মাঝ বয়সী, ছোটখাট মানুষ ডাক্তার মারভিন, গোলগাল চেহারায় গোলাপী ভাব। চশমার পুরু কাঁচের ওপাশ থেকে চোখ দুটে। কুচকে আগন্তুকের দিকে তাকালে সে, পরমুহূর্তে চিনতে পেরে চেঁচিয়ে উঠলো, আরে, কলিন ফোর্বস। এসো, ভেতরে এসো। কয়েকদিন হলো তোমার অপেক্ষাই করছি।

হাত বাড়িয়ে দিলো ডাক্তার, করমর্দন করলো কলিন, ডাক্তারের আন্তরিকতা ওকে মুগ্ধ করল। বসার ঘরে ঢুকতেই চোখ পড়লো এক মহিলা আর বছর পাঁচেক বয়সের একটা বাচ্চা মেয়ের ওপর। একটা টেবিলের ওপর বসে রয়েছে বাচ্চাটি, এক গামলা পানিতে ওর হাত ডোবানো। লম্বা ছিপছিপে গড়নের মহিলাটিকে দেখলে বিশ্বাস হবে না সে-ই বাচ্চাটির মা, একেবারে অল্প বয়স। মাথাভর্তি কালো চুলের মাঝখানে সিথি কেটে চমৎকার একটা খোঁপা বেঁধেছে মাথার পেছনে; ওর গায়ে ব্লাউজ আর জ্যাকেট, পরনে বিশেষ ধরনের রাইডিং স্কার্ট, পায়ে জুতো; গভীর কালো দুটো চোখ, কমনীয় চেহারা। কেন যেন মেয়েটিকে খুব পরিচিত ঠেকছে কলিনের। হঠাৎ মনে পড়ে গেল ওর নাম, বেলিনডা কালাইল।

মাথা থেকে টুপি নামালে কলিন, হ্যালো, বেলিনডা!

হ্যালো, কলিন, ভারি গলায় বললো বেলিনডা, একটুও অবাক হয়নি, বরং তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জরিপ করছে কলিনকে। টেবিলের ওপর বসা বাচ্চা মেয়েটির দিকে তাকালে বেলিন।

এখন কেমন লাগছে মা-মনি?

ভালো, আম্মু, ব্যথা লাগছে না।

টুপিটা তুলে রাখো, কলিন, বললো ডাক্তার মারভিন। মেরিকে দেখেই তোমার সঙ্গে বসছি। হাত কেটে গেছে বেচারির, ঘা হয়ে গেছে তাতে।

গামলার পানি থেকে মেয়েটির হাত তুলে ক্ষত পরীক্ষা করলো ডাক্তার, ওর ঘাড়ের ওপর দিয়ে সামনে ঝুঁকে দেখার চেষ্টা করলো বেলিন।

হাতটা বিশ্রী রকম ফুলে উঠেছে দেখার পর আর দেরি করিনি, এখানে নিয়ে এসেছি, বললো সে। আরো খারাপের দিকে যাবে না তো।

সে ভয় আর নেই, ওকে আশ্বস্ত করলো ডাক্তার মারভিন। আমি তোমাকে দুটো ট্যাবলেট দিচ্ছি, ওগুলো পানিতে গুলে নিয়ে কাল সকালে আর সন্ধ্যায় একবার করে দুবার আর পর সকালে একবার, মোট তিনবার ওষুধ-পানিতে ওর হাত ধুইয়ে আগের মলম টাই লাগিয়ে ব্যানডেজ বেঁধে দেবে। পরশু সকালেও যদি ফোলা না কমে কিংবা যদি কনুই বা কাঁধে ব্যথার কথা বলে, ডেভিড স্পেক্টকে পাঠিয়ে দিয়ে, আমি আবার দেখে আসবো ওকে, ঠিক আছে?

