তাড়া করেছিল? কোল্ড ড্রিংকের গ্লাসটা তুলে নিয়েছিলেন চীফ, আস্তে করে নামিয়ে রাখলেন আবার সেটা। কি ভাবছ তুমি, কিশোর, বলো তো? অতি কল্পনা করছ না তো?

একটা সম্ভাবনার কথা বললাম, স্যার, হতেই তো পারে, সামনে ঝুঁকল কিশোর। ধরুন, পাহাড়ী পথ ধরে নামছেন আপনি। জোরে বৃষ্টি হচ্ছে। আপনার সামনের গাড়িটা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পিছলে গেল। রাস্তা থেকে সরে গিয়ে পড়তে শুরু করল। আপনি তখন কি করবেন?

চীফ বলার আগেই বলে উঠল রবিন, অবশ্যই ব্রেক করব, যত জোরে পারি। থামানোর চেষ্টা করব আমার গাড়িটা। স্কিড করে যতটা যাওয়ার যাবে গাড়ি, তারপর থেমে যাবে।

যেখানে দ্বিতীয় সেট চাকার দাগ দেখেছি সেখানে, রবিনের সঙ্গে একমত হলেন চীফ।

তারপর কি করবে? রবিনকে প্রশ্ন করল কিশোর।

তারপর পিছিয়ে নিয়ে যাব আমার গাড়িটাকে। যাতে ওটাও আগেরটার মত পিছলে পড়তে না পারে এবং তারপর যাব আগের গাড়িটার কি অবস্থা হয়েছে, লোকজন বেঁচে আছে কিনা দেখার জন্যে।

ঠিক তাই, সন্তুষ্টির হাসি হাসল কিশোর। দ্বিতীয় গাড়িটা কি তা করেছে? সাহায্য করতে গেছে জুনকে? বেঁচে আছে কিনা অন্তত সেটুকু দেখার চেষ্টা কি করেছে?

না, স্বীকার করলেন চীফ। যা প্রমাণ পেয়েছি, তাতে ওরকম কিছু করেনি। পথের পাশে নরম মাটি ছিল। বৃষ্টিতে ভিজে কাদা হয়ে গিয়েছিল। ওখানে চাকার দাগ পাইনি। জুতোর দাগ পাইনি। কেউ নামলে জুতোর দাগ পড়তই। আমার বিশ্বাস, প্রথম গাড়িটাকে পড়তে দেখে গাড়ি থামিয়েছিল বটে দ্বিতীয় গাড়িটা, তবে চুপ করে বসে ছিল ওটার আরোহী।

তাহলে কে সেই মানুষ? কিশোরের প্রশ্ন। যে একটা গাড়িকে পড়ে যেতে দেখেও সাহায্যের হাত বাড়ায়নি? বেচারা ড্রাইভারের কি হলো, তা পর্যন্ত দেখার চেষ্টা করেনি? নিজেই জবাব দিল প্রশ্নগুলোর, হতে পারে, সেই লোক জুন লারসেনকে তাড়া করেছিল। গাড়িটা পড়ে যাওয়ায় খুশিই হয়েছিল। মেয়েটা মরেছে না বেঁচে আছে সেটা দেখারও প্রয়োজন বোধ করেনি।

ভাল বলেছ, চীফ বললেন। তথ্য-প্রমাণ কিছু দেখাতে পারবে?

সেই চেষ্টাই করব, উঠে দাঁড়াল কিশোর। দেখি, বের করতে পারি কিনা। রবিন, এসো।

দরজার কাছে যাওয়ার আগেই ওদেরকে ডাকলেন চীফ। বেশি কষ্ট করার দরকার নেই। জুন বেঁচেই আছে। ও জেগে গেলেই ওর মুখ থেকে সব শুনতে পারব আমরা।

