১১.

 হনহন করে হেঁটে চলেছে কিশোর। নজর সামনের দিকে।

নদীর একটা বাঁক ঘুরতেই দেখা পেয়ে গেল লোকটার। লম্বা একটা বোট-হুক দিয়ে পানিতে খোঁচাচ্ছে। পাশে রাখা একটা বেতের হাতলওয়ালা বড় ঝুড়ি। পানি থেকে নানা রকম উদ্ভিদ তুলে তাতে ভরছে।

একটা মুহূর্তের জন্যে সন্দেহ হলো কিশোরের, লোকটা সত্যি উদ্ভিদবিজ্ঞানী নয় তো? কিন্তু চেহারা দেখে পরক্ষণে বাতিল করে দিল ভাবনাটা। কাছে গিয়ে দাঁড়াল। ওকে দেখে ফিরে তাকাল লোকটা।

নিরীহ ধরে কিশোর জিজ্ঞেস করল, কি তুলছেন?

জবাব দিল না লোকটা। কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

আপনার ঝুড়িতে নিশ্চয় অনেক শামুক জমা হয়েছে। বেছে নিতে পারি? আমি একটা হাঁস পালি…।

ধমকে উঠল লোকটা, খবরদার, ঝুড়িতে হাত দেববেনা। শামুকের এত দরকার হলে নিজেই ধরে নাওগে না।

আমার মনে হয় এদিকটাতে শামুক অনেক বেশি। এখন থেকেই পরি।

না! গর্জে উঠল লোকটা। এখানে না। আমার নানা নষ্ট করবে। অন্য কোথাও যাও। সারা নদীতেই শামুক ভর্তি।

দাঁড়িয়ে রইল কিশোর। নিশ্চিত হয়ে গেছে, এই লোক বিজ্ঞানী নয়।

গেলে না এখনও? হুক তুলল লোকটা। কথা না শুনলে যেন কিশোরের বুকেই বিধিয়ে দেবে। যাও, ভাগো এখান থেকে।

বাবারে! কি কাণ্ড! গ্রীনহিলসের সবাই আজকাল ফগের মুদ্রাদোষের শিকার হতে আরম্ভ করেছে নাকি? ফগ তো বলেই, হুরও বলে যাও, ভাগো! এই লোকটা বলে যাও, ভাগো!

আরেকবার যাও, ভাগো শোনার আগেই তাড়াতাড়ি ওখান থেকে সরে এল কিশোর। গেল না মোটেও। একটা ঘন ঝোপে বসে চোখের সামনে থেকে দুটো ডাল সরিয়ে উঁকি দিয়ে রইল।

আবার পানিতে খোঁচাতে শুরু করল লোকটা। মাঝে মাঝেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাচ্ছে। কিশোর কোনখান থেকে উঁকি মেরে আছে কিনা দেখছে বোধহয়।

পানিতে যে কোন্ জিনিস খুঁজছে, তাতে আর কোন সন্দেহ রইল না কিশোরের।

হুকে কি যেন বাধল লোকটার। টেনে তুলে আনল। একটা পুরানো জুতো। হক থেকে ওটা খুলে নিয়ে বিরক্ত ভঙ্গিতে পানিতে ছুঁড়ে ফেলল আবার।

হুকে আটকে কয়েকটা জলজ উদ্ভিদ উঠে এল। ওগুলো খুলে নিয়ে ঝুড়িতে ভরল সে।

এটা ভান। কেউ যদি নজর রেখে থাকে তাহলে যাতে মনে করে এই লোক সত্যি জলজ উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করছে। বুঝতে অসুবিধে হলো না কিশোরের, আসলে খুজছে সে অন্য জিনিস।

পানি থেকে আবার একটা ফালতু জিনিস উঠে এল হুকে আটকে। আগের মতই বিরক্ত ভঙ্গিতে ওটা পানিতে ফেলে দিল লোকটা।

ফগ কি করছে জানার খুব কৌতূহল হলো কিশোরের। একের পর এক এ সব জিনিস উঠতে থাকলে ফগও বেজায় বিরক্ত হবে। কল্পনায় ওর মুখভঙ্গি দেখতে পেয়ে একা একাই নীরবে হাসতে লাগল সে।

মুসারা ওদিকে অপেক্ষা করছে ওয়ালির ছাউনিতে বসে।

ফগ এল। সাইকেল রেখে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে জিজ্ঞেস করল, কি, হয়েছে?

এই যে, হয়ে গেছে, জবাব দিল ওয়ালি। দাঁড়ান, নামিয়ে দিচ্ছি।

ওরা যে লুকিয়ে আছে এটা যাতে টের না পায়, এ জন্যে টিটুর মুখ চেপে ধরে আছে ফারিহা। টেরিয়ারটা চুপচাপ বসে আছে মুসার পায়ের কাছে। ওটা শান্ত কুকুর। টিটুর মত এত চঞ্চল নয়।

কোনমতেই টিটুর মুখ বন্ধ রাখতে পারল না ফারিহা। ফগের গন্ধ পেয়েই খই খউ শুরু করল!

ওর কণ্ঠ ফগের পরিচিত। দরজায় এসে উঁকি দিল। ঝামেলা! এখানেও এসে বসে আছে। এই, তোমাদের পালের গোদাটা কই?

জানি না, সাফ জবাব দিয়ে দিল মুসা।

জলন্ত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, এখানে বসে থাকলে থাকো, কিছু বলব না। কিন্তু আবার যদি আমার কাজে নাক গলাতে এসেছ তো ভাল হবে। তোমাদের বিচ্ছু বন্ধুটাকেও সাবধান করে দিয়ো।

ফারিহার হাত থেকে ছুটে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে ব্যর্থ হলো টিটু। গলা ছেড়ে হাঁক দেয়া বাদে ওর আর করার কিছু রইল না।

বেশি সময় নষ্ট করল না ফগ। নৌকায় চেপে বসল। হুক দিয়ে খুঁজতে শুরু করল পানিতে। আগের রাতে বুড়ো ক্যামারের কাছে জেনে নিয়েছে নদীর ঠিক কোন্‌খানটাতে নেমেছিল পাজামা পরা লোকটা।

নৌকায় করে ঘুরতে ঘুরতে একের পর এক বিরক্তিকর জিনিস তুলে আনতে লাগল পানির নিচ থেকে। সেগুলো ছুঁড়ে ফেলতে লাগল আর ঝামেলা। ঝামেলা! করতে থাকল। হঠাৎ চোখ পড়ল, তীরে দাঁড়িয়ে ওর কাজ দেখছে ছেলেমেয়েগুলো। গেল মেজাজ খারাপ হয়ে। মশার দল আবার এসেছে বিরক্ত করতে। মশা! হ্যাঁ, মশাই! তফাৎটা কেবল, মশা কামড়ানোর জন্যে গায়ে বসলে থাপ্পড় মেরে প্রতিশোধ নেয়া যায়। এগুলোকে যায় না। কবে ঠাণ্ডা করে দিত, কেবল ক্যাপ্টেন রবার্টসনের জন্যে পারে না।

