ডিকসনকে তাঁর দোকানের সামনে রেখে আবার রওনা হলো তিন গোয়েন্দা। সেঞ্চুরি যাও ধরে এগোল। ড্রাইভিং হুইল ধরে বসেছে মুসা, সামনের দিকে তাকিয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলল। ভাবসাবে মনে হলো, আমাদেরকে তিন গোয়েন্দা না ভেবে তিন ভাঁড় ভেবেছেন ম্যাড। থ্রী স্টুজেস।

এবং তাঁর সেই ভাবনাটারই অবসান ঘটাতে হবে আমাদের, গম্ভীর হয়ে বলল পেছনের সীটে বসা কিশোর। আর তা করতে হলে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। জানতে হবে কমিক চুরির সময়টায় সন্দেহভাজনদের কে কোথায় কি করছিল।

ডিকসন কোথায় ছিলেন, জানি, রবিন বলল। আমাদের সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলেন।

কিশোর ভাবছে, মিরিনা জরডান কোথায় ছিল, তা-ও জানি। ক্রিমসন, ফ্যান্টম যখন এগিয়ে আসছিল, আমাদের কাছ থেকে তখন সরে যাচ্ছিল মেয়েটা। হয়তো ওকে জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল…ভাবনাটা ঠেলে সরিয়ে দিল সে। অন্যান্য সন্দেহভাজনদের কথা ভাবতে লাগল। আমি জানতে চাই, নীল বোরাম কোথায় ছিল তখন। আর এডগার ডুফার। বিশেষ করে, আইজাক হুফারের কথা তো জানতেই চাই। প্রশ্নগুলোর জবাব পেলে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।

মাটির নিচের গ্যারেজে গাড়ি রেখে, এলিভেটরে করে উঠে এসে নিজেদের ঘরে ঢুকল তিন গোয়েন্দা। ব্যাগ নামিয়ে রাখল। তারপর রওনা হলো মেইন কনফারেন্স রুমের দিকে। কনভেনশন ডোরের বাইরে অনেকটা পাতলা হয়ে এসেছে ভিড়, কিন্তু ভেতরে যেন আরও বেড়েছে। ঠাসাঠাসি গাদাগাদি হয়ে আছে। রুক্ষ চেহারার সিকিউরিটি গার্ড, সামনের দুটো দাঁত ভাঙা যার, সে আবার ফিরে এসে বসেছে নিজের জায়গায়। তিন গোয়েন্দাকে আটকাল। ভাল করে ওদের হাতের সিল দেখে তারপর ঢুকতে দিল।

সঙ্গীদের নিয়ে ভিড়ের ভেতর দিয়ে ঘরের একধারে চলে এল কিশোর। সারি সারি টেবিল পাতা হয়েছে। টেবিলের সামনে বসে ভক্তদের বাড়িয়ে দেয়া খাতায় অটোগ্রাফ দিচ্ছে কমিক আর্টিস্টরা। কেউ কেউ পেন্সিল দিয়ে কমিকের হিরোর স্কেচ এঁকে দিচ্ছে। কিছু টেবিলে কমিক বই, ম্যাগাজিন, আর ইলাসট্রেশন বোর্ডের সাথে সাথে উঁচু হয়ে আছে পোস্টারের স্তূপ। সেগুলোও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।

চুটিয়ে ব্যবসা করে চলেছে আর্টিস্টেরা। শত শত লোক সারি দিয়ে দাঁড়িয়েছে টেবিলের সামনে। ছেলে-বুড়ো-মাঝবয়েসী সব বয়েসের সব ধরনের লোক। মানিব্যাগ ভরে টাকা নিয়ে এসেছে। অকাতরে সেগুলো খরচ করছে কমিকের পেছনে। অনেক ভক্তেরই চোখ চকচক করছে তাদের প্রিয় শিল্পীকে দেখতে পেয়ে, তাদের সঙ্গে কথা বলতে পেরে যেন ধন্য হচ্ছে। কিছু কিছু তো আছে, ওদের কাণ্ড দেখে মাথার স্থিরতা সম্পর্কেই সন্দেহ জাগে। খাতায় তো অটোগ্রাফ নিচ্ছেই, বই, পোস্টার যত পারছে কিনে সেগুলোতে নিচ্ছে, গায়ের শার্টে নিচ্ছে, কেউ কেউ কাগজের কফি কাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে আর্টিস্টের দিকে, সই করে দেয়ার জন্যে।

