০৬.
সকাল সকাল খেয়েদেয়ে তৈরি হয়ে নিল কিশোর। টিটুকে নেবে কিনা ভাবতে লাগল। প্রয়োজন মনে করল না। বরং রাতের বেলা ওকে সামলানোই ঝামেলা। ইঁদুর, ছুঁচো আর এ জাতীয় নিশাচর জীবের আনাগোনা হবে। সেটা কানে যাবে টিটুর। আর গেলেই হই-চই। তার চেয়ে রেখে যাওয়াটা ভাল মনে করল সে।
সে যে বেরোচ্ছে এটা বুঝতে দিল না টিটুকে। ঘরে আটকে রেখে বেরিয়ে চলে এল।
কোনদিকে যাবে?
পেছনের দেয়াল টপকে পালিয়েছে হুবার। সেদিকে নদী। অতএব প্রথমে নদীর দিকে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিল কিশোর। তবে তার আগে অনুমান করে নিতে হবে, ঠিক কোনদিকে গিয়েছে হুবার।
তাই চলে এল হুবারের বাড়ির পেছনে।
পুরো অন্ধকার হয়ে আছে বাড়িটা। পেছনের দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে রাস্তাটার দিকে তাকাল। ঘঁ, ঠিকই অনুমান করেছে। নদীর দিকে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
হাঁটতে শুরু করল রাস্তা ধরে। এদিকে যে সব চৌকিদার পাহারা দেয় তাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে।
আস্তে আস্তে হেঁটে চলল। চলে এল পথের শেষ মাথায়। এখানে রাস্তাটা ভাগ হয়ে দুটো পথ দুদিকে চলে গেছে। এদিক ওদিক তাকাল। কোনও চৌকিদার চোখে পড়ল না।
এখন কোনদিকে যাবে? ডানে, না বায়ে?
ডানেরটাতে যাওয়াই ঠিক করল।
এবার ভাগ্য কিছুটা অসন্ন হলো। একসারি সাল গঠন জ্বলছে। তার মাঝে আবছামত দেখা যাচ্ছে চৌকিদারের কুঁড়ে। দরজায় একটা নড়াচড়া চোখে পড়ল। তারমানে কেউ আছে ওখানে।
কিশোর কাছাকাছি এগোতেই পায়ের শব্দ শুনে গলা বাড়িয়ে দিল লোকটা। জ্বলন্ত কয়লায় হাত সেঁকছে।
কাছে গিয়ে কিশোরও হাত দুটো ধরল কয়লার ওপর। উফ, একেবারে অবশ হয়ে গেছে। লোকটার দিকে তাকাল, কেমন আছেন?
কে হে তুমি? এত রাতে?
ঠেকা না থাকলে এই ঠাণ্ডার মধ্যে বেরোয় কোন পাগলে, প্রচণ্ড বিরক্তির ভান করে বলল কিশোর। নিজের পরিচয় দিল না। প্রশ্নটা এড়িয়ে গিয়ে বলল, কি আর বলব, কতগুলো উন্মাদ এসে জুটেছে বাড়িতে। এই যে আমার আঙ্কেল পমের কথাই ধরুন না। রাত দুপুরে ঘুমের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করার অভ্যেস। বলে নিশির ডাক। বাইরে বেরিয়ে কোথায় কোনদিকে চলে যায়, কোন ঠিকঠিকানা নেই। সকালে আর কিছু মনে করতে পারে না। বলুন তো কি কাণ্ড।
আজও বেরিয়েছে নাকি? জিজ্ঞেস করল চৌকিদার।
কাল রাতে বেরিয়েছিল। এদিকে এসেছিল নাকি, দেখেছেন? পাজামা পরা, পায়ে চটি। বিছানা থেকে নেমে বেরিয়েছে তো, ওগুলোই পরা ছিল। বড়জোর একটা কোট গায়ে দিয়ে থাকতে পারে। ঠাণ্ডা যে লাগে, এ ব্যাপারে পাগলেরও হুশ থাকে।
হেসে উঠল চৌকিদার। না, ওরকম কোন পাগলকে দেখিনি কাল। কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে, যেন কেউ শুনে ফেলবে এই ভয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল, শোনো, তোমাকে বলেই ফেলি-কাউকে বলে দিয়ো না আবার, ফগ শুনতে পেলে চাকরিটা যাবে-কাল রাতে আমি কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তাই কিছু দেখিনি। এই ঠাণ্ডার মধ্যে কে যায় রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে, বলো। একটু চিন্তা করে নিয়ে বলল, তবে বুড়ো ক্যামার ঘুমায়নি। ও ঠিকমতই পাহারা দিয়েছে। হাঁটতে হাঁটতে নদীর দিকে চলে গিয়েছিল। ও নাকি পাজামা পরা এক লোককে দেখেছে। অত রাতে ওই পোশাকে নদীর ধারে লোকটাকে দেখে অবাক লেগেছে তার। সেজন্যেই বলেছে আমাকে। এখন বুঝলাম, পাগলটা কে। তোমার আঙ্কেল পম। পাগল বললাম বলে আবার কিছু মনে করলে না তো?
আরে না না। আমিই তো বললাম পাগল।
পাগল যখন জানোই, ঘরের মধ্যে রাতে তালা আটকে রাখো না কেন? নইলে কোনদিন রাতে নদীতে পড়ে ডুবে মরবে কে জানে।
এখন থেকে তাই করতে হবে। যাই, বুড়ো ক্যামারের সঙ্গেই কথা বলে আসি।
বুড়োকে কোথায় পাওয়া যাবে জেনে নিয়ে আবার রাস্তায় এসে উঠল কিশোর। কানে এল সাইকেলের বেলের পরিচিত শব্দ। রাস্তার মোড়ের লাইটপোস্টের আলোয় সাইকেল চালিয়ে আসতে দেখা গেল ফগর্যাম্পারকটকে।
চট করে একটা গাছের আড়ালে সরে গেল কিশোর। টিটুকে না এনে ভাল কাজ করেছে। ফগকে দেখলে আর ঠেকানো যেত না ওকে। চেঁচামেচি শুরু করে দিত। তাতে তদন্তের বারোটা বাজত।
কুঁড়ের কাছাকাছি গিয়ে সাইকেল থেকে নামল ফগ। এগিয়ে গেল চৌকিদারের সঙ্গে কথা বলার জন্যে।
গাছের আড়াল থেকে বেরিয়ে আবার হাঁটতে শুরু করল কিশোর।
আবার কতগুলো লাল আলো বুঝিয়ে দিল রাস্তার পাশে আরেকজন চৌকিদারের কুঁড়ে আছে। বুড়ো ক্যামারের আস্তানা। কাছেই নদী।
এই লোকও কিশোরকে চিনতে পারল না। নাম জিজ্ঞেস করল। বানিয়ে একটা নাম বলে দিল কিশোর। ওর ভয়, এখানেও এসে হাজির হতে পারে ফগ। বেরোনোর আর সময় পেল না ঝামেলাটা! ও যখন বেরিয়েছে একেবারে ঠিক তখনই! যাকগে, পুলিসের ডিউটি পুলিস করছে, সেটা তো আর ঠেকাতে পারবে না। বুড়ো ক্যামারকে তাড়াতাড়ি প্রশ্ন করে জবাবগুলো জেনে নিয়ে এখন যত জলদি কেটে পড়া যায়।
আগের চৌকিদারের মত এত হাসিখুশি নয় বুড়ো ক্যামার। কথাও তেমন বলতে চায় না।
বুড়োকে আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করল কিশোর, আমার আঙ্কেল পমও রাতে ঘুমের ঘোরে হাঁটতে বেরিয়ে যেখানে আগুন দেখে সেখানেই হাত সেঁকতে বসে যায়।
কিশোরের আঙ্কেল পমের প্রতিও কোন আগ্রহ দেখাল না বুড়ো। নিশির ডাক কিংবা ঘুমের ঘোরে হাঁটা, কোনটাতেই ওর আকর্ষণ নেই।
কাল রাতে নিশ্চয় ওকে দেখেছেন আপনি, বলল কিশোর। পাজামা পরা। চটি পায়ে দিয়েই বেরিয়ে গিয়েছিল বাড়ি থেকে। দেখুন দেখি কি কাও। এই শীতের মধ্যে ওই পোশাকে ঘর থেকে বেরোনো। পাগল আর কাকে বলে।
এতক্ষণে কিছুটা আগ্রহী মনে হলো বুড়োকে। মুখ খুলল, কাল রাতে দেখেছি আমি ওকে। পাজামা পরে দৌড়াচ্ছে। পাগলই মনে হয়েছিল আমার কাছে। এখন তো বুঝলাম ঠিকই অনুমান করেছি।
আমিও ঠিক অনুমানই করেছি–ভাবল কিশোর। নদীর দিকে দৌড়ে এসেছে। হুবার। পালাচ্ছিল। কিন্তু নদীতে কেন?
