কুঁজের গায়ে একটা ছোট্ট খোঁড়ল। ওতেই ঠাঁই নিল তিন গোয়েন্দা। কোনমতে গাদাগাদি করে বসল। কষ্ট হচ্ছে বটে, কিন্তু বাতাস আর বৃষ্টির কবল থেকে রেহাই মিলল এখানে।

কয়েক মিনিট আগে খোঁড়লটা খুঁজে বের করেছে ওরা। নিশ্চিত হয়ে গেছে, এটা হস্ত দ্বীপ। দ্বীপে ক্যাম্প নেই, মানুষ নেই, জেটি নেই, বোট নেই।

এখানে নামিয়ে দিয়ে গেল কেন হান্ট, কপালে লেগে থাকা পানির কণা মুছতে মুছতে বলল মুসা, বুঝতে পারছি না।

ভুল করেছে। হয়ত, বলল রবিন। কঙ্কাল দ্বীপ ভেবে হন্তে নামিয়ে দিয়ে গেছে।

না, মাথা নাড়ল কিশোর। ভুল করেনি। ইচ্ছে করেই এখানে ফেলে গেছে ব্যাটা। প্রথম থেকেই লোকটাকে ভাল লাগেনি। আমরা গোয়েন্দা, জানল কি করে! কোথাও কিছু একটা গোলমাল হয়েছে।

যা খুশি হোকগে, মুসার গলায় হতাশা। না খেয়ে না মরলেই হল।

সকালে খুঁজে পাবে, বলল কিশোর। ভর রাতেই মাছ ধরতে বেরোয় জেলেরা।

কিন্তু এদিকে কোন জেলে-নৌকা আসার কথা না, রবিনের গলায় সন্দেহ। পড়নি, এক ধরনের লাল পরজীবী কীটের আক্রমণে নষ্ট হয়ে গেছে। এখানকার ঝিনুক? খাওয়া নিরাপদ নয়। মেলভিলের একেবারে দক্ষিণে ঝিনুক তুলতে যায় এখন জেলেরা। ফিশিংপোর্টের এদিকে আসে না। আর কিছুদিন এভাবে চললে গ্রাম ছেড়ে চলে যাবে সবাই।

তবু, কেউ না কেউ আসবেই, জোর দিয়ে বলল কিশোর। আমরা নিরুদ্দেশ হয়েছি, জানবেন। রাফাত চাচা। খোঁজখবর শুরু হয়ে যাবে। আজ এখানে নেমে বরং ভালই হল। ফেয়ারাটা দেখতে পেলাম।

আর বিশেষ কিছু বলার নেই কারও। চুপ হয়ে গেল ওরা। বাইরে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু খোঁড়লের ভেতর মোটামুটি নিরাপদ। যেমন হঠাৎ আসে, তেমনি হঠাৎই আবার চলে যায়, এ-অঞ্চলের ঝড়। তিন কিশোর আশা করল, সকাল নাগাদ থেমে যাবে। শিগগিরই ঢুলতে শুরু করল ওরা।

হঠাৎ তন্দ্ৰা টুটে গেল মুসার। কোথায় আছে বুঝতেই পেরিয়ে গেল। কয়েক মুহূর্ত। তারা চোখে পড়ল। ঝড় থেমে গেছে। তন্দ্ৰা ছুটে যাবার এটাই কি কারণ? না। চোখে আলো পড়েছিল। এখন আবার পড়ল। শখানেক গজ দূর থেকে আসছে, তীব্র আলোর রশ্মি। এক মুহূর্ত স্থির থাকিল, তারপরই সরে গেল। আবার আলো।

লাফিয়ে দাঁড়াতে গিয়ে মাথায় বাড়ি খেল মুসা। ইয়াল্লা বলে চেঁচিয়ে উঠে আবার বসে পড়ল। সাবধানে হামাগুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এল খোঁড়লের বাইরে।। গা থেকে রেনকোট খুলে নাড়তে নাড়তে চেঁচিয়ে বলল, এখানে আমরা এ-খা-নে!

