আইনের লোকদের সেন্স বলে কিছু নেই, কর্কশ কন্ঠে বলল আগন্তুক। তবে তোমার আছে। তুমি কে? ঐ বুড়োটার সাথে এখানে কি করছ?

আমি রয় সলটার। বক্স ডব্লিউ-এর ফোরম্যান। রাসলারদের ট্র্যাক অনুসরণ করে এসেছি আমরা। বোধহয় পেয়েও গেছি তাদের একজনকে।

ও, তুমিই সলটার? তোমাকেই তো খুঁজছি। রাসলারদের উৎপাতে বিরক্ত হয়ে উঠেছ, তাই না?

বিদ্রুপের হাসি হাসল, লোকটি, দাঁতে দাঁত পিষল সলটার। সে ভাল করে লক্ষ করতে চেষ্টা করল মুখখাশধারী লোকটিকে। পরে হয়ত কাজে আসতে পারে।

 মাঝারি উচ্চতা লোকটির। কাউবয়দের মত পোশাক তার পরনে। আলোর অভাবে রঙটা দেখতে পেল না সলটার।

খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছ নিশ্চয়ই! আমি শিগগির তোমার বিশ্রামের ব্যবস্থা করছি, আবার বলল লোকটি।

বিপদ আঁচ করল সলটার। পেশীগুলো শক্ত হল তার। যে-কোন মুহূর্তে গুলি ছুঁড়তে পারে আগন্তুক। শরীরের ভেতর অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে ওর। অস্বস্তি। তবে সেটা বুঝতে দিল না লোকটিকে।

তোমার কথা বুঝতে পারলাম না, বলল সে। সময় নিচ্ছে আসলে। প্রস্তুত করছে নিজেকে। মরার আগে অন্তত একটা কামড় দিয়ে মরতে চায় ও। তবে। বিপক্ষও সম্পূর্ণ তৈরি রয়েছে বুঝতে পারল সে। দাঁড়িয়ে রয়েছে সলটার। এ অবস্থায় খুব একটা সুবিধে করতে পারবে না ও। তবে চেষ্টা করতে তো আর দোষ। নেই।

আমার কথা বোঝার দরকার নেই, হা হা করে হেসে উঠল লোকটি। রাইফেল তুলল। পরক্ষণেই বুকে প্রচণ্ড বাড়ি খেল সলটার। কয়েক পা পিছিয়ে গেল সে। দুহাত বাড়িয়ে বাতাস আঁকড়ে ধরতে চাইল। চেতনা লোপ পেতে। বসেছে ওর। নানা ধরনের আলোর খেলা দেখতে পাচ্ছে চোখের সামনে। তারপর সব অন্ধকার।

কিসের শব্দে যেন জ্ঞান ফিরল সলটারের। বুকে প্রচণ্ড ব্যথা। চোখ পিটপিট করে চাইল ওপর দিকে। তারাভরা আকাশ। এখন রাত। ঠাণ্ডা বাতাস বইছে। শীতে কাঁপতে লাগল সলটার। কিছুই মনে করতে পারছে না সে। উঠে বসার চেষ্টা করল। হঠাৎই সব মনে পড়ে গেল ওর। এদিক-ওদিক চেয়ে শেরিফ রজার। হার্পারকে খুঁজল ও। দেখতে পেল ঠিক পাশেই পড়ে রয়েছে শেরিফের দেহ। গুঙিয়ে উঠল হার্পার।

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সলটার। ব্যথায় বিকৃত হল মুখ। অতিকষ্টে শেরিফের শরীরের ওপর ঝুঁকে পড়ল সে। এই সামান্য পরিশ্রমেই মাথা ঘুরতে লাগল ওর। মনে হল জ্ঞান হারাবে আবার।

বুকে হাত দিল সলটার, বাঁ দিকে কাঁধের ঠিক নিচে লেগেছে গুলিটা। রক্ত শুকিয়ে এসেছে প্রায়। শার্টের ভেতর ডান হাত ঢোকাল সে। মৃদু চাপ দিয়ে। পরীক্ষা করল ক্ষতস্থান। দাঁতে দাঁত পিষে সহ্য করল ব্যথাটা। শার্ট খুলতেই দেখল বাঁ কাঁধের মাংস ছিঁড়ে বেরিয়ে গেছে গুলিটা। গুলির সময় দ্রুত পাশ ফিরেছিল সে। তাতেই বেঁচে গেছে।

বাঁ হাত অকেজো হয়ে গেছে এ মুহূর্তে। শেরিফের শরীরের ওপর আবার ঝুকল সে। এখনও গোঙাচ্ছে বেচারা। ডান হাত দিয়ে ওর শার্টের বোতামগুলো খোলার চেষ্টা করতে লাগল সলটার। শার্ট খুলে আঙুল দিয়ে ক্ষতস্থান খুঁজতে লাগল ও। বুকের বাঁ দিকে পাওয়া গেল গর্তটা। পাঁজরের ওপর দিকে লেগেছে গুলিটা। বুঝল শেরিফ গুরুতর আহত। পুরো ঘটনাটাই ঘটানো হয়েছে ঠাণ্ডা মাথায়। লোকটির মুখ আর শরীর স্মরণ করার চেষ্টা করল ও। কিন্তু চেতনা অসাড় হয়ে আসায় ব্যর্থ হল সে।

শেরিফ, আমার কথা শুনতে পাচ্ছ? ফাসফেঁসে গলায় প্রশ্ন করল ও। গুঙিয়ে উঠল শেরিফ। ব্যথা সহ্য করে কোনমতে উঠে দাঁড়াল সলটার। ক্ষতস্থানে হাত চলে গেল আবার। বার করে এনে দেখল রক্তপড়া বন্ধ হয়ে গেছে। খানিকটা স্বস্তি পেল সে। রক্ত শুকিয়ে জমে গেছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ফুটো, কিন্তু বেশি নড়াচড়া করলে যে-কোন মুহূর্তে আবার রক্তপাত শুরু হতে পারে।

ওদের ঘোড়া দুটো দাঁড়িয়ে রয়েছে তখনও, ব্ল্যাংকেট রোল দুটো শেরিফের কাছে নিয়ে আসতে কঠোর পরিশ্রম করতে হল ওকে। দীর্ঘ সময় ধরে ব্ল্যাংকেট রোল দুটো খুলল ও। তারপর চাপা দিল শেরিফের গায়ে।

পরে চারদিকটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখল ও। বুঝে পেল না রাসলারদের গোপন আশ্রয়ে এসে পড়েছে কিনা। যদি তাই হয় তবে সেই গানম্যান নিশ্চয়ই ওদের গার্ড। এবং ওরা এখনও বাঘের ঘরে রয়েছে। এ মুহূর্তে এখান থেকে পালানো অসম্ভব। দুজনেই আহত ওরা।

হঠাৎ কি মনে হতে হাঁটু গেড়ে বসল ও মাটিতে খানিক হাতড়াতেই হাতে লাগল শক্ত একটা জিনিস। ওর সিক্সগান। ওটা তুলে নিয়ে হোলস্টারে ভরল সে। আবার উঠে দাঁড়াল ও। ধীর পায়ে সামনে এগোল, এলাকাটা রাসলারদের কিনা সেটা বোঝা দরকার।

শেরিফ যেখানে পড়ে রয়েছে তার চারপাশ দিয়ে অনেকখানি জায়গা জুড়ে ঘুরে এল সে। রাসলারদের চিহ্ন দেখা গেল না। শেরিফের কাছে ফিরে এল। আবার। দেখল জ্ঞান ফেরেনি তার। বেচারা বাঁচে কিনা সন্দেহ, ভাবল সে। অসম্ভব দুর্বল লাগছে সলটারের। আস্তে আস্তে শুয়ে পড়ল সে শেরিফের পাশে। চোখ বুজল। কখন ঘুমিয়ে পড়েছে নিজেও জানে না।

