দেখে তো মনে হয় অবস্থা ভালই, মন্তব্য করল ব্যাগলে। করালের পাশ দিয়ে এগোচ্ছে ওরা। সবুজ ঢাল বেয়ে নামছে। তাকিয়ে আছে র‍্যাঞ্চ বিল্ডিঙের দিকে। বাড়িগুলোয় নতুন রং করা হয়েছে। জমিতে ঘাসেরও কোন অভাব নেই।

বন্ধক দেয়া সম্পত্তি, মনে করিয়ে দিল বেনন। ডিলনের কাছে চলে যাবে সব, ক্লিন্ট ঋণ শোধ করতে না পারলে।

ট্রিপল বারের রেঞ্জে ঢোকার পর পঞ্চাশটার বেশি গরু দেখেনি ওরা। যতটা

জায়গা পেরিয়ে এসেছে তাতে অন্তত পাঁচশো গরু থাকা স্বাভাবিক ছিল।

দু’জন লোক র‍্যাঞ্চ বিল্ডিঙের উল্টোপাশে একটা করালের বেড়া মেরামত করছে। বেনন আর ব্যাগলে উঠানে ঘোড়া থামানোয় কাজ ফেলে চাইল তারা। তাদের একজন মধ্যবয়স্ক, দোহারা গড়ন, অন্যজন বয়সে প্রায় তরুণ, ক্লান্ত চেহারার কাউবয়।

কি চাই? জানতে চাইল মধ্যবয়স্ক লোকটা।

ডায়ারকে খুঁজছি, জানাল বেনন।

আমি ডায়ার। কি দরকার?

ঘোড়া থেকে নামল ওরা। ধুলো ঝাড়ল কাপড় থেকে। খুশি হলাম পরিচিত হয়ে, বলল বেনন। ক্লিন্ট আমাদের চাকরিতে নিয়েছে, বলল এখানে এসে তোমার সঙ্গে দেখা করতে। রলিন্সে গেছে ও, কালকে ভোরের আগেই ফিরবে, বলেছে। আমি বেনন। ব্যাগলেকে দেখাল বেনন। এ ব্যাগলে। আমার বন্ধু।

চোখে সন্দেহ নিয়ে ওদের দেখল ডায়ার। কি কাজে রলিন্সে গেছে ক্লিন্ট?

টাকা জোগাড় করতে না পারলে কালকে ট্রিপল বার দখল করে নেবে ডিলন। টুইন স্প্রিংস শহরে ব্যাঙ্ক ডাকাতি হয়েছে, দু’জন মারা গেছে, ক্লিন্টের টাকা উধাও।

গম্ভীর চেহারায় দুঃসংবাদগুলো শুনল ডায়ার আর কাউবয়।

এই যদি হয় অবস্থা তাহলে তোমরা চাকরি নিলে কেন? জানতে চাইল তরুণ কাউবয়।

আমরা ডিলনকে পছন্দ করতে পারিনি, বেনন কিছু বলার আগেই বলে উঠল ব্যাগলে। ক্লিন্ট রুখে দাঁড়ালে আমাদের সাহায্য ওর কাজে লাগবে।

আসলে একটা কাজ দরকার ছিল আমাদের, তাড়াতাড়ি বলল বেনন।

তরুণ কাউবয়ের দিকে তাকাল ডায়ার। ওদের ঘোড়াগুলোকে বার্নে নিয়ে যাও, স্টেসি, আমি ওদের খাবারের বন্দোবস্ত করছি।

ঘোড়ার দড়ি কাউবয়ের হাতে দিয়ে ডায়ারের পেছন পেছন র‍্যাঞ্চ হাউজে ঢুকল ওরা। বসার ঘরটা বড়, আসবাবপত্র সাজানোর অগোছাল ধরন দেখে বোঝা যায় অনেকদিন এগুলোতে মেয়েমানুষের হাত পড়েনি। বেনন আর ব্যাগলেকে দুটো চেয়ার দেখাল ডায়ার, বসতে বলে একটা কেবিনেট খুলে দুটো গ্লাস আর একটা বোতল বের করে রাখল ওদের সামনে, টেবিলের ওপর।

ঢেলে নাও, বলল ডায়ার। হাত-মুখ ধুয়ে নিতে চাইলে নিতে পারো। কিচেনের পাশেই ওয়াশরূম। ঘুরে দাঁড়িয়ে গলা উঁচিয়ে ডাকল। সিং! সিং!

দুবলা-পাতলা এক চাইনিজ হাজির হলো ভেতর দরজার পর্দা সরিয়ে। ডায়ারের দিকে তাকাল নিস্পৃহ চেহারায়।

বস বলেছে এরা এখানে থাকবে, বেনন আর ব্যাথলেকে দেখাল ডায়ার। এদের জন্যে খাবার আনো, জনি।

মাথা ঝাঁকিয়ে নিঃশব্দে চলে গেল চিনেম্যান।

মোট কতজন কাউবয় কাজ করছে এখানে, ডায়ার? গ্লাস দুটোতে বোবো ঢালার ফাঁকে জানতে চাইল বেনন।

জবাব দেয়ার আগে হাতের উল্টো পিঠে মুখের ঘাম মুছল ফোরম্যান। আট। অন্য ছয়জন গেছে উত্তরের রেঞ্জে, আমি আশা করছি সন্ধের আগেই চলে আসবে। কথা থামিয়ে পকেট থেকে তামাকের একটা ঢেলা বের করে তাতে কামড় বসাল সে। একটুকরো তামাক ছিঁড়ে গালে ফেলে বলল, তবে লড়তে যদি হয় তো ওদের দুজনের বেশি থাকবে না বলেই আমার ধারণা। বাকিরা ভবঘুরে, নগদ টাকার জন্যে কাজ নিয়েছে কয়েকদিন আগে।

