সোনিয়াদের বাড়ি থেকে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে, ক্ষণিকের জন্যে পোর্চে দাঁড়াল ক্লিফ, ভুরু কুঁচকে বাট স্ট্রীটের দিকে তাকাল। শহরটা এখন আর, অন্ধকারে ডুবে নেই।

ওধারে অন্তত ছসাতটা বাড়িতে আলো জ্বলে উঠেছে। জুলস ম্যাঁকনেয়ারের কাছ থেকে হারিকেন চেয়ে নিয়েছে ক্যারেল, দ্রুত স্যাটারলিদের পরিত্যক্ত বাড়িটার দিকে এগোল ও।

সোনিয়াদের কয়েকটা ঘর পরেই ডেল পোমরয়ের বাড়ি। গেটের সামনে দাঁড়িয়েছিল সে, ক্লিফ কাছে আসলে জানতে চাইল, সোনিকে নিয়ে গেলে না তখন? কী ব্যাপার? আমি কোনও কাজে আসতে পারি?

অসহায় অবস্থায় ফাঁদে পড়েছে বলে মনে হলো, ক্লিফের। এতক্ষণ নিশ্চয়ই চুপ করে বসে থাকে নি পোমরয়। সোনিকে নিয়ে যেতে দেখেছে ওকে। এতগুলো ঘরে বাতি জ্বলছে যখন, তার মানে সময় নষ্ট না করে রাষ্ট্র করেছে সে খবরটা।

ঠিক আছে, জবাব দিল ক্লিফ, এসো।

কী হয়েছে?

অচেনা এক লোক, সোনিকে থেমে গেল ফ্যারেল, কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না।

শুয়োরের বাচ্চা! পোময়ের কণ্ঠে নিখাদ বিদ্বেষ ঝরল।

প্রাথমিক ধাক্কা ধীরে ধীরে সামলে নিচ্ছে ক্লিফ, প্রচণ্ড ক্ষোভ জেগে উঠেছে মনে: অতীতে কখনও এরকম অনুভূতি হয় নি; ঘূণায় যেন কাঁপছে সারা শরীর। পাষণ্ডটাকে এই মুহূর্তে হাতে পেলে ছিড়ে কুটি কুটি করে ফেলত ও।

স্যাটারলিদের বাড়ির গেটে পৌঁছুনোর আগেই চারজন লোক যোগ দিল ওদের সঙ্গে। কারও হাতে রাইফেল, কেউ বইছে শটগান। চাপা অথচ হিংস্র কণ্ঠে কথা বলছে সবাই। গেটের সামনে থামল ক্লিফ। এখানে দাঁড়াও তোমরা। আমি দেখছি ভেতরে কেউ আছে কি না।

মেটো পথ ধরে এগোল ফ্যারেল, দরজা গলে ভেতরে ঢুকল। মেঝেয় সোনিয়ার ঘেঁড়া কাপড় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। হারিকেনের ম্লান আলোয় জ্বলজ্বল করে উঠল ক্লিফের দুচোখ আগুন জ্বলছে যেন।

হারিকেন টেবিলে রেখে সোনিয়ার পোশাকের ছেড়া টুকরোগুলো কুড়িয়ে নিল ফ্যারেল, টেবিলে বিছানো একটা নকশা ভোলা রুমালে বাঁধল। তারপর খুঁটিয়ে পরীক্ষা করল পুরো কামরা। অন্ধ-আক্রোশে রীতিমতো জ্বলছে ও। অনুসরণ করার জন্যে সূত্র চায়, ঘোড়া হাঁকিয়ে বেরিয়ে পড়তে চায়। কিন্তু দিনের আলো ছাড়া ট্রেইল খুঁজে পাওয়া যাবে না, সুতরাং এই মুহূর্তে ধাওয়া করা সম্ভব নয়। পুরো ঘর তন্ন তন্ন করে তল্লাশি করেও কোনও সূত্র পেল না ক্লিফ।

হারিকেন হাতে কাপড়ের পুঁটলিসহ বেরিয়ে এল বাইরে। ডেল, বলল পোমরয়কে, যাও, শেরিফকে খবর দাও।

দ্রুত পা বাড়াল ডেল পোমরয়। আবার কথা বলল ক্লিফ, আরেকজন গিয়ে লেক্স মেসির কাছ থেকে জেনে আসো আজ রাতে অপরিচিত কাউকে স্যালুনে দেখেছে কি নাঃ আর ফ্র্যাংক হাইটের কাছে যাও একজন। ওরা কারও খোঁজ দিলে মন দিয়ে বর্ণনা শুনে এসো।