রাগ কমানোর জন্যে পানিতে ঘ্যাচ ঘ্যাচ করে হুক দিয়ে খোঁচাতে লাগল। উঠে আসতে লাগল নানা রকম জঘন্য জিনিস। মেজাজ আরও খারাপ করে দিল ওর।

তারপর এক সময় এমন একটা জিনিস উঠল, উজ্জ্বল হয়ে উঠল ওর মুখ। একটা লন্ড্রি ব্যাগ। ওখানে বসেই তাড়াতাড়ি ওটার মুখ খুলে ফেলল সে। যা বেরোল, তাতে আবার থমথমে হয়ে গেল মুখচোখ। অতি সাধারণ বাতিল কতগুলো কাপড়-চোপড়। কোন শিশুর হবে। অকাজের জিনিস, তাই কেউ ব্যাগে ভরে এনে পানিতে ফেলে দিয়ে গেছে। ব্যাগটা যাতে ডুবে থাকে, সেজন্যে তাতে ভারী পাথর ভরে দিয়েছে।

তীরে দাঁড়িয়ে আগ্রহের সঙ্গে তাকিয়ে আছে কিশোর গোয়েন্দারা।

আরও দুই জোড়া চোখ এখন আড়াল থেকে তাকিয়ে আছে ফগের দিকে। সেই গালকাটা লোকটা। খুঁজতে খুঁজতে নদীর বাঁক ঘুরে বেরিয়ে এসে ফগের দিকে চোখ পড়তেই থমকে দাঁড়িয়েছে। একটা ঝোঁপের আড়ালে সরে গিয়ে দেখছে, ফগ কি পায়। তার বোধহয় সন্দেহ হয়েছে, সে যা খুঁজছে, ওই পুলিসের লোকটাও তাই খুজছে।

লোকটা বাকের আড়ালে চলে আসাতে আর দেখতে পাচ্ছিল না বলে ঝোঁপ থেকে বেরিয়ে দেখা যায় এমন আরেকটা ঝোঁপের মধ্যে লুকিয়েছে কিশোর। ফাঁকে সেও দেখতে পাচ্ছে।

অনেকক্ষণ ধরে খোঁজাখুঁজি করেও আজেবাজে জিনিস ছাড়া কিছুই পেল না ফগ। নিরাশ হয়ে নৌকা নিয়ে তীরের দিকে রওনা দিল সে।

গালকাটা লোকটাও কিছু না পেয়ে চলে গেল।

ওর পিছু নিয়ে লাভ নেই। ঝোঁপ থেকে বেরিয়ে কিশোর এসে দাঁড়াল মুসাদের কাছে।

নৌকা থেকে নেমে কিশোরকে দেখে রাগ আর সামলাতে পারল না ফগ। চাকরির মায়া কিংবা ক্যাপ্টেনের ভয় আর করল না। সারারাত ওকে ঠাণ্ডার মধ্যে বসিয়ে রেখে শাস্তি দিয়েছে শয়তানটা। ওকে খানিকটা শিক্ষা না দিলেই আর নয়। নৌকায় ফেলে রাখা লন্ড্রি ব্যাগটা তুলে এনে খপ করে চেপে ধরল কিশোরের কলার। তারপর ঠাণ্ডা ভেজা পোশাকগুলো ঠেসে ভরে দিতে লাগল ওর শার্টের ভেতর। তার মতে, ঠাণ্ডার মধ্যে এরচেয়ে বড় শাস্তি আর হয় না।

বাধা দিতে এল ওয়ালি, এ কি করছেন, মিস্টার ফগর্যাম্পারট! একজন পুলিসম্যান হয়ে

চোপরাও! গর্জে উঠল ফগ।

চুপ হয়ে গেল ওয়ালি।

মুসা আর রবিন এসে টানাটানি করে সরিয়ে আনার চেষ্টা করল ফাঁকে। কিন্তু ফগের গায়ে যেন অসুর ভর করেছে। ব্যাগের সমস্ত জিনিস কিশোরের শার্টের ভেতরে ভরে দেয়ার আগে কোনমতে সরানো গেল না ওকে।

প্রতিশোধ নিতে পেরে রাগ অনেকটা কমল তার। কোনদিকে আর না তাকিয়ে সাইকেলে চেপে চলে গেল।

এক এক করে শার্টের ভেতর থেকে জিনিসগুলো বের করতে লাগল কিশোর। ওকে সাহায্য করল ফারিহা। বিড়বিড় করে বকতে লাগল ফগকে।

থাক, বোকো না, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর। অনেক যন্ত্রণা দিয়েছি আমি ওকে। এটা করে খানিকটা মনের ঝাল যদি মেটে, মিটুক। আমাকে এমন করে কেউ ভোগালে আমিও শোধ নিতে ছাড়তাম না।

পানি থেকে তুলে আনা কাপড়গুলোর মধ্যে রয়েছে একটা নীল পাজামা, একটা লাল বেল্ট, একটা নীল টাই, লাল বোতাম বসানো একটা নীল ক্যাপ, একজোড়া মোজা, একজোড়া লাল জুতো, আর একটা লাল

থমকে গেল ফারিহা। জিনিসটা পরিচিত মনে হচ্ছে। হঠাৎ চিৎকার করে উঠল, কিশোর, দেখো দেখো!

দেখল কিশোর। ওরও চোখ বড় বড় হয়ে গেল।

একটা লাল দস্তানা!

ভালমত দেখার জন্যে ঘিরে এল মুসা আর রবিন। ওরাও চিনতে পারল। হবারের বাড়িতে যে দস্তানাটা পেয়েছিল কিশোর, অবিকল ওরকম আরেকটা। জোড়াটার দ্বিতীয়টা।

হাসিতে উদ্ভাসিত হয়ে গেল কিশোরের মুখ। ফগের ওপর রাগ না করে বরং আমাদের কৃতজ্ঞ হয়ে যাওয়া উচিত। আমার ওপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে যে কতবড় সূত্র ফেলে চলে গেল, যখন জানতে পারবে, নিজের হাত নিজেই কামড়ে খেয়ে ফেলবে!

এই সময় খেয়াল হলো ওর, টিটু নেই আশেপাশে। উত্তেজনায় কারোরই মনে ছিল না ওর কথা।

মুসা বলল, সেজন্যেই তো বলি, এত নিরাপদে কাজটা সারতে পারল কি করে ঝামেলা! টিটুই নেই। আহা বেচারা, গোড়ালি কামড়ানোর এমন মস্তবড় একটা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হলো ও। আজ ও ঠিক কামড়ে দিতে পারত। বাধা দিত না তো কেউ…।

কিন্তু ও গেল কোথায়? উদ্বিগ্ন হলো ফারিহা।

এতক্ষণে যেন সংবিত ফিরে পেল ওয়ালি। সকালে ও আজ ঘুম থেকে ওঠার পর থেকেই নানা রকম কাণ্ড ঘটছে। অবাক হতে হচ্ছে বার বার। খানিক আগে ফগের রেগে যাওয়াটা তো রীতিমত বিমূঢ় করে দিয়েছে। ফারিহার প্রশ্নের জবাবে বলল, নিশ্চয় আমার টেরিয়ারটার সঙ্গে মাঠে চলে গেছে। মাঝেমধ্যেই খরগোশ ধরতে যায়। আজ সঙ্গী পেয়ে খুশির ঠেলায় বোধহয় শিকার শেখাতে নিয়ে গেছে তোমাদের কুকুরটাকেও। ভয় নেই, চলে আসবে।

.