ডাক্তারকে কি যেন জিজ্ঞেস করলো বেলিনডা, জবাবে ডাক্তার কি বললো তাও বোঝা গেল না। দীর্ঘ সময় আলাপ করলো ওরা। চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো কলিন, ওদের দেখছে আর ভাবছে বেলিনডার স্বামী কে হতে পারে। মেরি বেলিনডারই সন্তান তাতে সন্দেহের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। আশপাশের কোনো র‍্যাঞ্চেই হয়তো এখন থাকছে ও। আট বছর আগে ওর পরিচিত বেলিনডা ছিলো এক অষ্টাদশী তরুণী, বাবা মায়ের সঙ্গে ওয়াগোনারে এসেছিলো, শহরের স্টেজ লাইনে চাকরী করতে। ওর বাবা। শহরে আসার কয়েক দিনের মধ্যেই সব ক’টি যুবকের প্রেমনিবেদন পর্বটি শেষ হয়ে–ছিলো, সবাই মিলে বেলিনডার চোখে পড়ার কত কসরতই না করেছে ওরা। কিন্তু তারপর এমন একটা ঝামেলায় জড়িয়ে পড়তে হলো কলিনকে, ওয়াগোনার থেকে পালানো ছাড়া উপায় রইলো না।

মেরির হাতে ব্যানডেজ করে দিতে লাগলো ডাক্তার মারভিন। ব্যানডেজ বাধা শেষ হলে বললো, বাহ মেরি, লক্ষ্মী মেয়ে আমার, একটুও ভয় পাওনি তুমি। কিন্তু মনে রেখো এখন থেকে আরো লক্ষ্মী, হয়ে থাকতে হবে তোমাকে, আর কখনো রান্নাঘরে ছুরি নিয়ে দুষ্টমি করো না যেন, কি মনে থাকবে? আর কটা দিন যেতে দাও, তারপর দেখবে আম্মুই তোমাকে ছুরি চালানো শিখিয়ে দিচ্ছে। ঠিক আছে?

মেরিকে কোট পরিয়ে দিলো মারভিন, তারপর কোলে তুলে নিলো ওকে, বেলিনডার সঙ্গে দরজার দিকে এগোলো, কলিন দাড়িয়ে রয়েছে ওখানে। ওর দিকে তাকালে বেলিনডা, কপালের চামড়া কুঞ্চিত হলো তার।

তোমার মেয়েটি কিন্তু বেশ মিষ্টি, বেলিনডা, বললে কলিন।

অথচ ওকে সামলাতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি, সারাক্ষণ দুষ্টমিতে মেতে থাকে, একটুও কথা শোনে না।

মায়ের মতোই, না?

হেসে ফেললো বেলিনডা, একটু যেন লাল হলো চেহারা। ঠিক কবে ফিরেছ তুমি, কলিন?

এই তো আজই।

তাহলে তো জান না—

বাবা আর এডির কথা? হ্যাঁ, জানি, বললো কলিন। সেজন্যেই তো ফিরে এলাম। মাত্র তো ফিরে এসেছি, কি করবো ঠিক করতে পারছি না।

কি যেন বলতে চাইলে বেলিনডা, হেলারের মতো ওকে সতর্ক করতে চাইলো হয়তো, আন্দাজ করলে কলিন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত নীরব থাকারই সিদ্ধান্ত নিলো। ঘুরে দাড়ালো সে, মেরিকে কোলে তুলে নিয়ে নিচু গলায় ডাক্তারের সঙ্গে কথা বললো, তারপর বেরিয়ে গেল বাইরে।

দরজা আটকে দিলো ডাক্তার মারভিন, চোখজোড়া কুচকে আছে, তার।

বলে গেল আমি যেন তোমাকে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে শান্ত করি, হঠাৎ বললো ডাক্তার মারভিন। বেলিনডা আগেই জানতো বাবার মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে তুমি ঠিক ফিরে আসবে, সত্যি বলতে কি আমিও তাই ভেবেছিলাম। প্রতিশোধ নেয়াই তোমার উদ্দেশ্য?

