পড়ন্ত বিকেল। হ্যান্ডেল ধরে সাইকেলটা ঠেলে নিয়ে এসে সবুজ ফটক এক-এর সামনে দাঁড়াল রবিন। গাল-মুখ লাল, হাঁপাচ্ছে। হতচ্ছাড়া টিউব ফুটো হবার আর সময় পেল না! বিড়বিড় করছে সে আপনমনেই।

ইয়ার্ডের ভেতরে এসে ঢুকল রবিন। মেরিচাচীর গলা শোনা যাচ্ছে অফিসের ওদিক থেকে। রাশেদ চাচার দুই সহকারী বোরিস আর রোভারকে কাজের নির্দেশ দিচ্ছেন। ওয়ার্কশপ খালি। কিশোর কিংবা মুসা, কেউই নেই।

এটাই আশা করেছিল রবিন। সাইকেলটা রেখে ছোট ছাপার মেশিনটার ওপােশ ঘুরে একটা জায়গায় এসে দাঁড়াল। একটা ওয়ার্কবেঞ্চের গায়ে হেলান দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছে একটা লোহার পাত।

বিশাল এক গ্যালভানাইজটা পাইপের মুখ ঢেকে রাখা হয়েছে পাতটা ফেলে। বসে পড়ে ওটা একটু সরাল রবিন। ফাঁক গলে এসে ঢুকল পাইপের মুখের ভেতরে। পাতটা আবার আগের জায়গায় টেনে বসাল। দ্রুত ক্রল করে এগিয়ে চলল পাইপের ভেতর দিয়ে। এটাও একটা গুপ্ত পথ, নাম রাখা হয়েছে দুই সুড়ঙ্গ।

পাইপের অন্য মাথায় চলে এল রবিন। একটা কাঠের বোর্ড কায়দা করে বসানো আছে। ও-মাথায়। ঠেলা দিতেই সরে গেল বোর্ড।

হেডকোয়ার্টারে এসে ঢুকল সে।

হেডকোয়ার্টার মানে তিরিশ ফুট লম্বা একটা ক্যারাভান, মোবাইল হোম। গত বছর কিনেছিলেন রাশেদ চাচা। অ্যাক্সিডেন্ট করেছিল ক্যারাভানটা। ভেঙে চুরে বেঁকে দুমড়ে একেবারে শেষ।

ইয়ার্ডের এক প্রান্তে ফেলে রাখা হয়েছে। চাচার কাছ থেকে ওটা ব্যবহারের অনুমতি নিয়ে নিয়েছে কিশোর। বোরিস আর রোভারের সাহায্যে মোটামুটি ঠিকঠাক করে নিজের অফিস বানিয়েছে।

পুরো বছর ধরেই মালপত্র এনে ক্যারাভান ট্রেলারটার চারপাশে ফেলেছে কিশোর। একাজেও তাকে সাহায্য করেছে বোরিস আর রোভার, মুসা আর রবিন তো আছেই। ইস্পাতের বার, ভাঙাচোরা ফায়ার-এস্কেপ, কাঠ আর দেখে-চেনার-জো-নেই এমন সব জিনিসপত্রের আড়ালে এখন একেবারে ঢাকা পড়ে গেছে ট্রেলারটা। ওটার কথা ভুলেই গেছেন রাশেদ চাচা। তিনটে কিশোর ছাড়া আর কেউ জানে না, ওই ট্রেলারের ভেতর কত কিছু গড়ে উঠেছে। তিন গোয়েন্দার অফিস ওটা। ল্যাবরেটরি আছে, ছবি প্রসেসিং-এর ডার্ক-রুম আছে। হেডকোয়ার্টার থেকে বেরোনোর কয়েকটা পথও বানিয়ে নিয়েছে ওরা।

একটা ডেস্কের ওপাশে সুইভেল চেয়ারে বসে আছে কিশোর পাশা। ডেস্কের এক কোণ পোড়া। অন্যপাশে বসে আছে মুসা।

দেরি করে ফেলছ, গম্ভী গলায় বলল কিশোর। যেন ব্যাপারটা জানে না রবিন।

চাকা পাংচার, এখনও হাঁপাচ্ছে রবিন। লাইব্রেরি থেকে রওনা দেবার পর পরই পেরেক ঢুকেছে।

যে কাজ দিয়েছিলাম কিছু করেছ?

নিশ্চয়। অনেক কিছু জেনেছি টেরর ক্যাসলের ব্যাপারে।

টেরর ক্যাসল? আপনমনেই বিড় বিড় করল মুসা। নামটাই অপছন্দ লাগছে আমার, কেমন যেন গা ছমছম করে!

নাম শুনেই ছমছম, আসল কথা তো শোনইনি। এখনও, বলল রবিন। পাঁচজন লোকের একটা পরিবার রাত কাটাতে গিয়েছিল ওখানে। তারপর…

একেবারে গোড়া থেকে শুরু কর, বলল কিশোর। গালগল্প বাদ দিয়ে সত্যি ঘটনাগুলো শুধু।

ঠিক আছে। সঙ্গে করে নিয়ে আসা বড় একটা বাদামী খাম খুলছে। রবিন। কিন্তু তার আগে শুটিকে টেরির কথাটা জানানো দরকার। সেই সকাল থেকেই আমার পেছনে লেগেছিল ব্যাটা। আমি কি করছি না করছি, জানার চেষ্টা করেছে।

ইয়াল্লা! ব্যাটাকে জানতে দাওনি তো কিছু। প্রায় চেঁচিয়ে উঠল। মুসা। পেছন থেকে কি করে যে সরাই খালি নাক গলাতে আসে। আমাদের কাজে!

না, ওকে কিছু বলিনি। আমি, বলল রবিন। কিন্তু আঠার মত সঙ্গে লেগে ছিল ব্যাটা। লাইব্রেরিতে ঢুকতে যাচ্ছি, আমাকে থামাল শুঁটকো। কিভাবে রোলস-রয়েসটা পেল কিশোর জানতে চাইল। জিজ্ঞেস করল, তিরিশ দিন কোথায় যাচ্ছি আমরা।

তারপর? জানতে চাইল কিশোর।

লাইব্রেরিতে আমার সঙ্গে সঙ্গে ঢুকল ব্যাটা, নাক কোঁচকাল রবিন। আমার দিক থেকে চোখ সরাল না মুহূর্তের জন্যেও। দেখল, পুরানাে পত্রিকা আর ম্যাগাজিন ঘাঁটাঘাঁটি করছি আমি। কি পড়ছি, দেখতে দিইনি। ওকে। কিন্তু…

কিন্তু কি?

আমাদের কার্ড। যেটার পেছনে টেরর ক্যাসল লিখেছিলে তুমি…

হারিয়েছে, না? টেবিলে রেখেছিলে, কাজ করে ফিরে এসে আর পাওনি, বলল কিশোর।

তুমি জানলে কি করে? রবিন অবাক।

সহজ। না হারালে ওটার কথা তুলতে না তুমি।

টেবিলে রেখে ক্যাটালগ গোছাচ্ছিলাম, বলল রবিন। মনে পড়তেই তুলে নিতে এলাম। পেলাম না। অনেক খুঁজেছি। শুটকো নিয়েছে, এটাও জোর দিয়ে বলতে পারছি না। তবে বেরিয়ে যাবার সময় ব্যাটাকে খুব খুশি খুশি মনে হয়েছে।

শুঁটকোর কথা যথেষ্ট হয়েছে, বলল কিশোর। একটা জরুরি কাজ হাতে নিয়েছি আমরা। সময় নষ্ট করা চলবে না। টেরর ক্যাসলের ব্যাপারে কি জানলে, বল।

বেশ, শুরু করল রবিন। হলিউড ছাড়িয়ে গেলে একটা সরু গিরিপথ পাওয়া যাবে। নাম ব্ল্যাক ক্যানিয়ন। ওই গিরিপথের এক ধারে পাহাড়ের ঢালে তৈরি হয়েছে টেরর ক্যাসল। এটার নাম ছিল আসলে ফিলবি ক্যাসল। বিখ্যাত অভিনেতা জন ফিলবির বাড়ি সে-ই তৈরি করিয়েছিল। নির্বাক-সিনেমার যুগে লোকের মুখে মুখে ফিরত ফিলবির নাম। থামল রবিন।

বলে যাবার ইঙ্গিত করল। কিশোর।

টেরর ছবিতে অভিনয় করত ফিলবি। এই ভ্যাম্পায়ার কিংবা ওয়্যারউলভূস মার্কা ছবিগুলো আরকি। ওসব ছবিতে সাধারণত পোড়ো বাড়ি দরকার পড়েই। প্ল্যান করে ওই মডেলেরই একটা বাড়ি তৈরি করল। ফিলবি। ঘরে ঘরে ভরল যত্তোসব উদ্ভট জিনিস। মমির কফিন, বহু পুরানো লোহার বর্ম, মানুষের কঙ্কাল, এমনি সব জিনিস। কোনটাই কিনতে হয়নি তাকে। ছবিতে ব্যবহার হয়ে যাবার পর প্রযোজকের কাছ থেকে চেয়ে নিয়েছে।

ভরসা পাচ্ছি, আস্তে করে বলল কিশোর।

শেষতক শোন আগে, বলল মুসা। তা জন ফিলবির কি হল?