হাতে কিছু ছিল নাকি আমার আঙ্কেলের?
ছিল। জিনিসটা কি চিনতে পারিনি। নদীতে নেমেছিল মনে হলো। এই ঠাণ্ডার মধ্যে! আসলেই পাগল। তাহলে ওই লোক তোমার আঙ্কেল। প্রায়ই এ রকম বেরোয় নাকি?
বেরোয়। চাঁদনি রাতেই মাথা খারাপ হয় বেশি। এদিক দিয়ে আর ফিরতে দেখেননি নিশ্চয়?
না।
আবার প্রশ্ন করতে যাবে কিশোর, এই সময় কানে এল সাইকেলের বেলের শব্দ। এসে গেছে গগ। আর এখানে থাকা নিরাপদ নয়। বুড়োকে ধন্যবাদ দিয়ে উঠে এল তার কাছ থেকে। হঠাৎ ভাবনাটা এল মাথায়। ফগ কি বলে শোনা যাক না। দ্রুত আলোর কাছ থেকে সরে এসে ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল সে।
সাইকেল থেকে নামল ফল। কেমন আছো, ক্যামার?
ভাল, মিস্টার ফগারকট। এত রাতে এখানে?
একটা কেস পেয়েছি, ক্যামার। সেটারই তদন্ত করছি। কাল রাতে সন্দেহজনক কাউকে এদিক দিয়ে যেতে দেবে নাকি?
দেখেছি। নিশিতে পাওয়া এক পাগলকে। শীতের মধ্যে পাজামা আর চটি পরে দৌড়াচ্ছিল।
ঝামেলা! কি বলছ! নিশিতে পাওয়া পাগল, এ কথা কে বলল তোমাকে?
একটা ছেলে। ওর আঙ্কেল পমের নাকি ঘুমের ঘোরে হাঁটার রোগ আছে।
ছেলেটা দেখতে কেমন?
আলোর কাছ থেকে সরে বসেছিল। ভালমত দেখিনি চেহারাটা। তবে মনে হলো চুলগুলো কোকড়া।
কোঁকড়া! প্রায় চিৎকার করে উঠল ফগ। তারমানে ওই বিচ্ছু ছেলেটাও তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। কঠোর কণ্ঠে বলল, শোনো, ক্যামার, শুনতে পাচ্ছো?
তা পাচ্ছি। আমি কানে খাটো হলে কি হবে, এতটা খাটো নই যে আপনার চিৎকার শুনতে পাব না।
ঝোঁপের মধ্যে বসে মুচকি হাসল কিশোর।
ঝামেলা! বেশি কথা বলো তুমি! ধমকে উঠল ফগ। যা বলি মন দিয়ে শোনো। কাল রাতের ওই পাগলটা আজও আবার এ পথে আসতে পারে। ওকে দেখলেই ধরে এনে আটকাবে। কথা আদায় করবে।
পাগল ধরতে গিয়ে শেষে মরব নাকি! মাথায় যদি বাড়ি মেরে বসে? আমি পারব না। আমার কাজ রাতে পাহারা দেয়া। দিচ্ছি, ব্যস। কাউকে আটক না করার জন্যে আমার বিরুদ্ধে রিপোর্ট করতে পারবেন না।
হাসি চাপতে কষ্ট হলো কিশোরের।
ঝামেলা! ছেলেটা কোনদিকে গেছে?
হাত তুলে দেখিয়ে দিল ক্যামার।
তারমানে বাড়ি যেতে হলে এ পথেই ফিরতে হবে কিশোর পাশাকে, বিড়বিড় করল ফগ। চিৎকার করে ক্যামারকে বলল, পাগল নাহয় নাই ধরলে। ছেলেটাকে তো ধরতে পারবে? এ পথ দিয়েই যাবে ও. তোমার সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কাঁক করে কলার চেপে ধরে আটকাবে! তারপর যা করার আমি করব। আমি এই পথের মাথায়ই লুকিয়ে থাকল।
তাহলে আপনিই ধরছেন না কেন?
ঝামেলা! খালি তর্ক করে। আমি রছি না তার কারণ আমাকে দেখলেই ছোকরা দৌড়ে পালাবে। ধরার সুযোগ আর পাব না।
ধরে কি করবেন?
সেটা আমার ব্যাপার, ধমকে উঠল ফগ!
চুপ করে ভাবতে লাগল ক্যামার। ফগকে চটিয়ে দিলে এই এলাকায় চাকরি করা কঠিন হয়ে পড়বে। অগত্যা রাজি হলো তার কথায়।
আবাঁর সাইকেলে চাপল ফগ। রাস্তা ধরে কিছুটা দূরে গিয়ে একটা বড় গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল।
ঝোঁপের মধ্যে বসে সবই দেখতে পেল কিশোর। নীরবে খুব একচোট হেসে নিল। মনে মনে বলল, থাকো বসে ওখানে সারাত। বিচ্ছু ছেলেটাকে আর ধরতে হবে না।
টিটুকে সঙ্গে আনেনি বলে আরেকবার ধন্যবাদ দিল নিজের ভাগ্যকে। হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এল ঝোঁপ থেকে। মাথা উঁচু করল না। নেমে পড়ল রাস্তার পাশের খাদে। ওটা পার হয়ে মাঠে উঠল। ঝোঁপঝাড় আর গাছপালার অভাব নেই। ওগুলোর আড়ালে আড়ালে এখন অনেক দূর চলে যেতে পারবে ফগ আর ক্যামারের চোখ এড়িয়ে। তারপর ঘুরে ফাঁকে পার হয়ে গিয়ে আরেক জায়গা দিয়ে রাস্তায় উঠে পড়লেই হলো। নিরাপদে চলে যেতে পারবে বাড়িতে।
.
