আজ রাতেই আলিবাইগুলো সব যাচাই করে দেখতে হবে, বলল কিশোর। ব্যাংকোয়েট রুমে ঢুকেছে দুই সহকারীকে নিয়ে। ডাকাতির সময় ম্যাড ডিকসনের স্টলের কাছাকাছি ছিল এরকম কয়েকজনের সঙ্গেও কথা বলব। টাইটা সমান করতে লাগল সে। অস্বস্থি ফুটেছে চোখে।

ভুরু কুঁচকে ফেলল মূসা। কাণ্ডটা কি হলো! এমন করছ কেন? সেই সোনালি চুল মেয়েটাই মাথা গরম করেছে তোমার। এরকম অবস্থা তো দেখিনি! রহস্য রেখে সুন্দরী মেয়ের দিকে ঝুঁকেছে আমাদের কিশোর পাশা! অবিশ্বাস্য!

ফালতু কথা রাখো তো! ঝাঁঝাল কণ্ঠে বলল কিশোর। গাল লাল হয়ে যাচ্ছে। এদিক ওদিক ঘুরছে চোখ, নিশ্চয় মিরিনা জরডানকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে।

দেখা গেল মেয়েটাকে। স্টেলারা স্টারগার্লের অনুকরণে আরেকটা পোশাক পরেছে। এটা আগেরটার চেয়ে অনেক সহনীয়। উঁচু কলারওয়ালা আলখেল্লা। সোনালি চুলগুলোকে সোজা করে আঁচড়ে নিয়ে ঠিক চাঁদিতে বসিয়েছে একটা মুকুট। সোনালি রঙের সিঙ্কের কাপড়ে তৈরি হয়েছে পরনের স্কার্টটা। হাঁটতে গেলেই আলখেল্লা আর স্কার্টের ঝুলের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে পড়ে সুন্দর লম্বা পা। এই পোশাকে তাকে আগের চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় লাগছে।

মিরিনার মা কয়েকজন কমিক ভক্তের সঙ্গে গভীর আলোচনায় ডুবে না যাওয়াতক অপেক্ষা করল কিশোর, তারপর এগিয়ে গেল মিরিনার দিকে, কথা বলার জন্যে।

পরিচয় দিল কিশোর।

ও, তুমি ওদেরই একজন, মিরিনা বলল, চোরাই কমিক খুঁজছে। বড় বড় চোখ জ্বলজ্বল করছে আগ্রহে। কনভেনশন ফ্লোরের সবাই তোমাদের কথা বলাবলি করছে। তোমার বন্ধু সুইমিং পুলে পড়ার পর থেকে।

তাই! ঢোক গিলল কিশোর। কিভাবে শুরু করবে ভাবছে। সোজাসুজি বলাই ভাল, তাই বলল, ডাকাতির সময় তুমি ঘটনাস্থলেই ছিলে।

অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল মিরিনা।

ম্যাড ডিকসনের স্টলের কাছে, আবার বলল কিশোর। আমি…ওখানে তোমাকে আমি নিজের চোখে দেখেছি।

হাসল মিরিনা। শুধু তুমি নও, অনেকেই আমাকে দেখেছে ওখানে। তাকিয়ে ছিল। এই সম্মেলনে ঢোকার সাহসটা যে কিভাবে করলাম, ভাবলে আমারই অবাক লাগে।

খুব সুন্দর লাগছিল কিন্তু তোমাকে।

এভাবেই কথা বলো নাকি তুমি? আড়চোখে কিশোরের দিকে তাকাল মিরিনা। এত সোজাসাপ্টা?

ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে লাভটা কি? বলল বটে কিশোর, কিন্তু মনে মনে স্বীকার করতে বাধ্য হলো, এভাবে বললে লোকে যেমন খুশি হয়, রেগেও যায়। প্রশংসা করছে বলে রাগছে না মেয়েটা, কিন্তু যদি সমালোচনা করত? সত্যি হলেও রেগে আগুন হয়ে যেত। বহুবার নিজেকে বুঝিয়েছে কিশোর, এভাবে আর বলবে না। কিছু বলার সময় ঠিক রাখতে পারে না। স্বভাব মাফিক সরাসরিই বলে ফেলে সব কথা। মিথ্যে করে বলল, তোমার মত একজন বিশিষ্ট চরিত্রের সঙ্গে এই প্রথম কথা বলছি।

বিশিষ্ট চরিত্র কথাটা কিভাবে নিল মিরিনা বোঝা গেল না। কারণ হাসতে দেরি করল সে। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে কিশোর ব্যাঙ্গ করল কি-না। হাসিটা ছড়িয়ে পড়ল সারা মুখে। ডাকাতটার কথা জিজ্ঞেস করবে তো? না, ভাই আমি ওকে দেখিনি।

অন্য কিছু তো দেখেছ? অস্বাভাবিক কিছু? পরিবেশের সঙ্গে মেলে না এমন?

শ্রাগ করল মিরিনা। নাহ, ওরকম কিছু দেখেছি বলেও মনে পড়ে না। আসলে, ভয়েই অস্থির হয়ে ছিলাম তখন। ওই যে, প্রথম স্টেজে উঠতে গেলে কিংবা বক্তৃতা দিতে গেলে এক ধরনের ভয় ভয় লাগে না। আসলে, ভয় না বলে অস্বস্তি বলাই উচিত। বুঝতেই পারছ, জীবনে প্রথম এতবড় সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছি।

ভাবছে মেয়েটা। কপালে হালকা ভাঁজ পড়েছে। হঠাৎ হাত তুলল, দাঁড়াও দাঁড়াও, মনে পড়েছে। ম্যাড ডিকসনের স্টলটার দিকে তাকিয়েছিলাম বটে, নামটা আজব বলেই চোখ আটকে গিয়েছিল। কালো এলোমেলো চুলওয়ালা এক লোক দাঁড়িয়েছিল টেবিলের ওপাশে… কিশোরের দিকে তাকাল সে, তুমি কথা বলছিলে তার সাথে! আবার কি যেন ভাবল মেয়েটা। তোমার পাশে ছিল লম্বা একটা নিগ্রো ছেলে, আর একটা আমেরিকান ছেলে, চুলের রঙ…।

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল কিশোর। মুসা আর রবিনের কথা বলছে। এসব শুনতে চায়নি সে। আর কিছু দেখনি? অস্বাভাবিক কিছু?

মাথা নাড়ল মিরিনা। নাহ। পোশাক প্রতিযোগিতায় যোগ দিতে চলেছি তখন, সেদিকেই খেয়াল ছিল, আর কোনদিকে নয়। পাশ দিয়ে ছুটে চলে গেল লাল আলখেল্লা পরা লোকটা, তার গায়ের বাতাস এসে লাগল। কমিকের চরিত্রের মতই উড়ছিল আলখেল্লার ঝুল। তবে স্নাইম ম্যান বলা যাবে না তাকে কোনমতেই। বিচ্ছিরি লেগেছে আমার, তার ওভাবে গা ঘেঁষে যাওয়াটা। নাক কুঁচকাল মিরিনা।

ওর কোন কিছু চোখে পড়ার মত ছিল? মানে, খটকা লাগে ওরকম কিছু?।

কি আর লাগবে? ওর পোশাকটাই তো অদ্ভুত, অবশ্য এই কনভেনশন রুমের বাইরে। এখানে কোন কিছুই অস্বাভাবকি নয়। নানা রকম বিচিত্র পোশাক পরে এসেছে মানুষ প্রতিযোগিতার জন্যে। ও-ও পরেছে। লাল আলখেল্লা। তাড়াহুড়া ছিল অনেক।

ভাব না ভাল করে। ছবিটা মনে গেঁথে নাও। কি কি করছিল মনে করার চেষ্টা কর।

চোখ বন্ধ করল মিরিনা। আলখেল্লার ভেতরে হাত ঢুকিয়েছিল। কি যেন বের করেছিল।

হতে পারে, মিরিনাকে মনে করায় সাহায্য করতে চাইল কিশোর, স্মােক বম্ব বের করছিল লোকটা। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে গোয়েন্দাপ্রধান, মেয়েটার মুখের দিকে। আলখেল্লার নিচে কি পরেছিল মনে আছে? দেখেছ?

