রনি আস্তাবল থেকে বেরিয়ে আসার সঙ্গেসঙ্গেই অ্যাডাম গভীর ছায়ার আড়াল থেকে বেরিয়ে এল। জাগে লাল হয়ে উঠেছে ওর চেহারা। হাঁদা রাম! গর্জে উঠল সে। তোমাকে কে বলেছিল জেমস সম্পর্কে ওকে প্রশ্ন করতে? সে কিছু বলেছে বা বলেনি, তাতে কি আসেযায়? এসব প্রশ্ন ওকে কেবল সন্দিগ্ধই করে তুলবে।
কী বলো? জবাবে বলল রেড। ও কে, যে কিছু সন্দেহ করবে?
লোকটা কে তা আমিও জানি না, কিন্তু এটুকু বুঝি ওর সাথে লাগতে গেলে পিস্তল ছোড়ার জন্যে তৈরি হয়ে যেতে হবে। এবং তাতে ফলাফল ভাল হবে না। আমার ধারণা লোকটা পিস্তল চালাতে জানে–ধাপ্পা দিচ্ছে না।
গোড়ালির ওপর ঘুরে রাগত গানম্যানকে পিছনে ফেলে অ্যাডাম এগিয়ে গেল। কিন্তু মুখে যাই বলুক ওর মাথা থেকে দুশ্চিন্তা দূর হচ্ছে না। জেমস যে কথা বলেছে সেটা জানা কথা। মরার আগে সে যদি ওকে তার ভাইয়ের কথা বলে থাকে–হয়তো আরও অনেক কথাই বলেছে। তবু, অন্ধকার রাতে ও কিবা এমন দেখে থাকতে পারে? ওর বলার কি থাকতে পারে? এটা প্রায় অসম্ভব যে ও কাউকে চিনতে পেরেছিল। সুতরাং এখন টাইট হয়ে বসে থাকা ছাড়া ভিন্ন উপায় নেই। দেখতে হবে পরিস্থিতি কোনদিকে গড়ায়।… স্ট্রেঞ্জার লোকটাকে এই এলাকা ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়াই ভাল।
কিন্তু জেমসের মৃত্যুর ধরনটা অস্বাভাবিক। ওরা কি তার উদ্দেশ্য টের পেয়েছিল? কিংবা সে কি কোন কথা বলেছে?
নিকটস্থ সেলুনের দিকেই পা বাড়িয়েছিল রনি, কিন্তু মলির স্টেক, ডিম আর পাইয়ের লোভ ওকে ওদিকেই টেনে নিয়ে গেল। কাঠের ফুটপাথে উঠে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকল সে। কেবল একজন কাউবয়কেই ওখানে দেখতে পেল। লোকটার বুট ক্ষয়ে গেছে–হ্যাটটারও খারাপ অবস্থা।
ওর ঢোকার সময়ে দরজার বেলের ঘণ্টায় কাউবয়ের কোন বিকার দেখা গেল না–কিন্তু ঘণ্টার আওয়াজে রান্নাঘর থেকে একজন সুন্দরী যুবতী বেরিয়ে এল। কালো চুল মাথার ওপর খোঁপা করে বাঁধা। গাড়ো নীল চোখ। কৌতূহলী চোখে মেয়েটা ওকে দেখছে। জবাবে সে হেসে বলল, হাওডি! আমি স্টেক, ডিম আর পাই চাই।
মেয়েটা বড় একটা কাঠের চামচ হাতে এগিয়ে এল। সামনে হেলে পড়া একগোছা চুল পিছনে ঠেলে দিয়ে সে বলল, তা হবে না। হয় স্টেক আর পাই, নয়তো ডিম আর পাই–দুটোরই দাম দুই বিট!
দুটোই দাও আমাকে। বলল রনি। সবথেকে বড় আর রসালো স্টেক, দুটোর বদলে চারটে ডিম! কিছু বীনস্ যদি থাকে, সাথে ওটাও কিছু দিও।
বীনস দুটো অর্ডারের সাথেই আসে। কিন্তু এতে তোমার দাম পড়বে ছয় বিট। এত পয়সা তোমার আছে?
যদি না থাকে, হেসে বলল রনি, তাহলে আমি তোমার থালা বাসন ধুয়ে দেব।
তা হবে না! পাকা ব্যবসায়ীর মত জবাব দিল মেয়েটা। ড্যাকোটার এপাশে সব কাউবয়ই ওই চেষ্টা করেছে, কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে ডিশ ধোয়ার চিন্তা আর কেউ করে না। তোমাকে পয়সা দিতে হবে-ক্যাশ!