১২.

দল বেঁধে কিশোরদের বাড়িতে ফিরে এল সবাই। কিশোরের ঘরে বসে কথা বলতে লাগল।

কিশোরের ধারণা, পুতুলের কাপড়গুলোর মধ্যেই লুকিয়ে আছে রহস্যের চাবিকাঠি। অতএব সেগুলো ভালমত খুঁজে দেখা দরকার।

দুপুর হয়ে গেছে। মুসাদের বাড়ি থেকে ফোন করলেন মিসেস আমান। রবিনের মাও খোঁজ নিলেন। অসুস্থ ছেলেরা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে সেই সকালে, এখনও ফেরার নাম নেই। দুজনেই অস্থির হয়ে উঠেছেন। মিসেস বারজি এসে প্রায় ধমকের সুরে জানিয়ে গেল সেকথা।

যাওয়ার জন্যে উঠে দাঁড়াল ফারিহা। বিরক্ত হয়ে বলল, দূর, ফোন করার আর সময় পেল না। যখন আসল কাজটা শুরু করতে যাব তখনই…কিশোর, কথা দাও, আমরা না এলে দেখার কাজটা তুমি শুরু করবে না?

হাসল কিশোর, আচ্ছা, করব না। নিশ্চিন্তে চলে যাও। খেয়েদেয়ে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে চলে এসো।

কিন্তু মুসারা বেরিয়ে যাওয়ার কয়েক মিনিট পরেই ঝমঝম করে নামল বৃষ্টি। কিছুক্ষণ পর কমল, তবে একেবারে বন্ধ হলো না। কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনও ঝমঝম করে, পড়তেই থাকল।

আর কোন কাজ না পেয়ে পুতুলের পোশাকগুলো ইলেকট্রিক হিটারে শুকাতে বসল কিশোর। পরীক্ষা করে দেখার জন্যে উতলা হয়ে উঠেছে মন! কিন্তু ফারিহাকে কথা দিয়েছে দেখবে না, তাই দেখল না।

 বিকেলের দিকে আকাশের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেল। মুসা আর রবিনদের বাড়িতে ফোন করে জানল কিশোর, বেরোতে দিচ্ছেন না ওর মায়েরা। সবে জ্বর থেকে না উঠলে হয়তো এভাবে বাধা দিতেন না।

কি আর করবে? মনমরা হয়ে বসে রইল কিশোর।

পুতুলের কাপড়গুলো নিজের পড়ার টেবিলের ড্রয়ারে রেখে খানিকক্ষণ টিভি দেখল। মন বসল না তাতে। বই পড়ার চেষ্টা করল! তাও মন বসাতে পারল না।

সন্ধ্যার পর চাচা-চাচী বেরিয়ে গেলেন। এক বন্ধুর বাড়িতে পার্টি আছে। ফিরতে অনেক রাত হবে।

সকাল সকাল খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ল কিশোর।

অনেক রাতে টিটুর চিৎকারে ঘুম ভেঙে গেল।

থামার জন্যে ওকে ধমকানো শুরু করল কিশোর।

 কিন্তু থামল না কুকুরটা। দরজার কাছে গিয়ে আরও জোরে ঘেউ ঘেউ করতে লাগল।

সন্দেহ হলো কিশোরের। চোর এল না তো?

দরজার দিকে এগোল। পান্নাটা খুলতে না খুলতে একদৌড়ে বেরিয়ে গেল টিটু। নিচ থেকে কে? কে? বলে চিৎকার করে উঠল মিসেস বারজি।

কয়েক সেকেন্ড পর গেটের বাইরে রাস্তায় একটা গাড়ির ইঞ্জিন স্টার্ট নিল। দ্রুত চলে গেল গাড়িটা। জানালা দিয়ে ওটার টেল লাইট দেখতে পেল কিশোর।

সারা বাড়ির আলো জ্বেলে দিল সে। রান্নাঘরের একটা জানালার কাঁচ ভাঙা। ওখান দিয়ে ছিটকানি খুলেই ঘরে ঢুকেছিল কেউ। হুবারের বাড়িতে চোর ঢোকার কথা মনে পড়ল কিশোরের। ঠিক একই ভাবে ওদের ঘরেও ঢুকেছিল লোকটা। কে? কেন?

হঠাৎ পেয়ে গেল জবাবটা। হুবারের বাড়িতে যে জিনিসের জন্যে ঢুকেছিল, ওদের বাড়িতেও সেই একই জিনিসের জন্যে এসেছিল লোকটা।

পুতুলের পোশাক!

নিশ্চয় সেই গালকাটা লোকটা। কিশোর তখন ভেবেছিল চলে গিয়েছে, আসলে যায়নি। নদীর পাড়ে কোথাও লুকিয়ে থেকে দেখেছে ফগ ওগুলো নিয়ে কি করে। সব দেখেছে। তারপর কিশোরের পিছু নিয়ে এসে ওদের বাড়িটা দেখে গেছে। এখন রাত দুপুরে এসে হানা দিয়েছে ওগুলোর জন্যে।

নিশ্চয় কোন মূল্যবান সূত্র লুকিয়ে আছে ওগুলোর মধ্যে। কোন সন্দেহ নেই আর।

অনেক রাতে বাড়ি ফিরলেন চাচা-চাচী।

চোর ঢাকার কথা জোর গলায় জানাল তাদের মিসেস বারজি। পুলিসে খবর দিতে বললেন মেরিচাচী।

রাজি হলেন না রাশেদ পাশা। পুলিস মানেই তো ফগর‍্যাম্পারকট। তাঁর মতে ওটা একটা হাঁদা। পারে কেবল ঝামেলা বাধাতে আর হই-হট্টগোল করতে। কাজের কাছ কিছুই পারে না। কিছু যখন নিতে পারেনি চোরে, অহেতুক রাত দুপুরে ফগকে খবর দিয়ে আর যন্ত্রণা বাড়ানোর দরকার নেই।

 পরদিন সকালে আকাশ ভাল হয়ে গেল। বৃষ্টি নেই। নাস্তা সেরে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এসে কিশোরদের বাড়িতে হাজির হলো ফারিহা, মুসা আর রবিন।

রাতে চোর আসার কথা ওদের জানাল কিশোর। কেন এসেছিল, কি তার উদ্দেশ্য সেটা নিয়েও সংক্ষিপ্ত আলোচনা হলো। কিশোরের সঙ্গে অন্য তিনশনও একমত হলো, গালকাটা লোকটাই এসেছিল, পুতুলের পোশাকের খোঁজে। অতএব আর দেরি না করে জলদি জলদি দেখে ফেলা দরকার কি এমন মূল্যবান জিনিস লুকিয়ে আছে ওগুলোর মধ্যে।

জিনিসগুলো নিয়ে কিশোরদের বাগানের ছাউনিতে ঢুকল সবাই।

টিটুকে পাহারা দিতে বলল কিশোর।

 এত কড়াকড়ি কেন? জানতে চাইল ফারিহা।

বলা যায় না, বেড়ার ফাঁকফোকরগুলো দেখতে দেখতে জবাব দিল কিশোর, কাল রাতের লোকটা এসে উঁকি দিয়ে শুনে ফেলতে পারে আমাদের কথা। আমরা কি পেলাম, দেখে ফেলতে পারে।

হেসে ফেলল ফারিহা, এত সতর্কতা! নিজেরদেরকে পাই মনে হচ্ছে আমার। একেবারে পাই হেডকোয়ার্টারের সাবধানতা।

কথা অনেক হয়েছে, অধৈর্য হয়ে উঠল মুসা, এবার আসল কাজটা সেরে ফেলা দরকার। পোশাকগুলোর ভেতরে কি আছে জানার জন্যে আর কতক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে?

