নেই। সে আরও দমে গেছে।

ছাউনি থেকে দল বেঁধে আবার বেরিয়ে এল সবাই।

কিশোর জিজ্ঞেস করল ক্যাপ্টেনকে, এখন কি করবেন, স্যার?

প্রথমে হুবারের বাড়ি যাব। নিশ্চয় খুব আতঙ্কের মধ্যে কাটাচ্ছে বেচারা। এর ভয়টা দূর করব। তারপর খুঁজে বের করব গালকাটা লোকটাকে। আমার বিশ্বাস কাগজটা যেহেতু হাতে পায়নি, এখনও এই এলাকাতেই আছে সে। ধরতে তেমন অসুবিধে হবে না। ফগের দিকে তাকালেন তিনি, দায়িত্বটা তোমার ওপর দিয়ে সুবিধে হবে না। ভরসা করা যায় না। অফিসে গিয়েই লোক পাঠাচ্ছি। ওদেরকে সব রকমে সাহায্য করবে তুমি।

হঠাৎ সচকিত হয়ে খটাস করে স্যালুট কিল ফগ। ইয়েস, স্যার! নিশ্চয় স্যার! ঝামেলা!

হাঁটতে হাঁটতে কি মনে হতে কিশোরের দিকে ফিরে তাকালেন ক্যাপ্টেন, তুমি তো যেটা ধরো, সেটা শেষ করে ছাড়ো। ভেনট্রিলোকুইজমের বই পড়েছ বললে। শিখেছিলে নাকি?

হাসল কিশোর, খুব সামান্য। প্র্যাকটিস করতে গিয়ে তেমন ভাল লাগেনি বলে অল্প শিখে ছেড়ে দিয়েছি।

মুখটা নড়ে উঠল তার। গলাটা কেমন ফুলে উঠল। স্বর কিংবা কথা কিছুই বেরোল না।

ফগের ঠিক মাথার ওপরে একটা পেঁচা ডেকে উঠল কিররর-কিররর-কিররর। চমকে মুখ তুলে তাকাল সে। আহ, ঝামেলা! দিনকাল কি উল্টে গেল নাকি? এই দুপুরবেলা পেঁচা বেরোয়!

 পেঁচা কেন, মাথার ওপর কোন পাখিই দেখতে পেল না সে। আরও অবাক হয়ে গেল। এ কি ভূতুড়ে কাণ্ড! ডাক দিয়ে মুহূর্তে কোথায় উধাও হয়ে গেল পাখিটা?

কিন্তু ক্যাপ্টেন আর তার সঙ্গী ঠিকই বুঝে ফেলেছেন ব্যাপারটা।

ফগের দিকে তাকিয়ে ক্যাপ্টেন বললেন, এখানেই তোমার সঙ্গে কিশোরের তফাৎ। ওর সামান্য চালাকিটাও ধরতে পারলে না। ঠিকই বোকা বানিয়ে ছাড়ল।

বড় বড় হয়ে গেল ফগের গোল চোখ। বোকাটা বনল কি করে ধরতে পারল না।

এখনও বুঝলেনা? আরে বোকা, ডাকটা কিশোরই দিয়েছে। ভেনট্রিলোকুইজম নিয়ে এত আলোচনা হলো, তাও মাথায় ঢুকল না? তোমার মাথার ওপর ও ছুঁড়ে দিয়েছে পেঁচার ডাক। এ জন্যেই তো পাখিটাকে দেখতে পাওনি। সবার সামনে বোকা বনে এতই হতাশ হয়ে গেল ফগ, তখনকার মত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল, চাকরিটাই ছেড়ে দেবে। বিচ্ছু ছেলেটার কাছে পরাজিত হয়ে বার বার এ ভাবে লজ্জা পাওয়া থেকে তো বাঁচা যাবে। বিড়বিড় করে বলল, আহ, বড্ড ঝামেলা! তবে এতই আস্তে, কারও কানে গেল না কথাটা!

Super User