১৬.

তিনতলায় উঠে মুসা বেরিয়ে গেল, কিশোর শ্যাফটের ভেতরেই রইলো।

প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ফিরে এলো মুসা! বললো, হল, গ্যালারি সব দেখে এসেছি। কেউ নেই। এসো।

কি যেন ভাবছে কিশোর। জবাব দিলো না। এই কিশোর, কি ভাবছো?

উ! ভাবছি, টাকার বাক্সটা কোনোভাবে বের করে নিয়ে যাওয়া যায় কিনা?

নিয়ে গিয়ে কি হবে, একথাটা আর জিজ্ঞেস করলো না মুসা।

এক কাজ করো, কিশোর বললো। ওয়াকি-টকিতে রবিনের সঙ্গে কথা বলে। ক্যামেরা নিয়ে আসতে বলো।

কথা বললো মুসা। ক্যামেরা সাথেই আছে রবিনের। কিভাবে কিভাবে আসতে হবে, তা-ও বললো।

কিছুক্ষণ পর এলো রবিন। উত্তেজিত।

সংক্ষেপে সমস্ত কথা বলে তার বিস্ময় কিছুটা ঘোচালো মুসা। আবার ফিরে যেতে হবে অ্যান্টিরুমে, কিশোর বললো।

কেন? রবিনের প্রশ্ন।

 ক্যামেরা আনতে বলেছি কিসের জন্যে।

 হাসলো রবিন। বুঝে ফেলেছে। ঘরের জিনিসপত্রের ছবি তুলবে।

হ্যাঁ, তুলবো। বিশেষ করে পেইন্টিংগুলোর। ওগুলোর মধ্যে একটার ছবি দেখেছি খবরের কাগজে, পরিষ্কার মনে পড়ছে। কারো কাছ থেকে চুরি করে আনা হয়েছে ওটা।

হাঁ করে কিশোরের দিকে তাকিয়ে রইলো দুই সহকারী। মুসা বললো অব শেষে, ক্যাম্পার চোর?

জানি না। এক বাক্স বোঝাই টাকা, চোর হলে কি ওভাবে ফেলে রাখে ওরকম একটা জায়গায়? তবে, চোরাই মালের ব্যবসা যারা করে, তাদের প্রচুর নগদ টাকার দরকার হয়।

হ্যাঁ, মাথা দোলালো রবিন। জিজ্ঞেস করলো, যাবো ছবি তুলতে?

একলা পারবে?

কেন পারবো না। এই কয়েক মিনিট লাগবে। আসছি।

নেমে গেল রবিন।

দেয়ালে হেলান দিয়ে চুপ করে বসে ভাবতে লাগলো কিশোর। ঘন ঘন চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে। পায়চারি করছে মুসা। হঠাৎ কিশোর বললো, হু, বুঝেছি!

থেমে গেল মুসা। কি বুঝলে?

 ফিরে তাকালো না কিশোর। তাকিয়ে রয়েছে দেয়ালের দিকে। যেন সেখানে প্রোজেক্টরে ছবি চলছে, তাই দেখেই বলতে লাগলো, ধরো আজকে জুলাইয়ের চার তারিখ। তোমার বয়েস পাঁচ। কিটুর মতো। প্যারেড চলছে। সবাই ব্যস্ত, সবাই উত্তেজিত। তুমি এখন কি করবে?

ভ্রুকুটি করলো মুসা। এমন কিছু, যেটা করা উচিত নয়।

ঠিক। মারমেড গ্যালারিতে ঢোকার চেষ্টা করবে না তুমি, ভেতরে কি আছে দেখার জন্যে? কারণ ওটা দেখার প্রচণ্ড কৌতূহল আছে তোমার। নিঃশব্দে সবার চোখ এড়িয়ে চলে আসবে সিঁড়ির কাছে, উঁকি দিয়ে দেখবে ক্যাম্পার আছে কিনা।

দেখলে আন্দাজ করবে, আর সবার মতোই সে-ও বেরিয়ে গেছে প্যারেড দেখতে। এই সুযোগে ঢুকে পড়বে তুমি গ্যালারিতে, যেহেতু তোমার উচ্চতা কম, ঘণ্টার ইলেকট্রিক বীমে বাধা আসবে না। খুব সহজেই ঢুকে পড়তে পারবে তুমি, ডবকে নিয়ে।

গ্যালারিতে ঢুকে দারুণ সব জিনিস দেখবে তুমি। একটা দরজা চোখে পড়বে, ভাঁড়ারে ঢোকার। কাউন্টারের ওপারে দরজাটা। ওর ওপাশে কি আছে জানো না তুমি, দেখার কৌতূহল হবেই। ঢুকে পড়বে।

এক এক করে দেখতে দেখতে এভাবেই চলে যাবে প্রিন্সেস স্যুইটের কাছে। থেমে দম নিলো কিশোর। তারপর বললো, আমার বিশ্বাস, সেদিন সকালে নিরমা। হল্যাণ্ডের ঘরে ছিলো ক্যাম্পার।

 কিন্তু দরজা তো বন্ধ, ঢুকলো কিভাবে? প্রশ্ন তুললো মুসা। নিশ্চয় শ্যাফট দিয়ে নয়?

না। অবশ্যই আরেকটা গোপন দরজা আছে, যেখান দিয়ে ক্যাম্পার ঢোকে। সেটা দেখে ফেলেছিলো কিটু। সবাই তখন প্যারেড দেখায় ব্যস্ত, তাই হয়তো ভেতরে ঢুকে দরজাটা আর লাগিয়ে দেয়ার কথা মনে হয়নি ক্যাম্পারের। ভেবেছে, কে আর আসবে দেখতে?

তারপর কোনো কারণে চোখ তুলে কিটুকে দেখে ফেলেছে। কিংবা এমনও হতে পারে, দরজাটা খোলা ফেলে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে গিয়েছিলো ক্যাম্পার, ফিরে এসে দেখে ট্রেজার রুমে ঢুকে বসে আছে কিটু। কি করবে তখন সে? ভয়। পাবে? রেগে যাবে?

ধরার চেষ্টা করবে কিটুকে, মুসা বললো।

হ্যাঁ। আর কিটু পালানোর চেষ্টা করবে। বেরিয়ে চলে এসেছিলো হয়তো গ্যালারিতে। লুকানোর চেষ্টা করেছিলো জলকন্যার বেদির আড়ালে। তাতে নাড়া লেগে পড়ে গিয়ে ভেঙে যায় জলকন্যা। ডব ছিলো কিটুর সাথে। মূর্তিটা সরাসরি মাটিতে পড়েনি, পড়েছিলো কুকুরটার ওপর। ব্যথা যা পেয়েছে, তার চেয়ে বেশি পেয়েছিলো শক। সহ্য করতে পারেনি জানোয়ারটার বুড়ো, নষ্ট হয়ে যাওয়া। হৃৎপিণ্ড। মারা যায় ওটা।

ততোক্ষণে পেছনের দরজার কাছে চলে যায় কিটু। দরজার ছিটকানি খুলে রাখে ক্যাম্পার, যখন সে ওঘরে থাকে, ফলে কিটুর বেরিয়ে যেতে অসুবিধে হওয়ার। কথা নয়। কিন্তু, বেরোনোর আগেই মুর্তিটা পড়ে যদি ভেঙে গিয়ে থাকে, তাহলে শব্দ হয়েছে। নিশ্চয় ফিরে তাকিয়েছে কিটু। কি দেখবে, এবং তখন কি করবে?

ফিরে আসবে কুকুরটাকে তোলার জন্যে।

কিংবা মূর্তি ভেঙেছে দেখে এতো ভয় পেয়ে যাবে, ডবের কথা আর ভাববে না। সোজা বেরিয়ে যাবে। ভাববে, তার দোষেই এতো কিছু ঘটেছে। মায়ের শাস্তির ভয়ে লুকিয়ে পড়বে কোথাও গিয়ে।

হ্যাঁ, ঠিকই, একমত হলো মুসা। ওর বয়েসে আমি হলেও ওরকমই ভয়। পেতাম। কিন্তু কোথায় লুকাতাম? এমন কোনো জায়গা আছে যেখানে পুলিশও খুঁজে বের করতে পারছে না? নাকি অন্য ব্যাপার হয়েছে। ক্যাম্পার ধরে ফেলেছে কিটুকে…

না। ও কোথায় আছে ক্যাম্পার জানেই না। সান্তা মনিকা পিয়ারে খুঁজতে গিয়েছিলো, মনে নেই?

তাই তো! কিন্তু কেন খুঁজতে গেল। ছেলেটাকে খুঁজে বের করে মানে, মুখ বন্ধ করে দেয়ার জন্যে, যাতে সে ট্রেজার রুমের কথা বলতে না পারে?

জবাব দিলো না কিশোর। দীর্ঘ একটা নীরব মুহূর্ত পরস্পরের দিকে তাকিয়ে রইলো ওরা। তারপর রবিনের নড়াচড়ার শব্দ শুনে শ্যাফটের কাছে এগিয়ে গেল। তাকে উঠতে সাহায্য করার জন্যে।

অদ্ভুত! বেরিয়েই বলে উঠলো রবিন। মনে হলো আরব্য রজনীর কোনো গল্পের মধ্যে গিয়ে ঢুকেছিলাম..।

বাধা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কিশোর, ছবি তুলেছো?

নিশ্চয়ই। পেইন্টিং, টাকা, সব কিছুর। এখন কি করব? পুলিশের কাছে যাবো?

হয়তো। তবে তার আগে জরুরী আরও কাজ আছে। আর একটা, সূত্র পেলেই কিছু নিখোঁজ রহস্যের সমাধান করে ফেলতে পারবো।

.

১৭.

বুকশপেই পাওয়া গেল নিনা হারকারকে। ছেলেদের দেখে বলে উঠলো, কিছুতেই বাড়ি বসে থাকতে পারলাম না। ভাবলাম, দোকানেই চলে আসি…।

ছেলে নিখোঁজ হয়েছে তিনদিন, একেবারে বিধ্বস্ত করে দিয়েছে মহিলাকে হলদে হয়ে এসেছে চামড়া, ভারি ভাঁজ পড়েছে কপালের চামড়ায়।

যতোটা সম্ভঘ কম শব্দ করে একটা ঝাড়ন দিয়ে ধুলো ঝাড়ছেন বোরম্যান। বইয়ের তাকের ফাঁক দিয়ে এমনভাবে ঝাড়নটা ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, যেন ঘোরের মধ্যে রয়েছেন?

কিশোর জিজ্ঞের করলো, মিসেস হারকার, এখানে কিটুর এমন কোনো বন্ধু আছে, যাকে সে খুব বিশ্বাস করে?

হাসলো নিনা। কান্নার মতো দেখালো হাসিটা। বললো, ছিলো, শুধু ডব। তাকেই বিশ্বাস করতো কিটু।

মিসেস হারকার, আমি শিওর, কিটুকে সাহায্য করছে কেউ। পালিয়েই গেছে সে। কেউ একজন তাকে লুকিয়ে রেখেছে, খাওয়াচ্ছে, থাকার জায়গা দিয়েছে। নিশ্চয় আরেকটা বাচ্চা। তেমন কাউকে চেনে হয়তো কিটু, আপনারা জানেন না।

তেমন কে আছে, মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো নিনা।

জানালা দিয়ে সৈকতের দিকে তাকালো কিশোর। বরগু চলেছে। সাদা একটা পেটফোলা ব্যাগ তার হাতে। ব্যাগের গায়ে, মুরগীর মাংসে তৈরি খাবারের বিজ্ঞাপন। হু! আনমনে বললো কিশোর।

জানালার পাশ দিয়ে ওশন ফ্রন্টের দিকে চলে গেল বরগু। হাসলো কিশোর। মিসেস হারকার, আসুন আমার সঙ্গে।

কিশোরের কণ্ঠস্বরের হঠাৎ পরিবর্তনে ঝট করে মুখ তুলে তাকালো নিনা। কী? কি ব্যাপার?।

একটা ব্যাপার পুরোপুরি চোখ এড়িয়ে গিয়েছিলো আমাদের, হাত তুলে ওশন ফ্রন্টের দিকে দেখালো কিশোর।

তিন গোয়েন্দা আর নিনা বেরিয়ে গেল।

নিনা? পেছন থেকে ডাকলেন বোরম্যান।

জবাব দিলো না নিনা। ওশন ফ্রন্টের দিকে তাকিয়ে আছে। বরগুকে দেখছে।

দোকান থেকে বেরিয়ে এসে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন বোরম্যান। ছেলেদের সঙ্গে চললেন তিনি আর নিনা। সামনে বেশ কিছুটা দূরে রয়েছে বরগু। আজ তার সাথে কুকুর দুটো নেই। ঠেলাটাও নেই। শুধু খাবারের ব্যাগটা হাতে।

ওর একশো গজের মধ্যে পৌঁছে গেছে অনুসরণকারীরা, এই সময় ঘুরলো বরগু। ঢুকে পড়লো একটা ছোট গলিতে। ওশন ফ্রন্ট আর স্পীডওয়েকে যুক্ত। করেছে এই গলি।

মুসা, জলদি যাও! চেঁচিয়ে বললো কিশোর। চোখের আড়াল না হয়!

যাচ্ছি, বলেই দৌড় দিলো মুসা।

যেখান থেকে অদৃশ্য হয়েছে বরগু, সেখানে পৌঁছে ঘুরে তাকালো স্পীডওয়ের দিকে। কিশোর আর রবিনের উদ্দেশ্যে একবার হাত নেড়ে ঢুকে পড়লো গলিতে।

চলার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে কিশোর।

বরগু! নিনা বললো, তাই, না? বরগুই!

কিশোরের পেছনে প্রায় ছুটতে আরম্ভ করলো সে।

নিনা, হয়েছে কি? জিজ্ঞেস করলেন উত্তেজিত বোরম্যান। কিছু তো বুঝতে পারছি না!

