সামবেদ-সংহিতা – ছন্দার্চিক বা পূর্বার্চিক
আগ্নেয় পর্ব [১ম অধ্যায়]
প্রথমা দশতি
ছন্দ আর্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।

মন্ত্রের দেবতা অগ্নি।
ছন্দ গায়ত্রী।
ঋষি : ১।২।৪।৭।৯ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য; ৩ মেধাতিথি
কার্ণ্ব; ৫ উশনা কাব্য; ৬ সুদীতি পুরূমীঢ় আঙ্গিরস; ৮ বৎস কাণ্ব; ১০ বামদেব

অগ্ন আ যাহি বীতয়ে গৃণানো হব্যদাতয়ে। নি হোতা সৎসি বহিষি৷১৷ ত্বমগ্নে যজ্ঞানাং হোতা বিশেষাং হিতঃ। দেবেভিমানুষে জনে॥২॥ অগ্নিং দূতং বৃণীমহে হোতারং বিশ্ববেদসম্। অস্য যজ্ঞস্য সুক্ৰতু৷৩৷– অগ্নিবৃত্রাণি জঙঘন দ্রবিণস্যুর্বিন্যয়া। সমিদ্ধঃ শুক্র আহুতঃ ॥৪৷৷ প্রেষ্ঠং বো অতিথিং শুষে মিত্রমিব প্রিয়। অগ্নে রথং ন বেদ্য৷৷৷৷ ত্বং নো অগ্নে মহোভিঃ পাহি বিশ্বস্যা অরাতেঃ। উত দ্বিমো মর্ত্যস্য৷৬৷৷ এত্যু মু ব্ৰবাণি তেহগ্ন ইখেতরা গিরঃ। এভিধাস ইন্দুভিঃ ॥৭॥ আ তে বৎসো মনো যমৎ পরমাচিৎ সধস্থা। অগ্নে ত্বাং কাময়ে গিরা৷৮৷৷ ত্বমগ্নে পুরাদধ্যথা নিরামন্থত। মূর্গো বিশ্বস্য বাঘতঃ ॥৯॥ অগ্নে বিবস্বদা ভরাশ্মভ্যমূতয়ে মহে। দেবো হ্যসি নো দৃশে৷১০৷

মন্ত্ৰাৰ্থ— ১। অঙ্গনাদিগুণবিশিষ্ট সর্বব্যাপিন হে জ্ঞানদেব! অস্মৎকর্তৃক স্তুত হয়ে অর্থাৎ আমাদের দ্বারা অনুসৃত হয়ে, যজ্ঞাংশ-গ্রহণের নিমিত্ত–আমাদের কর্মের সাথে মিলনের জন্য অর্থাৎ আমাদের পূজা সংবাহনের জন্য অর্থাৎ আমাদের কর্মসকলকে দেবভাব-সমন্বিত করবার জন্য, আপনি আগমন করুন–আমাদের মধ্যে অধিষ্ঠিত হোন; দেবগণের অর্থাৎ দেবভাবসমূহের আহ্বাতা হয়ে, বিস্তীর্ণদর্ভে অর্থাৎ আমাদের হৃদয়ে বা কর্মে উপবেশন করুন অবস্থান করুন। [প্রার্থনার ভাব এই যে, হে জ্ঞানদেব! আপনি সর্বব্যাপী; আমাদের মধ্যে প্রকটিত হোন; আমাদের দেবভাবসমন্বিত করুন]। [এই ৭ মন্ত্রের তিনটি গেয়গানের ঋষি–গোতম ও কশ্যপ। উত্তরার্চিক, ১ম অধ্যায়, ২য় খণ্ড, ৪র্থ সূক্ত, ১ম সাম দ্রষ্টব্য]।

২। হে জ্ঞানদেব! আপনিই সকল কর্মের প্রবর্ধক হন। এই জন্মজরামরণশীল, লোকে, প্রার্থনাকারী আমাদের পক্ষে, সকল দেবভাবের সাথে এসে অর্থাৎ আমাদের সকল দেবভাবের অধিকারী করে, আপনি আমাদের হিতসাধক মঙ্গলপ্রদ হোন। [প্রার্থনার ভাব এই যে, জ্ঞানের প্রভাবে আমাদের সকলরকম মঙ্গল সর্বথা সাধিত হোক]। [সামমন্ত্রটির নাম-সৌপর্ণং; গেয়গানের ঋষি–বিশ্বমনা]।

৩। আমাদের নিত্য অনুষ্ঠীয়মান যাগাদি-সৎকর্মের সুসম্পাদক, দেবগণের বা দেবভাবসমূহের আহ্বানকর্তা, সকল ধনোপেত বা সর্বতত্ত্বজ্ঞ, অভীষ্টসাধক জ্ঞানদেবতাকে আমরা সম্যক্ ভজনা করছি। [মন্ত্রটি সঙ্কল্পমূলক। সৎকর্মের সাধক সর্বতত্ত্বজ্ঞ জ্ঞানদেবতাকে আমরা পূজা করি–আমরা জ্ঞানের অনুসারি হই]। [সামের নাম–বৃহৎ; গানের ঋষি-ভরদ্বাজ।]

৪। অভীষ্টধনপ্রদ, সম্যক দীপ্যমান, স্বপ্ৰকাশ, নির্মল শুদ্ধসত্ত্বরূপ সর্বব্যাপী জ্ঞানদেব, আমাদের দ্বারা সম্পূজিত ও স্তুত হয়ে অর্থাৎ আমাদের দ্বারা সর্বথা অনুসৃত হয়ে আমাদের শত্রুগণকে অর্থাৎ অজ্ঞানতারূপ আমাদের অন্তঃশত্রু ও বহিঃশত্রু, সকল শত্রুকে সংহার করুন। [এই মন্ত্রে অন্তঃশত্রু ও বহিঃশত্রু বিবিধ শত্রুনাশকামনা অর্থাৎ অজ্ঞানান্ধকারনাশকামনা প্রকাশ পেয়েছে। [গানের ঋষি ভরদ্বাজ।]

৫। হে জ্ঞানদেব! এক হয়েও বহু হই–যাঁর দ্বারা ব্যক্ত হয়েছে, সেই আপনাকে, মিত্রের ন্যায় প্রীতিহেতুভূত এবং মোক্ষলাভপক্ষে রথস্বরূপ জেনে, স্তব করছি। [প্রার্থনার ভাব এই যে, –হে দেব! আপনি সর্বদেবময় চতুর্বর্গফলপ্রদ সুহৃদোপম হন; আপনাকে রথস্বরূপ জেনে পরিত্রাণ লাভের জন্য অর্চনা করছি]। [এর গেয়গানের ঋষি-উশনা বা শিরিষ। গানের নাম–ঔশনং বা শৌরিষং]।

৬। হে জ্ঞানদেব! আমাদের পরমার্থদানরূপ মহৎ-ধনের দ্বারা রক্ষা করে বহুরকম শত্রুর কবল থেকে–কামক্রোধাদি রিপুশত্রুর গ্রাস হতে পরিত্রাণ করুন; অথবা, হে জ্ঞানদেব! আমাদের জ্ঞানরূপ মহৎ-ধন দানের দ্বারা সকল রকম অদান হতে রক্ষা করুন; অর্থাৎ, যেন আরা অকাতরে সংসারে জ্ঞান-বিতরণ করতে সমর্থ হই; তা বিহিত করুন; এবং মর্ত্যসুলভ সকলপ্রকার শত্রু হতে কামক্রোধাদি রিপুর উপদ্রব হতে–আমাদের রক্ষা করুন। [এই মন্ত্রের বিশ্বস্যাঃ অরাতেঃ পদ দুটিতে দুরকম সুষ্ঠুভাব প্রকাশ পায়, এক ভাব–মহৎ-ধন প্রদান করে আমাদের অদাতৃত্ন নাশ করুন, আমাদের কৃপণ করবেন না; অন্য ভাবশত্রুকবল থেকে আমাদের পরিত্রাণ করুন, আমাদের মধ্যে কামক্রোধাদি রিপুর প্রভাব খর্ব করুন, আমাদের মধ্যে বলসঞ্চার করুন]। [এর গেয়গানের ঋষি–সাকমস্ব বা ইন্দ্র; প্রথম গানের নাম–সাস্বৰ্গং; গানের ঋষি প্রথম গানেরই অনুরূপ। দ্বিতীয় গেয়গানের নাম বাত্রঘ্নম্।]

৭। হে জ্ঞানদেব! আসুন–হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হোন; আপনার সম্বন্ধীয় স্তুতিমন্ত্র যেন যথাযোগ্যরূপে উচ্চারণ করতে সমর্থ হই; যদিও উচ্চারণ বৈকল্যাদিরূপ দোষযুক্ত হয়; তথাপি কৃপা করে সে স্তব গ্রহণ করুন; এবং অন্তরস্থিত এই ভক্তিসুধার দ্বারাই আমাদের মধ্যে পরিবৃদ্ধ হোন। [প্রার্থনার ভাব এই যে, -মন্ত্রগুলি নিশ্চিত সর্বসিদ্ধিপ্রদ; উচ্চারণের বৈকল্য-হেতু যদি দোষযুক্ত হয়, সে অপরাধ ক্ষমা করুন; আমাদের প্রার্থনা শ্রবণ করুন; আমাদের অন্তরস্থিত ভক্তিসুধার দ্বারা প্রহৃষ্ট হোন]। [এর গেয়গানের নাম-শৌনঃশেফ; গানের ঋষি-বৎস বা শুনঃশেফ]।

৮। কর্মপ্রভাবে দেবানুগ্রহ প্রাপ্ত জন, স্তুতিমন্ত্র দ্বারা সর্বোৎকৃষ্ট স্বর্গলোক হতে আপনার চিত্তকে আকর্ষণ করে আনেন; হে জ্ঞানদেব! আমি আপনার করুণা প্রার্থনা করছি। [প্রার্থনার ভাব এই যে, হে দেব! সাধুগণ কর্মের প্রভাবে আপনার অনুগ্রহ লাভ করেন, এবং ভগবানের প্রিয় হন; আমি কর্মহীন ও ভক্তিহীন; আপনি নিশ্চয়ই করুণাময়; তা জেনে, আমি আপনার শরণ যাজ্ঞা করছি; কৃপা করে সদয় হোন]। [ঋকদ্রষ্টা–কণ্বগোত্রীয় বৎস ঋষি; গানের নাম–কাণ্বং]।

৯। হে জ্ঞানদেব! সকল জগতের ইষ্টসাধনের নিমিত্ত, লোকহিতকামী সাধুজন, মস্তিষ্করূপ অন্তরীক্ষ হতে (বিজ্ঞানময় কোশ হতে) আপনাকে নিষ্কাশন করেছেন, অর্থাৎ জ্ঞানতত্ত্ব প্রকাশ করেন। [ভাব এই যে, পরম প্রাজ্ঞ সাধুজন লোকহিতকামনায় জগতে নিয়ত জ্ঞান বিতরণ করছেন]। [গেয়গানের প্রবর্তক–অগ্নি ঋষি। গানের নাম–আর্ষেয়। অবশ্য গেয়গানের ঋষি বিষয়ে মতান্তর আছে–বাধ্রশ্বিঃ সুমিত্র ঋষিঃ।]

১০। হে জ্ঞানদেব! আমাদের বিষম বিপদে পরিত্রাণের জন্য, আমাদের দ্বারা স্বর্গাদি প্রাপ্তির উপযোগী কর্ম (সূর্যবৎ প্রকাশমান জ্ঞান-সাহায্যের দ্বারা তত্ত্বজ্ঞান-উৎপাদক কর্ম) করিয়ে নিন। আপনিই আমাদের দর্শনার্থ অর্থাৎ আদর্শস্থানীয় দীপ্তিদানাদিগুণসম্পন্ন হন। [ভাব এই যে, সূর্য যেমন আত্মপ্রকাশের দ্বারা জগৎকে প্রকাশিত করেন, সেইরকম, হে দেব, আমাদের বিপদে পরিত্রাণের উপায় প্রদর্শন করুন; যেহেতু আপনিই প্রত্যক্ষীভূত দেবতা, তাই এই প্রার্থনা]। [অগ্নে বিবস্বনা]।

.

দ্বিতীয়া দশতি

ছন্দ আর্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।

মন্ত্রের দেবতা অগ্নি।
 ছন্দ গায়ত্রী

ঋষি : ১ আয়ুঙ্ক্ষাহি, বিরূপা আঙ্গিরস; ২ বামদেব গৌতম; ৩।৮।৯ প্রয়োগ ভার্গব; ৪ মধুচ্ছন্দা বৈশ্বামিত্র; ৫।৭ শুনঃশেপ আজীগর্তি; ৬ মেধাতিথি কাণ্ব; ১০ বৎস কাণ্ব।

নমস্তে অগ্ন ওজসে গৃণন্তি দেব কৃষ্টয়ঃ। অমৈরমিত্রমর্দয়৷৷ ১৷ দূতং বো বিশ্ববেদসং হ্যবাহমম। যজিঞ্জসে গিরা৷ ২৷৷ উপ ত্বা জাময়ো গিরো দেদিশতীহবিষ্কৃতঃ। বায়োরনীকে অস্থির৷৷ ৩৷ উপ জ্বাগ্নে দিবে দিবে দোষাবধিয়া বয়ম। নমো ভরন্ত এমসি৷৷ ৪৷৷। জরাবোধ তদ্বিবিড়টি বিশেবিশে যজ্ঞিয়ায়। স্তোমং রুদ্রায় দৃশীক৷ ৫৷৷ প্রতি ত্যং চারুমধ্বরং গোপীথায় প্র হুয়সে৷ মরুদভিরশ্ন আ গহি৷৷ ৬৷৷ অশ্বং ন ত্বা বারবস্তং বন্দধ্যা অগ্নিং নমোভিঃ। সম্রাজন্তমধ্বরাণা৷৷ ৭৷ ঔর্বভৃগুবচ্ছুচিমপ্নবানবদা হুবে। অগ্নিং সমুদ্রবাসস৷৷ ৮৷৷ অগ্নিমিন্ধানো মনসা ধিয়ং সচেত মর্ত্যঃ। অগ্নিমিন্ধে বিবস্বভিঃ৷৷ ৯৷৷ আদিৎ প্রত্নস্য রেতসো জ্যোতিঃ পশ্যন্তি বাসর। পরো যদিধ্যতে দিবি৷৷ ১০৷৷

মন্ত্রাৰ্থ— ১। দ্যোতমান হে অগ্নিদেব! আত্ম-উৎকর্ষসম্পন্ন জনগণ জ্ঞানলাভের নিমিত্ত, আপনার উদ্দেশে নমঃসূচক স্তোত্র গান করে থাকেন (অতএব আমিও আপনাকে স্তব করছি); আপনি অমিতবলের প্রভাবে (আমার) শত্রুকে বিনষ্ট করুন। [এর ঋষি-বিরূপ; প্রকাশক–অগ্নি ঋষি; এর গেয়গানের নাম–সংবর্গ]।

২। জ্ঞানস্বরূপ হে দেব! আপনি সকলরকম ধনের অধিপতি (সর্বজ্ঞ) হুতবহনকারী, ক্ষয়রহিত এবং শ্রেষ্ঠ-অভীষ্টসাধক। আমি আপনাকে অন্তরের স্তুতিবাক্যের দ্বারা সম্যকরূপে বিভূষিত করছি। [এর গেয়গানের ঋষি–বিশ্বমনা; সামের নাম–বৈশ্বমনা।]

৩। হে জ্ঞানস্বরূপ দেব। পুনঃপুঃ আপনার গুণানুকীর্তনকারী, সাধনার্থী আমার এই বাক্যসমূহ আপনাকে (আমার) প্রাণবায়ুর সমীপে উদ্বুদ্ধ করছে। (অর্থাৎ, প্রাণবায়ুর সাথে আপনার নিত্যসম্বন্ধলাভ কামনায় আমি আপনার স্তব করছি)। অথবা, এই স্তুতিসকল আপনাকে সর্বত্র প্রাপ্ত হোক। [গেয়গানের ঋষি-শ্রোভ ও শ্ৰষ্ট। গেয়গানের নাম–শ্রাভ ও শ্রৌষ্টিয়]।

৪। হে দেব! আমরা, প্রতিদিন দিবারাত্র সর্বক্ষণ (অথবা রাত্রিতে প্রকাশমান আপনাকে) পরমার্থবুদ্ধিতে নমস্কার করতে করতে আপনাকে নিকটেই প্রাপ্ত হয়ে থাকি। (অর্থাৎ, যারা পরমার্থ বুদ্ধির দ্বারা আপনার উপাসনা করে, তারা আপনার অতিশয় নিকটবর্তী হয়; অথবা আপনার সামীপ্য লাভ করতে পারে)। [এর ঋষি-মধুচ্ছন্দা। প্রকাশক–বিশ্বামিত্র ঋষি। গেয়গানের নাম–বৈশ্বমিত্র]।

৫। সাধনপ্রভাবে উদবুদ্ধমান হে দেব, পাপ হতে মনুষ্যগণকে পরিত্রাণের জন্য আপনি সর্বলোকে অধিষ্ঠিত (অনুপ্রবিষ্ট) আছেন। আমাদের যজ্ঞাদিকর্মানুষ্ঠান সিদ্ধির জন্য সেই যে মহৎ আপনার উদ্দেশ্যে প্রদত্ত আমাদের স্তোত্র (পূজা) আপনি গ্রহণ করুন। [এর ঋষি–শুনঃশেপ। এর প্রকাশক–অগ্নিঋষি এবং গানটির নাম–জরাবোধিয়]।

৬। হে অগ্নিদেব! যথানুষ্ঠিত সুসম্পাদিত হিংসারহিত আমাদের এই যাগাদি কর্ম আপনি প্রাপ্ত হোন; এবং সেই কর্মে ভক্তিসুধা পানের জন্য (হবিঃ গ্রহণের উদ্দেশ্যে) আপনাকে সর্বতোভাবে আহ্বান করছি। মরুৎ-দেবগণ-সহ আপনি আগমন করুন। [গেয়গানের ঋষি-অগ্নি ও সোম; গানের নাম মারুত]।

৭। হে দেব! রশ্মির ন্যায় স্বপ্রকাশ (জ্ঞানস্বরূপ) সর্বজ্ঞের (সকল সৎকর্মের) সম্পাদক (প্রভু) জ্ঞানস্বরূপ আপনাকে আমরা যেন (অভীষ্ট-সিদ্ধির জন্য) বন্দনা করতে প্রবৃত্ত হই। অথবা-যজ্ঞসমূহের সম্রাট (প্রভু) স্বরূপ, অমৃতবিশিষ্ট, সর্বব্যাপক, প্রখ্যাত সেই জ্ঞানস্বরূপ দেবকে নমঃশব্দ উচ্চারণপূর্বক আমরা যেন বন্দনা করতে (সর্বদাই) প্রবৃত্ত হই।

৮। ঋষি ঔর্বভৃগু ও ঋষি অপ্নবান যেমন সমুদ্রের মধ্যবর্তী বিশুদ্ধ বাডবাগ্নিকে আহ্বান করেছিলেন এ তেমনই বিশালব্যাপ্তিযুক্ত শুদ্ধসত্ত্ব সর্বশ্রেষ্ঠস্বরূপ কর্মক্ষয়কারক ও জ্ঞানস্বরূপ দেবকে আমি আহ্বান করছি।

৯। মরণশীল অকিঞ্চন মনুষ্যও জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেবকে একান্তচিত্তে আরাধনা করে জ্ঞানের অধিকারী ও হতে সমর্থ হয়; (অতএব আমিও যেন কর্মপ্রভাবে জ্ঞানস্বরূপ দেবতার আরাধনা করি। [এর ঋষি ইত্যাদি পূর্বের ন্যায়। গেয়গানের প্রকাশক–অত্রি ঋষি]।

১০। যে সময় (সাধকের সাধনা-প্রভাবে) পরমাত্মা সহস্রার-পদ্মে প্রদীপ্ত হন; তখনই সাধক, আদিবীজস্বরূপ নিত্যসত্য পরব্রহ্মের পুণ্যজ্যোতিঃ দেখতে পান। [দেবতা–ইন্দ্র বা অগ্নি। গেয়গানের প্রকাশক–প্রজাপতি ঋষি এবং গেয়গানের নাম–নিষধকাম]।

.

