ঘুমিয়ে পড়েছিলো, টেলিফোনের শব্দে জেগে গেল কিশোর। ফোন এসেছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার থেকে। চীফ মারকাস। কে, কিশোর পাশা? এখুনি চলে এসো। তোমাদের পাইলট ল্যারি কংকলিনকে পাওয়া গেছে।

তাই! কোথায়?

এখানেই বসে আছে।

আসছি।

মুসা আর রবিনকেও খবরটা জানালো কিশোর। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে নিতে বললো। মুসা মন্তব্য করলো, বাহ্, দারুণ পুলিশ ফোর্স তো! সাংঘাতিক দক্ষ!

নিচে নেমে একটা ট্যাক্সি ডেকে উঠে পড়লো তিনজনে। থানায় চললো।

ল্যারি! পাইলটকে দেখে আনন্দে প্রায় চিৎকার করে উঠলো মুসা।

আন্তরিক হ্যান্ডশেক চললো। তিন গোয়েন্দার সঙ্গে হাত মেলালো ল্যারি। সমস্ত ঘটনাটা শুনতে চাইলো কিশোর।

বিধ্বস্ত লাগছে লম্বা, একহারা লোকটাকে। মুখে চওড়া হাসি। বললো, লোকটা যে কোনদিক দিয়ে উঠলো, দেখিইনি। ঘাড়ের ওপর পিস্তল ঠেসে ধরে বললো, টু শব্দ না করে প্লেন চালাতে। কি আর করবো। অনুমতি নিলাম। তারপর উড়লাম। তবে আমি শিওর ছিলাম, আমাকে খুঁজে বের করবেই তোমরা। কিছুতেই পিছু ছাড়বে না।

আজ সকালে রুমালটা দেখিয়ে একটা কাজের কাজ করেছিলেন, কিশোর বললো। নইলে কিছু বুঝতে পারতাম না।

হ্যাঁ, মাথা ঝাঁকালো ল্যারি। ওরা আমাকে হুমকি দিলো, পালানোর চেষ্টা করলে মরবো। মরতাম কিনা জানি না, তবে বেরোনোর কোনো সুযোগই পাইনি। তাই তোমাদেরকে হুঁশিয়ার করার পয়লা সুযোগ যেটা পেলাম, কাজে লাগালাম।

টেলিফোন বাজলো। তুলে নিয়ে কানে ঠেকালেন চীফ। কথা বলতে লাগলেন। কিশোরের কানের কাছে মুখ সরিয়ে এনে ফিসফিস করে ল্যারি বললো, লোকগুলো অ্যাজটেক যোদ্ধার জিনিসের পেছনে লেগেছে। আমার কাছ থেকে কথা আদায়ের চেষ্টা করেছে। আমি জানি কিনা জিজ্ঞেস করেছে। ওদের কথা থেকে বুঝলাম, জিনিসটা খুবই দামী।

কথা শেষ করে রিসিভার নামিয়ে রাখলেন চীফ। ল্যারি বলতে থাকলো, যে লোকটা আমাকে কিডন্যাপ করেছে, তার নাম বলতে পারবো না। শহরের বাইরে একটা বাতিল খামারের কাছে মাঠে নামার নির্দেশ দিলো। মুখোশ পরা আরও কয়েকজন লোক অপেক্ষা করছিলো ওখানে। প্লেন থেকে আমাকে নামিয়ে নিয়ে গিয়ে একটা গাড়িতে তুললো। শহরে নিয়ে এলো। একটা বাড়িতে ঢুকিয়ে প্রশ্ন শুরু করলো। ওদের অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হয়েছে আমাকে। তোমাদের কথাও জিজ্ঞেস করেছে। তোমরা মেকসিকোতে আসবে, একথা বলতে আমাকে বাধ্য করেছে ওরা।

তারপর বের করে নিয়ে গিয়ে আবার গাড়িতে তোলা হলো আমাকে। বোধহয় বাড়িতে একা ফেলে যেতে সাহস হচ্ছিলো না। যদি পালাই। এয়ারপোর্টে নিয়ে গেল। বসে রইলো তোমাদের আসার অপেক্ষায়। তোমরা এলে। তখন থেকেই তোমাদের পিছু নিয়েছে। তোমাদেরকেও ধরে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো। ভাবলাম, সেটা ঠেকাতে হবে। বেপরোয়া হয়ে গিয়েই রুমাল দেখিয়ে ইঙ্গিত করেছিলাম, যাতে হুশিয়ার হয়ে যাও।

খুব ভালো কাজ করেছিলেন, রবিন বললো। তা না করলে লোকটাকে সত্যি সত্যিই পুলিশ অফিসার ভাবতাম আমরা। আটকা পড়তাম।

ওই লোকটাও ওদের দলের একজন, ল্যারি বললো।

আমরা তো বেরিয়ে পালালাম। তারপর কি করলো? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

হলুদ গাড়িটা চলতে শুরু করলো। তোমাদের গাড়িটাকে কিছুদূর আসতে বাধ্য করলো নকল পুলিশ অফিসার। তারপর নেমে আবার আগের গাড়িতে উঠলো। আমাকে নিয়ে গেল ল্যানিলা মার্কেটে। ওখান থেকেই পুলিশ আমাকে উদ্ধার করেছে। ভাগ্যিস, গাড়ির নম্বরটা রাখতে পেরেছিলে।

লোকটাকে আবার দেখলে চিনতে পারবেন?

মনে হয় না। আমাকে বাড়িটাতে ঢোকানোর পর, অন্য ঘরে গিয়ে মুখোশ খুলে ছদ্মবেশ নিয়ে ছিলো সব কজন। এটা আমার ধারণা। তবে ওগুলো ওদের আসল চেহারা হলে চিনতে পারবো। একটু আগে চীফকে বললাম সেকথা।

ও। আচ্ছা, যে লোকটা আপনাকে কিডন্যাপ করলো, তাকে চিনেছেন?

না। ও একবারের জন্যেও মুখোশ খোলেনি। তবে তার কথায় বুঝলাম, মিস্টার রেডফোর্ডের বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেছিলো।

লোকটা বেঁটে, কালো চুল। চেহারা আমরাও দেখতে পারিনি। আপনি আর কিছু লক্ষ্য করেছেন?

করেছি। দাঁত। স্বাভাবিক নয়। তেড়াবেঁকা। একটার ওপর আরেকটা উঠে এসেছে।

এই কথাটা ধরলেন চীফ। দাঁতের রঙ কেমন, বলুন তো? লাল? আর সামনের দুটো দাত পোকায় খাওয়া? ফ্যাসফাস করে কথা বলে?

হ্যাঁ হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন! আপনি জানলেন কি করে?

মাথা দোলালেন মারকাস। বোধহয় চিনতে পেরেছি। ওর নাম গুডু টেরিয়াননা। একটা অপরাধী দলের নেতা। হেন কুকর্ম নেই যা ওরা করে না। জেল খেটেছে কয়েকবার। পুলিশের খাতায় নাম আছে। যে বাড়িটা থেকে আপনাকে উদ্ধার করা হয়েছে মিস্টার কংকলিন, ওটা ওদের বাড়ি নয়। এক বুড়ির। পুলিশ দেখেই বুড়ি ওদেরকে সাবধান করে দিয়েছে। আমার বিশ্বাস, পালানোরও সুযোগ করে দিয়েছে সে-ই। নইলে দুএকটাকে অন্তত ধরতে পারতামই। যাই হোক, বললেন যখন চোখকান সজাগ রাখবো। ধরা না পড়ে যাবে কোথায়।

ল্যারির কথামতো সেই মাঠে গিয়ে খোঁজ নিয়েছে পুলিশ। যেখানে নামিয়েছিলো, সেখানেই রয়েছে বিমানটা। সেটা নিয়ে আবার রকি বীচে ফিরে যাবে সে। ওড়ার জন্যে অনুমতি দরকার। ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্যে, চীফকে অনুরোধ করা হলো।

ঠিক আছে, বললেন চীফ। টেলিফোনের রিসিভার তুলে নিলেন।

আরেকবার ফিসফিস করে কিশোরকে বললো ল্যারি, তোমাদেরকে কোনো সাহায্য করতে পারলাম না, সরি।

যা করেছেন, অনেক করেছেন, কিশোর বললো। আপনার কিডন্যাপের ঘটনাটা না ঘটলে পুলিশ এতো আগ্রহ দেখাতো না। বিপদে পড়ে যেতাম আমরা।

পুলিশের গাড়িতে করে চলে গেল ল্যারি। তাকে বিমানটার কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। তিন গোয়েন্দা থানা থেকে বেরিয়ে এলো। আলোচনা করে ঠিক করলো, ইউনিভারসিটি অভ মেকসিকোতে যাবে। খোঁজখবর করবে ডা স্টেফানো নামে আরকিওলজির কোনো প্রফেসর আছেন কিনা। শহরের বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়টা। ট্যাক্সি নিলো ওরা।

পথে অনেকগুলো বাড়ি চোখে পড়লো। সুন্দর রঙ। কংক্রীটের ওপরেও লাল রঙ করা হয়েছে। চমৎকার লন আর বাগান। উজ্জ্বল রঙের ফুল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি গাড়ি পৌঁছলো। অবাক বিস্ময়ে প্রায় চিৎকার করে উঠলো মুসা, খাইছে! দেখ, দেখ, কি সুন্দর! হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে সে বাড়িটার একধারের মোজাইকের কাজ করা দেয়ালের দিকে। লাইব্রেরিটা রয়েছে ওখানটাতেই।

মোজাইকে আঁকা রয়েছে মস্ত এক দানবীয় মূর্তি। একজন ইনডিয়ানের। মেকসিকোর ইনডিয়ান আর স্প্যানিশ ইতিহাসের কিছুটা আন্দাজ করা যায় বাকি ছবিগুলো দেখলে।

অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিল্ডিঙের কাছে এসে ড্রাইভারকে থামতে বললো, কিশোর। নেমে ভেতরে ঢুকে একজনকে জিজ্ঞেস করলো আরকিওলজি ডিপার্টমেন্টটা কোথায়। ওই ডিপার্টমেন্টের আরেকজন প্রফেসর ডক্টর হ্যাসিয়ানোর কথা বলে তাকে বলা হলো তিনি হয়তো জানতে পারেন।

ভালো মানুষ প্রফেসর হ্যাসিয়ানো। বেশ আন্তরিক। তিনি বললেন, সিনর ডি স্টেফানোকে চেনেন। ছবি দেখে সনাক্ত করলেন। বললেন, অনেক দিন দেখা হয় না। বেশি ঘোরাঘুরি করার স্বভাব। এক জায়গায় বেশি দিন থাকে না। স্থায়ী কোনো ঠিকানাও নেই, অন্তত আমার জানা নেই।

তাকে খুঁজে বের করার উপায় আছে কিনা এই প্রশ্নের জবাবে প্রফেসর বললেন, পাওয়া খুব মুশকিল। বেশিরভাগ সময়ই কাটায় প্রাচীন ধ্বংসস্তূপগুলোতে। ইনটারেসটিং অনেক প্রাচীন নিদর্শন মাটি খুঁড়ে বের করেছে। তবে নিজে গিয়ে কখনও সরকারী লোকের কাছে কিংবা মিউজিয়ামকে দিয়ে আসেনি ওসব জিনিস, অন্য সব আরকিওলজিস্টরা যা করে। সব সময় অন্য লোকের হাতে পাঠায়।

কিশোর বললো, ডক্টর স্টেফানোকে তার খুব দরকার। জরুরী কাজে। হেসে বললো, কিন্তু আপনার কথা শুনে মনে হচ্ছে পাওয়াটা খুব কঠিন হবে।

তা হবে। কারণ মেকসিকোতে ধ্বংসস্তুপের অভাব নেই। তার অনেকগুলোই এখনও খোঁড়া হয়নি। কোনটাতে গিয়ে বসে আছে এখন ডক্টর কে জানে।

প্রফেসরকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে কিশোর বললো, ঠিক আছে, যাই। খুঁজে দেখিগে। ভাগ্য ভালো হলে পেয়ে যাবো।

ওদেরকে গুড লাক জানালেন হ্যাঁসিয়ানো। বললেন, স্টেফানোকে পেলে আমার কথা বলো। যেন দেখা করে। কয়েকটা ক্লাস নিতে বলবো। কিছু কিছু বিষয়ে আমার চেয়ে অনেক বেশি জ্ঞান তার।

বেরিয়ে এলো তিন গোয়েন্দা। ঘড়ি দেখলো কিশোর। আজ আর কোথাও যাওয়ার সময় নেই। কাল বেরোবো। সবচেয়ে কাছের ধ্বংসস্তূপটা হলো টিওটিহুয়াকান।

ওখানেই বন্ধুর ছবিটা তুলেছেন মিস্টার রেডফোর্ড, তাই না? মুসার প্রশ্ন। অ্যাজটেক যোদ্ধার পোশাক পরিয়ে?

হ্যাঁ।

ফেরার পথে বইয়ের দোকান থেকে একটা ম্যাপ আর একটা চার্ট কিনলো কিশোর। হোটেলে বসে বসে তিনজনে মিলে চার্ট দেখে বের করতে লাগলো, কোন কোন্ ধ্বংসস্তুপে গাড়িতে করে যাওয়া যায়। রেডফোর্ডের তোলা যে ছবিগুলোর প্রিন্ট করে নিয়েছে রবিন, সেগুলোও মন দিয়ে দেখতে লাগলো। যদি কিছু বের করতে পারে!

যেসব জায়গায় গাড়ি যায়, আগে সেখানে যাই, রবিন বললো। না পেলে তারপর অন্য জায়গায় যাওয়ার কথা ভাববো। কি বলো?

মাথা ঝাঁকালো কিশোর।

টিওটিহুয়াকানের ব্যাপারে বেশ আগ্রহ দেখালো মুসা। এসব পুরানো ধ্বংসস্তূপ দেখতে খুব ভালো লাগে তার। মানুষের প্রাচীন ইতিহাস জানার প্রচন্ড কৌতূহল। মাঝে মাঝে তো দুঃখই প্রকাশ করে ফেলে, প্রাগৈতিহাসিক পৃথিবীতে জন্মালো না বলে। তাঁর জানা আছে, টিওটিহুয়াকান হলো টোলটেকদের ধর্মমন্দির, যেটা পরে জোর করে দখল করে নেয় অ্যাজটেকরা।

একটা ছবির ওপর আঙুল রেখে বললো সে, এই পিরামিডগুলো খুব উঁচু।

হ্যাঁ, রবিন মাথা ঝাকালো। পিরামিড অভ দি সান।

সূর্যের পিরামিড, কিশোর বললো। অদ্ভুত নাম, না?

নাম যা-ই হোক, হাত নাড়লো মুসা। দয়া করে আমাকে অন্তত ওখানে চড়তে বলো না। পা পিছলালে গেছি। চূড়ায় গিয়ে বসে নেই তো সিনর স্টেফাননা?

কি জানি, হাসলো রবিন। থাকেই যদি, যাবে। আচ্ছা, পাহাড়-টাহাড় তো খুবই বাইতে পারো। ভয় লাগে না। তার মানে উচ্চতা নিয়ে কোনো ফোবিয়া নেই তোমার। পিরামিডে চড়ার ব্যাপারে এতো ভয় কেন?

সত্যি কথা বলবো? বলো।

পিরামিড হলোগে প্রাচীন রাজারাজড়াদের কবর। ওখানে ভূত থাকবেই…

একেবারে রাজকীয় ভূত, কিশোর বললো। হাহ্ হাহ্ হা!

না, ঠাট্টা করো না, সত্যি আছে…

ভালোই তো হবে তাহলে। কখনও তো সত্যিকারের ভূত দেখনি। এবারে দেখা হয়ে যাবে।

তারমানে আমাকে পিরামিডে চড়িয়েই ছাড়বে!

তুমি তো আর একা উঠবে না। প্রয়োজন হলে আমরাও তোমার সঙ্গে থাকবো।

গুম হয়ে গেল মুসা। বুঝতে পারলো, ওরা তার কথা শুনবে না।

পরদিন সোমবার। সকালে নাস্তা সেরেই বেরিয়ে পড়লো তিন গোয়েন্দা। হোটেলের কাছেই একটা রেন্ট-আ-কার সার্ভিস রয়েছে। সেখান থেকে একটা ট্যাক্সি ভাড়া করলো। একটা কনভারটিবল গাড়ি। টিওটিহুয়াকানে চললো।

দুপুরের দিকে একটা রেস্টুরেন্ট দেখে নাম পড়লো মুসা, গ্রোটো রেস্টুরেন্ট। হুঁ, খাবার-দাবার ভালোই হবে মনে হচ্ছে। চলো, ঢুকে পড়া যাক।

রেস্টুরেন্টটা কোনো বাড়ির মধ্যে নয়। পাহাড়ের একটা গুহার ভেতরে। একসময় প্রাচীন ইনডিয়ানদের একটা গোত্র বাস করতো এখানে।

গাড়ি সরিয়ে এনে রাস্তার পাশে পার্ক করলো কিশোর। তিনজনে মিলে ঢুকে পড়লো গুহার ভেতর। মুসার অনুমান ভূল হয়নি। খাবার সত্যিই চমৎকার। একবার খেয়ে আরেক প্রস্থ খাবারের অর্ডার দিলো মুসা। তাকে সাবধান করলো কিশোর, বুঝেশুনে খেও। অনেক ওপরে উঠতে হবে আমাদের। পেট বোঝাই থাকলে অসুবিধে হতে পারে।

সে দেখা যাবে, তাচ্ছিল্যের ভঙ্গিতে হাত নাড়লো মুসা।

অবশেষে পিরামিডের কাছে পৌঁছলো তিন গোয়েন্দা। মিশরীয় পিরামিডের মতো তিনটে দেয়াল নয় মেকসিকান পিরামিডের, দেয়ালগুলো সমানও নয়। চারটে দেয়াল, এবং ধাপে ধাপে সিঁড়ি উঠে গেছে ক্রমশ সরু হয়ে। যতোই ওপরে উঠেছে, চেপে এসেছে দুই পাশ, ফলে চূড়াটা হয়ে গেছে একেবারে চোখা। শত শত ধাপ সিঁড়ি। হাঁ করে তাকিয়ে রইলো ওরা। দর্শকের যেমন অভাব নেই, প্রত্নতাত্ত্বিকদেরও কমতি নেই। অসংখ্য জায়গায় খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। মুসার আশঙ্কা হতে লাগলো, এভাবে চলতে থাকলে কোনোদিন ধসিয়েই দেবে পিরামিডটা। তবে তার আশঙ্কা অমূলক। কোনো কিছু নষ্ট না করে কিভাবে খুঁড়তে হয় জানা আছে আরকিওলজিস্টদের।

কি সর্বনাশ! মুসার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে বললো রবিন। এসেছিলাম একটা ভূতুড়ে শহর দেখতে। কিন্তু এ-যে বাজার বানিয়ে ফেলেছে।

রবিনের কথায় কান নেই মুসার। তাকিয়ে রয়েছে চুড়ার দিকে। আরিব্বাপরে, কি উঁচু। সূর্যের পিরামিড নামটা ভুল রাখেনি। মনে হয় একেবারে সূর্য ছুঁতে চাইছে। ওখানে উঠতে হবে আমাকে?

ভয় পাচ্ছাে? জিজ্ঞেস করলো কিশোর।

ভূতের ভয় আর পাচ্ছি না এখন। এতো লোকের সামনে ভূত আসবে না। উচ্চতার ভয়ই পাচ্ছি। এতো উঁচুতে উঠতে গিয়ে মাথা ঘুরেই না পড়ে যাই!

পড়বে না, কিশোর বললো। যদি ইনডিয়ান কায়দায় ওঠো। ওরা কক্ষণাে সিড়ির দিকে মুখ করে উঠতো না। পাশ থেকে উঠতো। নামার সময়ও একই ভাবে নামতো।

ছাগল ছিলো আর কি, মুসা বললো। পাশ থেকে ওঠা তো আরও কঠিন।

হয়তো। কিন্তু তাতে পড়ার সম্ভাবনা নেই। সিড়িগুলো কি সরু দেখছো না?

তাহলে উঠবেই?

হ্যাঁ। সবাই ওঠো। ডা স্টেফানোকে পাই আর না পাই, এতোদূরে এসে পিরামিডে চড়ার সুযোগ ছাড়বো না।

এগিয়ে গিয়ে উঠতে শুরু করলো কিশোর। দেখাদেখি রবিনও গেল। সবার শেষে মুসা। কিছুদূর উঠে আর পাশ থেকে ওঠার কথা মনে রইলো না তার। কিংবা পরোয়া করলো না। সামনের দিকে মুখ করে উঠতে আরম্ভ করলো। বড় জোর পাঁচ কি সাতটা ধাপ পেরিয়েছে, তার পরই পা পিছলালো। সোজা থাকার অনেক চেষ্টা করলো। পারলো না কিছুতেই। পড়ে গেল। গড়াতে শুরু করলো শরীরটা।

সরাসরি উঠতে গিয়ে সবার আগে চলে গিয়েছিলো সে। পেছনে পড়েছিলো কিশোর আর রবিন। কারণ ওরা তাড়াহুড়ো করেনি। মুসার পতন ঠেকাতে চেষ্টা করলো ওরা। পারলো তো না-ই, ওরাও পড়ে গেল।

গড়াতে গড়াতে নিচে পড়তে লাগলো তিনটে শরীর।

চেঁচামেচি শুনে একবার ফিরে তাকিয়েই আবার যার যার কাজে মন দিলো যারা মাটি খুঁড়ছিলো। গুরুত্বই দিলো না। বোঝা যায়, এভাবে গড়িয়ে পড়াটা এখানে নতুন নয়। দেখে দেখে গা সওয়া হয়ে গেছে ওদের।

<

Super User