১৫.
মডার্ন গ্লাস কোম্পানি! ভুরু কুঁচকে বললেন আরিফ সাহেব। অসম্ভব! কিশোর, ওটার মালিককে আমি ভালো করেই চিনি। ভদ্রলোক।
কিন্তু আমাদের কাছে প্রমাণ আছে, জোর গলায় বললো কিশোর। মুসা আর রবিন দেখতে পেয়েছে।
ভুল করছিস না তো?
না।
এক মুহূর্ত গম্ভীর হয়ে রইলেন আরিফ সাহেব। চুপচাপ ভাবলেন। তারপর হাত বাড়ালেন ফোনের দিকে।
তিনি যতোক্ষণ থানার সঙ্গে কথা বললেন, ততক্ষণ অস্থির হয়ে পায়চারি করলো কিশোর। সোফায় বসে উসখুস করছে উত্তেজিত কচি। ঘড়ি দেখছে বার বার। শেষে আর থাকতে না পেরে বলেই ফেললো, কিশোর, ওরা কোনো বিপদে পড়বে না তো?
এসব কাজে সব সময়ই বিপদ থাকে, ভারি গলায় জবাব দিলো কিশোর। বিশেষ করে যখন কোনো প্রমাণ আটকাতে যাও তুমি। আর সেই সাথে যুক্ত থাকে লাখ লাখ টাকার ব্যাপার।
এই সময় রিসিভার রেখে দিয়ে উঠে দাঁড়ালেন আরিফ সাহেব। বললেন, ও রেডি। চলো, থানায় যাবো। আমরা গেলেই ওরা রওনা হবে।
তুমি শিওর তো, কিশোর? কাঁচ কোম্পানির দিকে যেতে যেতে জিজ্ঞেস করলেন সার্জেন্ট। কোম্পানির কোনো লোকেরই কাজ এসব?
এছাড়া আর কি? শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর। ভালোমতো ভাবলে। আপনারাও আমার সঙ্গে একমত হবেন। ওরাই একমাত্র কোম্পানি, যারা টয়োটা গাড়ির কাঁচ আমদানী করে। কাঁচ ভাঙলে নতুন কাঁচ লাগাতেই হবে, নইলে গাড়ি চালানো যায় না। যতো বেশি কাঁচ বিক্রি করতে পারবে ততো বেশি লাভ কোম্পানির।
শরাফত সাহেব্বে মতো ভদ্রলোক এরকম কাজ করবেন, আমার বিশ্বাস হয় না।
হয়তো তিনি জানেনই না যে এসব ঘটছে। আর হয়তো বলছি কেন, সত্যি তিনি জানেন না। ব্যাপারটা ফাস হয়ে গেল কেলেঙ্কারি হবে, তাঁর ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে। গাড়ির কাঁচ কিছু বেশি বিক্রি হলে লাভ হবে বটে, কিন্তু যেটুকু হবে, জানাজানি হয়ে গেলে ক্ষতি হবে তার চেয়ে বেশি। সামান্য ওই লাভের জন্যে তিনি পুরো ব্যবসার ওপর ঝুঁকি নেবেন না।
ঠিকই বলেছিস তুই, কিশোর, আরিফ সাহেব বললেন। জীপে পুলিশের গাড়িতে না বসে আরিফ সাহেরে গাড়িতেই বসেছেন ওসি সাহেব। জীপে অন্যান্য পুলিশদের সঙ্গে রয়েছেন সার্জেন্ট আবদুল আজিজ। রেডিওতে ওসির সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন তিনি।
মডার্ন গ্লাস কোম্পানির কাছে চলে এলো ওরা। কিশোর বললো, পাশের দরজাটা দেখছি খোলাই আছে।
মাথা ঝাঁকালেন ওসি। রেডিওতে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিলেন সার্জেন্টকে। গ্লাস কোম্পানির পাশের গেটের দিকে ঘুরলো পুলিশের জীপ, এই সময় শাঁ করে বেরিয়ে এলো একটা নীল রঙের টয়োটা। পুলিশ দেখে যেন চমকে গেল। বেসামাল হয়ে গেল ক্ষণিকের জন্যে, ঘ্যাঁচ করে ব্রেক কষলো ড্রাইভার। তারপর শাঁই শাই স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে টায়ারের তীক্ষ্ণ আর্তনাদ তুলে, অনেকখানি রবার ক্ষয় করে না ঘুরিয়ে ফেললো অন্যদিকে।
গেট দিয়ে ছুটে বেরিয়ে এলো রবিন। পুলিশের গাড়ি দেখেই বুঝে গেল যা বোঝার। পাগলের মতো চিৎকার করে দুই হাত শূন্যে তুলে নাড়তে শুরু করলো। নীল গাড়িটা দেখিয়ে চিৎকার করে বলতে লাগলো, মুসাকে ধরে নিয়ে গেছে! মুসাকে ধরে নিয়ে গেছে!
রেডিওতে চিৎকার করে উঠলেন ওসি, ধরো,ধরো, গাড়িটাকে থামাও!
