গোলাঘর থেকে ছুটে বেরোলো তিন গোয়েন্দা। হালকা ধোঁয়ার গন্ধ নাকে ঢুকলো। চত্বরে দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছে আর চিৎকার করছে দুজন লোক। রিগো! পিনটু! আগুন! ওই যে! বাঁধের কাছে।

ফ্যাকাসে হয়ে গেছে রিগোর মুখ। কোরালে দাঁড়িয়েই দেখতে পেলো সবাই, উত্তরের শুকনো বাদামী পর্বতের ভেতর থেকে মেঘলা আকাশের দিকে উঠে যাচ্ছে ধোঁয়া। বিপদটা বুঝতে দেরি হলো না কারোই। দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার ওসব পর্বতের ঢালে, খাড়িতে, গিরিপথের যেখানে সেখানে ঘন হয়ে জন্মায় মেসকিট আর চ্যাপাৱালের ঝোপ। প্রায় শুকিয়ে ঝনঝনে হয়ে আছে নিশ্চয় এখন। একটা ঝোপে আগুন লাগার মানেই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা, এবং তার অর্থ দাবানল!

জলদি দমকল আর বনবিভাগকে খবর দাও! চেঁচিয়ে উঠলো দুজনের একজন। বেলচা! কুড়াল! জলদি!

দৌড়ে গিয়ে পারবো না! বললো আরেকজন। ঘোড়া লাগবে, ঘোড়া!

তারচে আমাদের ট্রাকে করে চলুনা পরামর্শ দিলো কিশোর। ঠিক! সায় জানালো রিগো। এই, বেলচা আর কুড়াল রয়েছে গোলাঘরে!

ট্রাক স্টার্ট দেয়ার জন্যে দৌড় দিলো বোরিস। অন্যেরা গোলাঘরের দিকে ছুটলো আগুন নেভানোর যন্ত্রপাতি আনতে। আগের মতোই বোরিসের পাশে উঠে বসলেন রাশেদ পাশা আর পিনটু। অন্যেরা টপাটপ লাফিয়ে উঠে পড়লো ট্রাকের পেছনে। ট্রাকের দুধার খামচে ধরে দাঁড়িয়ে রইলো, যাতে উঁচু-নিচু জায়গায় চলার সময় আঁকুনিতে ছিটকে না পড়ে। হাঁপাতে হাঁপাতে দুজন লোকের পরিচয় করিয়ে দিলো রিগো, যারা চিৎকার করে আগুনের কথা জানিয়েছে।

আমাদের বন্ধু, পুয়ের্তে হুগো, আর ডা স্টেফানো, এক এক করে দুজনকে দেখালো রিগো। কয়েক পুরুষ ধরে হাসিয়েনডা আলভারেজে কাজ করছে। এই পথের ধারেই এখন বাড়ি করেছে দুজনে। শহরে কাজ করে। তবে অবসর সময়ে এখনও আমাদের র‍্যাঞ্চের কাজ করে দেয়।

দুজনেই বেঁটে। কালো চুল। খুব ভদ্রভাবে মাথা নুইয়ে সৌজন্য দেখালো তিন গোয়েন্দাকে। তবে চোখের উৎকণ্ঠা তাতে ঢাকা পড়লো না। ট্রাকের কেবিনের ওপর দিয়ে আবার ফিরে তাকালো ওরা আগুনের দিকে। রোদ-বাতাসে অল্প বয়েসেই ভাঁজ পড়েছে মুখের চামড়ায়, উদ্বেগে গভীর হলো সেগুলো। অস্বস্তিতে হাত ডললো পুরানো জিনসের প্যান্টের পেছনে।

