১৬.

নীরব টাওয়ারের দিকে তাকিয়ে রয়েছে দুজনে। জানালা থেকে অদৃশ্য হয়েছে। বেগুনী জলদস্যুর মুখ। রোদ চমকাচ্ছে কাঁচের পাল্লায়।

নিশ্চয় ওদেরকে ধরে ফেলেছে! জোরে কথা ভিকটরও বলছে না।

বাঁচাতে হবে ওদের! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।

আস্তে, আস্তে কথা বলো! বোকামি করে বিপদ বাড়াবে…

মুসা! লোকটা কি চলে গেছে? আচমকা ওয়াকি-টকিতে ভেসে এলো যেন বিদেহী কারো কণ্ঠস্বর, মুসার সে-রকমই মনে হলো। ওকে দেখেছো?

কিশোর! কোথায় তুমি?

টাওয়ারের ওপরে। কেন, দেখতে পাচ্ছো না?

ওপর দিকে তাকিয়ে রয়েছে মুসা আর ভিকটর। অবাক। কাউকে দেখতে পাচ্ছে না।

কই, কোথায়? জিজ্ঞেস করলো মুসা।

হাসলো কিশোর। আরও ওপরে, মুসা। জানালার ওপরে।

এই বার দেখতে পেলো মুসা। রবিন আর কিশোর দুজনেই হাসছে। জানালার ওপরে বেরিয়ে থাকা কার্নিশে উঠে গেছে ওরা।

উঠলে কি করে ওখানে!

ভয় পেয়ে কতো কিছুই তো করে বসে মানুষ, কিশোর জবাব দিলো। কথা সেটা না। ওঠার সময় তো উঠেছি, এখন নামি কি করে?

মাটি থেকে চারতলা ওপরে, ছাতের কাছাকাছি উঠে আছে কিশোর আর রবিন। ওখান থেকে পড়লে—নিজের অজান্তেই একটা গোঙানি বেরিয়ে এলো মুসার মুখ থেকে।

মুসা, রবিনের কণ্ঠ, তোমার সঙ্গে আরেকজন কে?

মিস্টার ভিকটর ইভানস। তিনি ভালো মানুষ, ভয়ের কিছু নেই।

ওয়াকি-টকিতে জানালো ভিকটর, তোমরা কি করছো, সব বলেছে আমাকে মুসা। অবশ্যই আমি সাহায্য করবো তোমাদেরকে। লোকটা কি চলে গেছে?

তিনতলায় নামতে তো শুনলাম, রবিন বললো। একেবারে নিচে নামলো। কিনা বুঝতে পারছি না।

ঠিক আছে, দেখছি আমরা। তোমরা যেভাবে আছো, থাকো।

সাবধানে টাওয়ারের সামনের দরজার দিকে এগোলো ভিকটর আর মুসা। কোনো শব্দ নেই। পেছনের দরজাটা তেমনি ছিটকানি লাগানো রয়েছে। সামনের দরজা দিয়ে লোকটা বেরোলে ওদের চোখে পড়তোই। সেলার, দোতলা আর তিনতলায় খুঁজে দেখা হলো। নেই লোকটা। ওপর তলায় উঠে এসে দেখলো, পেছনের একটা জানালা বেয়ে সবে নেমেছে কিশোর আর রবিন। মুসাকে দেখে হাসলো।

উঠলে কি করে ওখানে? জিজ্ঞেস করলো ভিকটর।

আসুন, দেখাচ্ছি, ডেকে একটা জানালার কাছে তাকে নিয়ে গেল রবিন। জানালার বাইরেটা দেখিয়ে বললো, ওগুলো বেয়ে।

মুসা আর ভিকটর, দুজনেই গলা বাড়িয়ে দিলো। দেয়ালের গায়ে জানালার লাগোয়া কতগুলো পাথর এমনভাবে বের করা, মইয়ের মতো ওগুলো বেয়ে উঠে যাওয়া যায়।

 নিশ্চয় ছাতে যাওয়ার পথ ওটা, কিশোর বললো। আপনার পূর্বপুরুষরা বানিয়ে রেখে গেছেন, ইচ্ছে করেই। যাতে সময়ে কাজে লাগে।

হুঁ, মাথা দোলালো ভিকটর, তোমাদের যেমন লাগলো।

যদি পড়ে যেতে! অনেক নিচে মাটির দিকে তাকিয়ে এখনও ভয় পাচ্ছে। মুসা।

তখন কি আর অতো কথা মনে ছিলো, রবিন বললো। লোকটা উঠে আসছে। লুকানোর কোনো পথ দেখছি না। খুঁজতে খুঁজতে কিশোরের চোখে। পড়লো প্রথমে ওই মই। আর কি, উঠে গেলাম। ওই সময় তুমি হলেও পারতে।

তা ঠিক।

জানালার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে কিশোর। খাড়ির দিকে চোখ। রওনা হয়ে। গেছে ব্ল্যাক ভালচার। প্রথম শো, কিন্তু শুরু হয়েছে অনেক দেরিতে। অন্য দিনের চেয়ে আজ যাত্রী বেশি, তার কারণ বোধহয় দুটো শো-এর লোক একবারে উঠেছে। জেসন এসেছে। পিটার আর সে জলদস্যু সেজে আক্রমণের পাঁয়তারা করছে।

হঠাৎ ফিরে তাকালো সে। কাউকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিলে?

শুধু বেড়ালটাকে, মুসা জানালো।

সেজন্যেই আমাদের বেগুনী সাহেব ভেবেছেন, সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছি আমরা। বেরোতে দেখেনি তো, তাই। ভেবেছে, ভয়ে লেজ তুলে পালিয়েছি আমরা। এবং তাতেই সে খুশি।

শুধু কি আমাদের তাড়িয়েই সে খুশি? রবিনের প্রশ্ন।

তাছাড়া আর কি? মারতে নিশ্চয় চায়নি।

 লোকটা কে, চিনেছো? জিজ্ঞেস করলো ভিকটর।

না, স্যার। মেজর নিরেক নয়। রিগোও নয়। গায়ে-গতরে আপনার সমান, কিন্তু আপনি তো ছিলেন মুসার সঙ্গে। তারমানে আপনিও নন। এটি

ভাগ্য ভালো, ছিলাম, হাসলো ভিকটর। নইলে আমাকেই সন্দেহ করে বসতে।

তা করতাম।

শুধু কি তোমাদের তাড়াতেই এসেছিলো সে?

মনে হয়, এসেছিলো অন্য উদ্দেশ্যে। আমাদের দেখে তাড়া করেছে আরকি। আমার ধারণা, কিছু লুকানো রয়েছে টাওয়ারে, সেটা খুঁজতেই এসেছিলো।

কি লুকানো আছে, কিশোর? রবিনের জিজ্ঞাসা। মাটি খুঁড়ে গুপ্তধন খোঁজার কথা বলছিলে…

কি জিনিস, জানি না, বাধা দিয়ে বললো কিশোর। তবে এখন মনে হচ্ছে, যা-ই থাকুক, মাটির তলায় নয় সেটা। লুকানো রয়েছে অন্য কোথাও।

তাহলে মাটি খুঁড়লো কেন? মুসার প্রশ্ন।

সেলারে গেলেই বোধহয় তার জবাব মিলবে। চলো, দেখিগে।

.

১৭.

বদ্ধ জায়গায় কাঠের সিঁড়িতে ওদের পায়ের শব্দ বড় বেশি হয়ে কানে বাজলো।

নথি, কিশোর বললো, লোকটার আসার শব্দ আমরা কখন পেয়েছি মনে আছে?,

নিশ্চয়ই। তখন স্টোররুমে ছিলাম। ঠিক পেছনেই গর্জে উঠলো লোকটা। মুখ ফিরিয়েই দেখি, প্রায় গায়ের ওপর এসে পড়েছে।

ঠিক। তাহলে প্রথম আমরা শুনলাম গর্জন, স্টোররুমে, আমাদের পেছনে। এই যে এখন আমরা নামছি, কতো জোরে শব্দ হচ্ছে। অথচ লোকটার পায়ের। আওয়াজ কেন শুনতে পেলাম না?

হয়তো পা টিপে টিপে এসেছিলো।

অসম্ভব। ধাপগুলো নড়বড়ে, একটা চাপ লাগলেই কাঁচকাঁচ করে ওঠে। আরেকটা প্রশ্ন। মুসা, লোকটা যে ঢুকলো টাওয়ারে, কেন আমাদের হুঁশিয়ার করলে না?

দেখিইনি, সাবধান করবো কি?