আসছি সে কথায়, বলল রবিন। লক্ষমুখো মানব নামে সারা দুনিয়ায় খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল ফিলবির। এই সময়েই এল সবাক সিনেমা। চমৎকার অভিনয় ফিলবির, কিন্তু কথা বলতে গেলেই গুবলেট হয়ে যায়। চি-চি গলার স্বরা শুধু তাই না, জোরে বলতে গেলে কথা জড়িয়ে যায়। কখনও কোন শব্দের বেলায় তোতলায়ও।

ই-স্‌-স্‌ আফসোস করে উঠল মুসা। চি-চি করা ওই তোতলা ভুতকে সিনেমায় যদি দেখতে পেতামা হাসতে হাসতে নিশ্চয় পেট ব্যথা হয়ে যেত লোকের!

তা-ই হত, সায় দিল রবিন। ছবিতে অভিনয় বন্ধ করে দিল ফিলবি। বেহিসেবী, খরুচে ছিল সে। জমানো টাকা পয়সা তেমন ছিল। না। কােজ নেই, টাকাও আসে না। একে একে সবকটা কাজের লোককে বিদেয় করে দিতে বাধ্য হল। সব শেষে বিদেয় করল তার বিজনেস ম্যানেজার হ্যারি প্রাইসকে। লোকের সঙ্গে ফোনে কথা বলা বন্ধ করে দিল। ফোন আসে, ধরে না, চিঠি আসে, জবাব দেয় না। নিজেকে গুটিয়ে নিল ক্যাসলের সীমানায়। ধীরে ধীরে অভিনেতা ফিলবিকে ভুলে গেল লোকে। থামল রবিন। দম নিয়ে আবার বলতে লাগল, তারপর একদিন, হলিউডের মাইল পচিশোক উত্তরে পড়ে থাকতে দেখা গেল একটা গাড়ি। ভেঙে চুরে দুমড়ে আছে। পাহাড়ী পথ থেকে নিচের পাথুরে সৈকতে পড়ে গিয়ে ওই অবস্থা হয়েছে। ওটার। চুরচুর হয়ে গেছে কাচ। ভেঙে, খুলে দশহাত দূরে ছিটকে পড়েছে একটা দরজা।

ওই গাড়ির সঙ্গে ফিলবির সম্পর্ক কি? রবিনের কথার মাঝেই প্রশ্ন করে বসল মুসা।

লাইসেন্স নাম্বার দেখে পুলিশ জানতে পারল, গাড়িটা ফিলবির, ব্যাখ্যা করল রবিন। অভিনেতার লাশ পাওয়া যায়নি। এতে অবাক হবারও কিছু নেই। নিশ্চয় খোলা দরজা দিয়ে বাইরে ছিটকে পড়েছিল দেহটা। তারপর জোয়ারের সময় ভেসে গেছে সাগরে।

আহু-হা দুঃখ প্রকাশ পেল মুসার গলায়। তোমার কি মনে হয়? ইচ্ছে করেই অ্যাক্সিডেন্ট করেছিল লোকটা?

শিওর না, জবাব দিল রবিন। গাড়িটা সনাক্ত করার পরই ক্যাসলে গিয়ে উঠল পুলিশ। সদর দরজা খোলা। ভেতরে কেউ নেই। পুরো ক্যাসল খুঁজল পুলিশ। কোন লোককেই পাওয়া গেল না। লাইব্রেরিতে একটা টেবিলে পেপারওয়েট চাপা দেয়া একটা নোট পাওয়া গেল, কপি করে আনা নোটটা বাদামী খামের ভেতর থেকে খুলে পড়ল। রবিনঃ লোকে আর কোনদিনই জীবন্ত দেখতে পাবে না। আমাকে। কিন্তু তাই বলে একেবারে হারিয়ে যাব না। আমি। আমার আত্মা ঠিকই বিচরণ করবে তোমাদের মাঝে। আর, মরার পরেও আমার সম্পত্তি হয়ে রইল টেরর ক্যাসল। ওটা এই মুহূর্ত থেকে একটা অভিশপ্ত দুৰ্গ। — জন ফিলবি।

ইয়াল্লা! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল মুসা। দুৰ্গটার ব্যাপারে যতই শুনছি, ততই অপছন্দ করছি ওটাকে!