মুসার পাশে এসে দাঁড়াল রবিন আর কিশোর।

আবার আলো পড়ল মুসার গায়ে। তারপরই সরে এসে পড়ল। রবিন আর কিশোরের ওপর। এক মুহূর্ত স্থির রইল। চকিতের জন্যে একবার উঠে গেল আকাশের দিকে। একশো গজ দূরে নৌকার পাল দেখতে পেল তিন গোয়েন্দা।

দ্বীপের গায়ে ভিড়েছে নৌকা বলে উঠল মুসা। আমাদেরকে যেতে বলছে…

আকাশে তারার আলো। আবছা অন্ধকার। হাঁটতে শুরু করল তিন গোয়েন্দা।

আবার জ্বলে উঠল টর্চ।

দেখ দেখ! চেঁচিয়ে উঠল রবিন। আমাদেরকে পথ দেখাচ্ছে।

বৃষ্টিতে ভিজে পিচ্ছিল হয়ে আছে মাটি। দৌড়ানো তো দূরের কথা, তাড়াতাড়ি হাঁটাই যাচ্ছে না। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে একবার আছাড় খেল মুসা। পাথরে ঘষা লেগে ছড়ে গেল হাঁটু।

পানির কিনারে এসে থামল তিন গোয়েন্দা। তীরে ভিড়েছে ছোট একটা পালতোলা নৌকা। পাশে বালিতে দাঁড়িয়ে আছে তাদেরই বয়েসী। এক কিশোর। পরনে পানি নিরোধক জ্যাকেট। প্যান্টটা গুটিয়ে হাঁটুর কাছে তুলে নিয়েছে।

তিন গোয়েন্দার মুখে আলো ফেলল। ছেলেটা। দেখল। তারপর নিজের মুখে আলো ফেলে দেখাল ওদেরকে। হাসিখুশি একটা মুখ। রোদোপোড়া তামাটে চামড়া। কোঁকড়া কালো চুল। কালো উজ্জ্বল এক জোড়া প্ৰাণবন্ত চোখ।

হাল্লো! ইংরেজিতে বলল ছেলেটা। কথায় বিদেশী টান। তোমরা তিন গোয়েন্দা, না?

অবাক হল তিন কিশোর। তাদের পরিচয় এখানে গোপন নেই কারও কাছেই! ঢোল পিটিয়ে জানানো হয়েছে যেন!

হ্যাঁ, আমরা তিন গোয়েন্দা, বলল কিশোর। খুঁজে পেলে কি করে?

কোথায় খুঁজতে হবে, জানতাম, বলল ছেলেটা। মুসার সমান লম্বা। হালকা-পাতলা। আমি পাপালো হারকুস। পাপু ডাকে বন্ধুরা।

তো, পাপু, বলল মুসা। হাসিখুশি ছেলেটাকে ভালই লাগছে তার। কোথায় খুঁজতে হবে, কি করে জানলে?

অনেক লম্বা কাহিনী, বলল পাপালো। এসো, নৌকায় ওঠ। সিনেমা কোম্পানির লোকজন খুব ভাবনায় পড়ে গেছে।

এসকেপ ছবিতে কোন কাজ করছ তুমি? নৌকায় উঠতে উঠতে জিজ্ঞেস করল রবিন।

না না, ধাক্কা দিয়ে নৌকাটা বালির ওপর থেকে পানিতে ঠেলে দিল পাপালো। লাফ দিয়ে উঠে পড়ল। গলুইয়ে। দাঁড় ধরল। পালে হাওয়া লাগতেই তরতর করে ছুটে চলল হালকা নৌকা। দূরে দেখা যাচ্ছে ফিশিংপোট গ্রামের আলো।

কথায় কথায় তিন গোয়েন্দার কাছে নিজের পরিচয় দিল পাপালো। বাড়ি গ্ৰীসের এক ছোট্ট গাঁয়ে। বড় হয়েছে ভূমধ্যসাগর উপকূলে। মা নেই। বাবা স্পঞ্জ শিকারি জেলে। সাগরের তল থেকে স্পঞ্জ তুলে বিক্রি করত। এই ছিল জীবিকা।

খুব দরিদ্র গ্ৰীসের স্পঞ্জ শিকারিরা। ডুবুরির সাজ-সরঞ্জাম কেনার পয়সা নেই তাদের। ফলে কোন যন্ত্রপাতি ছাড়াই ডুব দিতে হয়। দুহাতে একটা ভারি পাথর নিয়ে পানিতে ছেড়ে দেয় শরীর। দ্রুত ড়ুবে যায় তলায়। পাথর ছেড়ে দিয়ে স্পঞ্জ কুড়িয়ে নিয়ে ভেসে ওঠে ওপরে। পাপালোর বাবাও এই কায়দায় স্পঞ্জ তুলে আনত। হঠাৎ একদিন আক্রান্ত হল স্পঞ্জ-শিকারির অভিশাপ বেণ্ড রোগে। অকেজো হয়ে গেল। বন্ধ হয়ে গেল রোজগার। কিছুদিন চলল সঙ্গী জেলেদের দয়ায়। ওই সময় ফিশিংপোটে জেলের কাজ করত পাপালোর চাচা। ভাইয়ের দুরবস্থার খবর পেয়ে কিছু টাকা পাঠিয়ে দিল। ভাই ভাতিজাকে নিয়ে এল নিজের কাছে।