হতে পারে, স্বীকার গেল কলিন।

সেক্ষেত্রে তোমাকে বোকাই বলতে হবে।

সবাই দেখছি বোকা ভাবছে আমাকে।

তবেই বোঝে।

অস্বস্তির সঙ্গে হাত নাড়লো কলিন ফোর্বস। ডাক্তার, তোমার বাবাকে যদি ফাঁদে ফেলে হত্যা করা হতো, তুমি কি করতে?

শেরিফের আদেশ অগ্রাহ্য করেছিলো ওরা। কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিলো।

ভিত্তিহীন কিনা জানছো কিভাবে? আমি যদ্দূর শুনেছি, ওরা ইচ্ছাকৃতভাবেই ক্লেব্যাংকসের ওপর চরানো ওয়ারেনের গরুর পাল স্ট্যামপিড করেছিলো।

ঠিক জানো?

না, কিন্তু তোমার বাবা অস্বীকার করেনি।

বাবা নির্দোষ প্রমাণ করতে পারলে?

পারবে কি?

জানি না। মৃত্যুর আগে তোমাকে কিছু বলে যায়নি বাবা?

কিছু না, কলিন। মুহূর্তের জন্যেও জ্ঞান ফেরেনি ওর, তিনটা গুলি বিধেছিলো বুকে, বেঁচে ছিলো কিভাবে সেটাই আশ্চর্য।

আমাদের রাইডাররা সব কোথায়?

অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে সবাই। তোমাদের কাউকেই বেসিনে পাবে না এখন, একজনকেও না।

আচমকা দড়াম করে খুলে গেল সামনের দরজা। পাই করে ঘুরলো কলিন, চোখের পলকে হোলসটারের দিকে হাত বাড়ালো, নিমেষে বেরিয়ে এলো পিস্তলটা, পরমুহূর্তে নিচু করে নিলো, চোখ মুখ গরম হয়ে উঠলো।

মেরির পুতুলটা ফেলে যাইনি তো? জানতে চাইলে বেলিনডা।

অস্বাভাবিক চড়া শোনালে ওর কণ্ঠস্বর, ফ্যাকাসে লাগছে ওকে; মেরির পুতুল খুঁজতে ফিরে আসেনি বেলিনডা বুঝে ফেললল কলিন।

কই, নাহ! জবাব দিলো ডাক্তার মারভিন।

একটু খুঁজে দেখো না। বললে বেলিনডা, তারপর গলা নামিয়ে ফিসফিস করে জানালো, বাইরে তিনজন লোককে দেখলাম আমি, কলিন, এদিকে নজরে রাখছে। সামনে যখন লোক রয়েছে পেছনেও থাকতে পারে।

পিস্তল হোলসটারে ঢোকালো কলিন। ধন্যবাদ, বেলিনডা।

এখন কি করবে?

জানি না।

তুমি চাইলে শেরিফকে খবর দিতে পারি।

মনে হয় না তাতে লাভ হবে।

তাহলে আমার সঙ্গে চলো, ওরা কিছু বুঝতে পারবে না।

না, ওরা সত্যি সত্যি আমার খোঁজে এসে থাকলে এভাবে ঠেকানো যাবে না। অন্য কোনো উপায় খুজতে হবে।

তুমি বরং এখানে থেকে যাও, বললো ডাক্তার মারভিন। ওরা জোর করে আমার বাড়িতে ঢোকার সাহস হবে না কারো!

ঠিক আছে, বললো কলিন, আজকের রাতটা এখানেই কাটিয়ে দেবে। আবার ধন্যবাদ, বেলিনডা।

কিন্তু এখানে থাকছে না ও। বাইরের লোকগুলো বেলিন্ডার ফিরে আসা নিয়ে সন্দিহান হয়ে ওঠার আগেই ওকে বিদায় করা জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে–তাই বলতে হলো কথাটা ওর কথায় বেলিনডা আশ্বস্ত হয়েছে বলে মনে হলো। আবার চড়া গলায় কথা বললো সে, অযথা কষ্ট দিলাম, ডাক্তার, ধন্যবাদ। পুতুলটা বোধ হয় ওয়্যাগনেই আছে।

এতক্ষণ চুপ করে ছিলো মেরি, আর সইতে পারলো না সে। ও আম্মু, ওটা তো ওয়াগনেই আছে, বললাম না তোমাকে?