থামলে কেন? রবিনকে বলল কিশোর। বলে যাও।

ক্যাসলের আনাচে-কানাচে কোথাও খোঁজা বাকি রাখল না। পুলিশ। না, ফাঁকি বুকি কিছুই নেই। গাড়িটা ভেঙে ফেলে দিয়ে এসে বাড়িতে লুকিয়ে বসে থাকেনি ফিলবি। পরে জানা গেল, ব্যাংকে পাহাড়-প্রমাণ ঋণ হয়ে আছে তার। বাড়িটা মটগেজ রয়েছে ব্যাংকের কাছে। ফিলবি আত্মহত্যা করেছে, শিওর হয়ে নিয়ে ক্যাসলে লোক পাঠাল ব্যাংক। তার জিনিসপত্র সব তুলে নিতে এল ওরা। কিন্তু অদ্ভুত একটা ব্যাপার ঘটল। কেন জানি থতমত খেয়ে গেল লোকেরা বাড়িতে ঢুকেই। উদ্ভট কিছু শব্দ শুনল ওরা, আজব কিছু চোখে পড়ল। কিন্তু কি শুনেছে, কি দেখেছে, পরিষ্কার করে বলতে পারল না। মালপত্ৰ আর বের করা হল না। নিজেরাই ছুটে বেরিয়ে এল। বাড়িটা বিক্রির সিদ্ধান্ত নিল। এরপর ব্যাংক। লাভ হল না। লোকে থাকতেই চায় না। ক্যাসলে, কিনতে যাবে কে শুধু শুধু? যে-ই ঢোকে বাড়িটাতে, খানিক পরেই কেমন অস্বস্তি বোধ করতে শুরু করে। থেমে দুই বন্ধুর দিকে একবার চেয়ে নিল রবিন। কিশোরের কোন রকম ভাব পরিবর্তন নেই। হাঁ করে আছে মুসা। আবার বলল সে, সস্তায় এতবড় একটা বাড়ি কেনার লোভ ছাড়তে পারল না। একজন এস্টেট এজেন্ট। ভূতফুত কিছু নেই, সব বাজে কথা! — প্রমাণ করতে এগিয়ে চলল সে। ঠিক করল, রাত কাটাবে ফিলবি ক্যাসলে। সাঁঝের আগেই ক্যাসলে। ঢুকাল সে। মাঝরাত পেরোনোর আগেই পাগলের মত ছুটে বেরিয়ে এল। ব্ল্যাক ক্যানিয়ন পেরোনোর আগে একবারও আর পেছন ফিরে তাকায়নি।

খুব সন্তুষ্ট মনে হচ্ছে কিশোরকে। কিন্তু চোখ বড় হয়ে গেছে মুসার। রবিন তার দিকে চাইতেই ঢোক গিলল।

বলে যাও, অনুরোধ করল কিশোর। যা আশা করেছিলাম, বাড়িটা তার চেয়ে অনেক বেশি ভূতুড়ে।

এরপর আরও কয়েকজন ক্যাসলে রাত কাটানোর চেষ্টা করেছে জানোল রবিন। একজন উঠতি অভিনেত্রী পাবলিসিটির জন্যে রাত কাটাতে গেল ওখানে। সে বেরিয়ে এল মাঝরাত হবার অনেক আগেই। শীত ছিল না, তবু দাঁতে দাঁত বাড়ি খাচ্ছিল তার। কোটর থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসতে চাইছিল চোখ। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। আতঙ্কে। তখন কোন কথাই বেরোয়নি মুখ দিয়ে। পরে জানিয়েছে, একটা নীল ভূতের দেখা পেয়েছে। আর কেমন একধরনের কুয়াশা নাকি ঢেকে ফেলছিল তাকে। অভিনেত্রী এর নাম দিয়েছে ফগ। অব ফিয়ার।

নীল ভূত, আবার কুয়াশাতঙ্কও! ইয়াল্লা! শুকনো ঠোঁটে জিভ বুলিয়ে ভেজাবার চেষ্টা করল মুসা। আর কিছু দেখা গেছে? মাথা ছাড়া ঘোড়সওয়ার, শেকলে-বাঁধা-কঙ্কাল…

রবিনকে কথা শেষ করতে দাও, বাধা দিয়ে বলল কিশোর।

আমার আর কিছু শোনার দরকার নেই, মুসার মুখ ফ্যাকাসে। যা শুনেছি, এতেই বুক ধড়ফড় শুরু হয়ে গেছে।

মুসার কথায় কান দিল না কিশোর। রবিনকে জিজ্ঞেস করল, আর কিছু বলবে?