সোজা উত্তরে ছুটেছে ট্রাক। ঘন হচ্ছে এখন ধোঁয়া। ঢেকে দিচ্ছে মেঘের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে আসা মলিন রোদকে। আগুনের দিকেই নজর, তবু, পথের পাশের সজী বাগানগুলো চোখ এড়ালো না ওদের। দক্ষিণের একটা মাঠের দিকে ছুট দিয়েছে একপাল ঘোড়া। শুরুতে অ্যারোইও আর শৈলশিরার পাশাপাশি চললো কাঁচা রাস্তাটা, তারপর পর্বতের কাছাকাছি এসে দুভাগ হয়ে গেল। আগুনটা ডান দিকে, তাই ডানের পথই ধরলো বোরিস। রুক্ষ এবড়োখেবড়ো পথে ঝাঁকুনি খেতে খেতে ছুটে চলেছে ট্রাক, ছড়িয়ে পড়া ধোঁয়া লক্ষ্য করে। বাঁক নিয়ে সোজা অ্যারোইওর দিকে এগিয়েছে পথ। হঠাৎ করেই যেন হোঁচট খেয়ে দাঁড়িয়েছে একটা পাথুরে শৈলশিরার গোড়ায়। খানিক দূরে শিরাটাও যেন আচমকাই শেষ হয়ে গেছে। এবং তার পরে ডানে একটা পুরানো পাথরের বধ, তার ওপ্র দিয়ে হুটলো টাক। বাধে নিচে সান্তা ইনেজ ক্রীকে শুকনো বুক দীর্ঘ বাঁক নিয়ে এগিয়ে গেছে দক্ষিণ-পুবে শৈলশিরার একেবারে দূরতম প্রান্তের কাছে। বাঁধের পেছনে রিজারভোয়ার অর্থাৎ রিগোর দীঘি, বড়জোর একটা পুকুর বলা চলে ওটাকে, পর্বতের পায়ের কাছে শুয়ে শুয়ে যেন ঝিমোচ্ছে ক্লান্তিতে। পুকুরের পাশ দিয়ে ঘুরে ছুটলো ট্রাক। সামনে লাফিয়ে ওঠা আগুনের শিখা চোখে পড়লো এতোক্ষণে।

থামো। থামো! কেবিরে জানালার পেছনে মুখ বাড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠলো রিগো।

ঘ্যাচ করে ব্রেক কষলো বোরিস। এগিয়ে আসা আগুনের কাছ থেকে শখানেক গজ দূরে। লাফিয়ে নেমে পড়লো সবাই।

ছড়াও! ছড়িয়ে পড়ে! নির্দেশ দিলো রিগো। ঝোপের মাঝখানে কেটে দাও, আলাদা হয়ে যাক। বালি খুঁড়বে আগুনের ওপর। কোনোমতে ঠেলে পুকুরের দিকে নিয়ে যেতে পারলে বাঁচোয়া! জলদি ফ করো!

নালার দুই পাশেই আগুন জ্বলছে, অনেকটা অর্ধচন্দ্রাকারে। নিচে লাল আগুন, ওপরে কালো ধোঁয়ার একটা বিচিত্র দেয়াল যেন কাঁপতে কাঁপতে এগিয়ে আসছে, ছড়িয়ে পড়ছে দুপাশে। হড়াচ্ছে লাফ দিয়ে দিয়ে। এইমাত্র যেখানে দেখা যাচ্ছে সবুজ ঝোপ, পরমুহূর্তেই সেখানে লাল আগুন, দেখতে দেখতে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলছে।

বাতাস কম, তাই রক্ষা! মুসা বললো।

নালার বাঁ দিকে ছুটে গেল তিন গোয়েন্দা। কুপিয়ে কেটে ফেললো ছোট ছোট গাহ, ঝোপ পরিষ্কার করে মাঝখানে একটা লম্বা গর্ত করে ফেললো, অনেকটা ট্রেঞ্চের মতো। মাটি নরম, কাটতে খুব একটা কে পেতে হলো না। খুঁড়ে তোলা মাটি ছিটিয়ে দিলো আগুনের ওপ্র।

আরি, দেখো! হাত তুলে দেখালো রবিন। শুঁটকি! আর ম্যানেজারটা!

লাফিয়ে লাফিয়ে ছুটে আসছে টেরি আর ডরি। আরও লোক আসছে ওদের পেছনে। ডয়েলদের র‍্যাঞ্চ ওয়াগন আর আরও দুটো ট্রাকে করে এসেছে ওরা। হাতে কুড়াল, বেলচা। আগুনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করলো ওরাও। কিশোর দেখলো এমনকি মিস্টার ডয়েলও চলে এসেছেন। হাত নেড়ে নেড়ে চেঁচিয়ে আদেশের পর আদেশ দিয়ে চলেছেন।

