মাথায় হাত রেখে রাফিয়ানকে শব্দ না করার ইঙ্গিত করল জিনা। তারপর পা টিপে টিপে এগোল সিটিং রুমের দিকে। ও জানে, ফ্ল্যাটে কোথাও না কোথাও বার্গলার অ্যালার্ম রয়েছেই, থাকে এসব বাড়িতে। তাহলে বেজে উঠছে না কেন? হয়ত অফ করা রয়েছে।

আস্তে দরজা ফাঁক করে উঁকি দিল জিনা। টর্চের আলো চোখে পড়ল। নড়ছে। আর ঠেকানো গেল না রাফিয়ানকে। চিৎকার করতে করতে গিয়ে ঢুকল সিটিং রুমে। বিপদের পরোয়া না করে জিনাও ঢুকল ঘরে। চেঁচাতে লাগল, চোর! চোর!

টাব চেয়ারটার কাছে ছিল লোকটা। টর্চের আলো নিচের দিকে, ফলে তার চেহারা দেখতে পেল না জিনা, শুধু আবছা একটা অবয়ব। রাফিয়ান চিৎকার করে উঠতেই ঝট করে সোজা হল সে, ফিরে তাকাল।

জিনার চোর চোর চিৎকার শুনে দিল জানালার দিকে দৌড়।

রাফি! ধর ওকে! ধর ধর! আবার চেঁচিয়ে উঠল জিনা।

মস্ত জানালা, ফ্রেঞ্চ উইনডো। খোলা। ওটার দিকেই গেল লোকটা। সে জানালা ডিঙানোর আগেই পৌঁছে গেল রাফিয়ান। পা কামড়ে ধরতে গেল। দাঁত বসে গেল প্যান্টে, পায়ে লাগল না। ঝাড়া দিয়ে সেটা ছুটিয়ে নিয়ে একলাফে ব্যালকনিতে গিয়ে পড়ল লোকটা।

ইতিমধ্যে ছুটে এসেছে তিন গোয়েন্দা। মিস্টার পারকারেরও হাঁকডাক শোনা যাচ্ছে।

জানালার কাছে ছুটে গেল কিশোর, তার পরপরই মুসা।

লোকটাকে দেখতে পেল না। অনুমান করল ওরা, নিশ্চয় লাফিয়ে পাশের বাড়ির ব্যালকনিতে গিয়ে পড়েছিল লোকটা, তারপর ফায়ার এসকেপ বেয়ে নেমে চলে গেছে।

কেরিআন্টি আর মিস্টার পারকারও সিটিং রুমে এসে ঢুকেছেন।

চোরই, জিনা বলল। চেহারা দেখিনি। কিন্তু আমি শিওর, ওই কোলাব্যাঙটাই, রবার্ট ম্যাকি। টাব চেয়ারটার ওপর ঝুঁকে খুঁজছিল।

নিশ্চয় নেকলেসটা, মুসা বলল।

হ্যাঁ, ওটাই, আর কি খুঁজবে, কিশোর বলল। ওই চেয়ারেই লুকানো আছে। ওটা, আগে থেকেই জানে ব্যাটা।

এজন্যেই চেয়ার কেনার এত আগ্রহ ওর, কেরিআন্টি বললেন।

দেখ ছেলেরা, কেশ, একটু রুক্ষ স্বরেই বললেন মিস্টার পারকার। না জেনে অযথা কারও ওপর দোষ চাপানো ঠিক নয়। তার চেহারা দেখনি, কোন প্রমাণ নেই, ম্যাগিই যে এসেছিল কি করে বুঝলে?

যুক্তি দিয়ে, শান্তকণ্ঠে বলল কিশোর।

দেখ কিশোর, তোমার বুদ্ধির ওপর আমার আস্থা আছে। তবু, সব চেয়ে বুদ্ধিমান লোকটিও ভুল করে। তোমরা যা বলছ, পুলিশ সেটা বিশ্বাস না-ও করতে পারে। ওরা প্রমাণ চাইবে, সলিড প্রমাণ। চোর ঢুকেছিল, এটুকুই বলতে পারব, ব্যস। অ্যাটেমপৃড় টু বার্গলারি। পুলিশকে অবশ্যই জানাব কাল, তবে রবার্ট ম্যাকিই এসেছিল, একথা বলব না।

দ্রুত্ত, একবার সারা ঘরে চোখ বুলিয়ে নিলেন কেরিআন্টি। জানালেন, সব ঠিকই আছে, কিছু চুরি যায়নি। জানালায় কিছু দাগ আবিষ্কার করল কিশোর, যেগুলো জোর করে খোলার ফলে হয়েছে। আর কোন সূত্র নেই। এ দিয়ে পুলিশ চোর ধরতে পারবে না যে, ভাল করেই বুঝল।

আবার শুতে গেল ছেলেমেয়েরা। জিনা, মুসা আর রবিন নিশ্চিত, রবার্ট ম্যাকিই এসেছিল। কিশোরের মনে কিছুটা সন্দেহ রয়ে গেল। সত্যি ম্যাকি? অন্য কেউ না তো?

পুলিশ কিছু করলে করুক না করলে নেই, জিনা বলল। আমরাই এর বিহিত করব।

হুফ! একমত হল রাফিয়ান।

ভাগ্যিস, রবিন বলল, আগেই পেয়ে গিয়েছিলাম নেকলেসটা। নইলে আজ নিয়ে যেতোই। আমরা জানতেও পারতাম না ওটা ছিল, চুরি গেছে। আন্টি কোথায় রেখেছে ওটা, জিনা?

দৈখলাম তো মার হাতব্যাগে রাখল। পরে সরিয়ে-টরিয়ে রেখেছে কিনা জানি না।

পরদিন সকালে যথারীতি সম্মেলনে চললেন মিস্টার পারকার। বললেন, যাবার পথে পুলিশকে জানিয়ে যাবেন।

নাস্তার টেবিলে বসে চোর আসার ব্যাপারটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা চালাল ছেলেময়েরা। কেরিআন্টি রান্নাঘরে ব্যস্ত।

আমি এখনও বলছি, জিনা বলল, রবার্ট ম্যাকিই এসেছিল।

আমি অতোটা শিওর না, মাথা নাড়ল কিশোর। রাতে শুয়ে শুয়ে ভেবেছি। কিউরিও আর সুভনির বিক্রি করে ম্যাকি, ওসব জিনিসের খুব ভাল লাভ। অনেক সময় আসল দামের বহুগুণ। টাব চেয়ারটা কিনতে চাওয়ার কারণ সেটাও হতে পারে। যদি সে জানতোই, নেকলেসটা রয়েছে ওটার মধ্যে, তাহলে আরও আগেই হাতানোর চেষ্টা করল না কেন? আর সেদিন নিলাম ডাকার সময় এত কিসের দ্বিধা ছিল তার? একবারেই দুশো-তিনশো পাউণ্ড দাম হেঁকে নিয়ে নিতে পারত। আর রাতের বেলা লোকের ব্যালকনি থেকে লাফঝাপ করাও ঠিক মানায় না তাকে। পারবে বলে মনে হয় না।

তারমানে, মুসা বলল, তুমি বলতে চাইছ, অন্য কেউ জানে নেকলেসটার কথা। কে সেই লোক?

ম্যাকিকে কিন্তু খুব একটা ভাল লোকও মনে হয় না, রবিন বলল। সেটা নিশ্চয় স্বীকার করবে, কিশোর? কাল রাতের চোর সে হতেও পারে।

সে-ই! জোর দিয়ে বলল জিনা।

সে নয়, একথা কিন্তু আমি বলছি না, কিশোর বলল। আমি অন্যান্য সম্ভাবনার কথা বলছি। যুক্তি দিয়ে ঠিক মেলাতে পারছি না, এই আরকি। তাছাড়া প্রমাণ কোথায়?

হাসল জিনা। নিজের ওপর খুব বেশি আস্থা তোমার, কিশোর পাশা। প্রমাণ চাও? দেখ, বলতে বলতে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিল। টেনে বের করে বলল, এই দেখ।

ভুরু কুঁচকে জিনিসটার দিকে তাকাল কিশোর। নীল রঙের একটুকরো। কাপড়।

কাল রাতে লোকটার প্যান্ট কামড়ে ধরেছিল রাফি, জিনা বলল। ছিঁড়ে রেখে দিয়েছে। এটা প্রমাণ নয়? এতে লোকটার গায়ের গন্ধ লেগে আছে। লোকটাকে এখন সামনে পেলে চিনতে পারবে রাফি। ম্যাকির দোকানে ওকে নিয়ে যাব। ওকে দেখলেই রেগে যাবে রাফি, দেখ…