হ্যাঁ, আবার বলতে লাগল। রবিন। একের পর এক ভূতুড়ে কাণ্ড ঘটেই চলল ফিলবি ক্যাসলে। পুবের কোন এক শহর থেকে নতুন এল একটা পরিবার। পাঁচজন সদস্য। থাকার জায়গা খুঁজছে। ব্যাংক ধরল। ওদেরকে। পুরো একবছর ক্যাসলে থাকার অনুমতি দিল। এক পয়সা ভাড়া চায় না। শুধু বাড়িটার বদনাম ঘোচাতে চায় ব্যাংক। খুশি মনেই ক্যাসলে গিয়ে উঠল পরিবারটা। রাত দুপুরে বেরিয়ে এল হুড়োহুড়ি করে। ক্যাসল তো ক্যাসল, সে-রাতেই শহর ছেড়ে পালাল ওরা। রকি বীচে। আর কোনদিন দেখা যায়নি ওদের।

গোলমালটা শুরু হয় ঠিক কোন সময় থেকে? জানতে চাইল কিশোর।

রাতের শুরুতে সব চুপচাপ। মাঝরাতের কয়েক ঘন্টা আগে থেকে ঘটতে শুরু করে ঘটনা। দূর থেকে ভেসে আসে গোঙানির শব্দ। হঠাৎ করেই হয়ত সিঁড়িতে একটা আবছামূর্তি দেখা যায়। কখনও শোনা যায় দীর্ঘশ্বাস। অনেক সময় ক্যাসলের মেঝের তলা থেকে উঠে আসে চাপা চিৎকার। মিউজিক রুমে একটা অরগান পাইপ আছে, নষ্ট। মাঝরাতে হঠাৎ করে নাকি বেজে ওঠে। ওটা, শুনেছে অনেকে। বাদককেও দেখেছে। কেউ কেউ। অর্গানের সামনে বসে থাকে, আবছা! একটা মূর্তি, শরীর থেকে নীল আলো বিচ্ছুরিত হয়! এর নামও দিয়ে ফেলেছে লোকেঃ নীল অশরীরী।

নিশ্চয় তদন্ত করে দেখা হয়েছে এসব?

হয়েছে, নোট দেখে বলল রবিন। দুজন প্রফেসর গিয়েছিলেন। তাঁরা কিছুই দেখতে পাননি। শোনেনওনি কিছু। তবে অদ্ভুত একটা ব্যাপার ঘটেছে। কেমন অস্বস্তি বোধ করেছেন। সারাক্ষণ। দুজনেই উদ্বিগ্ন, উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন। বেরিয়ে এসে জানিয়েছেনঃ অদ্ভুত কিছু একটা রয়েছে ক্যাসলে। কিছুই করতে পারল না ব্যাংক। না পারল বাড়িটা বেচিতে, না পারল ভাড়া দিতে। মালপত্রগুলোও বের করে আনা গেল না। ক্যাসলে যাবার পথ আটকে দিল ব্যাংক। ব্যস। তারপর থেকে ওভাবেই পড়ে আছে ক্যাসলটা। কিশোরের দিকে চেয়ে বলল রবিন, বিশ বছরে একটা পুরো রাত কেউ কাটাতে পারেনি ওরা ভেতর। শেষে কয়েকজন ভবঘুরে মাতাল বাড়িটাতে আস্তানা গাড়ার চেষ্টা করেছিল, তাতেও বাধা দেয়নি ব্যাংক। কিন্তু প্ৰথম রাতেই পালাল মাস্তানেরা। ভূতে তাড়া করে দুর্গ থেকে বের করে আনল ওদের। সারা শহরে ছড়িয়ে দিল ওরা সে-কাহিনী। ক্যাসলের ত্ৰিসীমানায় ঘেষা বন্ধ করে দিল লোকে। ফিলবি ক্যাসলের নাম হয়ে গেল টেরর ক্যাসল। এসব অনেক বছর আগের ঘটনা। কিন্তু আজও লোকে মাড়ায় না ওদিকটা।

ঠিকই করে, বলে উঠল মুসা। আমিও যাব না, লাখ টাকা দিলেও না।

আজ রাতেই আমরা যাব ওখানে, ঘোষণা করল কিশোর। সঙ্গে ক্যামেরা আর টেপ-রেকর্ডার নিয়ে যাব। সত্যিই ভূত আছে কিনা ক্যাসলে, দেখতে চাই। পরে আট ঘাট বেঁধে তদন্তে নামব। দুর্গটার ভীষণ বদনাম আছে। জায়গাটাও খারাপ। ভূতুড়ে ছবির শুটিঙের জন্যে এরচে ভাল জায়গা আর পাবেন না মিস্টার ক্রিস্টোফার। হলপি করে। বলতে পারি।

<

Super User