ঠিক, আবার বললো কিশোর। তাহলে তুমি কাউকে টাওয়ারে ঢুকতে দেখোনি। আমি আর রবিন তার আসার শব্দ শুনিনি। রান্নাঘরের দরজা ভেতর থেকে ছিটকানি লাগানো।

তাতে কি? জিজ্ঞেস করলো মুসা।

তাতে? লোকটা রান্নাঘর থেকে সিঁড়ি বেয়ে সেলারে নামেনি। টাওয়ারের সামনে-পেছনের কোনো দরজা দিয়ে ভেতরে ঢোকেনি।

কিন্তু সেলারে ঢোকার তো আর কোনো পথও নেই, রবিন বললো।

থাকতে বাধ্য, দৃঢ়কণ্ঠে যেন ঘোষণা করলো কিশোর। অন্তত এখন। ছিলো না বলেই মাটি খুঁড়তে হয়েছে মেজরের চেলাদেরকে।

সুড়ঙ্গ কেটে ঢুকেছে! প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো রবিন।

না, সম্ভবত কাটেনি, পরিষ্কার করেছে, শুধরে দিলো কিশোর। অনেক বছর। আগে দুর্গ থেকে বার বার পালিয়েছে বেগুনী জলদস্যু, মনে নেই? কেউ টাওয়ার থেকে তাকে বেরোতে দেখেনি, নিশ্চয় গোপন কোনো পথে পালিয়েছে। এবং সেটা সুড়ঙ্গ ছাড়া আর কিছু না।

এতোক্ষণে মুখ খুললো ভিকটর, কিশোর ঠিকই বলেছে। পুরনো একটা সুড়ঙ্গ আছে টাওয়ার থেকে বেরোনোর। অনেক আগেই ধসে পড়েছিলো, হয়তো নতুন করে খুঁড়ে নেয়া হয়েছে। আমি শুনেছি, আছে, কিন্তু ঠিক কোথায়, জানি না।

খুঁজে বের করে ফেলা যাক, চঞ্চল হয়ে উঠলো মুসা। তাহলেই জেনে যাবো।

সেলারের ভেতরে ছড়িয়ে পড়ে খুঁজতে আরম্ভ করলো চারজনে। স্টোররুমে পাইপ আর শিক পাওয়া গেল। ওগুলো দিয়ে দেয়ালে, মেঝেতে বাড়ি মেরে আর খুঁচিয়ে দেখতে লাগলো ওরা। আলগা পাথর কিংবা যা-ই পড়ে থাকতে দেখছে, সরিয়ে ফেলছে।

মেঝেতে পায়ের ছাপ খোজো, পরামর্শ দিলো কিশোর।

কিন্তু মেঝের মাটি এতো শক্ত, পায়ের ছাপ পড়েই না।

এই যে! হঠাৎ চিৎকার করে উঠলো ভিকটর।

হুড়াহুড়ি করে এলো ছেলেরা। শিক দিয়ে বাড়ি মারলো আবার সে। ফাপা। আওয়াজ বেরোলো দেয়ালের গা থেকে। কিছু পাথর পড়ে আছে জায়গাটার নিচে। সেলারের ম্লান আলোয় পরীক্ষা করে দেখলো কিশোর। কিন্তু দেয়ালে কোনো দরজা কিংবা আলগা পাথর বসানো দেখলো না।

সুড়ঙ্গটা গোপন রাখা হয়েছে, বললো সে, তারমানে মুখটাও গোপন। দরজা-টরজা যদি থাকে, এপাশ থেকে খোলার ব্যবস্থা থাকবে। এবং সেটা খুব : দ্রুত আর সহজে খুলবে, নইলে বেরোতে পারতো না বেগুনী জলদস্যু। রান্নাঘর থেকে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে দ্রুত খুলেছে। সিঁড়িটার কাছে দেখা দরকার।

সিঁড়ির প্রতিটি ধাপ, ওপর-নিচের জায়গা ভালো করে দেখা হলো। জিনিসটা প্রথমে চোখে পড়লো মুসার। অর্ধেক সিঁড়ি নিচে একটা ধাপের তলায় ছোট একটা লোহার আঙটা। ওটা ধরে টান দিতেই দেয়ালের গা থেকে খুলে এলো একটা চ্যাপ্টা পাথর। তার পেছনে দেখা গেল একটা লোহার লিভার, ভালোমতো তেল দেয়া। চাপ দিলো সে। নিঃশব্দে ফাঁক হয়ে গেল সিঁড়ির কাছে দেয়ালের একাংশ।

বাহ, চমৎকার, কিছুটা বিরক্ত হয়েই বললো ভিকটর। এখানে একেবারে। আমার নাকের ডগায় আলি-বাবার সিসেম ফাঁক রয়েছে, আর আমি গর্দভ কিছু জানি না!

স্টোররুম থেকে একটা টর্চ নিয়ে এলো সে। আগে আগে ঢুকে পড়লো। সুড়ঙ্গে। পেছনে চললো তিন গোয়েন্দা। যেমন সরু দেয়াল, তেমনি নিচু ছাত। ওদের মধ্যে মুসাই সব চেয়ে লম্বা, সে কোনোমতে সোজা হতে পারে। দুজন মানুষ। পাশাপাশি চলতে পারে না, শুধু একজনের জায়গা হয়। সুড়ঙ্গমুখের সামান্য ভেতরেই আরেকটা লিভার।

ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করার জন্যে নিশ্চয়, কিশোর বললো।

সুড়ঙ্গর ছাত আর দেয়াল পাথরের, তবে পায়ের তলায় মাটি। সর্বত্র ছড়িয়ে। রয়েছে দেয়াল আর ছাত থেকে খসে পড়া পাথর। মিটার বিশেক পরেই ধসে পড়েছে সুড়ঙ্গটা।

বাবার কাছে শুনেছি, ভিকটর বললো, আমার জন্মের আগেই নাকি ভেঙেছে। ওটা। ভূমিকম্পে।

তবে ধসে পড়লেও এখন আর বন্ধ নয়, পথ করা হয়েছে। মোটা একজন। মানুষও ওই ফোকর গলে হামাগুড়ি দিয়ে যেতে পারে। মাটি আর পাথর সরিয়ে পথটা করা হয়েছে। তাতে ঢুকে পড়লো চারজনেই, একজনের পেছনে একজন। হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এলো অন্যপাশে। তারপর আবার উঠে দাঁড়ালো। পায়ের বেহলায় পাথরের ছড়াছড়ি। আরও মিটার বিশেক পরে শেষ হলো সুড়ঙ্গ। চারটে ভারি তক্তার ওপর লোহার দণ্ড আড়াআড়ি লাগিয়ে পাল্লামতো তৈরি করা হয়েছে। কজা লাগানো রয়েছে। ঠেলা দিতেই ঝটকা দিয়ে নেমে গেল পাল্লাটা। পুরোটা নামলো না, ঝুলে থাকলো মাঝপথে, দুপাশের দুটো শেকলের ওপর। হেঁটে ওটার ওপর উঠে এলো ওরা। নিচে দেখা যাচ্ছে কালো পানি। সামনে কাঠের দেয়াল, কাঠের ছাত।

বোটহাউসে ঢুকেছি আমরা! চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর। পিয়ারের নিচে!

ঠিকই বলেছো! ঘাড় নাড়লো ভিকটর।

ওপাশে যেতে হলে সাঁতরাতে হবে, রবিন আন্দাজ করলো।

না-ও লাগতে পারে, বললো মুসা। পিয়ারের নিচে রাতের বেলা পানিতে নামার কথা মনে পড়েছে তার। হয়তো খুব কম। তাহলে হেঁটেই যাওয়া যাবে।

মুসার কথাই ঠিক। নিচে পানি খুব কম। পাল্লাটা আবার আগের মতো করে সুড়ঙ্গের মুখে লাগিয়ে দুপাশের ফাঁকে দুটো কাঠের গোঁজ লাগিয়ে দেয়া হলো। লাগানো ছিলো ওভাবেই।

পানি মাড়িয়ে হেঁটে এসে পিয়ারের ওপর উঠলো ওরা। আলো বেশি নেই। একমাত্র ছোট জানালাটা আর তক্তার ফাঁক দিয়ে যা আলো আসছে। তাতে এতোবড় বোটহাউসের অন্ধকার কাটছে না।

দরজা দিয়ে বেরিয়ে পেছনে ফিরে তাকালো কিশোর। চিন্তিত ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, জানা না থাকলে বোটহাউসে ঢুকে ওই সুড়ঙ্গ খুঁজে বের করা কঠিন। বোঝাই যায় না। মেজর নিরেকের নিশ্চয় জানা ছিলো।

দোকানে একটা নকশা দেখছিলো, মনে আছে? রবিন বললো। মনে হয় ওটাতেই রয়েছে সুড়ঙ্গের নির্দেশ।

হতে পারে, একমত হলো কিশোর।

বনের ভেতর দিয়ে জেটিতে চলে এলো ওরা। প্রথম অভিযান শেষ করে ফিরে এসেছে ব্ল্যাক ভালচার। যাত্রীরা নেমে গেছে, তবে ক্যাপ্টেন ফিলিপ, পিটার আর জেসন এখনও রয়েছে ডেকে। তিন গোয়েন্দার সঙ্গে ভিকটরকে দেখে ভয় পেয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন। বলে উঠলেন, এই, তোমাদেরকে না বলেছিলাম…

হেসে অভয় দিলো ভিকটর, হয়েছে হয়েছে, ধমকাতে হবে না। ওরা কি করছে, জানি আমি। এখন আমিও চাই রহস্যটার সমাধান হোক। কি যেন নাম বললে? মেজর… মেজর…

মেজর নিরেক, ধরিয়ে দিলো কিশোর। ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করলো, শো কখন শুরু করেছিলেন, স্যার?