ঠিক আছে, মলি, সশব্দে একটা ডলার টেবিলের ওপর ফেলল রনি। আমাকে খাওয়াও।
দ্রুত ডলারটা তুলে নিয়ে এপ্রোনের পকেটে রাখল মেয়েটা। বসো আমি এখনই খাবার নিয়ে আসছি, বলেই আবার ফিরল সে। মাংসটা তুমি কেমন চাও?
কেবল শিঙ দুটো কেটে ভেজে আনলেই চলবে-বাকিটা আমি সামলাব।
মাংস ভাজার শব্দ পাওয়া গেল। অল্পক্ষণ পরেই সে গরম কফি নিয়ে এল। মেয়েটা লম্বা-চমৎকার ফিগার। কাউবয়রা যে কেন রান্না ঘরে ডিশ ধোয়ার বাহানা করে সেটা আঁচ করা কঠিন নয়।
এখানে তুমি নতুন? কিছু খবর জানতে চাইছে মেয়েটা। তুমিই কি জেমস হার্টকে পেয়েছিলে?
মাথা ঝাঁকাল সে। খবর দ্রুত ছড়ায়। ওকে তুমি চিনতে?
হ্যাঁ, চিনতাম। টেক্সাসের এপাশে ওর মত কাউবয় আর দুটো পাওয়া যাবে না। আর পিস্তল-বন্দুকেও ওর হাত ছিল ভাল। তবে ওর ভাই ফিনলের তুলনায় ওটা কিছু না।
আরও শোনার জন্যে অপেক্ষা করছে রনি। কিছু সময় আছে যখন, চুপ করে শোনা ভাল। এই ব্যাপারে ওর আরও কিছু জানা দরকার। প্রাথমিক গুলির ক্ষত থেকে যদি ওর মৃত্যু হত তাহলে রনির এতে নাক গলাবার কিছু ছিল না। কিন্তু এটা এখন ওর জন্যে একটা ব্যক্তিগত ব্যাপারে দাঁড়িয়েছে। ওকে বাচাবার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল সে। কিন্তু যুবককে অন্যায় ভাবে খুন করা হয়েছে। ও দেখতে চায় কে এমন গর্হিত কাজটা করেছে।
শটগান রাইডারের ব্যাপারে হ্যারিংটন এখন কি করবে? কথা বাড়াতে চাচ্ছে রনি।
রনির দিকে তাকাল মলি। শুনেছিলাম তোমাকেই ওরা ওই কাজের প্রস্তাব দিয়েছে।
কথাটা ঠিক। কিন্তু আমি এখন কাজের ধান্ধায় নেই। আর কাজ করলেও সেটা কাউবয়ের কাজই হবে।
রান্নাঘরে ঢুকে রনির জন্যে স্টেক আর ডিম নিয়ে এল মেয়েটা। ওর খাওয়ার মাঝে কথা বলে চলল মলি। এখন কেউই তেমন কাজের লোক খুঁজছে না। একমাত্র বেন কেসির কাজের লোক দরকার, কিন্তু ওর দুই বোনের জন্যে সে কাউকে টেকাতে পারে না।
বেন কেসি? মুখ তুলে চাইল রনি। আজ রবার্ট আর অ্যাডামের সাথে সেও ছিল।
হ্যাঁ, ওই লোকই। সে রকিঙ কে র্যাঞ্চের মালিক। তবে শোনা যায় এখন ওর টাকা-পয়সার টানাটানি চলছে।
তুমি মেয়েদের কথা কি যেন বলছিলে?
ঝট করে আড়চোখে রনির দিকে তাকাল মলি। বুঝেছিলাম ওটা তোমার মনে ধরবে। এ দেশের সব কাউবয়ই ওখানে কাজ নেয়ার জন্যে পাগল। সবাই দুজনের কারও সাথে ঝুলে পড়তে চায়। তবে শেলীই রক্তরাঙা ট্রেইল
বেশি জনপ্রিয়। লিসার মধ্যে কিছু একটা আছে যার জন্যে লোকজন ওকে একটু ভয় পায়। যাহোক, মেয়েটার একজন মনের মানুষ আছে।
ওরা দেখতে ভাল?