ঠোঁট কামড়ালে বেলিনড। আহ, চুপ করো, মেরি, বললো ও তারপর বেরিয়ে গিয়ে টেনে দিলো দরজা।

দরজায় তালা মেরে কলিনের মুখোমুখি দাড়ালো ডাক্তার মারভিন, আমি মিথ্যে বলিনি, কলিন, জোর দেখিয়ে এ-বাড়িতে ঢুকে পড়বে ওয়ারেন, এখনো সেদিন আসেনি দাড়াও না, কালই ওকে একগাদ কথা শোনাচ্ছি আমি। ইচ্ছে হলে তুমি নিশ্চিন্তে থেকে যেতে পারো, কোনো ভয় নেই।

থেকে যাবে কিনা বুঝতে পারছে না কলিন। কিন্তু এভাবে কোণঠাসা ওয়া পছন্দ নয় ওর। এখান থেকে ওকে তো বেরুতে হবেই। দেরি করলে বরং আরো কঠিন হবে শত্রু বেষ্টনী, জাল গুটিয়ে আনবে ওরা।

এ বাড়ির কোনো জানালা খোলা আছে? হঠাৎ জিজ্ঞেস করলে কলিন

পশ্চিমের একটা জানাল! খুলে রেখেছি, বাতাস ঢোকার জন্যে। বিকেলে ছেড়ে দেয়া হয়েছে ওই কামরার রোগীকে। বন্ধ করতে হবে ওটা?

ঠিক আছে, আমিই বন্ধ করে আসছি, বললো, কলিন। তুমি বরং পেছন দরজা আটকানো কিনা দেখো।

মাথা দুলিয়ে অন্দরের দিকে গেল ডাক্তার মারভিন। কলিন পা বাড়ালো হসপিটাল উইংয়ের দিকে।

কামরাটা মাঝামাঝি, চেঁচিয়ে জানালো ডাক্তার

আচ্ছা, জবাব দিলো কলিন, ধন্যবাদ। নিদিষ্ট কামরার সামনে পৌঁছে দরজা ঠেলে ভেতরের জমাট অন্ধ কারে পা রাখলো কলিন। খোলা জানালার আবছা চৌকো কাঠামো দেখা যাচ্ছে। পিস্তল বের করে জানালার দিকে এগোলো ও। তিন জন লোকের কথা বলেছে বেলিনডা, বাড়ির সামনে রয়েছে ওরা, পেছনেও পাহারা থাকা সম্ভব, তবে বাড়ির পাশে হয়তো থাকবে না কেউ।

জানালার পাশে ঘাপটি মেরে বসে তীক্ষ্ণ চোখে অন্ধকারে ছয় গুলোর দিকে তাকালো কলিন, কোনো ছায়ামূতি নজরে এলো না। জানালার চৌকাঠ ডিঙিয়ে লাফ দিয়ে মাটিতে পড়লো ও। এখুনি খেকিয়ে উঠবে একটা পিস্তল, আশঙ্কা করলো, কিন্তু তেমন কিছুই ঘটলো না। মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে অনড় পড়ে রইলো কলিন।

একটা মিনিট পেরিয়ে গেল। আরেক মিনিট। আরো এক মিনিট। জানালার কাছে এসে আবার ফিরে যাচ্ছে ডাক্তার মারভিন টের পেলো কলিন। ঘাড় ফিরিয়ে উঠোনের দিকে তাকালো ও, অন্ধকারে চোখ সয়ে এসেছে ইতিমধ্যে, কিন্তু কাউকে দেখা গেল না। সত্যিই কি ছিলো তিনজন? কার কাছে খবর পেলো ওরা। ওর এখানে আসার কথা কে জানতো?

