ভোরে ওয়াগন নিয়ে বেরিয়ে পড়ল জেমস। ইয়েলার্স ক্ৰীক ধরে মাইল দুই পেরিয়ে এসে পেয়ে গেল বনভূমিটা, অসংখ্য সিডার আর অ্যাসপেনের ছড়াছড়ি। একপাশে ওয়াগন রেখে কুঠার আর ল্যাসো হাতে ভেতরে ঢুকে পড়ল। শুরুতে একটা শুকনো সিডার পেয়ে ওটায় চড়ে একটা শাখার সাথে বাঁধল ল্যাসোটা। অন্য প্রান্ত টান টান করে বাঁধল পাশের গাছের সঙ্গে। নিচে নেমে এসে এবার কাটা শুরু করল।

দুপুরে নিকোলাস প্রাইস যখন সেখানে পৌঁছল ততক্ষণে,কাঠ ফালি করতে শুরু করেছে ও।

খাবারের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে গাছের গুড়ির ওপর বসে পড়ল সে। খেয়ে নাও, জেমস।

কুঠার রেখে ক্রীক থেকে হাত-মুখ ধুয়ে এল জেমস, খেতে বসল।

শুকনো গাছ কাটতে পরিশ্রম বেশি। এরপর থেকে আর কেটো না, পরামর্শ দিল প্রাইস। কাঠের চেলাগুলো ওয়াগনে জড়ো করছে।

তোমার শেডে কিন্তু পর‍্যাপ্ত শুকনো কাঠ নেই।

যা আছে তাতে আরও দুদিন চলবে।

তৃতীয়দিন হয়তো বিপদে পড়বে। কাঠ কাটতে এবং শুকাতে সময় লাগবে, মি, প্রাইস।

শোনো, বাছা, আমাকে মিস্টার-ফিস্টার বলার দরকার নেই। শুধু নিক বলে ডেকো, একটু থামল কাঠ ব্যবসায়ী; ঘুরে তাকাল ওয়াগনে ভোলা কাঠের দিকে, মনে মনে হিসেব করল বোধহয়। যে হারে কাটছ, আমি সন্তুষ্ট, জেমস। সব জায়গায় জোগান দিয়েও বাড়তি কিছু কাঠ থেকে যাবে। বেশি বেশি কাটলে হাঁপিয়ে উঠবে, কাজ ফেলে শেষে চলে না যাও।

কয়েক মাস পরেই কিন্তু শীত আসছে, মনে করিয়ে দিল জেমস। তখন তো কাটা যাবে না, এখন থেকেই জমিয়ে রাখতে হবে। কাঠের দরকার কিন্তু তখনই বেশি।

শীতে ব্যবসাটা ভাল হওয়ার কথা, অথচ তা হয় না! আক্ষেপ করল প্রাইস।

তুমি বোধহয় পর‍্যাপ্ত কাঠ জমাতে পারো না।

কি করব, কাজটা যাকে দেই, সে-ই ফাঁকি দেয়। আর শীতের সময় তো শুয়ে-বসে কাটায় ওরা। আমি নিজে পারি না, বয়স হচ্ছে। একটুতে হাঁপিয়ে উঠি। একটা স কিনতে পারলে অবশ্য এত ঝামেলা হত না, কিন্তু ওটা কিনে বসানোর খরচ এখনও জমাতে পারিনি।

বিকেলে একসাথে ফিরল দুজনে। শেডের কাছে এসে ওয়াগন থেকে কাঠ নামাতে শুরু করল জেমস! অনুভব করল হাতের আঙুলগুলো টনটন করছে, চামড়ার দস্তানা পরার পরও ছড়ে গেছে কয়েক জায়গায়। ফোস্কা পড়েছে। অভ্যস্ত হয়ে গেলে অবশ্য দুদিনের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।

হাত-মুখ ধুয়ে এসো তোমরা, বলল লরা প্রাইস। কফির পানি চড়িয়েছি।

আগুন গরম কফি জেমসের ক্লান্তি অনেকটাই দূর করে দিল। সিগারেট ধরিয়ে অপেক্ষা করল প্রাইস আর কোন ফরমাশ দেয় কি-না, তারপর শেডে চলে এল যেটাতে কাঠের চেলা গুছিয়ে রাখা হয়েছে। ছোট একটা বাক্স পেল এককোণে, কয়েকটা যন্ত্রপাতি আছে তার ভেতর-রেঞ্চ, হাতুড়ি, পেরেক। কেবিনে এসে কলটা খুলে ফেলল, আধ ঘণ্টার মধ্যে ঠিক হয়ে গেল ওটা।