কয়েক বছর ভালই কাটল, বলল পাপালো। তারপরই দেখা দিল দুৰ্ভাগ্য। লাল কীট আক্রমণ করল। ঝিনুককে। ব্যবসা খতম। নৌকা বেচে দিয়ে নিউ ইয়র্কে চাকরি নিয়ে চলে গেল। চাচা। আমি আর বাবা রয়ে গেলাম এখানে। না থেকেই বা কি করব। মাছধরা ছাড়া আর কোন কাজ জানি না। বাবা পঙ্গু। তাকে নিয়ে কোথায় যাব? চাচার ঘাড়ে গিয়ে সওয়ার হতে ইচ্ছে হল না। নিজেরই চলে না, তবু কিছু কিছু করে বাঁচিয়ে মাসে মাসেই টাকা পাঠায় বাবাকে। খুব কষ্টে দিন কাটে আমাদের। একদিন খবর পেলাম, ফিশিংপোটে এক সিনেমা কোম্পানি আসছে। দ্বীপে ক্যাম্প করবে ওরা, ছবির শুটিং করবে। ডুবুরির কাজটা খুব ভাল পারি। আশা হল, একটা কাজ পেয়ে যাব সিনেমা কোম্পানিতে। দ্বীপে ক্যাম্প করবে যখন, নিশ্চয় সাগরের তলায় শুটিং করবে। ডুবুরির দরকার হবে। এল ওরা। গেলাম। কিন্তু কাজ দিল না। আমি বিদেশী। বিদেশীকে দেখতে পারে না। এখানকার লোকে। তবে, আশা ছাড়িনি আমি এখনও।

এগিয়ে চলেছে নৌকা। কানে আসছে কঠিন কিছুতে ঢেউ আছড়ে পড়ার শব্দ।

কোথায় আছি। এখন? জানতে চাইল মুসা। অন্ধকারে নিশানা ঠিক রাখতে পার? অন্ধকারে ডুবো পাহাড়ে বাড়ি লেগে যেতে পারে নৌকা!

শব্দ শুনেই বুঝতে পারি। আমি, কোন পথে চলেছি, বলল পাপালো। ওই যে, ঢেউ আছড়ে পড়ছে প্রবাল প্রাচীরে, বাঁয়ে। দ্য বোনস-এর পাশ দিয়ে চলেছি আমরা। সামনে স্কেলিটন আইল্যান্ড।

সামনে তাকাল তিন গোয়েন্দা। অন্ধকারে পরিষ্কার দেখা গেল না। কঙ্কাল দ্বীপ। কিন্তু অবয়বটা মনে গাঁথা আছে। ওদের। প্লেন থেকে দেখেছে, খুলির আকার। ম্যাপে দেখেছে। মিস্টার ক্রিস্টোফারের দেয়া ম্যাগাজিন পড়ে জেনেছে অনেক খুঁটিনাটি।

আমেরিকার দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে এই দ্বীপ। একে ঘিরে আছে আটলান্টিক উপসাগর। ১৫৬৫ সালে আবিষ্কার করেছিলেন এক ইংরেজ নাবিক, ক্যাপ্টেন হোয়াইট। দ্বীপে নেমেছিলেন ক্যাপ্টেন। এটা ছিল তখন স্থানীয় ইণ্ডিয়ানদের গোরস্থান। কবর বেশি গভীর করে খুড়ত না ইণ্ডিয়ানরা। ফলে পানি আর বাতাসে কবরের ওপরের বালিমাটি সরে গিয়ে বেরিয়ে পড়ত মরার হাড়গোড়। অনেক কঙ্কাল দেখেছিলেন তিনি। দ্বীপের নাম রাখলেন, স্কেলিটন আইল্যান্ড। তারপর কাছের আরেকটা দ্বীপে নামলেন। অনেকটা চৌকোণা ওই দ্বীপ, এক প্ৰান্ত থেকে লম্বা হয়ে বেরিয়ে গেছে সরু সরু পাঁচটা প্রবাল প্রাচীর। ওটার নাম রাখলেন দ্য হ্যান্ড। দুটো দ্বীপের মাঝের একসারি প্রবাল-প্রাচীরের নাম রাখলেন দ্য বোনস। তারপর একদিন আবার জাহাজ নিয়ে চলে গেলেন। ক্যাপ্টেন।