০৭.
পরদিন সকালে নাস্তা করতে বসেছে কিশোর, এই সময় বাজল টেলিফোন। মিসেস বারজি এসে বলল, তোমার ফোন। রবিন করেছে।
একা সামলাতে পারেন না মেরিচাচী, তাই ঘরের কাজে সাহায্য করার জন্যে মিসেস বারজিকে রেখেছেন। মেরিচাচীরা যখন এখানে থাকেন না, রকি বীচে চলে যান, তখন গ্রীনহিলসের তাদের বাড়ি দেখাশোনার ভারও মহিলার ওপর।
এত সকালে ফোন! লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল কিশোর। নিশ্চয় নতুন কোন তথ্য কিংবা সূত্র পেয়েছে রবিন।
হালো?
কিশোর? ভেসে এল রবিনের উত্তেজিত গলা, হুবার ফিরে এসেছে। ফগ এখনও জানে না। তাই আগেভাগেই তোমাকে জানানো প্রয়োজন মনে করলাম।
তাই নাকি? খুব ভাল করেছ। কে বলল তোমাকে?
কিটি। সকালে বাগানে বেরিয়েছি। আমাকে দেখে এসে দেয়ালের ওপাশ থেকে কথা বলল। কাল রাতে নাকি পেঁচার ডাক শোনার জন্যে কান পেতে ছিল, এই সময় গেট খোলার আওয়াজ পায়।
কটার সময়?
রাত দুটো। চোর এসেছে ভেবে সঙ্গে সঙ্গে জানালায় গিয়ে দাঁড়ায়। দেখে চোর না, হবার। চাঁদের আলোয় চিনতে ভুল হয়নি ওর। বসার ঘরে ঢুকে আলো জ্বালে হুবার।
ওর পরনে কি ছিল?
ড্রেসিং-গাউনের মতই নাকি লেগেছে কিটির কাছে। হাতে কিছু ছিল না
তবে আগের রাতে বেরোনোর সময় একটা কিছু নিয়ে যে বেরিয়েছিল তে কোন সন্দেহ নেই। কাল রাতে চৌকিদার নিশ্চিত করেছে আমাকে এ ব্যাপারে।
তাহলে ওটা আর সঙ্গে আনেনি, রবিন বলল। কারণ হাতে যে কিছু ছিল না, এ ব্যাপারে কিটিও নিশ্চিত।
এক কাজ করো। মুসা আর ফারিহাকে ফোন করে তোমাদের বাড়িতে আসতে বলে দাও। আমি নাস্তা খেয়েই চলে আসছি। ঝামেলাও এ কেসের তদন্ত করছে। অনেকখানি এগিয়ে গেছে বলেই আমার ধারণা। আমরা যে পথে এগোচ্ছি, ঠিক সেই পথে সেও এগোচ্ছে…
কিশোর, তোর নাস্তা ঠাণ্ডা হয়ে গেল, ডাক দিলেন মেরিচাচী, জলদি আয়।
আসছি, মাউথপিসে হাতচাপা দিয়ে চিৎকার করে জবাব দিল সে। রাখি, রবিন। যা বললাম করো, রিসিভার নামিয়ে রাখতে গিয়ে মনে পড়ল কথাটা। ও হ্যাঁ, আরেকটা কথা, ফারিহাকে বোলো বেড়ালের বাচ্চাটাকে সঙ্গে নিয়ে আসতে।
খাবারগুলো কোনমতে নাকেমুখে ওঁজে, সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল কিশোর। ঝুড়িতে বসিয়ে নিয়েছে টিটুকে। টপ স্পীডে রওনা হলো রবিনদের বাড়িতে।
পথে ফগকে দেখতে পেল। আরেক রাস্তা দিয়ে আসছে। তবে অনেক দূরে রয়েছে এখনও। কিশোরকে দেখে জোরে জোরে হাত নেড়ে থামতে ইঙ্গিত করল। নিশ্চয় আগের রাতের কথা জিজ্ঞেস করতে চায়।
থামল না কিশোর, যদিও আগের রাতে কতক্ষণ পর্যন্ত তার অপেক্ষায় বসে ছিল ফগ জানার খুব আগ্রহ। রবিনদের বাড়িতে না গিয়ে আরেকদিকে সাইকেল চালিয়ে দিল সে।
কিশোরকে ধরার জন্যে গতি বাড়িয়ে দিল ফগ। গায়ের জোরে প্যাডেল চাপতে লাগল।
কিশোরও বাড়িয়ে দিল গতি। মোড় ঘুরে এসে লাফ দিয়ে সাইকেল থেকে নেমে ঠেলে নিয়ে ঢুকে পড়ল একটা নির্জন বাড়ির বাগানে। বেড়ার পাশে লুকিয়ে বসল।
ফগও মোড়ের এ পাশে বেরিয়ে এল। লাল টকটকে হয়ে গেছে মুখ। হা করে হাঁপাচ্ছে। উড়ে চলে গেল যেন বেড়ার ওপাশের রাস্তা দিয়ে। কিশোর চুপ থাকতে বলল টিটুকে।
ফগ চলে গেলে বেরিয়ে এল কিশোর। সাইকেলে চেপে উল্টোদিকে রওনা হলো।
ঘামতে ঘামতে এসে রবিনদের বাড়িতে ঢুকল। ওর ঘরে ঢুকে দেখল মুসা, ফারিহা, রবিন সবাই ওর জন্যে অপেক্ষা করে বসে আছে। ফারিহার কোলে বেড়ালছানাটা। ওটাকে আদর করছে সে।
দেরি হওয়ার কারণ জানতে চাইল রবিন।
ঝামেলা পিছে লেগেছিল, জানাল কিশোর। হুবারের খবর কি?
ওকে দেখা যাচ্ছে না, রবিন বলল। নিশ্চয় বাড়িতে লুকিয়ে বসে আছে। বেড়াল আনতে বলেছিলে কেন? ওটা ফেরত দেয়ার ছুতোয় ওর সঙ্গে দেখা করার মতলব নাকি?
পারলে মন্দ হত না।
ও কি তোমাকে দেখলে খুশি হবে ভেবেছ?
না হলে না থোক। এ সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে চাই না। ঝামেলার আগেই গিয়ে ওর সঙ্গে আমার কথা বলা দরকার।
ফারিহার হাত থেকে বেড়ালছানাটা নিল কিশোর। অমনি খউ বউ করে উঠল টিটু। ধমক দিল কিশোর, চুপ কর, হিংসুটে কোথাকার!