ভাল মানে? অত্যন্ত সুন্দরী। গম্ভীর ভাবে মাথা ঝাঁকাল রনি। বেন কেসির বোনদের কথা ভাবছে
সে। এই এলাকার লোকজনের মতিগতির কিছুটা ধারণা নিতে চায় মাত্র। কোথায় কি চলছে জানতে ইচ্ছুক। শেরিফ রবার্ট লোকটা যে ভাল এটা সে বাজি ধরে বলতে পারে। কিন্তু ওর বিবেচনা শক্তি যে কতটা, সেটা সন্দেহের বিষয়।
খাওয়ার মাঝে মলিকে কথায় ব্যস্ত রাখল রনি। এখানকার লোকজন আর পরিবেশ সম্পর্কে মোটামুটি একটা ধারণা গড়ে উঠছে ওর মনে।
এখানে মাইনার আর র্যাঞ্চারদের নিয়ে এই সমাজ। বেন কেসিই এখানকার সবথেকে বড় র্যাঞ্চার। আর মাইন বলতে হ্যারিংটনের সোনার খনিটাই উল্লেখযোগ্য। বেন তার বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে র্যাঞ্চটা পেয়েছে। ওর বাবা ছিল একটা পাহাড়ী বাঘ। দাঁত ছিল ওই বুড়োর প্রয়োজনে ওগুলো ব্যবহার করতেও সে জানত। লোকটা তার আদান-প্রদানে ছিল সৎ-কিন্তু সেইসাথে ব্যবসায়ী বুদ্ধিও ছিল তার। রকিঙ কে র্যাঞ্চের বন্ধুর চেয়ে শত্রুই ছিল বেশি। বুড়োর মৃত্যুর পর রাসলাররা লুটেপুটে র্যাঞ্চটার আর কিছু রাখেনি।
এক বছরের মধ্যেই র্যাঞ্চের দুজন কর্মচারী গুপ্তঘাতকের গুলিতে মারা পড়ল। রাসলাররা এক হাজার গরু তাড়িয়ে নিয়ে গেল। বাধা দেয়ার কেউ ছিল না।
আশপাশের ছোট র্যাঞ্চগুলো ওদের গরু চুরি করেই সমৃদ্ধ হলো। রকিঙ কে দিনদিন গরীব হতে থাকল। চারপাশে আরও নতুন মুখ দেখা দিতে শুরু করল। বুড়ো কেসি জানত কিভাবে শহরের আবর্জনা পরিষ্কার রাখতে হয়, কিন্তু এখন চোর-ডাকাত আর ফটকাবাজে শহর ভরে গেছে। ঠেকাবার কেউ নেই।
সোনার খনি থেকে প্রচুর সোনা বেরোচ্ছে। ওরা চোখ রাখে কখন স্টেজে করে সোনা কোনদিকে যায়। ওদিকে, যদিও এখনও রকিঙ কে তে গরুর সংখ্যা প্রচুর, কিন্তু দিনদিন তা আরও পাতলা হয়ে আসছে। কে চুরি করবে, এই নিয়ে রাসলারদের মধ্যে মারপিট চলছে। পুরানো রাসলার নতুন রাসলারদের হাতে মারা পড়ছে।
ছোট মাইনগুলোর উৎপাদন বাড়লে, দুটো মাইন লুট হয়ে গেল। একটার মালিকই মারা পড়ল। অরাজকতার চরম। আগের শেরিফ গুলি খেয়ে মারা পড়ার পর রবার্ট এখন শেরিফের কাজ চালাচ্ছে।
সবখানেই একজন পালের গোদা থাকে, বলল রনি। এই শহরটাকে কে চালাচ্ছে?
আসলে কেউই না। র্যাঞ্চাররা সবাই বুড়ো কেসিকে মানত, কিন্তু এখন লোকজন অ্যাডামের কথা শুনতে শুরু করেছে।
ঘোড়ার ব্যবসায়ী?