নীল টয়োটার পেছনে ছুটলো পুলিশের জীপ। যেদিকে গেছে গাড়িটা, সে পথটা শেষ হয়ে গেছে খানিক দূর গিয়েই। তারপরে জলা। একপাশে ফসলের খেত। মাঝে মাঝে নতুন মাটি ফেলা হয়েছে বাড়ি তোলার জন্যে। উঁচু হয়ে আছে ভিটেগুলো।
জলার ধারে গিয়ে থেমে গেল গাড়ি। ভেতর থেকে কামানের গোলার মতো ছিটকে বেরোলো নীল জ্যাকেট পরা এক তরুণ। ভয়ার্ত চোখে একবার পুলিশের গাড়ির দিকে তাকিয়েই লাফ দিয়ে গিয়ে নামলো খেতের মধ্যে। এঁকেবেঁকে দিলো দৌড়।
ধরো! ধরো! চেঁচিয়ে আদেশ দিলেন ওসি।
কিন্তু জীপ থামিয়ে পুলিশ নামার আগেই নীল গাড়িটা থেকে ছিটকে বেরোলে। আরেকজন। তাড়া করলো লোটাকে। মুসা আমান। নিয়মিত ব্যায়াম করা শরীর তার, তাছাড়া দৌড়াতে পারে খুব। লাফিয়ে ছুটলে খেতের ওপর দিয়ে। দ্রুত দূরত্ব। কমে আসছে দুজনের মাঝে। দৌড়ানোর অভ্যাস বোধহয় খুব একটা নেই তরুণের, তাছাড়া পায়ে রয়েছে চামড়ার জুতো। চষা-খেতের ওপর দিয়ে ছুটতে গিয়ে। কয়েকবার হোঁচট খেয়ে পড়তে পড়তে সামলে নিলো।
লোকটার কয়েক ফুট পেছনে থাকতেই মাথা নিচু করে ডাইভ দিলো মুসা। তার বিখ্যাত ফ্লাইং ট্যাক। কায়দাটার একটা গালভরা বাংলা নাম দিয়েছে কিশোরঃ উড়ুক্কু মানব বর্শা।
পিঠে যেন মুগুরের বাড়ি পড়লে তারুণের। মুসার ভীষণ শক্ত খুলির প্রচণ্ড আঘাতে হাত-পা ছড়িয়ে হুমড়ি খেয়ে থেতের ওপর পড়ে গেল সে। পরমুহূর্তেই হাঁচড়ে-পাঁচড়ে উঠে বসলো আবার। কিন্তু দাঁড়াতে পারলো না। তার এক পা আঁকড়ে ধরেছে মুসা।
গায়ের জোরে ঝাড়া দিয়ে পা-টা ছাড়িয়ে নিতে না নিতেই আরেক পা ধরে। ফেললো মুসা। হ্যাঁচকা টানে চিৎ করে ফেলে দিলো তাকে। লোকটা আবার উঠে বসার আগেই পৌঁছে গেল পুলিশ। ঘিরে ফেললো।
মাটির ওপরই পা ছড়িয়ে বসে জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে মুসা। ঝকঝকে সাদা দাঁত বের করে হাসলো সার্জেন্ট আজিজের ওপর চোখ পড়তে। হাত তুলে তরুণকে দেখিয়ে বললো, এই যে নিন আপনার কাঁচ ভাঙুরে।
দুদিক থেকে দুহাত চেপে ধরেছে পুলিশ। ঝাড়াঝুঁড়া দিয়ে ছাড়া পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করে হাল ছেড়ে দিলো তরুণ। খেঁকিয়ে উঠলো, মিথ্যে কথা! আমি কিচ্ছু জানি না। আমাকে কেন ধরেছে! কিছুই করিনি আমি এই ব্যাটাই চুরি করতে। ঢুকেছিলো আমাদের গুদামে!।
হাসি মুছলো না মুসার মুখ থেকে। উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো, ওর গাড়িতে গিয়ে দেখুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।
গালাগাল শুরু করলো তরুণ। তাকে জীপের দিকে টেনে নিয়ে চললো পুলিশ। ওখানে নীল টয়োটার পাশে দাঁড়িয়ে আছে রবিন।
গাড়ির মধ্যে পাওয়া গেল ক্যাপ, চশমা, ব্যাকপ্যাক, তার ভেতরে রেডিও আর হেডফোন। সাইকেল চালানোর পোশাকগুলোও রয়েছে ব্যাগে। কিশোরের অনুমান। ঠিক, চশমাটা ফীল্ড গ্লাসই, চোখে লাগালে রাতের অন্ধকারেও সব দেখা যায়।
ওরা ইচ্ছে করে এগুলো আমার গাড়িতে ভরে রেখেছে। চেঁচিয়ে উঠলো তরুণ। আমাকে ফাসানোর জন্যে!