না, মাথা নাড়ল মিরিনা। আসলে ওভাবে খেয়ালই করিনি। আমি তখন আমার চিন্তায়। কে কি করছে এত দেখার সময় ছিল নাকি। তাছাড়া কি করে জানব লোকটা বোমা বের করছে?

তা-ও তো বটে, ভাবল কিশোর। বলল, বোমা ফাটার পর অনেক চিৎকার চেঁচামেচি হয়েছে। এটাও কি খেয়াল করোনি?

সেটা তো করতেই হয়েছে। এত চিৎকার করলে কি আর কানে না ঢুকে যায়। তবে একবারই তাকিয়েছি। দেরি হওয়ার ভয়ে থাকতে পারিনি, তাড়াহুড়া করে চলে গেছি। ও, লাল আলখেল্লা পরা লোকটাকে ছুটে যেতে দেখেছি।

সামনে ঝুঁকল কিশোর। আরেকবার তোমার গা ঘেঁষে গেল?

না, দ্বিতীয়বার আর গা ঘেঁষে নয়। মনে হলো, লাল একটা ঝিলিক দেখলাম। ছুটে যাচ্ছে দরজার দিকে, বেরিয়ে যাওয়ার জন্যে।

তুমি কোন দিকে যাচ্ছিলে?

কেন, দেখোনি? আর্টিস্টরা সব যেখানে বসে ছিল সেদিকে। ঘরের একধারে, ঢোকার দরজা থেকে দূরে। ওখানেই তো প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দরজার দিকেই যাচ্ছিল, তুমি শিওর?

আবার শ্রাগ করল মিরিনা। শিওর হওয়ার কোন উপায় ছিল না। ধোঁয়া দেখলাম, লাল রঙের ঝিলিক দেখলাম, এর পর আর দেখিনি লোকটাকে।

প্রবেশ পথের কাছে কেউই তাকে দেখেনি, কিশোর বলল। ওরকম লাল আলখেল্লা পরা একজন লোককে দেখেও মনে থাকবে না কারও, এটা হতে পারে। মিরিনার দিকে তাকাল সে। আরও কিছু জিজ্ঞেস করার কথা ভাবছে। কিন্তু আর কোন প্রশ্ন এল না মাথায়। আপাতত আর কিছু মনে পড়ছে না। আমার প্রশ্ন শেষ।

এবার যেতে পারি? হেসে জিজ্ঞেস করল মিরিনা। যেন গোয়েন্দার সঙ্গে কথা বলতে পেরে খুশিই হয়েছে।

নিশ্চয়ই। বলল কিশোর। মেয়েটা যেন কথা বলার জন্যে মুখিয়েই আছে। খটকা লাগল তার।

তোমার ওই যে আমেরিকান বন্ধুটি, অবশেষে বলেই ফেলল মেয়েটা, যেন এটা জিজ্ঞেস করার জন্যেই কিশোরের এত প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। ও কি সোনালি চুল পছন্দ করে?

ও, এই ব্যাপার! দীর্ঘ একটা মুহূর্ত নীরবে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে রইল কিশোর। তারপর হাসল। কিছু বলতে যাবে এই সময় ডাক শোনা গেল, মিরিনা, অ্যাই মিরিনা!

ওই যে, তোমার আম্মা ডাকছেন, কিশোর বলল। পকেট থেকে তিন গোয়েন্দার একটা কার্ড বের করে চট করে গুঁজে দিল মিরিনার হাতে। আশা করি আবার দেখা হবে। পকেটে রেখে দাও। প্রয়োজন হতে পারে আমাদেরকে।

হাসল মিরিনা। হয়তো।

আলাদা হয়ে দুজনে দুদিকে এগোল ভিড়ের মধ্যে দিয়ে। কয়েক মিনিট পরেই এসে রবিন খামচে ধরল কিশোরের হাত। বলল, এডগার ডুফারকে পেয়েছি।

কি বলল?

বোরাম যা বলেছে। দুজনে নাকি গোল্ড রুমের বাইরে তর্ক করছিল।

কি নিয়ে? জানতে চাইল কিশোর।

ক্রিমসন ফ্যান্টমের লেটেস্ট বই নিয়ে। নতুন আর্টিস্ট জোগাড় করেছে বোরাম।

ডুফার বলল, ওই আর্টিস্ট কোন কাজেরই না। ছায়া তৈরি করতে পারবে না।

ছায়া?

ক্রিমসন ফ্যান্টমকে সৃষ্টি করে সেটাকে ফোটানর জন্যে নানা রকম বিচিত্র আলোআঁধারি তৈরি করেছিল হুফার। এই যেমন, চরিত্রটার মাথায় কালো ছায়া। এমনিতেই মড়ার খুলির মত মুখোশ পরানো ওটার, তার ওপর ওই ছায়া একটা দুর্দান্ত আবহ তৈরি করে দিল। নতুন আটিস্টরা ওগুলো সব বাদ দিয়ে দিয়েছে। ডুফার বলছে, চরিত্রটার কোন কিছুই রাখেনি ওরা। সব কিছু উড়িয়ে-ফুড়িয়ে একেবারে জলো করে দিয়েছে।

ইনটারেসটিং, কিশোর বলল। চোরের মুখোশটার কথা মনে আছে? মড়ার খুলির মত। তার ওপর হালকা কালো রঙ, যেন ছায়াই তৈরি করা হয়েছে। আশা করি ডুফার সেকথা স্বীকার করবে।

স্বীকার করবে মানে?

ফ্যান্টমের মাথায় কালো ছায়া যাদের পছন্দ, তাদেরই কেউ নিশ্চয় ওরকম মুখোশ পরবে, কিশোর বলল। আরেকটা ব্যাপার, আলখেল্লা অনেক কিছু ঢেকে দেয়। ছদ্মবেশীদের জন্যে এটা এক মহা প্রয়োজনীয় পোশাক। ভেতরে কে আছে, বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে। পেটে চাপড় দিল কিশোর। খিদে পেয়েছে। চলো, মুসাকে খুজে বের করি।

সীটের ব্যবস্থা হয়েই আছে, জানাল রবিন। ডুফার আমাদেরকে তার টেবিলে খাওয়ার দাওয়াত করেছে।

তাই নাকি? তাহলে তো খুবই ভাল। মুসা গেল কোথায়? ভিড়ের দিকে তাকাতে লাগল কিশোর। চোখে পড়ল নীল বোরামকে। আইজাক হুফারের বুকে হাত ঠেকিয়ে বললেন, তোমার মুখটা বড় বেশি পাজি, হুফার। আমার নামে যা-তা বলে বেড়াচ্ছ। কানে এসেছে আমার।

পাজি! তুমি আমাকে পাজি বলে গাল দিলে! রেগে আগুন হয়ে গেল বদমেজাজী আর্টিস্ট। দাঁড়াও, আমিও ছাড়ব না। বক্তৃতা যখন দেব, তখন বুঝবে।

ঘোড়ার ডিম করবে! জোরে এক ধাক্কা মারলেন হুফারকে বোরাম। ঘুসি মারার জন্যে হাত তুললেন।

ভিড়ের ওপর পড়ল হুফার। সামলে নিয়ে সোজা হলো। সে-ও ঘুসি তুলল।

ঘুসি চালালেন বোরাম। লাগাতে পারলেন না। রেঞ্জের বাইরে রয়েছে হুফার। হুফারও ঘুসি চালাল। সে-ও লাগাতে পারল না। বোঝা গেল, মারামারি করতে জানে না দুজনের একজনও।

দুজনের মাঝখানে এসে দাঁড়াল একজন লোক।

ঘরের দরজায় পাহারারত সেই ষাঁড়ের মত সিকিউরিটি গার্ড। হুফারের কাঁধ চেপে ধরে টেনে সরাতে গেল তাকে, এই সময় আবার ঘুসি মেরে বসলেন বোরাম।

হুফারের চোয়ালে লাগল। রেগে গাল দিয়ে উঠল হুফার। কিন্তু গার্ড ধরে রেখেছে বলে কিছু করতে পারল না। একপাশ থেকে এসে বোরামকে ধরে ফেললেন মরগান।

বোরামের দিকে তাকিয়ে দাঁত খিচাচ্ছে আর গালাগাল করছে হুফার। টেনেটুনে দুজনকেই মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হলো। বসিয়ে দেয়া হলো সীটে। একজনের কাছ থেকে আরেকজনকে বহুদুরে, এমাথায় আর ওমাথায়। সম্মেলনে যোগ দিতে আসা অন্য সদস্যরাও বসে পড়তে লাগল চেয়ারে।

মুসাকে খুঁজে পেল রবিন আর কিশোর। কিশোর জিজ্ঞেস করল মুসাকে, হুফারের সম্পর্কে কি জানলে?

ডাকাতির সময় আর্টিস্টদের কোন টেবিলের কাছেই তাকে দেখা যায়নি, মুসা বলল।

সব কিছুই কেমন যেন গোলমাল হয়ে যাচ্ছে! মেলাতে পারছি না! পোশাক প্রতিযোগিতায় এরকমই হয় নাকি?

হাত ওল্টাল মুসা। কয়েকজন আর্টিস্টের সঙ্গে কথা বলেছি আমি। ওরা জানিয়েছে, ওখানে তখন ছিল না হুফার।

তাহলে হুফারকেও কিছু প্রশ্ন করা দরকার আমাদের, পরামর্শ দিল রবিন।

আগে খেয়ে নিই, চলো, কিশোর বলল।

চলো।

টেবিলে বসে গেছে ডুফার। তিন গোয়েন্দাকে দেখে হাত নেড়ে ডাকল। খাবারের চেহারা দেখেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেল কিশোরের। সালাদটা তো সহ্য করা যায়, কিন্তু মুরগীর যা চেহারা-নিশ্চয় সেদ্ধ হয়নি ঠিকমত, রবার হয়ে আছে। আলুগুলোও পোড়া।

রবিনের কানে কানে বলল মুসা, কিছু বলো না। পয়সা তো আর দিতে হবে আমাদের। মুফতে পেয়েছি। যা পেলাম খেয়ে নেয়া ভাল।

খাওয়ার পরে হুফারের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা করেছিল তিন গোয়েন্দা, সেটা সম্ভব হলো না। দেখা গেল, ডিনার শেষের বক্তা হিসেবে তাকেই বেছে নেয়া হয়েছে।

উঠে দাঁড়াল হুফার। আমাকে কিছু বলতে বলা হয়েছে, সে জন্যে প্রথমেই মিস্টার মরগানকে ধন্যবাদ দিয়ে নিচ্ছি। হাসল সে। ক্যালিফোর্নিয়ায় আসার পর এই প্রথম আমাকে এতটা গুরুত্ব দিল কেউ।

তার উদ্দেশ্যে মৃদু হাসল শ্রোতারা।

আমি জানি, কিছু লোকের ধারণা, আমি এখানে এসে কমিক তৈরি একেবারে ছেড়ে দিয়েছি। মাথা নাড়ল হুফার। ভুল। তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। নতুন একটা হিরো তৈরির কাজে হাত দিয়েছি আমি। খুব তাড়াতাড়িই সেটাকে দেখতে পাবেন আপনারা।

কেউ হাততালি দিয়ে, কেউবা কথা বলে তার এই কাজকে স্বাগত জানাল।

কার হয়ে কাজ করছেন আপনি? জিজ্ঞেস করল একজন।

সেদিক ঘুরল হুফার। আমি আমার নিজের হয়ে ছাড়া আর কারও জন্যে কাজ করি না। অন্তত এখন। এবার আমার কমিক আমি নিজেই পাবলিশ করব। এতে অনেক ঝামেলা হয় বটে, কিন্তু মানসিক যন্ত্রণার হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। আর, নীল বোরামের দিকে তাকাল সে। হাতছাড়া হওয়ার ভয়ও থাকে অনেক কম। ঠকিয়ে নেয়ার কেউ থাকে না তো।

জ্বলন্ত চোখে আর্টিস্টের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সম্পাদক। তার চকচকে টাকের চামড়া লালচে হয়ে উঠেছে।

নিজে পাবলিশ করার সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে লাগল হুফার। বক্তৃতা শেষে উৎসাহী অনেক ভক্ত তুমুল করতালি আর চিৎকার-চেঁচামেচি করে আনন্দ প্রকাশ করল। জানাল, তার নতুন হিরোর আশায় উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করবে তারা।

তিন গোয়েন্দার সঙ্গে এক টেবিলে বসে মাথা দোলাল ডুফার। হুফার নতুন কমিক তৈরি করছে একথাটা আমার কানেও এসেছিল। যাক, সত্যিই করছে তাহলে। খুশি লাগছে। চিন্তিত ভঙ্গিতে দাড়িতে আঙুল চালাতে লাগল সে। ভাবছি, পাবলিশ করার টাকা পেল কোথায়?

আমার বিশ্বাস, কিশোর বলল। সেজন্যেই এখানে এসেছে সে। টাকা। জোগাড়ের জন্যে।

অনেক টাকা দরকার। পাবলিশিং মুখের কথা নয়।

আইজাক হুফারের ব্যাপারে আরেকটা প্রশ্ন জমা হলো! বিড়বিড় করল রবিন।

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। ডাকাতির সময়কার কোন অ্যালিবাই নেই হুফারের। এখন মনে হচ্ছে, ডাকাতি করার একটা উদ্দেশ্য থাকলেও থাকতে পারে তার। মোটিভ? তা মোটিভটা হলো, টাকা।

মুসার দিকে তাকাল কিশোর। হাই তুলছে গোয়েন্দা সহকারী। কেমন লাগছে তোমার, বুঝতে পারছি, কিশোর বলল। আপাতত হুফারের সঙ্গে কথা বলা বাদ দিয়ে ঘুমোতে যাই চলো।

তা-ই চলো, রবিন বলল।

মুসা তো রাজি হয়েই আছে। আমিও চলে যাব এখুনি, ডুফার বলল।

তাকে গুড নাইট জানিয়ে রওনা হয়ে গেল তিন গোয়েন্দা।

পথে একটা টেবিলে আবার দেখা হলো মিরিনার সঙ্গে। সাথে তার মা রয়েছেন এবং বরাবরকার মতই টেবিলের অন্যান্য লোকদের সঙ্গে গভীর আলোচনায় মগ্ন হয়ে আছেন।

ওদের দিকে তাকিয়ে হাসল মিরিনা।

কিশোরের মনে হলো, হাসিটা বোধহয় রবিনের উদ্দেশেই। মনে মনে হাসল সে। রবিনকে বড় বেশি পছন্দ করে মেয়েরা।

তবে সেকথা মুহূর্তে ভুলে গেল কিশোর। তার মন জুড়ে রয়েছে কেসটার নানা প্রশ্ন, নানা রকম সমস্যা। বিছানায় শুয়েও ভাবতেই থাকল সে। ঘুম আসছে না। একটু পরেই কানে এল দুই সহকারীর নাক ডাকার শব্দ।

হোটেলের অন্ধকার ঘরে শুয়ে শুয়ে নানা কথা ভাবছে কিশোর। একসময় মনের পর্দায় ভেসে উঠল মিরিনা জরডানের মুখ। মনে হতে লাগল, মেয়েটা মেয়েটা সত্যিই এসবে জড়িত নেই তো? থাকতেও পারে…

ভাবনায় ছেদ পড়ল তার। খুট করে একটা শব্দ হলো দরজায়। লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসল কিশোর।

কে যেন দরজা খুলে ঢোকার চেষ্টা করছে!

<

Super User