তৃতীয়া দশতি

ছন্দ আর্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।

মন্ত্রের দেবতা অগ্নি৷
ছন্দ গায়ত্রী৷
ঋষি : ১ প্রয়োগ ভার্গব; ২।৫ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য;
৩।১০ বামদেব গৌতম; ৪।৬ বশিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি; ৭ বিরূপ আঙ্গিরস; ৮ শূনঃশেপ আজীগর্তি; ৯ গোপবন আত্রেয়; ১১ প্রস্কণ্ব কাণ্ব; ১২ মেধাতিথি কাণ্ব; ১৩ সিন্ধুদ্বীপ আম্বরীষ বা ত্রিত আপ্ত্য; ১৪ উশনা কাব্য।

অগ্নিং বো বৃধমধ্বরাণাং পুরূতমম্। অচ্ছা নস্ত্রে সহস্বতে৷৷ ১৷৷ অগ্নিস্তিগেন শোচি যংসদ্বিশ্বং ন্যতত্রিণম্। অগ্নির্নো বংসতে রয়িম্৷৷ ২৷ অগ্নে মৃড় মহা অসায আ দেবয়ুং জন। ইয়েথ বহিরাসদ৷৷ ৩৷ অগ্নে রক্ষা পো অংহসঃ প্রতি স্ম দেব রীষতঃ। তপিষ্ঠেরজরো দহ৷৷ ৪৷৷ অগ্নে যুক্ষ্মা হি যে, তবাশ্বাসো দেব সাধবঃ। অরং বহত্যাশবঃ৷৷ ৫. নি ত্বা নক্ষ্য বিশপতে দুমন্তং ধীমহে বয়। সুবীরমগ্ন আহুত৷৷ ৬৷ অগ্নিমূর্ধা দিবঃ ককুৎপতিঃ পৃথিব্যা অয়ম্। অপাং রেংসি জিতি৷৷ ৭৷৷ ইমমূ যু মস্মাকং সনিং গায়ত্ৰং নব্যাংস। অগ্নে দেবেযু প্র বোচঃ। ৮। যঃ ত্বা গোপবননা গিরা জনিদগ্নে অঙ্গিরঃ। স পাবক শ্রুধী হব৷ ৯৷ পরি বাজপতিঃ কবিরগ্নিহব্যান্যক্রমীৎ দধদ রত্নানি দাশুষে ১০৷ উদু ত্যং জাতবেদসং দেবং বহন্তি কেতব। দৃশে বিশ্বায় সূর্য৷৷ ১১৷৷ কবিমগ্নিমুপ স্তুহি সত্যধর্মাণমধ্বরে। দেবমমীবাতন৷৷ ১২ শং নো দেবীরভিষ্টয়ে শং নো ভবন্তু পীতয়ে। শং যোরভিস্রবন্তু নঃ ১৩।  কস্য নূনং পরীণসি ধিয়ো জিম্বসি সৎপতে। গোযাতা যস্য তে গিরঃ৷৷ ১৪৷৷

মন্ত্ৰাৰ্থ— ১। হে আমার চিত্তবৃত্তিনিবহ! (আমার) পতন নিবারণের জন্য এবং উচ্চ-জ্ঞান লাভের নিমিত্ত, তোমরা যজ্ঞের বর্ধক ও শ্রেষ্ঠ পূরক জ্ঞানস্বরূপ দেবতাকে আরাধনা কর। [এই মন্ত্রের ঋষি প্রয়োগ প্রভৃতি। গানের প্রকাশক-সিন্ধুক্ষিত ঋষি; গেয়গানের নাম–সৈন্ধুক্ষিত]।

২। যে অগ্নিদেব আপন তীব্র তেজের দ্বারা আমাদের সমস্ত শত্রুকে সংহার করেন, সেই অগ্নিদেব আমাদের পরমধন প্রদান করুন। (তিনি জ্ঞানস্বরূপ; জ্ঞানদান করুন)। [এর ঋষি-বৃহস্পতিবংশীয় ভরদ্বাজ। এর গেয়গানের প্রকাশক–অগ্নি ঋষি ও বামদেব; গানের নাম- হর ও বামদেব]।

৩। হে অগ্নিদেব! আমাদের সুখসাধন করুন। আপনি মহান্; আপনি সর্বত্রগমনশীল। দেবভাবপ্রাপ্তেচ্ছু এই প্রার্থনাকারীর হৃদয়ে এসে আপনি আসন গ্রহণ করুন। [এর ঋষি-গৌতমবংশীয় বামদেব। এর গেয়গানের প্রকাশক–অগ্নি ঋষি; গেয়গানের নাম–যাম]।

৪। হে অগ্নিদেব! আপনি আমাদের রক্ষা করুন। হে দ্যোতমান্! জরারহিত অক্ষয় আপনি; হিংসাপরায়ণ শত্রুগণকে আপনার তেজের দ্বারা সর্বতোভাবে ভস্মীভূত করুন। [এর ঋষি-মিত্রাবরুণ বংশীয়–বশিষ্ঠ, এর গেয়গানের ঋষি–অগ্নি; গানের নাম–রক্ষোঘ্ন]।

৫। দ্যোতমান্ হে অগ্নিদেব! আপনার ক্ষিপ্রগামী সত্যস্বরূপ যে ব্যাপক কিরণসমূহ, আমাদের শীঘ্রই পরমার্থ প্রাপ্ত করায় (অর্থাৎ আপনার যে কিরণপ্রভাবে আমরা শীঘ্রই পরমার্থ লাভ করি); আপনার সেই কিরণসমূহ আমাদের হৃদয়-দেশে প্রোদ্ভাসিত করুন। [এর ঋষি–ভরদ্বাজ। গেয়গানের ঋষি অগ্নি; গেয়গানের নাম–রক্ষোঘ্ন]।

৬। ব্যাপক, বিশ্বপালক সর্ব-লোককর্তৃক অভিহৃত (সম্পূজিত) হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আমরা সাধকগণ, (সেই) দীপ্তিমান, কল্যাণাস্পদ আপনাকে হৃদয়ে স্থাপন করছি। [এর ঋষি বশিষ্ঠ। গেয়গানের ঋষি–বিশ্বমনা; গেয়গানের নাম–বৈশ্বমনস্।

৭। দ্যুলোকের মধ্যে মস্তকস্বরূপ অর্থাৎ শ্রেষ্ঠ, সত্ত্বগুণের পালক এই জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেব, জগতের স্থাবরজঙ্গমাত্মক ভূতবর্গকে প্রীত করেন। [ঋষির নাম–বিরূপ। গেয়গানের ঋষি–অগ্নি; গানের নাম আর্ষেয়]।

৮। হে অগ্নিদেব! প্রার্থনাকারী আমাদের আহবনীয় (পূজা) এবং (আমাদের উচ্চারিত এই) চিরন্তন গায়ত্র্য-স্তোত্র, আমাদের সুমঙ্গল বিধানের নিমিত্ত সকল দেবতার নিকট পৌঁছিয়ে দেন। [ঋষি শুনঃশেপ। গেয়গানের নাম–সোম]।

৯। সর্বজ্ঞ পবিত্রকারক হে দেব! সেই প্রখ্যাত আপনাকে জ্ঞানী সাধক স্তুতিরূপ বাক্য দ্বারা বর্ধিত করে থাকেন (অর্থাৎ স্তুতি দ্বারা আপনার গুণানুবাদ কীর্তন করে থাকেন); সেই আপনি আমাদের আহ্বান শ্রবণ করুন। [এর ঋষির নাম-গোপবন। গেয়গানের নাম–গৌপবন]।

১০। দেবভাবের পোষক, মেধাবী (এই) জ্ঞানস্বরূপ দেবতা, অর্চনাকারীকে পরমধন দান করতে করতে (তার) ভক্তিসুধা গ্রহণ করেন। [এর গেয়গানের ঋষি–সূৰ্যবৰ্চা অথবা বসুরোচি এবং গেয়গানের নাম–সূর্য।

১১। জ্ঞানরশ্মিসমূহ, সমস্ত দেবভাবের দর্শন নিমিত্ত, সেই প্রসিদ্ধ সর্বজ্ঞ অথবা ধনপতি দ্যোতমান জ্যোতিঃস্বরূপ পরব্রহ্মকে সাধকের সহস্রার পদ্মে প্রকাশিত করে থাকে। [এর গেয়গানের ঋষি–সূর্য অথবা বসুরোচি; গেয়গানের নাম–সূর্য]।

১২। হে মন! তুমি মেধাবী, সত্যধর্মযুক্ত, শত্রুনাশক দ্যোতমান জ্ঞানস্বরূপ দেবতাকে কামক্রোধাদি কর্তৃক অহিংসিত হৃৎপ্রদেশে প্রাপ্ত হবার জন্য স্তুতি করো। [এই মন্ত্রটির গেয়গানের ঋষি-বসুরোচি; গানের নাম–কাকূ।]

১৩। দীপ্তিদানাদি গুণবিশিষ্টা জলাধিষ্ঠাত্রী দেবীগণ, আমাদের অভীষ্টসাধনের জন্য আমাদের মঙ্গল বিধান করুন এবং আমাদের তৃষ্ণা-জ্বালা নিবারণের জন্য, আপনারা আমাদের মঙ্গল-বিধান করুন। সুখসম্বন্ধযুক্ত হে জলাধিষ্ঠাত্রী দেবীগণ, আমাদের প্রতি আপনাদের করুণাধারা বর্ষিত হোক। [এর ঋষি-সিন্ধুদ্বীপ প্রভৃতি। গেয়গানের ঋষি-পারাবতি; গেয়গানের নাম কাশীত বা সুমন্দ]। ১৪। সৎভাব সমূহের পালক হে দেব! আপনি কোন্ সাধকের কর্মসমূহ ব্ৰহ্মে স্থাপন করেন? আপনার সম্বন্ধিনী স্তুতি-সকল যে সাধকের জ্ঞান লাভের হেতুভূত হয়ে থাকে (অর্থাৎ আপনার স্তুতি দ্বারা যে সাধক জ্ঞানলাভে সমর্থ হয়েছেন।) সেই সাধকের কর্মই আপনি পরব্রহ্মে আপ্যায়িত করেন। [এই মন্ত্রটির গেয়গানের ঋষি-গৌরাঙ্গিরস এবং গেয়গানের নাম–মনাজ্যং]।

.

চতুর্থী দশতি

ছন্দ আর্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।  

দেবতা অগ্নি৷
ছন্দ বৃহতী৷
মন্ত্রের ঋষিঃ ১।৩।৭ শংযু বার্হস্পত্য, তৃণপাণি; ২।৫।৮।৯ ভর্গ প্রাগাথ; ৪. বশিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি; ৬ প্রস্কণ্ব কাণ্ব; ১০ সৌভরি কাণ্ব

যজ্ঞাযজ্ঞা বো অগ্নয়ে গিরাগিরা চ দক্ষসে। প্রপ্র বয়মমৃতং জাতবেদসং প্রিয়ং মিত্রং ন শংসিষম্। ১। পাহি নো অগ্ন একয়া পাহূত দ্বিতীয়য়া। পাহি গীর্ভিস্তিসৃভিরূৰ্জাম্পতে পাহি চতসৃভিবসো। ২৷৷ বৃহদ্ভিরগ্নে অৰ্চিভিঃ শুক্রেণ দেব শাচি। ভরদ্বাজে সমিধানো যবিষ্ঠ্য রেবৎপাবক দীদিহি৷৷ ৩৷৷ ত্বে অগ্নে স্বাহুত প্রিয়াসঃ সন্তু সূরয়ঃ। যন্তানরা যে মঘবানো জনানামূবং দয়ন্ত গোনা৷৷ ৪৷ অগ্নে জরিতবিপতিস্তপাননা দেব রক্ষঃ। অপ্রোষিবান্ গৃহপতে মহা অসি দিবম্পায়ুদুরোণয়ুঃ। ৫৷৷ অগ্নে বিবস্বদুষসশ্চিত্ৰং রাধো অমর্ত্য। আ দাশুষে জাতবেদো বহা মদ্যা দেবাঁ ঊষবুধঃ॥ ৬৷৷ ত্বং নশ্চিত্র উত্যা বসো রাধাংসি চোদ্দয়। অস্য রায়মগ্নে রথীরসি বিদা গাধং তুচে তু ন ৷৷ ৭৷৷ ত্বমিৎ সপ্রথা অস্যগ্নে ত্রাতঋতঃ কবিঃ। ত্বং বিপ্রাসঃ সমিধান দীদিব আ বিবাসন্তি বেধসঃ ৷৷ ৮৷৷ আ নো অগ্নে বয়োবৃধং রয়িং পাবক শংস্য। রাস্বা চ ন উপমাতে পুরুস্পৃহং সুনীতী সুযশস্তর৷৷ ৯৷ যো বিশ্বা দয়তে বসু হোতা মন্দ্রো জনানাম্‌। মঘোর্ন পাত্রা প্রথমান্যস্মৈ প্র স্তোমা যন্ত্বগ্নয়ে। ১০৷৷ 

মন্ত্ৰার্থ— ১। হে দেবভাবসমূহ! তোমাদের অনুগ্রহে আমরা অর্চনাকারিগণ, কর্মসামর্থলাভের নিমিত্ত এবং জ্যোতিঃস্বরূপ জ্ঞান লাভের জন্য, স্তুতিরূপ বাক্যদ্বারা নিত্যমিত্রের ন্যায় অনুকূল সর্বজ্ঞ দেবকে সকল যজ্ঞেই স্তব করতে সমর্থ হই। [এর ঋষি–বৃহস্পতিপুত্র তৃণপাণি শংযু। গেয়গানের ঋষি–ভরদ্বাজ। গেয়গানের নাম–উপহব, শ্রৌষ্ঠীগর, যজ্ঞাযজ্ঞীয়]।

২। হে জ্ঞানস্বরূপ দেবতা! আপনি প্রথম কর্মমূর্তি দ্বারা আমাদের রক্ষা করুন; এবং দ্বিতীয় জ্ঞানমূর্তি দ্বারা আমাদের রক্ষা করুন। বলপালক হে দেব! আপনি আমাদের স্তুতি দ্বারা স্তুত হয়ে, কর্ম জ্ঞান-ভক্তিরূপ মূৰ্তিত্রয় দ্বারা আমাদের পালন করুন। নিবাসস্থানীয় হে দেব! আপনি, কর্মজ্ঞানভক্তিমোক্ষ রূপ মূর্তি-চতুষ্টয় দ্বারাও আমাদের রক্ষা করুন। [এর ঋষি–প্রগাথপুত্র ভর্গ। গানের ঋষি-ভরদ্বাজ; গানের নাম–কার্তরনা, নার্মেধ, কর্তেবেশ]।

৩। দ্যোতমান, প্রভূতশক্তিশালী, পবিত্রকারক হে জ্ঞানদেব! আমাদের আরব্ধ যজ্ঞক্ষেত্রে আপনার নিজস্ব নির্মল-তেজের দ্বারা সম্যক্‌রূপে দীপ্তিমান্ আপনি মহৎ কিরণে, স্বরূপ প্রকাশে, আমাদের বিতরণের উপযোগী জ্ঞানধনযুক্ত হয়ে দীপ্তিমান্ হোন। [ভাব এই যে, –জ্ঞানদেবতার জ্ঞানদানরূপ অনুগ্রহেই আমরা চতুর্বর্গধন প্রাপ্ত হই। অর্থাৎ জ্ঞানই চতুর্বর্গ-লাভের হেতুভূত]। [এই মন্ত্রের ঋষি ভরদ্বাজ। গেয়গানের ঋষি-ভরদ্বাজ; গেয়গানের নাম–পৃশ্নি]।

৪। সুষ্ঠুরূপে আহূত (সাধুগণের অর্চনীয়) হে জ্ঞানরূপ দেব! প্রার্থনাকামী আমাদের সম্যক জ্ঞান প্রদান করুন। যে মেধাবী স্তোতৃগণ জ্ঞানরূপ ধনযুক্ত ও সংযতচিত্ত, তারা আপনার প্রিয় হোন (হন)। [ভাব এই যে, –হে দেব! আপনাতে নিবিষ্টচিত্ত অর্চনাকারী আমাদের কল্যাণবিধান করুন]। [এর ঋষি বশিষ্ঠ। গেয়গানের ঋষি–ভরদ্বাজ; গেয়গানের নাম–উরু]।

