একটি কুৎসিত প্রাণী

প্রাণীটাকে তুলে নাও।

আমি পারব না। তুমি তুলে নাও।

কেন তুমি পারবে না?

আমার ঘেন্না করছে। এরকম কুৎসিত প্রাণী আমি আগে কখনো দেখি নি।

কেন তুমি ধরে নিলে মহাজগতের সব প্রাণী সুদর্শন হবে?

তাই বলে এরকম বীভৎস? এরকম কুৎসিত?

কিছু করার নেই।

দেখেছ শরীর থেকে কী রকম ডালপালার মতো বের হয়ে এসেছে। দুটি উপরে দুটি নিচে তার মাথায় আবার কিলবিলে কিছু জিনিস। কেমন করে নড়ছে দেখেছ?

দেখেছি।

দেখলে ঘেন্না করে না?

করে। কিন্তু তুমি জান আমাদের একটা প্রাণীকে ধরে নিয়ে যেতে হবে।

আমি পারব না। এরকম কুৎসিত প্রাণীকে আমি স্পর্শও করতে পারব না।

কেন তুমি সময় নষ্ট করছ?

প্রাণীটার সবচেয়ে কুৎসিত কী জিনিস জান?

কী?

তার নড়াচড়া করার ভঙ্গি। দেখেছ কেমন কিলবিল করে নড়ে।

হ্যাঁ। উপরের অংশটা আবার খানিকটা ঘুরতে পারে। সেখানে জায়গায় জায়গায় আবার ঠেলে বের হয়ে আসছে, তার মাঝে আবার গর্ত।

কী কুৎসিত গর্ত, সেগুলি আবার ভেজা ভেজা। স্যাঁতসেঁতে। ছি!

ঠিকই বলেছ, উপরে নিচে পাশেও গর্ত রয়েছে। মাঝখানের গর্ত থেকে লালচে কী একটা বের হল আবার ঢুকে গেল।

উপরের দিকে রোয়া রোয়া কী বের হয়ে এসেছে দেখেছ? পেঁচিয়ে আছে কোথাও কোথাও, কী বীভৎস দেখায় দেখেছ?

দেখেছি। কিন্তু এখন আর কথা না বলে একটাকে তুলে নাও। আমাদের বেশি সময় নেই।

আমি পারব না। তুমি বলে দাও এটা বুদ্ধিমান প্রাণী। বুদ্ধিমান প্রাণী হিসেবে দেখাতে পারলে আমাদের এটা নিতে হবে না।

কিন্তু তুমি জান এটা বুদ্ধিমান প্রাণী নয়। বুদ্ধিমান প্রাণী কখনো নিজেরা নিজেদেরকে ধ্বংস করে না।

তা ঠিক।

তুমি একটা প্রাণীকে তুলে নাও।

ঠিক আছে, তুলছি। কিন্তু জেনে রাখ এটাই শেষ। আর কখনো এরকম কুৎসিত একটা প্রাণী আমি স্পর্শ করব না। ঠিক আছে?

ঠিক আছে।

***

পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণরত মহাজাগতিক কিছু প্রাণী খুব সাবধানে একটি মানুষকে তাদের মহাকাশযানে তুলে নিল।

<

Muhammed Zafar Iqbal ।। মুহম্মদ জাফর ইকবাল