এর অনেক বছর পর দ্বীপগুলোর খোঁজ পেল জলদস্যুরা। ওগুলোকে শীতকালের ঘাঁটি বানাল ওরা। আশপাশে তখনও শহর ছিল। ডাকাতি করে আনা সোনার মোহর খরচ করতে যেত ওরা ওসব শহরে। দুৰ্দান্ত জলদসু্যু ব্ল্যাকবিয়ার্ডও এক শীতে বেরিয়ে গিয়েছিল এখান থেকে।

উৎপাত বেড়ে গেল জলদস্যুদের। ইংরেজ নৌ-বাহিনী তাদেরকে তাড়া করে আনল। এখান পর্যন্ত। দলবল সহ একে একে মেরে শেষ করল দস্যু সর্দারদের। ১৭১৭ সালে মারা পড়ল ব্ল্যাকবিয়ার্ড। এ-অঞ্চলে বাকি রইল। শুধু তখন দুর্দান্ত দস্যু ক্যাপ্টেন ওয়ান-ইয়ার (এক কান কাটা বলেই এই নাম) আর তার দল। ঠাঁই নিল এসে কঙ্কাল দ্বীপে।

গোলমাল শুনে এক রাতে ঘুম থেকে হঠাৎ জেগে উঠল। দস্যুরা। দেখল, তাদেরকে ঘিরে ফেলেছে নৌ-বাহিনীর লোক।

নির্বিচারে ডাকাত জবাই শুরু করল নৌ-বাহিনীর লোকেরা। ওয়ানইয়ার বুঝল, লড়াই করে টিকতে পারবে না। গোলমালের ফাঁকে একটা লংবোটে করে কেটে পড়ল সে। সঙ্গে নিল তার মোহরের সিন্দুক, আর অতি বিশ্বস্ত কয়েকজন সহচর।

দ্বীপে যে কজন ডাকাত ছিল, একটাকেও ছাড়ল না নৌ-বাহিনী, সবকটাকে হত্যা করল। এরপর খেয়াল হল ওদের, এক-কান-কাটা মারা পড়েনি। খোঁজ খোঁজ খোঁজ। বুঝে ফেলল ওরা, পালিয়েছে ওয়ান-ইয়ার। জাহাজ নিয়ে তাড়া করল পেছনে। বেগতিক দেখে নৌকার মোড় ফেরাল ডাকাত সর্দার। হস্তে এসে লুকানোর চেষ্টা করল। শেষরক্ষা করতে পারল না সো। ধরা পড়ল নৌ-বাহিনীর হাতে।

ইংরেজ জাহাজের ক্যাপ্টেন প্রথমেই জানতে চাইল, মোহরগুলো কোথায়?

খিকখিক করে হেসে উঠল এক-কান-কাটা। বলল, সাগর দেবতার খাজাঞ্চিখানায়। চাওগে ওর কাছে। হাতে পায়ে ধরলে দিয়েও দিতে পারে।

অনেক নির্যাতন করা হল এক-কান-কাটা আর তার সহচরদের ওপর। কিন্তু কেউ মুখ খুলল না। ফাঁসির দড়িতে ঝোলার আগেও বলল না কেউ কোথায় আছে মোহরগুলো। তন্নতন্ন করে খোঁজা হল হস্ত আর তার আশপাশের দ্বীপগুলো। কিন্তু মোহরের চিহ্নও মিলল না। ধরেই নিল ইংরেজ ক্যাপ্টেন, মোহরগুলো সব উপসাগরে ফেলে দিয়েছে এক-কানকাটা। ওগুলো আর উদ্ধারের কোন আশা নেই। খানিকটা হতাশ হয়েই দেশে ফিরে গেল ক্যাপ্টেন।

এদিককার সাগর নিশ্চয় তোমার চেনা, তাই না, পাপু? সামনের অন্ধকারের দিকে চেয়ে বলল কিশোর।

নিজের হাতের তালুর মত, জবাব দিল পাপালো। সুযোগ পেলেই এদিকে চলে আসি। ডুব দিই সাগরে। মোহর খুঁজি।

