এমিলিও স্বীকার করুক বা না করুক স্যামুয়েল ব্রুকস জানে বাড পারকারকে খুন করা তার উচিত হয়নি। এ উপত্যকায় আসার পর থেকে গত তিন বছরে পারকারদের সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছে ও, কয়েকটা ঘটনাও দেখেছে। কাউকে ছাড় দেয়নি ওরা। জুলিয়াস পারকার বেসিনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান লোক, শুরু থেকে সে যা চেয়েছে তা-ই হয়ে এসেছে এখানে। প্রতিবেশীদের সাথে তার সুসম্পর্ক নেই, সবাই তাকে সমঝে চলার কারণে কারও সাথে তার বাধে না। তবে একবার বেধে গেলে আর শান্তিতে থাকারও জো থাকে না। পথের কাঁটা দূর করতে কোনবারই বেশি সময় নেয়নি বুড়ো। ব্রুকস অন্তর থেকে অনুভব করছে। এখানে শান্তিতে থাকার দিন ওর ফুরিয়ে এসেছে।

স্যামুয়েল ব্রুকসের ফেলে আসা জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে ছন্নছাড়ার মত। ভাল করে বুঝতে শেখার আগেই পথে নেমেছিল, অসংখ্য তিক্ত অভিজ্ঞতায় চিনেছে বৈরী পশ্চিমকে। প্রতিটি মুহূর্ত ওকে সতর্ক থাকতে হয়েছে, প্রয়োজনে অন্যের প্রাণ কেড়ে নিতে হয়েছে। সবই নিজেকে টিকিয়ে রাখার জন্যে। দিনের পর দিন এ কষ্টকর জীবন-যাপনে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল ও। বাকি জীবনটা শান্তিতে কাটানোর উদ্দেশে এখানে আসা। তিনটে বছর নির্বাটে কাটালেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ঝামেলা ওর পিছু ছাড়েনি।

চুপ করে আছে বার-পি, একটা আঙুলও নাড়ছে না। একেবারে বেমানান। ছেলে খুন হওয়ার পরও বসে থাকার লোক নয় জুলিয়াস পারকার। ক্ষুদ্র কারণেও তার হাতে অন্যের রক্ত লেগেছে। আট দিন আগে মারা গেছে বাড, অথচ ভাল মানুষের মত হাত গুটিয়ে বসে আছে বুড়ো। কারণটা বুঝতে পারছে না ব্রুকস, একেকটা দিন গড়ানোর সাথে সাথে তাই ওর অস্বস্তি বাড়ছেই কেবল।

কেবিন থেকে বেরিয়ে উপত্যকায় চলে এল ও। পশ্চিমাকাশের দিকে গড়াতে শুরু করেছে সূর্য, দুপুরের তপ্ত রোদ এখন আর নেই। বিস্তীর্ণ প্রেইরিতে চলতে থাকা গরুগুলোর ছায়া ধীরে ধীরে লম্বা হচ্ছে। কয়েক ঘণ্টা পর সন্ধ্যা নামবে, সময়ের খানিক আগেই উপত্যকায় আঁধার নামে, এর কারণ মরগান পিসের পাহাড়শ্রেণী অস্তমান সূর্যকে আড়াল করে ফেলে।

গরুগুলোর কাছে একটা গেল্ডিঙে দেখা গেল এমিলিওকে। নিশ্চিন্তে কাজ করছে লোকটা, এতটুকু উদ্বেগ নেই। বার-পি যে কোন সময়ে হামলা করতে পারে, কিন্তু তা নিয়ে মোটেই চিন্তিত নয়। কেবল প্রিয় শার্পসটা হাতের কাছে রাখছে সর্বক্ষণ। ব্রুকসের আশঙ্কা তৃণভূমিতে বা কেবিনে ওকে একা পেয়ে কজা করে ফেলতে পারে বার-পির ক্রুরা। বয়সের তুলনায় যথেষ্ট ক্ষিপ্র সে, কিন্তু মুখোমুখি লড়াইয়ে কয়েকজনের বিরুদ্ধে লড়ার সামর্থ্য এখন আর নেই।

ওর নিজের ক্ষেত্রেও এরকম হবে, ভাবছে ব্রুকস। বয়স বাড়ার সাথে শরীর বেঈমানি শুরু করে, তরুণ বা যুবক বয়সের ক্ষিপ্রতা তখন আর থাকে না, সহজ কাজুটাও কঠিন হয়ে যায়। এ আশঙ্কাই ওকে ক্লান্ত করে তুলেছিল, নিঝঞাট একটা বসতি গড়তে উৎসাহিত করেছিল। অন্য দশজনের মত স্বাভাবিক মৃত্যু কামনা করে ও, কারও পিস্তলের গুলিতে মরতে চায় না। যাদের লাশ পেছনে ফেলে এসেছে তাদের ছেলে বা ঘনিষ্ঠ কারও চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়ার ইচ্ছে ওর নেই।

পুব দিগন্তে এক ঘোড়সওয়ারকে দেখে ওর চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটল। ফ্ল্যাগানদের কেউ? মেক্সিক্যানের দিকে তাকাল একবার। নিঃসঙ্গ ঘোড়সওয়ারকে সে-ও খেয়াল করেছে। একটু পর, কাঠামোটা পরিষ্কার হতে অবাক হলো ব্রুকস। লরিয়া ফ্ল্যাগান। কাছে আসতে হ্যাট খুলে নড় করল।

কেমন আছ, মি. ব্রুকস? সহাস্যে জানতে চাইল লরিয়া, উজ্জ্বল দেখাচ্ছে মুখ।

একা বেরিয়েছ তুমি?