ঘুম ভাঙতে দেখে চারদিকে আবছা আলো। ডান দিকে গড়িয়ে হাঁটু গেড়ে বসল ও। খানিকবাদেই ভোর আসছে। শেরিফের কথা মনে হতেই ঝুঁকে পরীক্ষা করে দেখল তাকে। যা ভেবেছিল তাই। মারা গেছে শেরিফ রজার হাপার।

শেরিফের মৃতদেহের দিকে খানিকক্ষণ বিমূঢ় হয়ে চেয়ে রইল সলটার। তারপর সংবিৎ ফিরে পেয়ে টলতে টলতে এগোল ঘোড়া দুটোর কাছে।

নিজের ঘোড়াটার স্যাডলে চেপে বসল ও। লাগাম চেপে ধরে ঘোড়ার পেটে স্পার দাবাল। এ কাজটুকু করতে হাঁপিয়ে উঠল সলটার।

সূর্য উঠে গেছে ইতিমধ্যে। ছুটে চলেছে সলটারের ঘোড়া। স্যাডলে বসে থাকার জন্যে রীতিমত কসরৎ করতে হচ্ছে ওকে। প্রায় শুয়ে পড়েছে সে ঘোড়ার। পিঠে। ঘোড়ার কেশর আঁকড়ে ধরেছে ডান হাতে। প্রতি ঝাঁকুনিতেই ব্যথা ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেহে।

এ সময় দূরে শোনা গেল গুলির শব্দ, থমকে দাঁড়াল ঘোড়া। বহুকষ্টে স্যাডলে বসে রইল সলটার। খিস্তি করল। খানিক বাদেই শুনতে পেল ঘোড়ার খুরের শব্দ।

হোলস্টারে হাত চলে গেল ওর। সরিয়ে নিল পরক্ষণেই। এদের সঙ্গে এদেরই এলাকায় পারা সম্ভব নয়। মাথা ঘুরে উঠল ওর। ছিটকে পড়ল ঘোড়া থেকে। জ্ঞান। হারাল সে।

ক্ষতস্থানে হাতের চাপ পড়তে জ্ঞান ফিরল ওর। চোখ মেলে দেখতে পেল একটি পরিচিত মুখ। তার বস্। জর্জ ওয়াগনার। মৃদু হাসল জর্জ। ওর চোখে উদ্বেগের ছায়া।

যাক, জ্ঞান ফিরেছে তাহলে, গম্ভীর গলায় বলল র‍্যাঞ্চার। কি ঘটনা বল তো। হার্পার কোথায়?

সলটার দেখতে পেল জর্জের কাঁধের ওপর দিয়ে উঁকি দিচ্ছে আরও কয়েকজন। জোহান রয়েছে ওদের মাঝে। বাকিরা বক্স ডব্লিউ-এর কাউহ্যাণ্ড। অনেকখানি স্বস্তি পেল এবার ও। দুর্বল গলায় সব ঘটনা খুলে বলল। ওকে বসিয়ে দেয়া হয়েছে এখন। একজন হুইস্কির ফ্লাস্ক ধরেছে মুখের কাছে। কঢোক গিলে কাশতে লাগল ও। চোখ পিটপিট করছে।

কয়েকজন লোক ঘোড়ায় চাপার জন্যে যাচ্ছিল। রাসলারদের খোঁজে যাবে। জর্জ ফেরাল তাদের।

বোকামি কোরো না, দ্রুত বলল সে। রাসলাররা সংঘবদ্ধ। ঠাণ্ডা মাথায় সবকিছু করছে তারা। কোনরকম ঝুঁকিতে যাব না আমরা। র‍্যাঞ্চের সবাইকে জড়ো করতে হবে এখানে। তারপর সবাই মিলে খুঁজতে শুরু করব। বেট, তুমি আর বিলি সলটারের ট্র্যাক অনুসরণ করে শেরিফের মৃতদেহ নিয়ে এস। টমলিন, তুমি শহরে গিয়ে ডেপুটি শেরিফকে সব জানাও আর পসি বাহিনী নিয়ে তাকে এখানে আসতে বল। আমি এখানে অপেক্ষা করব। মার্টিন, তুমি যাবে অসকারের কাছে। তাকে সব বলবে। আমার কথা বললেই সঙ্গে লোক দিয়ে দেবে সে। এবার সবাই মিলে কাজ করব আমরা। দেখি কি করা যায়।