হ্যাঁ, কিন্তু ওর একটা ছোট র্যাঞ্চও আছে। লোকটা কিছু গরুও কেনা-বেচা করে।
কাঠের ফুটপাথে প য়ের আওয়াজ পাওয়া গেল। ওই যে, জেরি সমার্স আসছে, পাশ কে সরে যেতেযেতে বলল মলি। ও এখানে নতুন, কিন্তু অনেক খোঁজ-খবর রাখে।
মলি কি বোঝাতে চাইল সেটা জিজ্ঞেস করার আগেই দু’জন লোক দোকানে ঢুকল। প্রথমজনের কালো ভুরু, ধনুকের মত বাঁকা পা, পুষ্ট দেহ, চোখ দুটো যেন একটু গর্তে ঢোকা। কিন্তু ওর পিছনের লোকটাই রনির দৃষ্টি আকর্ষণ করল।
জেরি সমার্স লোকটা সুদর্শন, ধূসর চোখ আর লালচে চুল। লোকটার বেপরোয়া চলার ভঙ্গি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
কি খবর, মলি? বিশদ হাসির সাথে সম্ভাষণ জানাল জেরি। রক্তরাঙা ট্রেইল
আমাদের দু’কাপ কফি আর কিছু খাবার দাও!
বসো, জেরি, কঠিন স্বরে বলল মলি। আর সবার মত তোমাকেও অপেক্ষা করতে হবে। তোমার বন্ধু, রনির দিকে এক ঝলক চেয়ে সে আবার বলল, ডাকি কেও।
জেরির দিকে তাকাল রনি। সেও ওকে দেখছে। এখানে নতুন? প্রশ্ন করল জেরি।
তুমি আগে কখনও এদিকে দেখেছ আমাকে? শান্ত স্বরে প্রশ্ন করল রনি।
না, তাই জিজ্ঞেস করছি।
আগে আমাকে দেখে না থাকলে আমি নিশ্চয় স্ট্রেঞ্জার। হাসল রনি। তারপর মলির দিকে চেয়ে বলল, আমাকেও এক কাপ কফি দিও। চমৎকার কফি বানাতে পারো তুমি।
নিজের গুরুত্ব এভাবে খর্ব হতে দেখে রুষ্ট হয়েছে সে। ওর চেহারায় সেটা প্রকাশ পাচ্ছে।
কিছু বলতে গিয়েও থমকে গেল সে। উরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা পিস্তল দুটো ওর নজরে পড়েছে। সে বুঝেছে এই লোকটা যেই হোক, ফেলনা মোটেও নয়।
মানুষ চিনতে রনিরও ভুল হয়নি। সে জানে ওই সহজ হাসির পিছনে আছে একজন ভয়ঙ্কর মানুষ। কফি শেষ করে বাইরে বেরিয়ে এল রনি। লোকটা পিস্তলবাজিতেও ওস্তাদ। বিপদ ঘনিয়ে আসছে। কিন্তু বিপদকে কোনদিন ভয় পায়নি, রনি। সরাসরি মোকাবিলা করেছে।
হাই-গ্রেড সেলুনটা কয়েক দরজা পরেই। ওদিকেই রওনা হলো রনি।
মলির দরজা দিয়ে ওকে লক্ষ করল ডাকি। ওর চওড়া কাঁধ, উরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা দুইটা পিস্তল, সবই দেখল। জেরি ওর পাশে এসে দাঁড়াল, ওকে কি ভয় পাও তুমি?
হোহ, কাউকে ভয় পাই না আমি।
হয়তো ওকে ভয় করে চললে আরও কিছুদিন বাঁচবে তুমি। ওকে সহজ লোক মনে কোরো না। শক্ত লোক সে। ওর থেকে সাবধানে চলাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
আমার সামনে ও দাঁড়াতেই পারবে না।
ধপ করে টুলের ওপর বসে নিজের কফিতে চিনি মেশাতে ব্যস্ত হলে ডাকি। ভয় কিছু না। তবে লোকটাকে খুব পরিচিত ঠেকছে। ওকে আমি আগেও কোথাও দেখেছি, কিন্তু কোথায় সেটা মনে করতে পারছি না।
কাঁধ উঁচাল জেরি। কালের সোতে ভেসে বেড়ানো এক কাউবয়। থাকবে না–চলে যাবে।
যাবে না, রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এসে মন্তব্য করল মলি। অন্তত কিছুদিন থাকবে। ছেলেটার খুন হওয়া সে সহজ ভাবে নিতে পারেনি।