দুই র‍্যাঞ্চের দুটো দল, আগুন আর ধোঁয়ার ভেতর দিয়ে পরস্পরকে দেখতে পাচ্ছে

ভালো করে, লড়ে চললো আগুনের সঙ্গে। মনে হলো কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে গেল। অথচ মেঘ আর ভাঙা ঘোড়া ধোঁয়ার ফাঁক দিয়ে মাঝে মাঝে দেখা যাওয়া সূর্য দেখেই আন্দাজ করতে পারলো গোয়েন্দারা, সময় কেটেছে মাত্র আধ ঘণ্টা। ইতিমধ্যে পুরো কাউন্টিই যেন এসে হাজির হয়েহে আগুন নেভানোর জন্যে।

রাসায়নিক পদার্থ ভরা ট্যাংক আর বুলডোজার নিয়ে এসেছে বনবিভাগ। শেরিফের সহকারীরা হাত লাগিয়েহে আলভারেজ আর ডয়েলদের সঙ্গে। জোরালো এঞ্জিনের গর্জন তুলে আর ঘণ্টা বাজাতে বাজাতে মাটি কাঁপিয়ে ছুটে এলো দমকলের গাড়ি। লাফিয়ে নামলো কর্মীরা। পাইপ খুলে নিয়ে দৌড় দিলো পুকুরের দিকে। পানি ছিটানো শুরু করলো আগুনের ওপর।

এলাকার আরও লোক ছুটে আসছে সাহায্য করতে। নালার দুই তীরেই অপেক্ষা করছে অনেকে, দুরে। ওদেরকে আনতে ছুটলো সিভিলিয়ানদের ট্রাকগুলো। বোরিস গেল একদিকে। ডয়েলদের ওয়াগন আর ট্রাকগুলো গেল দক্ষিণে কাউন্টি রোডের দিকে।

উড়ে এলো বনবিভাগের হেলিকপ্টার আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্যবহৃত বম্বার প্লেন। খুব নিচু দিয়ে উড়তে উড়তে আগুনের ওপর রাসায়নিক পদার্থ ছিটাতে লাগলো। পানিও ছিটাচ্ছে কোনো কোনোটা। কয়েকটা উড়ে গেল পর্বতের অন্যপাশে, আগুন ছড়িয়ে গেছে ওদিকেও। কয়েকটা উড়তে লাগলো দমকল-কর্মীদের ওপর, পানি ছিটিয়ে আগুন নেভাতে গিয়ে ভিজিয়ে চুপচুপে করে দিলো ওদের।

পরের একটা ঘন্টা ধরে চললো জোর লড়াই, মনে হচ্ছে সব বৃথা। আগুনকে পরাজিত করা যাবে না। ধোঁয়া আর আগুনের চাপে ক্রমেই পিছিয়ে আসতে বাধ্য হলো দমকল-কমীরা। তবে বাতাস কম থাকায় বেশিক্ষণ আর সুবিধে করতে পারলো না। আগুন। প্রতিপক্ষের চাপের মুখে নতি স্বীকার করতে বাধ্য হলো একটু একটু করে। দাউ দাউ করে জ্বলতে জ্বলতে প্রথমে দ্বিধা করলো যেন কিছুক্ষণ, তারপর ঘন কালো ধোঁয়ায় আকাশ কালো করে দিয়ে কমতে আরম্ভ করলো। তবে খুব ধীরে।

থেমো না! চালিয়ে যাও! চেঁচিয়ে আদেশ দিলো দমকল বাহিনীর ক্যাপ্টেন। ঢিল পেলেই আবার লাফিয়ে উঠবে।

আরও দশ মিনিট পর বেলচায় ভর দিয়ে দাঁড়ালো কিশোর। হাত দিয়ে মুখের ঘাম মুছলো। গালে এসে লাগলো কিছু। চেঁচিয়ে উঠলো সে, বৃষ্টি। বৃষ্টি! বৃষ্টি আসছে

একটা দুটো করে বড় বড় ফোঁটা পড়তে শুরু করলো। কাজ থামিয়ে আকাশের দিকে মুখ তুলে তাকালো কয়েকজন দমকলকর্মী। হঠাৎ করেই যেন ফাঁক হয়ে গেল আকাশের ট্যাংক, ঝমঝম করে নেমে এলো বারিধারা। ঘামে ভেজা, ধোঁয়ায় কালো মুখগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। আনন্দের হুল্লোড় বয়ে গেল নালার একমাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত। সেই চিৎকারকে ছাপিয়ে হিসহিস করে উঠলো আগুনের অন্তিম আর্তনাদ।