জিনিসগুলো যে আপনার, প্রমাণ করা যাবে সেটা, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর। আপনার কোম্পানির লোকই সাক্ষী দেবে আশা করি। সাইকেলটা পড়ে আছে চত্বরে। সেটা আপনার, অফিসের সবাই জানে। ওটাতে, সিরিয়াল নম্বর রয়েছে। কোন দোকান থেকে কিনেছেন, সহজেই বের করা যাবে।
ওসবের দরকারই নেই আসলে, মুসা বললো। বড় প্রমাণটা রয়েছে ওর গাড়ির সামনের সীটের নিচে। ঢুকিয়ে রাখতে দেখেছি। এয়ার-পিস্তলটা। আঙুলের ছাপও পাওয়া যাবে তাতে।
চুপ হয়ে গেল তরুণ।
সীটের নিচ থেকে সাবধানে রুমালে চেপে ধরে পিস্তলটা ব্রে করে আনলেন ওসি। মোটা খাটো নল। নলের নিচে আরেকটা নলের মতো পাইপ। ওটায় চাপ দিয়ে ভেতরের স্প্রিংটাকে ভাঁজ করা যায়। ইস্পাতে তৈরি নীলচে চকচকে অস্ত্রটার ওজন বড়জোর দুই পাউণ্ড। খোদাই করে লেখা রয়েছে কোম্পানির নাম ও দি ওয়েবলি প্রিমিয়ার। তার নিচে অপেক্ষাকৃত ছোট অক্ষরে লেখা, মেড ইন ইংল্যাণ্ড।
হু, পয়েন্ট টু-টু ক্যালিবার, দেখতে দেখতে বললেন আরিফ মামা। এই জিনিস একটা ছিলো আমার। সাংঘাতিক শক্তি ম্প্রিঙের। কাছে থেকে গুলি করলে গাড়ির কাঁচ সহজেই গুঁড়িয়ে দেয়া যায়।
তাঁর সঙ্গে একমত হয়ে মাথা ঝাঁকালেন ওসি সাহেব। তরুণকে দেখিয়ে পুলিশদের নির্দেশ দিলেন, নিয়ে এসো ওকে। শরাফত আহমেদের সঙ্গে কথা বলবো।
হাঁটতে হাঁটতে জানালো রবিন আর মুসা, কিভাবে গুদামের মধ্যে তরুণের ব্যবহার করা জিনিসগুলো খুঁজে পেয়েছে। কি করে সেগুলো নিয়ে পালানোর চেষ্টাটা করেছিল সে। মুসা বাধা দিতে গেলে কিভাবে তাকে পিস্তল দেখিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়েছে।
পালাচ্ছে দেখে খেপে গিয়েছিলাম, কৈফিয়তের সুরে বললো মুসা। আসলে ওকে দেখে একটুও বিপজ্জনক লোক মনে হয়নি আমার। বরং মনে হচ্ছিলো খুব ভীতু। ধরার জন্যে বেরোলাম। এয়ার পিস্তল দেখিয়ে ঠেকালো আমাকে। গাড়িতে উঠতে বাধ্য করলো। চিনতে পেরেছি তখনি, ওটা এয়ার পিস্তল। জানি, ক্লোজ রেঞ্জে আসল পিস্তলের চেয়ে কম ভয়ঙ্কর নয়। হৃৎপিণ্ড বরাবর গুলি চালিয়ে সহজেই মানুষ মেরে ফেলা যাবে। কি আর করবো, উঠে বসলাম। গেট দিয়ে বেরিয়েই আপনাদের দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেল ওর। দিলো আরেক দিকে টান।
হই চই, পুলিশের বাঁশি, সবই শুনতে পেয়েছে গ্লাস কোম্পানির লোকেরা। পাশের গেটের বাইরে বেরিয়ে জটলা করছে। পুলিশের সঙ্গে তরুণকে দেখে ভুরু কুঁচকে গেল কয়েকজনের। ওরা সবাই অফিসের কর্মচারী। একজন ফিরে দৌড় দিলো অফিসের দিকে।
চত্বরে ঢুকলো পুলিশ। এই সময় অফিসের কাঁচের দরজা ঠেলে বেরিয়ে এলেন মাঝবয়েসী মানুষটা। এঁকেই কাঁচে ঘেরা ছোট অফিসে একলা বসে থাকতে দেখে কিশোর আর কচি। নাকমুখ কুঁচকে ভারি গলায় জানতে চাইলেন, কি হয়েছে?
আপনি? পাল্টা প্রশ্ন করলেন।
আমি শরাফত আহমেদ। এই কোম্পানির মালিক।
ও। একে চেনেন?
চিনবো না কেন? আমার ছেলে, রনটু। কি করেছে ও?
টেন-স্পীডটা ঠেলে নিয়ে এসেছে একজন কনস্টেবল। সেটা দেখিয়ে আবার জিজ্ঞেস করলেন ওসি, এই সাইকেলটা কি আপনার ছেলের? আর এই ক্যাপ, চশমা…
আব্বা, বলো না, বলো না, কিছু বলো না! চেঁচিয়ে বাধা দিলো রনটু।
ছেলের দিকে অবাক হয়ে এক মুহূর্ত তাকিয়ে রইলেন শরাফত আহমেদ। তারপর ওসির দিকে তাকিয়ে মাথা ঝাঁকালেন, হ্যাঁ, ওরই। কেন? ব্যাপারটা কি? কি করেছে ও?