সে কিভাবে শেরিফের থেকে ভাল করতে পারবে? প্রশ্ন করল সমার্স।
জানি না সে রবার্টের চেয়ে ভাল করতে পারবে কি না, সহজ সুরে মেয়েটা বলল, কিন্তু আমি খুনী হলে খুব চিন্তায় পড়তাম।
বিভিন্ন সেলুন আর আড্ডাখানায় ঘোরার কালে চোখ-কান খোলা রাখছে। রনি। বহু আগেই সে শিখেছে কঠিন শহরের হাওয়া কিভাবে আঁচ করতে হয়। শহরটা প্রায় টগবগ করে ফুটছে। কয়েকটা খুনের খবর সে শুনেছে। গত রাতেও মাথায় বাড়ি দিয়ে একটা ডাকাতি করা হয়েছে। একজন প্রসপেক্টারকে তার ক্লেইমে মৃত পাওয়া গেছে। দেখার কেউ নেই, নেকড়েরা এখন নির্ভয়ে শিকার ধরছে।
বুড়ো কেসি যতদিন বেঁচে ছিল শক্ত হাতে শহরটাকে সে কাবুতে রেখেছিল। সে আর তার কর্মচারীরা শহরের আইন-শৃঙ্খলা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু এখন সে আর নেই। তার ছেলে বেন কেসি চমৎকারর কাউম্যান, কিন্তু লড়তে জানে না। এখন যে যার খেয়াল-খুশি মত চলছে বাধা দেয়ার কেউ নেই। এখানেই হাঙ্গামার শুরু।
এক বোতল মদ নিয়ে বুড়ো কাউহ্যাণ্ডের সাথে কথা বলছে রনি। লোকটা মাথা হেলিয়ে জন মার্সারকে দেখাল। বেঁটে মোটা একটা লোক। সামনের দিকে চুল উঠে মাথার অনেকখানি জায়গায় টাক পড়েছে। বিশাল বপুর ওপর ঘড়ির সোনার চেইনটা শোভা পাচ্ছে। বুড়ো কেসি মারা যাওয়ার পর জন এখন মাথা উঁচিয়ে দাড়িয়েছে! নাক সিঁটকে বলল সে। কেসি বেঁচে থাকতে ওর মুখ থেকে কেউ টু-শব্দটিও শুনতে পায়নি। কিন্তু এখন ওর দাপটে মানুষের টেকাই দায় হয়ে উঠেছে।
উঠে দাঁড়িয়ে বারের দিকে এগোল রনি। হ্যারিংটন ওখানে দাড়িয়ে ছিল। ঘুরে রনিকে দেখে সে হাসল। তোমাকে দেখে খুশি হলাম, বন্ধু, বলল সে। আমার হয়ে শটগান মেসেঞ্জার হওয়ার ব্যাপারে তোমার মত পাল্টাল?
মাথা নাড়ল রনি। এখনও পাল্টায়নি। এখানে আমি কিছুদিন থাকতে চাই, কিন্তু ঘোড়ার পিঠে চড়ে কাজই আমার পছন্দ। হয়তো বেন কেসিকে তার হয়ে কাজ করার প্রস্তাব আমি দিতে পারি। ওখানে ফোরম্যান কে?
নিজের কাজ নিজেই দেখে বেন। গরু আর র্যাঞ্চ সম্পর্কে হয়তো ওর চেয়ে বেশি আর কেউ জানে না। কিন্তু বাপের সেই শক্ত শিরদাঁড়াটা সে পায়নি। এটা যে কেন তা বোঝা কঠিন নয়। বিশাল কামরার লোকজনের দিকে রনির দৃষ্টি আকর্ষণ করাল হ্যারিংটন। কামরায় অন্তত ষাটজন লোক আছে এখন। আমি বাজি ধরে বলতে পারি ওদের অন্তত বিশজন মানুষ হত্যা করেছে। কয়েকজন একাধিক।
ওদের বেশির ভাগ লোকই গরু চোর। হয়তো দশজন অসৎ জুয়াড়ী। এদের সামলানো কোন কচি ছেলের কাজ নয়।
ওদিকে, জন মার্সারকে দেখাল সে, লোকটা শহর চালাতে চায়, কিন্তু এত বড় সে নয়।
কে বড়? রনির দিকে তাকিয়ে হাসল হ্যারিংটন। বন্ধু, ওটা একটা ভাল প্রশ্ন। কিছু লোক মনে করে, আমি। কিন্তু আমি এসবের মধ্যে জড়াতে চাই না। প্রয়োজন হলে আমি নিজেই আমার শিপমেন্ট বাঁচাতে শটগান রাইড করব–কিন্তু ওটা নয়।