গলায় হুইস্কি পড়ায় খানিকটা ভালবোধ করছে এখন সলটার। এক কাপ কফি দেয়া হল ওকে। সে সঙ্গে ঠাণ্ডা খাবার। গোগ্রাসে গিলল ও। বোঝা গেল ব্যথার চেয়ে খিদেই বেশি রকম কাহিল করেছে ওকে। গোটা কয়েক কম্বল জড়িয়ে দেয়া হল ওর গায়ে। শুয়ে পড়ল সে। শুনতে পেল মিলিয়ে যাচ্ছে খুরের শব্দ। যে যার হুকুম পালন করতে ঘোড়া ছুটিয়েছে। মাত্র কয়েকজন রইল এই অস্থায়ী ক্যাম্পে। এসময় জর্জ এল তার আহত ফোরম্যানের কাছে।

সলটার, ডাকল সে, খুব কষ্ট হচ্ছে? কেবল হাতটা তুলল সলটার। জোহান আমাকে সব বলেছে। আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। আমি যা করতে পারিনি তুমি তাই করেছ। এর দরকার ছিল। আমার গাধাটার কারণে মারাও যেতে পারতে তুমি। ম্যাকগ্রকে শুইয়ে দিয়েছিলে শুনলাম?

হাসার চেষ্টা করল সলটার। বিকৃত দেখাল হাসিটা।

ও সুবিধের লোক নয়, বলল জর্জ। কখন কি করে বসে বলা যায় না। আচ্ছা, এই গানম্যানকে ও-ই পাঠায়নি তো?

বসের কথাগুলো ভেবে দেখল সলটার। গতকালকের আগন্তুক বলেছিল ওকেই খুঁজছে সে। ফ্লিন্ট উডকক গুলি খাওয়ার আগে রাসলারদের বিরুদ্ধে, সরাসরি কোন অ্যাকশনে যায়নি সলটার। তবে কি

জর্জ, তোমার কথাগুলো ভেবে দেখার মত, শান্ত স্বরে বলল সলটার। কিন্তু ম্যাকগ্র শেরিফকে খুন করবে কেন?

শেরিফ পিস্তল ড্র না করলে তাকে হয়ত কিছুই বলত না। শুধু তোমাকে মেরে রেখেই চলে যেত।

হুঁ, বলল সলটার।

ওকে আমি ছাড়ছি না, যে করে থোক খুঁজে বার করবই, বলল জর্জ। তারপর যোগ করল, সলটার, তুমি র‍্যাঞ্চে ফিরে যাও। তোমার বিশ্রাম দরকার।

ঠিকই বলেছ, দুর্বল কণ্ঠে বলল সলটার। ওঠার চেষ্টা করল সে। আমাকে স্যাডলে তুলে দাও। কদিন বিশ্রাম নিয়ে ফিরে আসব আমি। আসতেই হবে।

জোহানকে সঙ্গে নাও, বলল জর্জ। নয় মাইল মুখের কথা নয়। অসুস্থ শরীরে তোমার একা যাওয়া ঠিক হবে না।

ঘাড় নেড়ে সায় জানাল সলটার।

জোহান কোন প্রতিবাদ করল না। খুশি মনে, সলটারের পাশাপাশি বক্স ডব্লিউ-এ ফিরে চলল। সলটারকে সাহায্য করার জন্যে এ মুহূর্তে ব্যাকুল হয়ে রয়েছে সে। পৌঁছে গেল র‍্যাঞ্চে।

