পরদিন সকালে নাস্তার পরেও কিশোর ফোন করছে না দেখে রবিনকে ফোন করল মুসা।

আমাকেও তো করেনি, রবিন জানাল।

শেষে আর অপেক্ষা না করে স্যালভিজ ইয়ার্ডে চলল দুজনে। হেডকোয়ার্টারে কিশোরকে পাওয়া গেল না। তাই তাকে ঘরে খুঁজতে চলল।

বাড়ির সামনে পিকআপ ট্রাকটার ইঞ্জিন মেরামত করছেন রাশেদ পাশা। রবিনের প্রশ্নের জবাবে বললেন, কি জানি, কোথায় গেল। সেই ভোরে বেরিয়েছে। কি নাকি জরুরী কাজ। নাস্তাও করল না ভালমত।

চল, ইস্কুলেই দেখা হবে, রবিন বলল।

যদি আসে, হতাশ ভঙ্গিতে হাত নাড়ল মুসা।

স্কুলেও কিশোরের দেখা মিলল না। ক্লাসরুমে উদ্বিগ্ন হয়ে বসে বার বার একে অন্যের দিকে তাকাচ্ছে দুই গোয়েন্দা, এই সময় হন্তদন্ত হয়ে ঢুকল কিশোর। চওড়া হাসি উপহার দিল দুই বন্ধুকে। দুপুরে টিফিনের আগে আর কথা বলার সুযোগ হল না। স্কুলের সাইন্স ক্লাবের প্রেসিডেন্ট সে, সুতরাং টিফিনের সময়ও বেশ খানিকটা সময় কাটাতে হল ক্লাবে জরুরী মীটিঙে। আবার ক্লাস শুরু হওয়ার ঘন্টা বাজলে তাড়াহুড়ো করে রবিন আর মুসাকে বলল, পেয়েছি। চাবিকাঠি। ছুটির পর হেডকোয়ার্টারে চলে এস।

শুক্রবারে একটা বাড়তি ক্লাস করতে হয় রবিন আর মুসাকে, কিশোরের সে ঝামেলা নেই। ফলে সে চলে গেল, দুই সহকারীকে বসেই থাকতে হল ক্লাসে। ছুটির পরে ভীষণ উত্তেজিত হয়ে কৌতূহলে ফেটে পড়তে পড়তে ইয়ার্ডে এসে ঢুকল দুজনে। কিভাবে যে দুই সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেলারে ঢুকল, বলতে পারবে না। কিশোর বসে আছে তার জায়গায়।

রাইমিং ম্যাং ঘোষণ করল সে।

ডেস্কের উপর ছড়ানো কয়েক পাতা কাগজে গিজগিজ করে কি লেখা।

বাহ, ভারি সহজ করে বললে! নাক কুঁচকাল মুসা। একেবারে গ্রীক দিয়ে শুরু। তা স্ন্যাংটা কি?

কাল তোমাদের কথা থেকেই আইডিয়াটা পেয়েছি আমি, কিশোর বলল। সেটাই জানতে বেরিয়েছিলাম। দেখলাম, আমার ধারণাই ঠিক।

কিন্তু এই রাইমিং স্ল্যাং জিনিসটা কি? রবিনের প্রশ্ন।

এটা এক ধরনের অত্যাং। যে শব্দটা বলতে চাও, সেটা বলার দরকার নেই, অন্য আরেকটা শব্দ দিয়ে সেটা বোঝাতে পারবে। শব্দের মানে এক হওয়ারও দরকার নেই, ছন্দের মিল থাকলেই হল। কবিতার মত করেও বলতে পার। এই যেমন, স্নো বোঝনোর জন্যে তুমি বলতে পার, ফল অ্যাণ্ড থ্রো।

মারছেরে! গ্রীক না, একেবারে মঙ্গল গ্রহের ভাষা, আবার নাক কুঁচকাল মুসা। তারমানে বেসবল বোঝাতে হলে আমাকে বলতে হবে, থ্রো দ্য বল?