শুনেছি, অনেকেই মোহর খোঁজে। এখানে, বলল রবিন। পায়ও কেউ কেউ।

তুমি পাও-টাও? পাপালোকে জিজ্ঞেস করল মুসা।

দ্বিধা করল পাপালো। তারপর বলল, পাই। তবে ওটাকে না পাওয়া বললেও চলে।

শেষ কবে পেয়েছ? জানতে চাইল কিশোর।

গত হপ্তায়, বলল পাপালো। কোথায় পেয়েছি, বলব না। এটা আমার সিক্রেট। শক্ত হয়ে বস, মোড় ঘোরাব।

মোড় ঘোরালে কেন শক্ত হয়ে বসতে হবে, জিজ্ঞেস করতে গিয়েও থেমে গেল মুসা। জোরে একবার কেঁপে উঠল নৌকা। একপাশে কাত হয়ে গেল পাল, সেই সঙ্গে নৌকাটাও। পাশে আঘাত হানল ঢেউ। ছিটকে পানি এসে লাগল ছেলেদের গায়ে। শক্ত করে দাঁড় ধরে রইল পাপালো।

আরেকবার কেঁপে উঠেই সোজা হয়ে গেল নৌকা। এগিয়ে চলল আবার। সামনে দেখা যাচ্ছে ফিশিংপোটের আলো।

স্কেলিটন আইল্যান্ড এখন পিছনে, বলল পাপালো। গাঁয়ের দিকে এগোচ্ছি আমরা।

পেছনে ফিরে চাইল তিন গোয়েন্দা। দেখা যাচ্ছে না দ্বীপ। শুধু কালো অন্ধকার।

হঠাৎ চেঁচিয়ে উঠল রবিন, দেখ দেখা আলো!

একসঙ্গে জ্বলে উঠেছে অনেকগুলো আলো, ঘুরছে। শোনা যাচ্ছে অদ্ভুত একটা ধাতব শব্দ। আস্তে আস্তে বাড়ছে ঘোরার বেগ। দেখতে দেখতে আলোর এক বিশাল আংটি তৈরি হয়ে গেল।

ইয়াল্লা! ফিসফিস করে বলল মুসা। নাগরদোলা নিশ্চয় ঘোড়ায় চেপে বসেছে স্যালি…

পাপু মুসার কথা শেষ হবার আগেই বলল কিশোর। নৌকা ঘোরাও! দেখব, কিসে ঘোরাচ্ছে নাগরদোলা!

আমি পারব না। মাথা নাড়ল পাপালো। স্যালির ভূত; ঝড় থেমেছে একটু আগে। এখন এসেছে দোলায় চড়তো ইসস, নৌকাটা আরও জোরে চলছে না কেন! একটা মোটর যদি থাকত…

সোজা ফিশিংপোর্টের দিকে ছুটে চলেছে নৌকা। খুশিই হয়েছে মুসা। আর রবিন। হতাশ হয়ে কিশোর। সত্যিকারের ভূত দেখার ইচ্ছে তার অনেক দিনের। এমন একটা সুযোগ হাত-ছাড়া হয়ে গেল।

অন্ধকারে উজ্জ্বল আলোর রিঙ তৈরি করে ঘুরেই চলেছে নাগরদোলা। বাইশ বছর আগে মরে যাওয়া তরুণীর প্ৰেতাত্মা. কথাটা ভাবতেই শিউরে উঠল রবিন।

হঠাৎ থেমে গেল ধাতব শব্দ। নিভে গেল। আলো। এত তাড়াতাড়ি নাগরদোলা চড়ার শখ মিটে গেল স্যালির প্ৰেতাত্মার. আশ্চর্যা-ভাবলী কিশোর। অন্ধকারের দিকে চেয়ে বসে আছে সে। চিমটি কাটছে নিচের ঠোঁটে।

আরও আধা ঘণ্টা পর মিসেস ওয়েলটনের বোডিং হাউসে এসে উঠল তিন গোয়েন্দা। সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোনে সিনেমা কোম্পানিকে জানিয়ে দিল মিসেস।

গরম পানিতে গোসল করল তিন গোয়েন্দা। খাওয়া সারল। গরম বিছানায় উঠল।

কম্বলটা গায়ের ওপর টেনে দিতে দিতে বলল কিশোর, ভূতটা দেখতে পারলে ভাল হতা

আমার তা মনে হয় না, ঘুমজড়িত গলায় বলল মুসা। শুয়ে পড়ে কম্বলটা টেনে নিল গায়ের ওপর।

রবিন কিছু বলল না। ঘুমিয়ে পড়েছে।

<

Super User