এই যে, শুরু করছি, বলে একটা জুতোর বাক্সের ডালা খুলল কিশোর। এর ভেতরে লুকিয়ে রেখেছে পুতুলের পোশাকগুলো। প্রথমে বের করল নীল রঙের পাজামাটা। বেশ সুন্দর। ওপর দিকে বোম লাগানো।

পকেট-টকেট কিছু নেই। ফারিহার দিকে তাকাল কিশোর, পুতুলের পোশাকের পকেট থাকে না, ফারিহা?

থাকে তো, হাত বাড়াল ফারিহা। দেখি? এটা ছেলে পুতুলের গায়ে মানাবে ভাল।

উল্টেপাল্টে ভাল করে দেখল সে। কিছু পাওয়া গেল না। রবিনের হাতে দিল। ও দেখে মুসাকে দেবে। প্রতিটি জিনিস সবাই মিলে দেখবে। তাতে কোন কিছু থেকে থাকলে চোখ এড়িয়ে যাওয়ার ভাবনা কম।

এরপর একটা লাল বেল্ট বের করল কিশোর। নিজে দেখে ফারিহার হাতে দিল। হাত থেকে হাতে ঘুরতে লাগল জিনিসটা। পাওয়া গেল না কিছু।

এরপর মোজালো দেখা হলো।

 পুতুলের নাম কিংবা কোন চিহ্ন দেয়া আছে কিনা দেখল ফারিহা। নেই।

মুসা বলল, পুতুলের কাপড়ে আবার নাম লেখা থাকে নাকি?  

থাকবে না কেন? ফারিহা বলল। অনেকেই নাম লিখে রাখে, কিংবা চিহ্ন দিয়ে রাখে, আলাদা করে বোঝার জন্যে। আমিই তো দিই।

মোজাতে পাওয়া গেল না কিছু। জুতোজোড়া বের করল কিশোর।

পুতুলের জন্যে বড়, বলল সে, কিন্তু বাচ্চা ছেলের জন্যে হোট। শক্ত করে বানানো, দেখো। পুতুলের জিনিস মনে হয় না। ফিতেগুলোও আসল। ইচ্ছে করলে বাঁধা যায়।

হয়তো কোন শিশুর জুতোই হবে, রবিন বলল। কোন বামন শিশু। স্বাভাবিক শিশুর চেয়ে পা ছোট তার।

তা নাহয় হলো, নিজের অজান্তে নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল একবার কিশোর। কিন্তু মাথায় ঢুকছে না এ জিনিসের এত গুরুত্ব হয়ে গেল কেন? কি এমন দামী জিনিস আছে এর মধ্যে যে চুরি করে নিয়ে যাওয়ার জন্যে দুটো বাড়িতে হানা দিল লোকটা?

দুটো ফিতেই খুলল ফারিহা। ভাল করে দেখল। খুব সুন্দর। আবার আগের মত জুতোতে বেঁধে রাখতে লাগল। একটার ফিতে বেধে জুতোটা পাশে রেখে আরেকটা বাধছে সে, এই সময় মাটিতে রাখা জুতোটা এসে ওকতে শুরু করল টিটু।

ওর দিকে তাকাল ফারিহা। হেসে জিজ্ঞেস করল, তোর নাক তো খুব কড়া। কার গন্ধ পাচ্ছিস?

বার দুই খুফ খুফ করল টিটু। তারপর মুখে নিয়ে একদৌড়ে চলে গেল ঘরের কোণে। জুতোটাকে ওখানে রেখে বসে পড়ল তার ওপর। যেন বোঝাতে চাইল, এটা এখন আমার।

তোর ওই খেলা বাদ দে তো! কদিন থেকেই শুরু করেছে। যা পায় নিয়ে গিয়ে দখল করে। কাল নিয়েছে আমার একটা রঙিন পেন্সিল। সকালে স্যান্ডেল। এখন জুতো, ধমক দিল কিশোর। আন ওটা। কাজ আছে।

আনল না টিটু। যেমন ছিল, বসে রইল।

হেসে বলল মুসা, কাল রাতে চোর তাড়িয়ে নিজেকে খুব বাহাদর ভাবছে আরকি। কাউকেই আর কেয়ার করে না। ব্যাটা শয়তানের হাড্ডি।

জুতোটা দেখা হয়ে যাওয়ার পরই নিয়েছে টিট, তাই আর ওটা নিয়ে মাথা ঘামাল না কিশোর বাক্স থেকে একটা কোর্ট বের করল। তাতে উঁচু কলারও আছে, বোতামও আছে।

ভালমত পরীক্ষা করে দেখল কিশোর। কোটের ভেতরে-বাইরে তো দেখলই, লাইনিংও বাদ দিল না। কিছুই লুকানো নেই। কোন কিছু ঠেকল না আঙুলে।

কিশোরের দেখা হয়ে গেলে অন্যেরাও দেখল কোটটা। ভাল কাপড়ে তৈরি পোশাকটা প্রায় নতুন। তেমন ব্যবহার করা হয়নি।

যতই দেখছি, ততই অবাক হচ্ছি, কিশোর বলল, কাকে পরানো হত এই পোশাক? চুরিই বা করা হলো কেন এগুলো?

চুরিটা কে করেছে? রবিনের প্রশ্ন। হুবার?

সে করে থাকলে ওগুলো নিয়ে গিয়ে আবার পানিতে ফেলে দেবে কেন? আমাকে খোঁচাচ্ছে আসলে একটা প্রশ্নই-সাধারণ এই জিনিসগুলো এত দামী হয়ে উঠল কেন? এর জবাব পাওয়া গেলেই সমাধান করে ফেলা যাবে এই রহস্যের।…এই যে, নাও, টাইটা দেখো। আর এই যে ক্যাপ।

ওর দিকে নজর দেয়া হচ্ছে না বলেই বোধহয় সেটা বোঝানোর জন্যে কাছে এসে দাঁড়াল টিটু। এর-ওর গা ঘেষাঘেষি করেও পাত্তা না পেয়ে খুকখুক শুরু করল।

বিরক্ত হয়ে কিশোর বলল, তোর সঙ্গে খেলার সময় এখন কারও নেই। যা তো এখান থেকে। তোকে বললাম পাহারা দিতে, আর তুই করছিস শয়তানী। যা, ভাগ।

মনমরা হয়ে গিয়ে আবার ঘরের কোণে বসে পড়ল টিটু।

ক্যাপটাও দেখা হয়ে গেলে ফারিহা বলল, এই তো শেষ, তাই না? পেলাম না তো কিছুই।

সেকথাই তো ভাবছি, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটল কিশোর। এ ভাবে নিরাশ হব ভাবিনি। এক কাজ করা যেতে পারে।

তিন জোড়া চোখ ঘুরে গেল ওর দিকে। কি?

