আমার লেখার টেবিল আজন্ম নিজের
বস্তুত বিষয়ে সচেতন আর বস্তুবাদী দ্বান্দ্বিকতায়
ক্রমশ নিবেদিত। সে জানে, আমার
শতাব্দীর সৌজন্যে নির্মিত ওর উপরিকাঠামো।
বস্তুত, এই লেখার টেবিল আমার প্রিয়তমার প্রকৃত নাম
ঈষৎ ভ্রমবশত শতাব্দীর আড়ালে রেখেছে।
আমার লেখার টেবিল ভাববাদী ধোঁয়াশায়
নিজেকে হারিয়ে ফেলে অন্ধের মতো দিনরাত্তির
পথ হাতড়ে বেড়াতে নারাজ। অথচ সে জানে, ওর হৃদয়ে
কী এক বকুলতলা ছায়ার মমতা বিছায়, নিঝুম জ্যোৎস্না
শতাব্দীর প্রেম হয়ে জ্বলে, বাউলের দেহতত্ত্ব আলোকে
কী ফুল ফোটায়; ওর বুকে মীন হয়ে খেলছে নীরে
প্রহরে প্রহরে চেতনগুরুর সঙ্গ নিয়ে
শতাব্দীর প্রতি আমার ভালোবাসা।

এই লেখার টেবিল জানে, শতাব্দীহীন
আমার জীবন কেবল ভস্মরাশির অক্ষর।
আমার লেখার টেবিল সর্বক্ষণ কান পেতে রাখে প্রতিদিন,
যদি শতাব্দীর পদধ্বনি শোনা যায়, শতাব্দীর হাতের স্পর্শ
কামনা করে অসীম ব্যাকুলতায়।
শতাব্দীর আঙুলগুলো যখন আদর বুলায়
ওর শরীরে, তখন সে নিরঞ্জন দেয়ালি,
সৃজনশীল রূপটানে নতুন দিগ্বলয়ের কবিতা।
যখন সে বঞ্চিত শতাব্দীর সঙ্গসুখ থেকে তখন
সারাদিন দুঃখ বোধ করে, মধ্যরাতে করে অশ্রুপাত।

আমার লেখার টেবিলের অরুচি টীকাভাষ্যে,
তবু সে নোট নেয় দুঃসময়ের। বড় বিচলিত হয়
গুলিবিদ্ধ দিন আর দুঃস্বপ্নঘেরা রাতের আর্ত চিৎকারে।
আমার লেখার টেবিল যখন শোনে
ফতোয়াবাজদের পাথরের আঘাতে মৃত্যুর কর্কশ হাতে
ধরা পড়ে গ্রাম্য তরুণী, তখন সে ভীষণ
ক্রোধে ফেটে পড়ে; যখন দ্যাখে ধর্মের কপট সওদাগর
চৌদিকে পরকালের পসরা সাজিয়ে
সরলমতি ক্রেতাদের ভিড় বাড়ায় অহর্নিশ,
তখন সে ইহজাগতিক দীপ জ্বালে নিভৃতে প্রবীণ আন্ধারে।
১১.৯.৯৪

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান