সত্যিই, একটা সমস্যায়ই পড়া গেল বলল কিশোর।

পরদিন বিকেলে হেডকোয়ার্টারে বসে আছে দুই গোয়েন্দা। কিশোর বসে আছে তার সুইভেল চেয়ারে। পোড়া ডেস্কের এপাশে বসেছে মুসা। রবিন গেছে। লাইব্রেরিতে।

সমস্যা আসলে দুটো, আবার বলল গোয়েন্দাপ্রধান।

বলছি, কি করে সমাধান করবে সমস্যার? বলল মুসা। খুব সহজ। রিসিভার তুলে ফোন কর মিস্টার ক্রিস্টোফারকে। বলে দাও, তাঁর জন্যে ভূতুড়ে বাড়ি খুঁজে বের করতে পারব না। আমরা। জানাও, একটার কাছে গিয়েছিলাম কোনমতে প্ৰাণ বাঁচিয়ে ফিরেছি। আর একবার ওটার কাছে ঘেষতে চাই না।

মুসার পরামর্শের ধার দিয়েও গেল না কিশোর। আমাদের প্রথম সমস্যা, বলল সে, জানা, কে ফোন করেছিল গতরাতে।

কে নয়, শুধরে দিল মুসা। বল কিসে। ভূত, প্ৰেতাত্মা, ওয়্যারউলফ, ভ্যাম্পায়ার!

ওদের কেউই টেলিফোন ব্যবহার করতে জানে না, মনে করিয়ে দিল কিশোর।

সে-তো পুরানো আমলের কথা। আমরা আধুনিক হয়েছি, ভূতেদেরও আধুনিক হতে দোষ কি? গতরাতে যে-ই ফোন করে। থাকুক, গলাটা মোটেই মানুষের মত মনে হয়নি আমার।

চিন্তিত দেখাল গোয়েন্দাপ্রধানকে। ঠিকই বলছি। আমরা তিনজন আর হ্যানসন ছাড়া কোন মানুষের জানার কথা না, গতরাতে টেরার ক্যাসলে গিয়েছিলাম।

প্ৰেতাত্মাদের জানতে বাধা কোথায়? প্রশ্ন রাখল মুসা।

তা নেই, অনিচ্ছা সত্ত্বেও সায় দিল কিশোর। তবে, দুর্গটা সত্যিই ভূতুড়ে কিনা দেখে ছাড়ব। জন ফিলবির ব্যাপারে আরও অনেক বেশি জানতে হবে। আমাদের। টেরর ক্যাসলে কারও প্ৰেতাত্মা থেকে থাকলে, ওরই আছে।

হ্যাঁ, এটা একটা কথার মত কথা বলেছ খুশি হয়ে বলল মুসা। এবার বল দ্বিতীয় সমস্যাটা কি?

এমন কাউকে খুঁজে বের করা, যে জন ফিলবির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভাবে মিশেছে।

কিন্তু সে-তো অনেক বছর আগের কথা! তেমন কাকে পাব আমরা?

অনেক আর কত? আত্মহত্যা না করলে এখনও বেঁচে থাকতে পারত জন ফিলবি। তার সঙ্গী-সাখীদের অনেকেই নিশ্চয় বেঁচে আছে এখনও। হলিউডে খোঁজ করলে তেমন কাউকে না কাউকে পেয়ে যাবই আমরা।

তা হয়ত পেয়ে যাব।

আমার মনে হয়, ফিলবির ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি বলতে পারবে তার ম্যানেজার, মিস্টার ফিসফিস।

মিস্টার ফিসফিসা প্ৰায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। এটা আবার কেমন নাম?

ডাক নাম। লোকে ওই নামেই ডাকত। আসল নাম হ্যারি প্রাইস। এই যে, ওর ছবি।

একটা কাগজ সহকারীর দিকে ঠেলে দিল গোয়েন্দাপ্রধান। একটা ছবি, তার নিচে কিছু লেখা। পুরানো একটা খবরের কাগজ থেকে ফটোকপি করে এনেছে। রবিন। ছবিতে দুজন লোক। একজন লম্বা, হালকা-পাতলা, পুরো মাথায় টাক। হাত মেলাচ্ছে তার চেয়ে সামান্য বেঁটে একটা লোকের সঙ্গে। মাথায় ঘন চুল। হাসিখুশি সুন্দর চেহারা। টাকমাথা লোকটার চোখ দেখলেই ভয় লাগে, গলায় একটা গভীর কাটা দাগ।

ইয়াল্লা! বিস্মিত মুসা। এই জন ফিলবির আসল চেহারা! খামোকাই ছদ্মবেশে অভিনয় করেছে। আসল চেহারা দেখালেই ভয় বেশি পেত লোকো এই চোখ আর গলার কাটা কলজে কাঁপিয়ে দেয়।

ভুল করছি। ও নয়, জন ফিলবি হল অন্য লোকটা। চেহারা সুন্দর, হাসিটাও আন্তরিক।

খাইছে আরও বিস্মিত হল মুসা। ওই লোকটা ফিলবি। ভূত-প্ৰেত। আর দানবের অভিনয় করতা এত সুন্দর মানুষটা।

হ্যাঁ। ব্যক্তিগত জীবনে নাকি খুবই লাজুক লোক ছিল ফিলবি। তাছাড়া তোতলাতো। বন্ধু-বান্ধব ছিল না বললেই চলে। কি করে জানি ফিসফিসের সঙ্গে ভাব হয়ে গিয়েছিল, শেষে ম্যানেজার নিযুক্ত করে ফেলল। লোকে আগে ঠিকাত ফিলবিকে। ফিসফিস ম্যানেজার হওয়ার পর আর পারেনি।

স্বাভাবিক। মন্তব্য করল মুসা। সামনে না করে কার বাপের সাধ্য। করলেই তো ছুরি বের করবে।

ওকে খুঁজে পেলে কাজ হত। অনেক কিছু জানতে পারতাম ফিলবির ব্যাপারে।

কি করে ওর খোঁজ পাওয়া যাবে, কিছু ভেবেছ?

টেলিফোন গাইড।

গাইডের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ল দুই গোয়েন্দা। শেষ অবধি নামটা খুঁজে পেল মুসা।

এই যো চেঁচিয়ে উঠল মুসা। হ্যারি প্রাইস। আটশো বারো উইন্ডিং ভ্যালি রোড। ফোন করবে ওকে?

না, লোক জানাজানি হয়ে যেতে পারে। ওর সঙ্গে দেখা করব। আমরা, টেলিফোনের দিকে হাত বাড়াল কিশোর। গাড়ি দরকার।

গাড়িটা পাওয়ায় খুব উপকার হয়েছে! কিশোরের দিকে চেয়ে বলল মুসা, আচ্ছা, তিরিশ দিন শেষ হয়ে গেলে কি করব, বল তো?

সে তখন দেখা যাবে। বুদ্ধি একটা ভেবে রেখেছি…হ্যালো। …কিশোর পাশা। …গাড়িটা চাই, এখুনি। রিসিভার নামিয়ে রাখল কিশোর। চল, উঠি।। চাচীকে বলতে হবে, রাতে দেরি করে খাব।

বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রাজি করাতে পারল বট কিশোর, কিন্তু সন্দেহ গেল না মেরিচাচীর। গাড়ি এসে গেছে। রাজকীয় রোলস রয়েসের দিকে চেয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে এদিক ওদিক মাথা নাড়লেন। তিনি। এর পর কি করবি কিশোর, তুইই জানিসা এই বয়েসেই রোলস রয়েস. তা-ও আবার আরব শেখের ফরমাশ দেয়া! নষ্ট হয়ে যাবি তো!

আবার যদি মত পাল্টে ফেলে মেরিচাচী, এই ভয়ে কিশোর তাড়াতাড়ি গিয়ে উঠে পড়ল গাড়িতে। মুসা উঠে বসতেই দ্রুত ইয়ার্ড থেকে বেরিয়ে যাবার নির্দেশ দিল হ্যানসনকে।

কোথায় যেতে হবে শোফারকে জানাল কিশোর।

ম্যাপ বের করে দেখে নিল হ্যানসন উইন্ডিং ভ্যালিটি কোথায়। রকি বীচ থেকে বেশ দূরে একটা পর্বতমালার ধারে উপত্যকাটা। নিঃশব্দে ছুটে চলল রোলস রয়েস।

পাহাড়ী পথ ধরে উঠে যাচ্ছে গাড়ি। সেদিকে চেয়ে বলল কিশোর, হ্যানসন, ব্ল্যাক ক্যারিয়নের দিকে যাচ্ছি কেন?