বাবার দিকে নীরবে তাকিয়ে রইলো ছেলে। তার মুখের দিকে চেয়ে কি বুঝলেন শরাফত সাহেব, কে জানে। হাত নেড়ে সবাইকে ডাকলেন, ভেতরে আসুন। বসে কথা বলি।
শরাফত সাহেব, আরিফ সাহেব বললেন, শুনলে দুঃখ পাবেন। আপনার ছেলে যে কাজ করেছে… এয়ার পিস্তল দিয়ে কিভাবে একের পর এক গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে খুলে বললেন তিনি।
গাঙির কাঁচ ভেঙেছে! বিড়বিড় করলেন শরাফত আহমেদ। হু, বুঝতে পারছি, কেন করেছে এই কাজ। দুঃখের সুরে বললেন তিনি, কলেজে দিয়েছিলাম। পড়ালেখা করলো না। বাজে ছেলেদের সঙ্গে মিশে বখে গেল। ভাবলাম, এনে ব্যবসায় লাগিয়ে দিই। কিছু দিন কিছুই করলো না। রেগেমেগে শেষে একদিন। হুঁশিয়ার করে দিলাম, ঠিকমতো কাজ দেখাতে না পারলে বাড়ি থেকেই বের করে। দেবো। সম্পত্তির একটা কানাকড়িও দেবো না। তারপর হঠাৎ ভালো হয়ে গেল। গত তিনমাস ধরে তো চমৎকার কাজ দেখাচ্ছিলো। সেলস ম্যানেজার বানিয়ে দিয়েছিলাম। এমন ভাবে গাড়ির কাঁচ বিক্রি শুরু করলো, আমি তো ভাবলাম… হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘাম মুছলেন তিনি। বিষণ্ণ ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বললেন, অথচ…এই কাজ করেছে! নিজেই গাড়ির কাঁচগুলো ভেঙে দিয়ে এসেছে, যাতে মালিকেরা কিনতে বাধ্য হয়। ইস্, রনটু, তুই এভাবে আমার মুখে চুনকালি মাখালি…,
ওদের কথা বিশ্বাস করো না, আব্বা! প্রতিবাদ করলো রনটু। কি বলছে তাই বুঝতে পারছি না। ওরা শত্রুতা করছে আমার সঙ্গে, তিন গোয়েন্দাকে দেখালো সে। আমার জিনিসগুলো চুরি করে নিয়ে গাড়িতে ভরে রেখেছে আমাকে ফাসানোর জন্যে! প্রমাণ করতে পারবে আমি ভেঙেছি? কেউ দেখেছে?
পারবো! জোর দিয়ে বললো রবিন। চোরাই ঈগলটা খুঁজে পেলেই হয়।
চোখ মিটমিট করলেন শরাফত আহমেদ। চোরাই ঈগল! ঈগল পাখিও চুরি করেছে!
পাখি নয়, ব্যাখ্যা করলো কচি, একটা দুর্লভ মুদ্রা। উনিশশো নয় সালে তৈরি। একটা আমেরিকান বিশ ডলারের সোনার মোহর, ডাবল ঈগল বলে ওটাকে। গাড়ির জানালা ভেঙে চুরি করেছে ওটা আপনার ছেলে। অনেক দাম…
মোহর চুরি করেছে! শরাফত আহমেদের গলা কেঁপে উঠলো। আমার ছেলে চোর!
ফ্যাকাশে হয়ে গেছে রনটুর চেহারা। বললো, বিশ্বাস কোরো না, আব্বা! গলায় জোর নেই তার। এটাও আমার ঘাড়ে চাপাতে চাইছে। বেশ, স্বীকার করছি, গাড়ির কাঁচ ভেঙেছি আমি। কিন্তু কক্ষনো মোহর চুরি করিনি! খোদার কসম! আমাদের ব্যবসা খারাপ হয়ে গেছে, তাই বাড়াতে চেয়েছিলাম। বিক্রি করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মোহর আমি চুরি করিনি!
অনেকক্ষণ থেকেই একেবারে চুপ হয়ে আছে কিশোর। শুনছে কথাবার্তা। হঠাৎ এখন রনটুর সঙ্গে গলা মিলিয়ে বলে উঠলো, না, আমারও বিশ্বাস, আপনি চুরি করেননি!
.
১৬.
কিশোরের কথা শুনে হাঁ হয়ে গেল তার বন্ধুরা। প্রথমে কথা খুঁজে পেলো রবিন, ঈগলটা ও চুরি করেনি?
কিশোর? ভুরু কোঁচকালেন আরিফ সাহেব। ব্যাপারটা কি বল তো? তুই জানিস কে চুরি করেছে?
ধীরে ধীরে নাটকীয় ভঙ্গিতে বললো কিশোর, আমি এখনও শিওর না।
শিওর না হলে বলা উচিত না।
ঈগলটা যে শরাফত সাহেরে ছেলে চুরি করেনি, এটা শিওর। কে করেছে সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারছি না। তবে চেষ্টা করলে হয়তো ধরে ফেলতে পারবো।
তারমানে তুই বলতে চাইছিস যে কাঁচ ভাঙে সে মোহর চোর নয়?