পঁয়তাল্লিশ মিনিট আগে। মোনতা জেসনের দিকে তাকালেন ক্যাপ্টেন। দূরে তাকিয়ে রয়েছে লোকটা। দেরিটা হলো ওর জন্যে। ওকে বাদ দিয়েই শুরু করে দিয়েছিলাম আমরা। তবে শেষ মুহূর্তে এসে হাজির হলো, আমরা তখন প্রথম দ্বীপটার কাছে চলে গেছি।

খবরটা আর চেপে রাখতে পারলো না মুসা। কোথায় খোঁড়া হয়েছে, দেখে। ফেলেছি, স্যার আপনাকে আর পিটারকে কেন সরিয়ে রাখতে চেয়েছে, তা-ও বোঝা গেছে। বোটহাউস থেকে টাওয়ারে ঢোকার একটা সুড়ঙ্গ আছে। ওটার। ভেতরেই খুঁড়েছে ওরা, মাটি আর পাথর পরিষ্কার করেছে।

টাওয়ারে ঢোকার পর থেকে কি কি ঘটেছে খুলে বললো ছেলেরা।

জেসনের দিকে তাকালো কিশোর। আপনার এতো দেরি হলো যে আজ?

গাড়িটা ট্রাবল দিচ্ছিলো, বলেই মুখ কালো করে কিশোরের মুখোমুখি হলো নোনতা জেসন। তাতে তোমার কি?

তার কথার জবাব না দিয়ে ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর, বেগুনী জলদস্যুর পোশাকটা কোথায় রাখেন, স্যার?

দ্বীপে। একটা ছাউনিতে। কাজের সময় হাতের কাছে পেয়ে যায় ওরা।

তালা দেয়া থাকে?

নাহ।

তারমানে যে খুশি গিয়ে পরতে পারে?

পারে।

নিরাশ মনে হলো কিশোরকে। পরক্ষণেই উজ্জ্বল হলো আবার চেহারা। যা-ই। হোক, এখন আমরা জানি, কোথায় খুঁড়ছেন মেজর। কি খুঁজছেন জানি না। টাওয়ারে হয়তো লুকানো আছে কিছু। সুড়ঙ্গেও থাকতে পারে। মিস্টার ইভানস, আপনি কিছু জানেন?

শ্রাগ করলো ভিকটর। মুখ বাঁকালো। মাথা নেড়ে বললো, না।

আপনি? ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

বেগুনী জলদস্যুর রেখে যাওয়া কোনো জিনিস হয়তো খুঁজছে। লোকে তো ঘাঁটাঘাঁটি কম করেনি একশো বছর আগে। উপদ্বীপের কোথাও খোঁজা বাদ রাখেনি।

তার রেখে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। পরে অবশ্য অনেক চোর-ডাকাত আস্তানা গেড়েছিলো এখানে। তারাও রেখে যেতে পারে কিছু।

রবিন বললো, যা-ই রেখে যাক, এখনও নিশ্চয় আছে। কারণ খোঁজাখুঁজি চলছেই।

হ্যাঁ, কিশোর বললো, কাল রাতেও এসেছিলেন মেজর। মুসা, দেখগে তো পাহারা এখনও চলছে কিনা?

মাথা ঝাঁকিয়ে দ্রুতপায়ে গেটের দিকে রওনা হয়ে গেল গোয়েন্দা সহকারী। ভুরু কুঁচকে সেদিকে তাকালো ভিকটর। পাহারা? কিসের পাহারা?

পাহারা দেয়ার লোক রেখে গেছেন মেজর নিরেক, জানালো রবিন। দিন রাত পাহারা দেয় বেগুনী জলদস্যুর আড়া। কখনও একজন, কখনও দুজন, থাকেই। চোখ রাখে।

চোয়াল ডললো ভিকটর। সারাক্ষণই?

এই আরেকটা ব্যাপার, জবাব দিলো কিশোর, আমাকে অবাক করেছে। মেজরের যেন ভয়, এখান থেকে লুকানো জিনিস নিয়ে বেরিয়ে যাবে কেউ। হতে পারে, অন্য কেউও ওই জিনিসের পেছনে লেগেছে। ভয়টা হয়তো সেকারণেই পাচ্ছেন।

বেগুনী জলদস্যুর পোশাক পরা লোকটা না তো? রবিন বললো।

ফিরে এলো মুসা। আইসক্রীম ভ্যানটা আছে।

আজ রাতে আবার গল্প শোনাতে যাবেন, স্যার? ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

নিশ্চয় যাবো, বাবার হয়ে আগ বাড়িয়ে জবাবটা দিলো পিটার।

তাহলে, বেশ জোর দিয়ে বললো কিশোর, আজ রাতে আবার আসতে হবে আমাদের। সারাটা রাতই জেগে থাকতে হতে পারে। বাড়ি গিয়ে এখন কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেয়া দরকার।

ভিকটর আর জেসনের দিকে তাকালো সে। আপনাদেরকে একটা অনুরোধ করবো। আজ রাতে আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে আপনাদের। মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে পরিস্থিতি। তখন সাহায্য লাগবে। একা হয়তো কুলিয়ে উঠতে পারবো না আমরা।

.

১৮.

 আবার বেগুনী জলদস্যুর আড্ডায় এসে ঢুকলো তিন গোয়েন্দা। টর্চ আর ওয়াকি টকি নিয়ে এসেছে। ওরা এসে দেখলো, শেষ শো-এর দর্শকরা বেরিয়ে যাচ্ছে।

ঘন্টাখানেক পর নোনতা জেসন এসে ঢুকলো ট্রেলারে।

নির্দিষ্ট সময়ে গল্প রেকর্ড করার জন্যে ছেলেকে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন ক্যাপ্টেন ফিলিপ।

সময় হয়েছে, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর।

 ট্রেলার থেকে বেরিয়ে ছায়ায় ছায়ায় এগোলো ওরা। কালো কাপড় পরে। এসেছে, প্রহরীর চোখে পড়বে না সহজে।

বোটহাউসে এসে ঢুকলো চারজনে, তিন গোয়েন্দা আর নোনতা জেসন। মই বেয়ে পাল রাখার তাকে উঠে পড়লো রবিন, মুসা আর জেসন। কিশোর নেমে পড়লো পিয়ারের নিচের পানিতে। সুড়ঙ্গমুখের তক্তা সরিয়ে ভেতরে ঢুকলো। দ্রুত চলে এলো শেষ মাথায়। লিভার চেপে গোপন দরজা খুলে ঢুকলো টাওয়ারের সেলারে। ওখানে তার জন্যে অপেক্ষা করছে ভিকটর ইভানস।

তাকের ওপরে ঘাপটি মেরে রয়েছে মুসা, রবিন আর জেসন। জুনের ঠাণ্ডা রাত। বাইরের রাস্তায় গাড়ি চলাচলের শব্দ হচ্ছে। গাঁয়ের ভেতরে একটা কুকুর। ডাকলো। পানির কিনারে দূরে কে যেন গান গাইছে চড়া বেসুরো গলায়। একটা বিমান উড়লো। একটা ভ্যানের দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ হলো। শব্দটা এলো। গেটের কাছ থেকে।

খানিক পরে শোনা গেল এঞ্জিনের চাপা গুঞ্জন। স্নায়ু টানটান হয়ে গেল রবিন। আর মুসার। দম বন্ধ করে ফেললো ওরা। বোটহাউসের বাইরে থামলো গাড়িটা। দরজা খুলে দেয়া হলো, বোটহাউসের ভেতরে ঢুকে পড়লো ওটা। ওপরে নিথর হয়ে আছে তিনজনে। ওয়াকি-টকি নাকের কাছে এনে জোরে জোরে তিনবার। নিঃশ্বাস ফেললো রবিন। কিশোরের জন্যে মেসেজ।

জবাবে তিনবার টোকার শব্দ হলো। নিজের ওয়াকি-টকির গায়ে টোকা দিয়েছে কিশোর।

দরজা খুলে ভ্যান থেকে নামলেন মেজর নিরেক আর রিগো। টর্চ জ্বেলে নেমে পড়লেন পানিতে। হেঁটে চললেন সুড়ঙ্গের দিকে।

হঠাৎ দড়াম করে গড়িয়ে পড়লো একটা মাস্তুল। এতো জোরে চমকে উঠলো। মুসা আর রবিন, মনে হলো ওদের কানের কাছে বোমা ফেটেছে। মুখ খিস্তি করে গাল দিয়ে উঠলো জেসন। বোধহয় সরতে গিয়েছিলো, নাড়া লেগে পড়ে গেছে মাস্তুলটা।

দরজার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে টনি, তার টর্চের আলো এসে পড়লো সোজা রবিন আর মুসার ওপর। মেজর আর রিগোর টর্চও ঘুরে গেল এদিকে। একমুহূর্ত থেমে দাঁড়িয়ে দেখলো দুজনে চুপচাপ। তারপর আবার এসে উঠলো পিয়ারে।

নামো! টর্চের আলো নাচিয়ে আদেশ দিলো টনি।

নেমে এলো মুসা আর রবিন।

এই, কোথায় যেন দেখেছি তোমাদের? মেজর বললেন। হ্যাঁ, মনে পড়েছে। তোমরাই সেদিন আমাকে বাঁচিয়েছিলে। গল্প শোনাতে এসেছিলে। এখানে কি করছো? আরেকটা ছেলে কই? তিনজন এসেছিলে, মনে আছে।

আ-আ-আমরা… তোতলাতে লাগলো রবিন।

ওপরে আর কেউ আছে কিনা দেখার জন্যে উঠে গিয়েছিলো রিগো, চেঁচিয়ে বললো, আর কেউ নেই, বস।

অবাক হলো তিন গোয়েন্দা। জেসন গেল কোথায়?

