তিন রিক স্যাভেজের আগমনে নিঃশব্দ কবরে পরিণত হলো সেলুনটা। ভারী পায়ের শব্দ সে সেলুনে ঢোকার আগেই শোনা গেল। ধীরে এগিয়ে এল শব্দটা, দরজা পেরিয়ে এসে থামল। পুরো সেলুনে চোখ বুলিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করল মার্শাল।

পেছনে তার ডেপুটি।

ডেপুটির মুখটা একনজর দেখল জেমস। শীর্ণদেহীই বলা উচিত লোকটাকে—লিকলিকে হাত, হাড়সব মুখ; কণ্ঠার হাড়গুলো ভাসমান। গর্তে ভরা চোখগুলো সতর্ক করে দিল ওকে-শীতল, নেশাগ্রস্তের মত অস্থির। এ লোক ঠাণ্ডা মাথার খুনী, র‍্যাটলের চেয়েও বিষাক্ত। শিথিল হাতজোড়া হোলস্টার ছুঁইছুঁই। করছে। পালিশ করা পিস্তলের বাঁট আর স্থির লম্বা আঙুল দেখে জেমস নিশ্চিত হলো চোখের নিমেষে পিস্তল তুলে নিতে পারবে, প্রতিপক্ষ পিস্তল বের করার আগেই তাকে অনায়াসে বেঁধাতে পারবে।

দারুণ একটা জোড়া—সব অর্থেই। রিক স্যাভেজের শারীরিক সামর্থ্য আর অ্যাশলে গাইলসের পিস্তলের ক্ষিপ্রতা যে কারও জন্যে ভয়ঙ্কর। হিংস্রতায় কে যে কাকে ছাড়িয়ে যাবে তা আগাম বলা যাবে না। তবে পথটা আলাদা দুজনেররিক স্যাভেজ ওর দশাসই শরীর ব্যবহার করতে পছন্দ করবে এটাই স্বাভাবিক, তবে পিস্তলেও চালু সে। আর দো-আঁশলার হাতদুটো বরং একতরফাভাবে জোড়া পিস্তল ব্যবহারেই অনেক বেশি সিদ্ধহস্ত। ট্র্যাকিংয়ে যে কোন ইন্ডিয়ানের মত দক্ষ। জেমসকে যদি বলা হয় এদের যে কোন একজনকে বেছে নিতে, তবে অ্যাশলে গাইলসকেই পছন্দ করবে ও, তার পিস্তলের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর সাহস ও ক্ষমতা দুই-ই আছে ওর। কিন্তু হাতাহাতি লড়াইয়ে রিক স্যাভেজের মোকাবিলা করার সাহস করবে না। বুকে চেপে ধরে একটা চাপ দিলে হাড়গোড় সব ভেঙে যাবে।

আবারও তুমি! খানিকটা বিস্মিত শোনাল মার্শালের কণ্ঠ, তার নীল চোখে বিদ্বেষ স্পষ্ট প্রকাশ পেল। তবে এবার আর নিস্তার নেই, বাছা। শহরের একজন সম্মানিত লোকের গায়ে হাত তুলেছ।

দোষটা ওরই, সংক্ষেপে বলল জেমস। সেলুনের লোকজন অবাক হয়ে দেখল বিন্দুমাত্র উদ্বেগ বা ভয় নেই ওর মধ্যে।

সেটা আমি বুঝব, হাসল মার্শাল, নিজেকে জাহির করতে জোরাল গলায় বলল পরের কথাগুলো। আমার নিজস্ব পদ্ধতিতে তদন্ত করব, যখন আমার সময় হবে। তোমাকে বলতে হবে না। এগিয়ে গিয়ে লপারের সামনে দাঁড়াল সে। মি, লপার, আশা করি সবকিছু দেখেছ তুমি। দয়া করে ল-অফিসে আসবে একবার? সাক্ষী হিসেবে একটা স্বীকারোক্তি দেবে।

মাথা নাড়ল লপার। তার কি কোন প্রয়োজন আছে, স্যাভেজ? এখানে অন্তত বিশজন লোক ঘটনাটা দেখেছে। হেনরীকে পিটিয়ে রাস্তায় ফেলেছে এই অ্যালেন।

ধন্যবাদ, হাসি দেখা গেল স্যাভেজের মুখে। ঘুরে জেমসের দিকে তাকাল। শুনলে তো? নাও, এবার আমার অফিসে চলো।

কোথাও যাচ্ছি না আমি।

চোখ ছোট করে তাকাল দানব। বোঝার চেষ্টা করল জেমসের বোকামির কারণ, তার নির্দেশ এর আগে, অমান্য করেনি কেউ। যারা করেছে পরে সেজন্যে আফসোস করেছে। বুঝেছি, তোমার গা চনমন করছে, জোর করে নিয়ে যেতে হবে, হাসল সে আবারও, নিজের ওপর প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস আর জেমসের প্রতি প্রচ্ছন্ন অবহেলা প্রকাশ পেল কণ্ঠে। দেখো বাপু, তুমি নতুন মানুষ, তাই হয়তো জানো না অভিযুক্ত কোন লোক বেতাল করলে কিভাবে অফিসে নিয়ে যাই আমি। খোদার কসম, তোমার সেটা ভাল লাগবে না! এখনকার গোয়ার্তুমির জন্যে শেষে দুঃখ করবে।

নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকে দেখল জেমস। পকেট থেকে তামাক আর কাগজ বের করে সিগারেট রোল করছে। ধরো সেটাও হবে না, রিক স্যাভেজের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলল। আমাকে নিয়ে যেতে পারবে না তুমি। দেয়াশলাইয়ের কাঠি বারের কিনারায় ঘষে আগুন জ্বালিয়ে সিগারেট ধরাল। পুরো কাজটা করল ও বাম হাতে। ডান হাতটা ভুলেও ব্যবহার করেনি, এমনকি শরীরের পাশ থেকেও সরায়নি। পিস্তলের কাছাকাছি রেখেছে সবসময়, প্রয়োজন হলেই যাতে ড্র করতে পারে। অনায়াসে একহাতে সিগারেট রোল করতে বা ধরাতে পারে ও, বহুদিনের অনুশীলনের ফল। বৈরী এ দেশে কখন বিপদ এসে উপস্থিত হয় আগে থেকে বলা সম্ভব নয়, আর সে-কারণেই অভ্যাসটা রপ্ত করেছে যাতে মুহূর্তের জন্যেও ওকে অপ্রস্তুত অবস্থায় না পেয়ে যায় শত্রুপক্ষ। একটা মুহূর্তে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে, ওকে অপ্রস্তুত অবস্থায় পেয়ে কিংবা কোন একটা ছুতোয় গুলি করে বসলে কিছুই করার থাকবে না। সবচেয়ে বড় কথা, জেমস চায় না এখানে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করুক স্যাভেজ। তার মর্জির ওপর নিজের ভাগ্যকে সঁপে দেয়ার কোনরকম ইচ্ছে নেই ওর। তার অন্যায্য দাবি মেনে নেয়াও ওর পক্ষে সম্ভব নয়।

অবাক হয়ে ওকে দেখছে মার্শাল। কিছুক্ষণ বাদে, শ্রাগ করে ঘুরে তাকাল বারকিপারের দিকে। ওকে একটা ড্রিঙ্ক দাও, বব। মাথাটা খুলুক। ও বুঝতে পারছে না কি খারাবি ডেকে আনতে যাচ্ছে। রিক স্যাভেজ কাউকে নিয়ে যেতে চেয়েছে আর সে যায়নি, এমন কিছু হয়নি আজতক।