হেলার। হেলারের বাড়ির সামনে ঘোড়া রেখে এসেছে ও, অপরিচিত ব্র্যানডের ঘোড়া। এক বা একাধিক লোক অ্যাটিনির সঙ্গে ওর আলাপে বাধা দিয়েছিলো, ওরাই হয়ত এখন হাজির হয়েছে। হেলারই বোধ হয় বলে দিয়েছে যে এখানে আসবে ও।

রাস্তার দিক থেকে রাগী গমগমে কণ্ঠস্বর ভেসে এলো হঠাৎ। প্যাটেন! কনারস। মেইন! কোথায় সব? এখানে এসো, জলদি!

বুকে হেঁটে বাড়ির সামনের দিকে এগোলে কলিন, দেয়ালের অন্ধকার ছায়া থেকে সরলো না। কণ্ঠস্বরের মালিক কে হতে পারে আঁচ করতে পারছে ও। রবার্ট ওয়ারেন। হেলার বলছিলো চেঁচিয়ে নির্দেশ দেয়া ওয়ারেনের স্বভাব। ঠিক তাই করেছে রাস্তার লোকটি।

বাড়ির সামনে দেয়ালের কোণে পেীছে মাটির সঙ্গে মিশে গেল কলিন, ওয়ারেনকে দেখা যাচ্ছে এখন-লম্বা, চওড়া কাধঅলা সুঠামদেহী একলোক। অন্য দুজন লোক অন্ধকার ছেড়ে বেরিয়ে এসে যোগ দিয়েছে ওর সঙ্গে, এবার আরো একজন হাজির হলো।

আর কে আছে তোমাদের সঙ্গে? কর্কশ কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো ওয়ারেন।

আর কেউ না, রবার্ট।

এখানে কি করছো তোমরা?

টেরেন্স মিচেল আমাদের বন্ধু ছিলো, ওকে আমাদের ভালো লাগতো।

আমারও, একই রকম চড়া গলায় বললো ওয়ারেন। কিন্তু সে বোকার মতো গায়ে পড়ে ফোর্বসের সঙ্গে লাগতে গিয়ে মরেছে, ওর জন্যে বুনো বর্বরের মতো অন্ধকারে গাঢাকা দিয়ে ফোর্বসকে হত্যা করতে হবে, এমন কোনো কথা আছে? ওকে যদি মারতেই হয়, পুরুষমানুষের মতো সামনাসামনি মোকাবিলা করে, এক এক করে। বেসিনে আইন কানুন বলে একটা কথা আছে, ভুলে যেয়োনা সেটা।

বিড়বিড় করে কি যেন বললো ওদের একজন, বুঝতে পারলো না কলিন।

বিশাল কাধ ঝাঁকালো ওয়ারেন। ডাক্তার মারভিনের দরজার দিকে এগোলে সে, টোকা দিলো। দরজা খুলে যেতেই বললো, শুভসন্ধ্যা, ডাক্তার। কলিন ফোর্বস আছে নাকি এখানে?

না।

সত্যি?

মিথ্যে বলা আমার স্বভাব নয়।

এক মুহূর্ত চুপ রইলো ওয়ারেন, তারপর বললে, ঠিক আছে, ডাক্তার, খেপে যেয়ো না। তবে ও এখানে থাকলে বা আবার এলে বলল আমি ওর সঙ্গে কথা বলতে চাই। অতীতের একটা ব্যাপার নিয়ে অযথা বিরোধ জিইয়ে রাখার কোনো মানে নেই, আমার হয়ে কথাটা বলো ওকে, ঠিক আছে?