তানিয়া, উঠন পেরনর সময় চেঁচিয়ে ডাকল জোহান। স্যাডলে সোজা হয়ে বসল সলটার। চাইল এপাশ-ওপাশ। বারান্দায় বসে রয়েছে তানিয়া। পাশে অসকার। প্রথমে ঈর্ষা তারপর রাগে জ্বলে গেল ওর শরীর। বারান্দার কাছে স্যাডল থেকে নামল সলটার। এক মুহূর্ত চেপে ধরে রইল স্যাডল হর্ন।

কি হয়েছে? ছুটে এল তানিয়া। উৎকণ্ঠিত। লম্বা-পাতলা মেয়েটিকে ভারী সুন্দর দেখাচ্ছে। আরও একবার মুগ্ধ হল সলটার। কোঁকড়ানো চুল হলুদ ফিতে দিয়ে বেঁধেছে ও।

সলটার গুলি খেয়েছে, তরিৎ বলল জোহান। শেরিফ মারা গেছে।

সলটারের দৃষ্টি অসকারের দিকে। এই মারত্মক দুঃসংবাদ শুনেও কোনরকম ভাবান্তর হল না তার। অসকারের চোখ দেখে মনে হল সলটারের দুর্দশায় যথেষ্ট খুশি হয়েছে সে। তবে আরও খুশি হত ও শেরিফের দলে যোগ দিলে। একটি কথাও বলল না অসকার। সলটারের দিকে সাহায্যের হাত বাড়াল না। টলতে টলতে বারান্দার দিকে একাই এগোল ও।

দ্রুত নেমে এল তানিয়া। সলটারের ডান কনুই বাঁ হাতে পেঁচিয়ে ধরল সে।

অসকার, প্লীজ, ধর ওকে, অনুনয় করল তানিয়া। নড়ল না অসকার। বসে থেকে যেন মজা উপভোগ করছে সে।

খুব লেগেছে, সলটার? কষ্ট হচ্ছে? উদ্বিগ্ন কণ্ঠে প্রশ্ন করল তানিয়া।

ভেব না, মুখ বিকৃত করে ব্যথা সহ্য করল সলটার। এত সহজে ভূত হচ্ছি না।

অসকার, ডাকল তানিয়া, দেখছ না ওর কষ্ট হচ্ছে? একটু ধর না।

ঝাড়া দিয়ে নিজেকে সরিয়ে নিল সলটার। দরকার নেই, বলল সে। বিছানা পর্যন্ত যেতে পারব।

আমি ধরছি তোমাকে, জোহান বলল। বোনের জায়গায় এসে গেছে সে। খুশি হল সলটার। ছেলেটা কোন ক্ষোভ পুষে রাখেনি। ওর গায়ে হাত তোলার পরও ওকে বিন্দুমাত্র দোষারোপ করেনি জোহান বা ওর বাবা। আসলে সলটার শুধুমাত্র এ র‍্যাঞ্চের ফোরম্যান নয়। এ পরিবারের সাথে তার সম্পর্ক তারচেয়ে অনেক বেশি গভীর। জোহান আর তানিয়ার সঙ্গে ওর সম্পর্ক খুবই আন্তরিক। জোহানকে ছোট ভাইয়ের মত স্নেহ করে সে, জোহানও কোনদিন বড় ভাইয়ের অভাব অনুভব করেনি, সমীহ করে ওকে। বাবার মৃত্যুর পর জর্জ ওয়াগনারকে বাবার আসনে বসিয়েছে সলটার।

সিঁড়ি বেয়ে ধাপে ধাপে উঠতে লাগল ওরা। পেছনে তানিয়া। সর্বক্ষণ জোহানকে বকা-ঝকা করে গেল সে। আস্তে উঠতে পারিস না, গাধা কোথাকার! এহ হে, লাগিয়ে দিলি তো।