৫। স্তবনীয় দ্যোতমান্ জ্ঞানস্বরূপ হে দেব! আপনি, সাধকদের রক্ষক (এবং) রিপুশত্রুর নাশক হন। হৃদয়াধিপতি হে দেব! (হৃদয়ে) দেবভাবরক্ষক, ব্রহ্মপক আপনি, সাধকের হৃৎপ্রদেশ ত্যাগ না করে (ত্যাগ করেন না বলে) বধিত (পূজনীয়) হন। [ভাব এই যে, –সেই অগ্নিদেব সাধকদের রক্ষকরূপে তাদের হৃদয়ে অবস্থিতি করেন। অভাজন আমাদের প্রতি তিনি যেন একটু কৃপাকটাক্ষপাত করেন]। [এর ঋষি-মধুচ্ছন্দা। গেয়গানের ঋষি গৌতম; এর গেয়গানটির নাম–পৌরুমঙ্গং]।

৬। ক্ষয়রহিত সর্বজ্ঞ হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আপনি এক্ষণে অর্চনাকারী আমাকে ঊষাদেবতার (জগতের ও প্রজ্ঞানকী দেবীর) উৎকৃষ্ট নিবাসস্থানীয় বিচিত্র ধন, আনয়ন-পূর্বক প্রদান করুন; এবং ঊষার ন্যায় সর্বাগ্রে প্রবুদ্ধ দেবভাবগুলি আমাকে প্রদান করুন। [ভাব এই যে, -ঊষার উদয়ে অন্ধকার যেমন দূরীভূত হয়, তেমনি সেই জ্ঞানদেব (অগ্নি) আমার হৃদয়ে উদিত হয়ে আমার অজ্ঞানান্ধকার দূর করুন]। [এর গেয়গানের ঋষি–জামদগ্ন, গেয়গানের নাম-মাণ্ডব।]

৭। আশ্রয়স্থানস্বরূপ হে দেব! বিচিত্ৰদৰ্শন আপনি, আমাদের রক্ষা করুন এবং চতুর্বর্গধন প্রদান করুন। হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আপনি চতুর্বর্গরূপ ধনের নেতা (প্রভু) হন। আমাদের এবং আমাদের অপত্যগণকে (বংশপরম্পরাকে) শীঘ্রই সৎকর্মসম্পাদনে প্রতিষ্ঠা প্রদান করুন। [এর ঋষি–ভরদ্বাজ। গেয়গানের ঋষি–ভরদ্বাজ; গেয়গানের নাম–গাধ]।

৮। পরিত্রাণকারক জ্ঞানস্বরূপ হে দেব! আপনিই সত্যস্বরূপ মেধাবী সর্বব্যাপক হন। হে দীপ্যমানন্ জ্যোতিষ্মান্! মেধাবী স্তোতগণ আপনারই উপাসনা করে থাকেন। [ভাব এই যে, -মেধাবিগণই জ্ঞানদেবতার স্বরূপ অবগত হয়ে তার অর্চনায় প্রবৃত্ত আছেন]। [ঋষি প্রগাথের পুত্র ভর্গ; এর গেয়গানের নাম–গৌতম।

৯। শোধক (পাপনাশক) হে জ্ঞানাগ্নি! আমাদের শুদ্ধসত্ত্ববর্ধক প্রশংসনীয় চতুর্বর্গরূপ ধন সম্যক্ররূপে প্রদান করুন; আর, ব্রহ্মনির্ণায়ক হে দেব! কৃপাপূর্বক আমাদের বহুকর্তৃক স্পৃহনীয় (সর্বজনের আকাঙ্ক্ষানীয়) অতিশয়-রূপে শোভন যশঃ প্রদান করুন। [পাপনাশক সেই দেবতার কৃপায় আমরা যেন ব্ৰহ্মপ্রাপ্তিরূপ পরমধন লাভ করি, এই আকাঙ্ক্ষা]। [গেয়গানের ঋষি–অগ্নি; গেয়গানের নাম আয়ু।]

১০। দেবভাবসমূহের আহ্বানকর্তা, সাধকদের আনন্দদায়ক যে জ্ঞানাগ্নি, সকল রকম ধন (চতুর্বর্গধন) প্রদান করেন; অমৃতের (শুদ্ধসত্ত্বের) মুখ্য-পাত্রের (শ্রেষ্ঠ আধার-স্বরূপ হৃপ্রদেশের ন্যায়, এই স্তোত্ৰসমূহ সেই অগ্নিদেবকে প্রাপ্ত হোক। (অর্থাৎ শুদ্ধসত্ত্বপূর্ণ হৃৎপ্রদেশ যেমন জ্ঞানাগ্নির প্রতিদায়ক হয়, তেমনি এই স্তোত্রগুলিও তার প্রীতির কারণ হোক)। [এই মন্ত্রটির ঋষি ভার্গব, (মতান্তরে) সৌভরি। এর গেয়গানের ঋষি–অগ্নি; গেয়গানের নাম–হরি ও দৈর্ঘ্যশ্রবস]।

.

পঞ্চমী দশতি

ছন্দ আর্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।

দেবতা অগ্নি৷ ৮ ইন্দ্র৷৷
ছন্দ বৃহতী৷
ঋষি: ১ বশিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি; ২ ভর্গ প্রাগাথ; ৩।৭
সৌভরি কাণ্ব; ৪ মনু বৈবস্বত; ৫ সুদীতিপুরূমীঢ় আঙ্গিরস; ৬ প্রস্কণ্ব কাণ্ব; ৮ কাণ্ব মেধাতিথি ও মেধ্যাতিথি; ৯ গাথি বিশ্বামিত্র; ১০ ঘৌর কণ্ব।

এনা বো অগ্নিং নমসোর্জো নপাতমা হুবে। প্রিয়ং চেতিষ্ঠমরতিং স্বধ্বরং বিশ্বস্য দূতমমৃত৷৷ ১৷ শেষে বনেষু মাতৃযু সং ত্বা মর্তাস ইন্ধতে। অতন্দ্রো হব্যং বহসি হবিষ্কৃত আদিদ্দেবেষু রাজসি৷ ২। অদর্শি গাতুবিত্তমো যস্মিন্ ব্ৰতান্যাদধু। উপো যু জাতমাস্য বর্ধনমগিং নক্ষন্তু নো গিরঃ৷৷ ৩৷৷. অগ্নিরূথে পুরোহিতো গ্রাবাণো বহিরধ্বরে। ঋচা যামি মরুততা ব্ৰহ্মণম্পতে দেবা অবো বরেণ্য৷৷ ৪৷৷ অগ্নিমীড়িদাবসে গাথাভিঃ শীরশোচিষম্। অগ্নিং রায়ে পুরূমীঢ় শ্রুতং নরোইগ্নিঃ সুদীহয়ে ছর্দিঃ। ৫৷৷ শ্রুধি কর্ণ বহ্নিভির্দেবেরয়ে সয়াবভিঃ। আ সীতু বহিষি মিত্রো অর্যমা প্রাত্যাভিরধ্বরে৷৷ ৬৷৷ এ দৈবদাসো অগ্নিদেব ইন্দ্রো ন মজমনা। অনু মাতরং পৃথিবীং বি বাবৃতে তঙ্খৌ নাকস্য শর্মাণ৷৷ ৭ অধ জুমো অধ বা দিবো বৃহততা রোচনাদধি। অয়া বর্ধস্ব তত্ত্ব গিরা মমা জাতা সুক্ৰতত পৃণ৷৷ ৮। কায়মাননা বনা ত্বং যন্মাত্রজগন্নপঃ। ন তত্তে অগ্নে মৃষে নিবর্তনং যদ্ দূরে সন্নিহা ভুবঃ ৯। নি স্বামগ্নে মনুদধে জ্যোতির্জনায় শশ্বতে। দীদেথ কথ ঋতজাত উক্ষিতে যং নমস্যন্তি কৃষ্টয়ঃ৷৷ ১০।

মন্ত্রার্থ— ১। হে দেবভাবসমূহ! তোমাদের অধিকার করবার জন্য আমি, সত্ত্বভাবরূপ বলের পুত্রস্বরূপ অর্থাৎ সৎ-ভাব-উৎপন্ন, সকলের প্রিয় অতিশয় জ্ঞানী বা জ্ঞাপক, সকলের) অধিপতি, সুযোগ্য (শোভন-যজ্ঞকারী), সকলের অভীষ্টপূরক, ক্ষয়রহিত অর্থাৎ নিত্য-জ্ঞানস্বরূপ দেবকে আহ্বান করছি। [গানের ঋষি–গৌতম; গানের নাম–আগ্নেয় ও মনাজ্য]।

২। হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আপনি, (আপনার) মাতৃস্থানীয়া ভক্তির মধ্যে অবস্থান করেন। অর্চকগণ, তথাভূত আপনাকে সম্যকরূপে হৃদয়ে প্রজ্বলিত করেন। আপনি আলস্যহীন হয়ে (সদাই) অর্চনাকারীর হবনীয় (পূজা) দেবতাদের প্রাপ্ত করান। অনন্তর আপনি দেবভাবগুলির মধ্যে দীপ্ত হন। [গেয়গানের ঋষি-গৌতম; গেয়গানেব নাম–দেবরাজ]।

৩। যে জ্ঞানাগ্নি সঞ্জাত হলে, (সাধকগণ) সৎকর্মগুলি সাধন করতে সমর্থ হন; সৎকর্মবিদ সেই জ্ঞানাগ্নি, সাধকগণ কর্তৃক দৃষ্ট হন (সাধকবর্গের হৃৎপ্রদেশে প্রাদুর্ভূত হন); এমনই সুষ্ঠুরূপে প্রাদুর্ভূত, সত্ত্বভাবের বর্ধক, জ্ঞানাগ্নিকে আমাদের স্তুতিরূপ বাক্যসমূহ প্রাপ্ত হোক। [ভাব এই যে, –জ্ঞান সৎকর্মের সাথে সম্বন্ধবিশিষ্ট। সাধকগণ তা বুঝতে পারেন। সেই জ্ঞানকে আমাদের স্তোত্রকর্মসমূহ প্রাপ্ত হোক]। [এর গেয়গানের ঋষি কৌশিক; গানের নাম–গাথিম]।

৪। স্তোত্রশস্ত্রারক (উপাসনামূলক) যাগাদি-সৎকর্মের সাধন বিষয়ে, জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেবতা (জ্ঞানাগ্নি), পুরোহিতস্বরূপ (পথপ্রদর্শক) হন; প্রস্তরের ন্যায় দৃঢ় স্থির সত্ত্বভাব, পুরোহিত-স্বরূপ (পথপ্রদর্শক) হন; প্রশান্ত হৃৎপ্রদেশ, পুরোহিতস্বরূপ (পথপ্রদর্শক) হন। অতএব, সেই সকলকে পাবার ইচ্ছায়, দ্যোতনাত্মক হে সর্বত্রগতিসম্পন্ন দেবগণ, স্তোত্রপালক হে দেবতা, আপনাদের উৎকৃষ্ট রক্ষণ (আপনাদের প্রাপ্তির উপায়) ঋষ্মন্ত্র-স্বরূপ স্তোত্রের দ্বারা আমি আপনাদের নিকট প্রার্থনা করছি। (অর্থাৎ, আপনাদের বরণীয় রক্ষা-প্রভাবে পুরোহিত-স্বরূপ জ্ঞানাদি যেন আমার হৃদয়দেশে সুরক্ষিত হয়)। [গানের ঋষি মনু; গানের নাম বার্হদুকথা]।

৫। হে পুরুমীঢ় (মন)! তুমি পাপ হতে পরিত্রাণ লাভের জন্য জ্ঞানস্বরূপ দেরতাকে স্তব কর; তেমনই, পুরুষার্থসিদ্ধির জন্য এবং শ্রেষ্ঠ দাতা হবার জন্য, ব্যাপক, দীপ্তিশালী, বিখ্যাত, জ্ঞানস্বরূপ দেবতাকে স্তুতিরূপ বাক্য দ্বারা স্তব কর। নেতৃস্থানীয়, সর্বত্রগতিমান, সেই জ্ঞানস্বরূপ দেবতা তোমাকে অনুগ্রহ করুন। [এই আত্ম-উদ্বোধনমূলক মন্ত্রে সাধক-গায়ক আপন মনকে জ্ঞানাধিকারী হতে উদ্বুদ্ধ করছেন]। [গানের ঋষি-বাস্কন্ত; গানের নাম–পৌরুমীড়]।

৬।  শ্রবণশক্তিসম্পন্ন-কর্ণবিশিষ্ট (সাধকবর্গের প্রার্থনা-শ্রবণ-পরায়ণ সর্বজ্ঞ) হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আপনি আমাদের প্রার্থনা শ্রবণ করুন; এবং মিত্রস্বরূপ মিত্রদেবতা, গতিকারক অর্যমণ দেবতা, জীবন প্রভাতে হৃৎপ্রদেশে আপনা-আপনি আগমনশীল সত্ত্বপ্রাপক দেবভাবসমূহের সাথে এসে, শত্রুকৃত উপদ্রবরহিত যজ্ঞে (কর্মে) আমাদের হৃদয়-রূপ দর্ভাসনে সর্বতোভাবে উপবেশন করুন। [প্রার্থনার ভাব এই যে, -সাধকদের প্রার্থনা-শ্রবণ-পরায়ণ সেই দেবতা যেন সকল দেবভাব সহ আমাদের হৃদয়ে আগমন করেন, এবং আমাদের অনুষ্ঠিত কর্মকে প্রাপ্ত হন]। [অর্থ ও ভাবের দিক থেকে ঋগ্বেদের এই মন্ত্রটির সাথে তেমন পার্থক্য নেই; কিন্তু সেখানে একটু পাঠান্তর দেখা যায়]।

৭। দেবভাবের পোষক, দানশীল, দ্যোতমান এবং পরমৈশ্বর্যশালী ইন্দ্রের ন্যায় (এই) জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেব, মাতৃস্থানীয়–অনন্তের আস্পদ বলে অতিবিস্তৃত সাধকের হৃৎস্বরূপ ভূমিকে, অর্চকারিগণের হিতসাধনে, বিশেষভাবে প্রবর্তিত করেন। এই জ্ঞানাগ্নি, সত্ত্বভাবের দ্বারা পরিবর্ধিত হয়ে, স্বর্গ সম্বন্ধীয় কল্যাণে অবস্থিত হন (অর্থাৎ সাধকের পরম কল্যাণ সংসাধিত করেন)। [ভাব এই যে। জ্ঞানদেবতার প্রভাবে মানুষ সৎকর্মে প্রবুদ্ধ হয়। তাতে তাদের নিজের এবং সকল জীবের শ্রেয়ঃ সাধিত হয়ে থাকে]। [গেয়গানের ঋষি–সৌভরি; গেয়গানের নাম–দৈবোদাস]।

৮।  হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আপনি, সম্প্রতি পৃথিবী হতে অথবা অন্তরীক্ষ হতে এবং শ্রেষ্ঠ দীপ্যমানন্। দ্যুলোক হতে আমার হৃৎপ্রদেশে আগমন করে, বিস্তৃত আমার স্তুতিরূপ বাক্য দ্বারা বর্ধিত হোন;(অর্থাৎ অধিষ্ঠান করুন)। হে শোভনকর্মকারিন্ জ্ঞানাগ্নি! আপনি আমার (হৃদয়ে উৎপন্ন) সত্ত্বভাবসমূহকে পালন করুন। [প্রার্থনার ভাব এই যে, –সেই দেবতার কৃপায় আমার হৃদয়ে যেন নিখিল জ্ঞানের প্রকাশ হয়]। [মন্ত্রটি ঐন্দ্রসূক্তের অন্তর্ভূত এবং এর দেবতা ইন্দ্র, কিন্তু এখানে আগ্নেয়পর্বের অন্তর্গত রয়েছে, সুতরাং, দেবতা অগ্নি বললেও বলা যায়। এর গেয়গানের ঋষি-মেধাতিথি বা মেধ্যাতিথি; গেয়গানের নাম-সোক্রতব]।

৯। জ্ঞানস্বরূপ হে দেব! আপনি সংসার-রূপ কানন কামনা করে থাকেন (অর্থাৎ, সকলকেই অনুগ্রহ করতে উদযুক্ত আছেন)। যেহেতু আপনি, মাতৃস্বরূপ শুদ্ধসত্ত্বভাবসমূহকে আপনা-আপনিই প্রাপ্ত হন। সেই হেতু তা-ই আপনার গহ। আমাদের অনুগ্রহ না করে আপনি যে দূরে রয়েছেন, তা আমরা সহ্য করতে পারছি না; অতএব, আপনি আমাদের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হোন। [প্রার্থনার ভাব–সত্ত্বভাবের সাথে জ্ঞানদেবতার অভিন্ন সম্বন্ধ আমাদের হৃদয় সত্ত্বভাবসম্পন্ন হোক; জ্ঞানদেবতা সেখানে অধিষ্ঠান করুন]। [এর গেয়গানের ঋষি-বিশ্বামিত্র এবং গানের নাম–কণ্ব]।

১০। জ্ঞানস্বরূপ হে দেব! সর্বলোকের হিতের নিমিত্ত সাধক আপনাকে হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করেছেন; হে দেব! যে আপনাকে আত্ম-উৎকর্ষ-সম্পন্ন সাধুগণ নমস্কার করে থাকেন (আপনার অধিকারী হয়ে আপনারই পূজা করেন); অতিক্ষুদ্র মনুষ্য আমি; সত্য-উৎপন্ন সেই আপনি, হৃদয়-নিহিত শুদ্ধসত্ত্বের দ্বারা বর্ধিত হয়ে, আমার হৃদয়ে প্রদীপ্ত হোন। [প্রার্থনার ভাব এই যে, –সাধকবর্গ জ্ঞানের অধিকারী আছেন; সুতরাং জ্ঞানদেব যেন অকিঞ্চন আমায় জ্ঞান দান করেন]। [এর গেয়গানের ঋষি–কণ্ব এবং গানের নাম–মানব।]

.