ঠিকই বলেছেন চীফ। কি ঘটেছে জানার জন্যে তদন্তের প্রয়োজন নেই। কেউ তাকে অনুসরণ করছিল কিনা, হয়তো লক্ষ্য করেছে জুন। আর তাড়া করে থাকলে তো কথাই নেই। এমনও হতে পারে, ঠেলে ফেলে দেয়া হয়েছে ওর গাড়ি। হতে পারে, যে ফেলেছে, সেই লোকই খাবারে বিষ মিশিয়ে লাখ লাখ লোককে মারার ফন্দি করেছে।

সব প্রশ্নের জবাবই হয়তো আছে জুনের ঘুমন্ত মাথায়। এখন শুধু তার ঘুম ভাঙার অপেক্ষা। তারপরই জবাব পেয়ে যাবে তিন গোয়েন্দা।

কিন্তু আসল কথাটা হলো, জাগার পর সত্যি কথাগুলো বলবে তো জুন? যদি তার বাবা এসবে জড়িত থাকেন? বলবে? বাবাকে বাঁচানোর জন্যে মুখ বুজে থাকবে না?

থানা থেকে বেরিয়ে এসে গাড়িতে উঠল দুই গোয়েন্দা। খিদে টের পেল কিশোর। সে কথা বলল রবিনকে।

ভুল করলে তো না খেয়ে, রবিন বলল। ডাক্তার তো কত কথাই বলবে। কত কিছু নিষেধ করবে। সব শুনলে কি চলে?

বলাটা সহজ, মুখ কালো করে বলল কিশোর। পেটের যে কি অবস্থা হয়েছিল আমার, তোমার হলে বুঝতে। কি কষ্টটাই যে করেছি! এখন খাবার দেখলেই বিষ মনে হয় আমার!

পেট যখন আছে, ফুড পয়জনিং হবেই। সবারই হয়। তাই বলে কি খাওয়া ছেড়ে দেব?

তা কি দিয়েছি নাকি? বেছে বেছে খাচ্ছি। আর এতে বেশ ভালই লাগছে আমার। পেটে আর কোন অশান্তি নেই।

আচ্ছা, বাদ দাও ওসব কথা। তোমার যা ইচ্ছে খেয়ো। এখন কি করব, বলো।

কাজ একটাই করার আছে। কোন লোকটা জুনকে ফলো করেছিল, তাকে খুঁজে বের করা। কাল রাতে হাসপাতালে যে তিনজন দেখতে এসেছিল তাদের একজনও হতে পারে।

টম, হেনা, আর মিস্টার এক্স, এই তিনজনের একজন?

হ্যাঁ। হেনরি অগাসটাসের ব্যাপারেও খোঁজ নিতে হবে আমাদের, লারসেনের শত্রু যখন। হেডকোয়ার্টারে ফিরে কম্পিউটারেই সেটা করার চেষ্টা করব। জিনিসটা যখন কিনলামই, কাজে লাগাই। ডাটাসার্ভে খোঁজ করে ওদের বিজনেস ফাইলগুলো বের করে নেব। দেখি, হেনরি আর তার রেস্টুরেন্টের ব্যাপারে কি তথ্য দেয় কম্পিউটার। ওদের ডাটাবেজ হলো দি ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল। তথ্য জানাতেও পারে।

তুমি তো কম্পিউটার নিয়ে বসবে। আমি…

জানার চেষ্টা করবে, কাল রাতে হাসপাতালে জুনকে দেখতে আসার আগে কোথায় কি করেছে টম।

মাপ চাই। সময় নেই আমার। এজেন্সিতে যেতে হবে।

বেশ। তাহলে মুসাকে ফোন করে বলল, ও-ই চেষ্টা করুক। অহেতুক ফারিহার সঙ্গে বসে বসে বকবক করার চেয়ে একটা কাজ অন্তত করুক।

বেশ। হেনা আর মিস্টার এক্সের ব্যাপারে কি হবে?