নির্দেশ পালন করতে এগিয়ে গেল দুজন। এবার অন্য দুজনের দিকে ফিরল ক্লিফ। তোমরা বাড়ি ফিরে যেতে পারো। আপাতত তেমন কিছু করার, নেই।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও আদেশ পালন করল ওরা। ভুরুজোড়া ফের কুঁচকে উঠল ফ্যারেলের, সোনিয়ার ক্ষতবিক্ষত বিধ্বস্ত চেহারা ভাসছে চোখের সামনে; ওর ভীত-আতঙ্কিত ভাব, কম্পিত কণ্ঠস্বর আর ভয়ার্ত দৃষ্টি মনে পড়ছে। বেঁচে থাকার আকাক্ষা যেন হারিয়ে ফেলেছে মেয়েটা।

চাপা কণ্ঠে খিস্তি করে উঠল ফ্যারেল। জানোয়ারটাকে ধরতে পারলে নরক যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করত ও, তাতে হয়তো খানিকটা কমত ওর অস্থিরতা।

জেলহাউসের দিকে পা বাড়াল ক্লিফ। অজান্তেই বুকের কাছে হাত উঠে এল, শার্টের পকেটে সাটা ব্যাজে আঙুল বোলাল।

মনের এই অবস্থায় ব্যাজ পরে থাকা ঠিক নয়। কারণ তা হলে কাল এটার মর্যাদা রক্ষা করতে ব্যর্থ হরে ও..

কিন্তু ব্যাজ খুলে ফেলল না ক্লিফ ফ্যারেল, হাত নামিয়ে আনল। আইন ফ্যারেলদের পারিবারিক পেশা। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত ওর দাদা টেক্সাস রেঞ্জার ছিল; বিশ বছরেও বেশি বাট কাউন্টির শেরিফের দায়িত্ব পালন করেছে ওর বাবা।

হঠাৎ মোড় ঘুরে ডান দিকের একটা শাখা-পথ ধরল ক্লিফ, দ্রুত, পা ফেলে এগোল।

রাস্তাটার শেষ মাথায় পৌঁছে ঘুরে ঝোঁপঝাড়ের মাঝে দাঁড়ানো একটা শ্যাকের দিকে এগিয়ে গেল, দরজার কাছে এসে কড়া নাড়ল।

খানিকপর হারিকেন জ্বলে উঠল ভেতরে। গভীর ফাসফেঁসে কণ্ঠস্বর ভেসে এল। কে? ঢুকে পড়লেই তো হয়!

ভেতরে ঢুকল ক্লিফ ফ্যারেল। হারিকেন টেবিলের ওপর রেখে উস্কোখুস্কো চুলে হাত বোলাল ও, বাবা জ্যাকব ফ্যারেল। হাত বাড়িয়ে একটা প্যান্ট নিয়ে পরল, চেয়ার টেনে বসে পড়ল।

জ্যাকব ফ্যারেল, প্রৌঢ়, ছিপছিপে গড়ন, ছফিটের মতো লম্বা; দৈহিক গড়ন দেখেই অনুমান করা যায়, একদিন চমৎকার স্বাস্থ্য ছিল তার। সারা মুখে অসংখ্য ক্ষতচিহ্ন জ্যাকব ফ্যারেলের; শরীর আর হৃদয়টাও ওর ক্ষতবিক্ষত, ভাবল ক্লিফ, কিন্তু বাইরে থেকে.একদম টের পাওয়া যায় না।

তবে লোকটার চোখ দুটো আজও অতীতের তীক্ষ্ণ দৃষ্টির স্মৃতি জাগিয়ে দেয়। পলক তুলে ছেলের দিকে তাকাল জ্যাকব ফ্যারেল। মাঝরাতে আমার ঘুম ভাঙানোর কারণ?।

ব্যাপারটা সত্যিই জরুরি।

সেটাই তো জানতে চাইছি!

সোনিয়া…কোরা শর্টের দোকান থেকে ঘরে ফিরছিল, আচমকা এক লোক হামলা করেছে ওকে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে…

রেপ করেছে?

হ্যাঁ, মারধোরও করেছে।

তো আমার কাছে এসেছ, কেন, তাকে ধরতে না গিয়ে? নাকি সেটাও আমাকে বলে দিতে হবে?

কী করতে হবে আমি জানি, বলল ক্লিফ ফ্যারেল। সেজন্যেই তোমার কাছে এসেছি।

বাজে বকো না!