সলটারের বাঁ কাধ বার দুয়েক বাড়ি খেল দেয়ালে। পড়ে যেতে যেতে কোনমতে সামলে নিল ও। শেষ ধাপে পৌঁছর পর পা কাঁপতে লাগল ওর। শরীরের ভার পুরোপুরি ছেড়ে দিল জোহানের ওপর। ঘরে ঢুকল ওরা। সোজা বিছানায় গিয়ে পড়ল সলটার।

তুমি পানি আর পরিষ্কার কাপড় নিয়ে এস গে, বোনকে নির্দেশ দিল জোহান। জখমটা খুলে গেছে বোধহয়। আমরা যদূর যা পারি করব। তারপর ঘোড়া নিয়ে শহরে চলে যাব। ডাক্তার আনতে হবে।

চোখ বুজে শুয়ে রইল সলটার। ওর কাপড় খুলে দিল জোহান। যতখানি পারল তাকে সাহায্য করল সে। চাদর দিয়ে গলা পর্যন্ত ওকে ঢেকে দেয়ার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সলটার। ব্যথা আর অবসাদে আবার জ্ঞান হারাল ও।

দুদিন অচেতন অবস্থায় রইল সলটার। তৃতীয় দিন সকালে চোখ মেলল সে। কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা। কিন্তু কেন সেটা মনে করতে পারল না ও। ওর বিছানার পাশে বসে ছিল তানিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলল সে। চকিতে ওর দিকে চাইল সলটার। ক্লান্ত, চিন্তিত একটা মুখ। দেখে মনে হচ্ছে প্রায় সপ্তাহখানেক ধরে নিঘুম কাটিয়েছে। কিছু একটা বলার জন্যে মুখ খুলল সলটার। কিন্তু শুকনো ঠেকল জিভ আর গলা। কথা বেরোল না। ওর দিকে এক মুহূর্ত চেয়ে থেকে মৃদু হাসল তানিয়া।

কটা দিন খুব চিন্তায় ছিলাম, সলটার। খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।

কথা বলতে চেয়ে আবারও ব্যর্থ হল সলটার। ওর অবস্থা দেখে উঠে গেল তানিয়া। এক গ্লাস পানি নিয়ে ফিরে এল। উঠে বসার চেষ্টা করল সলটার। পারল তো না-ই বরং টনটন করে উঠল ব্যথাটা। ওকে ধরে ধরে বসাল তানিয়া। ঠোঁটের কাছে গ্লাসটা ধরতেই তৃষ্ণার্ত সলটার এক চুমুকে শেষ করল পানি।

আহ, বলল সে। কতক্ষণ হল শুয়ে রয়েছি?

আজ বুধবার। সকাল, বলল তানিয়া। তুমি রবিবার বিকেলে র‍্যাঞ্চে ফিরেছিলে।

তারমানে তিন দিন, বিড়বিড় করে বলল সলটার। ডাক্তার ঘরে ঢুকলেন এসময়।

জ্ঞান ফিরেছে ওর, বলল তানিয়া।

গুড, বললেন ডাক্তার। সলটারের কাছে এসে বসলেন। ক্ষতস্থানটা পরীক্ষা করে দেখলেন।

তানিয়া, বললেন তিনি, একটু গরম পানি লাগবে যে।

যাচ্ছি, উঠে চলে গেল তানিয়া। রান্নাঘরে পানি গরম করার জন্যে।

তোমার কপাল ভাল হে, বললেন ডাক্তার। তার দিকে চাইল সলটার, জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে।

মেয়েটি যেভাবে তোমার সেবা করেছে; বললেন ডাক্তার। তাতেই বেঁচে গেছ তুমি। আমি তো ভেবেছিলাম ইনফেকশন হয়ে যাবে। দিন নেই রাত নেই যখনই এসেছি, বিছানার পাশে বসে থাকতে দেখেছি ওকে।