আজকে হবে না। আমি যাব না, স্যাভেজ, শান্ত স্বরে ঘোষণা করল জেমস, দৃষ্টি ঘুরে বেড়াচ্ছে বিশেষ কয়েকজনের ওপর—স্যাভেজ, গাইলস, লপারের ওপর। জুয়াড়ী বা বারকিপার ববকেও বাদ দিচ্ছে না। আসলে ঘরের একটা লোককেও বিশ্বাস করে না ও। কারণ আমি কোন দোষ করিনি, খেই ধরল ও। হেনরী ক্রুশার আগ বাড়িয়ে উত্ত্যক্ত করছিল আমাকে। সে-ই প্রথম আক্রমণ করেছে। পিস্তলেও হাত দিয়েছে। আমি ড্র করিনি, নইলে তোমাদের গণ্যমান্য নাগরিকের লাশ পড়ে থাকত রাস্তায়। লোকজনকে জিজ্ঞেস করে দেখো। এবং এখুনি, আমার সামনে জিজ্ঞেস করবে।

রিক স্যাভেজ স্তম্ভিত। এত বড় দুঃসাহস তাকে টলিয়ে দিয়েছে। জেমসের দৃঢ়, গম্ভীর মুখের দিকে তাকাল, তারপর বাকা কণ্ঠে জানতে চাইল: ধরো, তোমার পক্ষে যায় এমন কিছু ওরা বলল না?

তাহলে বলব এমন একটা শহরে আমি এসেছি যেখানকার লোকেরা তোমার মতই, তাজা একটা সত্যকে হুইস্কির সাথে হজম করে ফেলতে পারে। তেমন কিছু হলে, যদিও আমার ধারণা এরা ঠিক কথাটাই বলবে, আমাকে জোর করে নিয়ে যেতে হবে, স্যাভেজ।

তোমার কপালে সত্যি খারাবি আছে!

নিচু করে বাঁধা হোলস্টারের আরও কাছাকাছি হলো গাইলসের হাত।

ডেপুটির শীতল অভিব্যক্তিহীন চোখে তাকাল জেমস। পিস্তলে হাত দিয়ো না, ডেপুটি। আমি কোন অন্যায় করিনি। তুমি যদি পিস্তলে হাত দাও, ধরে নেব ড্র করছ। সেটাই তো স্বাভাবিক, তাই না? মরলেও অন্তত তোমাকে সাথে নিয়ে যাব আমি।

বিমূঢ় দেখাচ্ছে মার্শালকে। ক্ষণিকের মধ্যে তা কাটিয়ে উঠল সে, লেসলি উইলিয়ামসের দিকে ফিরল। কিন্তু তাকে কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই পরামর্শ দিল জেমস। মি. লপারের কথা এখনও শেষ হয়নি, স্যাভেজ। সে নিশ্চই বলবে হেনরী ক্রুশারকে পেটানোর আগে এখানে কি ঘটেছিল। সন্তুষ্ট ও, পালের গোদাকেই কোণঠাসা করে ফেলেছে। মিথ্যে বলে ওকে ফাসাতে চাইলে এতগুলো লোক তা ভাল চোখে দেখবে না। সারা শহরের লোক জানবে। লপার তা চাইবে না। এখানে সে একজন সম্রান্ত নাগরিক, লিয়ন সিটির লোকেরা তাকে সেভাবেই জানে এবং এ পরিচিতি ধরে রাখতে চায় লপার। ব্যাংকার যেমন তার সম্মান হারিয়েছে, বেফাঁস কিছু বললে ক্রুশারের সাথে শামিল হতে হবে তাকে। জেমসের ধারণা ক্রুশারকে পছন্দ করে না লোকটা, সহাস্যে বলা কাটা কাটা কথাগুলোর তাৎপর্য সেটাই। অন্যকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের গায়ে কাদা লাগতে দেবে না কেভিন লপার।

হেনরী একটু বেশিই খেয়ে ফেলেছিল আজ। নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। ওর, জানাল লপার। কি করতে কি করে বসেছে! আমার ধারণা পরে ঠিকই অ্যালেনের কাছে দুঃখ প্রকাশ করবে ও।

মন্দ হত না তাহলে! ফোড়ন কাটল জেমস। আমিও ঘুসিগুলোর জন্যে ওর কাছে নির্ঘাত মাফ চাইতাম।

হেসে উঠল কয়েকজন, কিন্তু মার্শাল মুখ খুলতে থেমে গেল।

খুব স্মার্ট লোক তুমি, কোন সন্দেহ নেই, অ্যালেন, কাটা কাটা স্বরে বলল স্যাভেজ। একবার কায়দামত পেলে তোমার ত্যাড়ামির শখ মিটিয়ে দেব!

আমি কখনও শুনিনি কোন মার্শাল এভাবে হুমকি দেয় কাউকে, সহাস্যে বলল জেমস। গল্পটা অন্যদের বলা যাবে। আধ-খাওয়া সিগারেট শক্ত মেঝেতে ফেলে বুটের তলায় পিষল ও, কিন্তু চোখ সরাল না স্যাভেজের ওপর থেকে।

রিক স্যাভেজকে দেখে বোঝা গেল অপমানিত বোধ করছে সে। জ্বলে উঠল নীল চোখ, এক পা এগোল জেমসের দিকে। কিন্তু পার থামাল তাকে। শরীরের তুলনায় তোমার মাথায় আসলেই ঘিলু কম, রিক। ওর সাথে সুবিধে করতে পারবে না। নিজের দায়িত্ব সেরে ফেলল। নইলে কাল থেকে তোমাকে দেখে আড়ালে হাসতে শুরু করবে লোকজন। সবাইকে বুঝিয়ে দেয়া দরকার কাউকে আলাদা চোখে দেখছ না তুমি।

ধন্যবাদ, মি. লপার। খানিকটা ব্ৰিত দেখাচ্ছে মার্শালকে, অনেকটাই সামলে নিয়েছে নিজেকে। আসলে মি. ক্রুশারের অবস্থা দেখে মেজাজ ঠিক রাখতে পারিনি। এখানকার সব লোকেরও নিশ্চয়ই আমার মত খারাপ লেগেছে। একটা ভবঘুরে এসে এ শহরের একজন মানী লোককে পিটিয়ে যাবে এটা মেনে নিতে আমাদের কষ্ট হওয়ারই কথা। তাছাড়া লোকটাও সুবিধের নয়, এখানে। আসার পর প্রথম দিনও ঝামেলা করেছে।

মি, লপারের কথা এখনও শেষ হয়নি, মনে করিয়ে দিল জেমস।

ওর দিকে তাকাল লপার, হাসল, যদিও তার হাসি চোখ স্পর্শ করছে না। বড় নাছোড়বান্দা লোক তুমি, অ্যালেন। আমার পার্টনারকে পেটালে আর এখন আমার মুখ থেকে বের করতে চাইছ কথাগুলো।

তাকিয়ে থাকল জেমস, অপেক্ষা করছে।

লোকজনও আরও কিছু শোনার অপেক্ষায় আছে। অবস্থাটা উপলব্ধি করতে পারছে লপার, কোণঠাসা হয়ে পড়েছে সে। সম্মানের প্রশ্ন হয়ে দাড়িয়েছে তার মুখের কথাগুলো। ওরা যা দেখেছে তার উল্টো কিছু বলা তো যাবেই না, বরং স্পষ্টভাবে স্বীকার করার সময় এখন উপস্থিত। হেনরীর জন্যে সত্যি দুঃখ হচ্ছে। ও কখনও এমন করেছে, কেউ বলতে পারবে না। আসলে অতিরিক্ত হুইস্কিই ওর জন্যে কাল হয়েছে। বাড়াবাড়ি না করলেও চলত। আমি নিশ্চিত, নিজেই অনুতপ্ত হবে ও।

আসল কথাটা বলছ না তুমি।

বাকি কি থাকল, বন্ধু?