এগুলো নিয়ে হুয়ের কাছে চলে যাব। তাকে জিজ্ঞেস করব, কার জিনিস? এত দামী কেন?

জবাব দেবে? রবিনের প্রশ্ন।

 কি জানি!

তারচেয়ে বরং আরেকবার খুঁটিয়ে দেখা যাক; ফারিহা বলল। হয়তো প্রথমবারে আমাদের চোখ এড়িয়ে গেছে।

আরে, দূর! থাবা মারার ভঙ্গিতে হাত নাড়ল মুসা। এতগুলো চোখ, এমন করে দেখলাম, চোখ এড়িয়ে যায় কি করে?

তবে কিশোর তাচ্ছিল্য করল না ফারিহার কথাকে। মন্দ বলনি। যতক্ষণ সন্দেহ না যায়, সন্তুষ্ট না হওয়া যায়, বার বার দেখা উচিত। কখন যে কি জিনিস চোখ এড়িয়ে যাবে, বলা মুশকিল।

সুতরাং আবার প্রথম থেকে দেখা শুরু হলো।

এবং ফারিহার ধারণাই ঠিক। জিনিসটা পাওয়া গেল লাল কোটের উল্টে রাখা হাতার ভাঁজে। খুদে একটা সাদা রুমাল। সে-ই খুঁজে বের করল জিনিসটা। চিৎকার করে উঠল, দেখো দেখো, এমব্রয়ডারি করে ডেইজি ফুল আঁকা!

প্রায় ছোঁ মেরে তার হাত থেকে রুমালটা নিয়ে নিল কিশোর। ফুলের দিকে নজর নেই। ওর চোখ অন্যখানে। ফুলগুলোকে ঘিরে লেখা রয়েছে কতগুলো অক্ষর।

সবগুলো সাজালে একটা নাম হয়ে যায়।

ইউরিক্লেস! কপাল কুঁচকে ফেলেছে মুসা। এ রকম উদ্ভট নাম তো আর শুনিনি কখনও। এ তো মনে হচ্ছে গ্রীক!

আমারও মনে হচ্ছে গ্রীক, রবিন বলল। কিন্তু মিথলজিতে এ রকম কোন নাম আছে বলে তো মনে পড়ছে না।

আমি জানি ওটা কার নাম, উত্তেজিত হয়ে বলল কিশোর। দারুণ একখান সূত্র! ফারিহা, কাজের কাজই করেছ একটা!

.

১৩.

শোনো, গল্প বলার ঢঙে বলল কিশোর, বহুকাল আগে ইউরিক্লেস নামে এক লোক বাস করত গ্রীসে। সেকালে সবাই চিনত তাকে। বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিল বিশেষ একটা গুণের জন্যে ভেনট্রিলোকুইজম জানত। অনেক ছাত্র তৈরি করে নিয়েছিল সে। ওরাও একেকজন দক্ষ ভেনট্রিলোকুইস্ট হয়ে ওঠে।

ও, এই ব্যাপার, মুসা বলল। আমি তো ভাবতাম ভেনট্রিলোকুইজম বিদ্যাটা বুঝি আধুনিক। তাহলে এই কারবার। প্রাচীন গ্রীকরা তো দেখি সব ব্যাপারেই ওস্তাদ ছিল।

বিদ্যাটা আধুনিক তো নয়ই, বরং বহু পুরানো। যতদূর জানা যায়, গ্রীকরাই এ বিদ্যার প্রচলন করেছিল। তারপর পৃথিবীর নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এটা। আফ্রিকার জুল থেকে শুরু করে মেরু অঞ্চলের এস্কিমোরা পর্যন্ত এ জিনিস প্র্যাকটিস করেছে। কিছুদিন আমিও আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম। প্র্যাকটিস করেছি। কিন্তু করতে বড় কষ্ট। তা ছাড়া আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলাম বলে ছেড়ে দিয়েছি।

চোখ বড় বড় হয়ে গেল ফারিহার, তুমি ভেনট্রিলোকুইজম জানো!

অতি সামান্য, হাসল কিশোর। হঠাৎ ফুলে উঠল তার গাল। ঠোঁট দুটো গোল হয়ে গেল শিস দেয়ার ভঙ্গিতে। পরক্ষণে ঘরের কোণে একটা বেড়াল ডেকে উঠল। কান খাড়া হয়ে গেল টিটুর। সেদিকে তাকিয়ে ঘেউ ঘেউ শুরু করে দিল।

থাক, চেঁচাতে হবে না আর, বলল কিশোর। বেড়াল-টেড়াল কিছু নেই।

হাঁ হয়ে গেছে মুসা। তুমি করেছ ওই শব্দ!

 মাথা ঝাঁকাল কিশোর।

বিশ্বাস করতে পারছে না রবিনও। সত্যি!

আবার মাথা ঝাঁকাল কিশোর।

সন্দেহ প্রকাশ করল না কেবল ফারিহা। তার ধারণা, পৃথিবীতে এমন কোন কাজ নেই যেটা কিশোর পাশা করতে পারবে না।

যাই হোক, আবার আগের কথার খেই ধরল কিশোর, আমার প্রশ্ন, একটা আধুনিক পুতুলের রুমালে প্রাচীন গ্রীক ভেনট্রিলোকুইস্টের নাম লেখা কেন? আর এটা এত দামীই বা হয়ে উঠল কেন?

হাত নাড়ল মুসা, আমি বলতে পারব না। তুমিই বলো।

কোন রুমালে যখন কোন নাম লেখা হয়, সাধারণত সেটা হয় ওটার মালিকের নাম, এক এক করে সবার দিকে তাকাল কিশোর, তাই না?

মাথা ঝাঁকাল সবাই।

এখন দুটো ব্যাপার হতে পারে, কিশোর বলল, হয় রুমালটা পুতুলটারই নামে, নয়তো ওটার মালিকের–যে একজন ভেনট্রিলোকুইস্ট।

তাই তো! কিশোরের মতই ব্যাপারটা অনেকখানি আঁচ করে ফেলেছে রবিন। আগে ভাবলাম না কেন? পুতুলটা আসলে স্টেজে ব্যবহার করা হতো, থিয়েটার কিংবা পুতুলনাচ, এ ধরনের কোন শো-বিজনেসে, যে জন্যে এত বড় করে বানানো হয়েছে। পোশাক-আশাকগুলোও তাই এতটা নিখুঁত।

মাথা ঝাঁকিয়ে তার স্বভাবসিদ্ধ নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল কিশোর, প্রাচীন সেই ভেনট্রিলোকুইস্টের নামানুসারে রুমালের মালিকের স্টেজ নেম রাখা হয়েছিল ইউরিক্লেস। পুতুলটাকে নিয়ে খেলা দেখাত যে। দিবালোকের মত পরিষ্কার হয়ে আসছে এখন সবকিছু।

কিন্তু আমার কাছে এখনও অমাবস্যার রাতের মতই অন্ধকার, মুসা বলল, পোশাকগুলো কাকে পরানো হত, তা নাহয় জানলাম; পুতুলের মালিকের নামও জানা গেল। কিন্তু তাতে আমাদের রহস্যের কিনারাটা কিভাবে হলো?

মিস্টার ইউরিক্লেসকে খুঁজে বের করতে পারলেই হয়ে যাবে, জবাব দিল কিশোর। হুবারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করব পুতুলের এই পোশাকগুলো তার কাছে কেন, কেন এত দামী হয়ে উঠল এগুলো যে নেয়ার জন্যে তার বাড়িতে হানা দিল চোর, কেনই বা রাত দুপুরে ব্যাগে ভরে নিয়ে গিয়ে এগুলো নদীতে ফেলে দিয়ে আসা লাগল তার? এই জবাবগুলো পেয়ে গেলেই সমাধান করে ফেলতে পারব আমরা ইউরিক্লেস রহস্যের।

কিন্তু ওই ইউরিক্লেসকে খুঁজে বের করব কিভাবে আমরা? কোন সূত্র নেই আমাদের হাতে। সূত্র ছাড়া ওকে খুঁজে বের করা অসম্ভব। তা ছাড়া হাতেও আমাদের সময় নেই আর বেশি। তিন দিন পরেই স্কুল খুলে যাবে। না গিয়ে তো আর পারব না।

অত নিরাশ হচ্ছ কেন? দৃঢ় আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলল কিশোর, যুগ যুগ লাগবে না ইউরিকেসকে খুঁজে বের করতে। অল্প সময়েই হয়ে যাবে। শো-বিজনেস যারা করে, তাদের অফিস আছে। ওখানে ফোন করে খোঁজ নিলেই জানা যাবে ইউরিক্লেস নামের ভেনট্রলোকুইস্টকে কোথায় পাওয়া যাবে।

হুবারকেও জিজ্ঞেস করা যেতে পারে, রবিন বলল।

তা পারে। তবে জবাব সে নাও দিতে পারে। দিক আর না দিক, তার কাছে আমি যাবই। আজ বিকেলে দল বেঁধে সবাই গিয়ে হাজির হব তার বাড়িতে। আমি দেখতে চাই, পোশাকগুলো দেখলে তার মুখের অবস্থা কি হয়। চমকে যদি যায়, সামলে নেয়ার আগেই প্রশ্নের পর প্রশ্ন করে নাস্তানাবুদ করে দেব। ভুল কোন জবাব দিলেই হয় কেবল, চেপে ধরৰ কাঁক করে।

পোশাকগুলো আবার জুতোর বাক্সে ভরে ফেলতে লাগল কিশোর।

ফারিহা বলল, রুমালটা খুব সুন্দর। এটা আমি আমার পকেটে রেখে দিই?

 তা দাও। না হারালেই হবে।

ঘড়ি দেখল রবিন। বিকেল হতে এখনও অনেক দেরি। সময়টা কিভাবে কাটানো যায়? কি করা যায়, বলো তো?

চলো, গিয়ে কোনখান থেকে চকলেট খেয়ে আসি, প্রস্তাব দিল মুসা।

মনে ধরল সবারই। সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল।

পথে ফগের সঙ্গে দেখা। কিশোরকে দেখে এগিয়ে এল। হাত তুলে থামার ইঙ্গিত করল ওদেরকে।

টিটকারির সুরে কিশোর বলল, আজ তো আপনার কাছে কোন ব্যাগট্যাগ নেই। কিছু ঢোকাবেন না আমার শার্টের মধ্যে?

গভীর ভাবটা একেবারেই নেই ফগের মধ্যে। কোমল গলায় বলল, ঝামেলা! কাল তুমি ব্যথা পাওনি তো, কিশোর?

অবাক হয়ে গেল ওরা। টিটুকে ঝুড়িতে আটকে রেখেছে কিশোর। সুতরাং সে কোন গোলমাল করতে পারল না। বলল, আজ পুবের সূর্য পশ্চিমে উঠল নাকি, মিস্টার ফগর‍্যাম্পারকট? এত ভাল ব্যবহার যে?

রাগে ঝিক করে উঠল ফগের চোখ। সেটা পলকের জন্যে। কঠিন কিছু বলতে গিয়েও সামলে নিল। জোর করে হাসি ফোঁটাল মুখে। ঢোক গিলল। তারপর বলল, ক্যাপ্টেন রবার্টসনের কাছে রিপোর্ট করেছিলাম। তাতে হুবারের বাড়ির কুকুর, ওয়োর আর বাচ্চা শিশুর ডাকের কথাও উল্লেখ করেছিলাম।

কৌতূহলী হয়ে উঠল কিশোর, তারপর?

অহেতুক কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করল ফগ। এদিক ওদিক তাকিয়ে দ্বিধা করল। শেষে বলেই ফেলল, ক্যাপ্টেন একবর্ণও বিশ্বাস করেননি। তোমার কথা লিখেছিলাম রিপোর্টে। তিনি আমাকে নির্দেশ দিয়ে দিয়েছেন, তোমাকে সহকারী করে নিতে।

ও, এই ব্যাপার। এ জন্যেই এত ভাল ব্যবহার। মিটিমিটি হেসে জিজ্ঞেস করল কিশোর, সহকারী করার নির্দেশ দিয়েছেন, নাকি সহকারী হবার?

আবার জ্বলে উঠল ফগের চোখ। দাঁত কিড়মিড় করল। কিন্তু কঠোর কিছু বলার সাহস পেল না কিশোরকে। আরেকদিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে শুধু বলল, ঝামেলা! উফ, ঝামেলা!

এতে আর ঝামেলার কি দেখলেন, কিশোর বলল। ক্যাপ্টেন যখন সাহায্য করতে বলেছেন আপনাকে, নিশ্চয় করব। আবার কথা হলে তাকে আমার সালাম জানাবেন। এখন আমরা চকলেট খেতে যাচ্ছি। পরে সময় করে কথা বলব।

ইচ্ছে করে কেউকেটা ভঙ্গি দেখিয়ে ফগের পিত্তি জ্বালিয়ে দিতে দিতে সাইকেলের প্যাডালে চাপ দিল কিশোর। যেদিকে যাচ্ছিল, দল বেঁধে সেদিকে রওনা হলো আবার। পেছনে তাকালে দেখতে পেত, চোখ গরম করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে ফগ। আর শাপ-শাপান্ত করে ওর চোদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করছে। এটা অবশ্য তাকালে দেখতে পেত না। কারণ এই বিশেষ কাজটা করছে ফগ মনে মনে।

.

১৪.

লাঞ্চের আরও ঘন্টাখানেক বাকি। চকলেট খাওয়ার পর তাই আবার কিশোরদের বাড়িতে ফিরে এল সবাই।

বাগানে ঢুকে ছাউনির দিকে তাকিয়েই থমকে গেল কিশোর।

কি হলো? পেছন থেকে জিজ্ঞেস করল মুসা।

নীরবে হাত তুলে দেখাল কিশোর। তারপর দৌড় দিল ছাউনির দিকে। হাঁ হয়ে খুলে আছে দরজা। তালা লাগিয়ে গিয়েছিল সে। কজা ভেঙে খোলা হয়েছে। চাচা চাচী বাড়ি নেই। কোথাও গেছে হয়তো বেড়াতে। মিসেস বারজি গেছে বাজারে। এই সুযোগে কাজটা করেছে কেউ।

লোকটা কে, সেটা অনুমান করতে অসুবিধে হলো না কারোরই। নিশ্চয় সেই গালকাটা। ভেতরে ঢুকে দেখে সেটা আরও পরিষ্কার হলো। জিনিসপত্র সব তছনছ হয়ে আছে।

ওই ব্যাটা আবার এসেছিল পুতুলের কাপড়ের খোঁজে, মুসা বলল।

এবার নিশ্চয় নিয়েও গেছে, বলল রবিন।

কথাটা ঠিক। জুতোর বাক্সটা আছে বটে, কিন্তু ভেতরে পোশাকগুলো নেই। খালি করে সব নিয়ে গেছে। যে জিনিস হন্যে হয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছিল লোকটা, অবশেষে হাতে পেল সেগুলো।

ইস, কেন যে অন্য কোথাও রেখে যাওয়ার কথা মনে হলো না! কেঁদে ফেলবে যেন ফারিহা। ঘরে রেখে গেলেই হত। এখন কি নিয়ে হুবারের কাছে যাব আমরা?  

ঘরে রেখে গেলেও আজ নিয়েই যেত লোকটা, কিশোর বলল। গাধার মত বাড়ি খালি ফেলে চকলেট খেতে বেরিয়েছিলাম। দোষটা আমাদেরই। চমৎকার সুযোগ করে দিয়ে গেছি লোকটাকে। কি আর করা। যা গেছে গেছে। এখন অনুশোচনা করে আর লাভ নেই। এসো, ঘরটা গুছিয়ে ফেলি।

কিন্তু আমাদের তদন্তের কি হবে?

সে দেখা যাবে। উপায় একটা বেরিয়ে যাবেই।

জিনিসপত্রগুলো যেখানে যেটা ছিল, গুছিয়ে রাখতে আরম্ভ করল সবাই মিলে। হঠাৎ চিৎকার করে উঠল ফারিহা, আরি, ভুলেই গিয়েছিলাম।

কাজ থামিয়ে দিয়েছে সবাই।

 কিশোর জিজ্ঞেস করল, কি?

রুমালটা! ওটা নিতে পারেনি। আমার পকেটে আছে।

ও, বিশেষ আগ্রহ দেখাল না কিশোর। ওটা দিয়ে আর কোন লাভ হবে না এখন আমাদের। রেখে দাও তোমার কাছেই।

পকেট থেকে রুমালটা বের করে ফেলেছিল ফারিহা, কিশোরের অনাগ্রহ দেখে জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে আবার রেখে দিল পকেটে।

আবার জিনিস গোছানোয় মন দিল ওরা। সবাই খুব মনমরা। তীরে এসে তরী ডোবার অবস্থা। সূত্রগুলো হাতে পেয়েও খোয়াতে হলো।

লাঞ্চের আগে যার যার বাড়ি চলে গেল মুসা, ফারিহা আর রবিন। টিটুকে নিয়ে কিশোর এসে ঘরে ঢুকল। মিসেস বারজি ফিরেছে। কিশোরকে দেখেই বলল, এক ভদ্রলোক তোমাকে ফোন করেছিলেন।

কে?

 ক্যাপ্টেন রবার্টসন।

ক্যাপ্টেন! কি বললেন?

বললেন তুমি বাড়ি এলেই যেন জানাই তিনি ফোন করেছিলেন। জরুরী কথা আছে।

সোজা টেলিফোনের দিকে দৌড় দিল কিশোর।

কে, কিশোর? ভেসে এল ক্যাপ্টেনের ভারী গলা। মেসেজটা তাহলে দিয়েছে তোমাকে। তা কেমন আছো?

ভাল, স্যার। কিজন্যে ফোন করেছিলেন?

ফগ একটা রিপোর্ট পাঠিয়েছে। উদ্ভট সব কথা লিখেছে। তোমার নামেও বিস্তর আজেবাজে কথা লিখেছে। আমি অবশ্য বিশ্বাস করিনি। কিন্তু মনে হচ্ছে কিছু একটা ঘটছে গ্রীনহিলসে। কি, বলো তো?  

ভেনট্রিলোকুইজম।

কি!

ভেনট্রিলোকুইজম, স্যার। বিদ্যেটার কথা নিশ্চয় জানা আছে আপনার।

 তা আছে। কিন্তু তোমার কথা তো কিছু বুঝতে পারছি না।

 ইউরিক্লেসের নাম শুনেছেন না, স্যার?সেই যে প্রাচীন গ্রীসে…

 কি হয়েছে ইউরিক্লেসের?

ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি, স্যার।

দীর্ঘ একটা মুহূর্ত নীরব থেকে ক্যাপ্টেন বললেন, কিশোর, কি আবল-তাবল বকছ! এত বছর পর তাকে খুঁজে পাবে কোথায়? তার কবরের হাড়ও এখন পাওয়া যাবে না।

ওকে নয়, স্যার, অন্য এক ইউরিপ্লেসকে খুঁজছি আমরা। এখনকার মানুষ।

অন্যপাশে হঠাৎ সতর্ক হয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন, তার কথা থেকেই বোঝা গেল। কিশোর, বেরিয়ো না কোথাও। আমি এখুনি আসছি। আর অপরিচিত কেউ এসে যদি ইউরিক্লেসের কথা জিজ্ঞেস করে, কিছু বলবে না।

.

১৫.

 ওপাশে লাইন কেটে গেল। বিমূঢ় হয়ে হাতের রিসিভারটার দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। রীতিমত অবাক। ব্যাপার কি? ক্যাপ্টেন কি তাহলে রহস্যটার কথা কিছু জানেন? ইউরিক্লেসকে চেনেন? সাংঘাতিক কোন ব্যাপার আছে, তাতে কোন সন্দেহ নেই। নইলে হুট করে এ ভাবে আসার জন্যে অস্থির হয়ে যেতেন না।

নাক ডলল কিশোর। সেদিনই বিকেলে ক্যাপ্টেনের সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছে ছিল না তার। রহস্যটার কিনারা হয়নি এখনও। তবু ক্যাপ্টেন যখন নিজেই আসতে চাইছেন, কি আর করা।

তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে মুসা আর রবিনকে ফোন করল কিশোর। ক্যাপ্টেনের আসার খবরটা জানিয়ে ওদের আগেভাগেই চলে আসতে বলল।

কিন্তু ওদের আগেই ক্যাপ্টেন চলে এলেন তার সেই বিরাট কালো গাড়িতে চড়ে। সঙ্গে আরেকজন লম্বা লোক। সাদা পোশাক পরা হলেও বুঝতে অসুবিধে হলো না কিশোরের, এই লোক সাধারণ কেউ নন। হয় পুলিসের গোয়েন্দা বিভাগের হোমরা-চোমরা কেউ, নয়তো অন্য কোন ধরনের সিক্রেট সার্ভিসের; সিআইএর লোকও হতে পারে।

কিন্তু এই লোক ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কেন?