তানিয়া খানিক বাদে পানি গরম করে নিয়ে এল। কাজে লেগে গেলেন ডাক্তার।

তানিয়ার দিকে চাইল সলটার। অনেকখানি নিশ্চিন্ত দেখাচ্ছে মেয়েটিকে। দারুণ আবেগ অনুভব করল সলটার, প্রকাশ করতে পারল না।

রাসলারদের ধরা গেল? প্রশ্ন করল ও।

না, দীর্ঘশ্বাস ফেলল তানিয়া। গত রবিবার থেকে বাইরে রয়েছেন বাবা, চিহ্ন খুঁজছেন। তবে পাননি কিছু। ওদিকে শেরিফের মৃত্যুতে গোটা শহরে তোলপাড় পড়ে গেছে। ডিক উইলসনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ম্যাকডারমট এখন নতুন শেরিফ। রাদারফোর্ড তার ডেপুটি। পসি বাহিনী নিয়ে চষে বেড়াচ্ছে ওরা। তবে কাউকে ধরতে পারেনি। রাসলাররা আপাতত গা ঢাকা দিয়েছে।

তানিয়ার কথাগুলো ভাবতে লাগল সলটার। ডাক্তারের কাজ শেষ। তিনি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলেন। পরে আসবেন আবার। তানিয়া সলটারের জন্যে খাবার আনতে গেল। ঘরে এখন একা ও গানম্যানের মুখোমুখি হওয়ার ঘটনাটা মনে পড়ল ওর। ডান হাতের মুঠো শক্ত হয়ে উঠল। খুনীদেরকে খুঁজে বার করবে সে, করবেই। বাবার খুনী, শেরিফের খুনী কাউকে ছাড়বে না।

শেরিফের খুনী রাসলারদের লোক না-ও হতে পারে। কিন্তু তাহলে শেরিফকে গুলি করার পর ওকে গুলি করল কেন? পুরো ঘটনাটাই ইচ্ছাকৃতভাবে এবং ঠাণ্ডা মাথায় ঘটানো হয়েছে। ওরা রাসলারদের খুঁজছে সেটা জেনেই কি গানম্যান পাঠানো হয়েছে নাকি সবটাই ব্যক্তিগত আক্রোশের পরিণতি? লোকটা কেন বলল সলটারকে খুঁজছে সে? ব্যক্তিগত আক্রোশ যদি থেকেই থাকে তবে সেটা কার প্রতি? শেরিফ নাকি সলটার? যে করে তোক প্রশ্নগুলোর উত্তর জানতেই হবে তাকে। সমাধান করতে হবে এই রহস্যের। গানম্যান ওকে খুন করতে চাইলে একবার গুলি করেই চলে যেত না। ও মারা গেছে, নিশ্চিত হতে চাইত। সেক্ষেত্রে আর বেঁচে থাকার কথা নয় ওর। যাই হোক, এখন থেকে সতর্ক থাকবে সলটার, প্রস্তুত থাকবে। ওর কেন যেন মনে হচ্ছে বাবার হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এ ঘটনার কোথাও কোন যোগসূত্র রয়েছে।

সলটারের চিন্তার জাল ছিন্ন হল তানিয়ার ডাকে। ওঠ, খেয়ে নাও।

ওকে ধরে ধরে বিছানায় বসাল তানিয়া। তারপর মুখে তুলে দিল খাবার। সেটুকু খেয়ে নিয়ে মুখ খুলল সলটার। আমার জন্যে অনেক করেছ তুমি। আমি কৃতজ্ঞ।

আরে, ছাড় ওসব কথা, খানিকটা বিরক্তির সঙ্গে বলল তানিয়া। জলদি সুস্থ হয়ে গরুর পালের সঙ্গে মিশে যাও। র‍্যাঞ্চ, কাউবয় আর গরু ছাড়া আর তো কিছু বোঝ না, ওদেরকেই কৃতজ্ঞতা জানিয়ো।

মৃদু হাসল সলটার।

<

Super User