ঠিক আছে, বোঝা গেছে, বলে উঠল স্যাভেজ, তাড়া প্রকাশ পেল কণ্ঠে। লেসলি, এবার তুমিই বলো।

মি, লপারের সাথে একমত আমি।

তুমি? বারকিপারের দিকে ফিরে প্রশ্ন করল মার্শাল।

আমিও। মাথা ঝাঁকাল বব।

তোমরা? ঘুরে লোকজনের উদ্দেশে জানতে চাইল স্যাভেজ।

চুপ করে থাকল লোকগুলো।

তাহলে দেখা যাচ্ছে এ ব্যাপারে কারও কোন দ্বিমত নেই, প্রসন্ন গলায় বলল মার্শাল, হাসল। ধন্যবাদ সবাইকে। চমৎকারভাবে ব্যাপারটার সুরাহা হলো।

কিসের ব্যাপারে তোমরা একমত, মার্শাল? জেমস হাল ছাড়ছে না।

কেন, মি. ক্রুশার ঠিক নিজের মধ্যে ছিল না। একটু বেশি পান করে ফেলায়…

সে আমাকে আগে আক্রমণ করেছিল কি-না সেটা জিজ্ঞেস করো। পিস্তল বের করেছিল কি-না তা স্পষ্টভাবে তোমার জানা উচিত।

আমাকে জ্ঞান দিতে এসো না, স্ট্রেঞ্জার! নিজের কাজ আমি ভালই বুঝি! তড়পে উঠল স্যাভেজ। পেয়েছ কি, অ্যাঁ? সুযোগ পেয়ে সবার ওপর ছড়ি ঘোরাবে? ভেবেছ তোমার কথায় সায় দেবে শহরের লোকজন? তোমার চেয়ে হেনরী শারই ওদের জন্যে কাছের লোক, বহু বছর ধরে ওদের সাথে সম্পর্ক তার। বিপদে পড়লে পাশে এসে দাঁড়ায় মি. ক্রুশার। তোমার কাছে কখনও যাবে এরা, না তুমি ওদের পাশে এসে দাঁড়াবে?

মি. লপার, গাধাটাকে চুপ করতে বলো। আর তুমি কি দয়া করে আসল কথাটা জানাবে ওকে?

ক্ষণিকের জন্যে জ্বলে উঠল কেভিন লপারের চোখ, চাপা আক্রোশ ফুটে উঠল দৃষ্টিতে। কিন্তু নিজেকে সামলে নিল সে। হাসল। অ্যালেন নির্দোষ, রিক। ওকে না ঘটানোই ভাল, যতক্ষণ না কোন অন্যায় করছে সে…আমার পক্ষ থেকে সবাইকে ড্রিঙ্ক দাও, বব। হাসি প্রসারিত হলো তার, ফিরল জেমসের দিকে।

আমাদের খেলাটার কি হবে, অ্যালেন?

পরে কোন এক সময়ে।

তোমার ইচ্ছে, শ্রাগ করল সে। বারকিপার ত্রস্ত পায়ে হুইস্কি পরিবেশন করতে গ্লাস তুলে চুমুক দিল। টেবিলে এসে বসো, অ্যালেন। আলাপ করা যাক। তোমার সম্পর্কে কৌতূহল হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে কঠিন লোক তুমি, আমরা এমন লোককেই শ্রদ্ধা করি। একটা বিরূপ ঘটনা দিয়ে শুরু হলেও বোধহয় তারপরও বন্ধু হতে পারব আমরা। আমার তো খুশিই লাগছে পোকারের ভাল একজন প্রতিদ্বন্দী পেয়ে।

হাততালি দিয়ে উঠল সেলুনভর্তি লোকজন, সিটি বাজাল কেউ কেউ। কেভিন। লপারের উদারতা মুগ্ধ করেছে তাদেরকে।

কাজ আছে, বেশিক্ষণ থাকতে পারব না, বসার সময় বলল জেমস। যে সময়টা খেলার কথা তা এমনিতে ব্যয় করে ফেলেছি। তাছাড়া এখন আর খেলার মূড নেই। দারুণ ধূর্ত লোক, ভাবছে ও, এবং কপট। জানে কখন কি করতে হবে। কৌশলে নিজের ভাবমূর্তি ঠিকই ধরে রাখতে পেরেছে।

খেলতে এলে কিন্তু তোমার কাজ ফেলে আসতে হবে। আমি নিশ্চিত খেলাটা আমরা দুজনেই উপভোগ করব।

হয়তো।

কোথাকার লোক তুমি?

বরং জিজ্ঞেস করো কোথায় যাইনি আমি। সারা দেশ চষে বেড়িয়েছি।

এখানেও কি সেরকম এসেছ? লিয়ন সিটিতে বাইরের লোকজন খুব কম। আসে।

বলতে পারো ভুল করে। টাকসন ছেড়ে অনেকদূর চলে এসেছিলাম, যখন টের পেলাম ফিরে যাওয়ার চেয়ে সামনে চলাই আমার কাছে ভাল মনে হলো।

সল্ট লেক পাড়ি দিতে নাকি?

এক মাইনারের কাছে এ শহরটার কথা শুনেছি। সিলভার টাউন থেকে কেটে পড়া শেষ লোক সে-ই।

বুড়ো এখানে এসেছিল? আগ্রহী মনে হলো লপারকে। এখানকার কথা শুনেছিল ও।

হতে পারে, আনমনে মাথা ঝকাল সে। ওটাই তো সবচেয়ে কাছের শহর ছিল।

তুমি কোত্থেকে এসেছ? জানতে চাইল জেমস।

অনেকটা তোমার মতই, বিন্দুমাত্র অপ্রতিভ হলো না লপার। ঘুরতে ঘুরতে চলে এসেছি। বাউন্টি হান্টারের কাজ করেছি কিছুদিন। কয়েকশো ডলার পকেটে ছিল। এখানে এসে ব্যবসা শুরু করলাম, ভাগ্য খুলে গেল। জানো তো আমি শহর কমিটিতে আছি? লিয়ন সিটিকে উন্নত করার চেষ্টা করছি আমরা, এ জন্যেই থাকছি এখানে নয়তো কবে কেটে পড়তাম! হেনরীর আগ্রহ অবশ্য অন্য জায়গায়, রোজালিনা বার্থেজকে দেখে সেই যে ঘোর লেগেছে ওর, তা আর কাটেনি। মেয়েটা ওকে পাত্তা না দিলেও লেগে আছে। সুদর্শন সে, টাকাও আছে, শেষপর্যন্ত ওর ভাগ্যে শিকে ছিড়তে পারে।

মেক্সিকান একটা মেয়েকে বিয়ে করবে ওর মত সম্মানিত লোক?

কেন নয়? জেমসের বিপ ধরতে পারল না লপার, চিন্তিত মনে হচ্ছে তাকে। মেয়েটা এমনই যে ওর জন্যে সবকিছু করা যায়। দুজনকে মানাবেও।

আরেকদফা ড্রিঙ্ক আসতে প্রত্যাখ্যান করল জেমস। বেশি খেলে তোমার বন্ধুর মত অবস্থা হতে পারে।

হেসে উঠল কেভিন লপার। জেমস সেটাকে আন্তরিক মনে করত যদি লোকটা সম্পর্কে আগে থেকে না জানত।

মনে হচ্ছে আমাদের শহরটা তোমারও ভাল লাগতে শুরু করেছে?

মন্দ লাগছে না।

এক কাজ করতে পারো, ঝুঁকে এসে নিচু কণ্ঠে বলল লপার। এমনিতে ঝামেলা হয় না খুব একটা। কিন্তু মাঝে মাঝে দুএকজন কঠিন লোক এসে পড়ে। ওরা যা ইচ্ছে শুরু করে দিতে কতক্ষণ? বিচ্ছিন্ন একটা শহর আউট-লদের জন্যে উপযুক্ত জায়গা। এখানে এসে যদি ওরা আস্তানা গাড়ে তো কিছুই করার থাকবে না আমাদের। স্যাভেজ একটা আস্ত গাধা, শরীর ছাড়া কিছু নেই ওর। পিস্তলের বিরুদ্ধে শরীরটা কেবল বুলেটের জায়গাই দিতে পারবে। আর নের কিছুটা চালাতে পারে বটে কিন্তু একা কি করতে পারবে ও? তুমি ওদের সাথে যোগ দিলে আইনের হাতটা শক্ত হবে। কাঠ কেটে আর কত পাও। প্রাইসের ব্যবসা এমনিতেই মন্দা। তাছাড়া, ডেপুটির কাজে পরিশ্রম কম, তুলনায় বেতন বেশি।

ঝুঁকিও বেশি, যোগ করল জেমস, সিগারেট ফুকছে। খেয়াল করল সেলুনের পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হয়ে গেছে, একটু আগের উত্তেজনার ছিটেফোটাও নেই। স্যাভেজ আর নেবর কেটে পড়তে লোকজনও সহজ হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে বিস্মিত দৃষ্টিতে দেখছে ওদের। দুজনকে একসাথে খোশ-গল্প করতে দেখবে এটা অন্তত আশা করেনি কেউ।

তা আছে। কিন্তু কামাইয়ের তুলনায় সেটা কমই। তোমার মত আরও দুজন। লোক পেলে নিশ্চিন্ত হতে পারব আমরা।

তার কোন দরকার আসলে আছে কি?

আছে, বন্ধু। তোমাকে মানতেই হবে আর দশটা শহরের মত লিয়ন সিটি ঠিক সুরক্ষিত নয়। সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি, চল্লিশ মাইল গেলেই মেক্সিকো; পাহাড়ের ওপাশে আউট-লদের হাইড-আউট। ভাগ্য যে ওরা কখনও এদিকে মুনোযাগ দেয়নি। কিন্তু কে বলতে পারে বাইরের সাহায্য কখনও দরকার হবে না? টাকসন যেতেই লাগে পাঁচ দিন। যদি কখনও বিপদের পড়ি আমরা, ওখানে পৌঁছানোর আগেই চুকে যাবে সব।

নিজেদের এত ফেলনা ভাবছ কেন? প্রয়োজন হলে ঠিকই হাতে অস্ত্র তুলে নেবে এখানকার লোকেরা। সাধারণ মানুষ এগিয়ে এসে বিপজ্জনক লোককে হটিয়ে দিয়েছে এমন অনেক শহরের গল্প জানি আমি।

ছিলে নাকি দুএকটায়?

আরে নাহ! একবার তো আরেকটু হলে বিপদেই পড়েছিলাম। জেরেমি করবেটের নাম শুনেছ তো? ইয়েলোস্টোনে গণ্ডগোল হওয়ার সময় ওর সাথে ছিলাম, মওকা খুঁজছিলাম বাড়তি কিছু লাভের আশায়। ঠিক এমন সময়ে লোকজন তেড়ে এল। বেগতিক দেখে কেটে পড়লাম।

করবেটকে রেখে?

তো কি ওদের জন্যে বসে থাকব, আর শেষে কি-না উন্মত্ত লোকজন আমাকে ঝুলিয়ে দিক? আমি কেন অন্যের পাপের ভাগীদার হব? নিজেরগুলোর ঠেলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি।

তুমি দেখছি একেবারে পোয়া তুলসি পাতা নও, পকেট থেকে একটা সিগার কেস বের করল সে। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক। কঠিন সব লোক এরকমই হয়। কেসের ঢাকনা খুলে সিগার বের করে ইঙ্গিতে অফার করল ওকে, প্রত্যাখ্যান করল জেমস।

দুএকটা কুকর্ম যে একেবারেই করিনি, তা নয়। একবার তো টাকার টানাটানি থাকায় গরু সরানোর কাজ করেছিলাম। বেশ লাগছিল, কিন্তু শেষপর্যন্ত অল্পতে সন্তুষ্ট হতে হলো।

ধরা পড়েনি?

ধরা পড়লে কি আর তোমার সাথে খোশ-গল্প করছি? লপার সিগার কেসটা পকেটে ঢোকানোর সময় খেয়াল করল জেমস: ওপরে দুটো অক্ষর খোদাই করা, ধাতব কিছু দিয়ে খুঁচিয়ে করা হয়েছে-কে আর এল।

হাসল কেভিন লপার, বুকে চাপড় মারল জেমসের কাঁধে। তুমি সত্যি দারুণ লোক, অ্যালেন! যা দেখালে আজ, স্বীকার করছি আমাকেও কোণঠাসা করে ফেলেছিলে। বাধ্য হয়ে খানিকটা কৌশল খাটাতে হলো। নিজের পিঠ বাঁচাতে তুমি যেমন সিদ্ধহস্ত তেনি আমাকেও তো নিজের সম্মান টিকিয়ে রাখতে হবে। হেনরী তোমার ওপর এত খেপল কেন, বলো তো? মেয়েটাকে কিছু করেছ নাকি? শেষ কথাগুলো এত নিচু স্বরে বলল যে আর কেউ শুনতে পেল না।

এটা আমার কাছেও একটা ধাধা। খেতে গিয়ে ক্যাফেতে দেখেছি ওকে। ফিরে আসার সময় মিসেস বার্থেজকে পরামর্শ দিল বাজে লোকদের জায়গা না দিতে।

সত্যি তাই ঘটেছে?

দেখো, লপার, আমি মিথ্যে বলি না! বাস্তবে খানিক আগে বলা ইয়েলোস্টোন আর গরুচুরির ব্যাপারগুলো সবই জেমসের নগড়া। মিথ্যেটা প্রয়োজনে তালই বলতে পারে, অন্তত ওর ধারণা তাই।

মেয়েটা ওখানে ছিল? মাথা নাড়ল জেমস। শুধু মিসেস বার্থেজ।

ঘর কাঁপিয়ে হেসে উঠল লপার। হেনরীর মাথা আসলেই খারাপ হয়ে গেছে। কদিন আগে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিল মেয়েটাকে, সাফ না করে দিয়েছে রোজ। এরপর থেকে খেপে গেছে ও, পণ করেছে রোজালিনাকে বিয়ে করবেই। ব্যবসার চেয়ে মেয়েটাই ওর কাছে বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। সন্দেহ করে অন্য কারও প্রতি হয়তো আগ্রহ আছে রোজের। তাই সবাইকে ঘোলা চোখে দেখে। আমার কাছ থেকে কথা আদায় করে নিয়েছে কখনও ওই ক্যাফেতে যাব না আমি। বোঝো অবস্থাটা।

কিন্তু সুদর্শন সে, টাকাও আছে। ওকে যে কোন মেয়েই পছন্দ করবে।

সেটা তো মেয়েটা ভাল জানে। হয়তো হেনরীর নিজেকে জাহির করার স্বভাবটা ওর পছন্দ নয় কিংবা আঠার মত লেগে থাকার ব্যাপারটা। আসলে, আমার কি মনে হয় জানো, মেয়েটা শক্তের ভক্ত। ওর দরকার কঠিন একটা লোক। একবার ওকে হাতের মুঠোয় ভরো, দেখবে তোমার ইচ্ছেমত চলছে সবকিছু।

এত কিছু বুঝেছ তুমি?

