বুঝতে পারছি না! কিশোর বলল। ভিকটর সাইমনের টাকার অভাব হবার কথা নয়। তাঁর সব বই বেস্টসেলার।

কিন্তু ব্যাংক ডাকাতিতে যদি জড়িতই না হবেন, প্রশ্ন তুলল রবিন।

সিকিউরিটি গার্ড এখানে কেন?

জানি না।

বিকেলের শুরু। হেডকোয়ার্টারে আলোচনায় বসেছে তিন গোয়েন্দা। ওরা সাইপ্রেস ক্যানিয়ন ড্রাইভে থাকতে থাকতেই আবার ফিরে গেছে সিকিউরিটি ম্যান। সেই কথাই আলোচনা করছে এখন।

কাল রাতে অন্ধ লোকটা খুঁড়িয়েছে, রবিন বলল। মিস্টার সাইমনও খোঁড়ান।

অন্ধ লোকটা কি অ্যাক্সিডেন্টের আগে খুঁড়িয়েছিল? কিশোর জিজ্ঞেস করল।

খেয়াল করিনি।

খোঁড়ানোর ব্যাপারটা হয়ত কাকতালীয়, বলল মুসা। মানিব্যাগ পাওয়াটাও। মিস্টার সাইমনের বাড়িতে গার্ডের যাওয়াটাকেও যদি সেরকম কিছু ধরা যায়, অনেকগুলো কাকতালীয় ব্যাপার হয়ে গেল না?

পুলিশের কাছে যাচ্ছি না কেন আমরা? রবিন বলল। মিস্টার সাইমনও তাই বললেন। ডাকাতিতে জড়িত থাকলে বলতেন কি?

অনেক অপরাধী বলে ওরকম, বলল মুসা। নিজেকে নির্দোষ বোঝানোর জন্যে।

পুলিশ আমাদের কথা বিশ্বাস করবে না, কিশোর বলল। অন্তত মিস্টার সাইমনের ব্যাপারে। আমি নিজেই বিশ্বাস করতে পারছি না। তার যে সুনাম, এই জিনিস নষ্ট করতে চাইবে না কোন সুস্থ মস্তিষ্কের লোক। তবে মনে হচ্ছে এই ডাকাতির সঙ্গে কিছু একটা যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। মিস্টার রোজার হয়ত আমাদের সাহায্য করতে পারবেন।

মিস্টার রোজার? চিনতে পারল না রবিন।

ডেস্কে রাখা একটা খবরের কাগজ টেনে নিল কিশোর। সান্তা মনিকা ইভনিং আউটলুকের একটা সংখ্যা। সেদিনই বেরিয়েছে। বাড়ি ফেরার পথে নাস্তা খেতে থেমেছিল তিন গোয়েন্দা, তখন পত্রিকাটা কিনেছে সে।

ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডের নাম ড্যানি রোজার, জানাল কিশোর। এই পত্রিকায় লিখেছে। টেলিফোন ডিরেক্টরির জন্যে হাত বাড়াল সে। অল্পক্ষণেই পেয়ে গেল যা খুঁজছে।

ম। একজন ড্যানি রোজারের নাম আছে। তিনশ বারো ডলফিন কোর্টে থাকে। সৈকতের ধারে।

কিশোওর! বাইরে থেকে ডাক শোনা গেল। আরে এই কিশোর, কোথায়

তুই?

দীর্ঘশ্বাস ফেলল কিশোর। চাচী। সেই সকালের পর থেকে আর আমাকে দেখেনি তো। অস্থির। কত খাবার আর কাজ জমিয়ে রেখেছে কে জানে!

আমার মা-ও নিশ্চয় রেগে ভোম, বলল মুসা। বহুত কাজ ছিল। ফেলে রেখে পালিয়েছি। গেলেই এখন ঘর মোছাবে কিংবা বাগানের ঘাস কাটাবে।

হ্যাঁ, যা বলছিলাম, কিশোর বলল। আমরা মিস্টার রোজারের সঙ্গে দেখা করব। সম্ভব হলে আজ বিকেলেই। তোমরা আসতে পারবে? রকি বীচ মার্কেটে, সন্ধ্যা সাতটায়। ওখান থেকে যাব তার বাড়িতে।

পারব মনে হয়, জবাব দিল মুসা।

আমিও পারব, হেসে বলল রবিন। কাল তো আর ইস্কুল নেই যে পড়া লাগবে। সন্ধ্যায় দেখা হবে।

ট্রেলার থেকে বেরিয়ে এল ওরা।

বিকেলটা স্যালভিজ ইয়ার্ডে কাজ করতে হল কিশোরকে। সকাল সকাল রাতের খাওয়া সেরে সাইকেল নিয়ে বেরোল।

সাতটার পাঁচ মিনিট আগে এল মুসা আর রবিন। সান্তা মনিকায় চলল তিনজনে।

পথের শেষ মাথায় ছোট ছোট কয়েকটা বাড়ির একধারে খুঁজে পাওয়া গেল তিনশ বারো নাম্বার। রাস্তার নাম ডলফিন কোর্ট। ড্রাইভওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে বাদামি সেডান, সকালে যেটা দেখেছিল ছেলেরা। বাড়ির সামনের দিকে অন্ধকার, পেছনের একটা জানালায় আলো দেখা যাচ্ছে। সাইকেল রেখে গিয়ে জানালা দিয়ে উঁকি দিল ওরা। ওটা রান্নাঘর।

লোকটা আছে। একা। জানালার ধারে বসে আছে। সামনে একগাদা খবরের কাগজ। হাতের কাছে টেলিফোন। শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে টেবিলক্লথের দিকে। সকালের চেয়ে বয়স্ক লাগছে এখন তাকে। চুল পাতলা। চোখের নিচে কালি।

চুপচাপ দেখল ছেলেরা। তারপর ঘুরে, সামনের দরজায় বেল বাজাতে চলল কিশোর।

ড্রাইওয়েতে পথ রোধ করল পিস্তলধারী এক লোক। কি চাই?

তাদের দিকে নিশানা করেনি পিস্তল, শান্ত, সংযত কণ্ঠ। শঙ্কিত হল কিশোর। লোকটার ঠাণ্ডা ভাবভঙ্গি দেখেই বুঝল, বিপজ্জনক লোক। চোখে সানগ্লাস।

হাত নেড়ে কিছু বলতে যাচ্ছিল মুসা, চুপ! বলে তাকে থামিয়ে দিল লোকটা।

জানালা খুলে গেলু। মুখ বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল রোজার, রক, কে?

পিস্তল নেড়ে রক বলল, এই ছেলেগুলো চুরি করে জানালা দিয়ে দেখছিল।

হুঁ? অবাক মনে হল রোজারকে। কিছুটা কৌতূহলী। আবার বলল,? এবার সতর্ক।

ঘরে ঢোক, আদেশ দিল পিস্তলধারী। ওদিকে। হ্যাঁ, হাঁট।

আবার রান্নাঘরের পেছনে নিয়ে আসা হল ওদেরকে। পেছনের দরজা দিয়ে ঢোকানো হল।

এসব কি? রোজার জিজ্ঞেস করল। সকালে তিনটে ছেলের কথা বলেছিলেন মিস্টার সাইমন। তোমরাই দেখা করতে গিয়েছিলে, না? তোমাদেরকে পথেও দেখেছি আমি।

হ্যাঁ, মিস্টার রোজার, জবাব দিল কিশোর।

বস, চেয়ার টেনে দিল রোজার।

ঘটনাটা কি, ড্যানি? জানতে চাইল রক। ওরা কারা?

