দেখে মনে হচ্ছে ধোঁয়ার ভেতর থেকে এই বুঝি লাফিয়ে এসে ওদের ঘাড়ে পড়বে ঘোড়াটা।

তার জন্যে অপেক্ষা করলো না আর দুজনে, ঘুরেই দিলো দৌড়। চিৎকার শুনে ওদের দিকে ছুটে আসতে লাগলো রবিন আর পিনটু। পেছনে সরু পথে চলার গতি বাড়িয়ে দিলেন রাশেদ পাশা, রিগো, হুগো আর স্টেফানো।

মাথা নেই! মাথা নেই! চেঁচালো আবার মুসা। ঘোড়া-ভূতটার মাথা নেই! এসো না! পালাও!

থমকে দাঁড়ালো রবিন। মুসার মাথার ওপর দিয়ে তাকালো ঘোড়াটার দিকে। ধোঁয়া পাতলা হয়ে এসেছে এখন। তাকিয়েই চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার।

কিশোর, ওটা, ওটা…, কথা শেষ করতে পারলো না রবিন।

হো হো করে হেসে উঠলো পিনটু। আরে কি শুরু করলে! ওটা তো মৃর্তি, করটেজের মূর্তি। ধোঁয়া ভাসছে, ফলে ধোঁয়ার ভেতরের মূর্তিটাকে মনে হচ্ছে নড়ছে।

অসম্ভব! কিছুতেই মানতে রাজি নয় মুসা। করটেজের মূর্তির ঘোড়ার মাথা ছিলো!

মাথা? তাজ্জব হয়ে গেল পিনটু। আরে, তাই তো! মাথা গেল কই! নিশ্চয় কেউ ভেঙে ফেলেছে! ভাইয়া, দেখে যাও!

অন্যদেরকে নিয়ে এসে হাজির হলো রিগো। ঘোড়টার দিকে তাকিয়ে বললো, আশ্চর্য। চল তো দেখি!

কাঠের মূর্তিটার কাছে এসে জড়ো হলো সবাই। এখনও হালকা ধোঁয়া উড়ছে ওটার ওপরে। বিশাল একটা গাছের কাণ্ড কুঁদে তৈরি হয়েছে ঘোড় আর মানুষের আস্ত ধড়টা, পুরোটাই একটা অংশ। হাত, পা, তলোয়ার আর জিন আলাদা তৈরি করে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে ওটার সঙ্গে। ঘোড়াটার শরীরের রঙ কালো, তাতে লাল আর হলুদের অলংকরণ করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে ওখানটায় ঝুলে আছে উঁচু জিনের নিচের ঝালর। আরোহীর রঙও কালো। দাড়ি হলুদ, চোখ নীল, আর লাল রঙে আঁকা রয়েছে আরমার-প্লেট। মলিন হয়ে এসেছে সমস্ত রঙ।

আগে নিয়মিত রঙ করা হতো, পিনটু জানালো। কিন্তু অনেক দিন থেকেই আর তেমন যত্ন নেয়া হয় না। কাঠও নিশ্চয় পচে নরম হয়ে গেছে এতেদিনে।

মূর্তির পাশে ঘাসের ওপর পড়ে আছে ভাঙা মাথাটা। মুখের হাঁ-এর ফাঁকে লাল রঙ করা। কাছেই মাটিতে পড়ে আছে একটা ধাতব ভারি জিনিস।

ওটা পড়েই ভেঙেছে, বললো সে। আগুন নেভানোর কেমিক্যালের সিলিণ্ডার। নিশ্চয় প্লেন থেকে পড়েছে, মূর্তিটার ওপর দিয়ে যাওয়ার সময় ফেলা হয়েছে।

মাথাটা ভালোমতো দেখার জন্যে ওটার কাছে বসে পড়লো মুসা। ঘাড়ের অনেকখানি নিয়ে ভেঙেছে মাথা। ডেটা ফাপা। নিশ্চয় ওজন কমানোর জন্যেই ওরকম করে তৈরি করা হয়েছিলো। কি যেন একটা বেরিয়ে রয়েছে ভেতর থেকে। টেনে বের করলো সে। কি জিনিস?