ষষ্ঠী দশতি

ছন্দ আর্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।

দেবতা অগ্নি, ২ ব্ৰহ্মণস্পতি; ৩ যূপকাষ্ঠ।
ছন্দ বৃহতী।
ঋষি : ১।৭
শিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি; ২।৩।৫ ঘৌর কণ্ব; ৪ সৌভরি কাণ্ব; ৬ উৎকীল বা আৎকীল কাত্য; ৮ গাথি বিশ্বামিত্র।

দেববা বো দ্রবিণণাদাঃ পূর্ণাং বিবস্থবাসি। উদ্বা সিঞ্চধ্বমুপ বা পৃণধ্বমাদিদ্বো দেব ওহতে৷৷ ১৷৷ তুব্ৰহ্মণস্পতিঃ প্রদেব্যেতু সুনৃতা। অচ্ছা বীরং নর্যং পঙক্তিরাধসং দেবা যজ্ঞং নয়ন্তু নঃ ৷৷ ২৷৷ ঊর্ধ্ব উ যু উতয়ে তিষ্ঠা দেবোন সবিতা। ঊর্ধ্বো বাজস্য সনিতা যদঞ্জিভিবাঘদ্ভির্বি হুয়ামহে৷৷ ৩৷৷ প্র যো রায়ে নিনীষতি মর্তো যন্তে বসো দাশ। স বীরং ধত্তে অগ্ন উথশংসিনং অনা সহস্রপোষিণ৷৷ ৪৷৷ প্র বো যহুং পুরূণাং বিশাং দেবয়তীনা। অগ্নিং সূক্তেভিৰ্বচোভিৰ্বণীমহে যং সমিদন্য ইন্ধতে৷৷ ৫৷৷ অয়মগ্নিঃ সুবীর্যস্যেশে হি সৌভগস্য। রায় ঈশে স্বপত্যস্য গোমত ঈশে বৃত্রহথানা৷৷ ৬৷৷ ত্বমগ্নে গৃহপতিত্ত্বং হোতা নো অধ্বরে। ত্বং পোতা বিশ্ববার প্রচেতা যক্ষি যাসি চ বার্য। ৭৷ আগ্নেয় পর্ব সভায়স্থা ববৃমহে দেবং মর্তাস উতয়ে। অপাং নপাতং সুভগং সুদংসসং সুপ্রতৃর্তিমনেহস৷৷ ৮।

মন্ত্ৰাৰ্থ— ১। হে চিত্তবৃত্তিনিবহ! তোমাদের নিবাসস্থানভূত, সদ্ভাবপূর্ণ ও ভক্তিরসাপ্লুত (আমার) হৃৎপ্রদেশকে, ধনপ্রদ স্তোতমান জ্ঞানাগ্নি (জ্ঞানদেব) কামনা করুন; তোমরা সেই জ্ঞানস্বরূপ দেবতাকে ভক্তিরসের দ্বারা সম্যকরূপে সিঞ্চন কর এবং সৎ-ভাবের দ্বারা সম্যকরূপে পূর্ণ কর; অনন্তর (তা হলে) এই দ্যোতমান জ্ঞানাগ্নি তোমাদের অভিলষিত স্থান মোক্ষ প্রদান করবেন। [প্রার্থনার ভাব এই যে, –আমাদের হৃদয় সৎ-ভাব-সমন্বিত ভক্তিপ্লুত হোক। তার দ্বারাই আমরা আকাঙ্ক্ষিত সামগ্রী বা মোক্ষ প্রাপ্ত হতে পারব]। [এই মন্ত্রটির গানের ঋষি–অগ্নি; গানের নাম দ্রবিণ]।

২। লোকপালক ভগবান্ আমাদের প্রাপ্ত হোন; প্রিয় এবং সত্যবাক্য বা বাগদেবী আমাদের প্রাপ্ত হোন; দ্যোতমান্ ভগবৎ-বিভূতি-সকল (আমাদের প্রবল রিপুশত্রুগুলিকে দূর করুন; এবং তারা মনুষ্যবর্গের (সাধকদের) হিতকর, সৎ-ভাব ইত্যাদির দ্বারা নিষ্পাদিত; মহৎ অনুষ্ঠান আমাদের প্রাপ্ত করান। [ভাব এই যে, ভগবান্ আমাদের হৃদয় অধিকার করুন, প্রিয়সত্য বাক্য কণ্ঠে অবস্থিতি করুক; আর তাদের সহায়তায় আমরা যেন জনহিতসাধক সৎ-অনুষ্ঠান সাধনে সমর্থ হই]। [এর গেয়গানের ঋষি-অগ্নি এবং গানের নাম–বাৰ্হস্পত্য]।

৩। হে জ্ঞানস্বরূপ দেব। আপনি আমাদের রক্ষার নিমিত্ত ঊর্ধ্বদেশে (প্রভুস্বরূপ) অবস্থিত হোন। যে কারণবশতঃ ভক্তিরস দ্বারা হৃৎপ্রদেশে সিঞ্চনকারী দেবভাবের সাথে আপনাকে আহ্বান করছি, সেই কারণবশতঃ আপনি, সূর্যদেবের ন্যায় ঊর্ধ্বে অবস্থিত হয়ে, ভক্তিভাবের (জ্ঞানপূত পূজা-উপকরণের) দানকর্তা হোন। [ভাব এই যে, জ্ঞান, ভক্তি ও সৎ-ভাব-সমূহ একত্রে এককালে এসে আমার হৃৎপ্রদেশ অধিকার করুক]। [এর গেয়গানের ঋষি বশিষ্ঠ; গানের নাম–বীঙ্ক]।

৪। নিবাসহেতুভূত জ্ঞানস্বরূপ হে দেব! যে মনুষ্য পরমধনলাভার্থ আপনাকে প্রাপ্ত হতে ইচ্ছা করে, যে সাধক আপনাকে ভক্তি উপহার প্রদান করে থাকে; সেই সাধক নিজের দ্বারা বহুপালক (বহু সাধু ব্যক্তির আশ্রয়-স্থান-স্বরূপ) বেদপাঠী শূর পুত্র (ব্রহ্মনিষ্ঠ স্থান) প্রাপ্ত হয়ে থাকে। [ভাব এই যে, –সেই জ্ঞানস্বরূপ ভগবানকে যে জন অধিকার করতে সমর্থ হয়, সে জন ঐহিক পারত্রিক সর্বপ্রকার কল্যাণ প্রাপ্ত হয়ে থাকে]। [এর গেয়গানের ঋষি–আঙ্গিরস। গানের নাম–বৈস্পৰ্দ্ধস]।

৫। হে চিত্তবৃত্তিসকল! যে এই জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেবকে অন্যান্য সাধকগণ আপনাপন হৃৎপ্রদেশে প্রদীপ্ত করেন, সেই এই মহান্ জ্ঞানাগ্নিকে–দেবভাবকামী নানা রকমে চঞ্চল স্বভাববিশিষ্ট তোমাদের অনুগ্রহ (সৎ-ভাব-সহযুত) করবার জন্য সূক্তরূপ স্তুতিবাক্য দ্বারা প্রার্থনা করছে। [ভাব এই যে, সাধক গায়কের চিত্তবৃত্তিকে জ্ঞানাগ্নি যেন সৎ-ভাব-সহযুত করেন]। [এই মন্ত্রের গেয়গানের ঋষি–কণ্ব। গানের নাম-ঐতবাঘ্র্য]।

৬। জ্ঞানস্বরূপ এই অগ্নিদেব আপনি শত্রুসমরে উৎকৃষ্টবীর্যশালী এবং (ভগবানের কৃপার অধিকারী) সৌভাগ্যশালী সাধকের নিয়ামক (পরিচালক) হন; আপনি জ্ঞানবিশিষ্ট সৎ-ভাব-সহযুত সাধকের পরমার্থপ্রাপ্তির হেতুভূত হন; এবং রিপুশত্রুকৃত উপদ্রবনাশের প্রভু (কারণ) হয়ে থাকেন। [ভাব এই যে, ভগবানের জ্ঞানদেরূপী বিভূতি সৎ-ভাব-সম্পন্ন সাধকের শত্রুনাশকারী অধিপতি। তাকে ত্যাগ করে সাধক-গায়ক আর কারও শরণাপন্ন হতে ইচ্ছুক নন]। [এই গেয়গানের ঋষি—মনা। গানের নাম-দোহ]।

৭। সর্বপূজিত জ্ঞানস্বরূপ হে দেব! সর্বজ্ঞ আপনি, আমাদের হিংসারহিত হৃৎপ্রদেশের অধিপতি হোন; আপনি সেই হৃৎপ্রদেশে দেবভাবসমূহের আহ্বানকারী হয়ে হৃৎপ্রদেশের শোধনকর্তা হোন; আমাদের করণীয় শুদ্ধসত্ত্বভাব ভগবানে পর্যবসিত করুন; এবং আমাদের পরমধন প্রদান করুন। [প্রার্থনার ভাব, –সেই দেব আমাদের হৃদয়ের অধিপতি হোন, হৃৎপ্রদেশ সংশোধন করে দেবভাবের আহ্বান করুন, সৎ-অনুষ্ঠানকে ভগবানে প্রাপ্ত করিয়ে দিন, এবং আমাদের পরমার্থ প্রদান করুন। [গেয়গানের ঋষি–অগ্নি অথবা বশিষ্ঠ এবং বরুণ। গানের নাম–সমস্ত]।

৮। হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আপনার মিত্রের ন্যায় অনুরক্ত (ভক্ত) অর্চনাকারী আমরা, –শুদ্ধসত্ত্ব হতে উৎপন্ন, ষড়ৈশ্বর্যশালী, শোভনকর্মা, সাধকদের সুখপ্রাপ্য, উপদ্রবনাশকারী আপনাকে, –আমাদের রক্ষার নিমিত্ত বরণ করছি। [গেয়গানের ঋষি–বাম্রবৈখানস। গানের নাম–আঞ্জিগ অথবা দানব]।

.

সপ্তমী দশতি

ছন্দ আৰ্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।

দেবতা অগ্নি
ছন্দ ১।৩, ৫-৯ ত্রিষ্টুপ; ২।৪ জগতী; ১০ ত্রিপাদবিরাট গায়ত্রী।
ঋষি : ১ শ্যাবাশ্ব আত্রেয় বা বামদেব গৌতম; ২ উপস্তুত বার্ষ্টিহব্য; ৩ বৃহদুকথ বামদেব্য; ৪ কুৎস আঙ্গিরস; ৫।৬ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য; ৭ বামদেব গৌতম; ৮।১০ বশিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি; ৯ ত্রিশিরা ত্বাষ্ট্র।

আ জুহোতা হবিষ মর্জয়ধ্বং নি হোতারং গৃহপতিং দধিধ্বম্। ইডম্পদে নমসা রাতহব্যং সপৰ্যতা যজতং পস্ত্যানা৷৷ ১৷৷ চিত্র ইচ্ছিশোরুণস্য বক্ষণো ন যো মাতরাবন্বেতি ধাতবে। অনূধা যদজীজনদধা চিদা ববক্ষৎ সদ্যো মহি দূতাং৩ চর৷ ২৷৷ ইদং ত একং পর উ ত একং তৃতীয়েন জ্যোতিষা সং বিশস্ব। সংবেশনস্তন্বে৩চারুরেধি প্রিয়ো দেবানাং পরমে জনিত্রে৷৷ ৩৷৷ ইমং স্তোমমহঁতে জাতবেদসে রথমিব সং মহেমা মনীষয়া। ভদ্রা হি নঃ প্ৰমতিরস্য সংসদ্যগ্নে সখ্যে মা রিমা বয়ং তব৷৷ ৪৷ মূর্ধানং দিবো অরতিং পৃথিব্যা বৈশ্বানরমৃত আ জাতমগ্রিম্। কৰিং সম্রাজমতিথিং জনানামাসন্নঃ পাত্রং জনয়ন্ত দেবাঃ। ৫৷৷ বি দাপো ন পর্বতস্য পৃষ্ঠাদুথেভিরগ্নে জয়ন্ত দেবাঃ। তং ত্বা গিরঃ সুষ্ঠুতয়ো বাজয়ন্ত্যাজিং ন গির্বাহো জিণ্ড্যরশ্বাঃ৷৷ ৬৷৷ আ বো রাজানমধ্বরস্য রুদ্রং হোতারং সত্যযজং রোদস্যোঃ। অগ্নিং পুরা তনয়িত্নোরচিত্তারিণ্যরূপমবসে কৃণুধ্বম্৷৷ ৭৷৷ ইন্ধে রাজা সমৰ্যো নমোভির্যস্য প্রতীকমাহুতং ঘৃতেন। নরো হব্যেভিরীডতে সবাধ আগ্নিরগ্রমুষসামশোচি৷৷ ৮৷ প্র কেতুনা বৃহতা যাত্যগ্নিরা রোদসী বৃষভো রোরবীতি। দিবশ্চিন্তাদুপমামুদানডপামুপস্থে মহিষো ববর্ধ॥৯৷৷ অগ্নিং নরো দীধিতিভিররণ্যোহস্তচ্যুতং জনয়ত প্রশস্তম্। দূরেদৃশং গৃহপতিমথ্যুম্৷ ১০।

মর্মার্থ— ১। হে চিত্তবৃত্তিনিবহ! তোমরা জ্ঞানস্বরূপ দেবতাকে আহ্বান কর; শুদ্ধসত্ত্বভাবরূপ হবিঃ দ্বারা তাকে তৃপ্ত কর; দেবভাবসমূহের আহ্বানকর্তা, হৃদয়-গৃহের অধিপতি, জ্ঞানাগ্নিকে (আমার) হৃৎপ্রদেশে প্রতিষ্ঠিত কর; নমস্কারের দ্বারা অর্চিত, সাধকদের হৃদয়-দেশে পূজনীয়, সেই জ্ঞানাগ্নির সেবা কর। [অন্তর্যজ্ঞে এই অগ্নি সাধক-গায়কের হৃপ্রদেশে অবস্থানকারী জ্ঞানাগ্নি (ভগবানের জ্ঞানরূপ বিভূতি)। বহির্যজ্ঞে ঋত্বিকদের আহ্বানকারী অগ্নিরূপী দেব, যাঁকে হবির দ্বারা সুখী করার আহ্বান জ্ঞাপিত হচ্ছে; অর্থাৎ যজ্ঞগৃহে তিনি পরিচর্যনীয়]।

২। যে জ্ঞানাগ্নি, সাধকের রক্ষার জন্য, জন্মকারণমূলক সকাম পাপপুণ্যের অনুগমন করেন না; নিষ্কাম সাধক যে জ্ঞানকে আপন হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন; সেই নবজাত তরুণ জ্ঞানের, হবনীয় প্রাপণ (দেবভাবগুলিকে হৃদয়-নিহিত শুদ্ধসত্ত্ব প্রদান) বিচিত্র ব্যাপার; যেহেতু, সাধকের হৃদয়স্থিত সেই জ্ঞানাগ্নি, মহৎ দূতকর্ম আচরণ করে, সাধকের হৃদয়ে শীঘ্রই দেবভাবসমূহকে আনয়ন করেন। [সাধকের রক্ষাকারী যে জ্ঞানাগ্নি, সেই জ্ঞানাগ্নি সাধককে তার জন্মের হেতুভূত সকাম পাপপুণ্যের অনুগমন করতে দেয় না। নিষ্কাম সাধক যে জ্ঞানকে হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করেন, সেই জ্ঞানের দেবতার উদ্দেশ্যে শুদ্ধসত্ত্বভাব অর্পণ খুবই বিস্ময়কর। সেই জ্ঞানই দূতস্বরূপ হয়ে সাধকের হৃদয়ে সত্বর দেবভাবগুলিকে এনে দেন। সাধক-গায়ক তারই প্রভাবে অমরত্ব লাভে সমর্থ হন]।

৩। হে জীব! অগ্নিরূপে প্রকাশমান্ এই যে তেজঃ, এ তোমার এক অংশ (তোমার এক উপাদান); অপর বায়ুরূপে প্রবহমান্ ঐ যে প্রাণ, তা-ও তোমার এক অংশ (তোমার এক উপাদান); এমনই তোমার তৃতীয়াংশভূত আত্মারূপে অবস্থিত পরমাত্মা তোমার এক অংশ (তোমার এক উপাদান); তুমি তোমার জ্ঞানজ্যোতির সাহায্যে, সেই পরমাত্মায় মিলিত হও; তোমার দেহ-ধারণের (নরজন্ম-গ্রহণের) সফলতার জন্য (জীবনের দৈনন্দিন কার্যে) দেবভাবসমূহের শ্রেষ্ঠ জনয়িতার (সৎকর্মের) সাথে তোমার সম্মিলন সাধন কর; আর তা হতে ভগবৎসান্নিধ্য লাভের সামর্থ্য ও কল্যাণ প্রাপ্ত হও। [সেই ভগবান্ তেজোরূপে বায়ুরূপে আত্মারূপে সকলের মধ্যেই বিরাজমান। তাঁর সম্বন্ধীয় জ্ঞানলাভের জন্য সৎকর্মের সাথে সম্বন্ধযুত হলেই সাধক-গায়ক পরমাত্মার সাথে মিলন ও পরমানন্দ লাভ করবে]। [এই সামমন্ত্রের ঋষি–বৃহদুকথ; এর গেয়গানের নাম যাম অথবা কৌৎস্য]।

৪। পূজনীয় আদিভূত জ্ঞানের জন্য (পরমজ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে) প্রজ্ঞা-বৃদ্ধির দ্বারা রথস্বরূপ  (ভগবান্‌কে প্রাপক) এই মন্ত্রকে আমরা সর্বতোভাবে অনুসরণ (সম্পূজিত) করছি; জ্ঞানস্বরূপ মন্ত্রকে তার সম্ভজনে (সম্পূজনে) নিশ্চয়ই আমাদের প্রকৃষ্ট বুদ্ধি এবং কল্যাণ সাধিত হয়। হে জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেব! আপনার সাথে সখিত্ব হলে (আপনার অনুসারী হলে) আমরা আর হিংসিত হই না (তখন আপনি আমাদের সর্বদা রক্ষা করেন)। [সুবুদ্ধির দ্বারা পরিচালিত হয়ে আমরা যখন জ্ঞানের অনুসারী হই, তখনই আমাদের শ্রেয়ঃ সাধিত হয় ; কোনও শত্রুই তখন আমাদের কোনরকম অনিষ্ট করতে পারে না]। [এই সামমন্ত্রের ঋষি–কুৎস্য; এর গেয়গানের নাম যজ্ঞসারথি]।

৫। দ্যুলোকের মস্তকস্থানীয়, মর্ত্যলোকের গতিকারক, বিশ্ববাসী নরগণের সৎকর্ম হতে সর্বতোভাবে উৎপন্ন সর্বদর্শী, সর্বপ্রকাশশীল, হবিবাহক, সত্ত্বভাবগ্রহণকারী, পরিত্রাতা, সেই জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেবকে, দেবভাবসমূহ উৎপন্ন করছেন। [সত্ত্বভাবসুত ; সৎকর্মের দ্বারা অশেষ, শক্তিশালী জ্ঞানাগ্নি উৎপন্ন হয়, সেই কর্মের অনুষ্ঠানে জ্ঞানার্জন করার জন্যই সাধক-গায়ক উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন]। [এই সামমন্ত্রের গায়ক—ভরদ্বাজ। এর গেয়গানের নাম বৈশ্বানর]।