গাধা কোথাকার! ধমক দিয়ে বললেন মেজর, ভালো করে দেখো। নিশ্চয়। আছে আরেকজন। মুসা আর রবিনের দিকে ফিরে বললেন, এবার বলো, এখানে কি করছো।

এমনি, জবাব দিলো রবিন। শো দেখতে এসেছিলাম। বোটহাউসটা চোখে পড়লো। কৌতূহল হওয়ায় দেখতে এসেছিলাম। ওই তাকে উঠেছি দেখার জন্যে। টায়ার্ড লাগছিলো। বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি।

ঠিক, তাড়াতাড়ি বললো মুসা, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।

 মই বেয়ে নেমে আসছে রিগো। শেষ কয়েকটা ধাপ নামার আগেই হাত পিছলালো। পুরো বোটহাউসটা কাঁপিয়ে দিয়ে ধুড়ুম করে পড়লো হাত-পা ছড়িয়ে ধাক্কা লেগে চিত হয়ে পড়ে গেল মুসা।

এতোবড় অপদার্থ জীবনে দেখিনি! রাগে চেঁচিয়ে উঠলেন মেজর।

হাস্যকর ভঙ্গিতে উঠে বসলো রিগো। ঘাড় ফিরিয়ে মুসার দিকে তাকালো। সে এখনও উঠতে পারেনি। তাকে টেনে তুলে মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো দীর্ঘ একটা মুহূর্ত। তারপর চিৎকার করে বললো, বঅস, চিনেছি! বলেছিলাম না কাল। রাতে চোখ রেখেছিলো? এই ছেলেটাই!

তাই নাকি? চিন্তিত মনে হলো মেজরকে। পকেট-টকেট ঘেঁটে দেখো কি আছে?

বেরোলে তিন গোয়েন্দার কার্ড, টর্চ আর ওয়াকি-টকি। টনি বের করলো বেগুনী জলদস্যু ওগুলো।

কার্ডটা পড়লেন মেজর। গোয়েন্দা! হুমম! এ-জন্যেই আমাদের পেছনে লেগেছো। তোমাদের আরেক সঙ্গী কাছাকাছিই আছে, তোমাদের মেসেজের অপেক্ষায়। একটা ওয়াকি-টকি তুলে নিলো সে। মুখের কাছে এনে কিশোরের উদ্দেশ্যে বললো, যেখানেই থাকো, মন দিয়ে শোনো। তোমার দুই দোস্তকে ধরেছি। কোনো চালাকির চেষ্টা করবে না। আমাদের কাজে বিঘ্ন ঘটাবে না। তাহলে তোমার বন্ধুরা মরবে, বিশ্বাস করো কথাটা-মরবে।

.

১৯.

 লিভিং রুমে বসে ওয়াকি-টকিতে বোটহাউসের সমস্ত কথাই শুনলো কিশোর আর ভিকটর। পরিষ্কার দেখতে পেলো যেন দৃশ্যটা।

ওয়াকি-টকির সুইচ অফ করে দিয়ে কিশোর বললো, ধরে ফেললো!

শান্ত হও, ভিকটর বললো।

 কিছু একটা করা দরকার।

 কি করবো? হয়তো…

ঘন ঘন করাঘাতের শব্দ হলো সামনের দরজায়। একটানে পকেট থেকে পিস্তল বের করে সেদিকে এগোলো ভিকটর। হ্যাঁচকা টান দিয়ে খুলে ফেললো পাল্লা।

জেসন দাঁড়িয়ে রয়েছে। পা ভেজা। দ্রুত এসে ঘরে ঢুকলো সে। একবার কাঁধের ওপর দিয়ে ফিরে তাকিয়ে বন্ধ করে দিলো দরজাটা। বললো, মেজরের লোকেরা ধরে ফেলেছে ছেলেদুটোকে!

জানি। তুমি পালিয়ে এলে কি করে?

জানালার কাছে বসেছিলাম। তাক থেকে ওটা গলে বেরিয়ে পড়েছি, ব্যাটাদের চোখ এড়িয়ে। পানি ভেঙে পাড়ে উঠেছি।

কপাল ভালো তোমার। যাক, তুমি আসায় ভালোই হলো। একটা উপায় বোধহয় করতে পারবো।

কি করতে চাইছেন, স্যার? কিশোর জিজ্ঞেস করলো।

চলো, জলদি সেলারে চলো!

তাড়াহুড়ো করে সেলারে নেমে এলো ওরা। সিঁড়ির আড়ালে জেসনকে লুকিয়ে থাকতে বললো-ভিকটর।

আপনার প্ল্যানটা কি? জানতে চাইলো জেসন।

হ্যাঁ, কি করতে চান? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

একটা কথা বলা দরকার, ভিকটর বললো। স্বীকারই করে ফেলি। আমি…

গুপ্তধন পেয়ে গেছেন! চেঁচিয়ে উঠলো কিশোর।পাইরেটস কোভে এসেছেনই আপনি সেজন্যে! জানেন, আছে!

হ্যাঁ, কিশোর, জানতাম। ঠিকই বুঝেছো। সাতদিন আগেই বের করে ফেলেছি আমি।

তার মানে টাওয়ারেই ছিলো?

 মাথা ঝাঁকালো ভিকটর। ছিলো। এই স্টোররুমেই। পুরনো একটা চীনা আলমারিতে। অনেক আগে বাবার মুখে শুনেছিলাম গল্পটা। বেগুনী জলদস্যু লুকিয়ে রেখে গিয়েছিলো। এতোদিন নানা কাজে ব্যস্ত ছিলাম বিদেশে, এশিয়ায়। ওখান থেকে ফিরেই চলে এসেছি টাওয়ারে। অনেক খোঁজাখুঁজির পর গত হপ্তায় পেয়েছি ওগুলো।

তাহলে কাউকে বললেন না কেন?

সত্যি বলতে কি, আমি এখনও জানি না, আইনত ওগুলো কার প্রাপ্য। যতোদিন সেটা না জানবো, গোপনই রাখতে চাই খবরটা।

এতোদিন পর যার হাতে পড়বে তারই হওয়ার কথা। আর আপনার তো বিশেষ অধিকার রয়েছে। জিনিসগুলো আপনার পূর্বপুরুষের।

চোর-ডাকাত যারই হাতে পড়বে, তার? জেসনের প্রশ্ন।

জানি না, ভিকটর বললো। সেজন্যেই আর কারও হাতে পড়তে দিতে চাই না। অন্তত মেজরের হাতে তো নয়ই।

এখুন প্ল্যানটা কি বলে ফেলুন, তাড়া দিলো কিশোর। সময় বেশি নেই।

সেলারেই ঢুকবে মেজর, কোনো সন্দেহ নেই। খালি হাতে নিশ্চয় আসেনি, পিস্তল-টিল থাকবে। এখানে এসে তোমাকে দেখলে অবাক হবে না। কিন্তু জেসন আছে, কল্পনাই করবে না। সেজন্যেই ওকে সিঁড়ির আড়ালে লুকাতে বলছি। মেজরকে বলবো আমি গুপ্তধন খুঁজে পেয়েছি। সেগুলো বের করে দিতে বাধ্য করবে আমাকে সে। দেখাতে নিয়ে যাবো। ওই সময়টায় তোমার কথাও হয়তো ভুলে যাবে সে। ওই সুযোগে তুমি বেরিয়ে যাবে স্টোররুম থেকে। বাইরে, থেকে তুমি আর জেসন মিলে দরজাটা লাগিয়ে দেবে। আর তুমি যদি বেরোতে না। পারো, জেসন একাই লাগাবে।

কিন্তু আপনি তো ওদের সঙ্গে ভেতরে আটকা পড়বেন।

আমার কাছে পিস্তল আছে। স্টোররুম থেকে বিরাট একটা পুরনো তালা এনে। জেসনের হাতে দিলো ভিকটর। একেবারে তালা লাগিয়ে দেবে। আমার জন্যে ভেবো না। ওদেরকে ঠিকই আটক করতে পারবো আমি। আটকে রাখবো। তোমরা তখন গিয়ে মুসা আর রবিনকে মুক্ত করবে। ওরা গিয়ে পুলিস নিয়ে। আসবে।

ওই যে, আসছে, ফিসফিস করে বললো জেসন।

 যাও, সিঁড়ির নিচে লুকাও গিয়ে। কিশোর, তুমি আমার পেছনে থাকো।

ঘরের ঠিক মাঝখানে এসে দাঁড়ালো ভিকটর। খুলতে আরম্ভ করেছে সুড়ঙ্গের দরজা। বেগুনী জলদস্যু

পিস্তল হাতে ঘরে ঢুকলেন মেজর আর টনি। ভিকটর আর কিশোরকে দেখেছেন।

তিন নম্বর গোয়েন্দা তাহলে এখানে, মেজর বললেন। গুড। মিস্টার ইভানসও আছেন। আগেই আন্দাজ করা উচিত ছিলো আমার। যাকগে, খারাপ। হয়নি। মিস্টার ইভানস, কোনো চালাকি চাই না। মালগুলো আপনি পেয়ে গেছেন। জানি। নইলে আমি পেতাম। বলুন, কোথায় সরিয়েছেন?

শ্রাগ করলেন ভিকটর। যেন হাল ছেড়ে দিয়েছেন, এমন ভঙ্গিতে বললেন, ঠিক আছে, কি আর করা! ছেলেগুলোর ক্ষতি হোক, এটা চাই না। স্টোররুমে পেছনের দেয়ালের কাছে একটা আলমারি আছে, তার মধ্যে।

উত্তেজনায় হুঁশ হারিয়ে ফেললো টনি। সোজা দৌড় দিলো আলমারির দিকে। বলতে না বলতেই যে এতো সহজে রাজি হয়ে গেছে ভিকটর, কেন হলো, ভাবলো না একবারও। পিস্তল ঢুকিয়ে ফেলেছে হোলস্টারে।

কিন্তু মেজরের মাথা এতোটা ফাঁকা নয়। টনি! বলে চিৎকার করে উঠলেন। তিনি। মাঝপথে থমকে দাঁড়ালো টনি। ভিকটরের দিকে পিস্তল নাচালেন তিনি। আপনি আগে যান, মিস্টার ইভানস। হাঁটুন।

ঘুরে দাঁড়ালো ভিকটর। ঠিক পেছনেই রইলো টুনি আর মেজর। একবারের জন্যেও তার চওড়া কাঁধ থেকে চোখ সরালেন না মেজর। কিশোরের দিকে নজরই নেই দুজনের কারো।

নিঃশব্দে বেরিয়ে চলে এলো কিশোর। সিঁড়ির আড়াল থেকে বেরোলো জেসন। দুজনে মিলে, ঠেলে বন্ধ করে দিলো ভারি পাল্লাটা। তালা লাগিয়ে দিলো।

দরজা যে বন্ধ হয়ে গেছে, সেটা বুঝতেও দেরি করে ফেললেন মেজর। তারপর শুরু হলো ভেতরে চেঁচামেচি, হট্টগোল। দরজায় জোর ধাক্কা পড়লো।

তার পর শোনা গেল ভিকট্টর ইভানসের কঠোর কণ্ঠ, খবরদার! পিস্তল ফেলো! নইলে খুলি ছাতু করে দেবো!

চলুন! জেসনকে বলেই আর দাঁড়ালো না কিশোর। সিঁড়ির দিকে ছুটলো।

.

২০.

ভ্যানের ভেতরে পড়ে রয়েছে রবিন আর মুসা। হাত-পা বাঁধা। ওদেরকে পাহারা। দিচ্ছে রিগো। সে নিজেই অস্বস্তিতে ভুগছে, বন্দি পাহারা দেবে কি। তার হাতের টর্চের কাঁপুনি দেখেই বোঝা যায়। মাঝে মাঝেই কিছু না করার জন্যে হুঁশিয়ার করছে বন্দিদের। শেষে একটা খচমচ আওয়াজ শুনে আর থাকতে না পেরে উঠে চলে গেল, বোটহাউসের বাইরে কেউ আছে কিনা দেখার জন্যে।

ফিসফিস করে উঠলো রবিনের ওয়াকি-টকি।

নথি, নিচু গলায় বললো মুসা, কিশোর! দেখো, সুইচটা অন করতে পারো। কিনা! তাহলে ট্রান্সমিট করতে পারবে।

হাত-পা বাঁধার আগে ওদের যার যার জিনিস আবার ফেরত দিয়েছে রিগো।

শরীর অনেক মুচড়ে-টুচড়ে, হাতের আঙুল কোনোমতে সুইচের কাছে নিয়ে যেতে সক্ষম হলো রবিন। কাপড়ের ওপর দিয়েই সুইচ টিপে দিলো। বললো, রবিন বলছি!

রিগো আছে? ভেসে এলো কিশোরের কণ্ঠ।

বাইরে গেছে। কেউ আসছে কিনা দেখতে।

ওকে বলো, মেজর কথা বলতে চায়।

 কিন্তু মেজরের কাছে তো ওয়াকি-টকি নেই। ও জানে।

বললো, আমারটা কেড়ে নিয়েছে।

মুসা ডাকলো, রিগো? মেজর ডাকছেন!

দুপদাপ করে ছুটে এসে ভ্যানে ঢুকলো হাতির বাচ্চা। কী?

মেজর আপনার সঙ্গে কথা বলতে চান, রবিন বললো।

কথা? চারপাশে তাকালো রিগো। মেজরকে দেখতে পেলো না।

ওয়াকি-টকিতে বলবেন, মুসা বুঝিয়ে দিলো।

ওহ্! শরীর ঢিল করলো রিগো। কিন্তু তিনি ওয়াকিটকি পেলেন কোথায়?

আমাদের আরেক বন্ধু আছে না, তারটা কেড়ে নিয়েছেন। সে-ও ধরা পড়েছে। আমাদের মতোই।

ভালো হয়েছে…

হঠাৎ শোনা গেল ভারি কণ্ঠ, এই বলদ, এতো কথা বলছো কেন? কথা বলতে বলেছি, বলো?

অবাক হলো না মুসা আর রবিন। কিশোরের অভিনয় ক্ষমতার কথা জানা, আছে ওদের। তবে রিগো চমকে গেল। ব-ব্বলুন, বস্!

তোতলাচ্ছো কেন, রামছাগল! শোনো, ছেলেদুটোকে আরও শক্ত করে বাঁধো। ওদের ওয়াকি-টকিগুলো কেড়ে নিয়ে চলে এসো আমাদের কাছে, সুড়ঙ্গ দিয়ে। এখুনি। গাধামি করবে না।

না, বস। এখুনি আসছি, বলতে বলতেই রবিনের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলো রিগো।

 তাড়াহুড়োয় রবিন আর মুসাকে আরও শক্ত করে বাঁধার কথাও ভুলে গেল সে। ওয়াকি-টকিদুটো বের করে নিয়েই বেরিয়ে গেল ভ্যান থেকে। মুহূর্ত পরেই পানিতে শোনা গেল তার ভারি পায়ের আওয়াজ।

রিগো বেরিয়ে যাওয়ার মিনিটখানেক পরেই খুলে গেল বোটহাউসের দরজা। ভ্যানে এসে ঢুকলো জেসন। মুসা আর রবিনের বাঁধন খুলে দিলো দ্রুতহাতে। হেসে জানালো, মেজর আর টনিকে কিভাবে স্টোররুমে আটক করেছে।

গুপ্তধন পেয়ে গেছেন মিস্টার ইভানস? অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো রবিন।

পেয়ে গেছেন। আমিও খোঁজা শুরু করার আগেই।

আপনিই তাহলে বেগুনী জলদস্যু সেজে এসেছিলেন সেদিন। আমাদের ভয় দেখিয়েছেন, মুসা বললো।

একটা জিনিস ফেলে গিয়েছিলাম, আরেক দিকে তাকিয়ে বললো জেসন। সেটা নিতে এসেছিলাম আড্ডায়, রাতের বেলা। বোটহাউস থেকে বেরোতে দেখলাম কয়েকজন লোককে। সন্দেহ হলো। খোঁজাখুঁজি শুরু করলাম। সুড়ঙ্গমুখটা খুঁজে বের করতে দুদিন লেগেছে। লুকিয়ে থেকে শুনে বুঝলাম, কোনো মূল্যবান। জিনিস খুঁজছে ওরা। আমিও ওই কাজে লেগে পড়লাম। তোমাদের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। বিশ্বাস করো, কোনো ক্ষতি করতে চাইনি।

বাদ দিন ওসব কথা, রবিন বললো। তাড়াতাড়ি বেরোনো দরকার। রিগো ফিরে আসতে পারে।

টাওয়ারের কাছে অন্ধকারে অপেক্ষা করছে কিশোর। ওদেরকে আসতে দেখেই ওয়াকি-টকির ওপর কুঁকলো। এই গাধা, শুনছো?, বোটহাউসে ফিরে যাও। তোমার আসার আর দরকার নেই। গিয়ে পাহারা দাও ওদের। যদি ওরা পালায়, পিঠের ছাল তুলবো আমি তোমার! জলদি যাও! বলে আপনমনেই নীরবে হাসলো গোয়েন্দাপ্রধান।

কিশোরের কথা মুসার কানেও গেছে। কাছে এসে হাসলো সে। আহারে, বেচারার জন্যে কষ্টই লাগছে আমার!

এখন কি করবো? রবিন জিজ্ঞেস করলো।

পুলিসের কাছে যেতে হবে, কিশোর জবাব দিলো।

.