মাথার ওপর দুহাত তুলে দিয়েছে রবিন। মুখ আকাশের দিকে। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে, সে

য় নিচ্ছে হাত-মুখের কালি-ময়লা। ঝিলিক দিয়ে গেল বিদ্যুতের তীব্র নীল শিখা। বাজ পড়লো ভীষণ শব্দে। তারপর থেকে একটু পর পরই পড়তে লাগলো পর্বতের মাথায়।

পানিতে ধুয়ে মিলিয়ে যাচ্ছে ধোঁয়া, তবে এখনও কিছু কিছু ভাসছে এখানে ওখানে। মার খাওয়া কুকুরের মতো নেতিয়ে পড়ছে আগুন, শেষ ছোবল হানার চেষ্টা করছে পাথরের ফাঁকে ফাঁকে যেখানে বৃষ্টি সরাসরি পড়তে পারছে না সেসব জায়গায়। তবে ভঙ্গি দেখেই বোেঝা যায় সুবিধে করতে পারবে না আর।

বিপদ কেটেছে। সাহায্য করতে যারা এসেছিলো আস্তে আস্তে সরে পড়তে লাগলো তারা। বাকি কাজ শেষ করার দায়িত্ব রেখে গেল বনবিভাগ আর দমকল বাহিনীর ওপর।

সারা শরীরে কালি মাথা, ভিজে চুপচুপে হয়ে এসে পুকুরের পাড়ে দাঁড়ালো আলভারেজদের দল। ট্রাকে করে লোক নামিয়ে দিতে গেছে বোরিস, এখনও ফেরেনি।

কমে আসছে বৃষ্টি। শেষে গুঁড়ি গুঁড়িতে এসে স্থির হলো। কিছুটা পরিষ্কার হলো শেষ বিকেলের আকাশ।

চল, যাই, রিগো বললো। এক মাইলও হবে না। এখানে দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে হেঁটেই চলে যাই।

ক্লান্ত, ভেজা শরীর নিয়ে অন্যদের পেছন পেছন চলেছে তিন গোয়েন্দা। কিন্তু মনে সুখ, আগুনটা শেষ পর্যন্ত নেভাতে পেরেছে। বৃষ্টিতে ভিজে কাদায় প্যাঁচপ্যাঁচ করছে এখন কাঁচা রাস্তা, তার ওপর দিয়েই চলেছে মানুষ আর গাড়ির মিছিল, দক্ষিণে। সামনে মাথা তুলে রেখেছে উঁচু শৈলশিরা, যেটা শুকনো অ্যারোইও আর সান্তা ইনেজ ক্ৰীককে আলাদা করে রেখেছে।

ভিড় আর কাদার দিকে তাকালো রিগো, নিজের দলকে সরিয়ে নিয়ে এলো বায়ে। বললো, আরেকটা পথ আছে। এতে ভিড়ও নেই, কাদাও কম থাকবে, সহজেই চলে যেতে পারবো হাসিয়েনডায়।

বাঁধের কিনার দিয়ে হেঁটে উঁচু শৈলশিরার গোড়ায় একটা বড় ঢিবির কাছে চলে এলো ওরা। জংলা জায়গা, ঝোপঝাড় জন্মে রয়েছে। শৈলশিরার পশ্চিম অংশে অ্যারোইওর পথ রোধ করেছে এই টিবিটাই। প্রায় মুছে যাওয়া একটা পায়ে-চলা পথ চোখে পড়লো এখানে নেমে গেছে বাঁধের তিরিশ ফুট নিচে নালার বুকে। ওটাতে নামার আগে মুখ ফেরালো একবার সবাই, পেছনে দেখার জন্যে। বাঁধের দুধারে যতো দূর চোখ যায়, শুধু পোড়া ঝোপঝাড়। কিন্তু পুড়ে ছাই হয়ে মিশে গেছে মাটিতে, কিছু কালো ডাটা এখনও মাথা তুলে রেখেছে এখানে ওখানে।