হুঁ।

ঠিক করোনি। এখানে এসেছ তোমার বাবা জানে?

না।

সে হয়তো চিন্তা করবে। ব্রুকস খেয়াল করল আড়ষ্ট দেখাচ্ছে মেয়েটিকে, এখানে এসে এতগুলো প্রশ্নের সম্মুখীন হবে ভাবতে পারেনি বোধহয়।

তুমি কেন ভাবছ বাবা চিন্তা করবে? আমি তো বাথান থেকে বেশি দূরে আসিনি! বাফেলো এরচেয়ে বেশি দূরে, সেখানেও একা গিয়েছি।

সেদিনের ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলে?

ওহ, ওটা তো একটা দুর্ঘটনা! তাছাড়া বাড় পারকার…

এদেশে অসংখ্য বাড পারকার আছে, ম্যাম, লরিয়াকে থামিয়ে দিল ব্রুকস, কিছুটা রূঢ় শোনাল ওর কণ্ঠ। আমাকে কদিন ধরে চেনো? বুঝবে কি করে আমিও আরেকটা বাড পারকার নই?

আমি এখানে এসেছি তা পছন্দ হয়নি তোমার, সেটাই বলছ না কেন? থমথমে দেখাচ্ছে লরিয়ার মুখ।

হ্যাঁ, পছন্দ হয়নি।

অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল লরিয়া, অপমানটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে ওর। খুব বড় ভুল করে ফেলেছে?

অ্যাপলুসার পাশে এসে দাঁড়াল ব্রুকস, লরিয়াকে নামতে সাহায্য করতে হাত বাড়াল। মন বিদ্রোহ করতে চাইল ওর, ইচ্ছে হলো ফিরে যাবে। কিন্তু অজান্তে নেমে এল স্যাডল ছেড়ে। অনুভব করল কঠিন এ লোকটি সম্পর্কে কৌতূহল ওর জেদের চেয়ে অনেক বেশি।

ধন্যবাদ, ম্যাম, আন্তরিক কণ্ঠে বলল ব্রুকস, ম্লান হাসি দেখা গেল মুখে। লরিয়ার সবুজ চোখে চোখ রাখল। ভুল করে এসেছ তুমি, তবু…আমার এখানে প্রথম অতিথি হিসেবে তোমার মত মহিলা…ধন্য হলো আমার বাথান!

লরিয়ার মন ভাল হয়ে গেল, খানিক আগের তিক্ততা মনে থাকল না। ব্রুকসকে অনুসরণ করে কেবিনে ঢুকল। সব মিলিয়ে চারটে কামরা। একপাশে খাবার ঘরে গোলাকার টেবিল ঘিরে কয়েকটা চেয়ার। কোণে চুলো আর জিনিসপত্র রাখার জন্যে কয়েকটা তাক। ব্রুকস চেয়ার টেনে ধরতে তাতে বসল ও। অচেনা একটা বাথান, কেবল দুজন পুরুষ-ব্রুকসের মতে এটা বিপজ্জনক জায়গা, এবং এই মুহূর্তে কেবল ওরা দুজনেই রয়েছে এখানে। কিন্তু মোটেই ভয় লাগছে না লরিয়ার, বরং লোকটি পরোক্ষভাবে এ প্রসঙ্গ তোলায় মৃদু অস্বস্তি হচ্ছে। কোন পুরুষ কি এত সহজে নিজেদের দুর্বল দিকটা এভাবে প্রকাশ করবে?

চুলোর কাছে গিয়ে কেতলিতে পানি চড়াল ব্রুকস, টিন থেকে বিস্কুট তুলে থালায় পরিবেশন করল। আগ্রহভরে দেখছে লরিয়া। মেয়েলি কাজ, ভাবছে ও, কিন্তু লোকটা তা করছে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।

খুব সহজে কাউকে বিশ্বাস করা ঠিক নয়, কফি নিয়ে এসে উল্টোদিকের চেয়ারে বসল ব্রুকস। আমার ধারণা বাড়কেও বিশ্বাস করতে তুমি। একবারও ভাবোনি এরকম কিছু হতে পারে সেদিন। ও কিছু একটা বলে তোমাকে স্যাডল ছাড়িয়েছে, তাই না?

নড করল লরিয়া, বিস্কুট চিবুচ্ছে।

ঠেকে শেখার আগেই সাবধান হওয়া ভাল।

তোমার কাছ থেকে তেমন কিছু আশা করছি না আমি, কারণ তুমি ওর মত নও।

কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল ব্রুকস। মেয়েটি বোকা কি-না বুঝতে পারছে না। হয়তো সবার সাথে এরকম অন্তরঙ্গভাবে মেশে, তবু এভাবে সহজ হওয়া বিপজ্জনক। তর্ক করল না ও, ত্যাগ করে কফিতে চুমুক দিল।

তোমরা দুজনে মিলে সবকিছু সামলাচ্ছ?