বলতেই হবে, এমন নয়, তবে ইচ্ছে করলে ওরকম করে বলে বোবঝাতে পার। তবে বেসবল বোঝতে হলে ম্যাঙে বল বলতে পারবে না, বলতে হবে অন্য কিছু। এই যেমন ডাউন দ্য ওয়াল, কিংবা শর্ট অ্যাণ্ড টল, অথবা আর কিছু।

বুঝেছি, রবিন বলল। কিন্তু এই স্ল্যাঙের সঙ্গে ককনি আর কারমলের সম্পর্কটা কোথায়? দাঁড়াও দাঁড়াও, ওর বাবা ছিল ককনি!

এবং অস্ট্রেলিয়ান। ককনিরা ওই স্ল্যাঙের আবিষ্কারক, সঙ্গে করে নিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়ায়। অন্য লোককে বোকা বানাতে নিজেদের মধ্যে এখনও ওই স্ল্যাঙের মাধ্যমে কথা বলে ককনিরা।

কারমলের ধাঁধার মত করে, বলল মুসা।

মাথা ঝাঁকাল কিশোর। রকি বীচের পাবলিক লাইব্রেরিতে গিয়েছিলাম আমি প্রথমে। তারপর লস অ্যাঞ্জেলেসের লাইব্রেরিতে। রাইমিং স্ল্যাঙের ওপর যত বই পেয়েছি সব ঘেঁটেছি। ধাঁধার নকলটা টেনে নিল সে। প্রথমেই ধর, অ্যাপলস অ্যাণ্ড পেয়ারস। তারমানে, বুঝিয়েছে, স্টেয়ারস।

স্টেয়ারস? সিঁড়ি! হাঁ হয়ে গেছে মুসা। জিন্দেগিতেও কল্পনা করতে পারতাম আমি।

স্ল্যাঙের নিয়মকানুন না জানলে কেউই পারবে না, কিশোর বলল। ইউ অ্যাণ্ড মি মানে কাপ অভ টি। ককনিতে ট্রাবল অ্যান্ড স্ট্রাইফ বলে ওয়াইফ; মানে স্ত্রী বোঝায়। তেমনি, বেড, অর্থাৎ বিছানাকে বলে আক্কেল নেড। কি বুঝলে?…

বিমল হাসিতে দাঁত বেরিয়ে পড়ল কিশোরের।

সমাধান তাহলে করে ফেললাম? মুসার মুখেও হাসি।

না না, বেশ খুশি হয়েই যেন মাথা ঝাঁকাল কিলোর। এত সহজ না। শয়তানী বুদ্ধিতে ঠাসা ছিল কারমলের মগজ। সমাধান এখনও অনেক দেরি। তবে রাইমিং স্ল্যাং থেকে কিছু সূত্র পেলাম এই যা। বাকিগুলো সমাধান করতে হবে যেখানে আমাদের যেতে বলা হয়েছে সেখানে গিয়ে।

কেন রাইমে সব জবাব নেই? রবিন জিজ্ঞেস করল।

না, অস্বস্তি ফুটল কিশোরের কণ্ঠে। বলা যায় না, নতুন কোন কায়দা করে রাখতে পারে কারমল?

বুঝব কি করে তাহলে?

রাইমের সূত্র আমাদেরকে যেখানে টেনে নিয়ে যায়, সেখানে গিয়ে হয়ত নতুন সূত্র পাওয়া যাবে। ধর, সিঁড়িতে যেতে বলা হয়েছে। যখন ওই সিঁড়ি পাব, হয়ত ওটার কাছে ধাঁধার পরের সূত্র দ্য লেডি ফ্রম ব্রিস্টলের মানে পেয়ে যাব।

চল তাহলে। হোয়্যার দ্য ওয়াইল্ড ডগস লিভস-এর মানে জানি আমরা, কারমলের বাড়ি। তারপর আসছে বটল অ্যাণ্ড স্টপার। মানে কি?