৬। হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! পর্বতপৃষ্ঠে অবস্থিত সলিলরাশি যেমন মনুষ্যবর্গের অল্পায়াসে নিম্নভূমি প্রাপ্ত হয়, তেমনই স্তোত্রমন্ত্র-প্রভাবে আমাদের দেবভাবসমূহ আপনার নিকট হতে আমাদের কামনা পরিপূর্ণ করিয়ে নেন। স্তোত্রমন্ত্রে বহনীয় হে জ্ঞানাগ্নি! বেগগামী অশ্ব যেমন ত্বরায় সংগ্রাম-ভূমি প্রাপ্ত হয়, তেমনই স্তুতিবশ-প্রসিদ্ধ আপনাকে সুস্তুতিরূপ বাক্য (বেদমন্ত্র) বশীভূত করে থাকে। [মানুষ ভগবানের স্তুতিপরায়ণ—পূজায় ব্রতী-হলে সংসার-সমরাঙ্গনে জয়ী হতে পারবে]। [এই সামমন্ত্রটির ঋষি ভরদ্বাজ। এর দুটি গেয়গানের নাম—আশ্ব এবং ঐরত]।

 ৭। হে মনুষ্যগণ! তোমাদের রক্ষার জন্য, তোমরা সেই হিংসাপ্রত্যবায় ইত্যাদি রহিত কর্মের অধিপতি, দেবভাবের আহ্বাত, (আমাদের) শত্রুদমনে রুদ্রমূর্তিধর, দ্যাবাপৃথিবীর আনন্দ-সঙ্গময়িতা (চিদানন্দপ্রদ), দিব্যজ্যোতির্ময়, জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেবকে, অশনি-পতনের ন্যায় সহসা মৃত্যু আসবার পূর্বে, সম্যকারে ভজনা কর। [বজ্রপতনের মতো হঠাৎ কখন মৃত্যু আসবে স্থির নেই; সুতরাং মুহূর্ত কালক্ষয় না করে ভগবানের পূজায় প্রবৃত্ত হওয়ার জন্যই উপদেশ ধ্বনিত হচ্ছে। [এই সামমন্ত্রের ঋষি বামদেব; এর গেয়গানের ঋষি-রৌদ্র ও বামদেব]।

 ৮। হৃদয়-রাজ্যের রাজা (হৃদয়ে দীপ্যমান) সকল মনোবৃত্তির অধিস্বামী জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেব, স্তুতিমন্ত্রের সাথে (জ্ঞানের অনুশীলনের সাথে) সম্যক প্রদীপ্ত হন। জ্ঞানদেবতার রূপ বা আদর্শ শুদ্ধসত্ত্বভাবের দ্বারা সম্পূজিত (অনুধ্যাত) হয়। সংসার-ক্ষেত্রে অবাধ বিচরণে বাধাপ্রাপ্ত (দুঃখাক্রান্ত) মনুষ্য যখন (শুদ্ধসত্ত্বরূপ) আহবনীয় দ্বারা পূজা করেন, তখন সেই জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেব ঊষাকালের ন্যায় অগ্রে অগ্রে সর্বতোভাবে দীপ্যমান হন। [অর্থাৎ ঊষালোক যেমন অন্ধকার দূর করে আপন সম্মুখভাগে ক্রমশঃ বিস্তৃত হন, জ্ঞানদেবতাও তেমনই অজ্ঞানতা দূর করে সাধক-গায়কের হৃদয়ে প্রসারিত হন। তখন তার সকল বিপদ দূরে যাবে, আঁধার টুটবে ; সে (সেই সাধক-গায়ক) আলোক-পুলকে মগ্ন হবে]। [এই সামমন্ত্রের ঋষি বশিষ্ঠ; এর গেয়গানের নাম—বৈশ্ব এবং জ্যোতিঃ]।

৯। জ্ঞানদেবতা যখন আপন মহতী বিজয়পতাকা সহ দ্যুলোকে ও ভূলোকে আগমন করেন, তখন তার অভীষ্টবর্ষণশীল রূপ সর্বতোভাবে সপ্রকাশ হয়। মহত্ত্বসম্পন্ন সেই জ্ঞানস্বরূপ দেবতা দ্যুলোকের অভ্যন্তরে এবং তার বহিঃপ্রদেশে ইহলোকের সীমান্ত পর্যন্ত আপন তেজে পরিব্যাপ্ত হন বটে, কিন্তু সত্ত্বভাবের সমীপেই তিনি সম্যক্ প্রদীপ্ত হন। [জ্ঞানের ফল প্রদায়কত্ব সর্ববিদিত। জ্ঞান সঞ্চারের সাথে মানুষের সকল সুফল লাভ হয়ে থাকে; সত্ত্বভাবই জ্ঞানের নিবাসস্থান]। অথবা বিজয়ী বীর যেমন বৃহৎ পতাকা সহ রাজ্যে প্রবেশ করেন এবং দ্যাবাপৃথিবীকে জয়নিনাদে প্রতিধ্বনিত করেন; তেমনই, অভীষ্টবর্ষণশীল (অমিতপ্রভাবশালী) সেই জ্ঞানদেবতা (অগ্নিদেব) দ্যুলোকের বহিঃপ্রদেশ হতে ইহলোকের সীমান্ত পর্যন্ত (সর্বলোকে) আপন তেজে পরিব্যাপ্ত হন, এবং সত্ত্বভাবের সমীপে মহান্ প্রদীপ্ত থাকেন। [জ্ঞানের প্রভাব সর্বত্র অব্যাহত; সত্ত্বভাবের সহযোগে সে প্রভাব পরিবর্ধিত হয়]। [সামের ঋষি–ত্রিশ্বিরা। গেয়গানের নাম–যাম]।

১০। জননায়ক শ্রেষ্ঠ পুরুষগণ, সৎকর্মপ্রসূত মেধাপ্রভাবে (জ্ঞানকিরণের সাহায্যে), দূরে দৃশ্যমান অথবা আপন দেহরূপ গৃহেরই অধিপতি রূপে বিদ্যমান, বিচ্ছিন্ন-সম্বন্ধ অথবা চিরসম্বন্ধবিশিষ্ট। সেই জ্ঞানদেবতাকে ভক্তিসহযুত কর্মের মধ্যেই প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। [মন্ত্রের ভাব–দৃষ্টিশক্তির তারতম্য অনুসারে, কেউ বা মনে করেন, –সেই জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেব দূরে আছেন; কেউ বা তাকে দেহরূপ গৃহেরই অধিপতিরূপে বিদ্যমান দেখতে পান; কেউ দেখেন তার সাথে আমাদের সম্বন্ধ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে; কেউ দেখেন–সে সম্বন্ধ চির-অবিচ্ছিন্ন। এমন যে জ্ঞানদেবতা, শ্রেষ্ঠপুরুষগণ নিজেদের সত্যৰ্মপ্রসূত মেধাপ্রভাবে, ভক্তিসহযুত কর্মের মধ্যেই, তাকে দেখতে পান]। [সামের ঋষি বশিষ্ঠ, গেয়গানের নাম–চ্যবন, শৈখণ্ডিন বা ইহব।]

.

অষ্টমী দশতি

ছন্দ আর্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।

দেবতা অগ্নি; ৩ পূষা৷
ছন্দ ত্রিষ্টুপ৷
ঋষি : ১ আত্রেয় বুধ ও গবিষ্ঠির, ২।৫ ভালন্দন বৎসপ্রি;
৩ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য; ৪।৭ গাথি বিশ্বামিত্র; ৬ বশিষ্ঠ মৈত্রাবরুণি; ৮ পায়ু ভরদ্বাজ।

অবোধ্যগ্নিঃ সমিধা জনানাং প্রতি ধেনুমিবায়তীমুযাস। যত্মা ইব:প্র বয়ামুজ্জিহানাঃ প্র ভানবঃ সতে নাকমচ্ছ৷৷ ১। প্র ভূর্জয়ন্তং মহাং বিপোধাং মূরৈরমূরং পুরাং দর্মাণম্। নয়ন্তং গীৰ্ভিবনা ধিয়ং ধা হরিশ্মশ্রুং ন বর্মণা ধনর্চি৷৷ ২৷৷ শুক্রং তে অন্যদ্যজতং তে অন্যদ্বিযুরূপে অহনী দ্যৌরিবাসি। বিশ্বা হি মায়া অবসি স্বধাব ভদ্রা তে পূষন্নিহ রাতিরস্তু৷৷ ৩৷ ইড়ামগ্নে পুরুংসং সনিং গোঃ শশ্বত্তমং হবমানায় সাধ। স্যান্নঃ সূনুস্তনয়ো বিজাবাগ্নে সা তে সুমতিৰ্ভূত্বসেম৷৷ ৪৷ প্র হোতা জাতো মহান্নভো বিন্বষদ্মা সীদদপাং বিবর্তে। দধদ্যো স্থায়ী সু তে বয়াংসি যন্তা বসূনি বিধতে তনূপাঃ৷৷ ৫৷৷ প্র সম্রাজমসুরস্য প্রশস্তং পুংসঃ কৃষ্টীনামনুমাদ্যস্য। ইন্দ্রস্যেব প্র বসস্কৃতানি বদ্বারা বদমানা বিবন্ধু। ৬৷৷ অরণ্যোর্নিহিতো জাবেদা গর্ভ ইবেৎসুভূতো গর্ভিণীভিঃ। দিবেদিব ঈড্যো জাগ্বদ্ভিৰ্হবিস্মর্মিনুষ্যেভিরগ্নিঃ ৷৷ ৭৷৷ সনাদগ্নে মৃণসি যাতুধানানু দ্বা রক্ষাংসি পৃতনাসু জিণ্ড। অনুদহ সহমূরান্ কয়াদো মা তে হেত্যা মুক্ষত দৈব্যায়াঃ ৷৷ ৮৷৷

মন্ত্ৰাৰ্থ—  ১। ঊষঃকালে আগমনকারী সূর্যরশ্মির ন্যায় জ্ঞানস্বরূপ অগ্নিদেব জনসমূহের (সাধকগণের) সত্ত্বভাবের সাথে প্রবুদ্ধ হন। [ভাব এই যে, ঊষার পশ্চাতে আলোকরশ্মি যেমন ধাবমান হয়, সত্ত্বভাবের সাথে জ্ঞান তেমনই সংযুক্ত হন–হৃদয় আলোকিত করেন]। মহান্ বৃক্ষের শাখা বহির্গমনের ন্যায় (অথবা, উড্ডীয়মান পক্ষীর আপন আশ্রয়স্থান ত্যাগের ন্যায়) জ্ঞানরশ্মিসমূহ অন্তরীক্ষ অভিমুখে প্রসারিত হয় (অর্থাৎ, জ্ঞানকিরণসমূহের দ্বারা সাধকগণ পরমার্থ বা মোক্ষ প্রাপ্ত হন)। [ভাব এই যে, পক্ষিগণ বা বৃক্ষশাখা সকল যেমন বৃক্ষসম্বন্ধ অতিক্রম করে আকাশে আত্মসম্প্রসারণ করে, জ্ঞানসম্বন্ধপ্রাপ্ত আমরাও তেমনই সংসার-সম্বন্ধ ত্যাগ করে পরমার্থ-সন্নিকর্ষ বা মোক্ষ লাভ করি]। [এই মন্ত্রের দ্রষ্টা–বুধ এবং গবিষ্ঠির]।

২। হে মন! তুমি কাম ইত্যাদি শত্রুসেনা-বিজয়ী, অতি মহৎ, মেধাবিগণের (শুদ্ধসত্ত্ব ইত্যাদির বা সাধকের) পালক মায়ার দ্বারা উৎপন্ন দেহের রক্ষক (অথবা, উচ্ছেদক) মোহবিহীন, দেবতাকে আরাধনা করবার জন্য সমর্থ হও; আবার, স্তুতির দ্বারা (সত্ত্বভারে দ্বারা) সম্যকরূপে ভজনযোগ্য সকল ধনের প্রদাতা (অথবা, পরমার্থ-সন্নিকর্ষে নয়নকর্তা কিংবা মোক্ষপ্ৰাপয়িতা), শত্রুভীতিপ্রদ অজ্ঞানাধারনাশক দিব্যজ্যোতীরূপ কবচধারী সেই দেবতার উদ্দেশে তার প্রীতিপ্রদ স্তোত্রমন্ত্র ও তার পরিচরণ-রূপ কর্ম সম্পাদন কর। [মন্ত্রটি আপন মনকে সম্বোধনমূলক। জ্ঞানকিরণ ও মোক্ষলাভের জন্য বহুগুণোপেত জ্ঞানস্বরূপ দেবতার প্রীতিকর কর্মসম্পাদনের উপদেশ এখানে পরিলক্ষিত হয়। ভাবার্থ-হে মন!তুমি হৃদয়ে জ্ঞানসঞ্চয়ে প্রবৃত্ত হও। –এর মধ্যেই নিহিত আছে সাধক-গায়কের সকল কল্যাণ]। [এই মন্ত্রের গেয়গানের নাম–শ্যৈতং শয়নং শায়ন দীর্ঘায়ুব্যং ইত্যাদি। গেয়গানের ঋষি–শ্যেনঃ অথবা প্রজাপতি]।

৩। হে শুদ্ধসত্ত্বপোষণকারী দেব! আপনার দিবাবৎ (দিনের আলোকের মতো) শুভ্রবর্ণ (শান্তভাবাপন্ন, জ্ঞানময় বা জাগ্রৎ) একটি রূপ; আবার, আপনার রাত্রিবৎ (রাত্রের অন্ধকারের মত) কৃষ্ণবর্ণ (রৌদ্রভাবাপন্ন, অজ্ঞানময় বা সুপ্ত) আর একটি রূপ। আপনার সেই বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন (জাগ্রৎসুপ্ত, জ্ঞানাজ্ঞানময়, শান্তরৌদ্রভাবাপন্ন) সকল রূপই যজনীয়। হে দেব! জ্ঞানদেবতা আদিত্যের ন্যায় স্বপ্রকাশ, থেকে আপনি বিশ্বের সত্ত্বাদি পোষণ করছেন। (অতএব) হে জ্ঞানদেব! আপনি আমাদের আপনার মঙ্গলময় দান প্রদান করুন (অথবা, পরমার্থের সন্নিকর্ষ-লাভে সহায় হোন)। [ভাব এই যে, সেই দেবের অনুকম্পাতেই শুদ্ধসত্ত্ব ইত্যাদি দ্বারা অথবা জ্ঞানকিরণ ইত্যাদি দ্বারা আমরা আত্মোন্নতি করতে সমর্থ হই]। [এই মন্ত্রের ঋষি-ভরদ্বাজ। গেয়গানের নাম–শুক্রং]।

 ৪। হে জ্ঞানদেবতা! আপনি প্রার্থনাকারিগণের (সাধকদের) পরাগতি লাভের নিমিত্ত, তাদের হৃদয়ে জ্ঞানকিরণসম্পাদয়িতা (শুদ্ধসত্ত্বজনয়িতা) বিবেক সঞ্চার করেন। হে জ্ঞানস্বরূপ দেব! আপনার অনুগ্রহে (আমাদের হৃদয়ে) পবিত্রকর মোক্ষদানসমর্থ প্রজ্ঞা (শুদ্ধসত্ত্ব ইত্যাদির উদ্ভব) হোক। হে দেব! আপনার  শোভনবুদ্ধি (আমাদের পক্ষে) অনায়াসলভ্য হোক (অথবা আপনার অনুগ্রহলাভে আমরা যেন আপনার ন্যায় সুবুদ্ধিসম্পন্ন হই)। [জ্ঞানকিরণ দ্বারা হৃদয় উদ্ভাসিত হলে এমন প্রার্থনাই পরিস্ফুট হয়। যা সৎ, তাতে অসতের সংশ্রব থাকতে পারে না। সৎ-বস্তুর কাছে সৎ-ভাবের কামনাই সমীচীন। তাই সৎ-স্বরূপ ভগবানের কাছে সুমতিলাভের প্রার্থনা অত্যন্ত সুসঙ্গত]। [এর ঋষি-বিশ্বামিত্র। গেয়গানের নাম কৌৎস]।

৫। সেই জ্ঞানদেবতা, সাধকের হৃদয়রূপ পবিত্র স্থানের নিগূঢ়প্রদেশে অবস্থিত থেকে (সত্ত্বভাবের অভ্যন্তরে বিরাজিত থেকে) সৎকর্মনিয়ামক মোক্ষপদ-প্রদর্শক হন। (অন্তরীক্ষের উপস্থানে বিদ্যুৎ যেমন প্রছন্ন থাকে, সাধকের হৃৎকন্দরে জ্ঞানকিরণ তেমনই সুপ্ত অবস্থায় অবস্থিত আছে। সাধনার প্রভাবে সৎকর্মের দ্বারা সেই জ্ঞানরশ্মি প্রকাশ পায়–এটাই ভাবার্থ)। ভক্তহৃদয় সম্পর্কে অভিজ্ঞ বরণীয় সেই দেবতা ভক্তের হৃদয়ে প্রসন্নভাবে-অধিষ্ঠিত হন। হে মন! যে জ্ঞানাগ্নি সত্ত্বাদি ধারণ করে প্রার্থনাকারীর হৃদয়ে নিহিত হন, সেই জ্ঞানদেবতার পরিচর্যায় প্রবৃত্ত হও। সেই দেবতা তোমার সত্ত্বভাব ইত্যাদির ও পরমার্থরূপ ধনের নিয়ামক এবং দুষ্কৃতসমূহের পরিত্রাতা হোন। [এই মন্ত্রের ঋষি-বৎসপ্রি; গেয়গানের নাম–কাশ্যপ ও অভিহিত]।

৬। হে মন! অজ্ঞানরূপ শত্রুর অভিভবকারী (বিনাশক) আত্ম-উৎকর্ষসম্পন্ন সাধকদের স্তবার্হ (অথবা আনন্দস্বরূপ) পরমৈশ্বর্যশালী ভগবান্ ইন্দ্রদেবের ন্যায় প্রভাবসম্পন্ন সর্বপ্রকাশশীল সেই জ্ঞানাগ্নির শ্ৰেষ্ঠস্বরূপকে প্রকৃষ্টরূপে আরাধনা কর; এবং স্তুতি দ্বারা স্তূয়মান দেবগণ-সম্বন্ধীয় পূজা-আরাধনা-রূপ কর্মসকলকে কামনা কর। [ভাব এই যে, -সাধক-গায়কের মন যেন জ্ঞানের অনুসারী হয়; এবং ভগবৎসম্বন্ধীয় কর্ম মাত্র অনুষ্ঠানে প্রবৃত্ত থাকে]। [গেয়গানের নাম–ঘৃতাচী অথবা আঙ্গিরস। গেয়গানের ঋষি—ঘৃতাচী অথবা অঙ্গিরঃ]।  