এখনও জানি না। তোমার পিস্তল সরাও। ভয় লাগে, কখন গুলি ছুটে যায়।

দ্বিধা করল রক। তারপর পাজামার নিচের দিক তুলে, হাঁটুর নিচে বাঁধা, হোলস্টারে ঢুকিয়ে রাখল পিস্তলটা।

চোখ মিটমিট করল মুসা। কিছু বলল না। টেবিলের কাছে বসেছে ওরা।

মিস্টার সাইমন বললেন, রোজার বলল। তোমাদের একজন নাকি এই সন্দেহজনক লোককে ব্যাংকের কাছে দেখেছ।

ঘটনাটা কি, খুলে বলবে? প্রায় চেঁচিয়ে উঠল রক।

ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলল রোজার। খবর শোননি? আজ সকালে ব্যাংকে ডাকাতি হয়েছে।

ডাকাতি? কই, শুনিনি তো। কি করে ঘটল? এই ছেলেগুলো কে? কিছুই বুঝতে পারছি না।

দ্রুত, সংক্ষেপে সব জানাল রোজার শেষে বলল, আর আমি গাধাই ব্যাটাদের ঢুকতে দিয়েছি। পুলিশের সন্দেহ, আমিও জড়িত। করবেই, আমি যেমন গর্দভ। ভাল করে তাকালাম না কেন তার মুখের দিকে? তাহলেই তো চিনতে পারতাম।

উকিলের কাছে যাও, রক বলল। ব্যবস্থা একটা করে দেবে। তুমি অপরাধী না হলে জোর করে তো পুলিস কিছু করতে পারবে না। কিন্তু এই ছেলেগুলো কেন এসেছে? জানালা দিয়ে উঁকি মারছিল কেন?

গম্ভীর হয়ে গেল রোজার। নিশ্চয় ওরাওঁ সন্দেহ করছে। কিশোরের দিকে কাত হল সে। প্রথমে ভাবলাম, মিস্টার সাইমন সাহায্য করতে পারবেন। গত হপ্তায় টিভিতে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। একটা মূল্যবান কথা বলেছিলেন তখন। বলেছিলেন, মাঝে মাঝে নিরপরাধ লোক অহেতুক বিপদে পড়ে, কারণ, ভুল সময়ে ভুল জায়গায় হাজির থাকে তারা। সোজা কথা কপাল খারাপ। আমার বেলায়ও তাই হয়েছে। মিস্টার সাইমনের কথা মনে পড়ল। ব্যাংকের একজন। সেক্রেটারিও তার কাছে যাবার পরামর্শ দিয়েছে আমাকে। ডাউনটাউন ক্রেডিট রিপোর্টিং সার্ভিস থেকে ঠিকানা জোগাড় করে দিয়েছে। টেলিফোন ডিরেক্টরিতে নাম নেই তার। আমার বিশ্বাস, অনেক বিখ্যাত লোকেরই থাকে না। দেখা করতে গেলাম…।

একেবারে বক্তৃতা শুরু করেছ, বাধা দিয়ে বলল রক। মিস্টার সাইমন কে, সেটাই তো জানি না।

কেশে গলা পরিষ্কার করল কিশোর। তিনি একজন লেখক। শখের গোয়েন্দা। আজ সকালে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তার একটা মানিব্যাগ ব্যাংকের বাইরে রাস্তায় এক লোক ফেলে যায়, সেটা কুড়িয়ে পায় রবিন মিলফোর্ড, রবিনকে দেখাল সে।

ডাকাতটাকে দরজা খটখট করতে দেখেছি আমি, মিস্টার রোজার, রবিন বলল। তালা খুলে আপনি তাকে ঢুকতে দিয়েছেন।

আজ সকালে মিস্টার সাইমনের বাড়ি থেকে ফেরার পথে, মুসা বলল। আপনাকে যেতে দেখেছি। সন্দেহ হয়েছে। ভেবেছি, সাইমনের সঙ্গে আপনার কোন যোগাযোগ আছে। ডাকাতির সঙ্গে…। থেমে গেল সে। সরি, খোলাখুলি। বলে ফেললাম।