বরগু! ইস, আগেই আন্দাজ করা উচিত ছিলো আমার!

গলির মুখে পৌঁছে গেল ওরা। দুটো বাড়ির মাঝে সরু পথ, কোণের কাছে সাইনবোর্ড ফেয়ার আইলস ওয়ে।

স্পীডওয়ের ধারে অপেক্ষা করছে মুসা। ওদেরকে দেখে হাত নেড়ে আবার। হাঁটতে শুরু করলো, প্যাসিফিক অ্যাভেনিউর দিকে।

দৌড় দিলো নিনা। অ্যাভেনিউর অর্ধেক যেতে না যেতেই মুসাকে ধরে ফেললো।

পুরানো একটা ভাঙা বাড়ির ঘাস-জন্মানো ড্রাইভওয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। মুসা। ও বাড়িতে ঢুকেছে, হাত তুলে বললো সে। কুত্তার ডাক শুনেছি।

বারান্দায় বেরিয়ে এলো একজন বৃদ্ধ। দুজনকে দেখে জিজ্ঞেস করলো, কি চাই?

ড্রাইভওয়ের দিকে এগোলো নিনা।

দাঁড়াও! চেঁচিয়ে উঠলো বৃদ্ধ। একটা দাঁতও নেই, ফলে উচ্চারণ অস্পষ্ট, কেমন জড়িয়ে যায় কথা। অন্যায় ভাবে ঢুকেছো! পুলিশ ডাকবো বলে দিলাম!

পরোয়াই করলো না নিনা। কিশোর আর বোরম্যানও তার পিছু নিলেন।

আবার ঘেউ ঘেউ করে উঠলো কুকুর।

এই, শুনছো! চিৎকার করে বললো বৃদ্ধ। এটা আমার জায়গা, জোর করে ঢুকছো তোমরা! বেরোও!

কিটু-উ! চেঁচিয়ে ডাকলো নিনা। কিটু-উ, কোথায় তুই?

পেছনের উঠানে আগাছার ছড়াছড়ি। একপাশে কাত হয়ে গেছে পুরানো। গ্যারেজটী। ওটার দরজার হাতল ধরে টান মারলো নিনা। মাটিতে ঘষা খেতে। খেতে তার দিকে যেন ছুটে এলো পাল্লাটা।

ভেতরে আবছা অন্ধকার। অনেক শরীরের নড়াচড়া। খেক কে করে নিনার দিকে তেড়ে আসতে চাইলো দুটো কুকুর। কিন্তু আটকালো বরও। পেছনের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে আরেকটা ছোট্ট শরীর। ফ্যাকাসে মুখ, চোখ বড় বড় হয়ে গেছে।

কিটু-উ! বলে চেঁচিয়ে উঠে ছুটে গেল মা।

মুরগীর পা চিবোচ্ছিলো কিটু। ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে লাফিয়ে উঠে ছুটে এলো। মায়ের দিকে। জড়িয়ে ধরলো একে অন্যকে।

ছোট্ট একটা কাশি দিয়ে আরেক দিকে ঘুরে দাঁড়ালেন বোরম্যান।

কুকুরগুলোকে শান্ত করলো বরগু। নিয়ে গেল গ্যারেজের কোণে। একটা দড়ির খাঁটিয়া রয়েছে ওখানে, তার ওপর বসে পড়লো সে। বিষণ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে মা-ছেলের দিকে। দিন কয়েকের জন্যে একটা বাচ্চাকে আপন করে পেয়েছিলো সে। একা হয়ে গেল আবার। তার মতো একজন মানুষকে বিষণ্ণ করে দেয়ার জন্যে এটা যথেষ্ট।

.

১৮.

 খবর ছড়িয়ে পড়তে দেরি হলো না। ভিড় জমে গেল পথে। পুলিশ এলো। গুর হাতে হাতকড়া দিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে গেল তারা।

এবার কি করবো? রবিনের প্রশ্ন। কিটু ট্রেজার রুমটা দেখে থাকলে বলে দেবেই।

তার আগেই হুঁশিয়ার হয়ে যাবে ক্যাম্পার। মালপত্র সব সরিয়ে ফেলবে অন্য কোথাও বন্ধ ঘরে বাক্স ভর্তি টাকা আর দামী দামী জিনিসের কথা কে বিশ্বাস করবে তখন?

করবে না, মাথা নাড়লো মুসা।

কাজেই সেটা প্রমাণ করার দায়িত্ব আমাদের, ঘোষণা করলো কিশোর। সান্তা মনিকায় একটা ছবি তোলার দোকান আছে, এক ঘণ্টার মধ্যেই ফটো ডেভেলপ করে দেবে। রবিন, ক্যামেরাটা নিয়ে চলে যাও, ট্রেজার রুমে তোলা ছবিগুলো করিয়ে আনো। আমি আর মুসা যাচ্ছি ভেনিস লাইব্রেরিতে। ছবিগুলো। নিয়ে ওখানে চলে এসো।

রবিন রওনা হয়ে গেল উত্তরে ফটোর দোকানের দিকে। কিশোর আর মুসা চললো মেইন স্ট্রীটে, যেখানে রয়েছে ছোট লাইব্রেরিটা। যাওয়ার সময় একটা মস্ত বেলুন দেখে দাঁড়ালো দুজনে। নতুন একটা সুপার মার্কেট করা হয়েছে, ওটার পার্কিং লটে বেঁধে রাখা হয়েছে বেলুনটা, আজ মার্কেটের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠান। বিজ্ঞাপন। লেখা রয়েছেঃ

প্রতি একশো জন খরিদ্দারের মধ্যে
লটারি করে যে কোনো একজনকে
বেলুনে করে বিনে পয়সায়
আকাশে ওড়ার সুযোগ দেয়া হবে।

 বাহ, দারুণ তো! হেসে মুসা বললো। বেলুনের গনডোলায় গিয়ে উঠছে। কয়েকজন লোক, সেটা দেখছে সে।

চলো, আমাদের কাজে যাই, খানিকটা অসহিষ্ণু হয়েই হাত নাড়লো কিশোর।

লাইব্রেরিতে ঢুকেই পত্রিকা ঘাটতে বসলে সে, মুসা তাকে সাহায্য করলো। গত দুই হপ্তার কাগজ বের করলো ওরা, তখনও যেগুলোর মাইক্রোফিল্ম করা হয়নি।

কি খুঁজছো? জিজ্ঞেস করলো মুসা।

একটা চোরাই ছবির কথা পড়েছিলাম, কোন সংখ্যায় ঠিক মনে নেই। সেটাই খুঁজছি।

 লম্বা একটা রীডিং টেবিলে পত্রিকাগুলো এনে ফেললো ওরা। তারপর ছড়িয়ে নিয়ে দেখতে আরম্ভ করলো।

মুসার চোখে পড়লো প্রথমে। বলে উঠলো, এই তো! কাগজটা কিশোরের দিকে ঠেলে দিলো সে।

পেইন্টিংটার একটা পরিষ্কার ফটোগ্রাফে দেখা যাচ্ছে-তৃণভূমিতে খেলছে কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়ে। মারমেড ইনে দেয়ালে ঝোলানো একটা ছবিতে এই দৃশ্য দেখেছে ওরা।

