(জনৈকা ভিখারিনির গান)
খড়ের প্রতিমা পূজিস রে তোরা

খড়ের প্রতিমা পূজিস রে তোরা,
         মাকে তো তোরা পূজিসনে॥
প্রতিমার মাঝে প্রতিমা বিরাজে
         হায় রে অন্ধ, বুঝিসনে॥
    বছর বছর মাতৃপূজার করে যাস অভিনয়,
    ভীরু সন্তানে হেরি লজ্জায় মা-ও যে পাষাণময়।
(মাকে)	জিনিতে সাধন-সমরে
             সাধক তো কেহ যুঝিসনে॥
মাটির প্রতিমা গলে যায় জলে,
         বিজয়ায় ভেসে যায়,
আকাশ বাতাসে মা-র স্নেহ জাগে
         অতন্দ্র করুণায়।
তোরই আশে পাশে তাঁর কৃপা হাসে
         (কেন) সেই পথে তাঁরে খুঁজিসনে॥

মানুষ : কে তুমি মা, তোমায় যেন কোথায় দেখেছি।

ভিখারিনি : আমি ভিখারিনি। আমার দুর্বৃত্ত ছেলেরা আমায় তাড়িয়ে দিয়ে, আমায় মৃতা বলে ঘটা করে মাতৃশ্রাদ্ধ করছে, তাই দেখতে এসেছি।

জনৈকা নারী : মা! মাগো! আমি তোকে চিনেছি। মা ছলনাময়ী!–

ভিখারিনি : চুপ! তুই তো চিনবিই, তুই যে আমারই শক্তির অংশ। এই মাতৃশ্রাদ্ধের অভিনয়ে মা, তুইও যোগ দিস্‌নে ; যদি পারিস, মূর্তিমতি শক্তিরূপে আমার এই সব জড় সন্তানদের মাঝে প্রাণ সঞ্চার কর।

মানুষ : একী! একী! ভিখারিনি কোথায় গেল! ও যেন দেবীমূর্তির মাঝে–

নারী : (মুখের কথা কাড়িয়া লইয়া) হাঁ, ভিখারিনি দেবীমূর্তির মাঝে বিলীন হয়ে গেল। তোমরা রাংতার ঐশ্বর্য দিয়ে যে যড়ৈশ্বর্যময়ী শ্রীদুর্গার বছর বছর পূজার অভিনয় কর, তিনি ভিখারিনি হয়ে দ্বারে দ্বারে তোমাদের জন্য শক্তি-ভিক্ষা, কল্যাণ-কামনা করে বেড়াচ্ছেন। তাঁরই পূজামণ্ডপে শিব-শক্তি আসেন ভিখারি-ভিখারিনির রূপে। তোমরা মাটির প্রতিমা পূজা কর, তাই প্রাণের প্রতিমাকে দেখতে পাও না, মাকে পাও না।

<

Kazi Nazrul Islam ।। কাজী নজরুল ইসলাম