দেখি তো? ওর হাত থেকে জিনিসটা নিলো কিশোর।

চামড়া আর ধাতুর তৈরি লম্বা, পাতলা একটা সিলিন্ডারের মতো জিনিস, ভেতরে ফাপা। হুঁ, ধীরে ধীরে বললো কিশোর, লাগছে তো তলোয়ারের খাপের মতো। ওই যে, কোমরে ঝুলিয়ে নিতো যেগুলো সৈন্যরা…

কিন্তু বেশি বড়, রবিন বললো। খাপে খাপে মিলবে না, ঢিলে হয়ে থাকবে তলোয়ার।

হা। আর বেল্টে ঝোলানোর জন্যে কোনো হুকটুকও নেই।

দেখি, হাত বাড়ালো রিগো। না, তলোয়ারের খাপ না এটা, ঢাকনা। খাপের খোলস। খুব দামী তলোয়ারকে আগে এভাবেই যত্ন করে রাখা হতো। যাতে খাপটারও ক্ষতি না হয়। বিশেষ করে যখন ব্যবহার হতো না। অনেক পুরানো মনে হচ্ছে।

পুরানো? দামী? উত্তেজিত হয়ে উঠলো পিনটু। কটেজ সোর্ড-এর খোলস না তো! মুসা, দেখো তো, মাথাটার ভেতরে ভালো করে দেখো…

ততোক্ষণে ভাঙা ঘাড়ের ভেতরে হাত ঢুকিয়ে দিয়েছে মুসা। ঘাড় দেখলো, মাথা দেখলো, তারপর পুরো মূর্তিটার ভেতরেই দেখলো। মাথা নেড়ে বললো, ঘাড়-মাথার ভেতরে কিছু নেই। ধড় আর পায়ের ভেতরে ফাঁপা নয়। সলিড।

বোকামি করছিস, পিনটু, রিগো বললো। অনেক আগেই হারিয়ে গেছে কটেজ সোর্ড।

দামী ছিলো? মুসার প্রশ্ন।

হয়তো ছিলো, তবে আমার ঠিক বিশ্বাস হয় না। হয়তো আর দশটা সাধারণ তলোয়ারের মতোই ছিলো ওটা, ঐতিহাসিক কারণে দামী হয়ে গেছে। অনেক দিন নাকি ছিলো আমাদের পরিবারে।

করটেজের ব্যক্তিগত জিনিস? রবিন জিজ্ঞেস করলো।

পারিবারিক ইতিহাস তো তাই বলে। ডন নিরো আলভারেজ, নিউ ওয়ার্ল্ডে আমাদের প্রথম পূর্ব-পুরুষ, একবার গুপ্ত আক্রমণ থেকে বাঁচিয়েছিলেন করটেজের সেনাবাহিনীকে। খুশি হয়ে তখন তাঁকে নিজের তলোয়ারটা উপহার দিয়েছিলেন কটেজ। তলোয়ারটা সম্পর্কে কিংবদন্তী আছে, স্পেনের রাজা নাকি বিশেষ উপলক্ষে অনেক আয়োজন করে ওটা উপহার দেন কাটেজকে। খাঁটি সোনার তৈরি বাঁট, দামী পাথর বসানো। ফলা আর খাপটাতেও নাকি পাথর বসানো ছিলো। ওটা এই অঞ্চলে নিয়ে আসেন নিরো আলভারেজের বংশধর লেফটেন্যান্ট ডারিগো আলভারেজ।

তারপর কি হলো ওটার? আগ্রহী হয়ে উঠেছে কিশোর।

আঠারোশা ছেচল্লিশ সালে মেকসিকোর যুদ্ধের সময় আমেরিকানরা যখন রকি বীচে ঢুকতে আরম্ভ করে, তখন হারিয়ে যায় ওটা। একেবারে গায়েব।

আমেরিকান সৈন্যরা চুরি করেছিলো?

হয়তো। দামী জিনিস যা-ই পেতে তুলে নিয়ে যাওয়ার স্বভাব ছিলো ওদের। পরে সেনাবাহিনীর দপ্তরে খোঁজ নেয়া হয়েছে। দপ্তরের লোকেরা সাফ জানিয়ে দিয়েছে, তলোয়ারটার কথাই শোনেনি ওরা। হয়তো সত্যিই বলেছে, কে জানে। আমার দাদার-বাবার-বাবা পিউটো আলভারেজ লড়াই করেছিলেন আমেরিকানদের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার এড়ানোর জন্যে পালাতে গিয়ে গুলি খেয়ে সাগরে পড়ে যান। তাঁর লাশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। রকি বীচ গ্যারিসন কমাণ্ডারের ধারণা, তলোয়ারটা তখন পিউটোর হাতে ছিলো, ওটা নিয়েই সাগরে পড়েছেন। যা-ই হোক, তলোয়ারটা আর পাওয়া যায়নি।