ওদিক দিয়েই যেতে হবে, মাস্টার পাশা। ক্যানিয়নের মাইলখানেক দূর দিয়ে বেরিয়ে যাব।

ভালই হল। আবার একবার ঢুকব ব্ল্যাক ক্যানিয়নে। কয়েকটা ব্যাপারে শিওর হওয়া দরকার।

মিনিট কয়েক পরেই গিরিপথের প্রবেশমুখে পৌঁছে গেল ওরা। ভেতরে ঢুকে পড়ল গাড়ি। পরিচিত পথ, অথচ কেমন অপরিচিত মনে হচ্ছে এখন দিনের আলোয় একেবারে অন্যরকম লাগছে। পথটাকে।

ভেঙে পড়া ক্রসবার আর পাথরের স্তুপের কাছে এনে গাড়ি রাখল হ্যানসন। পথের দিকে চেয়ে বলে উঠল, দেখুন দেখুন, আরেকটা গাড়ির টায়ারের দাগ, গতরাতেই ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছি। কেউ অনুসরণ করেছিল আমাদেরকে।

অনুসরণা কে? একে অন্যের দিকে চাইল মুসা আর কিশোর।

আরেক রহস্য মাথা চাড়া দিচ্ছে, বলল কিশোর। যাকগে। আগের কাজ আগে শেষ করি। টেরর ক্যাসলের বাইরেটা ঘুরে দেখব চল।

চল, বলল দ্বিতীয় গোয়েন্দা। বাইরে দিয়ে ঘুরতে আমার কোন আপত্তি নেই।

দিনের আলোয় অনেক সহজে অনেক কম সময়ে দুর্গের কাছে পৌঁছে গেল ওরা। বিশাল টাওয়ার, আকাশ ছুতে চাইছে যেন।

গতরাতে ওই ভূতের আডডায় ঢুকেছিলাম, ভাবলে এখনও গা ছমছম করে, বলল মুসা।

দুর্গের বাইরের দিকে পুরো একপাক ঘুরে এল কিশোর। তারপর আবার চলল। পেছনে। ওখান থেকে প্ৰায় খাড়া নিচে নেমে গেছে পাহাড়টা।

বাড়িটাতে মানুষ থাকে। কিনা বুঝতে চাইছি, বলল কিশোর। তাহলে তার কিছু না কিছু চিহ্ন থাকবেই। জুতোর ছাপ…সিগারেটের পোড়া টুকরো…

পাওয়া গেল না তেমন কিছু। পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ল দুজনেই। দুর্গের পাশে বিশ্রাম করতে বসল।

নাহ, মানুষ থাকে না। এখানে, বলল কিশোর। ভূত আছে, তা-ও বিশ্বাস করতে পারছি না…

হঠাৎ তীক্ষ্ণ এক চিৎকারে চমকে উঠল দুজনেই। মানুষ মানুষের গলা লাফিয়ে উঠে। ছুটল ওরা। কয়েক পা এগিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ল। দুর্গের সদর দরজা দিয়ে ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে দুটো মানুষ। আতঙ্কিত গলায় চোঁচাচ্ছে। হঠাৎ কিসে হোচট লেগে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেল একজন। চকচকে কিছু একটা ছিটকে পড়ল। হাত থেকে। কিন্তু ওটা তুলল। না সে। হাঁচড়ে-পাঁচড়ে কোনমতে উঠেই সঙ্গীর পেছনে ছুট লাগাল আবার।

ভুত না! বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই বলে উঠল মুসা। তবে ছোটার ধরন দেখে মনে হচ্ছে ভূতের সঙ্গে দেখা হয়েছে।