মাথা ঝাঁকাল ও।

পারকারদের কেউ আর আসেনি?

না। আমি চাই না এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করুক ওরা। ছেলেটা নিজের ভুলে মরেছে। পারকারের উচিত তা মেনে নেয়া এবং সেটাই বুদ্ধিমানের মত কাজ হবে। যদিও আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে পারকার তা মেনে নেবে কি-না। ব্রুকস খেয়াল করল লরিয়া বারবার ওর হাতের আঙুলগুলো দেখছে, বিশেষ করে বুড়ো আঙুল। প্রশ্নটা এল একটু পর।

পিস্তল ছাড়লে কেন?

প্রাণ কেড়ে নেয়া ছাড়া আর কি পারে ওগুলো? উঁহু, আরেকটা ব্যাপার…মানুষকে খুনীও বানায়।

নিজেকে তুমি খুনী মনে করো? লরিয়া বিস্মিত।

একসময় তা না ভাবলেও এখন কিন্তু তাই মনে হয় আমার, ক্ষীণ হেসে হাতের দিকে তাকাল ব্রুকস। অনেকগুলো মানুষ আমার হাতে মারা পড়েছে এটা ভাবলে নিজেকে খুনী ছাড়া অন্য কিছু মনে হয় না, যদিও সেগুলো আইনসিদ্ধ ছিল। যে লোকটা মারা গেল, তার পরিজনদের কথা চিন্তা করো, ম্যাম, ওরা কিন্তু একটা ডুয়েলকে খুন হিসেবেই দেখবে। একজন মহিলা যখন তার স্বামীকে হারায় তখন স্বামীর মৃত্যুই তার কাছে আসল, কিভাবে মারা গেল তা কোন ব্যাপারই নয়। জুলিয়াস পারকারের কথাই ধরো, নিরস্ত্র একজন লোককে খুন করতে গিয়ে মারা পড়েছে তার ছেলে, এরচেয়ে বড় ফেয়ার ফাইট হবে কখনও? কিন্তু পারকার মোটেও তা ভাববে না, পুত্রশোক ওর মধ্যে কেবল প্রতিহিংসার আগুন জ্বালাবে।

আপনমনে শ্রাগ করল লরিয়া। কি জানি, ঠিক বুঝতে পারছি না। তোমার কথাগুলো বইয়ের মত শোনাচে-কঠিন, অস্পষ্ট…তবে এটুকু বুঝেছি যে শোক যার, জ্বালাও তার। এবং নেহায়েত রক্ষা করাও বোধহয় বিপজ্জনক, তাই না? মৃত লোকের আত্মীয় বা বন্ধুরা এসে পরে চ্যালেঞ্জ করতে পারে।

মাথা ঝাঁকাল ব্রুকস।

আমার কৌতূহল হচ্ছে, পারকাররা যদি আবার আসে কি করবে তুমি, অস্ত্র ছাড়া ওদের ঠেকাবে কিভাবে?

কফি নেবে? হেসে প্রশ্নটা এড়িয়ে গেল ব্রুকস। লরিয়া সায় দিতে চুলোর কাছে গিয়ে মগদুটো পূর্ণ করল।

তোমার সম্পর্কে অন্যরা কি ভাবে, জানো? অহঙ্কারী, অভদ্রলোক। কেউ কেউ বলে বেড়ায় পেছনে অন্ধকার একটা অতীত ফেলে এসেছ, আর এখানে নিজেকে লুকিয়ে রাখতে চাও। আসলে ওরা তোমার সাফল্যকে ঈর্ষা করে, এমন একটা কাজ তুমি করেছ যা কেউ কল্পনাই করতে পারেনি।

কৌতুক বোধ করছে ব্রুকস যদিও কারও মতে ওর কিছু আসে-যায় না। জানালা গলে তাকাল প্রেইরির দিকে। সবুজ ঘাসগুলো ইতোমধ্যে বড়সড় হয়ে উঠেছে। তিনশো গরু চরার জন্যে যথেষ্ট জায়গা। স্টকটা এখুনি বাড়ানোর ইচ্ছে নেই ওর, ভাল করে ঘাস গজিয়ে উঠুক। বছর শেষে তাহলে আরও কয়েকশো গরু চরতে পারবে।