ছবিটা দেখেই চেনা চেনা লাগছিলো তখন, সন্তুষ্ট হয়ে বললো কিশোর।

ঘণ্টাখানেক পরে এসে মুসা আর কিশোরকে লাইব্রেরিতেই পেলো রবিন। ছবি আর প্রতিবেদনটার ফটোকপি করে নিয়েছে কিশোর। প্রতিবেদন পড়ে জানা গেল বিখ্যাত চিত্রকর ডেগার আঁকা পেইন্টিং ওটা। তাঁর বিখ্যাত ছবি নয় এটা, তবু। যথেষ্ট দামী। দিন কয়েক আগে আরও কিছু মূল্যবান জিনিস সহ ছবিটা চুরি গেছে। একজন ধনী লোকের বাড়ি থেকে।

হাতের খাম থেকে ছবিগুলো টেবিলে ঢাললো রবিন। বেছে বেছে বের করলো একটা ছবি, পত্রিকার ছবিটার সঙ্গে অবিকল মিলে যায়।

 হুবহু এক, মুসা বললো। কিন্তু ডেগার ছবির নকলও হতে পারে এটা। সব পেইন্টিঙেরই নকল পাওয়া যায়, তাই না?

যায়, বিখ্যাতগুলোর, জবাব দিলো কিশোর। তবে আমি শিওর মারমেড ইনের ছবিটা আসল। ঘরের অন্যান্য জিনিসগুলোও চোরাই মাল। এইবার পুলিশকে। জানানো যায়।

লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এলো তিন গোয়েন্দা। বাইরে তখন শেষ বিকেলের রোদ। আপনমনে শিস দিতে দিতে চললো কিশোর।

ভেনিস পুলিশ স্টেশনে এসে ঢুকলো ওরা। একজন অফিসারকে দেখে তার। সঙ্গে কথা বলতে গেল কিশোর। অন্য দুজন দাঁড়িয়ে রইলো পেছনে।

ভূমিকা না করে কিশোর বললো, চোরাই একটা ছবির খবর দিতে পারি, ডেগার ছবি। কোথায় আছে ওটা জানি। কে চুরি করেছে, তা-ও আন্দাজ করতে পারি।

ফটোকপি করে আনা পত্রিকার প্রতিবেদনটা দেখালো কিশোর, তারপর দেখালো রবিনের তুলে আনা ছবিটা। আজ বিকেলে তোলা হয়েছে এটা, বললো সে।

 দুটো ছবি ভালোমতো মিলিয়ে দেখলো অফিসার। মন্তব্য করলো না। ছেলেদেরকে নিয়ে এলো আরেকটা ছোট ঘরে, ওখানে একটা টেবিল ঘিরে কয়েকটা চেয়ার সাজানো রয়েছে। ওদেরকে ওখানে বসতে বলে চলে গেল।

খানিক পরেই এসে হাজির হলো একজন সাদা পোশাক পরা পুলিশের গোয়েন্দা। হাতে ফটোকপির কাগজ আর রবিনের তুলে আনা ছবিটা। অফিসার নিয়ে গিয়েছিলো ওগুলো।

ইনটারেসটিং, দুটোই দেখিয়ে এমনভাবে বললো ডিটেকটিভ, যেন মোটেও ইনটারেসটিং নয় ব্যাপারটা। দেখতে দুটো ছবি একই রকম। তবে তোমরা যেটা তুলে এনেছো, সেটা আসল না-ও হতে পারে। কোত্থেকে আনলে? বলেই চোখ। পড়লো রবিনের কাঁধে ঝোলানো ক্যামেরার ওপর। তুমি তুলেছে, না?

হ্যাঁ, স্যার। মারমেড ইনের একটা ঘর থেকে।

 মারমেড ইন? ওটা তো বহু বছর ধরে তালা দেয়।

কথা বললো কিশোর, সবাই তাই জানে বটে, কারণ মালিকের তা-ই ইচ্ছে। হোটেলের একটা সুইট এখনও নিয়মিত ব্যবহার হয়। নানারকম দামী দামী জিনিসে বোঝাই ওটা, চোরাই মাল। আমার বিশ্বাস, হোটেলটার বর্তমান মালিক ব্রড ক্যাম্পার এর সঙ্গে জড়িত। মনে হয় চোরাই মালের ডিলার সে, কারণ ওই ঘরে এক বাক্স ভর্তি টাকা দেখেছি।

খামটা খুলে আরেকটা টেবিলে ছবিগুলো ঢেলে দিলো রবিন। তার মধ্যে একটা ছবিতে স্পষ্ট উঠেছে টাকার বাণ্ডিলের ছবি।

 হুমম! বলে মাথা দুলিয়ে, ছেলেদের আইডেনটিটি কার্ড দেখতে চাইলো। ডিটেকটিভ। স্টুডেন্ট কার্ড বের করে দেখালো ওরা। তারপর কি মনে করে তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড বের করে দিলো কিশোর।

গুঙিয়ে উঠলো ডিটেকটিভ। শখের গোয়েন্দা! আগেই আন্দাজ করা উচিত ছিলো আমার। এই বয়েসে অনেক ছেলেই গোয়েন্দা হতে চায়। অন্তত ভাবে, যে তারা গোয়েন্দা।

ভাবাভাবির মধ্যে নেই আমরা, ভারিক্কি চালে বললো কিশোর। আমরা। সত্যিই গোয়েন্দা। অনেক জটিল রহস্যের সমাধান করেছি। অনেক বড় বড় চোর ডাকাতের কোমরে দড়ি পরিয়েছি…

হাত তুলে তাকে থামিয়ে দিলো ডিটেকটিভ। উঠে দাঁড়ালো। বসো এখানে। আসছি।

প্রতিবেদনের ফটোকপি আর ছবিগুলো নিয়ে চলে গেল লোকটা।

 কি করতে গেল? মুসার প্রশ্ন।

চোরাই মালের লিস্ট থাকে থানায়। ছবিগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দেখতে গেছে। হয়তোঁ। ফোন-টোন করে খোঁজ-খবরও নিতে পারে।

ক্যাম্পারকে না আবার করে বসে! রবিন বললো।

 ক্যাম্পারকে? উদ্বিগ্ন হয়ে বললো মুসা। কেন, তাকে করবে কেন?

কারণ তার হোটেলে চুরি করে ঢুকেছি আমরা, সেটা একটা অপরাধ। ইচ্ছে করলেই আটকে দিতে পারে আমাদেরকে পুলিশ। যদি হোটেলের কামরা থেকে জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলে থাকে ক্যাম্পার, আর চোরাই মালের লিস্টের সঙ্গে না মেলে, তাহলে মরেছি!