পরিচয় করিয়ে নিলেন ক্যাপ্টেন, ও কিশোর পাশা। হেসে বললেন, আমাদের লোকাল পুলিসকে খুব জ্বালাতন করে, তবে মাঝে মাঝে পুলিসকে বেশ সাহায্যও করে। অনেকগুলো জটিল কেসের সমাধান করা গেছে ও আর ওর বন্ধুদের কারণে।

রহস্যময় মানুষটার সঙ্গে হাত মেলাল কিশোর। একটা ব্যাপার লক্ষ কল, সঙ্গীর পরিচয় ছিলেন না ক্যাপ্টেন।

তাদেরকে বসার ঘ্রে এনে বসাল কিশোর।

চা-চাচী ফেরেনি। ভালই হয়েছে, নইলে পুলিস আসার জন্যে চাচীর কাছে একগাদা কৈফিয়ত দেয়া লাগত।

বসার পর সরাসরি কাজের কথায় এলেন ক্যাপ্টেন, হ্যাঁ, এখন বলো তো ইউরিক্লেসের ব্যাপারে কি কি জানো তুমি?

খুব বেশি কিছু না, স্যার, কিশোর বলল। এক কাজ করি, গোড়া থেকেই বলি। একটা রহস্যের তদন্ত করতে করতে ইউরিক্লেসের নামটা পেয়ে গেছি।

হ্যাঁ, বলো, প্রথম থেকেই বলো।

সবে শুরু করেছে কিশোর, এই সময় কয়েকটা সাইকেলের বেলের শব্দ শোনা গেল। বউ বউ করতে করতে দরজার দিকে ছুটে গেল টিটু।

ওই যে, মুসারা এসে পড়েছে। ক্যাপ্টেনের দিকে তাকাল কিশোর, ওরা এ ঘরে এলে কোন অসুবিধে আছে, স্যার? অন্যান্য বারের মত এবারও ওরা এ কেসে আমার সঙ্গে কাজ করছে।

না, কোন অসুবিধে নেই। আসতে বলো ওদের।

সাইকেল রেখে হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকল মুসা, ফারিহা, রবিন। ক্যাপ্টেনের সঙ্গে অপরিচিত একজন লোক আছে দেখে থমকে দাঁড়াল।

হেসে হাত নেড়ে তিনজনকেই কাছে ডাকলেন ক্যাপ্টেন। উঠে হাত মেলালেন ওদের সঙ্গে।

দেখাদেখি ক্যাপ্টেনের সঙ্গীও উঠে দাঁড়ালেন। হাত বাড়িয়ে দিলেন।

হাত মেলানোর পালা শেষ হলে ফারিহা জিজ্ঞেস করল ক্যাপ্টেনকে, কাজে এসেছেন? নাকি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে?

দুটোই। কিশোরের কাছে ফোন করেছিলাম। সে বলল, কি একটা গল্প নাকি আমাকে শোনাবে তোমরা।

সবাই বসল। ক্যাপ্টেনের যতটা সম্ভব কাছে বসল ফারিহা।

আবার গোড়া থেকে শুরু করল কিশোর। কিভাবে রবিনের কাছে হারের বাড়িতে চোর ঢোকার কথা বলেছিল দুধওয়ালা, কৌতূহলী হয়ে ওরা কিভাবে দেখতে গেল ওবাড়িতে, বেড়ালছানাটাকে বের করে আনল, সব বিস্তারিত বলতে লাগল।

স্বাভাবিকভাবেই ফগের কথা এসে পড়ল।

ক্যাপ্টেন বললেন, আমার আসার খবর বোধহয় ও পায়নি। কিশোর, ওকে একটা ফোন করে দেবে?

নিশ্চয়, স্যার।

 উঠে গিয়ে ফোন করে এল কিশোর। তারপর গল্পের বাকিটা বলতে লাগল।

পাঁচ মিনিটও গেল না, সাইকেল নিয়ে প্রায় উড়ে এসে পড়ল ফগ। হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ঢুকল। কাপড়ে খাবারের ঝোল আর রুটির গুড়ো লেগে আছে। মোছারও সময় পায়নি। ফোন পেয়ে খাবার ফেলেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে।

মাথা থেকে হেলমেট খুলে মেঝেতে রাখল সে।

ক্যাপ্টেন বললেন, বসো, ফগর‍্যাম্পারকট। কিশোর একটা গল্প শোনাচ্ছে আমাদের। তুমি এর অনেকখানিই জানো। কিন্তু রিপোর্টে তেমন কিছুই জানাওনি।

হাঁ হয়ে গেল ফগ। গোল চোখ আরও গোল। ভেবে পেল না কি কথা সে জানে অথচ ক্যাপ্টেনকে জানায়নি?

ফাঁকে দেখেই অস্থির হয়ে উঠেছে টিটু। আর থাকতে না পেরে এগিয়ে গিয়ে দাঁড়াল ফগের গোড়ালির কাছে। ওর উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে কড়া ধমক লাগাল কিশোর, অ্যাই, চুপ করে বোস্! জরুরী আলোচনা হচ্ছে।

কিশোরের দিকে তাকাল টিটু। মুখ দেখেই বুঝতে পারল, এখন দুষ্টুমি চলবে না। ফারিহার পায়ের কাছে গিয়ে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়ল সে।

এগিয়ে চলল কিশোরের গল্প। রাতের বেলা চৌকিদারদের কাছে খোঁজ নিতে গিয়েছিল, তারপর ওকে ধরার জন্যে প্রায় সারারাত ঠাণ্ডার মধ্যে গাছের নিচে বসেছিল ফগ, এ কথায় আসার পর আর হাসি চাপতে পারল না মুসা। তার হাসি সংক্রমিত হলো ফারিহা আর রবিনের মধ্যে। জোর করে মুখ গভীর করে রাখল কিশোর। ক্যাপ্টেন আর তার সঙ্গীর মনে কি ঘটছে মুখ দেখে বোঝা গেল না। ঘাম দেখা দিয়েছে ফুগের কপালে।

পরদিন নদীতে নৌকা নিয়ে খুঁজতে গিয়ে কি পেয়েছিল ফগ, বলল কিশোর। ব্যাগের মধ্যে কি ছিল, তাও জানাল।

ফগের দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন, ফগর‍্যাম্পারকট, তোমার রিপোর্টে তো এ সব কথা বলনি? কি করেছ ওগুলো?

বেচারা ফগ। ভঙ্গি দেখে মনে হলো চোখ উল্টে দিয়ে পড়ে যাবে। ওর অবস্থা দেখে কিশোরের মায়াই হতে লাগল। তাড়াতাড়ি জবাব দিল, ওগুলো আমাকে দিয়ে দিয়েছিল। প্রতিটি জিনিস। অবাক হচ্ছেন, স্যার? আমিও হয়েছিলাম।

Super User