আমার পড়ার ঘর থেকে কিয়দ্দূরে
দু’জন দাঁড়িয়ে আচেহ বহুদিন থেকে। একজন দীর্ঘকায়,
হৃষ্টপুষ্ট; অন্যজন স্বাস্থ্যে ঝলসিত,
অথচ ঈষৎ খাটো, শীর্ণকায়। উভয়ে সবুজ পাতা আর
ডালপালা নিয়ে মৃত্তিকায় এবং আকাশে চোখ
রেখে চেয়ে থাকে, পরস্পর আলিঙ্গনে,
চুম্বনে অত্যন্ত অভিলাষী। বস্তুত বিচ্ছিন্ন থাকে
সর্বদাই, কালেভদ্রে দু’জন কিঞ্চিৎ হয়ে ওঠে স্পর্শময়।

কখনও কখনও মনে হয় ওরা, সেই বৃক্ষযুগল, আমার
জানালা পেরিয়ে ঘরে ঢুকে পড়তে ইচ্ছুক খুবই,
যেন কিছু গূঢ় কথা অথবা কাহিনী
বলার তাগিদে সেই কবে থেকে আছে প্রতীক্ষায়
দিনরাত। কিছুকাল পর এক গোধূলিবেলায়,
যেদিন কলম নিয়ে বসেছি কবিতা
লেখার অপ্রতিরোধ্য তাড়নায়, দীর্ঘকায় গাছটি ওপার
থেকে ডেকে বলে গাঢ় সকরুণ স্বরে, ‘শোনো কবি,
আমরা বিপন্ন অতিশয়, আমাদের সর্বনাশ
ঘনিয়ে আসছে দ্রুত, আমাদের দেবে বলি বড়
বেশি লোভী কিছু লোক; রক্ষা করো তুমি আমাদের। আমি
অসহায় চেয়ে থাকি, কলম দুর্বল অতি কুঠারের কাছে।
২২.১২.২০০০

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান