রোববার সকালে ইলশে গুঁড়িতে পরিণত হলো বৃষ্টি। হেরিয়ানার কাছ থেকে একটা সাইকেল আর একটা রেনকোট চেয়ে নিয়ে শহরে রওনা হলো পিনটু। হিসটোরিক্যাল সোসাইটির সামনে কিশোরের সাথে দেখা করলো দুপুরের দিকে।

রবিন গেছে লাইব্রেরিতে খুঁজতে, কিশোর জানালো। কাউন্টি ল্যাণ্ড অফিসে গেছে মুসা।

কনডর ক্যাসল খুঁজে বের করবোই আমরা! দৃঢ় কণ্ঠে বললো পিনটু।

হিসটোরিক্যাল সোসাইটিতে ঢুকলো ওরা। অনেকে বসে পড়ছে। আজ বেশ ব্যস্ত অ্যাসিসট্যান্ট হিসটোরিয়ান। ম্যাপের কথা বললো কিশোর। ম্যাপ রাখার ঘর আলাদা। সেদিকে দুজনকে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বললেন, আরেকজন এসে আলভারেজদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর করেছে। লম্বা, পাতলা।

শুঁটকি! হিসটোরিয়ানের কাছ থেকে সরে এসে নিচু গলায় পিনটুকে বললো কিশোর। আমরা কি করছি জানার চেষ্টা করছে।

ওর নিশ্চয় ভয়, তলোয়ারটা খুঁজে বের করে ফেলবে তোমরা।

আমারও তাই মনে হয়।

ম্যাপ-ঘরে আর লোক নেই। ১৮৪৬ সালের পঞ্চাশটা সাপ পাওয়া গেল। কোনো কোনোটা সমস্ত কাউন্টির, আর কোনোটা শুধু রকি বীচ এলাকার। কনডর ক্যাসল খুঁজে পেলো না ওরা।

এই যে আরেকটা, কিশোর বললো। এটা শুধু আলভারেজ র‍্যাঞ্চের।

আরিব্বাবা! কত্তোবড় ছিলো তখন দেখো!

কিন্তু ওটাতেও কনভর ক্যাসল খুঁজে পাওয়া গেল না।

ডন পিউটোর সময়কার আর কোনো ম্যাপ নেই! হতাশ কণ্ঠে বললো পিনটু।

নেই, তাতে কি? হাল ছাড়লো না কিশোর। ওই সময়কার না হোক, রকি বীচের যতো ম্যাপ পাবো, সব দেখবো।

১৮৪০-এর কয়েকটা পাওয়া গেল। ওগুলোতেও নেই কনডর ক্যাসল। আরও কিছু আধুনিক ম্যাপেও যখন পাওয়া গেল না, হাল না ছেড়ে আর উপায় থাকলো না ওদের। ফিরে চললো স্যালভিজ ইয়ার্ডের হেডকোয়ার্টারে।

দেখি, রবিন আর মুসা কিছু পায় কিনা, আশা করলো কিশোর।

দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেলারে ঢুকলো দুজনে। ভেতরটা দেখে অবাক হয়ে গেল পিনটু। বললো, দারুণ সাজিয়েছো তো!

জবাবে শুধু মৃদু হাসলো কিশোর।

রবিন আর মুসার অপেক্ষায় বসে রইলো ওরা। রবিন এলো প্রথমে।

নাহ, হলো না! ধপাস করে একটা চেয়ারে বসে পড়লো সে। কোথাও আর বাদ রাখিনি!

মুসা ঢুকলো কালো মুখটাকে আরও কালো করে। তার চেহারার দিকে একবার তাকিয়েই যা বোঝার বুঝে গেল সবাই। একটা টুলে বসতে বসতে বললো, কনডর ক্যাসলের যদি কোনো মানে সত্যিই থেকে থাকে, তাহলে সেটা জানে শুধু ডন পিউটো আর সানটিনো আলভারেজ!

তারমানে আর কিছুই করার নেই আমাদের, কিশোরের দিকে তাকিয়ে বললো রবিন। প্রায় কেঁদে ফেলবে যেন পিনটু। না না, ওরকম করে বলো না!

হঠাৎ পিঠ সোজা করে ফেললো মুসা। ঠোঁটে আঙুল রেখে চুপ করতে ইশারা করলো সবাইকে।

কান পাতলো সকলেই। দীর্ঘ একটা মুহূর্ত সব কিছু চুপচাপ। তারপর সবার কানেই এলো ক্ষীণ শব্দটা, বাইরে ধাতব কিছু নড়ছে। তারপর শব্দ শোনা গেল আরেক জায়গা থেকে। পরক্ষণেই হলো টোকা দেয়ার শব্দ।

ফিসফিসিয়ে রবিন বললো, কেউ কিছু খোঁজাখুঁজি করছে।

আচ্ছা, কিশোর বললো, তোমাদের পিছু নিয়ে আসেনি তো কেউ?

কি জানি, আমি অন্তত দেখিনি। মুসার দিকে তাকালো কিশোর।

আমি…ঠিক বলতে পারবো না, মুসা বললো চিন্তিত ভঙ্গিতে। তাড়াহুড়া করে এসেছি। পেছনে তাকানোর কথা মনেই হয়নি।

বাইরে জঞ্জালের মধ্যে কয়েক মিনিট ধরে চললে টোকা দেয়া আর খোঁচাখুচির শব্দ। তারপর নীরব হয়ে গেল।

দেখতো, রবিন, ফিসফিস করে বললো কিশোর।

আস্তে করে উঠে গিয়ে ট্রেলারের ছাতে লাগানো পেরিস্কোপ সর্ব-দর্শনে চোখ রাখলো রবিন। এই, ম্যানেজার, ডরি! বেরিয়ে যাচ্ছে!

লোকটা চলে যাওয়ার পর সর্ব-দর্শন থেকে চোখ ফিরিয়ে তাকালো রবিন। নিশ্চয় ফলো করেছিলো। কাকে করলো বুঝলাম না। ও-ই হয়তো কাল গিয়ে আড়ি পেতে ছিলো কটেজের জানালায়।

বোধহয়, নিচের ঠোঁটে চিমটি কাটলো কিশোর। আমাদের ওপর বড় বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে টেরি আর ডরি। র‍্যাঞ্চ দখলের জন্যেই, না কোনো মতলব আছে? আর এখানেই বা কেন এসেছিলো?

হয়তো কোনোভাবে জেনে ফেলেছে তলোয়ারটার কথা! পিনটু বললো উত্তেজিত কণ্ঠে।

তা হতে পারে।

আমাদের চেয়ে বেশি জানলেই মুশকিল, বললো মুসা।

গভীর হয়ে মাথা ঝাঁকালো কিশোর। হ্যাঁ। এখন যে-করেই হোক একটা ম্যাপ খুঁজে পেতে হবে আমাদের, যেটাতে কনডর ক্যাসল রয়েছে।

একটা ইনডিয়ান ম্যাপ দেখলে কেমন হয়? কিছুটা রসিকতা করেই বললো মুসা। আমরা তো পড়তে পারবো না, কোনো ইনডিয়ানই পড়ে দেবে।

দূর! বিরক্ত হয়ে হাত নাড়লো রবিন। এখন ওসক…

মুসাআ! চিৎকার করে উঠলো কিশোর। ঠিক বলেছো!

ঠিক বলেছি! নিশ্চয়! এটাই জবাব! আমি একটা গাধা!

জবাবটা কি? দ্বিধায় পড়ে গেছে মূসা।

একটা সত্যিকারের পুরানো ম্যাপ! ডন পিউটো জানতেন, সব ম্যাপেই পাওয়া যায় এমন নাম লিখলে আমেরিকানরা সেটা বের করে ফেলবে। তাই এমন কিছু কথা বলেছেন, যেটা শুধু স্যানটিনোই বুঝতে পারে। ওঠো, জলদি চলো! হিসটোরিয়ান সোসাইটিতে!