অটোগ্রাফের অনুরোধের সঙ্গে সঙ্গে চলছে নানা রকম প্রশ্ন, ব্যতিব্যস্ত করে তুলছে আর্টিস্টদের। ধৈর্যের সাথে সই করে দিচ্ছে ওরা, প্রশ্নের জবাব দিয়ে চলেছে, ব্যবসার স্বার্থে। এত মানুষের সম্মিলিত কণ্ঠস্বর কোলাহলে পরিণত হয়েছে।

আপনি না থাকলে স্নাইম ম্যান আর স্নাইম ম্যান থাকত না, জ্যাক, বলল এক ভক্ত। ওকে কেউ আপনার মত করে আঁকতে পারত না।

আরেকজন তরুণ ভক্ত আরেক আর্টিস্টের সামনে এসে চেঁচিয়ে উঠল, রোবট অ্যাভেঞ্জারের বারোটা বাজিয়েছেন আপনি। একমাত্র স্টেবিনস জানত কি করে ওই রোবট আঁকতে হয়। আপনি তো ওটার মাথাকে ভলভো গাড়ির নাক বানিয়ে দিয়েছেন। কিছু হয়েছে ওটা? আপনাকে বের করে দেয় না কেন কোম্পানি? একটা বই বাড়িয়ে ধরে বলল সে, দিন, এখানে একটা সই করে দিন।

ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রয়েছে আর্টিস্ট। আমার আঁকা ভাল না লাগলে অটোগ্রাফ নিতে এসেছ কেন? বইটাই বা কিনেছ কেন?

কিনেছি বিক্রি করার জন্যে। আপনার সই থাকলে ডবল দামে বেচতে পারব।

বিহ্বল ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বইটাতে সই করে দিল আটিস্ট।

এই কনভেনশন রুমটাকে কেন ম্যাডহাউস বলে বুঝতে পারছে কিশোর। পাগলখানা! বিড়বিড় করল সে, ঠিক নামই দিয়েছে! বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে বলল, চলো, আইজাক হুফারকে খুঁজে বের করি।

সব চেয়ে লম্বা লাইন পড়েছে হুফারের টেবিলের সামনে। অন্য আর্টিস্টদের মত তার টেবিলে বই, ম্যাগাজিন কিংবা পোস্টার নেই বিক্রির জন্যে। ভক্তদের বাড়িয়ে দেয়া খাতায় দ্রুত একে দিচ্ছে কমিকের বিভিন্ন চরিত্র। কোন কোন ভক্ত সহানুভূতির সুরে বলছে কি করে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে তার চিত্রকর্মকে, সান্ত্বনা দিচ্ছে। অনুরোধ করছে আরও ভাল কোন চরিত্র তৈরি করার জন্যে, যেটা আগেরটার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠবে। শিল্পীর নিজের হাতে এঁকে দেয়া ছবি পেয়ে খুব খুশি ওরা।

কয়েকটা ছেলে এসে ধরল হুফারকে ক্রিমসন ফ্যান্টম এঁকে দিতে হবে, কিংবা ক্রিমসন ফ্যান্টমের বইতে সই করে দিতে হবে।

দেরি করছেন কেন! চিৎকার করে উঠল এক কিশোর, দিন, এঁকে দিন!

হুফারের নাকের কাছে ক্রিমসন ফ্যান্টমের একটা নতুন সংস্করণ দুলিয়ে বলল আরেকজন, এটাতে সই করুন।

ছেলেটার কব্জি চেপে ধরল হুফার। ক্রিমসন ফ্যান্টমে সই আমি করব না। করাতে হলে বোরামের কাছে নিয়ে যাও। আরও বিশটা চরিত্র তৈরি করেছি আমি। ওগুলোর কোনটা চাও তো বলো, এঁকে দিই।

না, ক্রিমসনেই দিতে হবে, গোঁয়ারের মত বলল অবুঝ ছেলেটা। আঁকতে পেরেছেন, সই দিতে পারবেন না কেন?

ওটা এখন বোরামের সম্পত্তি। তার কাছে যেতে বললাম তো।

না, আপনাকেই দিতে হবে।

আমি পারব না, মাথা নাড়ল হুফার। আর ওভাবে আমার নাকের সামনে ওটা নাড়তে থাকলে মেজাজ ঠিক থাকবে না বলে দিলাম। কালি ঢেলে নষ্ট করে দেব বইটা।

হাত ছেড়ে দিল হুফার।

তার নাকের কাছে বইটা নাড়তেই থাকল ছেলেটা।

ছিরে ফেলব কিন্তু, হুমকি দিল হুফার।

তার মুখের দিকে তাকিয়ে আর বিরক্ত করতে সাহস করল না ছেলেটা। হাত সরিয়ে নিয়ে হারিয়ে গেল ভিড়ের ভেতরে।

দাঁড়াও আমি একবার কথা বলে আসি হুফারের সঙ্গে, ফিসফিসিয়ে দুই বন্ধুকে বলল রবিন। কনুই দিয়ে তো মেরে ভিড় ঠেলে টেবিলের দিকে এগোতে শুরু করল সে। গুঁতো খেয়ে রেগে গিয়ে তার দিকে ঘুরে জ্বলন্ত চোখে তাকাতে লাগল লোকে। পাত্তাই দিল না সে। এগোতেই থাকল। কিন্তু যে হারে ঠেলাঠেলি করছে লোকে, হুফারের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে কিভাবে? কাজেই, সরাসরি পথটাই বেছে নিল সে। নাম ধরে ডাক দিল, মিস্টার হুফার?

মুখ তুলে তাকাল হুফার। আবার কি? রবিনের শুন্য হাত দেখে বলল, ও, আলতুফালতু জিনিস অন্তত সই করতে আননি। তা কি চাই? স্কেচ? কার ছবি আঁকব? তোমাকে দেখে কিন্তু লাগছে তুমি কিলার ব্রেন-এর ভক্ত। ঠিক বলেছি না? ততক্ষণে ওর কলম, কাগজের ওপর ছোটাছুটি শুরু করেছে।

আপনাকে আমি ম্যাড ডিকসনের স্টলের সামনে দেখেছিলাম। দোকানটায় বোমা ফাটার আগে। ছেলেটার হাত থেকে কমিক নিয়ে পোড়ানোর দৃশ্যটা দারুণ লেগেছিল আমার কাছে।

আচমকা ব্রেক কষার পর পিছলে গিয়ে যেন থেমে গেল হুফারের কলম।

কমিকগুলো ডাকাতি হওয়ার সময় আপনি ওখানে থাকলে খুব ভাল হত, আবার বলল রবিন। লোকটাকে হয়তো ধরে ফেলতে পারতেন। কোথায় ছিলেন তখন? লোকটাকে দেখেননি?

নীরবে রবিনের দিকে তাকিয়ে রয়েছে হুফার। ভক্তরা বিরক্ত হতে আরম্ভ করেছে। একজন চেঁচিয়ে বলল, এই, আগেই এসে বকবক শুরু করলে কেন? লাইনে দাঁড়াও। তোমার পালা আসুক, তারপর জিজ্ঞেস করো।

হুফার, আরেকজন বলল, আমাদের দিকে নজর দিন। ওতো অনেক পরে এল। যেতে বলুন ওকে।

কোথায় ছিলাম? কারও দিকে না তাকিয়ে অবশেষে রবিনের কথার জবাব দিল হুফার। এই চিড়িয়াখানার ভেতরেই। তিক্ত কণ্ঠে কথাটা বলে আবার আঁকতে শুরু করল সে। মুখ না তুলেই বলল, যাও, ভাগ। আমি ব্যস্ত।

স্কেচটা তুলে ধরে বলল, কিলার ব্রেন কিনতে চান কেউ?

তাকিয়ে রয়েছে রবিন। এত তাড়াতাড়ি এভাবে ওর দিক থেকে নজর সরিয়ে নেবে হুফার, কল্পনাও করেনি। এরকম আচরণ করতে না পারলে যে ভক্তদের হাত থেকে রেহাই পেতে পারত না, এ কথাটা ভুলেই গিয়েছিল সে। কানের কাছে, অসংখ্য কন্ঠের চিৎকার শুনতে পেল, ছবিটা কিনতে চায় ওরা, একজন একটা দাম বললে আরেকজন তার চেয়ে বেশি আরেকটা বলছে। নীলামে চড়ানো হয়েছে যেন ওই সদ্য আঁকা ছবি। কোনমতে দুপাশের দুজনকে সরিয়ে আরেকটু আগে বাড়ল রবিন। তার একটা কার্ড বাড়িয়ে দিয়ে বলল, আশা করি আবার দেখা হবে আমাদের। এর বেশি আর বলতে পারল না। টেনে তাকে পেছনে নিয়ে গেল কয়েকটা হাত।

ঢুকতে যতটা কষ্ট হয়েছিল, বেরোতে তার চেয়ে কম হল না। সবাই হুড়াহুড়ি করছে টেবিলের কাছে যাওয়ার জন্যে।

ভিড়ের ঠিক বাইরেই অপেক্ষা করছে কিশোর আর মুসা। রবিন বেরোতেই মুসা জিজ্ঞেস করল, কি বলল?