হেনার ব্যাপারে আমার মাথাব্যথা নেই, কিশোর বলল। ওর কোন মোটিভ আছে বলে মনে হয় না। তবু, ওকেও একবার ফোন করব সময় করে। আর মিস্টার এক্সকে এভাবে খুঁজে বোধহয় বের করতে পারব না। সে এসবে জড়িত থাকলে এক সময় না এক সময় দেখা আমাদের হয়েই যাবে।

অনেক খিদে পেয়েছে কিশোরের। গুড়গুড় করছে পেটের ভেতর। রবিনকে অনুরোধ করল সুপারমার্কেটে নিয়ে যেতে। কিছু ফল কিনল কিশোর। গাড়িতে এসে বসে খেতে শুরু করল। ইয়ার্ডের দিকে গাড়ি চালাল রবিন। কিশোরকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল তার কাজে। অফিসে গিয়ে মুসাকে ফোন করে জানাল কিশোর কি করতে বলেছে।

বিশেষ গুরুত্ব দিল না মুসা। কাজেই ফারিহার কাছ থেকে উঠতে উঠতে অন্ধকার হয়ে গেল। তখন আর টমের ঠিকানা খুঁজে বের করার সময় নেই। অত অন্ধকারে কে একটা গোবেচারা বয়ফ্রেন্ডের ঠিকানা খোঁজার মত ফালতু কাজ করতে যায়? রোববারের আগে আর কাজটা করতে পারল না মুসা। গাড়ি এনে রাখল লরেল স্ট্রীটে, ২৮ নম্বর বাড়ির সামনে, যেখানে বাস করে টমাস হামবার।

রকি বীচের কয়েক মাইল উত্তরে মেলটনের শান্ত সুন্দর পরিবেশে বাড়িটা। পথের পাশে একসারি সাদা কাঠের বাড়ি। সামনে চওড়া বারান্দা আর ছোট আঙিনা।

টমাসদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা পুরানো বনেভিল কনভারটিবল গাড়ি। বারান্দার রেলিঙের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে আছে সোনালি চুলওয়ালা এক তরুণ। পরনে রঙচটা নীল জিনস, গায়ে সাদা টি-শার্ট। মুসা আঙিনায় ঢুকতেই লাফ দিয়ে রেলিং থেকে নামল সে।

এসো! চিৎকার করে ডাকল সে। এক হাত সামনে বাড়ানো, আরেক হাত পিঠের পেছনে। দিনটা মাটি হতে বসেছিল আমার! তুমি আসাতে সেটা আর হলো না! মুসা বারান্দার কাছাকাছি যেতেই পেছনের হাতটা সামনে চলে এল। শক্ত করে ধরা একটা মোটর সাইকেলের চেন।

ব্যাপার কি? গতি বেড়ে গেল মূসার হৃৎপিন্ডের। হঠাৎ করে, কোন কারণ ছাড়াই একটা উন্মাদ হামলা করতে আসছে কেন তাকে! চেনের একটা মাথা হাতে পেঁচানো, আরেক মাথা ঝুলছে সাপের লেজের মত। স্থির হয়ে গেছে মুসা। কারাতের কৌশল ব্যবহার করবে? না পিছিয়ে যাবে?

এবার শুধু তুমি আর আমি, লোকটা বলল। এই তো চেয়েছিলে, তাই না? বলেই শপাং করে বাড়ি মারল কাঠের রেলিঙে।

না, কারাতের কথা ভুলে যাওয়াই উচিত। ওই চেনের এক বাড়ি মাথায় লাগলে সাতদিন হাসপাতালে পড়ে থাকতে হবে। পিছাতে শুরু করল সে।

শিক্ষা আজ ভাল করেই দিয়ে দেব! চিৎকার করে উঠল আবার লোকটা। লাফিয়ে বারান্দা থেকে আঙিনায় নামল। বেশি বড় শরীর না। অর্থাৎ গায়েগতরে মুসার চেয়ে ছোট খাটোও, স্বাস্থ্যও খারাপ। কিন্তু চিৎকার করছে গলা ফাটিয়ে, আর মাথার ওপরে তুলে বনবন করে ঘোরাচ্ছে চেনটা।

আপনি ভুল করছেন, মুসা বলল। সে পিছাচ্ছে আর লোকটা এগোচ্ছে। লোকটার পায়ে চামড়ার বুট। গরিলার মত বাঁকা করে রেখেছে কাঁধ।