দুএকটা মেয়ের সাথে আমিও তো মিশেছি, নাকি? হাসল লপার, ঘন ঘন টান দিল সিগারে। ডেপুটি হতে তোমার আপত্তি নেই তো? কাল সকালে একবার আমার স্টোরে এসো। বেতন আর অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলাপ করা যাবে। উঠে দাঁড়াল সে।

তুমি কি চাও স্যাভেজ আমার হাড় গুঁড়ো করে দিক? ব্যাপারটা ও মোটেও পছন্দ করবে না।

করবে। ওকে কিভাবে টাইট দিতে হয় সে আমি জানি। ওর বেতনটা আমরা দেই, এটা ওকে মানতেই হবে। জেমস নড করতে সন্তুষ্ট হয়ে দরজার দিকে এগোল সে। বিলটা পাঠিয়ে দিয়ো, বব, বারকিপারের উদ্দেশে বলল, ভাল হয় যদি সকালে গিয়ে টাকাটা নিয়ে আসো।

জ্বী, মি. লপার, সসম্রমে বলল বারকিপ। বোঝা গেল আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে।

অদ্ভুত একটা লোক, ভাবছে জেমস অ্যালেন—কপট, কৌশলী, ধূর্ত এবং সর্বোপরি ভয়ঙ্কর। খানিক আগের খোশ-গল্প মনে পড়তে হাসি পেল ওর। পরস্পরকে বোঝাতে দুজনেই আন্তরিক চেষ্টা করেছে, কিন্তু জেমস যেমন তার কথা এক বর্ণ বিশ্বাস করেনি, সে-ও করেনি ওর কথাগুলো। তৃতীয় কেউ শুনতে পেলে অবাকই হবে। পরস্পরকে বুঝে নেয়ার চেষ্টা কম করেনি কেউ। লপারের ধাত সম্পর্কে জানে জেমস, এমন বহু লোক দেখেছে ও এর আগে; ওর প্রয়োজন লপারের এখানকার অবস্থানটা খতিয়ে দেখা। শত্রু সম্পর্কে জানা থাকলে তাকে মোকাবিলা করা সহজ হয়। লপারের ব্যাপারটাও অনেকটা সেরকম-ওকে চেনে

ঠিকই, কিন্তু জেমস আপাতত তার জন্যে একটা হুমকি। যতদূর বোঝা যাচ্ছে এখানে একটা চক্র হিসেবে আছে ওরা-লপার, স্যাভেজ আর নেবর। হেনরী ক্রুশার বা লেসলি উইলিয়ামসও যদি জড়িত থাকে তো অবাক হওয়ার কিছু নেই।

লেসলি উইলিয়ামসের চরিত্র ধোয়াটে লাগছে ওর কাছে। লোকটাকে ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। বড় মাইনিং টাউন বা ক্যাম্পে পোকার খেলে প্রচুর টাকা কামিয়েছে সে, অসংখ্য মাইনারকে সর্বস্বান্ত করেছে, বেশিরভাগই চুরি করে। কয়েকটা খুনও করেছে। কোনভাবেই তাকে ভাল মানুষ বলা যাবে না। লপারের দলে থাকাই ওর পক্ষে স্বাভাবিক এবং লাভজনক, অথচ অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ওদের বিরুদ্ধে দাড়াতে চাইছে সে।

জুয়াড়ীর খোঁজে চারপাশে তাকাল জেমস, দেখা যাচ্ছে না তাকে। টেবিল থেকে সরে গিয়ে বারের কাছে দাঁড়িয়ে পান করছিল, কখন যেন সটকে পড়েছে। লোকটার সাথে আলাপ করতে পারলে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে। সম্ভবত নিজের রূমে পাওয়া যাবে তাকে, ভাবল জেমস। চেয়ার ছেড়ে পিছিয়ে এল ও, নিঃশব্দে সরে গেল পেছনের দরজার দিকে। ফাঁক বুঝে সটকে পড়ল, করিডরের শেষ মাথায় সিঁড়ি দেখে এগোল। দোতলায় উঠে এসে নক করল দ্বিতীয় কামরার দরজায়।

ঢুকে পড়ো, খোলাই আছে, ভেতর থেকে ভেসে এল জুয়াড়ীর গলা।

ভেজানো দরজা ঠেলে ঢুকে পড়ল জেমস, পা দিয়ে পেছনে ঠেলে দিল দরজার পাল্লা। দ্রুত চোখ বুলাল ঘরটায়। ঘোট তবে গোছানো, বোঝা যায় পরিপাটি থাকতে পছন্দ করে লোকটা। উল্টোদিকে জানালার কাছে বাঙ্ক, পাশে বেড-সাইড টেবিল। দুটো ঘোড়ার দামী মডেল, ইন্ডিয়ান চীফের আবক্ষ মূর্তি, রঙবহুল এক প্যাকেট তাস-সব ঝলমল করছে। দরজার পাশে কাঠের টেবিল আর একজোড়া চেয়ার। বেশ কিছু বই দেখা গেল টেবিলে। লাগোয়া দেয়ালে এক মানুষ সমান উঁচু পালিশ করা আয়না, ঘরের অর্ধেকটারও বেশি ফুটিয়ে তুলেছে নিজের শরীরে। ঠিক মাঝখানে ছাত থেকে ঝুলছে সুদৃশ্য ঝাড়বাতি। জানালায় নকশাদার পর্দা। মনে মনে একটা ধাক্কা খেল জেমস, সাধারণ এক জুয়াড়ীর এরকম রুচি আশা করেনি। এমন একটা ঘর বরং হেনরী ক্রুশার বা কেভিন লপারকেই মানায়।

বিছানায় বসে ছিল লেসলি উইলিয়ামস, নরম গদিতে কোমর পর্যন্ত ডুবে গেছে। হাতে হুইস্কির বোতল, অর্ধেক ইতোমধ্যে শেষ করে ফেলেছে। লণ্ঠনের স্বল্প আলোতেও চোখগুলো উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। বোসো, চেয়ার দেখিয়ে উঠে জানালার কাছে গেল সে, পর্দা সরিয়ে দেয়ার সময় থেমে গেল হাত। ফিড স্ট্যাবলের সামনে দাড়িয়ে আছে স্যাভেজ, চাপা স্বরে বলল সে, উত্তেজিত। পর্দা টেনে দিল। হলফ করে বলতে পারি কুত্তাটা আমার ঘরের ওপর নজর রাখছে। কেভিন লপার তোমার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে উঠেছে, বন্ধু।

ওর ব্যাপারে আমারও আগ্রহের কমতি নেই।

পুরানো শত্রুতা? হেসে বোতলে চুমুক দিল জুয়াড়ী। তাই হবে, নইলে কি আর এতদূর ছুটে আসতে? না, তোমার গল্প মোটেও বিশ্বাস করিনি আমি। বোধহয় লপারও করেনি।

সিগারেট রোল করছে জেমস, চুপ করে থাকল।

দারুণ দেখালে! সিগারেট রোল করার দিকে ইঙ্গিত করল লেসলি উইলিয়ামস। তাক লাগিয়ে দিয়েছ সবাইকে। আমি নিজেও কাউকে এভাবে সিগারেট রোল করতে দেখিনি। মুহূর্তের জন্যেও বোধহয় অসতর্ক হও না, তাই না?