যদি ও আসে, বলবো, শান্ত কণ্ঠে বললো ডাক্তার মারভিন।

ধন্যবাদ, ডাক্তার।

ঘুরে দাড়ালো ওয়ারেন, নিজের রাইডারদের কাছে এসে বললো, ধেত্তেরি, এসব আমার একেবারে ভালো লাগছে না, তোমাদের ভাবসাবে মনে হচ্ছে ফোর্বসকে হত্যা করার মতলবেই এখানে আসা আমাদের। কিন্তু মানুষ এমন কিছু ভাবুক আমি তা চাই না। অতীত অতীতই, আমি সেসব ভুলে গিয়ে ফোর্বসের সঙ্গে মিটমাট করে ফেলতে চাই। অবশ্য ফোর্বস যদি গায়ে পড়ে ঝামেলা বাধাতে চায়, সেটা পরের কথা, তবে সেটা তাকেই আগে শুরু করতে দাও।

কিন্তু ফোর্বস টেরেন্স মিচেলকে মেরেছে। প্রতিবাদ করলে একজন।

ওর কথা আপাতত ভুলে যাও। শহরে এ-কথা ছড়িয়ে দাও, ইচ্ছে করলে ফোর্বস ওর রাঞ্চে ফিরতে পারে, আমাদের দিক থেকে কোনো গোলমাল হবে না।

এটা তোমার মনের কথা নয়, রবার্ট।

কে বলেছে? হাসলো রবার্ট ওয়ারেন, সশব্দে। অপেক্ষা করো, দেখো কি হয়।

রাস্তা ধরে শহরের দিকে এগোলে। ওরা।

উঠে দাড়ালো কলিন, অনুসরণ করলে ওদের। উঁচু রাস্তা পেরো নোর পর কোণাকুণিভাবে হেলারের বাড়ির দিকে এগোলো ও। যেখানে রেখে গিয়েছিলো। সেখানেই আছে ঘোড়াটা। কাছেপিঠে কাউকে দেখা গেল না। ওয়ারেনের লোকজন যদি নেতার কথা মেনে চলে তাহলে এখন ঘোড়ায় চেপে প্রধান রাস্তা ধরেই যেতে পারবে ও, বিপদ হবে না; এমনকি যেকোনো একটা স্যালুনে ঢুকে গলাটাও ভিজিয়ে নেয়া যায়। স্যালুনে ঢুকবে কিনা একবার ভাবলে কলিন, পরমুহূর্তে মত পাল্টালো।

জনমতের মূল্য বোঝে রবার্ট ওয়ারেন, বেসিনবাসীদের চিন্তা ভাবনা বোঝার চেষ্টা করে। আজ সে ডাক্তার মারভিনের বাড়িতে এসেছে এমন একটা হত্যাকাণ্ডে বাধা দিতে যেটা লোকচোখে জঘন্য হয়ে ধরা দিতে। কর্মচারীদের সে অতীতের কথা ভুলে যাবার পরামর্শ দিয়েছে, তার নাকি যেচে ঝামেলা করার ইচ্ছে নেই। কিন্তু গোলমালের ব্যবস্থা করা কঠিন কিছু নয়। যে কোনো লোককে ক্রমাগত উত্যক্ত করে তাকে লড়াইয়ে নামতে বাধ্য করা সহজ কাজ এবং এভাবে লড়াই বাধানোর দায়-দায়িত্বও তার ঘাড়ে চাপানো যায়। 

তারা উঠেছে আকাশে। ম্লান আলো বিলোচ্ছে আধখানা চাঁদ। ঘোড়ার কাছে এসে হিচিংপোসট থেকে লাগাম খুলে নিয়ে স্যাডলে চেপে বসলো কলিন। তারপর শহরের বাইরের দিকে এগোলো, শেষ দালানটা অতিক্রম করে ঢাল বেয়ে নদীর দিকে এগোলো। নদী পেরিয়ে উত্তর পুবে চললো ও। ম্যাকমিলানের র‍্যাঞ্চ কিনেছে রবটি ওয়ারেন, ওখানেই যাচ্ছে কলিন। ওয়ারেন দেখা করতে চেয়েছে ওর সঙ্গে।

<

Super User