আপনি কি ভাবছেন বুঝতে পারছি না, মুসা বলল আবার। আমি এসেছি টমাস হামবারের খোঁজে, মরিয়া হয়ে উঠেছে সে। আমি জুন লারসেনের বন্ধু।

থমকে গেল কালো বুট। থেমে গেল চেনের পাক।

সত্যি বলছ? লোকটা বলল।

কসম, মাথা ঝাকাল মুসা। সতর্ক রয়েছে। লোকটা হঠাৎ আক্রমণ চালালে যাতে ঠেকাতে পারে।

সরি, চেপে রাখা নিঃশ্বাস ফোস করে ছাড়ল লোকটা। ঢিল হয়ে গেল যেন সমস্ত শরীর। আমিই টমাস হামবার। জ্বালিয়ে খাচ্ছে আমাকে। চুরি করে বাড়িতে ঢুকে পড়ে ওরা। ভবঘুরে। একটা লোক তো শাসিয়েই গেছে সুযোগ পেলেই আমার গাড়িটা চুরি করে নিয়ে যাবে।

রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখা ঝরঝরে বনেভিলটা দেখাল টম।

ওটার দিকে তাকিয়ে রইল মুসা। অবশেষে হেসে রসিকতা করল, এমনিতেই ওটা দিয়ে দেয়া উচিত। হাহ, হাহ! চাকা তো বসে গেছে। আর যে হারে তেল লিক করছে…

ব্যাটারিও ডাউন হয়ে আছে দুই হপ্তা ধরে, যোগ করল টম। হাসছে সে-ও। তবু, ওদেরকে নিতে দেব কেন? কেড়ে রেখেছি অনেক কষ্টে। ব্যাটারা হাড়-মাংস জ্বালিয়ে দিয়েছে আমার। কি বলছি বুঝতে পারছ? বারান্দার রেলিঙের দিকে চোখ পড়তে বলল, রেলিংটারই সর্বনাশ করলাম!…হ্যাঁ, জুনের সঙ্গে কি করে পরিচয় হলো তোমার, বলো তো?

আসলে, পরিচয় হয়নি এখনও, সত্যি কথাটাই বলল মুসা। আমার বান্ধবী আর ও একই রুমে রয়েছে হাসপাতালে।

ও, হ্যাঁ, দেখেছি একটা মেয়েকে, মুসাকে ঘরের ভেতরে ডেকে নিয়ে এল টম। চেন ঘোরাচ্ছে না। রাগও দূর হয়ে গেছে চেহারা থেকে। ওকে দেখতে আর ভয়ঙ্কর লাগছে না তখনকার মত। বরং ভদ্র, শান্ত একজন কলেজের ছাত্রের মতই লাগছে। ভেতরে আসবাবপত্রের চেয়ে পোস্টারই বেশি।

একটা কথা জিজ্ঞেস করতে এলাম, মুসা বলল। শুক্রবার রাতে অত দেরি করে হাসপাতালে গিয়েছিলেন কেন?

খবরটাই পেয়েছি দেরিতে। জুনের রুমমেট হেনা ফোন করে আমাকে জানাল জুন অ্যাক্সিডেন্ট করেছে। কয়েক মাস হলো ওর সঙ্গে আর ততটা দেখা হয় না, ঘনিষ্ঠতা নেই। তবু, একসময় তো ছিল, সেই সুবাদেই গেলাম দেখতে। হুঁশ ফিরেছে ওর?

না। বেহুশ ঠিক বলা যায় না, নার্স তাই বলল। গভীর ঘুম বলা যেতে পারে। ডাক্তারের কথা, অনেক বেশি ঘুম দরকার এখন ওর।

একটা মুহূর্ত আড়চোখে মুসার দিকে তাকিয়ে রইল টম। হঠাৎ করেই যেন মনে পড়ল, যার সঙ্গে কথা বলছে সে পুরোপুরি অপরিচিত তার। একটা কথা জিজ্ঞেস করি, জুনকে যদি না-ই চেননা, তাহলে এসব প্রশ্ন করছ কেন?