বেরিয়ে এল সে। হুবারের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে দ্বিধা করতে লাগল। কোনদিক দিয়ে ঢুকবে? সামনে, না পেছন? একেবারেই নির্জন লাগছে বাড়িটা। কেউ আছে বলে মনে হচ্ছে না। সে যে ফিরেছে এটা কি বুঝতে দিতে চাইছে না হুবার?
যা হোক কিছু একটা তাড়াতাড়ি করে ফেলা দরকার। এখানে দাঁড়িয়ে থাকাটা ঠিক হচ্ছে না। যে কোন সময় ফগ চলে আসতে পারে। পেছন দিয়ে যাওয়াই স্থির করল সে।
সামনের গেট দিয়ে ঢুকে সাবধানে পা টিপে টিপে ঘুরে বাড়ির পেছনে চলে এল। ভাঙা জানালাটার দিকে তাকাল। কাউকে চোখে পড়ল না। তারমানে লুকিয়ে থাকাই ঠিক করেছে হুবার। তাই যদি হয়ে থাকে সামনের গেটের বেল টিপলে দরজা খুলবে না। তাহলে কি করে ওকে বের করে আনবে?
নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটতে আরম্ভ করল কিশোর। বনবন ঘুরতে লাগল যেন মগজের চাকাগুলো। বেড়ালছানাটার জন্যে উদ্বিগ্ন হবেই হুবার। জানালার ভাঙা ফোকরে মুখ রেখে বেড়ালের স্বর নকল করে ডেকে উঠল, মিআউ।
.
০৮.
মিআউ! মিআউ! মিআউ।
ডেকেই চলল কিশোর। করুণ, ক্ষুধার্ত বেড়ালছানার ডাক। যে কারও হৃদয় ছুঁয়ে যাবে।
নিজের ডাক অন্যের মুখে শুনে প্রথমে কেমন অবাক হয়ে গেল ছানাটা। কিশোরের হাত থেকে ছুটে যাওয়ার জন্যে মোড়ামুড়ি শুরু করল। না পেরে সুর মিলিয়ে ডাকতে আরম্ভ করল মিআউ মিউ করে।
ফিসফিস করে ছানাটাকে উৎসাহ দিল কিশোর, গুড, চালিয়ে যা। আরও জোরে।
ওটাও চেঁচিয়েই চলল।
নিজে ডাকাডাকি বন্ধ করে কান পাতল কিশোর। ঘরের মধ্যে কোন শব্দ হয় কিনা শোনার চেষ্টা করল।
হ্যাঁ, শোনা যাচ্ছে। কেউ নড়ছে। হালকা পায়ের শব্দ। থেমে গেল। রান্নাঘরের দরজায় এসে দাঁড়াল একজন লোক, যেটা দিয়ে হলঘরে ঢোকা যায়।
এই লোকই নিশ্চয় হুবার–ভাবল কিশোর। ভাল করে তাকাল লোকটার দিকে। পরনে শার্ট-প্যান্ট। ড্রেসিং গাউন আশা করেছিল সে। এখনও কিশোর আর ছানাটাকে দেখতে পায়নি। রান্নাঘরের ভেতরে এদিক ওদিক চোখ বোলাচ্ছে। বুঝতে চাইছে কোনখান থেকে আসছে শব্দটা।
লোকটার বয়স খুব বেশি না। তরুণই বলা চলে। পাতলা মুখ। উজ্জল, বুদ্ধিদীপ্ত চোখ। চুল সুন্দর করে পেছন দিকে আঁচড়ানো। দেখে মনেই হয় না এই লোক রাত দুপুরে ভয়ে ঘর ছেড়ে পালাতে পারে।
মিআউ!
আবার কিশোরের হাত থেকে ছুটে যাওয়ার চেষ্টা করল ছানাটা।
জানালার দিকে তাকাল নোকটা। কিশোরের কাধ আর মাথা চোখে পড়ল। বড় মানুষ ভেবে ঝট করে ঘুরে দাঁড়িয়ে হলে ঢুকতে গিয়েও থেমে গেল। ফিরে তাকাল। ভাল করে দেখে বুঝল কিশোর বড় মানুষ নয়। ওর হাতে রয়েছে বেড়ালছানাটা।
ধীরে ধীরে এগিয়ে এল সে। ধরা পড়ে গিয়ে বিব্রত বোধ করছে যেন।
জানালার ফোকরের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে কিশোর বলল, এটা আপনার বেড়াল? খিদেয় মিউ মিউ করছিল। বাড়ি নিয়ে গিয়ে খাইয়েছি।
হাত দিয়ে ডলে চুল সমান করল লোকটা। জবাব দিল, হ্যাঁ, আমার। দাঁড়াও, দরজাটা খুলে দিচ্ছি।
দরজার তালা আর ছিটকানি খুলল লোকটা। সাবধানে পাল্লা খুলে হাত বাড়াল, দাও।
কিশোর বুঝতে পারল, ছানাটা ওর হাতে দিলেই সঙ্গে সঙ্গে দরজা লাগিয়ে দেবে নোকটা। কথা বলার আর সুযোগ দেবে না। তাই ছানাটাকে আগের মতই ধরে রেখে বলল, আপনার ঘরে চোর ঢোকা নিয়ে গায়ে মহা উত্তেজনা। এখানে পুলিস এসেছিল, জানেন?
অবাক মনে হলো হুবারকে। পুলিস! কেন? বাড়িতে যে লোক ছিল না জানল কি করে?
দ্রুত ভাবনা চলেছে কিশোরের মাথায়। দুধওয়ালা যে সারা গায়ে খবরটা রটিয়েছে, হবার তাহলে জানে না। ফগ এসে সারা বাড়ি তন্নতন্ন করে খুঁজেছে এ কথাও জানে না। তার ধারণা, কেউ কিছু জানে না। এমনকি সে যে বাড়ি থেকে পালিয়ে গিয়েছিল এ কথাও নয়।
কি হয়েছিল, বলছি সব, হুবারের পাশ কাটিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে পড়ল কিশোর।
বাধা দিল না হুবার। বরং কি ঘটেছিল শোনার জন্যে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। রান্নাঘরের দরজা লাগিয়ে দিল। কিশোরকে বসার ঘরে নিয়ে এল।
জিনিসপত্র সব এখন গোছগাছ করা। বাড়ি ফিরে আবার সব সাজিয়ে ফেলেছে হুবার।
বেড়ালটাকে ছেড়ে দিয়েছে কিশোর। মিউ মিউ করে ওদের পিছু নিল ওটা।
দুধ চাস নাকি? ছানাটাকে জিজ্ঞেস করল হবার। সরি, দিতে পারব না। দুধওয়ালা আসেনি আজ।
পুলিস বোধহয় আসতে মানা করে দিয়েছে, একটা চেয়ারে বসতে বসতে বলল কিশোর। বলেছে আপনি বাড়ি নেই।
পুলিসের এত ঠেকা পড়ল কেন এসে খোঁজাখুজি করার? বিরক্ত হয়ে বলল হুবার। কেউ কি বাড়ি ফেলে দুচার দিনের জন্যে বাইরেও যেতে পারবে না?
