অতঃপর আমাদের যে কর্মচঞ্চলতা আসিয়াছিল‌, তাহা যেন দমকা বাতাসের মত অকস্মাৎ শান্ত হইয়া গেল। দুদিন আর কোনো সাড়াশব্দ নাই। কেবল বিকাশ একবার টেলিফোন করিয়া জানাইল তাহারা শিকারের পিছনে লাগিয়া আছে। সন্তোষবাবু ও রবিবর্মা নিয়মিত অফিস যাইতেছেন ও বাড়ি ফিরিতেছেন; যুগল ও উদয় কলেজ যাইতেছে ও বাড়ি ফিরিতেছে; উদয় মাঝে একদিন বিকালবেলা হকি খেলিতে গিয়াছিল। উল্লেখযোগ্য অন্য কোনো খবর নাই।

তৃতীয় দিন‌, অথাৎ‌, বৃহস্পতিবারে আবার আমাদের জীবনে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়া আসিল‌, তৈলাভাবে নিবন্ত প্রদীপ আবার ভাস্বর হইয়া উঠিল।

সকালবেলা নেংটি আসিল। তাহার ভাবভঙ্গীতে একটু অস্বস্তির লক্ষণ। ব্যোমকেশ তাহাকে একটি সিগারেট দিয়া বলিল‌, ‘কি খবর?’

নেংটি তৎক্ষণাৎ উত্তর দিল না‌, সিগারেট ধরাইয়া কুঞ্চিত চক্ষে ব্যোমকেশের পানে চাহিল। তারপর বলিল‌, ‘ব্যোমকেশদা‌, আপনি কি উদয়দার পিছনে গুপ্তচর লাগিয়েছেন?’

ব্যোমকেশ ভ্রূ তুলিল‌, ‘কে বলল?’

‘উদয়দা বলল‌, একটা সিড়িঙ্গে ছোড়া তার পিছনে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’

‘উদয় বুঝি খুব ঘাবড়ে গেছে?’

‘ঘাবড়াবার ছেলে উদয়ন্দা নয়‌, সে বুক ফুলিয়ে বেড়াচ্ছে; যেন ভারি গৌরবের কথা। মাসিমা কিন্তু ভয় পেয়েছেন।’

ব্যোমকেশ চকিত হইয়া চাহিল‌, ‘তাই নাকি। কিন্তু তিনি ভয় পেলেন কেন?’

নেংটি মাথা নাড়িয়া বলিল‌, ‘তা জানি না। কাল উদয়ন্দা মাসিমার কাছে বড়াই করছিল‌, জানো মা‌, আমার পিছনে পুলিস-গোয়েন্দা লেগেছে। তাই শুনে মাসিমার মুখ শুকিয়ে গেল। একেই তো ছটফট মানুষ‌, সেই থেকে আরো ছটফট করে বেড়াচ্ছিলেন। আজ সকালে আমাকে বললেন‌, তুই ব্যোমকেশবাবুকে ডেকে নিয়ে আয়‌, তাঁর সঙ্গে কথা বলার।’

‘আমার সঙ্গে কথা বলবেন?’

‘হ্যাঁ।–ব্যোমকেশদা‌, কিছু হদিস পেলেন?’

ব্যোমকেশ একটু চুপ করিয়া থাকিয়া বলিল‌, ‘কিছু হদিস পেয়েছি।’

নেংটি বিস্ফারিত চক্ষে বলিল‌, ‘পেয়েছেন।’

‘বোধহয় পেয়েছি‌, কিন্তু তা এখনও বলবার মত নয়। চল‌, তোমার মাসিমা কি বলেন শুনে আসি। ওঠ অজিত।’

সন্তোষবাবুর বাড়িতে উপস্থিত হইয়া দেখিলাম‌, নীচের তলার হল-ঘরে হৈ-হুল্লোড় চলিতেছে। চিংড়ি একটা তালপাতার পাখা লইয়া যুগলকে মারিতে ছুটিয়াছে‌, উদয় চিংড়ির লম্বা বেণী ঘোড়ার রাশের মত ধরিয়া তাহাকে নিয়ন্ত্রিত করিতেছে এবং বলিতেছে-‘হ্যাট ঘোড়া-হ্যাটু হ্যাট।’। চিংড়ি বলিতেছে‌, ‘কেন আমার খোঁপা খুলে দিলে?’ তিনজনেই উচ্চকণ্ঠে হাসিতেছে এবং ঘরময় ছুটাছুটি করিতেছে। তিনজনের মুখেই খুনসুড়ির উল্লাস।