ডিলনের বিরুদ্ধে তাহলে মোট সাত জন আমরা, গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল বেনন।

শ্রাগ করল ডায়ার। এনিয়ে দুশ্চিন্তা করে কোন লাভ নেই। দেখা যাবে যখন আসবে ওরা। আর কিছু বলল না সে, ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেল।

বেনন বুঝল গভীর ভাবে ভেবে দেখেনি ডায়ার। অপেক্ষা করে বসে থাকলে এখন যেরকম পরিস্থিতি তাতে লাভ শুধু ডিলনেরই হতে পারে। ড্রিঙ্ক শেষ করে ওয়াশরুমে গিয়ে হাত-মুখ ধুয়ে নিল ওরা, ফিরে এসে টেবিলে বসতেই খাবার নিয়ে এলো চাইনিজ কুক। ধূমায়িত কফি, বেকন আর আলুভাজা।

তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়া সারল ওরা। ভাল রাঁধে লোকটা। রান্না শেষে সার্ভ করতে পছন্দ করে। সেধে ওদের প্লেটে খাবার তুলে দিল কয়েকবার।

দারুণ হাত তোমার, উঠে পড়ার আগে বলল ব্যাগলে। মাথা ঝাঁকিয়ে সায় দিল বেনন।

খুশিতে দাঁত বেরিয়ে গেল চিনেম্যানের। বলল, পছন্দ হয়েছে? তোমরা থাকলে স্পেশাল চাইনিজ রান্না রেধে খাওয়াব। পাখির বাসার সুপ।

ভ্রূ কুঁচকে গেল ব্যাগলের। পাখির বাসার সুপ? বাসায় ইয়েটিয়ে করে না। পাখিরা? না, ওসব আমি খাব না।

রুগ্ন কাঁধ ঝাঁকাল কূক, প্লেটগুলো তুলে নিয়ে রওনা হলো কিচেনের দিকে। বোঝা গেল কিছুটা হতাশ হয়েছে।

সে চলে যেতেই চেয়ারে গা ছেড়ে বসল দু’জন। কফির কাপে চুমুক দিল নীরবে। পাঁচ মিনিট কেটে গেল চুপচাপ, তারপর ব্যাগলে জিজ্ঞেস করল, পাওনা টাকা কালকেই চাইছে কেন, দেরি করলে কী অসুবিধে ডিলনের? ওর রেঞ্জে বিক্রি করার মতো প্রচুর গরু আছে। ইচ্ছে করলে রাউন্ডআপ করে শীত আসার আগেই একটা ড্রাইভ করতে পারবে। তারমানে টাকার অভাবে নেই সে। ক্লিন্টকে আরও দু’তিন বছর সময় দিতে কোন অসুবিধে ছিল না তার।

কাজেই তোমার সন্দেহ হচ্ছে রাশল্যান্ডের ব্যাঙ্কে ডাকাতির পেছনে ডিলনের হাত আছে? জানতে চাইল বেনন। টাকা দরকার নেই ডিলনের, কিন্তু ট্রিপল বার র‍্যাঞ্চটা পেতে সে এতই উদগ্রীব যে খুন করতেও রাজি?

হয়তো তাই। আবার এসবের পেছনে অন্য কেউ থাকতে পারে। ডিলন বড় র‍্যাঞ্চার আর ট্রিপল বারের কাছে টাকা পায় বলেই তাকে আমরা খারাপ লোক বলে ধরে নিচ্ছি, এটা হয়তো ভুলও হতে পারে।

খারাপ কিনা জানি না, কিন্তু ও আমাদের ফাঁসিতে ঝোলাতে চেয়েছিল এটা আমি ভুলছি না, গম্ভীর গলায় বলল বেনন।

কালকে ও যখন আসবে, আইন থাকবে ওর পক্ষে, বলল ব্যাগলে। চোখ চকচক করছে। আইন থাকবে কারণ ঋণের দলিলটা রয়েছে ওর কাছে।

ব্যাগলের দিকে তাকিয়ে হাসল বেনন। আস্তে আস্তে ব্যাগলের মুখেও হাসি ফুটে উঠল। একটা কথাও হলো না ওদের মাঝে, কিন্তু কর্তব্য স্থির হয়ে গেল।

ডায়ার আর স্টেসি করালে তাদের কাজ শেষ করে এনেছে এমন সময়ে র‍্যাঞ্চ হাউজ থেকে বেরিয়ে এলো ওরা, পুবে ধুলোর ঝড় তুলে চার-পাঁচজন রাইডারকে আসতে দেখে কৌতূহলী হয়ে ডায়ারের পাশে থামল। কাজ সেরে ফিরে আসছে কাউবয়রা। তাদের সামনে তাড়া খেয়ে দৌড়াচ্ছে শ’খানেক বাছুর। এতদিন পর রাউন্ডআপ করায় কুগারের মতো হিংস্র হয়ে গেছে গরুগুলো, মানুষের গায়ের। অস্বস্তিকর গন্ধ পেয়ে ছুটছে প্রাণপণে। দুই পাশ থেকে তাদের তাড়া করে একসঙ্গে ধরে রেখেছে কাউবয়রা। কাজ দেখে বোঝা গেল প্রত্যেকেই তারা নিজেদের কাজে দক্ষ। দশ মিনিট পর করালে ঢুকিয়ে দিতে পারল ওরা গরুগুলোকে। এই সময়টা নড়ল না বেনন আর ব্যাগলে। কাউবয়দের সঙ্গে ওদের পরিচয় করিয়ে দিল ডায়ার। দু’জন তরুণ কাউবয় সত্যিকার আন্তরিকতার পরিচয় দিল, বাকিরা দায়সারা গোছের পরিচিতির পর চলে গেল বাঙ্ক হাউজে।