পুলিস খবর পেয়েছে চোর ঢুকেছে আপনার বাড়িতে। জিনিসপত্র সব ওলটপালট হয়ে ছিল। হুবারের চোখের দিকে তাকিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে লক্ষ করল কিশোর, ওর কথা শুনে লোকটা চমকে যায় কিনা। জিজ্ঞেস করল, বাড়ি ঢুকে সব অগোছাল দেখতে পাননি?
দ্বিধা করতে লাগল হুবার। আর কিছু যেন বলতে চায় না। শেষে আমতা আমতা করে বলল, হ্যাঁ, তা পেয়েছি। কিন্তু পুলিশকে খবর দিল কে?
দুধওয়ালা। ছানাটাকে পায়ের কাছে ঘুরঘুর করতে দেখে কোলে তুলে নিয়ে আদর করল কিশোর। দুধ দিতে এসে দেখে সামনের দরজা খোলা। সন্দেহ হয় তার। ডাকাডাকি করে আপনাকে না পেয়ে ঘরে ঢুকে দেখে জিনিসপত্র সব তছনছ। তখন পুলিসকে খবর দেয় সে।
ও, তাই নাকি! আমি কিছুই জানতাম না।
বাড়ি থেকে কখন বেরিয়েছিলেন আপনি? আচমকা প্রশ্ন করল কিশোর। জবাবটা জানা আছে ওর। হুবার সত্যি বলে কিনা মিলিয়ে দেখতে চায়।
আবার দ্বিধা করতে লাগল হুবার। আগের রাতে। বন্ধুর বাড়ি গিয়েছিলাম। গতরাতে ফিরেছি। ফিরে দেখি জিনিসপত্র সব ছড়ানো। তবে কোন কিছু চুরি হয়নি। আমার অনুমতি ছাড়া এ ভাবে নাক গলানো উচিত হয়নি পুলিসের।
দরজা খোলা থাকাতেই এই বিপত্তিটা ঘটল আরকি। আপনি কি দরজা লাগিয়ে গিয়েছিলেন?
নিশ্চয়ই।
বিশ্বাস করল না কিশোর। রাতে কি চোর এসেছে সাড়া পাওয়ার পরে পালিয়েছিল নাকি, জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করল। কিন্তু করল না। জানে, সত্যি জবাব পাবে না। এখন তো শার্ট-প্যান্ট পরা আছে। পায়ে জুতো। ড্রেসিং-গাউন আর স্লিপারটা কোথায় খুলে রেখেছে হুবার? ওপরতলায়? দেখতে পারলে হত।
জানালায় উঁকি দিল হেলমেট পরা একটা লাল টকটকে মুখ। ফার্যাম্পারকট।
চিৎকার করে উঠল হবার, কে? পুলিস। আবার এসেছে। এর একটা বিহিত না করলেই নয়!
ঠিক বলেছেন, স্যার, এর একটা বিহিত করা দরকার। ওদের জ্বালায় কোন মানুষ নিজের বাড়িতে শান্তিতে থাকতে পারবে না, তা কেন হবে?
রাস্তায় টহল দিতে বেরিয়ে এদিক দিয়েই যাচ্ছিল ফগ। হুবারের বাড়িটা চোখে পড়তে মনে হলো একবার উঁকি মেরে দেখে যায়। তাই দেখতে এসেছে।
হুবারের সঙ্গে কিশোরকে দেখে ওর গোল চোখ আরও গোল গোল হয়ে গেল। হা হয়ে গেল মুখ। আবার নাক গলাতে এসেছে ওই বিন্দু ছেলেটা! ওর আগেই এসে বসে আছে। চিৎকার করে হুবারকে বলল, দরজাটা খুলুন। আপনার সঙ্গে আমার কথা আছে।
জ্বলন্ত চোখে ফগের দিকে তাকাল হুবার। গটমট করে গিয়ে জানালার শার্সি খুলে দিল। কি কথা? এ ভাবে উঁকি মারছেন কেন? দেখছেন না একজন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছি? কি দরকার আপনার?
ঝামেলা! বন্ধু! ওর মত একটা ছেলে আপনার বন্ধু?
অপমান করে কথা বলছেন কেন? দাঁড়ান, হেড অফিসে গিয়ে আমি রিপোর্ট করব আপনার নামে। আমি চোর-ডাকাত নই, বেআইনী কিছুই করিনি যে পুলিস বারবার আমার বাড়িতে আসবে।
ঝামেলা!…ইয়ে, ঝামেলা! কথা হারিয়ে ফেলল ফগ। কাশি দিল। ইয়ে…আপনার বাড়িতে চোরের উপদ্রব হয়েছিল…
হয়েছিল তো আপনার কি? আপনাকে কে উপদ্রব করতে বলেছে?
অনেক কষ্টে হাসি চাপল কিশোর।
আপনার সামনের দরজা খোলা ছিল, কৈফিয়ত দেয়ার চেষ্টা করল ফগ। ভাবলাম…
কে ভাবতে বলেছে আপনাকে? ধমকে উঠল হুবার, যান, ভাঙন এখান থেকে!
আনন্দে ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছে করল কিশোরের। হুবারকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করল। চিরকাল ওদেরকে যাও ভাগো বলে ধমকে এসেছে ফগ, এখন কেমন মজা? নিজের শুনতে কেমন লাগছে।
রেগে গেল ফগ। আহ..ইয়ে…ঝামেলা! আপনি কোনও প্রাণীকে বাড়িতে ক্ষুধার্ত অবস্থায় ফেলে যেতে পারেন না। সেটা অমানবিক। বেআইনী।
বেড়ালছানাটা ক্ষুধার্ত ছিল না! বলে ফগের মুখের ওপর শার্সিটা লাগিয়ে দিতে গেল হুবার।
চট করে রোমশ একটা হাত বাড়িয়ে দিয়ে ঠেকাল ফগ। ছানাটা নাহয় ছিল না। কিন্তু কুকুরটা? শুয়োরটা?
ভুরু কুঁচকে ফগের দিকে তাকিয়ে রইল হুবার। কি বলছেন আপনি, কনস্টেবল? কিসের কুকুর? কিসের শুয়োর? পাগল হয়ে গেলেন নাকি?
পাগল, না? ঝামেলা! শুধু কুকুর আর শুয়োরের ডাকই শোনা যায়নি, একটা শিশুর কান্নাও শোনা গেছে এ বাড়িতে। চিৎকার করে ওর মাকে ডাকছিল।
হুবারের চেহারা দেখে মনে হলো, ফগ যে পাগল হয়ে গেছে এ ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই তার আর।
কিশোর ভাবল, এইই সুযোগ। ওরা দুজন কথা কাটাকাটি করতে থাক। সে গিয়ে ওপরতলাটা দেখে আসতে পারে। একটা মুহূর্ত দেরি করল না আর। বেড়ালছানাটাকে নিয়ে রওনা দিল সিঁড়ির দিকে। সঙ্গে নেয়ার কারণ–হুবার জিজ্ঞেস করলে ছুতো দেবে, তার কোল থেকে নেমে পালাচ্ছিল এটা, ধরার জন্যে সেও ছুটেছে পেছনে।
নিচতলায় ফগ আর হুবারের চিৎকার বেড়েছে। একটা কথা ভেবে কিশোরেরও অবাক লাগল, কুকুর, শুয়োর আর শিশুর কান্নার কথা কার কাছে শুনল ফগ? চুরি হওয়ার খবর শুনে ওরাও তো এসেছিল এ বাড়িতে। কই, বেড়ালছানাটা ছাড়া আর কোন জন্তু-জানোয়ার তো দেখেনি?