আমাদের আবিভাবে রঙ্গক্রীড়া অর্ধপথে থামিয়া গেল। ক্ষণকালের জন্য তিনজনে অপ্রতিভভাবে দাঁড়াইয়া রহিল‌, তারপর চিংড়ি লজ্জিত মুখে সিঁড়ি দিয়া উপরে পলায়ন করিল; যুগল ও উদয় অপেক্ষাকৃত মস্থর পদে তাহার অনুবতী হইল।

নেংটি আমাদের বসাইয়া মাসিমাকে খবর দিতে গেল। আমি চুপি চুপি ব্যোমকেশকে বলিলাম‌, ‘ভায়ে ভায়ে ভাব হয়ে গেছে দেখেছি?’

ব্যোমকেশ একটু গভীর হাসিয়া বলিল‌, ‘এর নাম যৌবন।’

নেংটি নামিয়া আসিয়া বলিল‌, ‘মাসিমা আপনাদের ওপরে ডাকছেন।’

দ্বিতলে উঠিলাম‌, কিন্তু হল-ঘরে কেউ নাই। এই খানিক আগে যাহারা উপরে আসিয়াছিল‌, তাহারা বোধকরি স্ব স্ব কক্ষে প্রবেশ করিয়াছে। নেংটি একটি ভেজানো দোরের কপাটে টোকা মারিল। ভিতর হইতে আওয়াজ হইল‌, ‘এস।’

নেংটি দ্বার ঠেলিয়া আমাদের ভিতরে লইয়া গেল।

ঘরটি শয়নকক্ষ হিসাবে বেশ বিস্তৃত; একপাশে জোড়া-খাট ঘরের বিস্তার খর্ব করিতে পারে নাই। খাটটিতে সম্ভবত শ্ৰীমতী চামেলি চিংড়িকে লইয়া শয়ন করেন। খাট ছাড়া ঘরে ওয়ার্ডরোব‌, কাপড়ের আলনা‌, ড্রেসিং-টেবিল‌, দুইটি আরাম-কেন্দারা। দেয়ালে একটি লেলিহরসনা মা-কালীর পট। দুইটি বড় বড় জানোলা দিয়া বাড়ির পিছন দিকের পাইনের সারি দেখা যাইতেছে।

ঘরে দুইটি স্ত্রীলোক। এক‌, শ্ৰীমতী চামেলি; তিনি স্নান করিয়া গরদের শাড়ি পরিয়াছেন‌, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা‌, কপালে আধুলির মত একটি সিঁদুরের ফোঁটা‌, মুখ গভীর‌, চক্ষে চাপা উত্তেজনার অস্বাভাবিক দীপ্তি। দ্বিতীয়‌, চিংড়ি। তাহার ক্রীড়া-চপলতা আর নাই। সে জানালার সম্মুখে দাঁড়াইয়া ঘাড় বাঁকাইয়া বিস্ফারিত নেত্ৰে আমাদের পানে চাহিয়া আছে।

শ্ৰীমতী চামেলি বলিলেন‌, ‘নেংটি‌, চিংড়ি‌, তোরা বাইরে যা‌, আমি এদের সঙ্গে কথা কইব।’

চিংড়ির যাইবার ইচ্ছা ছিল না‌, সে শম্বুকগতিতে জানালা হইতে দ্বারের দিকে পা বাড়াইতেছিল‌, নেংটি গভীর ভূকুটি করিয়া মস্তক-সঞ্চালনে তাহাকে ইশারা করিল। দু’জনে ঘর হইতে বাহির হইল‌, নেংটি দ্বার ভেজাইয়া দিল।