পুলিস এসে আটক করলো মেজর নিরেক আর টনিকে। পাহারা দিচ্ছিলো আড্ডার বাইরে গুন, তাকেও ধরলো। কিন্তু রিগোকে ধরতে পারলো না। যেই এসে সে দেখেছে, মুসা আর রবিন নেই, আর দেরি করেনি। ভ্যান নিয়ে পালিয়েছে মেজরের ভয়ে। বোর্টহাউসের দরজা লাগানো ছিলো, সেটা খোলার প্রয়োজন মনে করেনি। গাড়ি দিয়ে গুতো মেরে দরজা ভেঙেই পালিয়েছে।

আলমারি থেকে কালো একটা বাক্স বের করলো ভিকটর। ডালার ওপরে তামার পাত বসিয়ে নাম লেখা রয়েছেঃ লেফটেন্যান্ট উইলিয়াম ইভানস। একটা টেবিলে বাক্সটা রেখে ডালা তুললো সে।

খাইছে! বলে উঠলো মুসা।

গলা বাড়িয়ে এগিয়ে এলো পিটার, ভেতরে কি আছে দেখার জন্যে।

সোনা আর রূপার নানারকম মূল্যবান অলংকার আর তৈজসপত্রে বাক্সটা। বোঝাই। ঝকঝক করছে ঘরের ম্লান আলোয়।

একটা আঙটি তুলে নিলো কিশোর। বাক্সের গায়ে আঙুল বুলিয়ে দেখলো।

 কয়েক লাখ ডলারের জিনিস, বিড়বিড় করলো রবিন।

পুলিসের সঙ্গে ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারও এসেছেন। বললেন, আপনি যখন পেয়েছেন, আপনারই থাকবে জিনিসগুলো। হারানোর ভয় নেই। কারণ আপনি। উইলিয়াম ইভানসের বংশধর। তবে সেটা প্রমাণ করতে হবে আপনাকে কোর্টে। ভালো দেখে একজন উকিল রাখবেন, হয়ে যাবে।

 আপনার পরামর্শের জন্যে ধন্যবাদ, বললো বটে ভিকটর, কিন্তু অস্বস্তি গেল না তার।

বন্দিদেরকে নিয়ে বেরিয়ে গেল পুলিস। ক্যাপ্টেন রইলেন শুধু। তিন গোয়েন্দার দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন, আরেকটা রহস্যের সমাধান করলে। তোমাদের নিয়ে গর্বই হয় আমার। বাড়ি যাবার সময় হয়েছে নিশ্চয়। যাবে না? লিফট দিতে পারি।

আমার তরফ থেকেও ধন্যবাদ জানাচ্ছি ওদের, ভিকটর বললো। চোর গুলোকে ধরিয়ে দেয়ার জন্যে। কাল আসবে, নাকি তোমরা? আমাকে সাহায্য করতে? বাক্সটা সরিয়ে ফেলা দরকার। চোরগুলো জামিনে মুক্তি পেয়েই আবার এগুলো কেড়ে নিতে আসবে।

কাল দুপুরের আগে জামিন পাচ্ছে না ওরা, চীফ বললেন। ততক্ষণে বাক্সটা সরিয়ে ফেলতে পারবেন। কোনো ব্যাংকে নিয়ে গিয়ে রেখে দিলেই হলো।

কিন্তু রিগো? সে তো ছাড়া রয়েছে। যদি আসে?

ও আসবে না। যা ভীতু লোক। আশা করছি, ওকেও খুব শীঘ্রি ধরে ফেলতে পারবো। আপনার ভয় নেই।

 আমরা কি সাহায্য করতে পারি? কিশোর জিজ্ঞেস করলো।

জিনিসগুলোর একটা তালিকা করবো, ভিকটর বললো। তোমরা সাহায্য করলে তাড়াতাড়ি হবে।

তা করতে পারি।

আমিও করবো! বলে উঠলো পিটার। জলদস্যুর লুটের মাল! ঘটতেও ভালো লাগবে আমার!

পিটারের উত্তেজিত মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলো ভিকটর। বেশ, করবে। সাহায্য। আমার আপত্তি নেই। বেশি লোক পেলে বরং ভালোই হয়। তিন গোয়েন্দার দিকে ফিরলো সে। তোমাদেরকে একটা করে পুরস্কার দিতে চাই। নেবে তো? বলে জবাবের অপেক্ষা না করেই বাক্স থেকে একটা দামী আঙটি বের করে দিলো মুসাকে।

দ্বিধা করলো মুসা। এভাবে জিনিস নিতে ভালো লাগে না তার। কিশোরের দিকে তাকালো পরামর্শের আশায়। মাথা ঝাঁকালো কিশোর। আঙটিটা নিলো মুসা। রবিন আর কিশোরকেও একটা করে আঙটি দিলো ভিকটর।

.

২১.

পরদিন সকাল আটটায় লাফিয়ে উঠে বসলো মুসা। কানে আসছে আঁচড়ানোর শব্দ। বিছানায় থেকেই ভালো করে চেয়ে দেখলো, জানালার কাঁচে ঘষা লাগছে হএকটা ডাল। হেসে আবার শুয়ে পড়লো। ঘুম যায়নি। কিন্তু পরক্ষণেই আবার লাফ দিয়ে উঠলো। তার জানালার কাছে তো কোনো গাছ নেই! বিছানা থেকে নেমে দৌড়ে এলো জানালার ধারে।

বাইরে ধূসর হয়ে আছে সকালটা। বিষণ। কুয়াশার জন্যে সূর্য উঠতে পারেনি। দেখলো, লম্বা একটা লাঠিতে ডালটা বেঁধে জানালার কাঁচে ঘষছে কিশোর। রবিন দাঁড়িয়ে রয়েছে পাশে। বুঝলো, এরকম কেন করছে। তাকে যেতে বলছে। তার আম্মা দেখে যদি কাজ করার জন্যে আবার তাকে আটকে দেন, সে-জন্যে ঘরে ঢোকেনি ওরা। টেলিফোন করারও সাহস পায়নি।

চুলোয় যাক কাজ! নাস্তা খাওয়ারও দরকার নেই বাড়িতে। বাইরে কোনোখানে খেয়ে নিলেই হবে। তাড়াতাড়ি কাপড় পরে জানালা খুললো মুসা। সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে মায়ের চোখে পড়ার ঝুঁকি নিতে চায় না। জানালা গলে। বেরিয়ে পাইপ বেয়ে নেমে এলো মাটিতে।

কি ব্যাপার? জিজ্ঞেস করলো সে।

কিশোর বলছে, ভিকটর ইভানসের কিছু হয়েছে, রবিন জবাব দিলো।

খাইছে! কি হয়েছে?

সাইকেল বের করে নিয়ে এসো, কিশোর বললো। এখানে দাঁড়িয়ে কথা বললে ধরা পড়বে। চলো, ভাগি।

হাইওয়েতে ওঠার আগে কথা বললো না কিশোর। তারপর বললো, সকালে পিটার ফোন করলো। ভোরে উঠেই নাকি চলে গিয়েছিলো টাওয়ারে, ভিকটরের মালের তালিকা করতে। উত্তেজনায় সারারাত ঘুমায়নি সে। গিয়ে দেখে ভিকটর নেই। বাক্সটাও নেই। তার পর আমিও চেষ্টা করেছি, ফোনের জবাবই দিলো না কেউ টাওয়ার থেকে।

পালালো নাকি?

 না গিয়ে বলতে পারবো না।

বেগুনী জলদস্যুর আড্ডায় পৌঁছে সাইকেল গেটের বাইরে রাখলো ওরা। পিটার ওদের অপেক্ষাতেই ছিলো। দেখেই দৌড়ে এলো। চারজনে মিলে চলে এলো টাওয়ারে। সদর দরজার কাছে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে ডাকলো কিশোর, মিস্টার ইভানস! মিস্টার ইভানস!

সাড়া এলো না।

এরপর মুসা ডাক দিলো। ঠেলা দিলো দরজায়। পাল্লা ফাঁক হতেই মিয়াও করে বেরিয়ে এলো কালো বেড়ালটা।

 ভিকটর নেই ভেতরে, বেড়ালটার দিকে তাকিয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো। কিশোর। চলো, ঢুকে দেখি।

সারা টাওয়ারে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাকে পাওয়া গেল না। গুপ্তধনের বাক্সটাও উধাও।

পালিয়েছে! পিটার বললো।

কাল রাতেই সন্দেহ হয়েছিলো আমার, আনমনে বললো কিশোর। নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো একবার। ভিকটরের স্টাডিতে দাঁড়িয়ে আছে।

মাঝারি আকারের একটা ঘর। চারপাশে সাজানো বুককেসে অসংখ্য বই। ঘরের মাঝখানে বড় একটা কাউচ, বসে আরাম করে পড়ার জন্যে। একপাশের দেয়াল ঘেঁষে একটা লেখার টেবিল। তাতে টেলিফোন আছে। এগিয়ে গেল। কিশোর। টেলিফোন সেটটার পাশেই পড়ে আছে একটা প্যাড। তাতে একটা বিচিত্র নকশা। সেটার দিকে দীর্ঘ এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলো সে। হঠাৎ বলে উঠলো, সী-প্লেন!

কি বললে! মাথাটাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি তোমার! মুসা কিছু বুঝতে পারছে না।

এটা কি? প্যাডে টোকা দিয়ে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

মনে তো হচ্ছে একটা সী-প্লেনের ছবি, পিটার বললো। নামার জন্যে পনটুন খুঁজছে, এরকম আঁকতে পারলে ভালো হতো।

ভালো আর্টিস্ট হলে সেটা পারতো। ভিকটর তা নয়।

কি বলতে চাইছো? রবিনও বুঝতে পারছে না কিশোরের কথা।

আমি শিওর, যাবার আগে টেলিফোন করেছিলো ভিকটর, কিশোর বুঝিয়ে দিলো। লাইন পেতে দেরি হয়েছিলো হয়তো, কিংবা অন্য কোনো কারণ ছিলো। যাই হোক, আঁকার যথেষ্ট সময় পেয়েছে সে।

এয়ার ট্যাক্সি সার্ভিস! চেঁচিয়ে উঠলো মুসা। ফোন করেছিলো ওখানেই! সে জন্যেই প্লেনের ছবি।

হ্যাঁ, নিশ্চয় প্লেনে করে পালিয়েছে ভিকটর। পিটার, তোমার আব্বা কোথায়?