দুই সুড়ঙ্গের পাইপের ভেতর দিয়ে যতো দ্রুত সত্য বেরিয়ে এলো ওরা। দৌড় দিলো সাইকেলের দিকে।

পেছন থেকে ডাক দিলেন মেরিচাচী, কিশোওর!

থমকে দাঁড়ালো কিশোর। ফিরে তাকালো। অফিসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছেন মেরিচাচী। বললেন, যাচ্ছিস কোথায়? আমার চাচার জন্মদিন আজ ভুলে গেছিস নাকি? জলদি রেডি হ। পনেরো মিনিটের মধ্যেই বেরোবো।

গুঙিয়ে উঠলো কিশোর। আ-আমি না গেলে হয় না, চাচী?

বলিস কি? তোকে এতো করে যেতে বললো, আর তুই যাবি না? না গেলে খুব দুঃখ পাবে তোর নানা। চল।

রবিন, মুসা আর পিনটুকে চলে যেতে বললো কিশোর। তারপর এগোলো ঘরের দিকে।

কি করবো এখন? মুসা জিজ্ঞেস করলো।

আবার কি? হিসটোরিক্যাল সোসাইটিতে যাবো, নেতৃত্ব নিয়ে ফেললো রবিন। কোন্ ধরনের ম্যাপে খুঁজতে হবে বুঝে গেছি আমি। চল।

রবিন কি চায় শুনলেন অ্যাসিসট্যান্ট হিসটোরিয়ান। তারপর বললেন, ওরকম একটা ম্যাপ আছে, আমাদের রেয়ার কালেকশন। অনেক পুরানো, সতেরোশো নব্বই সালের। এতো নরম হয়ে গেছে বের করে আলোতে আনাই রিস্কি।

প্লীজ, স্যার, অনুরোধ করলো রবিন। একবার অন্তত দেখান।

দ্বিধা করলেন হিসটোরিয়ান। মাথা ঝাঁকালেন। পেছনের ঘরের একটা দরজার দিকে নিয়ে চললেন ওদেরকে। ঘরটায় কোনো জানালা নেই, আর এমনভাবে তৈরি যাতে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা সবসময় একরকম থাকে। কাচের বাক্সে কিংবা কাচের দরজা লাগানো শেলফের মধ্যে রয়েছে সমস্ত পুরানো দলিলপত্র। একটা ফাইল দেখলেন হিসটোরিয়ান, তারপর একটা ডয়ার খুলে বের করে আনলেন লম্বা একটা কাচের বাক্স। ভেতরে একটা ম্যাপ। মোটা, হলদে কাগজে বাদামী রঙে আঁকা।

বের করা যাবে না, হিসটোরিয়ান বললেন। কাঁচের ওপর দিয়েই দেখো।

ম্যাপটার ওপর ঝুকে দাঁড়ালো গোয়েন্দারা।

ওই তো! বিশ্বাস করতে পারছে না পিনটু। স্প্যানিশে লেখা, কনডর ক্যাসল!

এটা! কাচের বাক্সের ওপর পিনটুর আঙুলের পাশে আঙুল রাখলো রবিন।

হ্যাঁ! একেবারে আলভারেজ ব্যাঙ্কের মধ্যেই! আঁকাবাকা রেখাগুলো দিয়ে বোধহয় সান্তা ইনেজ কীককে বোঝানো হয়েছে।

হঠাৎ করে চুটকি বাজালো মুসা। তাহলে দাঁড়িয়ে আছি কেন এখনও?

বিস্মিত হিসটোরিয়ানকে ধন্যবাদ জানিয়েই দরজার দিকে দৌড় দিলো ছেলেরা।

<

Super User