কিছুই বলল না জেমস।

লপারের সিগার কেসটা তোমাকে আকৃষ্ট করেছে, তাই না? প্রসঙ্গ বদলাল সে।

ওরকম একটা জিনিস আগেও দেখেছি আমি।

সবজান্তার ভঙ্গিতে মাথা ঝাঁকাল লেসলি, একটা বাক্যে বুঝে নেয়ার চেষ্টা করল পুরো ব্যাপারটা। তোমাকে বোধহয় চেনেনি সে।

আমিও ওকে প্রথম দেখলাম।

এবার অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকল জুয়াড়ী। কিছুক্ষণ পর মাথা ঝাঁকাল। নাহ, তোমার কাজ-কর্ম কেমন যেন! ফুটো একটা পকেট নিয়ে ঢুকেছ লিয়ন সিটিতে, আমাকে টেক্কা দিয়ে জুয়ার টেবিলে কামিয়ে নিলে বেশ কিছু ডলার। এরপর আরও কয়েকটা চমক…হেনরী ক্রুশারকে আজ যেভাবে শায়েস্তা করলে আমারই দুঃখ লাগছিল, অথচ কেভিন লপার, চুটিয়ে উপভোগ করেছে। পরে বন্ধুর দোষ ঢাকতেও চেষ্টা করেছে। শেষে তোমরা এমন রসালাপ শুরু করলে যে আরেকটু হলে বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম, লপার বোধহয় তোমাকে পটিয়েই ফেলল। ওর মধুবর্ষণে দুই বছর আগে যেমন আমি পটেছি। থেমে টেবিলে বোতল নামিয়ে রেখে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকাল জেমসের দিকে। তুমি যেদিন এসেছ, সে-রাতে কি করবির আস্তাবলে একটা খুন হয়। ওটার তাৎপর্য বুঝতে পারছ?

উত্তর দিল না জেমস, তাকিয়ে আছে লেসলি উইলিয়ামসের দিকে।

তোমাকে সতর্ক করেছিলাম, বেশ গিলে ফেলেছে জুয়াড়ী, কথা বলতে স্বস্তি পাচ্ছে। কার কাছ থেকে সাবধান থাকতে হবে তা কিন্তু বলিনি। না, ধারণাও করতে পারবে না। রিক স্যাভেজ, আমাদের মার্শাল, কারও পকেটে বেশি টাকা থাকাটা ঠিক সইতে পারে না সে। সেলুনে ঝামেলা হওয়া মানেই ওর পোয়াবারো। নিজের অফিসে নিয়ে গিয়ে দোষী ব্যক্তিকে জরিমানা করে, প্রয়োজনে গায়ের জোরে আদায় করে। কেউ দিতে না চাইলে তার কপাল যে সত্যি মন্দ সেটা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেয়। এ কাজটা খুব আনন্দের সাথে করে ও। আর জরিমানার টাকার বিরাট অংশ চলে যায় লপারের পকেটে।

একবার আমাদের সাথে খেলে প্রচুর টাকা জেতে এক লোক। দারুণ খেলত, ভাগ্যও সেদিন ওর পক্ষে ছিল। পরদিন হোটেলের রূমে লাশটা পাওয়া গিয়েছিল, টাকাগুলো উধাও! লপারকে টেক্কা দিয়ে কেউ পার পেয়ে যাবে সেটা কোনমতেই হতে দেবে না সে। আমি যখন ওর সাথে জিতি, সেটা পরে ওকে ফেরত দিতে হয়। জেতার আনন্দটুকুই কেবল আমার।

তোমার অবস্থানটা আমার কাছে পরিষ্কার হয়নি, নির্লিপ্ত স্বরে মনে করিয়ে দিল জেমস।

প্রসঙ্গ বদলে যাওয়ায় ভাবান্তর হলো না তার, মাথা ঝাঁকাল! যেন জানত প্রশ্নটা আসবে একসময়। বছর দুই আগে এখানে এসেছিলাম। বেশ কিছু লোক খুঁজছে আমাকে। ভাবলাম এখানে কাটিয়ে দেয়া যাবে কিছুদিন, তারপর সুবিধামত ফিরে যাব। আমাকে চিনতে পেরেছিল লপার। সেলুনে জুয়ার আসর বসায় সে, ডিলার হলাম আমি। খেলাটা চালাতে হয় খুব সাবধানে, কারও সন্দেহ যাতে না হয়। হারতে অভ্যস্ত নই, আবার কাউকে সর্বস্বান্তও করা যাবে না, কিন্তু ওর ভাগের টাকা ঠিকই থাকে। ছোট্ট বখরায় রফা হলেও সেটা এখন অনেক বেড়ে গেছে। সময় নিয়ে ধীরে ধীরে লোকজনের টাকায় পাহাড় বানাচ্ছে ও।

চলে যাচ্ছ না কেন?

লপার হুমকি দিয়েছে পালিয়ে গেলে স্যাভেজ আর নেবরকে লেলিয়ে দেবে আমার পেছনে। দুজনকে ফাঁকি দিয়ে পালানো সম্ভব নয়। পালিয়ে গেলেও, একটা দিনও টিকতে পারব না, এলাকাটা যা দুর্গম! নেবর গন্ধ শুকে শুকে ঠিকই হাজির হয়ে যাবে।

তোমার এত আগ্রহের কারণ বোঝা যাচ্ছে এবার।

অস্বীকার করছি না। আমাকে সাহায্য করতে পারবে তুমি। জুয়াড়ী মাত্রই দুরদৃষ্টিসম্পন্ন, আমার মনে হয়েছে আগে-পরে যাই হোক ওরা তোমার পিছু লাগবেই। এবং তোমাকে সামলাতে গিয়ে দলটা ছোট হবে। সে-সুযোগটাই নিতে চাই আমি। দেখো, জেমস, তোমাকে কিছু না বললেও হত, টিনস্টারদুটোকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে, আর এদিকে কেটে পড়তাম আমি। নিজের কাজ যাতে সহজে সারতে পারো সেজন্যে তোমার দরকার কিছু তথ্য আর পরামর্শ। এখানে অন্য কারও কাছে ওদের সম্পর্কে আসল খবর পাবে না তুমি। লপার বা স্যাভেজকে আমি যেভাবে চিনি তেমন করে চেনে না কেউ।

লপার নিশ্চয়ই জানবে আমার সাথে কথা বলেছ তুমি।

জানুক। আমি জানি তোমাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে ওরা। আমাকে থামিয়ে দেয়ার কথা সে চিন্তা করবে না এখন, তাহলে রোজগারের বড় একটা উৎস ফুরিয়ে যাবে। আর তোমাকে শেষ করতে পারলে আমার আশাও শেষ। নিজের কামাই আরও কতদিন ওকে দিয়ে যেতে হবে কে জানে!

জুয়া খেলছ তুমি, লেসলি।

হয়তো, হাসল সে, বিশ্বাসী দেখাচেছ তাকে। ড্রয়ার থেকে সিগার বের করে ধরাল। এবং ভাল তাসের পক্ষেই বাজি ধরে সবাই।

দুরাশা!

আমি ভেবে-চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জেমস। তোমার কোন সাহায্য লাগলে বলবে, যতদূর পারি করব। ববকে বিশ্বাস করতে পারো।

ওদের সম্পর্কে ঠিক কতটুকু জানো?