মাথা নাড়ল হ্যারিংটন। উপযুক্ত লোক আসলে বর্তমানে কেউই নেই। ডাক্তার হ্যাডলে বুদ্ধিমান লোক, কিন্তু নেতৃত্ব দেয়ার ইচ্ছা বা ক্ষমতা কোনটাই তার নেই। ডাক্তারি করেই সে সন্তুষ্ট। আর রবার্ট এটা পারবে না।
অ্যাডাম কেন হাল ধরছে না? প্রশ্ন রাখল রনি।
একটু ইতস্তত করল হ্যারিংটন। হ্যাঁ, শেষ পর্যন্ত বলল সে। কিন্তু ওকে বোঝা সত্যিই কঠিন।
প্রসঙ্গ পাল্টাল রনি। তোমার সোনার ব্যাপারে কি বুঝছ? সোনা সহজে পাচার করা সম্ভব না। বিশেষ করে এত সোনা।
তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমি যতটা খবর পেয়েছি চুরি করা সোনার এক ভোলাও কোন বাজারে এখনও বিক্রি হয়নি। আমার বিশ্বাস চুরি করার আগেই ওরা কি ভাবে কি করা হবে, সব ভেবেই কাজে নেমেছে। তবে কাজটা বেশ কঠিন হবে। কিন্তু কাকে সন্দেহ করব? হাত ঘুরিয়ে কামরার সবাইকে দেখাল সে। এদের সবাই চোর আর হত্যাকারী-কাকে সন্দেহ করব?
হঠাৎ খুশির সুরে কেউ একজনকে সংবর্ধনা জানাল। ওই যে! বেন কেসি এসেছে। চাকরি চাইলে এখনই প্রস্তাব দাও, বলল হ্যারিংটন।
লম্বা গড়নের লোক বেন কেসি। বন্ধুসুলভ চেহারা। সোজা বারের কাছে হ্যারিংটনের দিকে এগিয়ে এল সে। কেমন আছ, বিল? রনিকে কিছুক্ষণ খুঁটিয়ে দেখে সে জিজ্ঞেস করল, তুমিই না হার্টকে খুঁজে পেয়েছিলে?
হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছ, বলল রনি। আমি তোমার ওখানে একটা কাজ নিতে চেয়েছিলাম।
হাসল বেন কেসি। আমার অনেক লোক দরকার, বলল সে, কিন্তু রকিং কে-তে কাজ নেয়া এখন বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাজের লোকেরা পটপট মারা পড়ে।
আমার দিকে লোকে গুলি আগেও করেছে, কিন্তু ওরা কেউ বাঁচেনি।
ঠিক আছে, আগামীকাল সকাল থেকেই তুমি কাজে আসতে পারো। ঘুরে চলে যেতে গিয়েও সে দাঁড়াল। তোমার নামটা কি?
রনি ড্যাশার, কিন্তু বন্ধুরা আমাকে রনি বলেই ডাকে। ওই নাম উচ্চারণে ওখানে অনেকের চোখই ছানাবড়া হয়ে গেল। নামটা জোরে বলেনি সে-তবু। সবাই ওদের কথাই কানপেতে শুনছিল।
কথাটা ডাকির কানেও গিয়েছে। পিলে চমকে গেছে ওর। টেক্সাসে ওকে অ্যাকশনে দেখেছে সে। এমন তুখোড় পিস্তলবাজ সে আগে কখনও দেখেনি। কখন যে ওর হাতে পিস্তল উঠে আসে আর কখন সে গুলি করে, তা পরপারে পৌঁছার আগে কেউ বোঝে না।
রনি ড্যাশার… অবাক চোখে তাকাল বেন। সকালেই তুমি চলে এসো। আমার র্যাঞ্চে তোমার কাজ পাকা!
ডাকি দ্রুত ঘুরে সেলুন ছেড়ে বেরিয়ে সেল। আড়চোখে ওকে লক্ষ করল রনি। রোদে পোড়া গানম্যানকে বেশ বিচলিত মনে হলো। হ্যারিংটন সবই খেয়াল করল, কিন্তু কোন মন্তব্য করল না। অ্যাডাম কাছেই দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু ওদের দিকে পিছন ফেরা। সে শুনেছে কি না ঠিক বোঝা গেল না।
ঠিক আছে, বলল রনি, তাহলে সকালে দেখা হবে। কামরার লোকজন পেরিয়ে সে দরজার দিকে এগোল।
<