জলদি বলেই ছুটতে শুরু করল কিশোর। ব্যাটাদের চেহারা দেখা দরকার।

দ্রুত দৌড়াচ্ছে কিশোর। পেছনে মুসা।

প্রায় চোখের আড়ালে চলে গেছে। বাঁকটা ঘুরলেই অদৃশ্য হয়ে যাবে, ধরা যাবে না। ওদেরকে। বুঝে ছোটার গতি কমিয়ে দিল। কিশোর। দাঁড়িয়ে পড়ল এসে, যেখানে আছাড় খেয়েছিল। একজন। কাছেই পড়ে আছে চকচকে জিনিসটা। টর্চ। নিচু হয়ে তুলে নিল কিশোর। খুদে একটা নেমপ্লেট আটকানো টর্চের গায়ে। তাতে দুটো অক্ষর খোদাই করা।

টি ডি! জোরে জোরে পড়ল কিশোর। কে হতে পারে, বল তো, মুসা?

টেরিয়ার ডয়েল প্রায় ফেটে পড়ল। মুসা। শুটিকে টেরিা কিন্তু তা কি করে হয়? ব্যাটা এখানে আসবে কেন?

এসেছে লাইব্রেরিতে রবিনের কাজকর্ম দেখছিল, ভুলে গেছ? আমাদের কার্ড ওই ব্যাটাই চুরি করেছে। গতরাতে ফলো করেছিল। ওই। সব সময়েই তো পেছনে লেগে থাকে শুটিকো। কি করি না করি জানার চেষ্টা করে। এবারেও নিশ্চয় একই ব্যাপার। আমাদের কাজে গোল বাধানোর তালে আছে।

তা হতে পারে, চিন্তিত দেখাচ্ছে সহকারী গোয়েন্দাকে। রাতে আমরা ঢুকেছি, দেখেছে। তখন সাহস করেনি। দিনের বেলা দেখতে এসেছে, কেন গিয়েছিলাম দুর্গের ভেতরে। কেমন মজা! খেলি তো ভূতের তাড়া। হাসি একান-ওকান হয়ে গেল মুসার।

ব্যাপারটাকে এত হালকাভাবে নিতে পারল না কিশোর। টৰ্চটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখতে রাখতে বলল, এত হাসির কিছু নেই। ভূত আমাদেরকেও ছাড়েনি। তবে আমরা আবার ঢুকব ওদের আডডায়, কিন্তু শুটিকে আর এদিক মাড়াবে না। ভাবছি, এখুনি আবার ঢুকব দুৰ্গে। দিনের আলোয় ভাল করে দেখতে চাই সব।

প্রতিবাদ করতে গিয়েও থেমে গেল মুসা। ভারি কিছু ধসে। পড়ার শব্দ কানে আসছে। চমকে চোখ তুলে চাইল দুজনেই। ঠিক মাথার ওপরে পাহাড়ের চূড়ার কাছ থেকে গড়িয়ে নেমে আসছে বিশাল এক পাথর।

ছুট লাগাতে যাচ্ছিল মুসা, খপ করে তার হাত ধরে ফেলল। কিশোর। থাম! আমাদের ওপর পড়বে না! কয়েক গজ দূর দিয়ে চলে যাবে।

ঠিকই। ওদের কয়েক গজ দূর দিয়ে তুমুল গতিতে ছুটে গোল পাথরটা, দশ গজ নিচের রাস্তায় আছড়ে পড়ল। পথের সর্বনাশ করে। দিয়ে, চারদিকে কংক্রীটের গুড়ো ছড়িয়ে ফেলে গড়িয়ে নেমে চলে গেল। ঢালু পথ বেয়ে।

ইয়াল্লা! এখনও গা কাঁপছে মুসারী। গায়ে পড়লে টেরর ক্যাসলের ভূতের সংখ্যা আরও দুটো বাড়তা

দেখ দেখা মুসার হাত খামচে ধরে টান দিল কিশোর। ঢালের গায়ে ওই যে ঝোপটা, কে যেন নড়াচড়া করছে। ওর ভেতরো নিশ্চয় ব্যাটা শুটিকো। অন্য ধার দিয়ে ঘুরে আমাদের অলক্ষ্যে গিয়ে চড়েছে ওখানে। পাথর গড়িয়ে দিয়েছে আমাদের দিকে।