অন্য যে কারও চেয়ে বেশি। স্যাভেজের কথাই ধরো—মাথামোটা এক দানব, লপারের একান্ত বাধ্য। দুহাতে চেপে ধরে ওকে মানুষ মারতে দেখেছি। নেবর একটা কেউটের মত, কখন ছোবল মারবে আগে থেকে জানার উপায় নেই। ঠাণ্ডা মাথায় তোমার চোখে চোখ রেখে গুলি করতে পারবে ও, প্রয়োজনে পেছন থেকে। ওকে দেখে পিস্তলবাজ মনে হয় ঠিকই, কিন্তু আসলে পারতপক্ষে সামনাসামনি লড়ে না। তাই বলে মটেও হেলাফেলার পাত্র নয়। ওরা দুজনেই লপারের ডালকুত্তা। এখানকার লোকেরা কাছাকাছি সময়ে তিনজনকে আসতে দেখেছে, কিন্তু সম্পর্কটা আবিষ্কার করতে পারেনি কেউ।

আর লপার…সে হচ্ছে সবচেয়ে বিপজ্জনক লোক যদিও ফুলবাবু। বিশাল একটা স্টোরের মালিক কিন্তু শুরু করেছিল মাত্র পাঁচশো ডলার নিয়ে। ক্রুশারের সাথে ভাগাভাগিতে ব্যাংক গড়েছে, কিন্তু তাকেও ল্যাং মারতে ছাড়বে না, এটা আমার হির বিশ্বাস।

পিস্তল ঝোলায় না ও, কিন্তু জিনিসটা ওর মত নেবরও চালাতে পারে কি-না সন্দেহ আছে আমার। দারুণ ক্ষিপ্র। একবার জুয়ায় হেরে গিয়ে পিস্তলে হাত দিয়েছিল এক লোক। আতঙ্কে যেখানে সিটিয়ে যাওয়ার কথা সেখানে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক কাউবয়ের হোলস্টার থেকে পিস্তল তুলে নিয়ে গুলি করে লপার, লোকটা গুলি করার আগেই। এত অনায়াস ভঙ্গিতে যে লোক পিস্তল চালাতে পারে তাকে সেরা না বলে উপায় নেই। এখানে পরিপূর্ণ জ্বলোক সে, শহর কমিটির মাথা। পিস্তল না ঝুলিয়ে অন্যদের কাছ থেকে নিজেকে আলাদাভাবে, ধরাছোঁয়ার বাইরে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছে।

দারুণ একটা টীম, তাই না? বাজি ধরে বলতে পারি একটা সমৃদ্ধ অতীত পেছনে ফেলে এসেছে ওরা। তবে বিস্ময়ের ব্যাপার কোথাও ওদের পোস্টার তো দেখিইনি, নামও শুনিনি।

ওদেরকে আউট-ল বা ওরকম ভাবছ কেন? সুযোগ পেলে অনেকেই এরকম জুড়ে বসবে।

অবজ্ঞার সাথে হাসল লেসলি উইলিয়ামস। জীবনে অনেক লোক দেখেছি। ওদের ধাত আমার ভালই জানা আছে। লপারকে সন্দেহের বাইরে রাখা গেলেও স্যাভেজ বা নেবরকে অন্য কিছু ভাবতে পারবে না তুমি। এত বড় একটা শরীর নিয়ে দ্র জীবন-যাপনের কোন ইচ্ছে আমাদের মার্শালের নেই, আর ওর ডেপুটি তো একটা জাত খুনী। খারাপদের মধ্যেও সেরা লোক থাকে, জানো তো? এ জন্যেই হয়তো ওদের নামে কোন পোস্টার নেই। তাছাড়া দেশটা কত বড়, এক প্রান্তের খবর পৌঁছায় কজায়গায়?

ক্রুশার ওদের সাথে আছে নাকি?

আমি নিশ্চিত নই। লপার ভাব দেখায় সে যেন ওর জানের দোস্ত। আসলে সময় হলে চোখ উল্টে নেবে ও-ই। আজকেই তো স্পষ্ট হয়ে গেল। কদিন পর হয়তো দেখা যাবে পারই ব্যাংকের সব দখল করে আছে। ওর শয়তানী বুদ্ধির সাথে পারবে না হেনরী।

তারমানে সাচ্চা লোক সে? কিছুটা বিস্মিত হয়েছে জেমস, হেনরী ক্রুশারকে ওর ধোয়া তুলসি পাতা মনে হয়নি।

দারুণ স্মার্ট লোক, সবসময়ই পরিপাটি থাকে। শহরের লোকজনের কাছে সে একজন আদর্শ মানুষ। বলেছে পুব থেকে এসেছে, কিন্তু আমার ধারণা সেটা মিথ্যে। ওসব ফুলবাবুরা পশ্চিমের এত ভেতরে আসে না। তা-ও বিচ্ছিন্ন, সীমান্তের কাছাকাছি এমন একটা শহরে। হতে পারে সত্যি কথা বলেছে, ওর আচরণে অবশ্য তাই মনে হয়। এতগুলো টাকা নিয়ে এতদূর আসার কারণ বোধহয় কেবল সে-ই জানে। ব্যবসাটাও ভাল বোঝে। চড়া সুদে ঋণ দেয়, জানে এছাড়া উপায় নেই ক্যাটলম্যানদের। আবার রাউন্ড-আপের পর ওদের কাছ থেকেই গরু কেনে, টাকসন পর্যন্ত লম্বা ড্রাইভের খরচ আর সময় র‍্যাঞ্চারদের নেই বলে বাধ্য হয়ে ওর কাছে অল্প দামে গরু বিক্রি করে। সব গরু একত্রিত করে টাকসনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে লোকটা।

ওর সাথে তোমার বনিবনা তাহলে ভালই।

অন্তত শত্রুতা নেই। তবে খেলায় হেরে গেলে মন খারাপ করে থাকে কয়েকটা দিন। ওর মন অবশ্য ভাল হয়ে যায় রোজালিনা বার্থেজের কাছে গেলে। পোকারের চেয়েও বেশি টান মেয়েটার প্রতি। কিন্তু কোনটাতেই বিশেষ সুবিধে করতে পারছে না ও।

আজকের ঘটনা নিশ্চয়ই ভুলে যাবে না সে? . ওর নাক ভেঙে দিয়েছ, সে তোমাকে চুমো খাবে নাকি? তোমার মুখটা ওই মেক্সিকান মেয়েটার মুখ হলে না হয় একটা কথা ছিল। হেসে উঠল জুয়াড়ী, ফের বোতল তুলে নিল। তবে যাই বলো দারুণ একটা মেয়ে, বুড়োদের বুকও কাঁপিয়ে দেয়। কিন্তু ও যেন পণ করেছে কোন পুরুষের বাহুলগ্না হবে না। কেভিন লপার তঅ চড়ই খেয়েছে। ( এত অহঙ্কারী মেয়ে? লপার বা কুশায় তো এখানে রাজার মত। ওর জায়গায় হলে যে কোন মেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করবে। মজা পাচ্ছে জেমস, দেখা যাচ্ছে দুই পাটনার সব জায়গায় একসাথেই আছে।

হয়তো বিশ্বাসের অভাব। মেক্সিকানরা এ দেশে অনেকটা অবাঞ্ছিতের মত। একজন ইয়াঙ্কি মহিলা এখানকার সমাজে যে মর‍্যাদা পায় ওরা তা পায় না। সরকারীভাবে আমেরিকানদের মত সুবিধেও পায় না। যারা কয়েক পুরুষ ধরে থাকছে, এখানকার লোকেরা কখনোই নিজেদের একজন বলে ভাবতে পারেনি ওদের; ওরাও আত্মস্থ হতে পারেনি দেশটার সাথে। বেশিরভাগ লোকই হচ্ছে কেভিন লপার বা স্যাভেজের মত, একটা মেক্সিকান মেয়ে ওদের কাছে কেবল মেয়েমানুষ, ভালবেসে তার সাথে ঘর করার কথা ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করে না। মেক্স মেয়েরা তাই ইয়াঙ্কি পুরুষদের বিশ্বাসের চেয়ে অবিশ্বাসই করে বেশি। তারওপর নিজের মা-কে ঠকতে দেখেছে মেয়েটা। কুশারের মত ধনী কাউকে বেছে নেয়ার চেয়ে নিজ জাতের কাউকেই পছন্দ করবে সে।

তেমন কেউ আছে নাকি? হালকা সুরে বলল জেমস। লোকটা দারুণ ভাগ্যবান হবে।

নেই কেউ। কিন্তু মেয়েটা হয়তো তেমন কারও অপেক্ষায় আছে।

লপার বা ক্রুশার নিশ্চয়ই তোমার মতই ভাবে, তবু লেগে আছে কেন?