এমিলিওকে কেবিনের দিকে আসতে দেখল ও।

লরিয়া ফ্ল্যাগানের হুট করে এখানে আসার কারণ আঁচ করার চেষ্টা করল। মেয়েটা প্রথম থেকে ভেবে এসেছে ওর কারণেই পারকারদের সাথে ঝামেলায় জড়িয়েছে ব্রুকস। বার-পি হয়তো আরেকবার হামলা করেছে-এই উদ্বেগ কাটাতে এখানে আসা। এ ভাবনাই ওকে অচেনা একটা বাথানে আসতে প্ররোচিত করেছে। ফ্লাগানরা আন্তরিক, এ মেয়ে তারচেয়েও বেশি। খুব সহজে কথা বলছে অথচ ওদের পরিচয় হয়েছে মাত্র দুই সপ্তাহ হলো। বোকা নয় মেয়েটি, তাহলে ব্রুকসের অতীত নিয়ে সন্দেহ করত না। কিন্তু অন্যকে সহজে বিশ্বাস করার প্রবণতা আছে ওর মধ্যে। ঠিক এ জন্যেই বাড পারকার এতটা সাহসী হতে পেরেছে। এ সরলতাই হয়তো ওর নিরাপত্তার যোগসূত্র, পাশাপাশি ভয়েরও কারণ।

মেক্সিক্যানকে দরজায় দেখা গেল। অতিথিকে বাউ করল সে, সহাস্যে এগিয়ে এসে নিজের পরিচয় দিল। লরিয়ার হাত টেনে নিয়ে উল্টোপিঠে চুমো খেল। কফির মগ হাতে ওদের সাথে যোগ দিল এরপর। পাঁচ মিনিটের মধ্যে বুড়োকে পছন্দ করে ফেলল লরিয়া। ওদিকে এমিলিওর মুখ থামছেই না।

লরিয়ার মনে পড়ল অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে। ক্ষমা চেয়ে উঠে দাঁড়াল, বিদায় নিল বুড়োর কাছ থেকে। বাইরে এসে দেখল নিজের রোয়ানে স্যাডল চাপিয়ে অপেক্ষা করছে স্যামুয়েল ব্রুকস, পাশে ওর প্রিয় অ্যাপলুসা। লোকটা ওকে এগিয়ে দেবে বুঝতে পেরে কৃতজ্ঞবোধ করল। ওকে স্যাডলে চাপতে সাহায্য করল সে, নিজে রোয়ানে চাপল এরপর।

পিঠে শেষ বিকেলের আলো নিয়ে সার্কেল-এফের দিকে এগোল ওরা।

মি. ব্রুকস?

পাশ ফিরে তাকাল সে।

তোমরা কি অনেকদিনের বন্ধু?

না। কয়েকদিন হলো কেবল।

অথচ আমি তাই ভেবেছিলাম…তোমাদের সম্পর্কটা আমার কাছে সেরকমই মনে হয়েছে। মাত্র কয়েকদিনে এত কাছাকাছি আসা কি সম্ভব? এখানে আসার পাঁচদিনের মাথায় তোমার পক্ষে অস্ত্র ধরেছে ও, একজন মেক্সিক্যান বুড়ো, ইয়াঙ্কি হলেও না হয় কথা ছিল।

মূল ব্যাপারটা অন্য জায়গায়-পরস্পরকে পছন্দ করা।

মাত্র কয়েকদিনে তোমরা বন্ধু হয়ে গেলে? নিজের জীবন বাজি রেখে তোমাকে বাঁচিয়েছে ও।

সেজন্যে প্রথম দেখা বা একটা ছোট্ট ঘটনাই যথেষ্ট, ম্যাম। আমি জানি ওকে তোমারও পছন্দ হয়েছে, কিন্তু কতক্ষণ লাগল? কাউকে মনে জায়গা দেয়ার ব্যাপারটা তো এরকমই।

মেয়েদের ক্ষেত্রেও? লরিয়ার মুখ ফস্কে বেরিয়ে গেল প্রশ্নটা।

কি যেন বলতে চেয়েও থেমে গেল ব্রুকস। হয়তো, ম্যাম, একটু পর নিচু কণ্ঠে বলল কিন্তু সেখানে অনিশ্চয়তার সুর নেই। কারও কারও জন্যে একটা মুহূর্তই যথেষ্ট।

কৌতূহল হচ্ছে লরিয়ার, কিন্তু চেপে রাখল সেটা।

সার্কেল-এফে ওরা যখন পৌঁছাল, তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। দেরি করতে চাইছিল না ব্রুকস, কিন্তু মিসেস ফ্ল্যাগানের কাছে ওর কোন আপত্তিই ধোপে টিকল না। সাপার খেয়ে তবে ছাড়া পেল।

ফেরার সময় পোর্চে বেরিয়ে এল লরিয়া। সার্কেল-এফের নিজস্ব হসল্যার করাল থেকে রোয়ানটাকে বের করে এনেছে। ব্রুকসের হাতে লাগাম তুলে দিয়ে সরে পড়ল নোকটা।

স্যাডলে চাপার সময় ওর হাত চেপে ধরল লরিয়া, আবছা আলোয় মেয়েটির চোখে কেবল উদ্বেগই দেখা গেল। সাবধানে থেকো, মি. ব্রুকস! পারকাররা খুব ভয়ঙ্কর মানুষ। সুযোগ পেলে

এ দেশটাতে কে ভয়ঙ্কর নয়, ম্যাম, অন্তত যারা টিকে আছে? হেসে মেয়েটিকে অভয় দেয়ার চেষ্টা করল ব্রুকস। এমিলিওর কথাই ধরো, মেক্সিক্যান এ বুড়ো যে কতটা ভয়ঙ্কর ওরা নিশ্চই তা টের পেয়েছে, তাই না?