না। এর অন্য কোনো ব্যাখ্যা আছে।
সেটা কি? অধৈর্য হয়ে হাত নাড়লো মুসা।
এ ধরনের অপরাধকেই বলে কপিক্যাট ক্রাইম, শান্তকণ্ঠে বললো কিশোর।
কি ক্রাইম! নাকমুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো কচি।
বাংলা মানে বোধহয় করা যাবে না এর, কিশোরের হয়ে জবাবটা দিলেন আরিফ সাহেব। তবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে। ধরা যাক, একই সময়ে দুটো অপরাধ ঘটলো। আগে থেকেই ঘটছে এ রকম একটা অপরাধ আরও একবার ঘটলো। ঠিক ওই সময়ে আরেকজন অপরাধী আরেকটা অপরাধ ঘটালো। এমন ভাবে, যাতে মনে হয় দুটোই একজনের কাজ। দ্বিতীয় কোনো অপরাধী যে আছে এটা সহজে বোঝা যাবে না।
মাথা ঝাঁকালো কিশোর। গাড়ির কাঁচ ভাঙার খবরটা জানা ছিলো আমাদের এই দ্বিতীয় অপরাধীর। কাজেই সুযোগ বুঝে আকবর সাহেবের গাড়ির জানালা ভেঙে ঈগলটা চুরি করেছে সে। আশী করেছে, দোষটা গিয়ে পড়বে যে কাঁচ ভাঙে তার ঘাড়ে।
হ্যাঁ, এ রকম অপরাধ অনেক সময়ই ঘটে, এবার মুখ খুললেন ওসি সাহেব। কিশোরের বুদ্ধি, জ্ঞান আর কথাবার্তা রীতিমতো অবাক করেছে তাকে। কি করে বুঝতে পারলে সেটা?
সবার মুখের দিকে তাকালো একবার কিশোর। তারপর বললো, গোড়া থেকেই আমার সন্দেহ হচ্ছিলো, এই কেসে আরও একজন জড়িত রয়েছে। আড়িপেতে আমাদের কথা শুনেছে। কোন ভাবে আমাদের কথা জেনে গিয়েছিল সে, সে জন্যেই শুনতে চেয়েছে আমাদের কথা। টেলিফোন লাইনে ওয়্যারট্যাপ লাগিয়ে দিয়েছে। হুঁশিয়ার করে দিয়েছে রনটুকে যে সারা শহরে ভূত-থেকে-ভূতে চালু হয়ে গেছে, ভূতেরা শুরু করে দিয়েছে কাজ। ব্যাপারটা সম্পর্কে শিওর হতে পারতাম না আমি, যদি সে ছোট্ট একটা রসিকতা করার লোভ সামলাতে পারতো। ভেবেছে আমাদের নিয়ে খানিকটা মজা করবে। ফোনে আমাদের খবর দিয়েছে যে কাঁচ ভাঙুরা ধরা পড়েছে। যা-ই হোক, আমাদের ঠকিয়েছে সত্যি, তবে ফাঁকিটাতে সে নিজেই পড়ে নিজেকে ফাস করে দিয়েছে।
অবাক হয়ে কিশোরের কথা শুনছেন ওসি সাহেব। ছেলেটার কিছু কিছু কথা বুঝতে পারছেন না। এই যেমন ভূত-থেকে-ভূতে। তবে কিছু জিজ্ঞেস করলেন না। কিশোরের কথা থেকে আন্দাজ করে নেয়ার অপেক্ষায় আছেন।
ওরা কি একসঙ্গে কাজ করতো? রবিন জানতে চাইলো। মানে, পার্টনার?
মাথা নাড়লো কিশোর। না। রনটুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো, কি, ঠিক বলিনি?
মাথা নেড়ে সায় জানালো রনটু।
পার্টনার না হলে, আবার জিজ্ঞেস করলো রবিন, তাকে হুঁশিয়ার করতে গেল কেন দ্বিতীয় লোকটা?
এ তো সহজ কথা, হাত ওল্টালো কিশোর। রনটু ধরা পড়লেই পুলিশ জেনে যাবে ঈগলটা সে চুরি করেনি। আসল চোরকে খুঁজতে শুরু করবে তখন। সেই ভয়েই তাকে ওয়্যারলেসে হুশিয়ার করে দিয়েছে চোর যে, তার ওপর সন্দেহ পড়েছে। প্রমাণ খোঁজা হচ্ছে। ব্যস, তাড়াতাড়ি এসে সেগুলো সরানোর চেষ্টা। করেছে রনটু। তার দিকে ফিরে জিজ্ঞেস করলো, তাই না?
আবার মাথা ঝাঁকালো, রনটু। তাজ্জব হয়ে গেছে, তার চোখ দেখেই অনুমান করা যায়।
কে করেছে, নিশ্চয় জানেন না?
না।
ওসি সাহেব বললেন, তাহলে ধরে নেয়া যাচ্ছে, আরেকজন আছে। কে, জানো নাকি? ধরতে পারবে?