দুই তরুণকে ভাল লেগেছে বেননের। এরা পরিশ্রমী, কাজ করতে ভালবাসে। একজনের নাম রিন্টি ডেনভার অন্যজন কন লেভিস।

সত্যিকার লড়াই হলে যারা থাকবে তাদের মধ্যে এরাই শেষ দু’জন, জানাল ডায়ার। কাউবয়দের খুলে বলল আজকের ঘটনা।

আমরা যে পরিমাণ গরু এনেছি তাতে ক্লিন্টের ঋণ শোধ হবে না, চিন্তিত চেহারায় বলল ডেনভার।

তা হবে না, বলল ডায়ার, তবে সেজন্যে হাল ছেড়ে বসে থাকারও কোন অর্থ নেই। বেনন আর ব্যাগলেকে দেখাল সে। এরা লড়বে আমাদের সঙ্গে।

তার কোন প্রয়োজন নাও পড়তে পারে, বলল বেনন। কালকেই ডিলন ঝামেলা করবে না হয়তো।

কৌতূহলী ফোরম্যানের দৃষ্টি উপেক্ষা করে সোজা বাঙ্ক হাউজে গিয়ে ঢুকল ওরা। টানা তিন ঘণ্টা ঘুম দিল বাঙ্কে শুয়ে। ঘুম ভাঙাল রিন্টি ডেনভার। রাতের খাবার খেয়ে নিল ওরা কাউবয়দের সঙ্গে। তারপর বার্নে গিয়ে ঘোড়ার স্যাডল চাপিয়ে বেরিয়ে এলো বাইরে। উঠানে বসে কথা বলছে কাউবয়রা।

ঘোড়ার স্যাডল একটু আগে খুলে রেখেছে স্টেসি, আবার দু’জনকে ঘোড়া নিয়ে বেরতে দেখে অবাক হয়ে ফোরম্যানের দিকে তাকাল সে।

ওদের পাশ কাটানোর সময় রাশে দোলা দিল বেনন। আমরা যাচ্ছি একটা কাজে, ফিরতে দেরি হবে, ফিরে এসে শোব কোথায়?

বাঙ্ক হাউজ দেখিয়ে দিল ডায়ার। দরজা সবসময় ভোলাই থাকে।

আসি তাহলে। ব্যাগলেকে ইশারা করে ঘোড়া সামনে বাড়াল বেনন। ঘণ্টা দেড়েক পর বার কিউয়ের রেঞ্জে প্রবেশ করল ওরা। আকাশে একটা বাঁকা চাঁদ উঠেছে, ক্ষীণ জ্যোৎস্নায় লম্বা ঘাসগুলোকে কালচে দেখাচ্ছে। পুবদিকে তাকিয়ে কুঁচকাল ব্যাগলে। চাদটা না উঠলেও পারত।

ঝামেলা করবে, সায় দিল বেনন। আমরা যতক্ষণে র‍্যাঞ্চ হাউজে পৌঁছুব, ওটা উঠে আসবে মাথার ওপর। জোরাল আলো ছড়াবে। আকাশের দিকে তাকাল বেনন মেঘ দেখার আশায়। নাক কুঁচকে বড় করে শ্বাস টানল। বাতাসে বৃষ্টির গন্ধ নেই। আরও দু’মাসের আগে বৃষ্টি হবে না এদিকে।

জমিতে ঢেউ। তার আড়ালে আড়ালে বার কিউয়ের র‍্যাঞ্চ হাউজের যতটা সম্ভব কাছে চলে এলো ওরা। কয়েকবার ঘোড়া থামিয়ে ছায়ায় অপেক্ষা করতে হলো। ওদের সামনে দিয়ে পার হলো রাতের প্রহরী কাউবয়রা। বসে আছে ঢিলেঢালা ভাবে স্যাডলে গা ছেড়ে। কেউ কেউ গুনগুন করে গানও গাইল। তাদের দু’একজনের গলায় সুরও ছিল। মনে কষ্ট পেল বেনন।

শেষে ওরা থামল লাল সিডার বনে। ঘোড়া নিয়ে চলে এলো গাছের শেষ সারির কাছে। নিচে উঁকি দিতেই দেখতে পেল ডিলনের র‍্যাঞ্চ হাউজ। এদিকের বেশির ভাগ র‍্যাঞ্চ হাউজের মতোই বার কিউয়ের র‍্যাঞ্চ হাউজটাও ইংরেজি এল অক্ষরের মতো, তবে অনেক বড়। নির্মাণশৈলীতে মালিকের রুচি আর প্রাচুর্যের ছাপ পাওয়া যায়। দোতলা বাড়ি। এক পাশে স্টেবল, ব্ল্যাকস্মিথের ঘর আর ওয়াশ হাউজ, অন্য পাশে লম্বা বাঙ্ক হাউজ আর করাল। উঠানটা চৌকো, অত্যন্ত প্রশস্ত।