সকালের আগে ট্রেইল করা সম্ভব নয়,রই মধ্যে আমাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ডেপুটি শেরিফ হিসেবে যদি যাই, লোকটাকে জ্যান্ত ফিরিয়ে আনতে বাধ্য থাকব আমি, কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কিনা জানি না। এই মুহূর্তে বেজন্মাটার গলা টিপে ধরা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতেই পারছি না।

জ্যাকব ফ্যারেলের চেহারা থেকে বিরক্তির ছাপ খসে পড়ল। তিক্ত স্মৃতির ভারে চোখের পলকে দশ ব্লছর বয়স বেড়ে গেল যেন। দ্বিধা দেখা দিল দৃষ্টিতে। দুহাঁটুর মাঝে মেঝের দিকে তাকাল সে।

যে কথা জানতে এসেছিল, জেনে গেল ক্লিফ। এককালে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান কঠিন মানুষ ছিল বাবা, কোমরে ঝোলানো পিস্তল-চালাত ক্ষিপ্র হাতে। বহুবার তার চেয়ে ক্ষিপ্রতর লোকের মোকাবিলা করেছে, আইন-শৃঙ্খলাহীন বাট কাউন্টিতে জ্যাকব ফ্যারেলই ছিল একমাত্র আইন

সেই সময়, যখন কদাচিৎ এদিকে আসত সার্কিট জাজরা, যখন জুরীদের প্রাণের ভয় দেখিয়ে কিংবা অর্থের বিনিময়ে হাত করত অপরাধীরা, তখন, প্রায়শই, একই সঙ্গে বিচারক, জুরী আর জল্লাদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে হত জ্যাকব ফ্যারেলকে। বন্ধু আসামী গ্রেপ্তারে বাধা দিতে গিয়ে মারা পড়েছে ওর হাতে। লাশ নিয়ে মাথা উঁচু করে শহরে ফিরে এসেছে ও।

জ্যাকবের মতো মানুষেরাই এই বুনো-বর্বর দেশে আইন-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু অসীম ক্ষমতা, উদ্ধৃত করে তুলেছিল ওকে, নিজেকে স্রষ্টার মতো ক্ষমতাবান ভাবতে শুরু করেছিল সে।

ধীরে ধীরে মুখ তুলে তাকাল বুড়ো ফ্যারেল। বুকের ওই ব্যাজ যদি রাখতে চাও, জ্যান্ত ফিরিয়ে এনো ওকে। কিন্তু লোকটাকে খুন করার উদ্দেশে বেরোতে চাইলে, ব্যাজ খুলে রেখে যেয়ো। ক্লিফের চোখের দিকে তাকাল না সে, ফাঁকা শোনাল তার কণ্ঠস্বর।

ঘুরে দাঁড়াল ক্লিফ ফ্যারেল। নিপ্রাণ কণ্ঠে আবার কথা বলল জ্যাকব। একান্তই যদি মারতে হয়, আগে নিশ্চিত হয়ে নিয়ো, লোকটা সত্যি অপরাধী কি না।

ধন্যবাদ, বাবা, বলল ক্লিফ। তোমার ঘুম ভাঙানোর জন্যে দুঃখিত।

ও কিছু না, সারা রাত তো জেগেই থাকি। গুড লাক।

নীরব-নিথর রাস্তায় বেরিয়ে এল ক্লিফ। ঝোঁপ আর জংলায় ভরা উঠোনে। দাঁড়িয়ে রইল কয়েক মুহূর্ত! কপালে চিন্তার রেখা-বাবার হাতে প্রাণ হারানো শেষ লোকটার কথা মনে পড়ে গেছে।

তখন ওর বয়স পনের, এক সকালে পরিশ্রান্ত ঘোড়ায় চেপে ফিরে এল বাবা; পেছনে আরেকটা ঘোড়া, সেটাও ক্লান্ত, পিঠে আড়াআড়িভাবে ফেলে রাখা একটা লাশ। এখনও স্পষ্ট মনে আছে লোকটার চেহারা: খুব বেশি হলে বছর কুড়ি বয়স; মাথাটা ঝুলছে, বিস্ফারিত ঘোলাটে দুটি চোখ, শক্ত হয়ে চেপে বসা দাঁতের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে এসেছে কালচে জিহ্বা বীভৎস!