ঘরেই।

জলদি চলো। কুইক!

এতো সকালে গোয়েন্দাদের দেখে অবাক হলেন ক্যাপ্টেন ফিলিপ। ভিকটরের নিখোঁজ হওয়ার কথা পিটার তাকে কিছু বলেনি। নেই দেখেই সোজা কিশোরকে বে ফোন করেছে।

সব শুনে গম্ভীর হয়ে গেলেন তিনি।

এয়ার ট্যাক্সি সার্ভিস কটায় খোলে? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

আটটা তিরিশে। কেন?

আটটা পঁয়তাল্লিশ বাজে! এখনও হয়তো সময় আছে। জলদি একটা ফোন করুন ওদেরকে। বলুন, ডেঞ্জারাস একটা ক্রিমিন্যাল ওদের প্লেনে করে পালাচ্ছে!

টেলিফোন বুক খুললেন ক্যাপ্টেন। নম্বর বের করে ফোন করলেন। বললেন, একটা সাংঘাতিক অপরাধী পালাচ্ছে। ভিকটরের চেহারার বর্ণনাও দিলেন।

লোকটা জানালো, হ্যাঁ, ওরকম চেহারার একজন লোক বিমান ভাড়া করেছে। নাম, ভিকটর ইভানস। প্লেনে উঠে পড়েছে।

জলদি ঠেকান ওকে! থামান! টেলিফোনেই চেঁচিয়ে উঠলেন ক্যাপ্টেন। পাইলটকে বলুন, যাতে না ওড়ে।

দাঁড়ান দেখছি, জবাব এলো অন্যপাশ থেকে। কিছুক্ষণ পর লোকটা জানালো, জবাব দিচ্ছে না পাইলট। বোধহয় পিস্তল দেখিয়ে মুখ বন্ধ করে রেখেছে ভিকটর।

পুলিসকে ফোন করবে বলে লাইন কেটে দিলো ট্যাক্সি সার্ভিসের কর্মচারি।

একটা বিমানের শব্দ শেনা গেল। ডক থেকে ওড়ার পাঁয়তারা করছে বিমানটা। ট্রেলার থেকে ছুটে বেরোলো তিন গোয়েন্দা আর পিটার। পেছনে বেরোলেন ক্যাপ্টেন ফিলিপ।

ওড়ার জন্যে তৈরি হচ্ছে ছোট একটা সী-প্লেন।

আহহা, দেরি হয়ে গেল! হতাশ ভঙ্গিতে হাত নাড়লো কিশোর। আর ঠেকানো গেল না ওকে!

সেদিকে তাকিয়ে থেকে কি ভাবছেন ক্যাপ্টেন। তারপর বলে উঠলেন, পারবো! এসো! বলেই দৌড় দিলেন জেটির দিকে।

.

২২.

ব্ল্যাক ভালচারের হুইল ধরেছেন ক্যাপ্টেন ফিলিপ। এগিয়ে চলেছে জাহাজ। জোর বাতাস উড়িয়ে নিয়ে গেছে পাতলা কুয়াশা। মাস্তুলের ওপরের ক্রো-নেস্টে উঠে বসেছে নোনতা জেসন। ওখান থেকে যা যা দেখবে, চেঁচিয়ে জানাবে। ক্যাপ্টেনকে। জাহাজের গলুইয়ের কাছে রেলিঙ ধরে দাঁড়িয়েছে তিন গোয়েন্দা আর। পিটার।

বিমানটা কোন দিকে গেছে? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

মেইন চ্যানেল ধরে সোজা চলে যাবে সাগরের দিকে, পিটার জানালো। ওই লাল আর কালো বয়াগুলোর মাঝ দিয়ে। সাগরের দিক থেকে আসা বাতাসকে কাজে লাগাবে।

ক্রো-নেস্ট থেকে চেঁচিয়ে উঠলো নোনতা জেসন, ডক ছেড়েছে, ক্যাপ্টেন! গতি বাড়িয়েছে!

দূরে দেখা যাচ্ছে সী-প্লেনটা। দমে গেল ছেলেরা। ধরার আশা কম।

পারবো না! নিরাশ হয়ে বললো মুসা। আমরা যাওয়ার আগেই উড়ে যাবে।

 পারবো! রবিন বললো। এঞ্জিনের শক্তি বাড়াতে সময় লাগবে।

 ধরা কঠিন হবে।

গুঙিয়ে উঠলো কিশোর। ধরতে না পারলে আমাদের ওপর দিয়েই উড়ে যাবে, বুড়ো আঙুল দেখিয়ে!

এঞ্জিনের সমস্ত শক্তি নিংড়ে ছুটেছে জাহাজ। বয়ার লম্বা সারির মুখে চলে গেছে বিমানটা। একমাত্র প্রপেলারটা ঘুরতে আরম্ভ করেছে।

পাইলটকে দেখতে পাচ্ছি, কিশোর বললো। পাশের লোকটা::-ভিকটর, কোনো সন্দেহ নেই…।

 প্রতি মুহূর্তে বিমানটার কাছাকাছি চলে যাচ্ছে জাহাজ।

লাল বয়াগুলোর ভেতরে বিমান প্রবেশের মানে হচ্ছে ওড়ার জন্যে অর্ধেক। প্রস্তুত ওটা।

লাল বয়ার সারি পেরিয়ে কালোগুলোতে যখন ঢুকলো বিমান, জাহাজ ডুকে পড়লো চ্যানেলের মধ্যে।

জাহাজে সবাই দম বন্ধ করে ফেলেছে।

পাইলটের শাদা মুখ হাঁ হয়ে গেছে। জানালার কাছে ঝুঁকে রয়েছে ভিকটর, হাতে পিস্তল। জাহাজটা আরো এগিয়ে যেতেই এদিকে সই করে পিস্তল তুললো সে।

শুয়ে পড়ো, শুয়ে পড়ো সবাই! চিৎকার করে বললেন ক্যাপ্টেন।

গুলি করলো ভিকটর…একবার-দুবার

একটা মুহূর্তের জন্যে যেন স্তব্ধ হয়ে গেল সময়। কিন্তু জাহাজ থেমে নে এগিয়ে যাচ্ছে বিমানটার দিকে, যেন মুখোমুখি ধাক্কা লাগানোর ইচ্ছে।

হঠাৎ শাই করে একপাশে ঘুরে গেল বিমান, একটা কালো বয়ায় লেগে। ছিঁড়ে গেল একটা ডানা। কাত হয়ে গেল একপাশে।

পানিতে লাফিয়ে পড়েছে পাইলট। সাঁতরে সরে যেতে চায় যতো দ্রুত সম্ভব।

পানি ঢুকছে বিমানে। কাত হয়ে ভাসছে এখন। এঞ্জিন বন্ধ হয়ে গেছে। ওটার কাছাকাছি এসে গতি কমালো জাহাজ। দড়ি ছুঁড়ে দিলো পিটার। ওটা ধরলো পাইলট।

ভিকটরকে দেখা গেল আরেক দিকে সাঁতরাচ্ছে। দুটো লাইফ বেল্ট বেঁধে নিয়েছে। কালো বাক্সটা ঠেলে নিয়ে সাঁতরাচ্ছে।

দড়ি বেয়ে ডেকে উঠে ধপাস করে গড়িয়ে পড়লো পাইলট। পানি গড়াচ্ছে কাপড় থেকে। কয়েকবার জোরে জোরে দম নিয়ে বললো, তোমরা আমার প্রাণ বাঁচালে! ওই পাগলটার কাছে পিস্তল আছে। প্লেন চালাতে বাধ্য করেছে ও আমাকে। ধাক্কা লেগে কাত হয়ে না পড়লে কি হতো জানি না! জাহাজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বিমান চুরমার হয়ে যাওয়ার কথা কল্পনা করে শিউরে উঠলো সে। কে লোকটা? ডাকাত-টাকাত?

ডাকাতই, পানির দিকে তাকিয়ে জবাব দিলো কিশোর। ভিকটরের দিকে এগোচ্ছে জাহাজ।

 এখনও পালানোর চেষ্টা করছে ভিকটর। কিন্তু বাক্সটা বেশি ভারি। ওটা নিয়ে এগোতে পারছে না তেমন। জ্বলন্ত চোখে ফিরে তাকালো একবার জাহাজের দিকে। বুঝলো, বাক্সটা নিয়ে পালানো অসম্ভব। শেষে ওটা ছেড়ে দিয়ে সাঁতরাতে শুরু করলো।

কিন্তু জাহাজের সঙ্গে সাঁতরে আর কতক্ষণ? হাল তাকে ছাড়তেই হলো। ক্রো-নেস্ট থেকে নেমে এসেছে নোনতা জেসন। পানিতে ঝাঁপ দিতে তৈরি হচ্ছে। তার আগেই ঝাঁপিয়ে পড়লো মুসা। তারপর জেসন। শেষে একে একে রবিন, পিটার আর পাইলট। সবাই মিলে ধরে ফেললো ভিকটরকে।

দড়ি নামিয়ে দেয়া হলো। তাতে বাক্সটা বেঁধে দিলো মুসা। কিশোর আর ক্যাপ্টেন মিলে টেনে তুললেন ওটা ডেকে।

ভিকটরকেও তোলা হলো।

দেখাবো, মজা দেখাবো সব কটাকে! নিষ্ফল হুমকি দেয়া শুরু করলো সে।

পাত্তাই দিলো না তাকে কেউ। তবে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখলো, যাতে আবার গিয়ে পানিতে পড়তে না পারে।

জাহাজের মুখ ঘোরালেন ক্যাপ্টেন। বললেন, কিশোর, বলে ফেলো তো এবার সব। এই ভিকটর লোকটা আসলে কে?