তাতেও কিছু প্রমাণ হয় না। রাফি ওকে দেখতে পারে না। রেগে তো যাবেই।

তবু, যাবই। নেকলেসটার কথা যদি জেনে থাকে সে, সহজে ক্ষান্ত হবে না।

কিন্তু ওখানে গেলেই বুঝে ফেলবে, আমরা তাকে সন্দেহ করছি, যুক্তি দেখাল রবিন। তখন তার ওপর নজর রাখা কঠিন হয়ে যাবে আমাদের জন্যে।

ও আমাদেরকে ভালমত চেনে না। চেনে? জিনা বলল। সেল-রুমে ভিড় ছিল। তাছাড়া মার সঙ্গেই কথা বলছিল সে, আমাদের দিকে বিশেষ নজর দেয়নি।

তা ঠিক, মুসা বলল। কাল রাতেও আমাদেরকে দেখেনি। আমরা আসার আগেই পালিয়েছে।

আমাদের দেখেনি, কিশোর মনে করিয়ে দিল। কিন্তু জিনাকে দেখেছে।

দেখলেও আবছাভাবে দেখেছে। আমি যেমন দেখেছি।

কিন্তু রাফি? রবিন বলল। ওকে তো দেখেছে। শুধু দেখেইনি, দাঁতের আঁচড়ও খেয়েছে নিশ্চয়।

হুফ! মাথা ঝাঁকাল রাফিয়ান।

চুপ হয়ে গেল জিনা। ভাবছে। হঠাৎ উজ্জ্বল হয়ে উঠল চোখ। ঝুঁকি একটা নিতেই পারি আমরা। আমি আগে রাফিকে নিয়ে দোকানে ঢুকব, তোমরা বাইরে থাকবে। যদি আমাদের চিনেই ফেলে, সন্দেহ করে, এরপর থেকে আমি আর ওর

সামনে যাব না! তোমরা তখন নজর রাখবে। কাজেই নজর রাখার অসুবিধের কথা যে বলছ, তা হবে না।

তর্ক করলে করতে পারত কিশোর, কিন্তু করল না। জিনার কথায় যুক্তি আছে। অবশ্যই।

ঘন্টাখানেক পর রওনা হল ওরা। কাপড়টা সঙ্গে নিল জিনা। মিমোসা অ্যাভেনুতে পৌঁছে আলাদা হয়ে গেল ওরা। জিনা আর রাফিয়ান চলল আগে, ছেলেরা রইল পেছনে। ম্যাকির দোকানের কয়েক দোকান আগেই থেমে গেল তিন গোয়েন্দা।

পকেট থেকে কাপড়ের টুকরোটা বের করে ভালমত শোকাল রাফিয়ানকে জিনা। তারপর তাকে নিয়ে ঢুকে পড়ল দোকানে।

দোকানেই রয়েছে ম্যাকি। জিনাকে দেখে তৈলাক্ত হাসি হেসে এগিয়ে এল। মোলায়েম গলায় জিজ্ঞেস করল, তোমার জন্যে কি করতে পারি?  কিন্তু জবাব দেয়ার সময় পেল না জিনা। রাতের অতিথিকে বোধহয় চিনে ফেলেছে রাফিয়ান। ঘেউ ঘেউ শুরু করল। ছুটে যেতে চাইছে জিনার হাত থেকে। লাফিয়ে গিয়ে ম্যাকির টুটি কামড়ে ধরতে চায়।

এই, চুপ! রাফিকে ধমক লাগাল জিনা। লোকটার দিকে চেয়ে লজ্জিত কণ্ঠে বলল, সরি, এমন করছে কেন বুঝতে পারছি না। ওর স্বভাব খুব ভাল। সহজে কাউকে কামড়াতে যায় না।

ভয় দেখা দিল লোকটার চোখে। সন্দেহে রূপ নিল সেটা। জিনা নিশ্চিত হয়ে গেল, ম্যাকিই গিয়েছিল রাতে। চিনে ফেলেছে রাফিয়ান, নইলে এত উত্তেজিত হত না। আর লোকটাও, বুঝে গেছে, এই কুকুরটাই তাকে কামড়াতে চেয়েছিল।

যাও, বেরোও তোমার কুত্তা নিয়ে! ধমকে উঠল ম্যাকি। জানোয়ারটানোয়ার ঢুকতে দিই না দোকানে এজন্যেই!

কিশোরের কথা না শুনে ভুল করেছে, বুঝতে পারল এতক্ষণে জিনা। হুঁশিয়ার হয়ে গেছে ম্যাকি। ভিড়ের মধ্যে দেখেছে বটে, কিন্তু দেখেছে তো, তিন গোয়েন্দাকেও চিনে রেখেছে কি না কে জানে!