৭। গর্ভিনী স্ত্রী যেমন অতি যত্নে গর্ভ ধারণ করে (অথবা, গর্ভিনীতে সুবিন্যস্ত গর্ভের ন্যায়, কিংবা আধারে সুবিন্যস্ত আধেয়ের ন্যায়), তেমনই সেই আদিভূত অগ্নিদেব (জ্ঞানদেবতা অথবা প্রজ্ঞানাধার ভগবা) অরণ্যসদৃশ হৃদয়েও অধিষ্ঠিত আছেন। সেই অগ্নিদেব সম্ভূতহবিষ্ক (সত্ত্বভাবসমন্বিত, সৎকর্মনিরত) সাধকগণের প্রকৃষ্টরূপে অনুক্ষণ (সদাকাল) স্তবনীয় (অথবা, তার প্রীতির জন্য স্তোত্রকর্ম বিধেয় অর্থাৎ স্তোত্রাদি বা সৎকর্মাদির দ্বারা অন্তর্নিহিত জ্ঞানের উৎকর্ষসাধন কর্তব্য)। [হিংস্রশ্বাপদসঙ্কুল অরণ্যের মতো দুর্দান্ত কামক্রোধাদি রিপুশত্রুপরিবৃত যে হৃদয়, সেখানেও ভগবান্ অধিষ্ঠিত আছেন। অন্তর্যাজ্ঞিক দেখছেন–অরনিদ্বয়ের মধ্যে যেমন অগ্নি নিহিত, (কিংবা গর্ভিণীর গর্ভে ভ্রণ যেমন অধিষ্ঠিত), তেমনই তারও (সাধক-গায়কের) হৃদয়েও আদিভূত জ্ঞানাগ্নি (প্রজ্ঞানাধার ভগবা) জন্মমুহূর্ত থেকেই সদা প্রজ্বলিত (বিরাজমান) রয়েছেন। সৎকর্মের প্রভাবে, শুদ্ধসত্ত্বের উদয়ে, সেই জ্ঞানাগ্নির উত্তৰ্ষ সাধিত হয়ে থাকে অর্থাৎ ভগবানকে পাওয়া যায়]। [গানের ঋষি–ভরদ্বাজ। গেয়গানের নাম–প্রাসাহং]।

৮। হে জ্ঞানদেব! আপনি চিরদিনই রিপুশত্রুগণকে (অথবা, সেই সংক্রান্ত অসৎ-ভাব-পরম্পরাকে) নাশ করেন; (অর্থাৎ, জ্ঞানের প্রভাবে অজ্ঞানরূপ অন্ধকার দূরীভূত হয়, কামক্রোধ ইত্যাদি রিপুসকল বিনষ্ট হয়ে থাকে)। আপনার সাথে সংগ্রামে শত্রুগণ কেউই জয়লাভে সমর্থ হয় না; (অর্থাৎ, জ্ঞান অজ্ঞানের অথবা সৎ-অসৎবৃত্তির দ্বন্দ্বে জ্ঞানের বা সৎ-বৃত্তির প্রভাবই পরিলক্ষিত হয়)। (শত্রুগণকে বিজিত করে) আপনি তাদের সমূলে বিনষ্ট করুন, (অর্থাৎ, হৃদয়ে জ্ঞানের পূর্ণ-প্রভাব বিস্তৃত হলে অজ্ঞানমূল বিনষ্ট হয়)। আপনার দীপ্তিরূপ আয়ুধ হতে শত্রুগণের কেউই পরিত্রাণ লাভ করে না, (অর্থাৎ, হৃদয়ে জ্ঞানের জ্যোতিঃ বিচ্ছুরিত হলে, অন্তরের সকল শত্রুই নিরাকৃত হয়ে থাকে)। [বাহ্যপূজায় একান্ত আসক্ত যিনি, রাক্ষসদের উপদ্রবে যজ্ঞ-বিঘ্ন উৎপন্ন হবার আশঙ্কায় সেই রাক্ষসদের বিনাশ-সাধনের জন্য অগ্নিদেবের নিকট প্রার্থনা জানাতে পারেন। কিন্তু অন্তর্যাজ্ঞিকের যজ্ঞ অন্যরকম, তার যজ্ঞানাগ্নিও স্বতন্ত্র। তার যজ্ঞানুষ্ঠান–হৃদয়ে জ্ঞানকিরণ-লাভের জন্য; তার কামনা–রিপুশত্রুদের বিনাশসাধন– শুদ্ধসত্ত্বলাভ]। [এর গেয়গানের ঋষি—অগ্নি, বৈশ্বানর বা অত্রি। গেয়গানের নাম–রক্ষোঘ্ন]।

.

নবমী দশতি

ছন্দ আর্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।

দেবতা অগ্নি৷৷
ছন্দ অনুষ্টুপ৷৷
ঋষি : ১ গয় আত্রেয়;
২ বামদেব; ৬।৪ ভরদ্বাজ বার্হস্পত্য; ৫ দ্বিত মৃক্তবাহা আত্রেয়; ৩ অত্রিপুত্র বসুগণ; ৭।৯ গোপবন আত্রেয়; ৮ পুরু আত্রেয়; ১০ বামদেব কশ্যপ বা মারীচ অথবা বৈবস্বত মনু অথবা উভয়কৃত৷৷

অগ্ন ওজিষ্ঠমা ভর দ্যুম্নমস্মভ্যমগিগা। প্র নো রায়ে পনীয়সে রৎসি বাজায় পন্থা৷৷ ১। যদি বীরো অনুষ্যাদগ্নিমিন্ধীত মঃ। আজুদ্ধব্যমানুষ শৰ্ম ভক্ষীত দৈব্য৷৷ ২৷৷ ত্বেষস্তে ধূম ঋথতি দিবি সঞ্জু আততঃ। সূরো ন হি দুতা ত্বং কৃপা পাবক রোচসে৷৷ ৩৷৷ ত্বং হি ক্ষৈতবদ্যশোহগ্নে মিত্রো ন পত্যসে। ত্বং বিচৰ্ষণে শ্রবো বসো পুষ্টিং ন পুষ্যসি৷৷ ৪৷৷ প্রাতরগ্নিঃ পুরুপ্রিয়ো বিশ শুবেতিথিঃ। বিশ্বে যস্মিন্নমর্তে হব্যং মর্তাস ইন্ধতে৷৷ ৫৷ যদ বাহিষ্ঠং তদষ্ময়ে বৃহদ বিভাবসসা। মহিষীব ত্বদ রয়িত্ব বাজা উদীরতে৷৷ ৬। বিশোবিশশা বো অতিথিং বাজয়ন্তঃ পুরুপ্রিয়। অগ্নিং বো দুর্যং বচঃ স্তুষে শুষস্য মন্মভিঃ। ৭ বৃহদ বয়ো হি ভানবেহর্চা দেবায়াগ্নয়ে। যং মিত্রং ন প্রশস্তয়ে মর্তাসসা দধিরে পুরঃ॥ ৮৷৷ অগন্ম বৃত্ৰহন্তমং জ্যেষ্ঠমগ্নিমানব। যঃ স্ম শ্রুতবন্নাক্ষে বৃহদনীক ইধ্যতে৷৷৷৷. জাতঃ পরেণ ধর্মণা যৎ সবৃদ্ধিঃ সহাভুবঃ। পিতা যৎ কশ্যপস্যাগ্নিঃ শ্রদ্ধা মাতা মনুঃ কবিঃ৷৷ ১০৷৷

মন্ত্ৰার্থ— ১। হে জ্ঞানদেব! আপনি অর্চনাকারী আমাদের মঙ্গলের জন্য বলবত্তম (প্রভূততেজঃ সম্পন্ন) দ্যোতমান্ ধন (মোক্ষধন) আহরণ করুন (আমাদের প্রদান করুন);(আবার) অপ্রতিহতগমনশীল (অনিবারিত-রশ্মিযুক্ত, সর্বব্যাপী) হে দেব! আপনি স্তুতিযুক্ত (আমাদের অভীষ্টরূপ) ধনের চতুর্বর্গ ফললাভরূপ মোক্ষধনের) সাথে আমাদের সম্মিলিত করুন (অর্থাৎ, আমরা যাতে চতুর্বর্গফললাভ-রূপ মোক্ষধন প্রাপ্ত হই, আপনি তার বিধান করুন); (পরন্তু) আপনি আমাদের মোক্ষলাভের নিমিত্ত (মোক্ষপ্রাপ্তি-সাধক-সমর্থ) পন্থা প্রস্তুত করুন (অর্থাৎ যে পথে চললে আমরা মোক্ষলাভে সমর্থ হব, আপনি সেই পথ আমাদের প্রদর্শন করুন)। [এই মন্ত্রের দুটি গেয়গানের নাম–পান্থং]।

২। মরণশীল অকিঞ্চন মনুষ্যও যদি অবিচ্ছিন্নভাবে (একাগ্রচিত্তে) অনুক্ষণ অগ্নিদেবের উদ্দেশ্যে হবনীয় (আপন চিত্তের শুদ্ধসত্ত্ব ইত্যাদি দেবভাবসমূহকে) আহুতি প্রদান করে (অথবা, তার প্রীতির জন্য তার উদ্দেশ্যে সৎ-ভাব-সমূহ উৎসর্গ করে অর্থাৎ তাঁর কার্যে নিয়োগ করে); আবার আপন হৃদয়-প্রদেশে জ্ঞানাগ্নি প্রজ্বলিত করতে সমর্থ হয়; তাহলে সেই অকিঞ্চন ব্যক্তিও প্রভূত প্রজ্ঞাসম্পন্ন (ভগবানের সন্নিকর্ষ লাভে সমর্থ) হতে পারে; এবং দেব-উপভোগ্য পরম সুখের অধিকারী হয়। [ঋষি–ভরদ্বাজ। গেয়গানের নাম–যাম]।

৩। হে জ্ঞানরূপ দেব! দীপ্তিদানাদিগুণযুক্ত আপনার শুক্লবর্ণ (নির্মূল পবিত্রকারক ধূম অর্থাৎ আপনা হতে সঞ্জাত দেবভাবনিবহ) সাধকগণের হৃদয়ে বিস্তীর্ণ হয়ে অধিষ্ঠিত হয়। হে ত্রাণকারক জ্ঞানদেব! আপনি স্তোত্রদ্বারা স্তূয়মান হয়ে কৃপাপূর্বক (সাধকদের হৃদয়ে) দীপ্যমান এবং স্বপ্রকাশ হন। [প্রার্থনা আমাদের স্তুতিতে সন্তুষ্ট হয়ে সেই ভগবান আমাদের হৃদয় জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত করুন]।

৪। হে জ্ঞানদেব! আপনি নিশ্চয়ই মিত্রের ন্যায় (স্বপ্রকাশ দেবতার ন্যায়) বিদ্যমান আছেন; হবিলক্ষণযুক্ত যজমানের গৃহকে (সংসারমোহ-পরিশূন্য শুষ্ক কাষ্ঠের মতো জনকে) পরমার্থ-ধনের সাথে (পরমার্থসহযুত হয়ে) অধিকার করে অবস্থিতি করেন। (অর্থাৎ, নিষ্কাম জন আপনার অনুগ্রহে পরমার্থলাভে সমর্থ হয়ে থাকে)। হে সর্বদর্শী পরমৈশ্বর্যশালী জ্ঞানদেব! আপনি (আমাদের) অভিলষিত মোক্ষধন, আমাদের প্রদান করুন এবং আমাদের সৎকর্মের দ্বারা আমাদের পরিবর্ধিত করুন। অথবা হে জ্ঞানদেব! কামনাবিহীন হৃদয়কে আপনি নিশ্চয়ই সূর্যের ন্যায় জ্ঞানকিরণ দ্বারা প্রদীপ্ত করেন। হে সর্বদ্রষ্টা পরমৈশ্বর্যশালী দেব! আপনি আমাদের অভিলষিত ধন এবং মোক্ষলাভ-সামর্থ্য প্রদান করুন। [ভাব এই যে, কামনা-পরিশূন্য ভগবানে একচিত্ত জন আপনার (জ্ঞানদেবের) প্রভাবে জ্ঞানকিরণলাভে মোক্ষপথের অভিমুখী হয়ে থাকে। হে দেব। আপনার অনুগ্রহে এই অকিঞ্চন আমরাও যেন মোক্ষলাভে সমর্থ হই। [এর গেয়গানের নাম বৃহৎ]।

৫।  সকল অর্চনাকারী (সাধকগণ) নিত্য শাশ্বত যে অগ্নিতে হবনীয় (দেবভাব-সমূহ) প্রদান করেন; বহুজনপ্রিয় (সর্বস্বামী), পরমার্থ-প্রদানকারী, সর্বাভীষ্টপূরক, সেই অগ্নিদেব (জ্ঞানদেবতা) জ্ঞানের উন্মেষকালে (সাধনার প্রারম্ভে) স্তুত হন; [অর্থাৎ প্রথমেই তাকে হৃদয়ে ধারণ করবে। প্রথমেই জ্ঞান সঞ্চয়ে প্রবৃত্ত হও। তাহলে, নিশ্চয়ই ধর্ম-অর্থ-কাম-মোক্ষরূপ চতুর্বর্গ ধন লাভ করা যাবে]। [গেয়গানের নাম–বৃহৎ; গেয়গানের ঋষি—কৌমুদ]।

৬। অগ্নিদেবের প্রীতির নিমিত্ত (বিশুদ্ধ জ্ঞানলাভের জন্য) বাহকতম (স্তোতৃগণকে ভগবৎসমীপে নয়নসমর্থ) যে সৎকর্ম, আমরা যেন তার (সেই সৎকর্মের) অনুষ্ঠান করি। হে পরমধনপ্রকাশক (জ্ঞানদেব)! (অর্চনাকারী আমাদের) শ্রেষ্ঠধন প্রদান করুন; যেন আপনার প্রসাদে সেই পরমধন এবং আমাদের হৃদয়-নিহিত সৎ-ভাব-নিবহ আমাদের ভগবৎসমীপে পৌঁছিয়ে দেয়। [গানের ঋষি অগ্নি। গানের নাম–যদ্বাহিষ্ঠীয় ও যন্মহিষ্ঠীয়]।

৭। হে আমার চিত্তবৃত্তিনিবহ! তোমরা যদি ভগবানকে পাবার কামনা কর, তাহলে তোমাদের এবং নিখিল জনগণের অতিপ্রিয়, অতিথির ন্যায় পূজ্য (মিত্রের মতো সহজপ্রাপ্য), অগ্নিদেবকে (জ্ঞানাগ্নিকে) ভক্তিসহযুত স্তোত্র দ্বারা আহ্বান (হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত) কর। তোমাদের শান্তি কামনায় সকল সুখের নিদান, শ্রেষ্ঠনিবাসস্থল, অগ্নিদেবকে (স্বপ্রকাশ জ্ঞানদেবতাকে) স্তুতি দ্বারা (ভক্তিসহযুত অর্চনাকারী) আমরা স্তব করি (হৃদয়ে উদ্দীপিত করি)। [ভগবানের আশ্রয় নিলে সকল সন্তাপ–সকল জ্বালা নিবারিত হয়। সে আশ্রয়ে উপনীত হতে পারলে পরমানন্দ লাভ করা যায়]। [এই সাম-গানের ঋষি–অগ্নি; এর গেয়গানের নাম–বিশো, বিশীয়ং বা ঐড়ং]।

৮। মনুষ্যগণ (অর্চনাকারী সাধকগণ) মিত্রভূত (মিত্রের ন্যায় সুখপ্রাপ্য অথবা ভক্তানুরক্ত) যে অগ্নিদেবকে (জ্ঞানদেবতাকে) প্রকৃষ্ট-স্তুতির নিমিত্ত (সম্যক্ আত্ম-উৎকর্ষসাধন জন্য) পুরোভাগে ধারণ করেন (হৃদয়ে প্রতিষ্ঠাপিত করেন); আবার, দীপ্তিমান যে অগ্নির (জ্ঞানাগ্নির) উদ্দেশে (তারা) হবিস্বরূপ অন্ন (হৃদয়ে নিহিত সৎ-ভাব-নিবহ) প্রদান করে থাকেন (উৎসর্গ করেন); হে মন! তুমি সেই দ্যোতমান (দেবভাবসমূহের জনয়িতা) অগ্নিদেবের (জ্ঞানদেবতার) প্রীতির নিমিত্ত (হৃদয়ে জ্ঞানালোক বিস্তারের জন্য) শুদ্ধসত্ত্বাদি (হৃদয়-নিহিত ভক্তিসুধা) তাঁকে প্রদান কর; (অর্থাৎ, ভক্তিসহকারে তার অর্চনা কর)। [সাধক-গায়ক তার উদ্দাম মনকে সংযত করতে চাইছেন। যদি পরমার্থ লাভে অভিলাষী হও, তাহলে ভক্তিসহকারে সেই নেতৃস্থানীয়। নিখিল জগতের আরাধ্য জ্ঞানদেবতার ভজনা কর। তিনিই সকলকে ভগবানের নিকট উপস্থাপিত করেন। [গেয়গানের নাম–কণীনিকং; গানের ঋষি-শার্গপ্রজাপতি]।

৯। যে জ্ঞানদেবতা (অগ্নিদেব) মোক্ষমার্গগামী (ঋক্ষপুত্র) শ্রুতিপারগ জ্ঞানিগণের হৃদয়কে (শ্রুতবন্ নামক রাজার নিমিত্ত) প্রকৃষ্ট জ্ঞানকিরণে উদ্ভাসিত করে (বিপুলজ্বালাবিশিষ্ট হয়ে) সম্যকরূপে প্রদীপ্ত হন (প্রবৃদ্ধ হয়েছিলেন); পাপসমূহের অতিশয়রূপে নিবারক (রিপুশত্রুগণের হন্তা) মুখ্যস্থানীয় (অথবা শ্রেষ্ঠ, দেবগণের অগ্রগামী) নিখিল জগতের হিতকারী (অথবা চিরনবীন) সেই অগ্নিদেবকে, আমরা (যেন) প্রাপ্ত হই (অর্থাৎ, আমরা হৃদয়ে ধারণ করি)। [জ্ঞানদেবতার মহিমায় সাধকগণ যেমন মোক্ষ লাভে সমর্থ, আমরাও যেন তেমনই জ্ঞানের অধিকারী হয়ে, ভগবানকে প্রাপ্ত হই।

১০। যে জ্ঞানদেবতা আত্ম-উৎকর্ষ-সম্পন্ন জনের পালয়িতা বা রক্ষক, যিনি ভক্তির বা সত্যের জনয়িতা (অথবা, যিনি নিখিল ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন), যিনি সর্বজ্ঞ, যিনি, মেধাবী কর্মকুশল, এবং যিনি নিখিল দেবভাবসহযুত হয়ে বিদ্যমান আছেন; সেই জ্ঞানদেবতা উৎকৃষ্ট সৎকর্মনিবহ দ্বারা (সাধনা ইত্যাদির প্রভাবে) হৃদয়ে প্রাদুর্ভূত হন। [ভগবান্ জ্ঞানদেব সকলের রক্ষক ও পালক। সৎকর্মের সাথে তিনি সাধকদের অধিগত হন। প্রার্থনা–সেই জ্ঞানদেবতা আমাদের অভীষ্টফল প্রদান করুন]। [গানের নাম ইন্দ্রিয়ং; গেয়গানের ঋষি—স্বযোনীন্দ্রঃ অথবা কশ্যপ।]

.