অপেক্ষা করল বেনন। ওদের চোখের সামনে একটু পর স্টেবল থেকে বেরিয়ে এলো এক অশ্বারোহী। ধীর গতিতে দক্ষিণে রওনা হয়ে গেল। ওদিকের রেঞ্জে পাহারার দায়িত্ব পড়েছে নিশ্চয়ই। লোকটা দূরে চলে যাবার পর আবার নীরবতা নামল। মাঝে মাঝে সে-নীরবতা ভেঙে দিচ্ছে ঝিঝির কর্কশ ডাক। অনেক দূরে ডাকছে একটা কয়োট, আবছা ভাবে শব্দ আসছে। র‍্যাঞ্চ হাউজে কোন সাড়াশব্দ বা আলো নেই। ঘুমাচ্ছে সবাই? কেউ পাহারায় নেই তো?

ঘোড়া রেখে পায়ে হেঁটে শামুকের গতিতে এগোল বেনন আর ব্যাগলে। স্টেবলটা পাশ কাটানোর সময় ভেতরে নাক ঝাড়ল কয়েকটা ঘোড়া। মাটিতে খুর ঠুকল। অপরিচিত মানুষের গন্ধ পেয়েছে। ঘোড়াগুলো শান্ত না হওয়া পর্যন্ত বেনন আর ব্যাগলে চুপ করে মাটিতে পড়ে থাকল, তারপর ক্রল করে চলে এলো র‍্যাঞ্চ হাউজের পাশে।

ব্যাগলে ফিসফিস করল, আমার মনে হয় কালকে সকালে ক্লিন্টের ওখানে যাবার জন্যে তৈরি হয়েই ঘুমিয়েছে ডিলন। ঋণের কাগজটা সম্ভবত হাতের কাছেই রেখেছে। একটু পর পর পড়েছে আর মুচকি মুচকি হেসেছে।

তারপর শান্তির ঘুম ঘুমিয়েছে, যোগ করল বেনন। কোন্ ঘরে সেটা আমরা বুঝতে পারব বাড়ির ভেতরে পা রাখলে। এখন আমাদের উচিত এবাড়ির অতিথি হওয়া।

বেশিক্ষণ থাকব না কিন্তু, ব্যাগলে এমন ভাবে বলল যেন বাড়ির মালিকের অনুরোধে পেঁকি গিলছে। বেননের দিকে তাকাল। ঠিক আছে তাহলে, চলো।

নিঃশব্দে বারান্দায় গিয়ে উঠল দু’জন। দরজার নবে মোচড় দিয়ে বুঝল তালা মারা। দরজা দিয়ে ডাকাতের মতো ঢুকতে পারলে চোরের মতো জানালা দিয়ে কে ঢোকে! কাজেই শেষ চেষ্টা করল বেনন। গলায় পেঁচানো রুমাল খুলে দরজার

তলা দিয়ে বেশ খানিকটা গুঁজে দিল ভেতরে। একবার দেখে নিল ঠিক তালার। ফুটোর নিচেই রুমাল পেতেছে কিনা। এবার পকেট ছুরি দিয়ে তালার ফুটোর। ভেতর খোঁচা দিল।

ঠং করে আওয়াজ হতেই ব্যাগলের দিকে তাকিয়ে চওড়া একটা হাসি দিল বেনন। তালা মেরে চাবিটা ফুটোর মধ্যেই গুঁজে রাখা হয়েছিল। খোঁচা খেয়ে রুমালের ওপর পড়েছে চাবি।

চাবি পড়ার আওয়াজে স্টেবলে আবার অস্থির হয়ে উঠেছে ঘোড়াগুলো। নাক ঝাড়ছে, মাটিতে পা ঠুকছে। একটু পর থেমে গেল সমস্ত শব্দ।

রুমাল টেনে আনল বেনন। চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে পাঁচ সেকেন্ড ব্যয় হলো।

অন্ধকারে চোখ সয়ে যাওয়ার আগে পর্যন্ত দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে থাকল ওরা। জানালা দিয়ে চাঁদের আবছা আলো আসছে। চোখ সয়ে যাবার পর সে আলোয় ঘরের ভেতরে নজর বোলাল। বাতাসে সিগারেটের ধোয়া আর মদের কটুগন্ধ। দোতলা থেকে পাওয়া যাচ্ছে নিয়মিত নাক ডাকার আওয়াজ। একেক নাকের একেক সুর। মনে হলো একসঙ্গে কয়েকটা সোনা ব্যাং সঙ্গত জুড়েছে। মদ খেয়ে টাল হয়ে ঘুমিয়েছে লোকগুলো, এত সহজে উঠবে বলে মনে হয় না। তবে সেজন্যে সতর্কতায় কোন ঢিল পড়ল না বেনন বা ব্যাগলের। ওরা জানে, বেশির ভাগ কাউবয় এক বোতল মদ গিলে মাতাল হয়েও সামান্য একটু ঘুমাবার সুযোগ। পেলে একেবারে তরতাজা হয়ে উঠতে পারে। কোন আওয়াজ করা চলবে না।

হলঘরের খোলা একটা দরজা দিয়ে নিঃশব্দে ভেতরে ঢুকল ওরা। ডানদিকে দোতলায় যাবার সিঁড়ি। পা টিপে টিপে উঠতে হলো। কোন কোন ধাপে পা রাখলেই ক্যাঁচকোচ করে প্রতিবাদ জানাবে। দেহের ভর হালকা করে চাপিয়ে বুঝে নিয়ে তারপর দুর্বল ধাপ এড়িয়ে গেল ওরা।