বন্ধুদের কাছে ফিরে এল সে।

খবর শুনে খুশি হল না কিশোর। সে আগেই আন্দাজ করেছে এরকম একটা কিছু ঘটতে পারে। আরেকটা ব্যাপার জিনা খেয়াল করেনি, সে বেরোনোর পর পরই দোকান বন্ধ করে দিয়েছে ম্যাকি। দরজায় বন্ধ নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়ে তার পিছু নিয়েছে। উল্টো দিক থেকে বইছে বাতাস, ফলে তার গন্ধ পায়নি রাফিয়ান। একটা গাড়ির আড়ালে লুকিয়ে বসে এখন ওদের সব কথা শুনছে।

ঠিক আছে, কিশোর, হাত তুলে বলল জিনা, স্বীকার করছি, ওভাবে শত্রুর ঘরে ঢুকে ভুল করেছি। কিন্তু শিওর তো হওয়া গেল, নেকলেস চুরি করার জন্যে ওই লোকটাই এসেছিল কাল রাতে। এখন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, এরিনা কলিনসের জিনিস তাকে পৌঁছে দেয়া দরকার।

এখুনি যাই না কেন তাহলে? পরামর্শ দিল মুসা। গিয়ে তাকে জানাই খবরটা।

হ্যাঁ, যাওয়া যায়, রবিন বলল। আজ বাসায় পেতেও পারি।

সুতরাং আবার সাইক্যামোর রোডে চলল ওরা। বাড়িটার কাছে পৌঁছল। সদর দরজা দিয়ে ঢোকার সময় হঠাৎ কি মনে করে পেছন ফিরে তাকাল জিনা। এই! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল সে। দেখেছি! ম্যাকিকে দেখলাম মোড়ের ওপাশে চলে যেতে!

দূর, কি যে বল না, বিশ্বাস করল না মুসা। তোমার মাথায় এখন ম্যাকি ঢুকে রয়েছে তো, যেখানে যাও সেখানেই দেখ। এসো।

এরিনা কলিনসকে পাওয়া গেল সেদিন। ঘন্টা শুনেই এসে দরজা খুলে দিল। বয়েস কম। লম্বা কালো চুল পিঠের ওপর ছড়িয়ে আছে। পাশে তার ছোট্ট মেয়েটি, মলি। সুন্দর চেহারা, তবে নাকটা সামান্য বোচা, হাসিটা খুব মিষ্টি। বয়েস বছর ছয়েকের বেশি না।

নিজেদের পরিচয় দিল কিশোর। বলল, জরুরি কথা আছে।

হাসল এরিনা। বেশি জরুরি?

হ্যাঁ।

এসো। ছেলেমেয়েদেরকে ঘরে নিয়ে গেল এরিনা। বল।

সব কথা খুলে বলতে লাগল ওরা। রাফির সঙ্গে ভাব হয়ে গেছে মলির, খানিকক্ষণ পর সে-ও ওদের কথা শোনায় মনোযোগী হল, কৌতূহল জেগেছে।

আশ্চর্য! ছেলেদের কথা শেষ হলে বলল এরিনা। অবিশ্বাস্য!

কিন্তু সত্যি, জিনা বলল। বিশ্বাস না হলে নাম্বার দিচ্ছি, ফোন করুন আমার মাকে।

টেলিফোনের কাছে উঠে গেল এরিনা। কথা বলল মিসেস পারকারের সঙ্গে। জানল, ছেলেমেয়েরা মিথ্যে বলেনি। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল সে। মলিকে কোলে নিয়ে আদর করল, আন্তরিক ধন্যবাদ জানাল তিন গোয়েন্দাকে, জিনাকে, এমনকি রাফিয়ানকেও।

তোমাদেরকে বলতে অসুবিধে নেই, এরিনা বলল, সময় খুব খারাপ যাচ্ছে আমার। পিয়ানো বাজানো শিখিয়ে আর কত আয় হয় বল। কোনমতে টেনেটুনে চলে আরকি মা-মেয়ের। মিস মেয়ারবাল মস্ত উপকার করে গেলেন আমাদের।