নিজের ব্যাপারে তুমি সবসময়ই এড়িয়ে যাচ্ছে! চাপা স্বরে অভিযোগ করল লরিয়া। বিকেলে জানতে চেয়েছিলাম পারকাররা এলে কি করবে তুমি। আমি চাই…যদি ওদের এড়াতে না পারো…।

আমি এখানে শান্তিতে থাকতে এসেছি, ম্যাম, দৃঢ় স্বরে বলল ব্রুকস, থামিয়ে দিল ওকে। কারও অধিকার নেই আমার এ শান্তিপূর্ণ জীবন ওলট-পালট করে দেয়ার। আগের জীবনে আমি ফিরে যেতে চাই না। ওরা যদি তা করতে আমাকে বাধ্য করে, তো ভুল করবে।

অমঙ্গল আর বিপদের আশঙ্কায় চোখের পাতা কেঁপে উঠল লরিয়ার, শিহরিত হলো শরীর। অন্ধকারে তার কোনটাই দেখতে পেল না ব্রুকস, লরিয়ার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে স্পার দাবাল। প্রেইরির দিকে ছুটল ঘোড়াটা।

ট্রেইলে এসে দ্রুত ঘোড়া ছোটাল ব্রুকস। অনেক সময় নষ্ট করেছে বলে নিজের ওপর বিরক্ত।

কেবিনটা দৃষ্টিসীমায় আসতে খুঁটিয়ে দেখল ও। খাবার ঘরে বাতি জ্বলছে, ম্লান আলো এসে পড়েছে পোর্চ আর সামনের খোলা জায়গায়। স্যাডল ছেড়ে ঘোড়াকে নিয়ে করালে ঢুকল, এমিলিওর গেল্ডিঙের অনুপস্থিতি সতর্কঘণ্টী বাজাল ওর মাথায়। রোয়ানের ঘাড়ে মৃদু চাপড় মেরে বেরিয়ে এল। দ্রুত ঢুকে পড়ল কেবিনে, সব কটা কামরায় খুঁজে দেখল-নেই।

চুলোতে স্টু চাপিয়েছিল বুড়ো, শুকিয়ে গেছে। আরেকটু দেরি হলে বোধহয় প্যানটাতে আগুন ধরে যেত। চুলোর আগুন নিভিয়ে দিয়ে খুঁটিয়ে দেখল পুরো কেবিন আর করাল। একটা জিনিসও ছোঁয়নি কেউ। শুধু এমিলিও আর ওর গেন্ডিংটা লাপাত্তা হয়ে গেছে।

সহসা ক্লান্তি অনুভব করল ব্রুকস, একটা চেয়ারে বসে পড়ল। মনেপ্রাণে চাইছে আশঙ্কাটা মিথ্যে প্রমাণিত হোক। শনিবার আজ, এমিলিও হয়তো বাফেলোয় গেছে কিংবা কাছে-পিঠে আছে। কিন্তু স্টু-র প্যানটা ওকে মোটেও স্বস্তি দিচ্ছে না। চুলোয় রান্না চড়িয়ে কোথাও যাওয়ার লোক নয় এমিলিও। শার্পসটা টেবিলে পড়ে আছে। ওরা ঘরে ঢোকার আগ পর্যন্ত কিছুই টের পায়নি মেক্সিক্যান, নয়তো ব্যাপারটা এত সহজে ঘটত না। বন্ধুর পরিণতি আন্দাজ করতে পারছে ব্রুকস-নিজহাতে ওকে খুন করবে জুলিয়াস পারকার, নয়তো জেফরি করবেট। তবে শেষেরটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

কষে নিজেকে গাল দিল ও। মেয়েটিকে এগিয়ে দিতে যাওয়া ঠিক হয়নি, অন্তত সার্কেল-এফ পর্যন্ত। শুধু তাই নয় ওখানে ঘণ্টাখানেক কাটিয়েও এসেছে। এত বড় ভুল ও করল কি করে? তিনটে বছরের অসতর্ক জীবন ওর সব বিচারবুদ্ধি ভোঁতা করে দিয়েছে? পোর্চে বেরিয়ে এসে অন্ধকার প্রেইরির দিকে উদ্দেশ্যহীনভাবে তাকাল। শত মাথা কুটলেও ভুলটা এখন আর শোধরানো যাবে না। লরিয়াকে পৌঁছে না দেয়াও ভুল হত, নিজেকে বোঝাল ও, বিপদ হতে পারত মেয়েটার। ব্রুকসের দুর্ভাগ্য বার-পির লোকজন মোক্ষম সময়ে এসেছিল, ওর অনুপস্থিতিতে তাদের কাজ সহজ হয়ে গেছে।