খাইছে! চেঁচিয়ে উঠল মুসা। সত্যিই তো। এর মানে তো জানি না।

মিটিমিটি হাসল কিশোর। এটার মানে সব বইতেই পেয়েছি। সহজ। দণ্ড পাওয়া সব অপরাধীই জানে…।

অপরাধী? চোখ বড় বড় হয়ে গেল রবিনের। বুঝেছি! স্টপার দিয়ে হবে কপার! কপ, অর্থাৎ পুলিশ!

ঠিক, বলল কিশোর। বুড়ো কারমলের বাড়ির কাছে গিয়ে একজন পুলিশ খুঁজব।। চল, চল, দেরি করছি কেন তাহলে? তর সইছে না আর মুসার।

সমস্ত নোট গুছিয়ে নিতে লাগল কিশোর। ওয়াকিটকি নিতে বলল সহকারীদের। বলা যায় না, দরকার হয়েও যেতে পারে।

সবে গিয়ে বেরোনোর জন্যে ট্র্যাপোর তুলেছে মুসা, এই সময় বাজল টেলিফোন। কিশোর ধরল। তিন গোয়েন্দা বলছি। সরি, এখন কথা বলার সময় নেই, বাইরে বেরোচ্ছি।

স্পীকারে ভেসে এল ভোতা একটা কণ্ঠ। না বেরোলেই ভাল করবে। সাবধান। অন্যের ব্যাপারে নাক না গলানোর পরামর্শ দিচ্ছি।

খুট করে কেটে গেল লাইন। তারপর নীরবতা। ঢোক গিলল রবিন। মহিলার গলা, কিশোর, তাই না? ঠিক বুঝলাম না। তবে মহিলাই হবে, কথায় ব্রিটিশ টান। জেনি এজটার?

তা কি করে হবে? মুসা বলল। ওই বেটির সঙ্গে কথাই হয়নি আমাদের। আমাদের ফোন নাম্বার পেল কিভাবে? কারমলরা নিশ্চয় বলেনি।

জেনি নাহলে আর কে?: চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল কিশোর। আমাদের অচেনা কেউ? অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছে?

এলসা কারমল হয়ত বলতে পারবে, আশা করল রবিন।

অস্বস্তিভরে মাথা ঝাঁকাল অন্য দুজন।

বাইরে বেরিয়ে সাইকেলে চাপল ওরা। গেট দিয়ে বেরোনোর সময় একটা লোককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখল রাস্তার ওপাশের একটা বড় ঝোপের ধারে। বিশালদেহী। গলায় লাল টাই, হাসছে মনে হল। তারপর হঠাৎ উধাও হয়ে গেল। যেন ভোলবাজি, এই ছিল এই নেই। পরস্পরের দিকে তাকাল ছেলেরা।

স-সত্যিই ছিল? ভূতের ভয়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেছে মুসার। আমাদের ওপর নজর রাখছিল? রবিনের প্রশ্ন।

হয়ত, বলল কিশোর। না-ও হতে পারে। সাধারণ কেউ, হয়ত বেড়াতে বেরিয়েছে।

তাহলে গেল কোথায়? মুসা বলল।

গেছে ওদিকেই কোথাও। রোদ বেশি, ছায়াও বেশি। ছায়ায় হারিয়ে গেছে। বোধহয়। রাস্তার সামনে পেছনে দুদিকেই তাকাল। কেউ নেই। এস। ধাঁধার সমাধান করে রতগুলো বের করতে হবে আমাদের।

তা তো নিশ্চয়, মাথা দুলিয়ে বলল মুসা। তবে ডজনখানেক বটল অ্যাণ্ড স্টপার আমাদেরকে ঘিরে রাখলে এমন নিরাপদ বোধ করতাম আরকি।

হেসে উঠল রবিন আর কিশোর। কিন্তু অস্বস্তি তাড়াতে পারল না।

<

Super User