সরাসরি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কিশোর বললো, ইলেকট্রনিকসে তার। অসাধারণ জ্ঞান। মনে হয় ধরতে পারবো। আজ বিকেলেই। যদি আমাকে সাহায্য করেন।
কিশোরের ওপর বিশ্বাস জন্মে গেছে ওসি সাহেবের। তবু দ্বিধা করলেন। আরিফ সাহেবের দিকে তাকালেন একবার। তারপর বললেন, বেশ, করবো। শরাফত আহমেদের দিকে তাকিয়ে বললেন, সরি, শরাফত সাহেব, আপনার ছেলেকে থানায় নিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। জামিন চাইলে হয়তো পাবেন। উকিলের সঙ্গে কথা বলুন।
গম্ভীর হয়ে বললেন শরাফত আহমেদ, নিয়ে যান। যে ছেলে বাপের নাক-কান কাটে, তাকে ছাড়িয়ে আনতে যাচ্ছি না আমি।
কিন্তু আব্বা, মরিয়া হয়ে বললো রনটু, তুমি বুঝতে পারছে না, ব্যবসার উন্নতির জন্যেই আমি একাজ…
ব্যবসার উন্নতির জন্যে এসব করতে বলা হয়নি তোমাকে! কড়া গলায় বললেন শরাফত সাহেব। ওসি সাহেব, নিয়ে যান। যা শাস্তি হয় তোক। ওর শাস্তি হওয়াই উচিত। বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলেন। চোখের কোণে জল।
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললেন আরিফ সাহেব। আস্তে বললেন, জীবনে কতো যে ঘটনা দেখলাম! সন্তান মানুষ না হলে… কথাটা শেষ করলেন না তিনি। কিশোরের দিকে তাকালেন, তা চোরটা কে, বললি না তো?
ডলি খান, বোমা ফাটালো যেন কিশোর। মিস্টার আকবর আলি খানের মেয়ে।
.
১৭.
কিশোরের ওপর ভীষণ রেগে গেল ডলি। আকবর সাহেরে বসার ঘরে বসেছে সবাই-আকবর সাহেব, তাঁর মেয়ে ডলি, তিন গোয়েন্দা, কচি, ওসি সাহেব, আরিফ সাহেব। রনটুকে নিয়ে পুলিশের জীপে করে থানায় চলে গেছেন সার্জেন্ট আজিজ।
কাজটা আপনিই করেছেন, শান্তকণ্ঠে আবার বললো কিশোর। আরো আগেই বোঝা উচিত ছিলো আমার।
কিন্তু একাজ কেন করবে আমার মেয়ে? হাতের লাঠিটা সজোরে মেঝেতে ঠকলেন আকবর সাহেব।
আপনার মেয়েকেই জিজ্ঞেস করুন।
না, আমি তোমার মুখ থেকেই শুনতে চাই।
আসলে মেয়ের কোনো খোঁজখবর রাখেন না তো আপনি, আছেন নিজেকে নিয়ে আর আপনার মুদ্রা নিয়ে, নইলে অনেক আগেই বুঝতে পারতেন। কিছুটা ঝাঁঝের সঙ্গেই বললো কিশোর। আকবর সাহেবের দুর্ব্যবহার অনেক সহ্য করেছে সে, আর নয়। ডলির দিকে তাকিয়ে বললো, দয়া করে আপনার কামিজের হাতাটা একটু তুলবেন?
রেগে গেলেন আকবর সাহেব। কেন, কামিজের হাতা তুলবে কেন? ফাজলেমি করার আর জায়গা পাওনি!
আমি ফাজলেমি করছি না। তুলতে বলুন, নিজের চোখেই দেখতে পাবেন।
কি দেখতে পাবো?
আগে তো তুলুক।
কিন্তু দ্বিধা করতে লাগলো ডলি।
কি হলো? ডলির দিকে তাকিয়ে ভুরু নাচালো কিশোর। তুলুন।
ধীরে ধীরে ডান হাতের হাতাটা কনুই পর্যন্ত গোটালো ডলি। চোখ নামিয়ে রেখেছে। তার হাতের কালো কালো দাগগুলো সবাই দেখলো। সবাই বুঝতে পারলো কিসের দাগ ওগুলো, শুধু কচি আর আকবর সাহেব ছাড়া। তিনি বললেন, তুললো তো, এখন কি হলো?
ধৈর্য হারালেন ওসি। আকবর সাহেবের কাটা কাটা কথা তারও পছন্দ হচ্ছে না। কঠিন কণ্ঠে বললেন, কেন, বুঝতে পারছেন না?
না, পারছি না! প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন আকবর সাহেব।
আরিফ সাহেব বললেন, সর্বনাশ হয়ে গেছে আপনার মেয়ের, জানেনই না আপনি! ও ড্রাগ অ্যাডিক্ট। সর্বনাশা নেশার জালে জড়িয়ে পড়েছে আপনার মেয়ে। ওগুলো ইঞ্জেকশনের সুচের দাগ।
হঠাৎ যেন ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লেন আকবর সাহেব। এলিয়ে পড়লেন। সোফায়। বোকার মতো চেয়ে রয়েছেন মেয়ের হাতের দাগগুলোর দিকে। স্তব্ধ হয়ে গেছেন।
এবার কি আর অস্বীকার করবেন, ডলির দিকে চেয়ে কোমল গলায় বললো কিশোর, হেরোইন কেনার টাকার জন্যে ঈগলটা চুরি করেননি আপনি?