নিজেকে সুস্থির করার চেষ্টা করল ও-করালে গিয়ে ঘোড়াকে দানাপানি দিল, তারপর সময় নিয়ে দলাই-মলাই করল। কাজের ব্যস্ততায় অস্থিরতা, উৎকণ্ঠা দূর করতে চাইছে। বার-পিতে যেতে পারে, এখনও হয়তো খুব একটা দেরিও হয়ে যায়নি। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছু হবে না, ওরা ধরে নেবে সেখানে যেতে পারে ব্রুকস তাই জমকালো অভ্যর্থনার আয়োজন করে রাখবে ঠিকই। সেধে বাঘের খাঁচায় ঢোকার কোন মানে হয় না, এমিলিওকে যদি বাঁচিয়ে রাখে তো পরেও সুযোগ পাওয়া যাবে।

নিজের ওপর বিরক্তি অনুভব করছে ও। ভেবে পাচ্ছে না এমন ছেলেমানুষী ওকে পেয়ে বসল কি করে। জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল করেছে আজ, এমন ভুল যা কোনভাবেই শোধরানোর নয়। অথচ সর্বক্ষণ আশঙ্কা করেছে, জানত বার-পি হামলা করবে।

খাবার ঘরে এসে স্টোভে পানি চড়াল। কফির মগ হাতে টেবিলে এসে বসল। রোয়ানটাকে কেবিনের সামনে ছেড়ে দিয়ে এসেছে, অনাহত কেউ এলে ওকে সতর্ক করে দেবে। বহুবার এ কাজ করেছে ঘোড়াটা।

শোবার ঘরে এল ও। পাশের খালি বিছানাটা ওকে এমিলিওর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। আরও দুটো কামরা আছে, কিন্তু কোনটাই ব্যবহার করতে রাজি হয়নি বুড়ো। পাশের বাঙ্কটাই ছিল তার পছন্দ। রাতভর গল্প করেছে দুজনে, মাঝে মাঝে বই পড়ে শোনাত এমিলিও। মেক্সিক্যান হিসেবে লোকটা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচের। স্বগোত্রের লোকজনকে ছেড়ে এসেছে যুবক বয়সে, এরপর বিভিন্ন বাথান আর ক্যাম্পে কাটিয়ে দিয়েছে জীবনটা।

মাত্র কয়েকদিনের সম্পর্ক। বয়সের ব্যবধান বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি ওদের মাঝে। পরস্পরকে বুঝতে পারত ওরা। ব্রুকস বিশ্বাস করে মেক্সিক্যান এ বুড়ো ছিল ওর আত্মার আত্মীয়। ওর জীবনে কেবল এই একটি লোক মনেপ্রাণে ওর ভাল চেয়েছে। অবচেতন মন তাই মেক্সের মৃত্যু কোনভাবেই মেনে নিতে চাইছে না। হয়তো সকালেই ফিরে আসবে ও, স্যাডল ছেড়ে হাঁক দেবে: আমার স্টু কোথায়, স্যাম, একাই সাবাড় করে ফেলেছ নাকি? তুমি তো আচ্ছা মানুষ!

ঘুম নেমে এল ব্রুকসের চোখে। সারা রাত কাটল আধো ঘুম আধো জাগরণে। যখনই জেগেছে কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করেছে কোন শব্দ পায় কি-না।

ভোরে সূর্য ওঠার আগে বিছানা ছাড়ল। চুলোয় আগুন জ্বেলে বেকন আর ডিম ভেজে নাস্তা সারল, এরপর কড়া এক মগ কফি। ঘোড়াকে দানাপানি দিয়ে করাল থেকে বেরিয়ে আসতে ক্ষীণ আলোয় পঞ্চাশ গজ দূরে দেখতে পেল এমিলিওর গেন্ডিংটাকে। স্যাডলের ওপর উপুড় হয়ে আছে একটা দেহ। শিস বাজাতে কাছে চলে এল ঘোড়াটা।

এমিলিওর দেহ স্পর্শ করল ও। ঠাণ্ডা, শক্ত হয়ে এসেছে। সম্ভবত এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার পরপরই খুন করা হয়েছে। হাতের আঙুলগুলো থেতলানো, বাহু থেকে কজি পর্যন্ত সিগারেটের আগুনে পোড়া অসংখ্য দাগ, কয়েক জায়গায় ফোস্কা পড়েছে। গালে, গলায় দেয়া ছুরির পোচগুলোতে রক্ত জমাট বেঁধে সরু রেখার সৃষ্টি করেছে। শেষ কাজটুকু সারা হয়েছে কপালে গুলি করে, বিশাল গর্তের চারপাশে গানপাউডারের পোড়া দাগ। উল্টোদিকে, মাথার পেছনে তুলনায় বড় আরেকটা গর্ত, বুলেটটা বেরিয়ে গেছে এ-পথে। শুকনো রক্ত আর মগজে মাখামাখি।

এমিলিওর দেহ স্যাডল থেকে নামিয়ে বাকে শুইয়ে দিল ও। তারপর স্যাডল ছাড়িয়ে সময় নিয়ে ঘোড়াটার যত্ন নিল। সূর্য যখন পুব আকাশে উঁকি দিতে শুরু করেছে, এসময়ে শাবল আর গাইতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সজি বাগানের পাশে মাটিচাপা দিল মেক্সিক্যানকে। কবরের পাশে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল ও, একটা শব্দও উচ্চারণ করল না। শুধু মনে মনে বন্ধুর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করল।