ফারিহা, আমার গার্লফ্রেন্ড বলল, অদ্ভুত একটা কিছু ঘটছে। সেটারই তদন্ত করছি। চিকেন হার্বার্ট লারসেনকে চেনেন?

তাকে চিনব না। জুনের সঙ্গে আমার গোলমালটা বাধানোর জন্যে সে-ই তো দায়ী।

মানে? আপনাকে পছন্দ করতেন না তিনি?

কি করে করবে? সারাক্ষণই তর্ক বেধে থাকলে কি আর পছন্দ করে কেউ? আমি নিরামিষ ভোজী। মাছ খাই না, মাংস খাই না, মুরগীও ভাল লাগে না। খাবার জন্যে প্রাণী হত্যা আমার মতে অপরাধ। আর বেচারা প্রাণীগুলোকে খুন করে যারা ব্যবসা করে তারা তো রীতিমত অমানুষ। লাগত এসব নিয়েই। শেষ দিকে তো আমাকে দেখলেই জ্বলে উঠত লারসেন। আস্তে আস্তে এসব নিয়ে জুনের সঙ্গেও কথা কাটাকাটি শুরু হলো আমার। শেষে যখন বলল, গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে বাপের ব্যবসা দেখবে জুন, ব্যস, হয়ে গেল সব খতম। কাটাকাটি।

আরেকটা কথা। ভোর রাত চারটের সময় আপনি হাসপাতালে ঢুকলেন কি করে? ঢুকতে দিল?

নার্সকে মিথ্যে বলেছি আমি। বলেছি, জুনের সঙ্গে আমার এনগেজমেন্ট হয়েছে, এক মুহূর্ত চুপ থেকে বলল টম। কথাটা সত্যি হলে খুশিই হতাম।

শেষ বিকেলে রবিন আর কিশোরকে তদন্তের ফলাফল জানাল মুসা। স্যালভিজ ইয়ার্ডে রয়েছে তিনজনে। রবিনের ফোক্সওয়াগনের ইঞ্জিন পরীক্ষা করছে সে। কিছু জিনিস খারাপ হয়েছে, যার ফলে গোলমাল করছে ইঞ্জিন, সেটাই দেখছে আর কথা বলছে। ফ্যান বেল্টটা প্রায় বাতিল হয়ে গেছে। বদলানো দরকার। পুরানো বাতিল মালের অভাব নেই ইয়ার্ডে। অন্য একটা ইঞ্জিনের বেল্ট খুঁজে বের করে নিয়ে এসেছে মুসা। লাগিয়ে দিয়ে দেখল চলে কিনা। চলছে। অন্তত আগেরটার চেয়ে ভাল। আঙুল দিয়ে টেনেটুনে দেখে বলল, শ দুই মাইল চালাতে পারবে। তারপর ঢিল হয়ে যাবে। রবিন, নতুন একটা কিনে নিয়ো।

ওসব ফ্যান বেল্টের কথার ধার দিয়েও গেল না এখন কিশোর। বলল, আমার কাছে সব চেয়ে আকর্ষণীয় লাগছে যে ব্যাপারটা, তা হলো, টমের একটা গাড়ি আছে।

কিশোর, রবিন বলল। মাঝে মাঝে এত দুর্বোধ্য লাগে না তোমার কথা, কি বলব! মুসা বলছে এক কথা, তুমি চলে গেলে আরেক কথায়। কেন, কারও গাড়ি থাকতে পারে না?

মাথায় কথা রাখতে পারো না, সে জন্যেই তোমাদের কাছে এত কঠিন লাগে। কেন, ভুলে গেলে, জুনের গাড়িটাকে তাড়া করেছিল আরেকটা গাড়ি?

টমকে বাদ দিয়ে রাখতে পারো। ওর গাড়িটার চলারই ক্ষমতা নেই। টায়ারগুলো বসা। ব্যাটারি ডাউন হয়ে আছে দুই হপ্তা ধরে।

সত্যি কথা না-ও তো বলতে পারে?