তবে কি কিটিকে জিজ্ঞেস করতে গিয়েছিল ফগ? লোকটাকে দেখতে পারে না বলে বানিয়ে বানিয়ে উল্টোপাল্টা বলে দিয়েছে কিটি?
হ্যাঁ, তাই হবে। মুচকি হাসল কিশোর।
ওপরতলার যে ঘরটায় ঢুকল সে প্রথম, সেটাও গোছগাছ করা। গুছিয়ে ফেলেছে হবার। ওর স্লিপার আর ড্রেসিং-গাউনটা খোঁজায় মন দিল সে।
.
০৯.
ঘরের চারপাশে চোখ বোলাল কিশোর। একটা স্লিপারও চোখে পড়ল না। না না, আছে। একজোড়া লাল স্লিপার।
উল্টে দেখতে লাগল সে।
কাদা লাগা। প্রচুর কাদা। এগুলো পায়ে দিয়ে রাস্তায় হেঁটেছে হুবার, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
খাটের নিচ থেকে টেনে বের করল একটা লাল-সাদা পাজামা। ঠোঁট গোল করে শিস দিয়ে উঠল। পাজামার নিচের দিকটায় কাদামাখা। আপনমনে মাথা ঝকাল সে। এই কাদা কোথা থেকে এসেছে, ওর জানা।
নদীর কিনার থেকে।
এবার ড্রেসিং-গাউনটা দরকার। পাওয়া গেল ওটাও। একটা উঁচু আলমারির মধ্যে। ওটাও নোংরা। তবে তাতে কাদার বদলে খড়ের টুকরো লেগে আছে। ড্রেসিং-গাউনটা পরে কোথায় ঢুকেছিল হুবার?
আস্তে করে আলমারির দরজাটা লাগিয়ে দিল কিশোর।
মোটেও বন্ধুর বাড়িতে যায়নি হুবার, ভাবল সে। বন্ধু কি আর তাকে খড়ের গাদায় শুতে দিয়েছিল নাকি। আসলে খড় আছে এমন কোনখানে ঢুকে লুকিয়েছিল সে। গোলাঘরে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। রাতে রাস্তাঘাট সব নির্জন হলে ওখান থেকে বেরিয়ে চুপচাপ বাড়ি ফিরে এসেছে। চৌকিদার কি ফিরতে দেখেছে ওকে? তাহলে ভাববে আমার আঙ্কেল পম। হাহ হাহ!
নিচতলার গরম গরম কথাবার্তা থেমে গেল।
দড়াম করে একটা জানালা বন্ধ হওয়ার শব্দ হলো। মেঝেতে চার হাতপায়ে ভর দিয়ে উপুড় হয়ে ডাকতে আরম্ভ করল কিশোর, পুষি, পুষি, অ্যাই পুষি!
সিঁড়িতে একটা ডাক শোনা গেল, ওখানে কি করছ? জলদি নেমে এসো।
ঘর থেকে বেরিয়ে এল কিশোর। সিঁড়ির মাথায় দাঁড়িয়ে বলল, সরি। বেড়ালছানাটা কোথায় জানি পালাল।
এই তো, নিচেই নেমে এসেছে, তপ্ত কণ্ঠে হুবার বলল। এবার তুমিও বেরোও। ছানাটাকে খাওয়ানোর জন্যে ধন্যবাদ। ওই নাকগলানো স্বভাবের পুলিসটাকে দেখে নেব আমি। ওর বিরুদ্ধে রিপোর্ট না করেছি তো আমার নাম হুবার নয়।
যাচ্ছি, স্যার, নিরীহ কণ্ঠে জবাব দিল কিশোর।
রাগ কমছে না হুবারের। লোকটা একটা আস্ত পাগল। কোন এক কিটি নাকি তাকে বলেছে আমার বাড়িতে কুকুর, শুয়োর আর বাচ্চা শিশুর কান্না শুনেছে। কেউ কিছু বলল আর অমনি বিশ্বাস করে বসতে হবে?
পকেট থেকে সিগারেট আর লাইটার বের করে সিগারেট ধরাল হবার।
পেট ফেটে হাসি আসছে কিশোরের। চারপাশে তাকাল। আর কিছু দেখার নেই এ বাড়িতে। নতুন কিছু আর বলারও নেই হুবারের। অতএব কেটে পড়া যায়।
সিঁড়ি বেয়ে নেমে এসে বলল, যাচ্ছি, স্যার। আপনি চলে এসেছেন, ছানাটার আর কোন অসুবিধে হবে না।
না, হবে না, কর্কশ কন্ঠে জবাব দিল হুবার। এখন যাও তো। আমাকে একটু শান্তিতে একা থাকতে দাও।
বেরিয়ে এল কিশোর। শিস দিতে দিতে এগোল গেটের দিকে। হুবারের বাড়িতে ঢুকে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। ফগের চেয়ে অনেক বেশি জানে এখন সে। ফগ ওবাড়িতে ঢুকতেও পারেনি, কাদামাখা স্লিপার আর পাজামাটাও দেখেনি।
গেটের বাইরে বেরোতেই পড়ল ফগের মুখোমুখি। অপেক্ষা করছিল সে। ঝামেলা!
কিসের ঝামেলা? যেন কিছুই বুঝতে পারছে না কিশোর।
লাল হয়ে গেল ফগের গাল। কটমট করে তাকাল কিশোরের দিকে। তাহলে তুমি ওই লোকটার বন্ধু। জবর খবর। তোমার মত পাজি ছেলে যে কোন বড় মানুষের বন্ধু হতে পারে, ভাবতেই অবাক লাগছে।
শুনে খুশি হলাম।
ঠাস করে চড় মারার ইচ্ছেটা অনেক কষ্টে রোধ করল ফগ। যতই চালাকি করো, বিচ্ছু, এবার আর পার পাবে না। তোমার নামেও রিপোর্ট লিখব আমি।
কেন, আমি আবার কি করলাম?
কি করেছ, থানায় গিয়ে রুলের শুতে খেলেই বুঝবে।
রিপোর্টটা কি লিখবেন সেটাই তো বুঝলাম না। কাল রাতে চৌকিদার কিছু বলেছে বুঝি আমার নামে? আমি তো বেআইনী কিছু করিনি। আমার আঙ্কেল পমকে খুঁজতে বেরিয়েছিলাম। সাবধান, তার সঙ্গে ঝামেলা করতে যাবেন না, মাথা খারাপ লোক..