গর্বে ওর বুক ফুলে উঠেছিল সেদিন। একটু বমি বমি ভাব লাগলেও এতটুকু খাদ ছিল না ওর অহঙ্কারে। কিন্তু ঠিক এক সপ্তাহ পর চুরি করতে গিয়ে বমাল ধরা পড়ল এক লোক, প্রচণ্ড মারের মুখে স্বীকার গেল: বাবার হাতে প্রাণ হারানো লোকটা নয়, সে-ই আসল অপরাধী।

এখনও মনে আছে ক্লিফের, সেদিন থেকেই ঘুমের ঘোরে প্রলাপ বকতে শুরু করল বাবা সারারাত বিছানায় গড়াগড়ি যেত, যেন ভয়াবহ দুঃস্বপ্ন দেখছে। মাত্র ছমাসের মাথায় শক্তিমান সুপুরুষ জ্যাকব ফ্যারেলের চেহারা পাল্টে গেল, পরাজিত বিধ্বস্ত এক মানুষে রূপান্তরিত হলো সে।

ব্যথিত মনে দ্রুত প্রধান সড়কে উঠে এল ক্লিফ। বাঁক নিয়ে অন্ধকারে দাঁড়ানো সোনিয়াদের বাড়ির দিকে একবার তাকিয়ে শেরিফের আলোকিত অফিসের দিকে এগোল।

ধেৎ, খামোকই ভাবছে, তেমন কোনও সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রয়োজন না-ও হতে পারে! পলাতক লোকটা, গ্রেপ্তারে বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে লড়াই অনিবার্য, সেক্ষেত্রে লাশ নিয়েই ফিরতে হবে ওকে।

সোনিয়ার কথা মনে পড়তেই আবার ক্রুদ্ধ হয়ে উঠল ক্লিফ। অমন ফুলের মতো নিষ্পাপ মেয়ের সর্বনাশ করেছে যে পশু, তাকে খুন করতে বাধা কোথায়? কী লাভ হবে বাঁচিয়ে রেখে? লোকটাকে জ্যান্ত ধরা যদি সম্ভব হয়ও বিচারের ব্যবস্থা করা যাবে নাঃ লিঞ্চ মব ছিনিয়ে নিয়ে ধারেকাছের কোনও একটা গাছে লটকে দেবে তাকে।

পাথুরে জেল হাউসে ঢুকল ক্লিফ ফ্যারেল। শেরিফ জেস স্টোন এসে গেছে, লেক্স মেসি, ফ্রাংক হাইট এবং ওদের খোঁজে যাদের পাঠিয়েছিল, তারাও আছে।

ছোটখাট স্বাস্থ্যবান লোক স্টোন, তামাটে চেহারা, জুলফির কাছে চুলে পাক ধরেছে, টাক পড়তে শুরু করেছে মাথায়; মুরের মতো প্রকাণ্ড একজোড়া, লোমশ হাত, তার সঙ্গে মানানসই আঙুল। বন্দুকবাজ নয় জেস স্টোন, ক্ষিপ্র হাতে অস্ত্র চালাতে জানে না; প্রতি কদমে নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা করে। গোয়ার অথচ কিছুটা অলস প্রকৃতির লোক সে, প্যসি ছাড়া কিছুতেই কাউকে ধাওয়া করতে বেরোবে না; কিন্তু শূন্যহাতে সে ফিরে এসেছে, এমন নজিরও নেই।

সহানুভূতিশীল দৃষ্টিতে ক্লিফ ফ্যারেলের দিকে তাকাল শেরিফ। কী হয়েছে, ক্লিফ? খুলে বলো দেখি আমায়?

ক্লিফ বলল, এখানে পায়চারি করছিলাম, ভাবছিলাম কাজ-কর্ম নেই যখন ঘরে ফিরে যাব কিনা। হঠাৎ জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখি বিছানার চাদর গায়ে জড়িয়ে দৌড়ে আসছে সোনি, কেমন যেন দিশেহারা একটা ভাব চেহারায়। তাড়াতাড়ি বেরিয়ে ওর কাছে গেলাম। ও বলল, দোকান থেকে বাড়ি যাচ্ছিল, হঠাৎ স্যাটারলিদের বাড়ি অন্ধকার ছায়া থেকে বেরিয়ে ওকে আক্রমণ করেছে লোকটা, জোর করে নিয়ে গেছে খালি বাড়িতে।

কাপড়ের পুঁটুলিটা ডেস্কে রাখল ক্লিফ। সোনিকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আবার গিয়েছিলাম ওখানে। এগুলো ছাড়া আর কিছু পাই নি!