কমিক ডাকাতির সময় সে নাকি এই ঘরেই ছিল, পেছনের জনতার দিকে তাকিয়ে জবাব দিল রবিন। এখন যারা আছে, তখনও হয়তো তাদের অনেকেই ছিল। তার মানে অনেকেই তাকে দেখেছে। সাক্ষ্য দিতে পারবে তারা। হাত দিয়ে ডলে পোলো শার্টটা সমান করার চেষ্টা করতে লাগল সে। ভিড়ের চাপে কুঁচকে লেহে জায়গায় জায়গায়।

হু। সরু হয়ে এল কিশোরের চোখের পাতা, তাহলে ডাকাতির পর পরই এত তাড়াতাড়ি স্টলের কাছে পৌছে গেল কি করে?

সে আর ডুফার একই সময়ে হাজির হয়েছে, রবিন বলল। হয়তো একই সাথে ছিল দুজনে।

মাথা ঝাকাল কিশোর। ভাল বলেছ। ডুফারকে পাওয়া যাবে কােথায়?

পরিচিত একটা মুখ দেখা দিল ভিড়ের ভেতরে। পিটার, যে লোকটা ওভারগ্রীপ কমিকের কপি ধার দিয়েছিল ডুফারকে। তিন গোয়েন্দাকে দেখে জানতে চাইল, কি করছে এখানে।

এমনি এসেছে, দেখতে, জানাল কিশোর। তারপর জিজ্ঞেস করল, ডুফারকে দেখেছে কিনা। মাথা নেড়ে পিটার জানাল, গত এক ঘণ্টা ওর সঙ্গে দেখা নেই। হাসল হঠাৎ করেই। গোল্ড রুমে গিয়ে দেখতে পারো। কি করে যেতে হবে পথ বলে দিয়ে বলল, না গেলেও অবশ্য পারো। যে কোন সময়ে এসে পড়তে পারে ডুফার।

কিশোর জিজ্ঞেস করল, নীল বোরামকে দেখেছেন কোথাও?

দেখেছি, হাত তুলে দেখাল পিটার। ওই যে ওখানে। হিরোয়িক কোম্পানির লোক নিয়ে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিচ্ছে বোরাম। নতুন কোন হিরোয়িক ক্লাসিকের ঘোষণা দিচ্ছে মনে হয়।

সেদিকে তাকিয়ে ক্যামেরার আলো ঝিলিক দিতে দেখল কিশোর। আর সোনালি পোশাকের চমক। দ্রুত এগোল দুই সহকারীকে নিয়ে। জায়গাটার স্টল সব সরিয়ে দিয়ে পরিষ্কার করা হয়েছে বিশেষ কাজের জন্যে। হিরোয়িক কমিকের কয়েকজন আর্টিস্ট পোজ দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে লাইফ সাইজ কিছু কার্ডবোর্ডে আঁকা কমিকের বিভিন্ন চরিত্রের ছবির সামনে।

কিন্তু তাদের দিকে নজর নেই ক্যামেরার। আলো ফেলা হয়েছে স্টেলারা স্টারগার্লের ওপর, ক্যামেরার চোখও তারই ওপর আটকে আছে যেন। কারণটা বোঝা শক্ত নয়। ছবির পাশেই দাঁড়িয়ে আছে মিরিনা জরডান, এখনও সোনালি কসটিউম পরনে, সাংবাদিকের দিকে তাকিয়ে উজ্জ্বল হাসি হাসছে।

একটু দূরে তার মা কথা বলছে সাংবাদিকদের সঙ্গে। তার পেছনে নীল বোরাম।

সম্পাদকের কাছে এগিয়ে গেল কিশোর। মিস্টার বোরাম, আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতে পারি?