এবার আর ব্যাটাকে ছোড়ছি না। আমি, শার্টের হাতা গুটাতে লাগল মুসা। শিক্ষা দিয়ে ছাড়ব।

খাড়াই বেয়ে তাড়াহুড়ো করে উঠতে শুরু করল দুই গোয়েন্দা। আলগা পাথর আর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে জন্মে থাকা কাঁটা ঝোপ বাধা সৃষ্টি করছে। খানিকটা ওঠার পরেই দেখল। ওরা, দ্রুত সরে যাচ্ছে একটা মূর্তি, দেখতে দেখতে হারিয়ে গেল একপাশে।

আরও দ্রুত ওঠার চেষ্টা করল। দুজনে। পাহাড়ের গা থেকে কানিসের মত বেরিয়ে থাকা বিরাট এক চ্যাপ্টা পাথরের কাছে এসে থমকে গেল। ওটা ডিঙানো সম্ভব না। ওখানেই দাঁড়িয়ে জোরে জোরে হাঁপাতে লাগল। দুজনে।

কানিসের মত পাথরটার একপাশে পাহাড়ের গায়ে বড়সড় একটা চৌকোণা গুহামুখ। গুহার নিচ থেকে টেনে সামনে বেরিয়ে আছে বড় আরেকটা চ্যাপ্টা পাথর, অনেকটা ঝোলা বারান্দার মত। আরাম করে বসা যাবে ওখানে। ওটার দিকে এগিয়ে চলল দুই বন্ধু।

প্রায় পৌঁছে গেছে বারান্দার কাছে, এই সময় মাথার ওপরে চাপা গভীর একটা শব্দ হল। তারপরই পাথরে পাথরে ঠোকাঠুকির আওয়াজ। চমকে আবার চোখ তুলে চাইল দুজনেই। এবার আর একটা নয়, অসংখ্য পাথরের ধস নেমে আসছে।

বরফের মত জমে গেল যেন মুসা। কি করবে। বুঝে উঠতে পারল না।

কিন্তু বুদ্ধি হারাল না কিশোর। এক মুহূর্ত দ্বিধা করল। পরীক্ষণেই সঙ্গীর হাত ধরে হ্যাঁচকা টান মারল। ঝোলা বারান্দার ওপর প্রায় হুমড়ি খেয়ে এসে পড়ল দুজনে। জোরে এক ধাক্কা দিয়ে মুসাকে গুহার ভেতরে ঠেলে দিল কিশোর। নিজেও গড়িয়ে চলে এল ভেতরে। দ্রুত গড়াতে গড়াতে গর্তের একেবারে শেষ সীমায় চলে এল দুজনে। ঠিক এই সময় প্রথম পাথরটা আঘাত হানল বারান্দায়। দেখতে দেখতে শুরু হয়ে গেল পাথরবৃষ্টি। ছোট, মাঝারি, বড়, সব রকমের, সব আকারের পাথর পড়ছে একনাগাড়ে।

বজ্রের গর্জন তুলে আছড়ে এসে বারান্দায় পড়ছে পাথর, কিছু গড়িয়ে নেমে যাচ্ছে, কিছু যাচ্ছে আটকে, কিছু গড়িয়ে চলে আসছে ভেতরে। একটার পর একটা জমছে পাথর, দেয়াল উঠে যাচ্ছে গর্তের সামনের খোলা অংশে।

গর্তের শেষ মাথায় দেয়ালের গায়ে সেঁটে বসে রইল দুই বন্ধু। আলো অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে তাদের চোখের সামনে থেকে, হারিয়ে যাচ্ছে আকাশ। কয়েক সেকেণ্ডেই পাহাড়ের ঢালে পাথরের কবরে আটকে গেল ওরা। জ্যান্ত কবর। আলো আর আকাশ পুরোপুরি অদৃশ্য হয়ে গেছে চোখের সামনে থেকে। ঘুটঘুটে অন্ধকার।

<

Super User