শ্ৰীমতী চামেলি চেয়ার নির্দেশ করিয়া বলিল‌, ‘আপনারা বসুন।’ তাঁহার কথা বলিবার ভঙ্গী কাটা-কাটা‌, যেন অত্যন্ত সতর্কভাবে কথা বলিতেছেন।

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘আপনি বসুন।’ ঘরে দু’টি মাত্র চেয়ার ছিল‌, তৃতীয় ব্যক্তিকে বসিতে হইলে খাটের কিনারায় বসিতে হয়। শ্ৰীমতী চামেলি একবার খাটের দিকে দৃষ্টিনিক্ষেপ করিয়া মুখ ঈষৎ কুঞ্চিত করিলেন‌, বলিলেন‌, ‘আমি বসব না‌, আমার এখনো পুজো হয়নি। আপনারা বসুন।’

চেয়ারে বসিতে বসিতে ভাবিলাম‌, ইনি একদিন সন্ত্রাসবাদিনী ছিলেন‌, বন্দুক চালাইতেন; তখন নিশ্চয় শুচিবাই ছিল না। অবস্থাচক্ৰে মনের কত পরিবর্তনই না হয়।

আমরা উপবিষ্ট হইলে শ্ৰীমতী চামেলি কথা বলিতে আরম্ভ করিলেন‌, ধীরে ধীরে গুনিয়া শুনিয়া কথা বলিতে লাগিলেন। সংসারের সাধারণ কথা‌, যাহা ব্যোমকেশকে শুনাইবার কোনই সার্থকতা নাই; মনে হইল তিনি ভয় পাইয়াছেন‌, তাই আসল কথাটা বলিবার আগে খানিকটা ভণিতা করিয়া লইতেছেন।

কিছুক্ষণ নিবিষ্ট মনে শুনিয়া ব্যোমকেশ মুখ তুলিল‌, বলিল‌, ‘দেখুন‌, আপনি উদ্বিগ্ন হবেন না। আমি এ পরিবারের বন্ধু‌, সন্তোষবাবু আপনাদের সকলের স্বার্থরক্ষার জন্যে আমাকে নিযুক্ত করেছেন। হেনার মৃত্যু-সম্বন্ধে আপনার যদি কিছু জানা থাকে‌, আমাকে খুলে বলতে পারেন।’

শ্ৰীমতী চামেলি একটু থমকিয়া গেলেন‌, ব্যোমকেশকে যেন নূতন চক্ষু দিয়া নিরীক্ষণ করিয়া বলিলেন‌, ‘আপনি পুলিসের দলের লোক নয়?

ব্যোমকেশ বলিল‌, ‘না‌, পুলিসের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।’

‘কিন্তু–কিন্তু–আপনি জানেন পুলিস আমার ছেলেদের পিছনে গোয়েন্দা লাগিয়েছে।’

বুঝিলাম‌, শ্ৰীমতী চামেলি জানেন না যে পুলিস এ মামলা হইতে হাত গুটোইয়াছে। সন্তোষবাবুর সঙ্গে বাক্যালাপ বন্ধ‌, কে-ই বা তাঁহাকে বলিবে।

ব্যোমকেশ চুপ করিয়া রহিল। শ্ৰীমতী চামেলির স্বর তীব্র হইয়া উঠিল‌, ‘এ কি অন্যায়; আমার ছেলেরা নির্দোষ। তবু তাদের পিছনে গুপ্তচর লাগবে কেন?’

ব্যোমকেশ শান্তস্বরে বলিল‌, ‘তারা নির্দোষ কিনা জানতে চায় বলেই বোধহয় গুপ্তচর লেগেছে।’

‘আমি হাজার বার বলেছি আমার ছেলেরা নির্দোষ‌, তবু তাদের বিশ্বাস হয় না।’

‘কিন্তু ওরা নির্দোষ তা আপনিই বা জানলেন কি করে? দেখুন‌, কিছু মনে করবেন না‌, আপনি ওদের মা‌, আপনার পক্ষে ওদের নিদোষিতায় বিশ্বাস করা স্বাভাবিক। কিন্তু বাইরের লোকের পক্ষে তো তা নয়। তাদের চোখে সবাই সমান।’