আমি শুধু তাঁর সাহায্য চাইতে গিয়েছিলাম, রোজার বলল। কিন্তু তাঁর এখন সময় নেই। নতুন একটা বই লেখায় হাত দিয়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেসের কয়েকজন প্রাইভেট ডিটেকটিভের নাম-ঠিকানা দিয়েছেন। পরামর্শ দিয়েছেন, গোয়েন্দার চেয়ে এখন উকিলের সঙ্গে দেখা করা আমার জন্যে জরুরি। বিকেলে কয়েকজনকে ফোন করেছি। ফিস জান? পিলে চমকে গেছে আমার। গোয়েন্দার ফিস্ আরও বেশি। কোনটার খরচ জোগানোরই সাধ্য আমার নেই।

চেয়ারে সোজা হয়ে বসল কিশোর। মিস্টার রোজার, আগে আপনার ওপর সন্দেহ ছিল আমার। এখন নেই। আপনাকে সাহায্য করতে পারব। আমরা গোয়েন্দা।

পকেট থেকে কার্ড বের করে দিল সে।

তোমরা ছেলেমানুষ…।

বাধা দিয়ে বলল কিশোর, বয়েস কম হতে পারে, কিন্তু সত্যিই আমরা গোয়েন্দা। পুলিশ পারেনি, এমন অনেক জটিল রহস্যের সমাধান আমরা করেছি, বিশ্বাস না হলে পুলিশ চীফ ইয়ান ফ্লেচারকে ফোন করুন। মিস্টার রোজার, আমি বুঝতে পারছি আপনি ডাকাতিতে জড়িত নন।

রবিন আর মুসাও একমত হয়ে মাথা ঝাঁকাল।

মিস্টার রোজার, আবার বলল কিশোর। আপনি ইচ্ছে করলে আমাদের সাহায্য নিতে পারেন।

দ্বিধায় পড়ে গেছে সিকিউরিটি ম্যান। কিন্তু তোমাদের বয়েস এত কম!

এটা কি কোন বাধা?

অস্বস্তিতে নড়েচড়ে বসল রোজার, আঙুল মটকাল। কি জানি। সত্যিকার গোয়েন্দা সংস্থাকেই ভাড়া করা উচিত…কিন্তু…কিন্তু..।

তাতে কত খরচ লাগবে ভেবে দেখেছ? রক বলল।

টেবিলের কাছে একটা চেয়ারে বসেছে সে, রোজারের চেয়ে বয়েস কম। জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রূকুটি করল। আঙুল চালিয়ে ব্যাকব্রাশ করল সোজা সুন্দর চুল। সানগ্লাস খুলে নিয়ে রাখল জ্যাকেটের পকেটে। তারপর বলল, এত ভাবছ কেন বুঝতে পারছি না। তোমাকে অপরাধী বলতে হলে, আগে প্রমাণ জোগাড় করতে হবে পুলিশকে।

আমিই তো আমাকে অপরাধী মনে করছি। নিজের হাতে চাবি দিয়ে তালা খুলে ডাকাত ঢুকতে দিয়েছি।

এ-জন্যে তোমাকে জেলে পাঠাতে পারবে না পুলিশ। আর এতই যদি ভাবনা, এই ছেলেগুলোকেই ভাড়া কর। কেন যেন মনে হচ্ছে আমার, ওরা তোমাকে সাহায্য করতে পারবে। কি করে করবে, জানি না।

সাধ্যমত চেষ্টা করব আমরা,কথা দিয়ে ফেলল মুসা।

যেচে পড়ে আমার উপকার করতে চাইছ তোমরা, রোজার বলল। আজকাল কজন করে এরকম? বেশ…করলাম ভাড়া। নেব তোমাদের সাহায্য। তবে বেশি পয়সা দিতে পারব না, আগেই বলে দিচ্ছি।

শখে গোয়েন্দাগিরি করি আমরা, মিস্টার রোজার, রবিন বলল। পয়সা নিই, না।

<

Super User