কেন নয়? টাকে হাত বোলালেন বোরাম। করো, প্রশ্ন করো।

আমি আপনাকে ম্যাড ডিকসনের স্টলের সামনে দেখেছি, ডাকাতির একটু আগে, কিশোর বলল। আপনার কি মনে হয়, যে কমিকগুলো চুরি হয়েছে ওগুলো মূল্যবান?

ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছেন বোরাম। এটা কি ধরনের প্রশ্ন হলো?

আমি আর আমার দুই বন্ধু এই কেসের তদন্ত করছি, ম্যাড ডিকসনের হয়ে। মুসা আর রবিনকে দেখাল কিশোর। তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড বের করে দিল বোরামের হাতে। আপনার মতামত জানা দরকার…

বাধা দিয়ে বোরাম বললেন, শুধু মতামত নয়, আরও অনেক কিছুই জানতে চাও তুমি। কার্ডটার দিকে তাকিয়ে বললেন বোরাম। তারপর তাকালেন কিশোরের দিকে। ডাকাতি হওয়ার সময় কনভেনশন ফ্লোরেই ছিলাম না আমি, স্টলের কাছে থাকা তো দূরের কথা। গোন্ড রুমের বাইরে কমিকের এক মাথামোটা পুজারি আটকে ফেলেছিল আমাকে।

পুজারি?

এডগার ডুফার। ভ্রূকুটি করলেন বোরাম। যেন ডুফারের সঙ্গে সাক্ষাতের সেই স্মৃতিটাও বিরক্ত করছে তাঁকে। গোন্ড রুম থেকে বেরিয়ে এল, গাধাগুলো যেখানে সিনেমা দেখাচ্ছিল সেখানে। মনে হলো, প্রোজেকটরের কিছু একটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। মেরামতের চেষ্টা করছিল লুই মরগান। এই সময় ডুফার বেরিয়ে এসে বিরক্ত করতে শুরু করল আমাকে।

তারপর?

কে জানি এসে বলল, ম্যাড ডিকসনের স্টলে গন্ডগোল হয়েছে। দেখতে গেল ডুফার। ভাবলাম, মরগান বোধহয় জানে কিছু, তাই তাকে ধরলাম। সত্যি, বলছি, এভাবে ডুফারের হাত থেকে রেহাই পেয়ে খুশিই হয়েছিলাম। নিজের সম্পর্কে তার উঁচু ধারণা। কুৎসিত ভঙ্গিতে হাসলেন বোরাম। অনেক অনেক উঁচু।

একটু থেমে বললেন সম্পাদক, তোমার প্রশ্ন শেষ হয়েছে? কাজ আছে আমার, যেতে হবে।

লোকটা চলে যাচ্ছেন, তাকিয়ে রয়েছে সেদিকে কিশোর। কেসটার মাথামুন্ড কিছুই বুঝতে পারছে না এখনও।

কাঁধে হাত পড়তে ফিরে তাকাল সে। পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন লুই মরগান।

বোরামের সঙ্গে কথা বললে দেখলাম, জিজ্ঞেস করলেন তিনি, তোমাদের কেসে সে-ও জড়িয়েছে নাকি?

জড়াতেও পারে, অনিশ্চিত শোনাল কিশোরের কণ্ঠ। ডাকাতির আগের মুহূর্তেও ম্যাড ডিকসনের স্টলের সামনে ছিলেন তিনি। কিন্তু এখন অস্বীকার করছেন। অ্যালিবাই রয়েছে বলছেন। সেটাই তদন্ত করে দেখতে হবে আমাদের।

আর কার কার ব্যাপারে তদন্ত করবে?

এডগার ডুফার। আইজাক হারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলে এসেছি।

আগ্রহ ফুটল মরগানের চোখে। তারও কি অ্যালিবাই আছে নাকি?

বলল তো সেরকমই। আর্টিস্ট সেকশনে নাকি জিনিসপত্র বিক্রি করে বেড়াচ্ছিল। আমার তো বিশ্বাস, নয়শো অটোগ্রাফ শিকারি তার পক্ষে রায় দেবে।

আমার মনে হয় না, ভুরু কুঁচকে মাথা নাড়লেন মরগান। ঢোকার মুখে তোমাদের সঙ্গে যখন দেখা হলো, তখন কিন্তু আমি আটিস্ট এরিয়ার ভেতর দিয়েই এসেছি। একটা লোককেও তখন দেখিনি হুফারের টেবিলের সামনে। কারণ, হুফার তখন টেবিলেই ছিল না।

<

Super User