হারটা খুব দামি, কিশোর বলল। গোলাপী মুক্তা দুর্লভ তো, দাম বেশি।

আর খুব সুন্দর, রবিন বলল। দেখলে রেখে দিতে ইচ্ছে হবে আপনার।

কিন্তু ইচ্ছে করলেও রাখতে পারব না, এরিনা বলল, কারণ আমার টাকা দরকার। তাছাড়া মিসেস পারকার একটা ভাল পরামর্শ দিলেন, বললেন, সাথে সাথে যেন বিক্রি করে টাকাটা ক্যাশ করে ফেলি। রেখে দিলে বিপদ হতে পারে। চোরের উপদ্রব নাকি শুরু হয়েছে। খোয়া যেতে পারে।

হ্যাঁ, পারে, জিনা বলল। চলুন আমাদের সঙ্গে। এখুনি নিয়ে নেবেন।

খানিকটা মাপ চাওয়ার ভঙ্গিতেই যেন হাসল এরিনা। যেতে পারলে তো ভালই হত। কিন্তু সারাদিন ব্যস্ত থাকতে হবে আমাকে। ছাত্ররা আসবে। আজ ডেট আছে অনেকের। কাল হয়ত যেতে পারব। একমুহূর্ত থামল সে। এতই অবাক হয়েছি কথাটা শুনে, তোমার মাকে ধন্যবাদ দিতেও ভুলে গেছি, জিনা। লাইনটা লাগাও না আরেকবার।

ডায়াল করল জিনা। সাথে সাথেই ধরলেন মা। তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে এরিনা বলল কাল সে আসছে, মিসেস পারকারের কোন অসুবিধে হবে কিনা। হবে না, তিনি জানালেন। বলে দিলেন সারা সকাল বাসায়ই থাকবেন। ঠিক হল, দশটা নাগাদ যাবে এরিনা।

ফোন রেখে দিয়ে এরিনা বলল, তাহলে কাল আবার দেখা হচ্ছে। অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাদেরকে, অনেক কষ্ট করেছ আমার জন্যে।

কাল দেখা হবে! অনেকটা মায়ের মত করেই বলল মলি। রাফিকে ছাড়তে চাইছে না সে। ভীষণ পছন্দ করে ফেলেছে কুকুরটাকে। আর রাফিও বাচ্চা পছন্দ করে, সহজেই মন জয় করে নিতে পারে ওদের।

পরদিন সকালে মস্ত জানালার কাছে বসে পথের দিকে তাকিয়ে রইল ছেলেমেয়েরা। ২

ওই যে, আসছে, হঠাৎ বলে উঠল ওরা। মা-মেয়ে দুজনেই। নিশ্চয় বাসে এসেছে। বাস থেকে নেমে হেটে আসছে।

মেয়েটা সুন্দর, না? রবিন বলল।

মাথা ঝাঁকাল জিনা আর মুসা।

কিশোর বলল, যাই, আন্টিকে খবরটা দিই।

কিশোরের সঙ্গে জানালার কাছ থেকে সরে এল রবিন আর মুসা, কিন্তু জিনা বসেই রইল। একটা লোক দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে তার।

পথের মোড়ে দেখা যাচ্ছে লোকটাকে। দাঁড়িয়ে পড়েছে। তাকিয়ে আছে এরিনার দিকে। জিনার মনে হল, মা-মেয়েকে অনুসরণ করে এসেছে লোকটা।

ভুলও হতে পারে আমার, বিড়বিড় করল সে। দূর থেকে ঠিক চিনতে পারছি না…। এগোল লোকটা। আরি! এ তো রবার্ট ম্যাকি! এই রাফি, দেখ দেখ!

জানালার কাঁচে নাক ঠেকিয়ে দেখল রাফিয়ান। চাপা গরগর করে উঠল।

কাপড় কি পরেছে দেখেছিস! যেন একটা কাকতাড়ুয়া পুতুল। লম্বা ওভারকোট, কলার তুলে দেয়া, হ্যাট টেনে নামিয়েছে কপালের ওপর..ভেবেছে আমাদের চোখকে ফাঁকি দিতে পারবে। হুহ! ভালই ছদ্মবেশ নিয়েছে ব্যাটা!

হুফ! যেন একমত হল রাফিয়ান।

চল, ওদেরকে গিয়ে বলি। তিন গোয়েন্দাকে রান্নাঘরে পেল জিনা। উত্তেজিত কণ্ঠে বলল, এই, গণ্ডগোল হয়েছে! রবার্ট ম্যাকি এরিনা কলিনসের পিছু। নিয়েছে। চলে এসেছে এখানে।

<

Super User