রবিনের কথার মানে বুঝে চুপ হয়ে গেল মুসা।

দীর্ঘ নীরবতার পর মুখ খুললো কিশোর, যেন মনের ভাবনাগুলোই মুখে উচ্চারণ করলো, যদি ক্যাম্পারকে ফোন করেই, তো কি করবে ক্যাম্পার? কিটু যদি ঘরটা দেখে থাকে…

বাধা দিয়ে রবিন বললো, কিটু যে দেখেছেই, তার নিশ্চয়তা কি? নিশ্চয়তা? আছে। এতো দামী দামী খাবার কেনার টাকা কোথায় পেলো গু? পেসট্রি, পিজা, চিকেন। আমার বিশ্বাস বাক্স থেকে কিছু টাকা তুলে নিয়ে এসেছিলো কিটু। কড়কড়ে নোট দেখেছে, ছেলেমানুষ, তুলে নিয়ে পকেটে ভরে ফেলেছে। টাকা দেখলে অনেক ছেলেই ওরকম করে। ওই টাকা দিয়েই তাকে খাবার কিনে এনে দিয়েছে ব্রগু।

এক মুহূর্ত চুপ থেকে আবার ক্যাম্পারের কথায় ফিরে গেল কিশোর, হ্যাঁ, যা। বলছিলাম, ক্যাম্পার কি করবে? আমার ধারণা, ও পালানোর চেষ্টা করবে। কারণ অপরাধীর মন সব সময়ই দুর্বল থাকে। ওর ব্যাপারেই একটা সহজ উদাহরণ ধরো-জলকন্যার মূর্তিটা ভাঙার পর আমরা হলে, কিংবা অপরাধী না হয়ে অন্য কেউ হলে কি করতো? ভাঙা টুকরোগুলো তুলে নিয়ে জাস্ট ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে আসতো। সে করলো কি? অনেক সাবধানে লুকিয়ে লুকিয়ে নিয়ে গিয়ে ফেললো। সাগরের পানিতে, যাতে কারও চোখে না পড়ে। কি দরকারটা ছিলো? সব কিছু গড়বড় হয়ে যাচ্ছে এখন। কিটু যদি মুখ খোলে, এই ভয়ে ওর মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করতে পারে এখন ক্যাম্পার।

চোখ বড় বড় হয়ে গেল রবিন আর মুর্সার।

রবিন বললো, তার আগেই আমাদের কিছু করা দরকার!

 এখুনি চলো! বলেই দরজার দিকে রওনা হয়ে গেল মুসা।

কিশোর আর রবিনও তার পিছু নিলো। ডিটেকটিভের ফিরে আসার অপেক্ষা করলো না আর ওরা।

.

১৯.

ওশন ফ্রন্টে যখন পৌঁছলো তিন গোয়েন্দা, সাতটা বেজে গেছে। দিনের বেলা যে রকম ভিড় থাকে ভেনিসে, সেটা কমে এসেছে। স্পীডওয়েতে গাড়ি খুব কম। ওশন। ফ্রন্টে ঘোরাঘুরি করছে অল্প কয়েকজন মানুষ।

বইয়ের দোকানের বাইরে গলিতে দাঁড়িয়ে আছে টেলিভিশনের একজন। রিপোর্টার। কিটু আর নিনার সাক্ষাৎকার নিতে এসেছে। কিছু লোক ঘিরে দাঁড়িয়েছে তাদেরকে।

সেদিকে গেল না গোয়েন্দারা। ওদের একমাত্র ভাবনা, কিটুকে বাঁচাতে হবে। বিপদের খাড়া ঝুলছে ছেলেটার মাথার ওপর।

মারমেড ইনের কাছে চলে এলো ওরা। গ্যালারি বন্ধ। তবে কি ক্যাম্পার পালালো? অ্যাপার্টমেন্টের জানালায় পর্দা টানা। ভেতরে লোক আছে কিনা বোঝার উপায় নেই।

হঠাৎ করেই সামনের দিকের একটা পর্দা নড়ে উঠলো। ওশন ফ্রন্টের দিকে উঁকি দিলো বোধহয় কেউ।

আছে! আছে! বলে উঠলো মুসা।

মনে হয় পালানোর তাল করছে, কিশোর বললো। সিঁড়ি দিয়ে পেছনে গ্যারেজের কাছে নেমে যাবে।

তাহলে দাঁড়িয়ে আছি কেন? তাগাদা দিলো রবিন।

চত্বরের উত্তর পাশ ঘুরে পেছনে চলে এলো ওরা। ঠিকই বলেছে কিশোর। বেরিয়ে এসেছে ক্যাম্পার। পেছনের সিঁড়ির মাথায় রয়েছে এখনও। হাতে একটা। স্যুটকেস। ওখানেই দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকালো সে, তারপর আস্তে লাগিয়ে দিলো পাল্লাটা। তিন গোয়েন্দা আড়ালে লুকিয়ে রয়েছে, ওদেরকে দেখতে পেলো না।

 পেছনের গ্যারেজের দিকে এগোলো ক্যাম্পার। হাতে ঝুলছে চাবি। কিন্তু। দরজার তালা খোলার আগেই বড় করে দম নিয়ে এগিয়ে গেল কিশোর। বললো, চলে যাচ্ছেন, মিস্টার ক্যাম্পার? খুব খারাপ কথা। আমরা ভাবছি এই কেসের। একটা কিনারা করে দেবো।

পাই করে ঘুরলো ক্যাম্পার। ফ্যাকাসে হয়ে গেছে তার সুন্দর চেহারা। কেসের কিনারা তো করেই ফেলেছো। ছেলেটা ফিরে এসেছে। খুব চালাক তোমরা। কংগ্রাচুলেশন।

কিছু কথা বলার আছে আপনাকে, শুনবেন? নাকি কি বলবো বুঝে ফেলেছেন? পানিতে যখন মূর্তির টুকরোগুলো ফেলেছিলেন, অবাক লেগেছিলো। তারপর হোটেলের ভেতরে যখন ট্রেজার রুমটা আবিষ্কার করলাম, বুঝে ফেললাম সব।

ঢোক গিললো ক্যাম্পার। জিভ বোলালো শুকনো ঠোঁটের ওপর। ঠোঁটের কোণ কাঁপছে। কোনো কথা না বলে তাড়াতাড়ি তালা খোলার চেষ্টা করলো।

না! বলেই লাফ দিলো মুসা। প্রায় উড়ে গিয়ে পড়লো ক্যাম্পারের গায়ের। ওপর। মাথা দিয়ে তো মেরে ফেলে দিলো লোকটাকে। হাতের চাবি গিয়ে ঝনঝন করে পড়লো স্পীডওয়েতে। চোখের পলকে ক্যাম্পারের পাশে চলে এলো। কিশোর। রবিন চলে গেল রাস্তার ওপর। চাবিটা তুলে নিলো।

স্পীডওয়ে ধরে একটা গাড়ি এগিয়ে আসছে। কাছে এসে জানালার কাঁচ নামিয়ে দিলো চালক। জিজ্ঞেস করলো, এই যে ভাই, কি হয়েছে?