শ্ৰীমতী চামেলির চোখে আভ্যন্তরিক জল্পনার ছায়া পড়িল‌, তিনি এক পা সম্মুখে আসিয়া হঠাৎ চাপা সুরে বলিলেন‌, ‘ব্যোমকেশবাবু্‌, আমি জানি হেনা কি করে মরেছে। আমি স্বচক্ষে দেখেছি।’

ব্যোমকেশ চমকিয়া চক্ষু বিস্ফারিত করিল—’স্বচক্ষে দেখেছেন।’

‘হ্যাঁ!’ শ্ৰীমতী চামেলি এক নিশ্বাসে বলিয়া গেলেন‌, ‘সেদিন চিংড়ি বাথরুমে যাবার পর আমি বাইরে এসে দেখলুম‌, হেনা তেতলার ছাদে যাচ্ছে। সকলেই জানে আমি হেনাকে সহ্য করতে পারি না‌, হেনাও আমাকে ভয় করে। আমি ভাবলুম‌, এই সুযোগে আমিও ছাদে গিয়ে যদি তাকে বেশ দু-চার কথা শুনিয়ে দিই‌, তাহলে সে আমার বাড়ি ছেড়ে চলে যাবে‌, আমার ছেলেরা নিরাপদ হবে।’

‘তাহলে ছেলেদের নিরাপত্তা সম্বন্ধে আপনি উদ্বিগ্ন হয়েছিলেন? যাহোক‌, তারপর?’

‘আমিও সিঁড়ি বেয়ে তেতলার ছাদে গেলুম। আমাকে দেখেই হেনা ভয় পেয়ে আলসের দিকে ছুটে গিয়ে আলসের গায়ে আছড়ে পড়ল। তারপর তাল সামলাতে না পেরে উলটে নীচে পড়ে গেল। আমাকে দেখে বোধহয় তার ভয় হয়েছিল যে আমি তাকে মারব।’

ব্যোমকেশ তাঁহার পানে নিষ্পলক চাহিয়া থাকিয়া বলিল‌, ‘এসব কথা আগে বলেননি কেন?’

শ্ৰীমতী চামেলি মুখের একটা অধীর ভঙ্গী করিয়া বলিলেন‌, ‘বললে কি কেউ বিশ্বাস করত? উল্টে সন্দেহ করত। আমিই হেনাকে ঠেলে ফেলে দিয়েছি।’

ব্যোমকেশ একবার ঘাড় হেঁট করিয়া আবার মুখ তুলিল‌, ‘তা বটে। আচ্ছা‌, আপনি যখন সিঁড়ি দিয়ে ছাদে গেলেন তখন উদয়কে দেখেছিলেন?’

শ্ৰীমতী চামেলি ঈষৎ শঙ্কিত কণ্ঠে বলিলেন‌, ‘না‌, উদয় সেখানে ছিল না।’

‘কাউকে দেখেননি?’

না‌, কাউকে না।’

‘সিঁড়ির দরজা, ছাদে যাবার দরজা, নিশ্চয় খোলা ছিল?’

‘হ্যাঁ, খোলা ছিল।‘

‘আপনি যখন হেনাকে দেখলেন‌, তখন সে কী করছিল?’

‘ছাদের মাঝখানে দাঁড়িয়েছিল।’

‘তার হাতে কিছু ছিল?’

‘লক্ষ্য করিনি।‘

ব্যোমকেশ নিশ্বাস ছাড়িয়া উঠিয়া দাঁড়াইল‌, বলিল‌, ‘আর বোধহয় আপনার কিছু বলবার নেই। আচ্ছা‌, তাহলে আসি। পুলিসকে আপনার কথা বলে দেখতে পারেন।’

শ্ৰীমতী চামেলি শক্ত হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলেন‌, আমরা চলিয়া আসিলাম।

 