কিন্তু, চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো কিশোর, একটা কথা ঠিক, কেউ ঠিক করে বলতে পারে না তলোয়ারটা আসলে কোথায় গেছে। এবং কেউ একজন নিশ্চয় ওই খাপের খোলসটা ঢুকিয়ে রেখেছিলো ঘোড়ার গলার মধ্যে…।

ভাইয়া! হাসিয়েনড়া! শৈলগ্রির কিনারে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে উঠলো পিনটু।

কি হয়েছে দেখার জন্যে ছুটে গেল সবাই। আঁতকে উঠলো হাসিয়েনডার দিকে তাকিয়ে।

আরি, ঘরেও আগুন! রাশেদ পাশা চিৎকার করে বললেন।

জলদি! চেঁচিয়ে উঠলো রিগো।

ঢাল বেয়ে দৌড়ে মাঠের ওপর দিয়ে হুটলো সবাই। লাফিয়ে উঠছে আগুনের শিখা। আকাশে এখনও ভাসমান দাবানলের ধোঁয়ার সঙ্গে মিশতে চলেছে নতুন আগুনের কালো ধোঁয়া। হাসিয়েনডার চত্বরে দাঁড়িয়ে আছে একটা দমকলের গাড়ি, হোসপাইপ হাতে নিয়ে গোলাঘরের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে কয়েকজন দমকলকর্মী। রিলোর দল ওখানে পৌঁছতে পৌঁছতে ক্ষতি যা করার করে ফেললো আগুন, ধড়াস করে ধসে পড়লো পোড়া ছাত। দুটো বাড়িই পুড়েছে ভালোমতো। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।

নাহ, হতাশ ভঙ্গিতে বললো দমকল বাহিনীর ক্যাপ্টেন, লাভ হলো না! দাবানলের আগুনই নিশ্চয় ছিটকে এসেছিলো।

তা কি করে হয়? প্রতিবাদ করলো মুসা। বাতাসই তো ছিলো না। কি করে আসবে?

নিচে ছিলো না,ক্যাপ্টেন বললো। তবে মাটির কাছে না থাকলেও অনেক সময় ওপরে জোর বাতাস থাকে। আর আগুন লাগলে তো বটেই। গরম বাতাস দ্রুত ওপরে উঠে যায়, সাথে করে নিয়ে যায় স্ফুলিঙ্গ, ওপরের বাতাস সেই স্ফুলিঙ্গকে বয়ে নিয়ে যেতে পারে অনেক দূর। ওরকম ঘটতে দেখেছি। ঘরগুলোর কাঠ শুকিয়ে খটখটে হয়েছিলো। আগুন লাগতে দেরি হয়নি। পুরানো বাড়ির কড়িবর্গার কাঠ বেয়ে আগুন নিচে নেমেছে, টালির হাতের নিচে চলে আসার পর সেই আগুনকে আর ছুঁতে পারেনি বৃষ্টি। আরও আগে দেখলে হয়তো বাঁচাতে পারতাম। কিন্তু তখন এতো ধোঁয়া ছিলো, কোনটা যে কোনখান থেকে উড়ছে বোঝা যায়নি…।

পুরানো হাসিয়েনডার দুটো দেয়াল ধসে পড়ার শব্দে থমকে গেল ক্যাপ্টেন। দ্রুত কমে আসছে আগুন, পোড়ানোর মতো কিছু না পেয়ে। স্তব্ধ হয়ে গেছে দুই ভাই, পিনটু আর রিগো। রাশেদ পাশা চুপ, ছেলেরা নীরব। কি বলবে?

নীরবতা ভাঙলো মুসা। চেঁচিয়ে উঠলো, জিনিসগুলো!

ভাড়ারের দিকে ঝট করে ফিরলেন রাশেদ পাশা। কিশোর আর রবিনও তাকালো। তবে এগোনোর চেষ্টা করলো না কেউ। পোড়া ধ্বংসস্তূপ। কয়েকটা দেয়াল এখনও দাঁড়িয়ে রয়েছে বটে, তবে ভেতরের জিনিস কিছুই নেই, পুড়ে ছাই। রাশেদ পাশার কেনার মতো কিছুই নেই ওখানে।

সব গেছে। কান্নার সুর বেরোলো রিগোর কষ্ঠ থেকে। সব! বীমাও করানো ছিলো না! সব গেল আরকি আমাদের!