দোতলায় উঠে থামতে হলো। বামদিকের দুটো ঘর থেকে নাক ডাকার আওয়াজ আসছে। কিন্তু ডানদিকটা একেবারেই নীরব। ওদের ধারণা ডানদিকের ঘরেই আছে ডিলন। কারণ, ওই ঘরের জানালা দিয়ে করাল দেখা যাবে। বেশির ভাগ র‍্যাঞ্চার করাল দেখা যায় এমন ঘর বেছে নেয়। করালের আকার আকৃতি আর পশুর সংখ্যা তাদের গর্বের তপ্ত আগুনে ইন্ধন জোগায়।

ডানদিকের ঘরটা বাছল ওরা। দরজার নবে মোচড় দিয়ে যে লোকটা তেল দেয় তার মঙ্গলের জন্যে প্রার্থনা করল ব্যাগলে। তালা মারা নেই। খুলছে দরজা। একটুও ক্যাঁচকোচ করছে না। তেল লাগানো কাগুলোর কল্যাণে মসৃণ ভাবে খুলে যাচ্ছে। দরজা পুরোপুরি খুলে যাবার পর ঘরে ঢোকার আগে একটু থামল দু’জন। ভেতরে কোথায় কোথায় আসবাবপত্র আছে আন্দাজ করে নিল। তারপর ঢুকল ভেতরে।

লম্বা একটা জানালা দিয়ে চাঁদের আলো এসে ঘরটা বেশ আলোকিত হয়েছে। ঘরের মাঝখানে দেখা যাচ্ছে ডিলনকে, বিরাট চওড়া বিছানার মাঝখানে শুয়ে আছে, ধীরে ধীরে দম নিচ্ছে নিয়মিত। গভীর ঘুম ঘুমাচ্ছে। গায়ের সমস্ত কাপড় বিছানার পাশের চেয়ারে খুলে রেখেছে। গানবেল্টও চেয়ারের পেছনে ঝুলছে।

বেনন,আর ব্যাগলে এগোতেই পাশ ফিরল লোকটা। থামল না ওরা। পায়ের নিচে দামি কার্পেট, কোন আওয়াজ হচ্ছে না, ডিলনের ঘুম ভাঙবে না, গলা

ফাটিয়ে চেঁচিয়ে সব কিছু ভণ্ডুল করবে না, কাজেই থামার কোন প্রয়োজন নেই।

ব্যাগলে পাহারায় থাকল, বেনন গিয়ে চেয়ারে রাখা ডিলনের শার্ট-প্যান্ট খুঁজে দেখতে শুরু করল।

কিছু নেই ওগুলোর ভেতরে। পকেট ফাঁকা। এবার ডিলনের প্রিন্স অ্যালবার্ট কোটের পকেটে হাত ভরল বেনন। নেই। ভেতরের পকেটে খুঁজল। আছে! হাসি হাসি মুখে পেটমোটা এনভেলপটা বের করে আনল ও। জানালার সামনে গিয়ে চাঁদের আলোয় খামের ভেতর থেকে কাগজটা বের করে চোখ বুলাল। এটাই। নিচে মোটা কালিতে নিজের নাম সই করেছে ক্লিন্ট।

কাগজটা ব্যাগলেকে রাখতে দিল বেনন। এনভেলপটা ডিলনের কোটের পকেটে রেখে দিল। শার্ট-প্যান্ট যেমন ছিল তেমনি করে রাখল চেয়ারের ওপর। প্রিন্স অ্যালবার্ট কোটও ঠিকঠাক ভাজ করে রাখল।

চোখে তৃপ্তি নিয়ে বেননের কার্যকলাপ দেখছে ব্যাগলে। ভাবতেই ভাল। লাগছে যে ওদের অনুমান সঠিক ছিল। কাজ সেরে এক সঙ্গে দরজার দিকে পা বাড়াল ওরা। দরজা পেরিয়ে পাল্লা বন্ধ করেছে এমন সময়ে প্যাসেজের একটা দরজা খুলে গেল। ঘরে আলো জ্বলছে। আলো এসে পড়ছে প্যাসেজে। সেই আলোয় একজন লোকের ছায়া দেখা গেল। চৌকাঠ পর্যন্ত চলে এসেছে লোকটা। এবার বাইরে বেরিয়ে আসবে। বেরিয়ে এলেই ওদের দেখে চিৎকার করবে। জেগে যাবে সবাই। জাগলেই ধরা পড়ে যাবার সম্ভাবনা।

বিদ্যুৎ খেলে গেল বেননের শরীরে। লাফ দিয়ে সামনে বাড়ল ও। লোকটা প্যাসেজে বের হয়ে ওদের দেখল। বিরাট একটা হাঁ করল চিৎকার করার জন্যে। ওই একই মুহূর্তে কাঁধের সমস্ত শক্তি দিয়ে একটা ঘুসি ঝাড়ল বেনন লোকটার কণ্ঠায়। দু’হাতে ধরে ফেলল লোকটার অজ্ঞান শরীর। আস্তে করে শুইয়ে দিল মেঝেতে।

কপালটা এরকম ভাল থাকলে হয়, বেননের পাশে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বিড়বিড় করল ব্যাগলে।