দশমী দশতি

ছন্দ আর্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।

দেবতা : ১ বিশ্বেদেবগণ, ২ অঙ্গিরা, ৩-৬ অগ্নি৷৷
ছন্দ অনুষ্টুপ৷৷
ঋষি : ১ অগ্নিস্তাপস, ২।৩ বামদেব কশ্যপ বা অসিত দেবল, ৪ সোমাহুতি ভার্গব বা ভর্গাহুতি সোম,
৫ পায়ু ভারদ্বাজ, ৬ প্রস্কণ্ব কাণ্ব

সোমং রাজানং বরুণমগ্নিমন্বারভামহে। আদিত্যং বিষ্ণুং সূর্যং ব্রহ্মাণং চ বৃহস্পতি৷৷ ১৷৷ ইত এত উদারুহন্দিবঃ পৃষ্ঠান্যারুহ। প্র ভূর্জয়ো যথা পথে দ্যামাঙ্গিরসো যয়ুঃ ৷৷২৷৷ রায়ে আগ্নে মহে ত্বা দানায় সমিধীমহি। ঈড়িম্বা হি মহে বৃষ দ্যাবা হোত্রায় পৃথিবী৷৷ ৩৷৷ দধন্ধে বা যদীমনু বোদ ব্রহ্মেতি বেরু তৎ। পরি বিশ্বানি কাব্যা নেমিশ্চক্রমিবাভূবৎ৷৷ ৪৷৷ প্রত্যগ্নে হর হরঃ শৃণাহি বিশ্বতস্পরি। যাতুনস্য রক্ষেস্যে বলং নজবীর্য৷ ৫৷৷ তমগ্নে বরিহ রুদ্র আদিতা উত। যজা স্বধ্বরং জনং মনুজাতং ঘৃতপুষ৷৷ ৬ ৷৷

মন্ত্ৰাৰ্থ—  ১। শুদ্ধসত্ত্বোপেত (সত্ত্বভাবের আধার) স্নেহকরুণাময়, জ্ঞানস্বরূপ, অনন্তসম্বন্ধীয় (অনন্তরূপ) সর্বব্যাপী (সর্বধারক), স্বপ্রকাশ, সত্ত্বপ্রবর্ধক এবং অশেষ-প্রজ্ঞাসম্পন্ন, হৃদয়ে রাজমান পরমেশ্বরকে আমরা আহ্বান করি–আশ্রয় করি। [ভাব এই যে, আমাদের আত্মরক্ষার জন্য ভগবানের আশ্রয় গ্রহণ কর্তব্য]। অথবা–হৃদয়-রাজ্যের রাজা (হৃদয়ে দীপ্যমান) মঙ্গলময় শিব রূপকে (ভগবানের সোমমূর্তি) আশ্রয় করি (শরণ নিচ্ছি); হৃদয়-রাজ্যের রাজা (হৃদয়ে দীপ্যমান) অভীষ্টবর্ষক স্নেহকারুণ্য-রূপকে (ভগবানের ভবমূর্তির) আশ্রয় করি (শরণ নিচ্ছি); হৃদয়-রাজ্যের রাজা (হৃদয়ে দীপ্যমান) জ্ঞানরূপকে (ভগবানের রুদ্রমূর্তির) আশ্রয় করি (শরণ নিচ্ছি); হৃদয় রাজ্যের রাজা (হৃদয়ে দীপ্যমান) অনন্তস্বরূপ সর্বত্রগামী বায়ুরূপকে (ভগবানের উগ্রমূর্তির) আশ্রয় করি (শরণ নিচ্ছি);হৃদয় রাজ্যের রাজা (হৃদয়ে দীপ্যমান) সর্বব্যাপক বিষ্ণুরূপকে (ভগবানের ভীম রূপা আকাশ-মূর্তির) আশ্রয় করি (শরণ নিচ্ছি); হৃদয়-রাজ্যের রাজা (হৃদয়ে দীপ্যমান) স্বপ্রকাশ সূর্য-রূপকে (ভগবানের ঈশান-রূপা সূর্যমূর্তির) আশ্রয় করি (শরণ নিচ্ছি); হৃদয়-রাজ্যের রাজা  (হৃদয়ে দীপ্যমান) সত্ত্বপ্রবর্ধক ব্ৰহ্মা-রূপকে (ভগবানের পশুপতিরূপ যজমানমূর্তির) আশ্রয় করি (শরণ নিচ্ছি); হৃদয়-রাজ্যের রাজা (হৃদয়ে রাজমান) প্রজ্ঞানস্বরূপ বৃহস্পতি-রূপকে (ভগবানের সর্বস্বরূপা ক্ষিতিমূর্তির) আশ্রয় করি (শরণ নিচ্ছি)। [এখানে ভগবানের অষ্টমূর্তির উপাসনা রয়েছে। ভগবানের সকল বিভূতি আমাদের রক্ষা করুন–এই প্রার্থনা]।

২। মনুষ্যগণ যেমন পথ দিয়ে গ্রাম হতে গ্রামান্তরে গমন করে (অথবা সৎকর্ম-রূপ মার্গ যেমন মুক্তি-অভিলাষী জনগণকে মোক্ষমূল প্রদর্শন করে), শুদ্ধসত্ত্ব-সমন্বিত আত্মজ্ঞানসম্পন্ন সাধকগণ– তেমনই সৎকর্ম-রূপ উৎকৃষ্ট মার্গে ইহলোক হতে ঊর্ধ্বগতি লাভ করে স্বর্গলোক প্রাপ্ত হন এবং পরমপদ প্রাপ্ত হন। [মন্ত্রটি আত্ম-উদ্বোধনমূলক। ভাব এই যে, আত্মজ্ঞানসম্পন্ন সাধুগণ কর্মের প্রভাবে মোক্ষপদ প্রাপ্ত হন; অতএব মোক্ষপ্রাপ্তির জন্য আমরাও আত্ম-উৎকর্ষ-সাধনে প্রযত্নপর হব]। [মন্ত্রের ঋষি–বামদেব। গেয়গানের নাম–যাম, অঙ্গিরস বা আরূঢ়বৎ]।

৩। হে জ্ঞানদেব! শ্রেষ্ঠধন দানের নিমিত্ত (অর্থাৎ, অর্চনাকারী আমাদের পরমার্থ-ধন দান করবেন বলে) আমরা আপনাকে সম্যক্‌রূপে প্রদীপ্ত করছি–হৃদয়ে ধারণ করছি; হে অভীষ্টপ্রদানকারী জ্ঞানদেব! আমাদের হোতৃকর্মের জন্য অর্থাৎ আমাদের হৃদয়ে দেবভাব উপজিত করবার জন্য, দ্যুলোককে ও ভূলোককে অর্থাৎ দ্যুলোকের ও ভূলোকের সকল দেবভাবসমূহকে স্তব করুন অর্থাৎ তাদের আনয়ন করে আমাদের হৃদয়ে স্থাপন করুন। [জ্ঞানদেবের মহিমার পার নেই; জ্ঞানদেবতা। সকল দেবভাবের ধারক ও পোষক; সেই জ্ঞানদেবতার অনুগ্রহে অর্চনাকারী আমরা যেন দেবভব সমন্বিত হই]। [গেয়গানের নাম–অসিত]।

৪। সেই জ্ঞানদেবতা আমাদের অনুষ্ঠিত যাগ ইত্যাদি সৎকর্মকে লক্ষ্য করে, আমাদের শুদ্ধসত্ত্বকে ধারণ করেন–রক্ষা করেন এবং তাকে পোষণ করেন; অথবা, সৎ-ভাব-সম্পন্ন জন যে স্তোত্রমন্ত্র উচ্চারণ করেন, তাকেও জ্ঞানদেবতা রক্ষা করেন-পোষণ করেন; নেমিঃ যেমন চক্ৰধারাকে বেষ্টন করে অবস্থান করে, জ্ঞানদেবতা তেমনই নিখিল শুদ্ধসত্ত্বকে, অর্থাৎ সৎ-ভাবসম্পন্ন জনগণকে ব্যেপে আছেন। [জ্ঞানের প্রভাবে, হৃদয়ে সৎ-ভাব সঞ্চারিত হয়; জ্ঞানের সাথে সত্ত্বভাবের চিরসম্বন্ধ। অতএব, আমিও জ্ঞানসঞ্চয়ে প্রবৃত্ত হব]। [এর গেয়গানের নাম—ত্বাষ্ট্রী]।

৫। হে অগ্নি (জ্ঞানদেব)! আপনি আপন তেজঃ প্রভাবে (আমাদের) শত্রুর (অজ্ঞানরূপ শত্রুর) হরণশীল (সৎ-বৃত্তি-নাশক) সর্বতগত (অন্তরে বাহিরে ব্যাপ্ত) সহচরদের (কাম-ক্রোধ ইত্যাদিকে) বিনাশ করুন। আবার, হে দেব, আপনি (আমাদের) বিবিধ শত্রুর বীর্য (সৎ-ভাবনাশ সামর্থ্য) নিঃশেষে ভেঙ্গে দিন (বিনষ্ট করুন)। [জ্ঞানদেবের শত্রুনাশসামর্থ্য সুবিদিত; সেই সামর্থ্যের দ্বারা, সেই দেব আমাদের অন্তঃশত্রু (কাম-ক্রোধ ইত্যাদি) এবং বহিঃশত্রু (রাক্ষস, নাস্তিক ইত্যাদি) প্রভৃতির বিনাশ-সাধন করুন, এবং আমাদের সৎ-ভাব-সমন্বিত করুন]। [এর ঋষি–পায়ুঃ। এর গেয়গানের নাম–রাক্ষোঘ্ন; গেয়গানের ঋষি–অগস্ত্য]।

৬। হে জ্ঞানদেব! আপনি আমাদের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে, বসুদেবতাগণকে, রুদ্রদেবতাগণকে, এবং আদিত্যদেবতাগণকে (সকল দেবতাকে) সাধনা করবার প্রবৃত্তি আমাদের প্রদান করুন; আরও পবিত্রকর্মসম্বন্ধী, জ্ঞানসম্বন্ধবিশিষ্ট, অমৃতপ্রদ দেবভাবকে আপনি আমাদের হৃদয়ে প্রতিষ্ঠিত করুন। [জ্ঞানের সাহায্যে আমরা সর্বদেবভাবসাধন সমর্থ হই। অতএব, সেই জ্ঞানদেব আমাদের সেই সাধনসামর্থ্য প্রদান করুন]। [ঋগ্বেদ; এই মন্ত্রের গেয়গানের নাম–মানবং]।

.

একাদশী দশতি

 ছন্দ আর্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।

দেবতাঃ অগ্নি; ৫ পবমান সোম; ৬ আদিতি৷৷
ছন্দ উষ্ণিক৷৷
ঋষিঃ ১ দীর্ঘতমা ঔচথা, ২।৪ গাথি বিশ্বামিত্র, ৩ গোতম রাহুগণ, ৫ ত্ৰিত আপ্ত্য, ৬ ইরিস্বিঠি কাণ্ব
, ৭।৮।১০ বিশ্বমনা বৈয়শ্ব, ৯ ঋজিশ্বা ভারদ্বাজ।

পুরুমন্ত্রঃত্বা দাশিবাং বোচেহরিরগ্নে তব স্বিদা। তোদস্যেব শরণ আ মহস্য৷ ১। প্র হোত্রে পূর্বং বচোংগুয়ে ভরতা বৃহৎ। বিপাং জ্যোতীংষি বিভ্রতে ন বেধসে৷৷ ২৷ অগ্নে বাজস্য গোমত ঈশানঃ সহসো যহো। অস্মে দেহি জাতবেদো মহি শ্ৰবঃ ৷৷ ৩৷৷ অগ্নে যজিষ্ঠো অধ্বরে দেবান্ দেবয়তে যজ। হোতা মন্দ্রো বি রাজস্যতি যিধঃ৷৷ ৪৷ জজ্ঞানঃ সপ্ত মাতৃভির্মেধামাশাসত শ্রিয়ে। অয়ং ধ্ৰুবো রয়ীণাং চিকেতদা৷৷ ৫৷৷ উত স্যা নো দিবা মাতরদিতিরূত্যাগমৎ। সা শন্তাতা ময়স্করদপ সিধঃ ৷৷ ৬ ৷৷ ঈডিম্বা হি প্ৰতীব্যাংত যজস্ব জাতবেদসম্। চরিষ্ণু ধূমমগৃভীতশোচিষ৷৷ ৭৷৷ ন: তস্য মায়য়া চ ন রিপুরীশীত মর্তঃ। যো অগ্নয়ে দদাশ হব্যদাতয়ে। ৮। অপ ত্যং বৃজিনং রিপুং স্তেনমগ্নে দুরাধ্য। দবিণ্ঠমস্য সৎপতে কৃধী সুগ৷৷ ৯৷৷ ষ্ট্যগ্নে নবস্য মে স্তোমস্য বীর বিশপতে। নি মায়িনস্তপসা রক্ষস্যে দহ। ১০।

 মন্ত্ৰাৰ্থ—  ১। হে জ্ঞানদেব! বহুদানশীল আপনাকে আমি বলছি (স্তুতি করছি); অথবা, হবির্দানকারী আমি আপনাকে বহুরূপে স্তব করছি। আমি আপনারই সেবক। প্রভুর গৃহে আশ্রিত ব্যক্তির ন্যায় আমি সর্বতোভাবে আপনার শরণাপন্ন হচ্ছি। [মোক্ষলাভের জন্য সাধক-গায়ক কায়মনোবাক্যে অশেষ দানশীল জ্ঞানদেবতার শরণ নিচ্ছেন। সেই দেবতা যেন তাকে উদ্ধার করেন–পুরাগতি মুক্তিলাভই পরমা প্রার্থনা]। [এই মন্ত্রের পাঁচটি গেয়গানের নাম তৌদ বা দৈর্ঘ্যতামস]।

২। হে মন! মেধাবিগণের (সৎকর্মশীলগণের) সৎকর্মসঞ্জাত তেজের (সৎকর্মসম্পাদন সামর্থ্যের) উৎপাদনকারী জগৎ-বিধাতা ভগবানের (অথবা, জগৎ-বিধাতা পরমেশ্বর যেমন আদিত্য ইত্যাদি জ্যোতিষ্ককে সমুদিত করেন, তেমন সৎকর্মশীলদের হৃদয়ে সৎকর্মসঞ্জাত জ্যোতির বা সৎকর্মের সাধন-সামর্থ্যের জনয়িতা জ্ঞানদেবের) উদ্দেশ্যে তার প্রীতির জন্য মহৎ পুরাতন শ্রেষ্ঠ স্তোত্ররূপ বাক্য (কর্ম) সম্পাদন কর–সাধন কর। [মন্ত্রটি আত্ম-উদ্বোধক মনঃসম্বোধনমূলক। ভাব এই যে, সৎকর্মের প্রভাবে আমরা হৃদয়ে জ্ঞানসঞ্চয়ে যেন প্রবৃত্ত হই; এবং জ্ঞানের প্রভাবে যেন ভগবানকে প্রাপ্ত হই, এমন সঙ্কল্পবদ্ধ হচ্ছি। [গেয়গানের নাম–প্রহিত। গেয়গানের ঋষি–অশ্ব]।

৩। সকল শক্তির আশ্রয় বা উৎপাদক হে জ্ঞানদেব! আপনি দিব্যজ্ঞানের বা দেবভাবসমূহের অর্থাৎ সৎকর্মের স্বামী আধার হন। অতএব, সকলের ধারক সর্বদানসমর্থ সর্বতত্ত্বজ্ঞ হে জ্ঞানদেব! আমাদের অশেষ কল্যাণ প্রদান করুন। [জ্ঞানদেবতা সর্বদান সমর্থ; তাঁর অনুগ্রহে মানুষেরা শ্রেয়ঃসকল প্রাপ্ত হয়। আকাঙ্ক্ষা–আমরা তাঁর অনুসারী হই এবং তার অনুগ্রহের শ্রেয়ঃসকল লাভ করি]। [গেয়গানের ঋষি–প্রজাপতি। গেয়গানের নাম- শ্রুধিরে, শ্রুদ্ধা, শ্ৰদ্ধ, সত্য প্রভৃতি।

৪। হে অগ্নিদেব (জ্ঞানদেব)! আপনি যাজকশ্রেষ্ঠ (দেবযজনপারদর্শী); অতএব, এই হিংসারহিত কর্মে (আমার অনুষ্ঠিত এই সৎকর্মে) দেব-কামনাযুক্ত অর্থাৎ দেবভাব প্রাপ্তির অভিলাষী আমার জন্য দেবগণকে যজনা করুন, আমাকে দেবভাবসমূহ প্রাপ্ত করুন। দেবগণের আহ্বানকারী, সাধকগণের পরমানন্দ-প্রদানকারী আপনি, আমাদের শত্রুগণকে নিঃশেষে বিনাশ করে বিশেষরূপে শোভা পান– হৃদয়ে দীপ্যমান হন। [প্রার্থনার ভাব এই যে, –সেই দেবতা সর্বদেবময়; আমাদের অভীষ্ট পূরণের জন্য আমাদের রিপুগণকে বিমূর্দিত করে আমাদের সর্বতোভাবে দেবভাব-সমন্বিত করুন]। [এর গেয়গানের ঋষি–প্রজাপতি। আবার গেয়গানের নাম–সদঃ ও হবির্ধান]।