বাসায় ফিরিতে বেলা দ্বিপ্রহর হইল।

শ্ৰীমতী চামেলি ছেলেদের বাঁচাইবার জন্য যে নিপুণ কল্পকথা রচনা করিয়াছিলেন‌, তাহা ব্যোমকেশকে আরও বিভ্রান্ত ও বিমর্ষ করিয়া তুলিয়াছিল। সে তক্তপোশের উপর লম্বা হইয়া বিক্ষুব্ধ স্বরে বলিল‌, ‘কিছু হচ্ছে না-কিছু হচ্ছে না‌, শুধু ভাঁওতা‌, শুধু ধাপ্পা। সবাই আমার চোখে ধুলো দেবার চেষ্টা করছে।’

আমি বলিলাম‌, ‘তোমারই বা কিসের গরজ‌, ব্যোমকেশ? পুলিস হাল ছেড়ে দিয়েছে‌, সন্তোষবাবুরও আগ্রহ নেই। তবে তুমি কেন মিছে খেটে মরছ!’

ব্যোমকেশ ক্লিষ্ট স্বরে বলিল‌, ‘মুশকিল কি হয়েছে জানো? আমি সত্যান্বেষী‌, সত্যি কথাটা যতক্ষণ না জানতে পারছি‌, আমার প্রাণে শান্তি নেই। দুক্তোর! এ সময়ে যদি অন্য একটা কাজ হাতে থাকতো তাহলে হয়তো ভুলে থাকতে পারতাম।–’

এই সময় সদর দরজার সামনে পোস্টম্যান আসিয়া দাঁড়াইল।

ইন্সিওর-করা রেজিস্ট্রি খাম। প্রেরকের নাম-উড়িষ্যা রাজ্য সরকারের দপ্তর। কৌতূহলী হইয়া উঠিলাম-কী ব্যাপার! ব্যোমকেশ খাম খুলিয়া একটি টাইপ-করা চিঠি বাহির করিল।

প্রিয় মহাশয়‌, মান্যবর মুখ্যমন্ত্রী মহাশয়ের আদেশে এই পত্র লিখিতেছি। আপনি ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় সরকার ও বোম্বাই সরকারের পক্ষে যে কাজ করিয়াছেন তাহা আমাদের অবিদিত নহে।

সম্প্রতি উড়িষ্যা সরকারের দপ্তরে কিছু রহস্যময় ব্যাপার ঘটিতে আরম্ভ করিয়াছে। দপ্তর হইতে মূল্যবান ও অতি গোপনীয় দলিল অদৃশ্য হইয়া যাইতেছে‌, কিন্তু অপরাধীকে ধরা যাইতেছে না। এ বিষয়ে উড়িষ্যা সরকার আপনার সাহায্যপ্রার্থী। আপনি অবিলম্বে কটিকে আসিয়া তদন্তের ভার গ্রহণ করিলে বাধিত হইব। বিলম্বে রাষ্ট্রের ইষ্টহানির সম্ভাবনা।

আপনি কবে আসিতেছেন তার-যোগে জানাইলে উপকৃত হইব। আপনার রাহা-খরচ ইত্যাদি বাবদ ৫০০ টাকার চেক অত্রসহ পাঠানো হইল।

ধন্যবাদান্তে নিবেদন ইতি।–

ব্যোমকেশ প্রফুল্ল মুখে চিঠি ও চেক আমার হাতে দিল‌, বলিল‌, ‘সরকারী মহলে আমার খ্যাতি রাষ্ট্র হয়ে গেছে দেখছি।’

চিঠি পড়িয়া মুখ তুলিয়া দেখিলাম সে দুই হাত পিছন দিকে শৃঙ্খলিত করিয়া পায়চারি করিতেছে। বলিলাম‌, যা চাইছিলে তাই হল। যাবে তো?’

‘দেশের কাজ। যাব বৈকি।’

‘কবে যাবে?’

সে পদচারণে বিরতি দিয়া বলিল‌, ‘অজিত‌, তুমি খাওয়া-দাওয়া সেরে চেকটা ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে এস। আর কটকে একটা তার করে দাও‌, আমরা অবিলম্বে যাচ্ছি।’

প্রশ্ন করিলাম‌, ‘অবিলম্বেটা কবে?’

সে হাসিয়া বলিল‌, ‘আজ কালের মধ্যে।’

Sharadindu Bandyopadhyay ।। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়