ঝামেলা! আগে বাড়ল ফগ। কিশোরকে টেনে টেনে ছিঁড়তে পারলে এখন জালা কমত তার। জীবনে এত রাগা বোধহয় আর রাগেনি। বাধা না পেলে নিজেকে সামলাতে পারত না, হাত তুলে বসত। তারপর পড়ত আরও ঝামেলায়। টিটু ওকে বাঁচিয়ে দিল। বউ খউ করতে করতে ঘণ্টায় ষাট মাইল বেগে তেড়ে এল গোড়ালি কামড়ানোর জন্যে।
আর সবাই যেমন তেমন, টিটুকে পরোয়া না করে উপায় নেই। সোজা সাইকেলের দিকে দৌড় দিল ফগ। লাফ দিয়ে উঠে তাড়াহুড়ো করে প্যাডেল চাপতে গিয়ে একটা পা গেল ফসকে। ঋকি লাগল। আরেকটু হলে কাত হয়ে পড়ে যাচ্ছিল সে।
পেছন পেছন খানিকদূর দৌড়ে গেল টিটু। তারপর ফিরে এল।
হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে রাস্তার ওপরই গড়াগড়ি খেতে লাগল কিশোর।
হুবারের বাড়িতে গিয়ে কি করল কিশোর, জানার জন্যে অস্থির হয়ে আছে সবাই। তাই হাসিটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না।
হু, তোমার অনুমান দেখা যাচ্ছে সবই ঠিক, শোনার পর মাথা দুলিয়ে বলল ফারিহা। পাজামা আর স্লিপার পরেই পালিয়েছিল হুবার। কোথাও গিয়ে লুকিয়ে থেকেছিল।
এবং সঙ্গে করে কোন জিনিস নিয়ে গিয়েছিল, যোগ করল কিশোর। কিন্তু ফিরে যখন এলকিটির কথা অনুযায়ী–তার হাতে তখন আর কোন কিছু ছিল না। তারমানে জিনিসটা কোথাও লুকিয়ে রেখে এসেছে।
নিশ্চয় কোন খড়ের গাদায়, রবিন বলল। গ্রীনহিলসে ওগুলোর অভাব নেই। অসংখ্য খড়ের গাদা আর গোলাঘর আছে। কোনটাতে রাখল?
জানি না। প্রয়োজন হলে খুঁজে বের করতে হবে, জবাব দিল কিশোর। হাতে সময় আমাদের কম। স্কুল খুলতে আর বেশি বাকি নেই। তার আগেই কাজ সারতে হবে।
কিন্তু কি করে কাজটা সারবে, অর্থাৎ প্রয়োজন দেখা দিলে জিনিসটা খুঁজে বের করবে, কারও মাথায় ঢুকল না। গ্রীনহিলসের সমস্ত খড়ের গাদা আর গোলাঘরে জিনিসটা খুঁজে বেড়ানো খড়ের গাদায় সুচ খোঁজার চেয়ে কঠিন। তা ছাড়া ওরা জানেও না কি জিনিস হাতে করে নিয়ে গিয়েছিল হুবার।
যাই হোক, ওটা নিয়ে মাথা ঘামানোর আগে গত রাতে চৌকিদারদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে কি করে এসেছে কিশোর, ফগকে কিভাবে হেনস্তা করেছে, কলার সুযোগ পেল এতক্ষণে।
শুরু হলো আরেকবার হাসাহাসি।
হাসতে হাসতে ফারিহা বলল, কিশোর, তুমি না, সত্যি কি বলব..হি-হি-হি। ওই ফগটাও হলো একটা আস্ত বোকা, তোমার পিছে লাগতে যায়। নিশ্চয় কাল সারারাত নদীর ধারে ঠাণ্ডার মধ্যে বসে থেকেছে তোমাকে ধরার জন্যে।
হয়তো, কিশোরও হাসছে। বুড়ো ক্যামারকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেই সব জানা যাবে।
চলো না গিয়ে জিজ্ঞেস করা যাক, প্রস্তাব দিল মুসা। হাতে তো কোন কাজ নেই আমাদের। সময় কাটবে।
রাজি হয়ে গেল সবাই।
.
১০.
নদীর পাড়ে গিয়ে দেখল বুজে ক্যামারের কুঁড়ের দরজা বন্ধ। সারারাত জেগে থেকে এখন নিচয় ঘুমাচ্ছে সে। এই কথাটা কারও মনে হয়নি আগে। ডাকাডাকি করাটাও উচিত হবে না এখন।
নিরাশ হয়ে ফিরে যাবার কথা ভাবছে, এই সময় মুসা দেখল নদীর পাড়ে একটা ছাউনির ধারে নৌকার তলায় আলকাতরা লাগাচ্ছে তার এক পরিচিত মাঝি। নাম ওয়ালি উইলবার্ন। পাশে বসে আছে ওর টেরিয়ার কুকুরটা।
কিশোরের দিকে তাকিয়ে বলল মুসা, দাড়াও, পাওয়া গেছে লোক। জিজ্ঞেস করে আসি।
সাইকেল রেখে মুসার পেছন পেছন চলল বাকি সবাই।
লোকটার কাছে গিয়ে দাঁড়াল মুসা।
টিটুকে দেখে এগিয়ে এল টেরিয়ার কুকুরটা।
ব্রাশ ডলা থামিয়ে মুখ ফিরিয়ে ওর দিকে তাকান ওয়ালি। হেসে জিজ্ঞেস করল, কি, স্কুল শুরু হয়নি এখনও?
না। আর অল্প কদিন বাকি।
এ সময়ে নদীর পাড়ে কি মনে করে?
একজন লোকের খবর নিতে এসেছি।
কে?
ওর চাচা, কিশোরকে দেখাল মুসা, আঙ্কেল পম। রাতে ঘুমের মধ্যেই উঠে হাঁটতে বেরিয়ে যান। কোথায় যান, কি করেন, কোন ঠিকঠিকানা থাকে না। পরশুদিন রাতেও নাকি বেরিয়েছিলেন। কিশোরদের কাজের মেয়েটা জানালার বাইরে তাকিয়েছিল, সাহেবের হাতে একটা জিনিস ছিল দেখেছে। কি জিনিস, চিনতে পারেনি। পরদিন সেকথা আর মনে করতে পারলেন না আঙ্কেল পম। আমাদের পাঠিয়েছেন খোঁজ নিতে। বলেছেন, জিনিসটা খুঁজে বের করে দিতে পারলে পুরস্কার দেবেন।
আগ্রহী মনে হলে ওয়ালিকে। কোথায় খুঁজতে হবে বলেছেন কিছু?