আজকে ওদের কপাল ভাল। নিরাপদেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো ওরা। সিডারের বনের কিনারায় যখন চলে এসেছে, দেখল দক্ষিণের রেঞ্জ থেকে প্রহরীরা ফিরে আসছে। বাঙ্ক হাউজের সামনে ঘোড়া থেকে নামল লোকগুলো। আর দেরি করার কোন দরকার নেই, এখানে ওদের কাজ শেষ, ফিরতি পথে রওনা হয়ে গেল বেনন আর ব্যাগলে। প্রহরী এড়ানোর জন্যে কয়েকবার থামতে হলো। তবে কোন বিপদ ঘটল না। ক্লিন্টের রেঞ্জে ফিরে এলো ওরা কারও চোখে ধরা না পড়ে।

ট্রিপল বার র‍্যাঞ্চ হাউজের একটা ঘরে আলো জ্বলছে। ওদের ঘোড়া উঠানে এসে থামার পর দরজা খুলে গেল। ক্লিন্ট আর ডায়ার বারান্দায় বেরিয়ে এলো। চাঁদের আলোয় আগন্তুকদের চিনতে পেরে ঘোড়ার পাশে এসে দাড়াল ক্লিন্ট।

কি খবর, ক্লিন্ট? হালকা গলায় জানতে চাইল ব্যাগলে। রলিন্সে গিয়ে লাভ হলো কোন?

মাথা নাড়ল যুবক। কোন লাভ হয়নি। হবে সে-আশাও অবশ্য করিনি আমি। অনেক টাকার ব্যাপার। আমার বন্ধুদের অত টাকা নেই। তবে চেষ্টা করেছে ওরা। জোগাড় করতে পারেনি।

ঘোড়ার দায়িত্ব ডায়ার নিল। ক্লিন্টের পেছন পেছন র‍্যাঞ্চ হাউজের দিকে পা বাড়াল বেনন আর ব্যাগলে। ঘরে ঢোকার পর ওদের চেয়ারে বসতে বলল ক্লিন্ট। গ্লাসে ড্রিঙ্ক ঢেলে ওদের হাতে ধরিয়ে দিল। কোন প্রশ্ন করল না, কিন্তু চেহারা। দেখে বোঝা গেল কৌতূহল বোধ করছে সে। জানতে চায় বেনন আর ব্যাগলে কোথায় গিয়েছিল।

একটা চুরুট ধরাল বেনন। তীক্ষ্ণ চোখে যুবক র‍্যাঞ্চারের দিকে তাকাল। এখন তোমার খারাপ সময়। কয়জন কাউবয় থাকছে?

ডায়ার ছাড়া তিনজন। হাসার চেষ্টা করল ক্লিন্ট। না পেরে খুক খুক করে কাশল। রলিন্স থেকে ফিরেই সবাইকে আমাদের অবস্থা জানিয়েছি আমি। ওদের বেশির ভাগই বলল পাওনা টাকা মিটিয়ে দিতে, চলে যাবে ওরা। গ্লাসে চুমুক দিল। ক্লিন্ট। ওদের পাওনা মেটানোর মতো টাকা অবশিষ্ট ছিল আমার। একটু ইতস্তত করল যুবক, তারপর বলল, ইচ্ছে করলে তোমরাও যেতে পারো। নিজের ইচ্ছেয় এসেছিলে, নিজের ইচ্ছেয় চলে যাবে। আমি কিছু মনে করব না। এটা তোমাদের লড়াই নয়।

বাতাসে হাত নেড়ে ক্লিন্টের কথা উড়িয়ে দিল ব্যাগলে। বেননের দিকে তাকিয়ে বলল, আমরা থাকছি, তাই না, পার্টনার?।

মাথা দোলাল বেনন। সিগার ধরিয়ে ছাদের দিকে ধোয়া ছাড়ল ও। ভাবছে একে রাতের অভিযানের কথা ক্লিন্টকে বলবে কিনা। আপাতত কোন প্রয়োজন নেই। যত কম লোক জানে ততই ভাল। ক্লিন্টের র‍্যাঞ্চে ডিলনের লোক নেই তা বলা যায় না। যে কজন কাউহ্যাঁ আছে তাতে তোমার অবশিষ্ট গরু সামলাতে কোন অসুবিধে হবে না, মন্তব্য করল ও। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল, আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি না, তবে ডিলন যখন আসবে, নিজেদের দায়িত্বে কাজ করব। আমরা সাগলেকে উঠতে ইশারা করে দরজার কাছে চলে এলো নেন। তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ডিলন যখন টাকা চাইতে আসবে, তুমি জিজ্ঞেস করবে, কিসের টাকা?