মরগান পিক্‌সের ঝর্না থেকে গোসল সেরে এসে নিজের কামরায় এল। এতটুকু উদ্বেগ, ক্লান্তি বা অস্থিরতা-কোনটাই নেই এখন। সম্পূর্ণ শান্ত, নির্বিকার দেখাচ্ছে ওকে। বাঙ্কের নিচ থেকে ট্রাঙ্ক বের করে খুলল, কাগজে মোড়া প্যাকেট বের করে সেটা নিয়ে খাবার টেবিলে এসে বসল। ট্রাউজারের পকেট থেকে এবার বের করল এক টুকরো কাগজ, এমিলিওর পকেট হাতড়ে পেয়েছিল। ওটার ভাঁজ খুলে মেলে ধরতে ঝকঝকে কয়েকটা লাইন স্পষ্ট হলো:

ভাগ্য দেখছি এবারও তোমার পক্ষে, স্যামুয়েল ব্রুকস। সময়মত ঠিকই অনুপস্থিত ছিলে। বলেছিলাম মেক্সিকান কুত্তাটাকে খুন না করে পানিও ছোঁব না। আগামীকাল সকালে বাফেলোতে হুইস্কি দিয়ে উদযাপন করব উপলক্ষটা।

নিচে কিছু লেখা নেই-কারও নাম বা স্বাক্ষর। কিন্তু এটা করবেটের, লেখা, জানে ব্রুকস। নিশ্চলক চেয়ে থাকল কাগজের দিকে, বুঝতে পারছে এটা একটা ফাঁদ। ওকে প্ররোচিত করে বাফেলোতে নিয়ে যেতে চায় বার-পি ফোরম্যান। তারপর সুযোগ বুঝে নিকেশ করবে নাকি হাতাহাতি লড়বে? একটু যেন বেশিই আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে তাকে অথচ কয়েকদিন আগে ওদের প্রথম দেখার সময় করবেট মোটেও তা ছিল না। কারণটা কি, আলাদা কোন আয়োজন?

সিগারেট ধরাল ও। চুলোয় ছুঁড়ে মারল কাগজটা। সামনে রাখা প্যাকেটের দিকে দৃষ্টি পড়তে শরীর-মন শান্ত হয়ে এল-একেবারে নিরুদ্বিগ্ন, দ্বিধাহীন। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে গেছে। কি করতে হবে তা-ও পরিষ্কার জানে। কাগজের মোড়ক সরিয়ে বহুল ব্যবহৃত জোড়া পিস্তল, হোলস্টার আর রাইফেল বের করল। অজান্তেই বুক চিরে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এল। ক্ষীণ হাসল ও।

শান্তির চেষ্টা ওর এখানেই শেষ।

পুরানো একটা ব্যানডানা দিয়ে অস্ত্রগুলো মুছল। ঠাণ্ডা বুলেটের স্পর্শ ওকে মনে করিয়ে দিল ফেলে আসা অস্থির দিনগুলো। নাহ্, বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই। এ জায়গাটাকে নিজের মত করে দেখেছে এমিলিও ওর জীবনের সেরা কিছু মুহূর্ত উপহার দিয়ে গেছে লোকটা। তার আত্মাকে শান্তি দিতে চেষ্টা করবে ও। কজন লোক আছে জুলিয়াস পারকারের—দশ, পনেরো? পরোয়া করে না ব্রুকস।

সিলিন্ডারে তাজা বুলেট ঢুকিয়ে সবকিছু পরখ করে দেখল। নিচু করে উরুতে বাঁধল হোলস্টারজোড়া। কামরার এককোণে গিয়ে দাঁড়াল। টান টান হয়ে গেছে শরীর। বিদ্যুৎগতিতে হাতে উঠে এল জোড়া পিস্তল, উল্টোদিকের দেয়ালে গাঁথা পেরেকে নিশানা করল। অস্ত্রগুলো ফেরত পাঠিয়ে কয়েকবার অনুশীলন করল। সন্তুষ্ট।

এবার রাইফেল পরখ করার পালা। টেবিলের ওপর থেকে ওটা তুলে নিয়ে বেরিয়ে এল। বিশ মিনিট পর সন্তুষ্ট হয়ে উপত্যকা থেকে ফিরে এল ও। করালে ঢুকতে আনন্দ প্রকাশ করল রোয়ানটা, ছোটার জন্যে উন্মুখ হয়ে আছে। অন্যদিন ভোরে বেরিয়ে পড়ে, আজ তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। সব অর্থেই তাই, ভাবল ব্রুকস, আজকের দিনটা সম্পূর্ণ অন্যরকম।

একটু পর বাফেলার উদ্দেশে যাত্রা করল ও। রোয়ানটা জোর গতিতে ছুটতে চাইছে, লাগাম টেনে গতি কমাল। তাড়া নেই ওর। ছোটাছুটি করে ঘোড়াকে অযথা ক্লান্ত করার মানে হয় না।