আমার ধারণা, চোর, গম্ভীর হয়ে বললো কিশোর। মেজর নিরেকের দলের। লোক।

কি করে বুঝলে? পিটার অবাক।

গুপ্তধনগুলো জলদস্যুদের লুটের মাল নয়। আধুনিক চোরের চোরাই মাল।

কি বলছো? বিশ্বাস করতে পারছেন না ক্যাপ্টেন।

ঠিকই বলছি। একটা ব্যাপার প্রথমে বুঝতে পারছিলাম না, আপনাকে আর পিটারকে সরিয়ে দেয়ার পরেও চব্বিশ ঘন্টা কেন আড়ার ওপর নজর রাখছিলো মেজরের লোক। এখন জানি। ভিকটরের ওপর নজর রাখা হচ্ছিলো।

ভিকটর! প্রায় চেঁচিয়ে উঠলো রবিন। ভিকটরকে পাহারা দিচ্ছিলো?

হ্যাঁ, তাই। তবে ভিকটর আমাদেরকে মালগুলো দেখানোর আগে পর্যন্ত সেটা বুঝতে পারিনি।

পরে কি করে বুঝলে? জানতে চাইলো মুসা।

খুব সহজ। বাক্সটা দেখেই বুঝে ফেলেছি। ওটার ওপরে তামা দিয়ে লেখা রয়েছে নাম। অনেক পুরনো হলে ময়লা হয়ে যায় তামা, রঙ বদলে যায়, সবুজ দাগ পড়ে। অথচ এটা একেবারে নতুন, চকচক করছে। আর বাক্সটাও তৈরি হয়েছে প্লাইউড দিয়ে, আগের দিনের মতো ভারি কাঠ নয়। তার ওপর রঙ করেছে। বেশি কাঁচা কাজ করে বসেছে ভিকটর।

বাক্সটা নতুন বলেই যে মালও নতুন, তা কি করে বুঝলে? ক্যাপ্টেনের প্রশ্ন। নতুন বাক্সে কি পুরনো মাল রাখা যায় না?

যায়। তবে এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। আমাকে একটা আঙটি দিয়েছিলো ভিকটর। সেটা আমি জুয়েলারির দোকানে নিয়ে গিয়ে দেখিয়েছি। নতুন। মাত্র কয়েক বছর আগে বানানো হয়েছে। তাতেই বুঝলাম, ভেতরের সব মালই নতুন। জলদস্যুর গুপ্তধন নয়।

কিন্তু কিশোর, রবিন বললো, যদি ওরা জানেই ওগুলো গুপ্তধন নয়, তাহলে…

হ্যাঁ, রবিন, মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো কিশোর, ঠিকই ধরেছো। কেন তাহলে বিনা প্রতিবাদে জেলে চলে গেল চোরের দল? পুলিসকে কিছুই বললো না? এই তো? কেন ভিকটরকে মাল নিয়ে পালাতে দিলো, এটাও নিশ্চয় তোমার প্রশ্ন। সহজ জবাব, চোরাই মাল। পুলিশে জেনে গেলেই সব খোয়াতে হতো। তাই চুপ করে গিয়েছিলো মেজর। আর তখনই পুরো সত্যটা বুঝে গেছি আমি।

ভিকটরের হাত দড়ি দিয়ে বাঁধা। সেই অবস্থায়ই ঝাঁপিয়ে পড়তে গেল কিশোরের ওপর। তাকে যখন আটকে ফেলা হলো, গালাগাল করতে লাগলো। চেঁচিয়ে বললো, বিশ্বাস করো না ওর কথা! ওটা একটা মিথ্যুক! সব বানিয়ে বলছে!

কেউ কান দিলো না তার কথায়।

 সত্যটা কি, কিশোর? জিজ্ঞেস করলো পিটার।

মেজর নিরেক আর তার চেলারা জানে যে মালগুলো চোরাই। কারণ ওরাই। চুরি করে জমিয়েছে ওগুলো। ভিকটরও জানে। কারণ সে-ও একই দলের লোক। মাল নিয়ে পালিয়েছিলো ভিকটর, সেগুলো খুঁজতেই এসেছে মেজুর আর তার চেলারা। আবার না ওগুলো বের করে নিয়ে ভিকটর পালিয়ে যায়, সেজন্যই দিন রাত তার ওপর চাখ রাখা হতো। আসলে, সমস্ত মাল হাতিয়ে নিয়ে টাওয়ারে এসে লুকিয়েছিলো সে। তার জানা ছিলো, লুকানোর চমৎকার জায়গা ওটা।

তীরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেল ক্যাপ্টেন ইয়ান ফ্লেচারকে। দলবল নিয়ে পৌঁছে গেছেন তিনি।

সেদিকে তাকিয়ে আরেকবার নিষ্ফল আক্রোশে ফুঁসে উঠলো ভিকটর। চোখ পাকিয়ে কিশোরকে বললো, তোমাকে…তোমাকে দেখে নেবো আমি…

.

কয়েক দিন পর। বিখ্যাত চিত্র পরিচালক মিস্টার ডেভিস ক্রিস্টোফারের অফিসে এসেছে তিন গোয়েন্দা, বেগুনী জলদস্যুর কেসের রিপোর্ট নিয়ে।

মন দিয়ে ফাইলটা পড়লেন পরিচালক। তারপর মুখ তুললেন। বুঝলাম। তবে একটা কথা এখানে লেখোনি। কি দেখছিলো সেদিন মেজর? নকশা?

ম্যাপ, স্যার, জবাব দিলো কিশোর। পাইরেটস কোভের। ওতে অবশ্য সুড়ঙ্গটা দেখানো নেই।

কিন্তু রিপোর্টে বলেছে, জানা না থাকলে ওই সুড়ঙ্গ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মেজর নিরেক কি করে পেলো?

হাসলো কিশোর। কয়েক বছর আগে একথা ভিকটরই জানিয়েছিলো মেজরকে। পুলিসের ভয়ে পালিয়ে আত্মগোপন করে আছে তখন ওরা। ভিকটর। অবশ্য তখনও জানতো না, সুড়ঙ্গটা ঠিক কোথায় আছে। গল্প করতে করতে এমনি বলেছিলো আরকি মেজরকে, পূর্বপুরুষের কাহিনী বলতে গিয়ে। তারপর একদিন। মাল হাতিয়ে নিয়ে পালালো ভিকটর। মেজর জানতো না, টাওয়ারটা কোথায়। তবে খুঁজে খুঁজে বের করে ফেললো। অনেক দিন লেগেছে খুঁজে বের করতে। এসে দেখলো, সত্যি, টাওয়ারেই এসে উঠেছে ভিকটর। বুঝতে অসুবিধে হলো না, মালগুলো টাওয়ারেই লুকিয়েছে ভিকটর। তাকে কিছু জিজ্ঞেস করলো না মেজর। কারণ তাহলে অন্য জায়গায় মাল সরিয়ে ফেলতে পারে। বোটহাউসে ঢুকে বের। করলো সুড়ঙ্গমুখ। মাটি কেটে সুড়ঙ্গের ভেতর দিয়ে টাওয়ারে ঢোকার পথ করে। নিলো।

তারপর?

ওরা মালগুলো পাওয়ার আগেই টের পেয়ে গেল ভিকটর, জবাব দিলো এবার রবিন। সতর্ক হয়ে গেল। শেষে মাল নেয়ার জন্যে শেষবার যখন ঢুকলো মেজর আর নিরেক, তখন জেসন আর কিশোরকে নিয়ে তৈরি হয়ে আছে সে, বাধা। দেয়ার জন্যে।

মেজর আর রিগোকে ঠেকালো বটে ভিকটর, রবিনের কথার খেই ধরলো কিশোর, কিন্তু আমরা তখন জেনে গেছি। বুঝলো, শেষ রক্ষা করতে হলে একটাই উপায়, পুলিসের হাতে ধরা দেয়া। ভিকটরকে মালগুলো নিয়ে পালাতে দেয়া। তাহলে শেষমেষ ভাগ একটা পাবার আশা আছে। সেরকমই চুক্তি হয়েছে ওদের মধ্যে, স্টোররুমে।

ওই চুক্তির কোনো অর্থ নেই, মাথা নাড়লেন পরিচালক। ভিকটরকে বিশ্বাস। করা যায় না।

না, তা যায় না, এতোক্ষণে মুখ খুললো মুসা। তবে এছাড়া আর কিছু করারও ছিলো না ওদের। ভিকটর নিয়ে পালালে পাওয়ার কিছুটা অন্তত আশা আছে। কিন্তু পুলিসের হাতে পড়লে একেবারেই নেই। তাই ওই বুদ্ধি করেছিলো।

হু। একমুহূর্ত চুপ করে রইলেন মিস্টার ক্রিস্টোফার। তাহলে বেগুনী। জলদস্যুর গুপ্তধন আসলেই নেই?

আপাতত তো পেলাম না, মুচকি হাসলো কিশোর। তবে তদন্ত আমরা চালিয়ে যাবো ভাবছি। বলা যায় না, কিছু বেরিয়েও যেতে পারে।

Super User