বেশ ক’জন অন্ধ বালিকা জড়ো হয়েছে
টিএসসির সড়ক দ্বীপে। ঘাসের উপর কী যেন চিক চিক
করছে, দেখি কিয়দ্দূর থেকে। শিশির ভেবে
এগিয়ে যাই, আমার দৃষ্টি
প্রতারিত হয়। একরত্তি কিছু বেনামি ফুল বিনীত
মেলা বসিয়েছে। এক্ষুণি শুরু হবে ব্যাপ্টিস্ট
অন্ধ বালিকা বিদ্যালয়ের
ছাত্রীদের র্যাদলি। সারিবন্দি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের দেখি।

দু’জন অন্ধ বালিকার হাৎড়ে-বেড়ানো
হাত ধরে পথ চলতে থাকি। মনে হয়, অন্ধকারের
রাজ্যে আলোর তালাশে বেরিয়েছি। দৃষ্টিহীনারা
নরম রোদ, আকাশের নীলিমা, গাছপালার সবুজ, সড়ক দ্বীপের
ভাস্কর্য, ফুলের শোভা, আশপাশের
কিংবা দূরের লোকজন, নিজের চেহারা দেখতে পায় না,
তবু ওরা ভাঙাচোরা কিছু স্বপ্ন লালন করে মনের ভেতর।
ওদের প্রত্যেকের জীবন গড়ে ওঠে নিজস্বতায়।

আমি ওদের চলার পথে বিছিয়ে দিই
আমার মমতার ছায়া, যেন ওরা সহজে পেরিয়ে যেতে পারে
রোদ-তাতানো দীর্ঘ পথ। ওদের রাস্তা থেকে তাড়াতাড়ি
সরিয়ে দিই জংধরা তারকাঁটা আর
ভাঙা কাচের টুকরো।
দু’জন দৃষ্টিহীনার হাত
শক্ত মুঠোয় ধরে রাখি, যাতে ওরা
দিনদুপুরেই অধিকতর অন্ধকারে হারিয়ে না যায়।
২০.১০.৯৪

Shamsur Rahman।। শামসুর রাহমান