প্রশ্নটা ক্যাম্পারকে করেছে, কিন্তু জবাবটা দিলো কিশোর, জলদি গিয়ে পুলিশে খবর দিন! কুইক!,

এক সেকেণ্ড দ্বিধা করলো লোকটা। তারপর গাড়ির গতি বাড়িয়ে গিয়ে মোড় নিয়ে উঠে গেল আরেকটা রাস্তায়।

বিচ্ছুর দল! উঠে দাঁড়িয়েছে ক্যাম্পার। গলা কাঁপছে তার।

কি হয়েছে কিছুই জানে না লোকটা, গাড়ির চালকের কথা বললো কিশোর। কিন্তু পুলিশকে খবর দিতেও পারে। আসার আগে পুলিশকে ট্রেজার রুমের কথা। জানিয়ে এসেছি আমরা। লোকটার কাছে খবর পেলে চোখের পলকে এসে হাজির। হবে। আপনার হাতে টাকা ভর্তি স্যুটকেস দেখলে কি ভাববে ওরা বলুন তো?

ক্ষণিকের জন্যে ঝুলে পড়লো ক্যাম্পারের মাথা। যেন হাল ছেড়ে দিয়েছে। তারপর আচমকা সোজা হলো আবার। হাতে বেরিয়ে এসেছে একটা পিস্তল। বেশ, তোমরাও আসছো আমার সঙ্গে। পুলিশ এখানে এসে কাউকে পাবে না।

পিস্তল আশা করেনি কিশোর, তৈরি ছিলো না। থমকে গেল তিনজনেই। আদেশ পালন না করে উপায় নেই। মরিয়া হয়ে উঠেছে ক্যাম্পার। পিস্তলটার কুৎসিত নলের দিকে তাকিয়ে একবার দ্বিধা করলো ওরা, তারপর গা ঘেঁষাঘেঁষি করে এলো।

আগে বাড়ো! পিস্তল নাচিয়ে নির্দেশ দিলো ক্যাম্পার।

গুলি আপনি করতে পারছেন না, কিশোর বললো। যে কোনো মুহূর্তে পুলিশ এসে যেতে পারে।

আসুক। এখানে আমি আর থাকতে পারছি না কিছুতেই। কাজেই দেখে ফেললেও কিছু এসে যায় না। তোমাদের জিম্মি করে ওদের নাকের ওপর দিয়েই চলে যাবো। হাঁটো। প্যাসিফিক এভেনুতে যাবো আমরা। আমি থাকবো পেছনে। টু শব্দ করলে খুলি উড়িয়ে দেবে।

আর কিছু বললো না ছেলেরা। ঘুরে দাঁড়িয়ে হাঁটতে শুরু করলো। পরের সরু গলিটা দিয়ে যাবে প্যাসিফিক এভেনিউতে।

এই, নিগ্রো! পেছন থেকে ধমকের সুরে বললো ক্যাম্পার, স্যুটকেসটা নাও। গায়ে তো মেলা জোর, কুলিগিরি একটু করো।

সুটকেসটা হাতে নিলো মুসা। ক্যাম্পারের হাত এখন পকেটে। নিশ্চয় পিস্তলটা ধরে আছে। নলের মুখও যে ওদেরই দিকে, বুঝতে অসুবিধে হলো না তিন গোয়েন্দার।

পালাতে আপনি পারবেন না, কিশোর বললো। ইভলিন স্ট্রীটের বাড়িটার কথাও পুলিশকে বলে দিয়েছি আমরা।

কথাটা মিথ্যে, কিন্তু বিশ্বাস করলো ক্যাম্পার। গাল দিয়ে উঠলো তিন গোয়েন্দাকে। তাড়াতাড়ি পা চালাতে বললো। প্যাসিফিক পেরিয়ে গিয়ে মেইন স্ট্রীটে উঠতে বললো।

সূর্য অস্ত যাচ্ছে। ডুবন্ত সূর্যের সোনালি আলো এসে পড়েছে মেইন স্ট্রীটের বাড়িগুলোর জানালায়। এমনভাবে চমকাচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন আগুন লেগেছে ওগুলোয়। সুপার মার্কেটের পার্কিং লটে বেলুনটাকে বাধছে বেলুন-চালক, আজকের মতো ওড়ানো শেষ।

ছেলেদেরকে সেদিকে এগোতে বললো ক্যাম্পার।

আজ আর উড়ছি না, বুঝলেন, ক্যাম্পারের উদ্দেশ্য বুঝে বললো বেলুন চালক। কাল আসবেন। বেঁধে ফেলেছি, আর খুলতে পারবো না। রাতের বেলা। হবে না।

পিস্তলটা বের করে দেখালো ক্যাম্পার।

ভীত হাসি হাসলো চালক। না না, একেবারেই ওড়াতে পারবো না, তা বলিনি। বেশি জরুরী হলে…

জলদি করো! কড়া গলায় ধমক দিলো ক্যাম্পার। চালাকির চেষ্টা করবে না। দ্বিতীয়বার আর হুঁশিয়ার করবো না আমি! তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরে বললো, যাও, ওঠো!

নীরবে একে একে গনডোলায় চড়লো কিশোর, মুসা, রবিন। বেলুনের নিচে ঝুলছে বিশাল ঝুড়ি। ওটাকে গনডোল বলে। সব শেষে উঠলো ক্যাম্পার। বেলুন বাধা দড়িগুলো দেখিয়ে চালককে নির্দেশ দিলো, কাটো ওগুলো! জলদি!

আপনার ইচ্ছেটা বুঝতে পারছি না, আমতা আমতা করে বললো চালক। অন্তত একটা দড়ি তো রাখতেই হবে। নইলে নামবো কি করে? আপনার ইচ্ছে মতো চলবে না এটা।

অধৈর্য ভঙ্গিতে হাত নাড়লো ক্যাম্পার। কড়া গলায় বললো, বেশি কথা বলো তুমি! যা বলছি করো। শেষ দড়িটা কেটে দিয়েই লাফিয়ে উঠে পড়বে। নইলে গুলি খাবে বলে দিলাম।

এসব না করলেও পারতেন, পরামর্শ দিলো মুসা। ট্যাক্সি ধরে এয়ারপোর্ট কিংবা বাস স্টেশনে চলে যেতে পারেন…

 চুপ! ধমক দিয়ে তাকে থামিয়ে দিলো ক্যাম্পার।

চুপ হয়ে গেল মুসা। এক এক করে দড়ি কেটে দিতে লাগলো চালক। শেষ। দড়িটা কেটে দিলে ওপরে উঠতে শুরু করলো বেলুন। নাগালের বাইরে চলে। যাওয়ার আগেই লাফ দিয়ে গনডোলায় চড়লো সে।

বেশি দূর কিন্তু যাবে না, উঠেই বললো। ওরকম করে তৈরি হয়নি। যদি সাগরের ওপর চলে যায়…।

যাবে না। বাতাস উল্টোদিকে বইছে, ক্যাম্পার বললো।

এখনো দেখা যাচ্ছে সূর্যটাকে, সাগরের দিগন্ত রেখার আড়ালে নেমে যাচ্ছে। লম্বা লম্বা ছায়া পড়েছে বাড়িঘরের আশপাশে। রাস্তার আলো জ্বলে উঠেছে। হেডলাইট জ্বেলে দিয়েছে রাস্তায় চলমান গাড়িগুলো।

উঠছে…উঠছে…উঠছে বেলুন। গনডোলার কিনারের দড়ি আঁকড়ে ধরে রেখেছে ওরা। তাকিয়ে রয়েছে নিচের দিকে। বেয়াড়া ভাবে দুলছে গনডোলা, মোচড় দিয়ে ওঠে পেটের ভেতর। বেলুনে চড়া যতোটা আরামদায়ক ভাবতো মুসা, ততোটা আর মনে হলো না এখন।

নিচের দিকে তাকালো না ক্যাম্পার। কঠিন দৃষ্টিতে বার বার তাকাচ্ছে তিন গোয়েন্দা আর চালকের দিকে।

কয়েক শো ফুট ওপরে উঠে এসেছে বেলুন। উত্তর-পূবে ওটাকে উড়িয়ে নিয়ে চলেছে বাতাস। নিচে তাকালো কিশোর। ঠিক ওদের নিচেই দেখা যাচ্ছে একটা গাড়ি। সাদা ছাত দেখেই বোঝা গেল পুলিশের গাড়ি।

স্যুটকেসটা নামিয়ে রেখেছে মুসা। পা দিয়ে সেটাকে ঠেলে দেখলো কিশোর। পুরানো ধাচের জিনিস। আলগী তালা লাগিয়ে বন্ধ করার ব্যবস্থা। তালা নেই, তারমানে খোলা। ক্যাম্পারের অলক্ষ্যে জুতোর ডগা দিয়ে আস্তে আস্তে তুলে। ফেললো হুড়কোটা। তারপর হঠাৎ ঝুঁকে একটানে তুলে নিলো স্যুটকেস। ঝটকা লেগে আপনাআপনি খুলে গেল ডালা। ওই অবস্থায়ই ওটাকে গনডোলার বাইরে ছুঁড়ে ফেলে দিলো সে।

 এই, কি করছো ক্যাম্পার বলতে বলতেই কাজটা সেরে ফেললো কিশোর।

বাতাসে উড়তে লাগলো নোটের বাণ্ডিল দশ-বিশ…পঞ্চাশ.. একশো ডলারের নোট। কোনো কোনোটার রবার ব্যাও খুলে ছড়িয়ে পড়লো।

নেমে যাচ্ছে টাকা!

রাস্তায় গিয়ে পড়তে লাগলো।

লাফ দিয়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো পুলিশ। রাস্তার অন্যান্য গাড়িগুলোও থেমে গেল। বেরিয়ে আসতে লাগল লোকে।

সাইরেন বেজে উঠল। আরেকটা পুলিশের গাড়ি এসে দাঁড়ালো প্রথমটার কাছে। সবাই এখন তাকিয়ে আছে ওপর দিকে, বেলুনটাকে দেখছে।

মিস করবে না পুলিশ, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর। দেখতে পাবেই আমাদের। বেলুন থেকে টাকা ছিটানোর বিরুদ্ধে অবশ্য কোনো আইন নেই। তবে প্রশ্ন জাগবেই ওদের মনে। নজর রাখবে পুলিশ। বেলুনটা নামলেই এসে হেঁকে ধরবে, যেখানেই নামুক। শেষ বাক্যটা বললো নাটকীয় ভঙ্গিতে, আর নামবেই এটা, মিস্টার ক্যাম্পার। কারণ মানুষের তৈরি কোন কিছুই চিরকাল আকাশে ওড়ে না।

কিছুই বললো না ক্যাম্পার।

অনেক পেছনে পড়েছে এখন পুলিশের গাড়ি দুটো। রাস্তায় আরও পুলিশের গাড়ি দেখা যাচ্ছে। সাইরেন বাজিয়ে, ছাতে বসানো ফ্ল্যাশ লাইট জ্বেলে ছুটে যাচ্ছে ওগুলো প্রথম দুটোর কাছে।

শোনা গেল একটা নতুন শব্দ। ওপর থেকে বেলুনের ওপর এসে পড়লো। উজ্জ্বল সার্চ লাইটের আলো।

পুলিশের হেলিকপ্টার, হাসি হাসি গলায় বললো কিশোর, বেশ উপভোগ করছে ব্যাপারটা।

কথা নেই ক্যাম্পারের মুখে। হাঁপাচ্ছে এমন ভাবে, যেন বহুদূর দৌড়ে এসেছে।

বলতে থাকল কিশোর, পিছু লেগে থাকবে পুলিশ। রেডিওতে যোগাযোগ রাখবে হাইওয়ে পেট্রোলের সঙ্গে। শহর থেকে বেলুনটা বেরিয়ে গেলেও অসুবিধে নেই। শেরিফের কাছে খবর চলে যাবে। মোট কথা, কিছুতেই আর পিছু ছাড়ছে না আইনের লোকেরা।

ঠিকই বলেছে ও, মিস্টার, ক্যাম্পারকে বললো চালক। অহেতুক দেরি করে। লাভ নেই। নামিয়ে ফেলি, সে-ই ভালো।

জবাব দিলো না ক্যাম্পার। তবে পিস্তলটা নামিয়ে ফেললো। ওটা তার হাত থেকে নিয়ে নিলো চালক, বাধা দিলো না অভিনেতা।

উইলশায়ার বুলভারের উত্তরে একটা গোরস্থানের মধ্যে নামলো বেলুন। গনডোলা মাটি ছুঁতে না ছুঁতেই ঘিরে ফেললে পুলিশ।

হেসে বললো রবিন, টেলিভিশনের লোকে খবর পায়নি। তাহলে শেষবারের মতো একবার টিভির পর্দায় চেহারা দেখানোর সুযোগ পেতেন মিস্টার ক্যাম্পার।

হেসেই জবাব দিলো কিশোর, সেটা পারবেন। সময় এখনও ফুরিয়ে যায়নি। ঠিকই হাজির হয়ে যাবে টিভির রিপোর্টার।

.

২০.

 চারদিন পর। বিখ্যাত চিত্র পরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে এলো তিন গোয়েন্দা, তাদের জলকন্যা কেসের রিপোর্ট দিতে।

ফাইলটা আগাগোড়া মন দিয়ে পড়লেন পরিচালক। তারপর মুখ তুলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, খুবই দুঃখজনক! একটা বাচ্চার জন্যে নিজের জীবনের ওপর এতোবড় ঝুঁকি নিলো মানুষটা! ভালোবাসা এমনই জিনিস! আর আরেকজনের হলো লোভ। লোভের জন্যে, কিছু জিনিস বাঁচানোর জন্যে বিপজ্জনক হয়ে উঠলো। বাচ্চাটার কাছে। টেবিলের ওপর দুই হাত বিছিয়ে তালুর দিকে তাকিয়ে রইলেন। কিছুক্ষণ তিনি। আবার মুখ তুললেন। চোরাই জিনিসগুলো কি মালিককে ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে?

কিছু কিছু হয়েছে, রবিন বললো। যেগুলোর মালিককে পাওয়া গেছে। অনেক ধন্যবাদ পেয়েছি আমরা, হাসলো সে। মালিকদের কাছ থেকে তো বটেই, পুলিশের কাছ থেকেও।

পাবোই, মুসা বললো। আমাদের দেয়া তথ্য অনেক কাজে লেগেছে। পুলিশের। ইভলিন স্ট্রীটের বাড়িটায় তল্লাশি চালিয়েছে ওরা। একটা পেশাদার চোরকে বমাল গ্রেপ্তার করেছে ওখান থেকে।

সব বলে দিয়েছে সে, মুসার কথার পিঠে বললো রবিন। পুলিশ জেনেছে, হলিউডের বড় বড় পার্টিতে দাওয়াত পড়তো ক্যাম্পারের। অভিনয় ছেড়ে দিলেও চিত্ৰজগৎ ছেড়ে আসেনি সে। যোগাযোগ ছিলো। ওসব দাওয়াতে গিয়েই লোকের বাড়ির জিনিসপত্র দেখে আসতো। খোঁজখবর করে আসতো কোথায় আছে বার্গলার। অ্যালার্ম, চোর ঠেকানোর আর কি কৌশল করা হয়েছে। কারা কখন বাড়ি থাকবে, কারা বেড়াতে যাবে, বাড়িতে কতোজন লোক আছে, কে কখন থাকে, সব জেনে আসতো। পেশাদার চোরদেরকে এসব তথ্য সরবরাহ করতো সে। এমনকি এ-ও বলে দিতো, কোন কোন জিনিস চুরি করতে হবে।

যেসব জিনিস তার প্রয়োজন, সেসব কিনে নিতে চোরদের কাছ থেকে। বেশি। দামী আর কিছুটা দুর্লভ জিনিস ছাড়া নিতো না। চোরকে কাছ থেকে জিনিস কিনতে নগদ টাকার দরকার হয়, চেকফেক নিতে চায় না চোর। কাজেই বাক্স বোঝাই করে নগদ টাকা রেখেছে ক্যাম্পার। ইভলিন স্ট্রীটের বাড়িটা চোরের আড্ডা, চোরাই মালের গুদামও ওটা। ওখানে জিনিস কিনতে যেতো সে। তারপর শহরে গিয়ে চড়া। দামে ওগুলো আবার বিক্রি করতো। বিক্রি করে দেয়ার জন্যে দালালও রেখে ছিলো। কিছু কিছু জিনিস নিজেই বিক্রি করে ফেলতো তার গ্যালারিতে রেখে।

ঝুঁকিটা খুব বেশি নিয়ে ফেলেছিলো না? মিস্টার ক্রিস্টোফার বললেন। চোরেরা জানলেই তো ব্ল্যাকমেল শুরু করে দিতো।

আসলে ওরা জানতোই না ক্যাম্পার তাদের জিনিস কেনে, অনেকক্ষণ পর,— মুখ খুললো কিশোর। ছদ্মবেশ নিয়ে তারপর ওদের কাছে যেতো সে। আর নিজে গিয়ে দেখা করতো ওদের সঙ্গে, কখনোই তার কাছে কাউকে আসতে দিতো না। কোথায় থাকে, ঠিকানাও দিতো না।

হু, চালাক লোক। কিটু গিয়ে ট্রেজার রুমে ঢুকেই দিলো তার সর্বনাশ করে।

হ্যাঁ। কিটু সব বলে দিয়েছে। প্যারেডের দিন প্রিন্সেস স্যুইটে ঢুকেছিলো সে। জিনিসগুলা দেখেছে। বাক্সের ডালা খুলে একটা বাণ্ডিল সবে তুলেছে, এই সময়। ঢুকেছে ক্যাম্পার। ভয় পেয়ে ডবকে নিয়ে দৌড় দেয় কিটু। তার পেছনে ছোটে ক্যাম্পার। গ্যালারিতে এসে জলকন্যার পেছনে লুকায় কিটু। কুকুরটাও লুকাতে এসে দেয় ঘাপলী বাধিয়ে। ধাক্কা দিয়ে মূর্তিটা ফেলে দেয়। তার গায়ের ওপ্র পড়ে ভেঙে যায় জলকন্যা। আঘাত অল্পই লাগে কুকুরটার শরীরে। কিন্তু শক সইতে পারেনি তার দুর্বল হার্ট। মারা পড়ে। নিজেকে ভীষণ অপরাধী ভাবতে আরম্ভ করে কিটু, ক্যাম্পারের ঘর থেকে পালিয়ে গিয়ে লুকায় পিয়ারে। বরগু তাকে দেখে বাড়ি নিয়ে যায়। অভয় দেয়, লুকিয়ে রাখে।

বেচারা! আফসোস করলেন পরিচালক।

ট্রেজার রুমটা যদি কিটু দেখে না ফেলতো, অসুবিধে হতো না ক্যাম্পারের। নিনা হারকারকে বলে শাসন করাতে পারতো ছেলেটা। কিটু হারিয়ে যাওয়ায় ভয়ে ভয়ে ছিলো সে, কখন ফিরে এসে সব কিছু বলে দেয় ছেলেটা।

অপরাধ কোনো সময় চাপা থাকে না। হ্যাঁ, ডিগার আর তার রুমমেটের খবর কি? ওরাও কি কোনোভাবে জড়িত ছিলো ক্যাম্পারের সঙ্গে?

না। ডিগারটা একটা ছিঁচকে চোর। তার রুমমেটটা সাধারণ শ্রমিক, স্লেভ মার্কেটে গিয়ে কাজ জোগাড় করে। বড় জিনিস, কিংবা বেশি মাল সরানোর প্রয়ো জন পড়লে স্লেভ মার্কেটে চলে যেতো ক্যাম্পার, ট্রাকসহ শ্রমিক ভাড়া করতো।

হুম! তো, বরগুর খবর কি? পুলিশ কি এখনও আটকে রেখেছে তাকে?

না। তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনেনি নিনা হারকার। বরং পুলিশকে অনুরোধ করে তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে এসেছে, কিশোর বললো। আবার আগের জায়গায় ফিরে এসেছে বরগু। জজ্ঞাল সাফ করে, কুকুরদুটোকে সঙ্গে নিয়ে। কিটুও। ভালো আছে। আসছে সেপ্টেম্বরেই তাকে ইস্কুলে ভর্তি করে দেয়া হবে।

এবং স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে তার মা, মৃদু হাসলেন পরিচালক। কোথায়। গেল, কোথায় গেল, ভেবে আর সারাক্ষণ তটস্থ থাকতে হবে না।

না, হবে না, একমত হলো তিন গোয়েন্দা।

এবার তোমাদের জন্যে আইসক্রীম দিতে বলি, কি বলো? মুহূর্ত দ্বিধা না করে একমত হলো মুসা। দুই কানের গোড়ায় গিয়ে ঠেকেছে তার হাসি।

Super User