ছোট্ট একটা সূত্র দিতে পেরেছেন। রাতে বেরিয়ে যেদিকে গিয়েছিলেন তিনি, সেদিকে নাকি শুধু পানি আর পানি দেখেছেন। পরদিন তার স্যাণ্ডেল আর কাপড়েও কাদা পাওয়া গেছে।
অবাক হয়ে মুসার দিকে তাকিয়ে আছে কিশোর আর রবিন। বুঝতে পারছে না, কোনদিকে এগোচ্ছে সে।
পানিতে ফেলে দেননি তো? নিজেকেই যেন প্রশ্ন করল ওয়ালি।
সেটাই তো জানতে এলাম। নদীর পাড়ে থাকেন। রাতে এদিকে কেউ এলে হয়তো চোখে পড়তে পারে।
মুসার উদ্দেশ্য এতক্ষণে বুঝতে পারল কিশোর। হুবার জিনিসটা এনে নদীর পাড়ে কোথাও লুকিয়েছে কিনা, কিংবা পানিতে ফেলে দিয়েছে কিনা, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রশ্ন করে সেটা জানতে চাইছে। বাহু, মাথাটা তো ভালই খেলছে মুসার-মনে মনে প্রশংসা করল সে। যেহেতু নদীর দিকে এসেছিল হুর, তার স্লিপার আর পাজামায় কাদাও লেগে আছে, জিনিসটা নদীর পাড়েই কোথাও লুকিয়ে রেখে যাওয়াটা অসম্ভব নয়। কিংবা পানিতে ফেলে দিতে পারে।
আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইল কিশোর, ওয়ালি কি জবাব দেয় শোনার জন্যে।
মাথা নাড়ল ওয়ালি, না, রাতে কাউকে দেখিনি। তবে কাল রাতে চেঁচামেচি শুনে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। শুনি, বুড়ো ক্যামারকে ধমকাচ্ছে ফগর্যাম্পারকট। কোন একটা ছেলেকে নাকি ধরতে চেয়েছে, ধরতে পারেনি বলেই রাগ।
পরস্পরের দিকে তাকাল গোয়েন্দারা। সবার মুখেই হাসি।
আর কি শুনলেন? জানতে চাইল মুসা।
না, আর কিছু না। কিছুক্ষণ পর বুড়োকে কড়া নজর রাখার হুকুম দিয়ে চলে গেল ফগ। আজ সকালে এসে হাজির আমার কাছে। নৌকাটা রেডি করে দিতে বলেছে। ভাড়া নেবে।
কেন?
কি জানি? বলল, দরকার, রেডি করে রাখতে। বা হাতে কানের গোড়া চুলকাল ওয়ালি। আজ যেন আমার নৌকা আর বোটকের দাম বেড়ে গেছে হঠাৎ করে।
কান খাড়া করে ফেল কিশোর, মানে?
আরও একজন এসেছিল নৌকা আর বোট-হুক চাইতে।
কে? হুবার নাকি? পানিতে ডুবিয়ে রাখা বস্তায় ভরা জিনিস বা ওই রকম কিছু খুঁজে বের করার জন্যে অনেক সময় বোট-হুক ব্যবহার করে লোকে। ফগ আর হুবার দুজনেই হুকটা চায়, তারমানে দুজনেই পানিতে খুঁজতে বেরোবে মনে হচ্ছে। ফগকে যতটা মাথামোটা ভাবে ওরা, আসলে ততটা নয়। সেও অনুমান করে বসে আছে নদীর দিকেই এসেছিল হুবার, হাতের জিনিসটা পানিতে ফেলে গেছে। একটা ব্যাপার নিশ্চিত হওয়া গেল–হুবার যে খড়ের গাদায় গিয়ে শুয়ে ছিল, এ কথা এখনও জানে না ফগ।
এই দ্বিতীয় লোকটা কে? জানতে চাইল কিশোর।
চিনি না, জনমেও দেখিনি, জবাব দিল ওয়ালি। বিশালদেহী এক লোক। গায়ের রঙ বাদামী। গালে একটা কাটা দাগ। একটা চোখেও গোলমাল আছে। দশটা ডলার বাড়িয়ে দিয়ে আমার সবচেয়ে লম্বা হুকটা ভাড়া নিতে চাইল। বোঝে ঠেলা, একটা বোট-হুঁকের জন্যে দশ ডলার দিতে চায়। লোকটাকে পাগল মনে হয়েছে আমার। নিজেকে পরিচয় দিল বিজ্ঞানী বলে। পানির নিচে জন্মে থাকা উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহ করবে।
তাই, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটা শুরু হয়ে গেছে কিশোরের। দ্বিতীয় লোকটা বার নয়। তাহলে কে? নিশ্চয় সেই লোকটা, যে বারো নম্বর জুতো পায়ে দেয়, চুরি করে সেদিন হুবারের বাড়িতে ঢুকেছিল যে।
ওয়ালিকে ধন্যবাদ দিয়ে সবাইকে নিয়ে ওখান থেকে সরে এল কিশোর।
টিটুর সঙ্গে আসতে চাইল টেরিয়ারটা। কয়েক মিনিটেই ভাল খাতির হয়ে গেছে। ডেকে ওকে ফিরিয়ে নিল ওয়ালি।
ওদের সাইকেলগুলোর কাছে এসে দাঁড়াল কিশোর। ফিরে তাকাল বন্ধুদের দিকে, জলজ উদ্ভিদের নমুনা সংগ্রহের গল্পটা বিশ্বাস করেছ?
এক বিন্দুও না, সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিল রবিন। আমার মনে হয় সেই চোরটা। সেও সন্দেহ করেছে, হবার নদীর দিকে এসেছে, হাতের জিনিসটা পানিতে ফেলে দিয়েছে।
ফগেরও একই সন্দেহ।
আমি যাব না, বলে উঠল ফারিহা। ঝামেলা নদীতে নেমে কি করে না দেখে আমি যাব না এখান থেকে।
খানিক চিন্তা করে কিশোর বলল, এক কাজ করা যাক, তোমরা গিয়ে বসে থাকো ওয়ালির ছাউনিতে। ফগ এসে কি করে দেখবে। আমি থাকব না। আমাকে দেখলেই ভীষণ রেগে যাবে সে। কি করে বসে ঠিক নেই।
তুমি কোথায় যাবে? জানতে চাইল মুসা।
ওই দ্বিতীয় লোকটাকে খুঁজে বের করা যায় কিনা দেখি।
কিভাবে?
জবাব না দিয়ে কিশোর বলল, এসো, সাইকেলগুলো লুকিয়ে ফেলা যাক। ফগ যাতে এসেই দেখে না ফেলে।
ঝোঁপের মধ্যে সাইকেলগুলো লুকিয়ে আবার ছাউনির কাছে ফিরে এল ওরা।
মুখ তুলে তাকাল ওয়ালি, কি?
আমরা ঠিক করেছি, আজ নদীতে পিকনিক করব। আপনার ছোট নৌকাটা দরকার। ফগ কাজ সেরে চলে যাবার পরেই নাহয় নেব।
হেসে ফেলল ওয়ালি, বোট-হুক লাগবে না?
কিশোরও হাসল, না। জলজ উদ্ভিদে আমারও খুব আগ্রহ। তবে ওই বিজ্ঞানীর মত এত কষ্ট করার কোন ইচ্ছে নেই। বরং তাকে খুঁজে বের করে কয়েকটা প্রশ্ন করব উদ্ভিদের ব্যাপারে। কোনদিকে গেছে?
হাত তুলে নদীর কিনার ধরে এগিয়ে যাওয়া পায়েচলা পথটা দেখিয়ে দিল ওয়ালি।
তোমরা বসো, বন্ধুদের বলল কিশোর, আমি দেখে আসি। রওনা হয়ে গেল সে।