যদি গালাগালি দেয় তাহলে তুমিও দেবে, উৎসাহের সঙ্গে বলল ব্যাগলে। আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল, হাতের ইশারায় থামিয়ে দিল বেনন।

ডিলন যদি বলে ঋণের কাগজের বদলে যে-টাকা নিয়েছিলে সেই টাকা ফেরত নিতে এসেছে, তাহলে বলবে, কিসের ঋণের কাগজ? আমার ধারণা গরম গরম কথা বলবে লোকটা, কিন্তু ঋণের দলিলটা বের করতে পারবে না। বিস্মিত যুবকের দৃষ্টি কৌতূহলী হয়ে উঠেছে। জবাব দিল না বেনন। শুধু বলল, ডিলনকে বলে দিয়ে কাগজ দেখালেই ওকে ওর পাওনা টাকা শোধ করে দেবে তুমি।

বেনন আর ব্যাগলে চলে যাবার কিছুক্ষণ পর বিস্ময় ফুটল, ক্লিন্টের মুখে। এখন আন্দাজ করতে পারছে ওরা দু’জন কোথায় গিয়েছিল।

উঠানে দাঁড়িয়ে ব্যাগলের কাঁধে হাত রাখল বেনন।

সূর্য উঠতে বড়জোর আর এক ঘণ্টা, ব্যাগলে। উত্তর দিকের ঢালে যে জঙ্গলটা দেখছ, আমার মনে হয় ওই জায়গাটা আমাদের জন্যে সেরা হবে।

হা, আস্তে আস্তে মাথা দোলাল ব্যাগলে। ওখান থেকে এদিকে চোখ রাখতে পারব আমরা। পালা করে ঘুমানোও যাবে।

স্টেবলে চলে এলো ওরা। দেখা হয়ে গেল ডায়ারের সঙ্গে। ওদের ঘোড়ার স্যাডল মাত্র খুলে রেখেছে লোকটা। ওদের আবার ঘোড়ার দিকে এগোতে দেখে অবাক হয়ে তাকাল। জিজ্ঞেস করল, ভেবেছিলাম তোমরা ক্লিন্টের পক্ষে লড়বে।

লড়ব, তবে দূর থেকে, জবাব দিল বেনন।

ঘোড়ায় স্যাডল চাপাল ওরা। স্টেবলের ভেতরে লণ্ঠনের মৃদু আলো। ব্যাগলের মনে হলো ডায়ার হাসছে। বেনন আর ব্যাগলে, ঘোড়া নিয়ে বেরোনোর। জন্যে দরজার দিকে এগোতেই সরে পথ করে দিল ডায়ার, কোন প্রশ্ন করল না। ওরা উত্তর দিকে রওনা হচ্ছে দেখেও বলল না কিছু।

ট্রেইল ধরে আধমাইল যাওয়ার পর রেঞ্জে নেমে ঘাসজমির ওপর দিয়ে আড়াআড়ি ভাবে জঙ্গলের দিকে এগোল ওরা। লাল সিডার আর, কটনউডের মিলিত জঙ্গল। ঘোড়া গ্রাউন্ড হিচ করে গাছের সীমানায় একটা মরা গাছের গুঁড়ির আড়ালে বসল ওরা। তিনশো গজ দূরে আবছা ভাবে দেখা যাচ্ছে ক্লিন্টের র‍্যাঞ্চ হাউজ। সূর্যোদয়ের পর কুয়াশাটুকু কেটে যাবে।

ডিলন অলস লোক নয়। সূর্য ওঠার একটু পরই দক্ষিণ দিক থেকে ঘোড়ার খুরের আওয়াজ হলো।

মনে হচ্ছে সবাইকে নিয়ে আসছে লোকটা, মন্তব্য করল ব্যাগলে।

বেনন তার রাইফেলটা খুঁড়ির ওপর রাখল। নলটা তাক করেছে র‍্যাঞ্চ হাউজের উঠানে।

ধুলোর একটা ঝড়ের ভেতর দিয়ে আসতে দেখা গেল ঘোড়সওয়ারীদের। ঝড়টাকে ওরা সঙ্গে নিয়ে আসছে। ট্রিপল বারের উঠানে থামল ঘোড়াগুলো। ধুলো থিতিয়ে আসতে দেখা গেল প্রায় বিশজন লোক। সশস্ত্র প্রত্যেকে। দলের ঘোড়ার দড়ি মাটিতে ফেলে রাখা। অভ্যন্ত ঘোড়া দড়ির কাছ থেকে সরে না।

মাঝখানে বিরাট একটা বে গেল্ডিঙে চড়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে বসে আছে লিউ ডিলন। তার পাশের লোকটা লম্বা, মাথাটা নারকেলের মতো। স্টেটসন হ্যাট মাথার পেছনে হেলিয়ে রেখেছে সে। এই লোকটাই ওদের ধাওয়া করার সময় কাউবয়দের নেতৃত্ব দিয়েছিল। ওর নামই কেল, আন্দাজ করল বেনন। কয়েকজন রাইডার বাঙ্ক হাউজ আর বার্নের কাছে গিয়ে উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করল কেউ তৈরি হয়ে লুকিয়ে বসে আছে কিনা। কেউ নেই। ফিরে এসে ডিলনকে জানাল তারা। এবার র‍্যাঞ্চ হাউজের দিকে মনোযোগ দিল ডিলন।

ভেতরে কি আছ, ক্লিন্ট? হাঁক ছাড়ল। বাইরে আসো, র‍্যাঞ্চটা আর তোমার নয়।

হেসে উঠল কাউবয়রা। হাসির আওয়াজ শুনতে পেল বেনন আর ব্যাগলে। কিছুক্ষণ কিছুই ঘটল না, তারপর দড়াম করে খুলে গেল র‍্যাঞ্চ হাউজের দরজা। বারান্দায় এসে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াল ক্লিন্ট। ডিলনকে একবার দেখে নিয়ে কাউবয়দের ওপর নজর বুলাল। জানতে চাইল, লড়াই করতে এসেছ?