পর্দার কাছে সরে গেছে লেসলি উইলিয়ামস, বাইরে চোখ রেখে উত্তর দিল: লোভ। মেয়ে হিসেবে রোজালিনা বার্থেজ লোভনীয় তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমি শুনেছি লপারকে চড় মারার পর থেকে নিজের সাথে ছোট্ট একটা ডেরিঞ্জার রাখতে শুরু করেছে মারিয়া বার্থেজ। কাউকে মেয়ের কাছাকাছি হতে দেখলে নাকি রেগে যায় মহিলা। স্যাভেজ গিয়েছিল একবার, পাছায় একটা গুলি নিয়ে ফিরে এসেছে ও। দুটো সপ্তাহ ঠিকমত ঘুমাতে পারেনি মাথামোটাটা। হাসছে জুয়াড়ী।

কিন্তু ব্যবসা করতে হলে লোকজন তো যাবেই ওর ক্যাফেতে।

তা যায়, চিন্তিত শোনাল লেসলির গলা। জানালা গলে উল্টোদিকের রাস্তার ওপর চলে গেছে চোখ, বিশাল একটা কাঠামো খুঁজছে। মারিয়া বার্থেজ নিজেই চালায় ক্যাফে। মেয়েকে ওপর থেকে নামতে দেয় না। খুব বেশি ঝামেলা হলে রান্নার কাজে সাহায্য করে মেয়েটা।

ওদের সম্পর্কে অনেক জানো দেখছি।

সেলুনে থাকি, ভুলে যাচ্ছ কেন? লোকজন আলাপ করে, শোনার ইচ্ছে না থাকলেও অনেক কথা কানে আসে। ঘুরে দাড়াল সে, চোখে সতর্ক দৃষ্টি। কুত্তাটাকে কোথাও খুঁজে পেলাম না। কেটে পড়েছে ভাবতে বাধছে আমার। নির্ঘাত ঘাপটি মেরে আছে কোথাও।

রিক স্যাভেজের কথা বলছে সে, ধারণা করল জেমস। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াল ও। তাকাল জুয়াড়ীর দিকে, লোকটাকে স্বাভাবিক দেখাচ্ছে এখন। অতিরিক্ত হুইস্কি গেলার কোন নমুনা চেহারা বা আচরণে নেই। লেসলি উইলিয়ামস, আমি আমার নিজস্ব নিয়মে খেলি, স্থির, দৃঢ় কণ্ঠে বলল ও। পার বা স্যাভেজের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই, তাই যতক্ষণ না ওরা আমার পেছনে লাগছে আমিও কিছু করতে যাচ্ছি না। ওরা তোমার শত্রু, তাতে আমার কিছু যায়-আসে কি? আমরা এক দলের লোক নই, তোমার-আমার মধ্যে মিল কমই আছে। যদি আশা করে থাকো তোমার কথামত ওদের বিরুদ্ধে লেগে যাব, তাহলে ভুল করবে। নিজের গরজে ওদের সামলাতে হবে তোমার।

হতাশ দেখাল জুয়াড়ীকে, তাকিয়ে আছে।

ধন্যবাদ তোমাকে, কাজে লাগবে এমন অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছ। আমি এখন জানি ঠিক কার বিরুদ্ধে লড়তে হতে পারে। একটা পরামর্শ দেব, শেষপর্যন্ত অপেক্ষা করা বোধহয় ঠিক হবে না। প্রথম সুযোগে স্যাডলে চেপে বোসো।

জানি অন্তত একটা সুযোগ তো পাবই। তুমিই তৈরি করে দেবে, ক্ষীণ কণ্ঠে বলল জুয়াড়ী, গলায় জোর নেই।

এত নিশ্চিত হচ্ছে কি করে?

সবকটা দাঁত বেরিয়ে পড়ল তার, চোখ টিপল। তোমাকে শান্তিতে থাকতে দেবে না। এ-ও জানি এ জন্যে মাসুল দিতে হবে।

শ্রাগ ফল জেমস, জুয়াড়ীর চোখে চোখ রেখে পিছিয়ে এল। পেছনে হাত বাড়িয়ে খুলে ফেলল দরজাটা।

তুমি দেখছি আমাকেও অবিশ্বাস করছ! বিস্মিত গলা ভার।

আমি কাউকেই বিশ্বাস করি না।

নিচে নেমে এল জেমস, সেলুনের ভেতর থেকে লোকজনের কথাবার্তা ভেসে আসছে। রিক স্যাজের কথা ভাবল, হতে পারে ওর জন্যেই অপেক্ষা করছে। সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে যাবে এ আশায় আছে হয়তো, নাকি পেছনের দরজায়ও চোখ রাখবে? বোঝার উপায় নেই, ঝুঁকিটা নিতেই হবে। আনমনে কাঁধ ঝাঁকাল ও, দরজা তো মোটে দুটো একং ওগুলোর যে কোন একটা দিয়ে বেরিয়ে যেতে হবে। এমনিতে অনেক দেরি করে ফেলেছে, প্রাইসরা বোধহয় দুশ্চিন্তা করছে।

বেরিয়ে আসতে তাজা বাতাস লাগল গায়ে। মূল রাস্তা এড়িয়ে গেলেই বোবাধহয় ভাল হবে, মনে হলো ওর। সোজা দক্ষিণে এগোল, চেষ্টা করেও নিঃশব্দে চলতে পারছে না। একে অন্ধকার তারওপর রাস্তার ওপর সব ফেলনা জিনিসপত্র, উচ্ছিষ্ট ফেলে রাখা হয়েছ। ইচ্ছে থাকলেও ওগুলোর সাথে সংঘর্ষ এড়ানো যাচ্ছে না। মৃতের মত দেখাচ্ছে বেশিরভাগ বাড়িকে, বাতি জ্বলছে না। দ্রুত এগোল ও। শহরের শুরু পর্যন্ত যেতে হবে, তারপর ওপাশের বাড়িগুলোর পেছনে ক্রীকের পাড় ধরে গেলে পৌঁছে যাবে প্রাইসের বাড়িতে।

ক্যাফেটা সবে পেরিয়ে এসেছে ঠিক এসময় ভূতের মত উদয় হলো লোকটা। নিঃশব্দে, জেমস কিছু বুঝে ওঠার আগেই। লিকলিকে একটা দেহ, ডান হাতটা লম্বা। পেটে ধাতব নলের ঠাণ্ডা স্পর্শ পেল ও। পেয়েছি ওকে, রিক! চাপা স্বরে উল্লাস প্রকাশ করল লোকটা। জলদি এদিকে এসো।

এই প্রথম শুনতে পেলেও জেমস অ্যালেন বুঝতে পারল ওটা রেনে নেবরের কণ্ঠস্বর।

<

Super User