বলেছে, জোর দিয়ে বলল মুসা। কারণ আমারও সন্দেহ হয়েছিল। তাই ওর প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলেছি।

ও। তার পরেও আরেকটা ব্যাপার বাকি থেকে যায়। লোকটার মেজাজ ভীষণ খারাপ। তোমাকে যে চেন নিয়ে মারতে এসেছিল, সেটাই তার প্রমাণ।

শ্রাগ করল মুসা। ড্রাইভিং সীটে গিয়ে বসল। ইঞ্জিনের থ্রটল পরীক্ষা করার জন্যে ইগনিশনে মোচড় দিল। মিনিট খানেক ঠিকমতই গুঞ্জন করল ইঞ্জিন, তারপরে বিচিত্র একটা শব্দ করল, মনে হলো বলছেঃ প্লা-হুপ্পা-গ্যাক!

এ রকম করছে কেন? রবিনের প্রশ্ন। হেসে বলল, ইঞ্জিনটাকে জিজ্ঞেস করো তো, এ কথার মানে কি?

বলতে চায়, আমাকে কিনে ভুল করেছ। বেচে দিয়ে আরেকটা কেন। আমি বুড়ো মানুষ, আর পারি না।

অনুরোধ করো না, আর কটা দিন যেন আমাকে একটু সাহায্য করে। আর কিছু পয়সা জমিয়ে নিই। ওকে মুক্তি দিয়ে দেব।

চেষ্টা করলে কিছুটা ভাল হয়তো করা যায়, মুসা বলল। তবে সময় লাগবে। আপাতত এভাবেই চালাও আগামী হপ্তায় দেখি। তার পর? আমার কথা তো বললাম। কিশোর, হেনা তানজামিলা আর হেনরি অগাসটাসের খবর কি?

হাসল কিশোর। হেনাকে ফোন করেছিলাম। অ্যাক্সিডেন্টটা যখন হয়, তখন আরও ছজন লোকের সঙ্গে এলিভেটরে আটকা পড়েছিল। চমৎকার অ্যালিবাই। তবে হেনরি অগাসটাসের ব্যাপারটা চমকে দেয়ার মত। ব্যবসায়ে চিকেন লারসেনের সব চেয়ে বড় প্রতিপক্ষ সে। দি ওয়াল স্ট্রীট জার্নাল বলছে, এই কিছুদিন আগে চিকেনের পুরো ব্যবসাটা কিনে নিতে চেয়েছিল হেনরি।

তাই? আশ্চর্য! অবাক হলো রবিন। তাহলে তো রাস্তা থেকে ফেলার কথা লারসেনকে। তার মেয়েকে ফেলতে যাবে কেন?

জানি না, গাল চুলকাল কিশোর। অন্য ভাবে শাস্তি দিতে চেয়েছে হয়তো লারসেনকে। কিংবা ওর মেয়েকে মেরে ফেলে মন ভেঙে দিতে চেয়েছে। যাতে ব্যবসা নিয়ে আর মাথা না ঘামায় লারসেন।

লারসেনের মুরগীতে হেনরিই বিষ মেশাচ্ছে না তো?

না-ও হতে পারে। চিকেন নিজেই মেশাতে পারে। আর আরেকজন চরম সন্দেহভাজন লোক তো রয়েই গেছে। সেই লোকটা, যে হাসপাতালে ঢুকে জিনিসপত্র ঘাটাঘাটি করেছিল। ফারিহাকে নাম বলেনি।

এই সময় হেডকোয়ার্টারে ফোন বাজতে আরম্ভ করল। ধরতে গেল মুসা।

তিন গোয়েন্দা। মুসা আমান বলছি, স্পীকারের সুইচ অন করে দিল সে।

ফারিহা ফোন করেছে হাসপাতাল থেকে। মাত্র তিনটে শব্দ উচ্চারণ করল সে। আর তা-ই তিন গোয়েন্দাকে গাড়ির দিকে ছুটে যেতে বাধ্য করার জন্যে যথেষ্ট। সে বলেছে, জুনের ঘুম ভেঙেছে!

<

Super User