হয়তো। চোখ সরু করে ক্লিন্টকে দেখল ডিলন। টাকা যোগাড় হয়েছে? কিসের টাকা? ক্লিন্টকে দেখে মনে হলো অবাক হয়েছে। কিসের টাকা তুমি ভাল করেই জানো, ক্লিন্ট। সময় নষ্ট করে কোন লাভ হবে, হয় টাকা ফেরত দাও, নয়তো বেরিয়ে যাও আমার জমি থেকে।

দীর্ঘ একটা মুহূর্ত নীরবে কাটল। বেনন আর ব্যাগলে রাইফেল তাক করে রেখেছে কাউবয়দের ওপর। র‍্যাঞ্চ হাউজের উঠানে টান টান উত্তেজনা, দূর থেকেও অনুভব করতে পারছে ওরা।

ঋণের দলিলটা দাও, তোমার টাকা পেয়ে যাবে, নিচু স্বরে বলল ক্লিন্ট।

তুমি টাকা যোগাড় করতে পারোনি।

অত নিশ্চিত হচ্ছ কি করে?

সময় নষ্ট করছ। বেশ দিচ্ছি ঋণের দলিল। স্যাডলে নড়েচড়ে বসল ডিলন। কোটের পকেটে হাত ভরে বের করে আনল খামটা। চোখ সরু হয়ে গেল। খামটা একটু পাতলা লাগছে যেন! ভেতরে তাকিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেল র‍্যাঞ্চারের চেহারা। খুব দ্রুতই নিজেকে সামলে নিল লোকটা। বিষ দৃষ্টিতে ক্লিটের দিকে তাকাল। তুমি ভাল করেই জানোনা কাগজটা আমার কাছে নেই।

আমি জানি না, ডিলন, শান্ত গলায় বলল ক্লিন্ট, তবে প্রমাণ ছাড়া তোমাকে আমি কিছুতেই টাকা দেব না। তোমাকে আমি বিশ্বাস করি না, ডিলন।

নিজের লোকদের ওপর চোখ বুলিয়ে আবার ক্লিন্টের দিকে তাকাল ডিলন। কথা যথেষ্ট হয়েছে, ক্লিন্ট। কাগজটা তুমি চুরি করায় পরিস্থিতি বদল হয়নি। মার্শাল জারম্যান জানে আজকে ঋণ শোধ করার দিন। আমার লোকরা সবাই সাক্ষী যে তুমি আমাকে টাকা দাওনি। কথা যথেষ্ট হয়েছে, এবার তোমার ব্যক্তিগত জিনিসপত্র বেঁধে নিয়ে আমার জমি থেকে দূর হও।

তোমার আর আমার লোকরা সাক্ষী আছে, তোমাকে আমি বলেছি, দলিলটা ফেরত দিলেই টাকা শোধ করে দেব।

মাথা নাড়ল ডিলন। আমি ট্রিপল বারের দখল নিচ্ছি। লড়তে না চাইলে জিনিসপত্র বেঁধেছেধে পালাও, ক্লিন্ট।

কাউবয়দের হাত অস্ত্রের কাছাকাছি চলে গেছে। একটু ছড়িয়ে অবস্থান নিচ্ছে তারা। নড়াচড়া থেমে যেতে সবকিছু মূর্তির মতো স্থির হয়ে গেল। অপেক্ষা করছে সবাই। অশুভ একটা পরিবেশ। যেকোন সময় রক্ত ঝরতে শুরু করবে।

আর একটু পরই অধৈর্য হয়ে অস্ত্র বের করে বসবে কেউ। শুরু হয়ে যাবে গোলাগুলি।

তার আগেই কিছু একটা করা দরকার। নিশানা ঠিক করে ট্রিগারে চাপ দিল বেনন। ডিলনের সমব্রেরো উড়ে গেল মাথা থেকে। মাটিতে পড়ল। কয়েক গড়ান খেয়ে স্থির হলো। ওটার ক্রাউনে দুটো ফুটো। গুলিটা র‍্যাঞ্চ বিল্ডিঙের কাঠের দেয়ালে বাড়ি খেয়ে থামল।

চমকে স্যাডলে সোজা হয়ে বসল ডিলন। হুড়োহুড়ি শুরু হলো। কাউবয়রা ঘোড়ার মুখ ফিরিয়ে দেখল জঙ্গলের কিনারায় রাইফেল কাঁধে তুলে দাঁড়িয়ে আছে দু’জন লোক। কেউ কেউ চিনল লোক দুটোকে। কেগলের চেহারাটা গম্ভীর হয়ে উঠল। চাপা গলায় ডিলনকে কি যেন বলল সে।

কেউ নড়লে খুন হয়ে যাবে ডিলন, হুমকি দিল বেনন। নড়ল না কেউ। এবার বলল, ডিলন এখানেই থাকবে। তোমরা চলে যাও। ডিলন পরে যাবে। আবার বলছি, কেউ উল্টাপাল্টা করলে ডিলন মারা পড়বে।

নির্দেশের আশায় ডিলনের দিকে তাকাল কাউবয়রা। ডিলন কিছু না বলায় কে কি যেন বলল অত্যন্ত নিচু স্বরে। একে একে উঠান ছেড়ে বেরিয়ে গেল কাউবয়রা। দক্ষিণে যাচ্ছে। একটু পরই ডিলন ছাড়া আর কেউ রইল না উঠানে। দূরের একটা ঢাল পেরিয়ে অদৃশ্য হয়ে গেল কাউবয়রা।

ডিলন ঘোড়ায় বসে আছে পিঠ সোজা করে। মুখটা যেন পাথর খোদাই করে তৈরি।

<

Super User