গাছপালা নেই। পোড়া মাটি এখন পানি আটকাতে পারবে না, হুগো কললো গজর হয়ে। বৃষ্টি যদি বাড়ে, বন্যা হয়ে যাবে।

টিবির নিচের পথ ধরে নিচে নামতে আরম্ভ করলো দলটা। নালার বুকও এখন আর আগের মতো শুকনো নেই, কাদা হয়ে গেছে। অন্য পারে আরেকটা কাঁচা রাস্তা আছে, ওটা গেছে ডয়েল র‍্যাঞ্চের ভেতর দিয়ে। যানবাহন আর লোকের ভিড় ওটাতেও। কাউন্টি সড়কের দিকে ওই রাস্তা দিয়েই ফিরে চলেছে দমকল বাহিনী। ডয়েলদের র‍্যাঞ্চ ওয়াগনটাকে ধীরে ধীরে পাশ কাটিয়ে যেতে দেখলো তিন গোয়েন্দা। কয়েকজন লোকের সঙ্গে পেহনে বসেছে টেরি। গোয়েন্দাদের দেখলো ঠিকই, কিন্তু সে-ও এতো পরিশ্রান্ত, টিটকারি মারারও বল পেলো না যেন। এমনকি তার গা জ্বালানো হাসিটা পর্যন্ত হাসলো না।

ওটা কি ডয়েলদের এলাকা? রবিন জিজ্ঞেস করলো।

মাথা ঝাঁকালো রিগো। নালাটাই হলো সীমানা, এদিকটা আমাদের, ওদিকটা ওদের।

ডানে, উঁচু শৈলশিরা যেন হঠাৎ করে ডুব মেরেছে বালির তলায়। ওটার ওপাশে এখন কি আছে দেখা যায়। গোয়েন্দারা দেখলো, একসারি শৈলশিরা এগিয়ে গেছে দক্ষিণে। নালার বুক থেকে উঠে এসে মোড় নিলো রিগো। পায়েচলা পথটা এখানে ঘাসে ঢেকে গেছে। চলে গেছে কতগুলো ছোট পাহাড়ের ভেতর দিয়ে, অনেকটা গিরিপথের মতো। এতে সরু, দুজন পাশাপাশি চলতে কষ্ট হয়। ফলে একসারিতে এগোলো দলটা। এখানে কিছু পোড়েনি, আগুন আসতেই পারেনি এ-পর্যন্ত। প্রকৃতির শোভা দেখতে দেখতে চললৈ তিন গোয়েন্দা। পাহাড়ের ঢালে জন্মে রয়েছে নানা জাতের ঝোপ। ফাঁকে ফাঁকে বেরিয়ে রয়েছে বাদামী পাথর। মাথার ওপরে এখনও ঝুলে রয়েছে যেন ছাড়া ছাড়া ধোঁয়া। বৃষ্টি থেমে গেছে পুরোপুরি। মেঘের ফাঁক থেকে বেরিয়ে এসেও থাকার সময় পানি আর সূর্য, প্রায় ডুবে গেছে।

আগে আগে হাঁটছে এখন মুসা। তার পাশে চলে এলো কিশোর। পায়েচলা পথ ধরে ওরা যখন শেষ শৈলশিরাটার ওপর উঠলো, দলের অন্যেরা তখন প্রায় বিশ গজ পেছনে পড়েছে।

খাইছে! কিশোওর! হঠাৎ করে ওপরে হাত তুলে দেখালো মুসা।

ওদের মাথার ওপরে ভেসে যাওয়া ধোঁয়ার ফাঁক থেকে বেরিয়ে আসছে একজন মানুষ। কালো একটা ঘোড়ার পিঠে বসা। গোধূলীর আলোয় হাঁ করে তাকিয়ে রয়েছে দুজনে। সামনের দুপা তুলে দিয়ে পেছনের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়েছে ঘোড়াটা সামনের খুর দিয়ে যেন লাথি মারতে চাইছে ধোঁয়াকে, মাথাটা…

আরে …আরে…, কথা আটকে যাচ্ছে কিশোরের, ও-ওটার মা-থা কই!

চূড়ার ওপর পেছনের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক মুণ্ডুহীন ঘোড়া!

খাইছেরে! ভূউত! গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো মুসা।

<

Super User