জবাব দিলো না ডলি। মাথাটা ঝুলে পড়েছে বুকের ওপর।
আমেরিকায় গিয়ে এই নেশার শিকার হয়েছেন, তাই না?
হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালো ডলি। পড়তে গিয়েছিলাম। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে এই সর্বনাশ হয়েছে আমার। আব্বা টাকা পাঠাতে পড়ার জন্যে, আমি পড়ালেখা বাদ দিয়ে খরচ করতাম নেশার পেছনে। তাতেও কুলাতো না। নানান অসুবিধায়। পড়লাম। শেষে বাধ্য হয়ে চলে এসেছি দেশে।
ইলেকট্রনিকসে আপনার অসাধারণ জ্ঞান। ওই স্যাটেলাইট ডিশটা আপনারই, তাই না?
হ্যাঁ। আব্বা আনিয়ে দিয়েছে আমেরিকা থেকে। আমার শখ দেখে। সিবি রেডিও, হ্যাম রেডিও, টিভি, সব কিছুরই অ্যান্টেনা হিসেবে ব্যবহার করি আমি ডিশটা।
আমাদের কথা শোনার জন্যে টেলিফোন লাইনে ওয়্যারট্যাপ আপনিই লাগিয়েছিলেন?
না। সানি লাগিয়ে দিয়েছে। ও আমাকে ভালোবাসে। সে জন্যে যা করতে বলি তা-ই করে। আমার ড্রাগ নেয়ার কথাও জানে। অনেক চেষ্টা করেছে। ছাড়ানোর জন্যে। আমি মানা করেছি, তাই বলেনি আব্বাকে। গোপন রেখেছে।
এখন কোথায় সে?
বাইরে কোথাও গেছে।
আচ্ছা, আপনার আব্বা আমাদেরকে কাজে লাগাতে চান একথা বলে ফোনটা। করেছিলো কেন সানি? জবাবের অপেক্ষা না করে নিজে নিজেই বললো কিশোর, নিশ্চয় নিজেদেরকে সন্দেহমুক্ত রাখতে চেয়েছিলেন। অপরাধী প্রায়ই ভাবে, এই বুঝি কেউ তাকে সন্দেহ করে বসলো। আপনারও হয়েছিলো সেই অবস্থা। আপনি ধরেই নিয়েছিলেন, আমরা আপনাকে সন্দেহ করছি। শিওর হওয়ার জন্যেই আসলে সেদিন ওকে দিয়ে ফোন করিয়ে আমাদের বাড়িতে ডেকে এনেছিলেন? তাই না?
আস্তে মাথা ঝাঁকালো শুধু ডলি।
মোহর যে রাতে চুরি করেছেন, বলে গেল কিশোর, সে রাতে আপনিই গাড়ি চালিয়েছিলেন। আপনার আব্বা ভুলে বাক্সটা ফেলে রেখে চলে গেলেন। এই ফাঁকে আপনি তুলে নিলেন বাক্সটা। এতোই ছোট ওটা, যে জানে সে ছাড়া অন্ধকারে আর কারও চোখে পড়ার নয়। লুকিয়ে ফেললেন বাক্সটা। তারপর ভাঙলেন গাড়ির কাঁচ। ভাবখানা এমন, যেন অন্য কেউ এসে ভেঙে দিয়ে গেছে। গাড়ির কাঁচ ভাঙা যাচ্ছিলো কয়েক মাস ধরে, সেটা জানা ছিলো আপনার। সময় মতো সুযোগটা কাজে লাগিয়েছেন।
চুপ করে রইলো ডলি।
জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেললো কিশোর। এইই হয়। ড্রাগের নেশা এমনই ভয়ঙ্কর সে জিনিস পাওয়ার জন্যে সব কিছু করতে রাজি মানুষ। হিতাহিত জ্ঞান। হারিয়ে ফেলে। নিজের বাপের জিনিসও চুরি করতে বাধেনি আপনার। আপনার
জন্যে সত্যিই দুঃখ হচ্ছে আমার, মিস খান! মুদ্রাটা কি বিক্রি করে ফেলেছেন?
মাথা নাড়লো ডলি। এখনও বিক্রি করতে পারেনি।
এক মুহূর্ত চুপ করে থেকে জিজ্ঞেস করলো কিশোর, তো, এখন কি জিনিসটা বের করে দেকেন? দেখতাম।
নীরবে উঠে দাঁড়ালো ডলি।
তার পেছনে চললো সবাই।
সোজা পাশের দরজা দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো মেয়েটা। এগোলো স্যাটেলাইট ডিশ্নে দিকে। ওটার কাছে এসে থামলো। কারো দিকে না তাকিয়ে ঝুঁকে বসে হাত ঢুকিয়ে দিলো ডিশের নিচে। টেপ দিয়ে আটকানো রয়েছে মুদ্রাটা। টেনে টেপ ছিঁড়ে খুলে আনলো ওটা। বাড়িয়ে দিলো কিশোরের দিকে।
.
১৮.