যাবে কেন? ফুঁসে উঠলো পিনটু, কার বিরুদ্ধে রাগ কে জানে। আবার হাসিয়েনডা বানিয়ে নেবো আমরা।

তাহয় নিলাম। ধারের টাকা শোধ করবো কোত্থেকে, ট্যাক্স দেবো কি দিয়ে? জায়গাই তে রাখতে পারবো না, ঘর বানিয়ে কি হবে?

চাচা,রাশেদ পশির দিকে তাকিয়ে বললো কিশোর, জিনিসগুলো আমরা কিনে নিয়েছিলাম। টাকা দিইনি বটে, কথা তো দিয়েছি। তারমানে আমাদের জিনিস

পুড়লো। টাকাটা আমাদের দিয়ে দেয়া উচিত।

সামান্যতম দ্বিধা না করে হাসলেন রাশেদ পাশা কিশোরের দিকে চেয়ে, তারপর মাথা ঝাঁকালেন, ঠিক বলেছিস, কিশোর। পোড়ার আগে আমরা রাতে পারিনি, সেটা আমাদের দোষ…

জোরে জোরে মাথা নাড়লো রিগো। না, তা হয় না। ভিক্ষে আমরা নিতে পারবো না। বাপ-দাদার অপমান করতে পারবো না এভাবে। তারচে জায়গাই বিক্রি করে দিয়ে শহরে চলে যাবো। কিংবা ফিরে যাবো মেকৰিকোতে।

কিন্তু আপনারা এখন আমেরিকান, বোঝানোর চেষ্টা করলো রবিন। অনেক আমেরিকানের চেয়ে আলভারেজরা আগে এসেছিলো এই অঞ্চলে।

নিশ্চয়ই, রবিনের সঙ্গে সুর মেলালো কিশোর। কি যেন ভাবছে। প্রয়োজনীয় টাকা চেষ্টা করলে অন্যখানেও পেয়ে যেতে পারেন।

বিষণ হাসি হাসলো রিগো। আর কোনো উপায় নেই, কিশোর।

হয়তো আছে, ধীরে ধীরে বললো গোয়েন্দাপ্রধান। অনেক দূরের ব্যাপার যদিও সেটা…যা-ই হোক, আপনাদের টাকাটা কি এখনই শোধ করতে হবে? না কিছু দিন সময় পাবেন? ঘর তো পড়ে গেল, কদিন অন্য কারও বাড়িতে থাকতে পারবেন?

পারবো। সিনর হেরিয়ানোর বাড়িতে। পিনট জানালো।

হ্যাঁ, বললো তার ভাই। টাকাটাও কয়েক দিন পরে দিলে চলবে। কিন্তু কিশোর, পাবো কোথায়?

তলোয়ারটার কথা ভাবছি আমি, জবাব দিলো কিশোর, করটেজ সোর্ড। মেকসিকোর যুদ্ধের সময় ওটা চুরি যায়। একশো বছরেরও বেশি হয়ে গেছে, ইতিমধ্যে কোথাও না কোথাও ওটা বেরোনোর কথা। সৈন্যরা চরি করলে বিক্রি করে দিতো। আর যেহেতু বেরোয়নি, সেহেতু আমার সন্দেহ হচ্ছে, আদৌ চুরি হয়েছিলো কিনা ওটা। হয়তো এখনও কোথাও লুকানোই রয়েছে, ওই খোলসটার মতো!

ঠিক বলেছো! তুড়ি বাজালো পিনটু। ভাইয়া, ও ঠিকই…

আরে দূর! বাতাসে বাবা মারলো যেন রিগো। তা-ও কি হয় নাকি? তলোয়ারটা না বেরোনোর একশো একটা কারণ থাকতে পারে। হয়তো সাগরে পড়ে গিয়েছিলো সত্যিই, কিংবা নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো অন্য কোনোভাবে। কিংবা সৈন্যরা নিয়ে গিয়ে এমন কারো কাছে বিক্রি করেছে, যারা আজ পর্যন্ত বের করেনি ওটা, লুকিয়ে রেখেছে। অ্যানটিক জিনিস অনেকে ওভাবে লুকিয়ে রাখে। কিংবা হয়তো বহুদূরে চলে গেছে ওটা, একেবারে চীন দেশে, যেখান থেকে এখানে খোঁজ আসার সম্ভবনা খুবই কম। খোলসটা দেখেই তুমি এতো আশা করছে। হতে পারে এটা অন্য কোনো তলোয়ারের। তুমি অসঙ্ঘকে সম্ভম্ব করার কথা ভাবছে, কিশোর পাশা। স্রেফ ছেলেমানুষী। ফ্যানটাসি দিয়ে আমাদের র‍্যাঞ্চকে রক্ষা করা যাবে না।