৫। ক্ষয়রহিত জ্ঞানদেব চতুর্বর্গ-রূপ ধন-সমূহের প্রাপ্তির মূলতত্ত্ব অবগত আছেন–বিজ্ঞাপিত করেন; সেই দেবতা সপ্তলোক-পালয়িত্রী জগৎ-জননীর ন্যায় সকল রকম রক্ষার সাথে প্রাদুর্ভূত হন; তিনি আমাদের মঙ্গলের উদ্দেশে হৃদয়ে সৎকর্ম-সাধন-প্রবৃত্তিকে উন্মেষ করেন। [চতুর্বর্গফলদাতা জ্ঞানদেব আমাদের সৎকর্মসাধন প্রবৃত্তিকে উদ্বুদ্ধ করেন। অতএব জ্ঞানের অনুসরণ করাই কর্তব্য]। অথবা–ক্ষয়রহিত জ্ঞানদেব চতুর্বর্গরূপ পরমধনের প্রদাতা হন; অশেষ প্রজ্ঞাসম্পন্ন সেই দেবতা, সকল রকম রক্ষার সাথে প্রাদুর্ভূত হয়ে, যজ্ঞে ধারণকর্তা সৎকর্মবিধায়ক সেই ভগবানকে সেবার জন্য আমাদের আদেশ করছেন। [সেই জ্ঞানদেবতা সৎকর্মের বিধাতা বা রক্ষক। অতএব, সৎকর্ম সাধনের উদ্দেশ্যে আমরা জ্ঞানধন লাভ করবার জন্য সঙ্কল্পবদ্ধ হচ্ছি]। ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণে (গণপতিখণ্ড, কার্তিকেয় সংবাদ, ১৫ শ অঃ) ষোড়শ মাতার উল্লেখ আছে। –স্তনদাত্রী গর্ভদাত্রী ভক্ষদাত্রী গুরুলিয়া। অভীষ্ট–দেবপত্নী চ পিতুঃ পত্নী চ কন্যকাঃ সগর্ভজা যা ভগিনী পুত্ৰপত্নী প্রিয়াপ্রসূঃ। মাতুর্মাতা পিতৃমাতা সোদরস্য প্রিয়া তথা৷৷ মাতুঃ পিতুশ্চ ভগিনী মাতুলানী তথৈবচ। জনানাং বেদবিহিতা মাতরঃ ষোড়শ স্মৃতাঃ ॥ শাস্ত্রে সাতরকম মাতার উল্লেখ–পৃথ্বী, ধাত্রী, গাভী, রাজপত্নী, গুরুপত্নী, বিমাতা ও গর্ভধারিণী। আলোচ্য মন্ত্রার্থে, সপ্তমাতৃভিঃ পদের অর্থ করা হয়েছে–  এ সপ্তলোকপালয়িত্রীবৎ সর্বাভিঃ রক্ষভিঃ সহ। সপ্তমাতা যেভাবে সর্বদিকে সর্বভাবে সন্তানকে রক্ষা করে থাকেন, জ্ঞানদেব, তেমনই ইহলোকে এবং পরলোকে সর্বতোভাবে আত্মজ্ঞান সম্পন্ন জনগণকে ও রক্ষা করে থাকেন। সপ্তমাতৃভিঃ পদে আর একভাব উপলব্ধ হয়। এই বিশ্ব সপ্তলোকে বিভক্ত। সেই সপ্তলোকে যিনি পালন ও রক্ষা করেন, তিনি সপ্তম। এখানে জ্ঞানদেবতাকে বলা হচ্ছে– আপনি স্নেহধারায় সদাকাল আমাদের রক্ষা করুন। মন্ত্রের দুরকম অন্বয়ে একই ভাব প্রকাশিত হয়েছে। [মূল ঋগ্বেদে একটু স্বতন্ত্র পাঠ দেখা যায়। এর গেয়গানের নাম–আতিথ্য। গেয়গানের ঋষি– তৃষ্টা]।

৬। অপিচ, স্তবনীয় (সর্বতত্ত্বজ্ঞ) সেই অনন্তস্বরূপ দেব, সকল রকম রক্ষার সাথে আমাদের কর্মসম্পাদন-কালে (আমাদের অনুষ্ঠিত সৎকর্মে) আমাদের প্রাপ্ত হোন–আমাদের মধ্যে আবির্ভূত হোন; তিনি আমাদের শান্তিদায়ক পরমসুখের বিধান করুন; এবং আমাদের শত্রুসমূহকে অপসারিত করুন। [প্রার্থনার ভাব এই যে, –সেই দেবতা সৎকর্মের মধ্যে প্রাদুর্ভূত হন। আমাদের অনুষ্ঠিত সকর্মে আবির্ভূত হয়ে আমাদের শত্রুগণকে নাশ করুন এবং আমাদের পরমসুখ দান করুন]। [এর গেয়গানের নাম–আদিত্য এবং গেয়গানের ঋষি—অদিতি]।

৭। হে মন! শত্ৰুত্ৰাসকারী জ্ঞানদেবতাকে সংশয়বিরহিত চিত্তে অর্চনা কর–অনুসরণ কর; সর্বলোকে অধিষ্ঠিত, সর্বশবিজয়ী, সর্বভূত-তত্ত্বজ্ঞ, জ্ঞানদেবতার পূজায় প্রবৃত্ত হও–শুদ্ধসত্ত্বাদির দ্বারা তাঁর প্রবৃত্তিসাধন কর। [মন্ত্রটি আত্ম-উদ্বোধক। উদ্বোধনার ভাব–সাধক-গায়কের মন যেন সৎকর্মের দ্বারা সেই দেবতার পরিতৃপ্তি সাধন করে–জ্ঞানার্জনে প্রবৃত্ত হয়]। [এর গেয়গানের নাম– বার্ক্কজম্ভ]।

৮। হে মন! যে জন শুদ্ধসত্ত্বগ্রহণকারী জ্ঞানদেবতার উদ্দেশে হৃৎ-নিহিত সৎ-ভাব-নিবহ প্রদান করে, শত্রু ছলনা দ্বারা তার ঈশ্বর বা প্রভু হতে পারে না, অর্থাৎ তাকে বশীভূত করতে সমর্থ হয় না। [ভাব এই যে, অকিঞ্চনও এক মনে দেবতাকে আরাধনা করে জ্ঞানের অধিকারী হন এবং শত্রুকে নাশ করতে পারেন। অতএব, আমিও যদি সৎ-ভাব-নিবহের দ্বারা সেই দেবতাকে সম্ভজনা করি, তার দ্বারা শত্রনাশে সমর্থ হতে পারি]। [এই সাম-মন্ত্রের গেয়গানের নাম–রাক্ষোঘ্ন। এর গানের ঋষি-অগস্ত্য]।

৯। হে জ্ঞানদেব! আপনি এই লোকের সেই প্রসিদ্ধ দুরভিসন্ধিপরায়ণ পাপাচারী দুঃখসাধক হিংসক শত্রুকে (অজ্ঞানতাকে) দূরে নিক্ষেপ করুন। হে সৎ-জন-পালক দেব! আপনি অনায়াসাগম্য সুখ বিধান করুন। [প্রার্থনার ভাব এই যে, –সেই দেবতা কৃপাপ্রকাশে তারই বিধান করুন, যাতে আমরা সৎ মার্গগামী হতে পারি]। [এর গেয়গানের নাম–সোমক্রতব বা বৃহদাগ্নীয়]।

১০। শত্রুবিনাশক নিখিলপ্রজাপালক হে জ্ঞানদেব! আমার উচ্চারিত চিরনূতন স্তোত্র (বেদমন্ত্র) শ্রবণে প্রীত হয়ে, আপনার সন্তাপজনক তেজের দ্বারা (অথবা আমাদের সৎকর্মের দ্বারা) দুরভিসন্ধিপূর্ণ সৎকর্মে-বিঘ্নকারী শত্রুগণকে নিয়ত ভস্মীভূত করুন। [সেই জ্ঞানদেবতা আমাদের সৎ-ভাব-সহযুত করুন, এবং সকল শত্রুকে নাশ করে আমাদের পরমার্থ প্রদান করুন]। অথবা আমার হৃদয়ে নবসঞ্জাত (সুষ্ঠু-প্রাদুর্ভূত) সত্ত্বভাবের প্রভাবে (জ্ঞানকিরণ-প্রভাবে) প্রবৃত্ত বিশ্বপালক হে জ্ঞানদেব! সন্তাপজনক তেজের দ্বারা, দুরভিসন্ধিপরায়ণ কর্মবিঘাতক শত্রুগণকে শীঘ্র ভস্মীভূত করুন। [সেই দেবতা আমাদের কর্মের দ্বারা প্রবৃদ্ধ হয়ে আমাদের সৎকর্মবিনাশক শত্রুগণকে অতি সত্বর নাশ করুন]। [এর গেয়গানের নাম–রাক্ষোঘ্ন। গেয়গানের ঋষি–অগস্ত্য]।

.

দ্বাদশী দশতি

ছন্দ আর্চিক। কৌথুমী শাখা। আগ্নেয় পর্ব। প্রথম অধ্যায়।

দেবতা অগ্নি৷৷
 ছন্দ ১-৭
ককূপ, ৮ উষ্ণিক।
ঋষি
: ১।৪ প্রয়োগ ভার্গব অথবা সৌভরি কাণ্ব, ২।৩।৫।৬।৭ সৌভরি কাণ্ব, ৮ বিশ্বমনা বৈয়শ্ব।

প্র মংহিষ্ঠায় গায়ত ঋতাত্রে বৃহতে শুক্রশোচিষে। উপস্তুসো অগ্নয়ে৷৷ ১. প্র সো অগ্নে তবোতিভিঃ সুবীরাভিস্তরতি বাজকর্মভিঃ। যস্য ত্বং সখ্যমাবিথ৷৷ ২৷৷

তং গৃধয়া স্বর্ণরং দেবাশো দেবমরতিং দধন্বিরে। দেবত্ৰা হব্যমুহিষে৷৷ ৩৷৷ মা নো হৃণীথা অতিথিং বসুরগ্নিঃ পুরুপ্রশস্ত এষঃ। যঃ সুহোভা স্বধ্বরঃ ॥৪॥ ভদ্রো নো অগ্নিবাহুতে ভদ্রা রাতিঃ সুভগ ভদ্ৰো অধ্বরঃ। ভদ্রা উত প্রশস্তয়ঃ৷৷ ৫৷৷ যজিষ্ঠং ত্বা ববৃমহে দেবং দেবত্রা হোতারমমর্ত। অস্য যজ্ঞস্য সুক্ৰতু৷৷ ৬৷৷ তদগ্নে দ্যুম্নমা ভর যৎসাসাহা সদনে কঞ্চিত্রিণম্। মনুং জনস্য দূঢ্য৷৷ ৭৷৷ যদ্বা উ বিল্পতিঃ শিতঃ সুপ্রীতো মনুষো বিশে। বিশ্বেদগ্নিঃ প্রতি রক্ষাংসি সেধতি। ৮।

মন্ত্ৰাৰ্থ– ১। হে অর্চনাকারী আমার চিত্তবৃত্তিনিবহ! তোমরা হৃদয়াধিষ্ঠিত দাতৃশ্রেষ্ঠ। সৎস্বরূপ, ষড়ৈশ্বর্যশালী, দীপ্ততেজঃসম্পন্ন জ্ঞানদেবতার উদ্দেশে প্রকৃষ্টরূপে স্তব কর–তার অনুসারী হও। [মন্ত্রটি আত্ম-উদ্বোধনমূলক। এখানে সাধক-গায়ক জ্ঞানার্জনে নিজের চিত্তবৃত্তিগুলিকে উদ্বুদ্ধ করছেন]। [এর গেয়গানের ঋষি–ইন্দ্র এবং বশিষ্ঠ। চারটি গেয়গানের নাম–প্রমংহিষ্ঠীয় বা প্রমংহিষ্ঠায় এবং আসীত]।

২। হে জ্ঞানদেব! আপনি যে জনের মিত্রত্ব প্রাপ্ত হন (অর্থাৎ যে জন আপনার অনুগ্রহ লাভ করে), সেই জনই আপনার শোভনবীর্যোপেত সৎ-ভাব-জনন-সমর্থ রক্ষার দ্বারা প্রবর্তিত হয়। [জ্ঞানদেব সর্বক্ষণক্ষম; অতএব, আমরা তার অনুগ্রহের দ্বারা সংসার-সমুদ্রের পার কামনা করছি)। [ঋগ্বেদ; এর গেয়গানের নাম–রাজভৃদ, বাজাতৃদ বা বাজাভৰ্ম্মীয়; গেয়গানের ঋষি–ভরদ্বাজ]।

৩। হে মন! সকলের নেতা সেই জ্ঞান-দেবতাকে তুমি স্তুতি কর; [উদ্বোধনার ভাব এই যে, সাধক-গায়কের মন যেন জ্ঞানের অনুসারী হয়]; দেবভাব-সমন্বিত ভগবৎপরায়ণ জনগণ, দীপ্তিদান ইত্যাদি গুণযুক্ত পরমৈশ্বর্যশালী, সকলের প্রভু নির্বিকার ভগবানকে প্রাপ্ত হন; হে মন! তুমি তাদের : অনুসারী হয়ে তোমার পূজাকে (বিহিত কর্মকে) সকল দেবগণকে প্রাপ্ত করাও। [মন্ত্রটি আত্ম উদ্বোধক। সাধক-গায়কের মন ও কর্ম যেন দেবত্বের অনুসারী হয়–এটাই সঙ্কল্প]। [এই মন্ত্রের তিনটি গেয়গানের নাম–সৌভর]।

৪। যে জ্ঞানদেব দেবগণের সুষ্ঠু আহ্বান-কর্তা, যিনি শোভনযজ্ঞস্বরূপ, হৃদয়ে রাজমান সেই জ্ঞানদেব বহুজনের পূজনীয় এবং সকলের নিবাসহেতুভূত হন। হে মন! অতিথির ন্যায় প্রিয় সেই দেবতাকে (আমাদের মানস-যজ্ঞ হতে) হরণ করো না; অর্থাৎ আমাদের তাকে প্রাপ্ত করিয়ে দাও। [জ্ঞানের অনুসরণে আমাদের প্রবৃত্তি সঞ্জাত হোক–এটাই সঙ্কল্প]। [এই মন্ত্রের দুটি গেয়গানের নাম–সামনী। গেয়গানের ঋষি–পকথ বা সৌভর]।

৫। আহুত অর্থাৎ আমাদের মানস-যজ্ঞে সত্ত্বভার ইত্যাদির দ্বারা প্রবৃদ্ধ জ্ঞানদেব, আমাদের কল্যাণ বিধায়ক হোন। হে শোভনদানসমর্থ অর্থাৎ ধর্মার্থকামমোক্ষ রূপ চতুর্বর্গফলদাতা জ্ঞানদেব! আপনার দান আমাদের কল্যাণপ্রদ হোক; আর, আমাদের যজ্ঞ (সৎকর্মানুষ্ঠান) আমাদের কল্যাণপ্রদ হোক; এবং আমাদের স্তুতিসমূহ আমাদের কল্যাণদায়ক হোক। [ভাব এই যে, জ্ঞানদেব সকল কল্যাণ নিলয়; তিনি আমাদের অশেষ-কল্যাণ-হেতুভূত হোন, এবং মোক্ষের বিধান করুন]। [ঋগ্বেদ; গেয়- গানের নাম–দেবানীক অথবা পথ। গেয়গানের ঋষি–পথ বা পকথ]।

৬। হে দেব! আমাদের অনুষ্ঠিত কর্মের সুনিষ্পাদক, যাজক-শ্রেষ্ঠ অর্থাৎ ভগবানের শ্রেষ্ঠপূজক, দেবগণের আহ্বানকর্তা অর্থাৎ দেবভাব-প্রদাতা, দেবগণের মধ্যে অতিশয়রূপে দীপ্তিদান ইত্যাদি গুণমুক্ত, অবিনাশী (মরণরহিত) আপনাকে আমরা সম্যক্‌রূপে ভজনা করি–অর্চনা করি– অনুসরণ করি। [ভাব এই যে, –জ্ঞানদেবতাই দেবত্বপ্রদায়ক। অতএব, আমরা জ্ঞানের অনুসারী হই–এই সঙ্কল্প]। [মন্ত্রের গেয়গানের নাম–গৌতম বা সাধ্য]।

৭। হে জ্ঞানদেব! আপনি আমাদের সেই জ্ঞানরূপ পরম ধন প্রাপ্ত করান, যে ধন আমাদের হৃদয় রূপ যজ্ঞগৃহে বর্তমান সকল রকম রিপু-রূপ শত্রুকে অভিভূত করতে পারে; আরও, আমাদের। পাপবুদ্ধি-রূপ শত্রুকে এবং লোকের দৈন্যকে অর্থাৎ সৎকর্মসাধনে অসামর্থ্যকে অভিভব করুন–দূর করুন। [প্রার্থনার ভাব এই যে, –সেই দেব আমাদের যেন সেই ধন প্রদান করেন, যে ধন আমাদের এবং সকল প্রাণীর শত্রুকে বিনাশ করতে সমর্থ হয়]। [এই সাম-মন্ত্রের গেয়গানের নাম—সংবর্গ; গেয়গানের ঋষি– জমদগ্নি]।

৮। বিশ্বপতি লোকপালক, সত্ত্ব ইত্যাদির দ্বারা প্রবর্ধিত, জ্ঞানদেবতা, প্রীত হয়ে যখন মনুষ্যের হৃদয়ে অধিষ্ঠিত হন, তখন নিখিল শত্রুগণকে বিনষ্ট করেন। [ভাব এই যে, –সত্ত্ব ইত্যাদির দ্বারা প্রবর্ধিত হয়ে জ্ঞানদেবতা মানুষের অশেষ কল্যাণ সাধন করে থাকেন]। [এই মন্ত্রের গেয়গানের নাম রাক্ষোঘ্ন; গেয়গানের ঋষি—অগস্ত্য]।

প্রথম অধ্যায় সমাপ্ত –-

<

Durgadas Lahiri ।। দুর্গাদাস লাহিড়ী