ডেস্কের কাছে এসে হাত বাড়াল স্টোন। বাধা দিল ফ্যারেল। না। যেভাবে আছে, থাকুক।

হাত সরিয়ে নিল স্টোন। ক্লিফ আবার বলল, ব্যাপারটা সোনি সংক্রান্ত তাই চেয়েছিলাম যাতে জানাজানি হয়। কিন্তু ওকে বাড়ি পৌঁছে দেয়ার সময় ডেল পোমরয় দেখে ফেলে, আমি বেরিয়ে আসার আগেই পাড়া প্রতিবেশীকে জাগিয়ে তোলে সে।

পোমরয়ের দিকে তাকাল স্টোন। দিনরাত চব্বিশ ঘণ্টাই জানালার কাছে বসে থাকো নাকি?

লাল হয়ে গেল পোমরয়ের চেহারা। অনর্থক আমায় গাল দিচ্ছ, শেরিফ। ইদানীং রাতে আমার ঘুম হয় না, জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে থাকি। তাতে দোষ কী?।

প্রথমে লেক্স মেসি তারপর ফ্র্যাংক হাইটের দিকে তাকাল ক্লিফ। অচেনা কাউকে দেখেছ তোমরা?

মাথা নাড়ল মেসি। কিন্তু হাইট বলল, দুজনকে দেখেছি, ভবঘুরে ধরনের ছিল দুজনেই।

একসঙ্গে?

মাথা নাড়ল হাইট। না, কেউ কাউকে চেনে বলে মনে হয় নি।

ভেতরে ভেতরে দমে গেল ক্লিফ। ব্যাপারটাকে সহন: সরল ভেবেছিল, কিন্তু একই সময়ে শহরে দুজন অপরিচিত লোকের উপস্থিতি জটিল করে দিল সব কিছু। সোনি লোকটার চেহারার একটা বর্ণনা দিতে পারবে কিনা কে জানে! অন্ধকারে কিছু বোঝার কথা নয়। ওর কছ থেকে সাহায্য আশা না করাই ভালো।

ওদের চেহারার বর্ণনা দিতে পারো? হঠাৎ প্রশ্ন করল ও।

চোখ কুঁচকে উঠল হাইটের। দাঁড়াও, মনে করে দেখি। হায় খোদা, ক্লিফ, রোজ কত অচেনা লোকই তো আসছে যাচ্ছে, সবার চেহারা মনে রাখা কি মুখের কথা?

তবু চেষ্টা করো।

করছি। আরও ছোট হয়ে এল হাইটের দুচোখ। দুজনই বলিষ্ঠ গড়নের লোক, লম্বা চওড়ায় মোটামুটি তোমার মতোই হবে। পরনে কাউহ্যান্ডের পোশাক ছিল, ধুলো-ময়লায় একাকার। একজনকে একটু বেশি ক্লান্ত মনে হয়েছে আমার, পিস্তল ছিল না এর কাছে; অন্যজনের কোমরে পিস্তল দেখেছি। আরও কুঁচকে উঠল ওর ভুরু দুটো। আর কিছু মনে পড়ছে না, ক্লিফ। দুঃখিত।

ভালো করে ভেবে দেখোনতুন কিছু মনে আসতে পারে।

আচ্ছা। মনে এলে তোমাকে জানার। এবার তা হলে যাই? খুব ক্লান্ত লাগছে।

একসঙ্গে মাথা দোলাল ক্লিফ আর স্টোন।

সবাই বাড়ি চলে যাও, বলল শেরিফ, দরকার হলে ডাকব।

প্যসির ব্যবস্থা করবে?

দেখি। পরে জানাব।

বেরিয়ে গেল ওরা। ক্লিফের দিকে তাকাল স্টোন। আমি যা ভাবছি তুমিও কি তাই?

হোটেল আর লিভারি বার্ন, বলল ক্লিফ।

চলো।

হারিকেন নিভিয়ে ক্লিফের পিছু পিছু বেরিয়ে এল জেস স্টোন। পাশাপাশি হোটেলের দিকে এগোল। নিঃসঙ্গ একটা হারিকেন টিমটিম করে জ্বলছে হোটেলের লবিতে।

প্রথমে স্টোনকে ঢুকতে দিল ফ্যারেল, তারপর নিজেও ঢুকল। শাদা টাইলের মেঝেতে বুটের শব্দ তুলে ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেল ওরা।

ডেস্কের ওপর মাথা রেখে নাক ডাকিয়ে ঘুমোচ্ছ ক্লার্ক হিউগি স্মিদার। রেজিস্টার খাতা ঘুরিয়ে দেখল শেরিফ স্টোন। তারপর ক্লিফের দিকে ফিরে মাথা নাড়ল। লিভারি বার্ন-এই যেতে হচ্ছে, বলল সে।

<

Super User