বিকেলে বাগানে চেয়ার পেতে বসেছে সবাই। আরিফ সাহেব, ওসি সাহেব, তিন। গোয়েন্দা আর কচি। মামী রান্নাঘরে ব্যস্ত। কাঁচ ভাঙার রহস্য নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বেশির ভাগ কথা কিশোরই বলছে। মাঝে মাঝে প্রশ্ন করছেন ওসি সাহেব।
আচ্ছা, কিশোর, জিজ্ঞেস করলেন তিনি, কি ভুলটা করেছিলো ডলি, যে জন্যে তোমার সন্দেহ হলো কচি যে ভাঙে সে মোহর চোর নয়?
দুটো কারণে, জবাব দিলো কিশোর। প্রথমত, পেছনের কাঁচ ভেঙেছে ডলি। আর দ্বিতীয় কারণ, ওদের গাড়িটা টয়োটা নয়। রনটু শুধু টয়োটার কাঁচই ভাঙতো। এ ব্যাপারটা জানা ছিলো না ডলির। ফলে ভুলটা করে বসেছে। বুঝে গেলাম একটা কপিক্যাট ক্রাইম ঘটেছে। পেছনের সীটে রাখা ছিলো বাক্সটা, তাই সেদিকের কাঁচটাই ভেঙেছে সে। কিন্তু রনটু ভাঙতে সামনের কাঁচ, উইগুশীল্ড।
আনাড়ি কপিক্যাট, মুচকি হাসলেন আরিফ সাহেব। বোকার মতো কাজ করে ব্রাটা পড়লো।
আরও একটা বোকামি করেছে আমাদের ফোন করে। এরকম করেই ব্রা পড়ে অপরাধী, এ-তো জানা কথাই। আকবর সাহেবের বাড়ি গিয়ে দুটো ব্যাপার জানলাম। একঃ আকবর সাহেব আমাদেরকে তদন্তে নিয়োগ করতে বলেননি। তার সঙ্গে এ ব্যাপারে কোনো আলোচনাই করেনি ডলি আর সানি।
আর দ্বিতীয় ব্যাপারটা? মুসার প্রশ্ন।
হাফ-হাতা ব্লাউজ পরেছিলো সেদিন ডলি, নিশ্চয় মনে আছে তোমাদের?
কি জানি! মাথা চুলকালো মুসা।
মাথা নাড়লো রবিন, না, খেয়াল করিনি। কিন্তু তাতে কি?
গোয়েন্দাগিরি করছ এতোদিন, খেয়াল করা উচিৎ ছিলো, সুযোগ পেয়েই খানিকটা উপদেশ ঝেড়ে দিলো গোয়েন্দাপ্রধান। ডলির হাতে ইঞ্জেকশনের সুচের দাগ। প্রথমে অবাক হয়েছিলাম। পরে সন্দেহ জাগলো। ধীরে ধীরে বুঝে ফেললাম, কে, কেন চুরি করেছে মুদ্রাটা।–
দরজায় দেখা দিলেন মামী। ডেকে বললেন, এই কিশোর, তোর ফোন।
ফোন? ভুরু কুঁচকালো মুসা। এখন আবার কে ফোন করলো?
দেখে আসি, উঠে দাঁড়ালো কিশোর।
কয়েক মিনিট পরে ফিরে এলো হাসিমুখে। চোখে জিজ্ঞাসা নিয়ে তার দিকে তাকালো মুসা, রবিন আর কচি।
দাওয়াত, খবরটা জানালো কিশোর। দাওয়াত দিয়েছে গোড়ানের ছেলেরা। একটা ক্লাব করেছে ওরা, নাম দিয়েছে তিন গোয়েন্দা ক্লাব।
কি বলেছো? জানতে চাইলো কচি, যাবে?
নিশ্চয় যাবো। আগামী তেরো-চোদ্দ দিন প্রত্যেকটা পাড়ায় গিয়ে সবার সঙ্গে পরিচয় করবো। ওরা যে টেলিফোনের মাধ্যমে একটা অন্যায় কাজ বন্ধ করতে সাহায্য করেছে সে গল্প বলতে হবে না ওদেরকে?
কাল আমাকেও নিয়ে যেও, একদিন ফার্মে কাজ না করলে কিছু হবে না, বললো কচি। ওর হাতে শোভা পাচ্ছে পিকআপের চাবি।
নিশ্চয়।
সুখেই আছো, দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ওসি সাহেব। ইস, বিশটা বছর যদি কমে যেতো বয়স আমার, ভিড়ে যেতাম তোমাদের দলে! এই কাজকর্ম, দায়িত্ব, টেনশন আর ভালো লাগে না!
তুমি তো তা-ও আরামেই আছো, একই রকম দীর্ঘশ্বাস ফেললেন আরিফ সাহেবও। কাজ করে সময় পার করে দাও। আমার কি অবস্থা ভাবো তো। সময় একদম কাটতে চায় না। কিশোরের দিকে তাকলেন তিনি। অনেকটা অনুরোধের সুরেই বললেন, এই কিশোর, কাল আমাকেও নিয়ে যাস তোদের সঙ্গে। গাড়িও পাবি, বিনা বেতনে একজন ড্রাইভারও। কি, নিবি আমাকে?
নেবো, মামা।