বাফেলো টাউন যেন ঝিমিয়ে আছে। চওড়া রাস্তার দুপাশে বাড়িগুলোর ওপর নজর বুলাল ও। সকালের সূর্যের তেরছা আলোয় বাড়িগুলোর দীর্ঘ ছায়া রাস্তায় এসে পড়েছে, খুরের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত রাস্তাকে তাতে আরও রুগ্ন, ধূলিধূসর মনে হচ্ছে। গির্জার ঘণ্টাধ্বনি মনে করিয়ে দিল দিনটা আজ রোববার। দুজন মহিলাকে গির্জার দিকে এগোতে দেখে থেমে, টুপি খুলে নড় করল ব্রুক।

উইলিয়াম লকহার্টের স্টোরের সামনে এসে স্যাডল ছাড়ল। হিচিং রেইলে লাগাম বেঁধে ঢুকে পড়ল ভেতরে। খদ্দের নেই। মিসেস লকহার্টকে কোথাও দেখা গেল না। বিস্মিত দৃষ্টিতে ওকে দেখছে স্টোর মালিক, সচরাচর যে সম্ভাষণ জানায় তা-ও জানাতে ভুলে গেছে। চোরা চোখে দেখছে ওর উরুতে বাঁধা জোড়া পিস্তল আর স্যাডল বুটে রাখা রাইফেল।

বিল, হেনরীটার জন্যে দুশো রাউন্ড বুলেট চাই আমার। আর কোল্টগুলোর জন্যে দুই বাক্স।

স্টোর মালিকের চোখ কপালে ওঠার বাকি। তোমার নিজের জন্যে! যুদ্ধ করবে নাকি?

বেচবে কি-না তাই বললা! বিরক্তি প্রকাশ করল ব্রুকস।

অবশ্যই! দ্রুত মাথা ঝাঁকাল লকহার্ট, ছুটে চলে গেল পেছনের কামরায়। তিনটে কাঠের বাক্স নিয়ে ফিরে এল। এত বুলেট দিয়ে করবে কিন্তু এখানে তো কোন… ব্রুকস চোখ তুলে তাকাতে থেমে গেল সে। সহসা টের পেল এতদিন ধরে যে স্যামুয়েল ব্রুকসকে চিনত সামনে দাড়ানো লোকটার সাথে তার বিরাট ফারাক। এ লোকটি বেপরোয়া। চোখের হিমশীতল দৃষ্টি বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেয়। একে না ঘটানোই ভাল।

গুলির বাক্স খুলে এক মুঠি বুলেট তুলে নিল ব্রুকস, পকেটে ঢোকাল। তারপর বাক্সগুলো তুলে নিয়ে স্যাডল ব্যাগে ঢোকাল। বেরিয়ে ঘোড়ার কাছে গেল, স্যাডলের ওপর আড়াআড়িভাবে ফেলে ফিতা দিয়ে বাঁধল ব্যাগটা। চুম্বকের মত ওর ওপর সেটে আছে স্টোর মালিকের দৃষ্টি। ব্রুকস ঘুরতে চোখ ফিরিয়ে নিল লকহার্ট, হিসাবের খাতায় চোখ ডুবাল।

ফিরে এসে দাম মেটাল ও।

পারকার তোমার পিছু লেগেছে নাকি?

বেরিয়ে যাচ্ছিল ব্রুকস, থেমে ফিরে তাকাল। এমিলিওকে খুন করেছে ওরা।

শোনো, স্যাম, ঘণ্টাখানেক আগে শহরে এসেছে জেফরি করবেট। সাথে দুজন রাইডার। ওদের দেখে আমার মোটেও ভাল লাগেনি। দুজনেই বন্দুকবাজ। একজনের নাম শুনলাম ম্যাট লোগান। তোমার এখুনি সরে পড়া উচিত।

কোথায় আছে ওরা?

থমকে গেল লকহার্ট। স্যামুয়েল ব্রুকসের চোখে যা দেখতে পাচ্ছে তা বহু লোকের চোখে দেখেছে—খুনের নেশা। সেলুনে…ডাস্টি ফগের প্যালেস-এ আছে ওরা।

ধন্যবাদ, বিল।

বার-পির আরও লোক থাকতে পারে। জানোই তো সেলুনন্টাতে পারকারের শেয়ার আছে, আর ওর লোকেরা ওই সেলুন ছাড়া অন্য কোথাও বসে না। ওখানে যাওয়ার কথা ভাবছ নাকি?

উত্তর দিল না ব্রুকস, দৃঢ় পায়ে হেঁটে চলেছে ফুটপাথ ধরে।

যুবকের পিঠের ওপর আটকে রইল লকহার্টের দৃষ্টি। পরিবর্তনটা চোখে লাগছে খুব, হাঁটার ভঙ্গি পর্যন্ত বদলে গেছে। আত্মবিশ্বাস ঠিকরে পড়ছে, নিজের উদ্দেশ্য সম্পর্কে যেন নিশ্চিত, অটল! লোকটা বোকা নয়, তাহলে এতগুলো লোকের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে কেন? লকহার্ট নিশ্চিত যত আত্মবিশ্বাসই থাকুক পাত্তাই পাবে না যুবক। স্যামুয়েল ব্রুকসের এ সাহস ধুলোয় মিশিয়ে দিতে জেফরি করবেট একাই যথেষ্ট।

<

Super User