আপনার কথায় যুক্তি আছে, মোটেও দমলো না কিশোর। কিন্তু খোলসটা আপনাআপনি মূর্তির ভেতরে ঢুকে যায়নি, ঢোকানো হয়েছে। ভেবে দেখুন, শহরে তখন ছিলো শত্রুসেনা, ডন পিউটো আলভারেজ যদি তলোয়ারটা লুকিয়ে ফেলে থাকেন, অবাক হওয়ার কিছু আছে কি? ওরকম একটা দামী জিনিস! পান আর না পান, অন্তত খোঁজার চেষ্টা তো করে দেখতে পারেন। আমরা আপনাকে সাহায্য করতে রাজি আছি। আর মোটেই ছেলেমানুষী করছি না আমরা। এ-পর্যন্ত ওরকম অনেক জিনিস খুঁজে বের করেছি, যেগুলো কখনও পাওয়া যাবে না বলে হাল ছেড়ে দেয়া হয়েছিলো।

ও ঠিকই বলছে, ভাইয়া, উত্তেজনায় টগবগ করছে পিনটু। ওরা দুর্দান্ত গোয়েন্দা, আমি জানি! এই কিশোর, কার্ড দেখাও না তোমাদের। আর পুলিশের ক্যাপ্টেন ফ্লেচারের সার্টিফিকেটটা। আছে না সঙ্গে?

মাথা ঝাঁকালো কিশোর।

দেখলো রিগো। বেশ, বুঝলাম তোমরা গোয়েন্দা। অভিজ্ঞতাও আছে। পুলিশের একজন ক্যাপ্টেন ফালতু কথা বলবেন না। কিন্তু একশো বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একটা তলোয়ার কিভাবে খুঁজে ব্বে করবে?

একটা সুযোগ তো অন্তত দিয়ে দেখো? পিনটু বললো।

হ্যাঁ, ছেলেদের পক্ষ নিলেন রাশেদ পাশা, তাতে অসুবিধেটা কি? পেলে তো ভালোই।

পুরানো হাসিয়েনডার ধ্বংসস্তুপের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো রিগো। বেশ, করো চেষ্টা। আমার সাধ্যমতো সাহায্য আমি করবো। কিন্তু তলোয়ার পাবে বলে আমার মনে হয় না। যাকগে, কোত্থেকে কাজ শুরু করতে চাও? কিভাবে? কি সূত্র নিয়ে?

সেটা ভেবে বের করে ফেলবো, কিশোর কললো। তবে গলার জোর কমে গেছে তার।

ট্রাক নিয়ে ফিরে এলো বোরিস। রিগো জানালো, হুগো আর স্টেফানোকে নিয়ে হেরিয়ানোর বাড়ি চলে যাবে।

বাড়ি ফিরে চললো তিন গোয়েন্দা। ট্রাকের পেছনে উঠেছে।

কিশোর, মুসা জিজ্ঞেস করলো, কোনখান থেকে শুরু করবো?

কেন? হেসে বললো গোয়েন্দাপ্রধান, গলার জোর আবার বেড়েছে। তোমার হাতেই তো রয়েছে জবাব।

আমার হাতে? অবাক হয়ে পুরানো তলোয়ারের খোলসটার দিকে তাকালো মুসা। সাথে করে নিয়ে এসেছে ওটা।

এখনও তেমন আশা করতে পারছি না, কিশোর বললো, তবে একটা জিনিস চোখে লেগেছে আমার। খোলসটার ধাতব অংশে খুদে লেখার মতো কিছু দেখেছি। সাংকেতিক চিহ্নও হতে পারে। মিস্টার ক্রিস্টোফারের সাহায্য নিতে পারি আমরা। তিনি আমাদেরকে এমন কারো খোঁজ দিতে পারেন, যে ওগুলোর মানে বুঝিয়ে দিতে পারবে।

চোখ চকচক করে উঠলো তার। মনে হয় পথ আমরা পেয়ে গেছি! করটেজ সোর্ড খুঁজে বের করার সূত্র বুঝি পায়ে হেঁটে এসে ধরা দিলো আমাদের হাতে!

<

Super User