ধন্যবাদ, জেমস, আন্তরিক কণ্ঠে বলল মিসেস প্রাইস নিককে অলস বানিয়ে ছাড়বে দেখছি।

হাসল জেমস, হাত ধুয়ে, শেডের কাছে চলে এল। যথেষ্ট সময় বাকি আছে সন্ধের। শেভের বেড়াটা কয়েক জায়গায় নষ্ট হয়ে গেছে, ওটা ঠিক করতে বসল।

রাতে, সাপারের সময় প্রসঙ্গটা তুলল প্রাইস। গতরাতে আস্তাবলে একটা লোক মারা গেছে। দুবার ওর গলায় ছুরি চালিয়েছে খুনী।

পাত্তা দেবে না মনে করেছিল জেমস, তারপর সহসাই লেসলি উইলিয়ামসের সতর্কীকরণ মনে পড়ল ওর। কোন্ আস্তাবলে? খাওয়া না থামিয়ে জানতে চাইল।

শহরে ঢোকার মুখে করবির আস্তাবল।

লোকটাকে চেনো নাকি?

ভবঘুরে। দুদিন ধরে কাজ খুঁজছিল, এখানেও এসেছিল। একদিন কাজ করার পর কেটে পড়েছে ব্যাটা, অলস লোক।

শক্রতা?

হতে পারে। তবে লোকটা নিরীহ ধরনের। আর এমনও নয় যে ওর পকেটে প্রচুর টাকা ছিল যে তা কেড়ে নিতে পারে কেউ।

টাকা? এ জিনিস তার কাছে বেশ কিছু আছে, এবং গতরাতে ওই আস্তাবলেই থাকার কথা ছিল ওর। হয়তো যা ভাবছে আদপে তা নয়, অন্য কোন ব্যাপার। কিন্তু জেমসের মন সায় দিচ্ছে না। সেলুন ভর্তি লোকজন শুনেছে আস্তাবলে রাতটা কাটাবে ও, এবং বেশ কিছু ডলার ওকে জিততে দেখেছে অন্তত ত্রিশজন লোক। এদের যে কেউ লোভী হয়ে উঠতে পারে।

পরদিন থেকে কাজগুলো হলো রুটিনমাফিক। বিকেল পর্যন্ত টানা কাঠ কাটে, ফিরে এসে খুঁটিনাটি কাজ সারে। শেডের চালাটা পুরো ঠিক হয়ে গেছে এখন, বেড়াগুলো মজবুত করে বেঁধেছে জেমস। দুদিন ওয়াগনে করে সাপ্লাই দিয়ে এসেছে হোটেল আর ক্যাফেতে।

প্রাইস একজন ভালমানুষ, এ কদিনে এটা ভালমতই বুঝেছে জেমস। তবে কঠোর পরিশ্রমের ব্যাপারে কিছুটা অনীহা আছে কাঠ ব্যবসায়ীর। তার বুদ্ধিমত্তা মোটেও উঁচুদরের নয়, গুছিয়ে বা কৌশল খাঁটিয়ে কাজ করতে পারে না। যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তাই তার ব্যবসা জমছে না। তবে লোকটা মিশুক, বিবেচক এবং অন্যের ব্যাপারে নাক গলাতে পছন্দ করে না। ওর সম্পর্কে একবারও জানতে চায়নি। ওর কাজে সে খুশি, এটাই তার কাছে বড় ব্যাপার।

লরা প্রাইস চাপা স্বভাবের মহিলা। বুদ্ধিমতী, স্বামীর মত অগোছাল নয়। অল্পতে খুশি হওয়ার দুর্লভ গুণ রয়েছে তার। প্রয়োজন ছাড়া জেমসের সাথে কথা না হলেও ওর ব্যাপারে মহিলা একেবারে উদাসীনও নয়। সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করছে জেমস, এটা ঠিকই স্মরণে রেখেছে। খাওয়ার সময় তাই পরিমাণে ওকেই বেশি দিচ্ছে। না নিলেও জোর করে তুলে দেয়। ক্লান্ত শরীর নিয়ে বিকেলে যখন ফিরে আসে, গরম কফি আর বিস্কুট চাঙা করে তোলে ওকে।

তিনজনের মধ্যে মার্কই বেশি আকৃষ্ট করেছে জেমসকে। সুযোগ পেলেই ওর পিছু লেগে থাকছে ছেলেটা। দারুণ কৌতূহলী। জেমস এমনিতে কম কথার মানুষ, ছেলেটার প্রশ্নের উত্তর দিতে রীতিমত হাঁপিয়ে ওঠে।

চমৎকার একটা পরিবার। জেমস বিস্ময়ের সাথে অনুভব করে নিজেদের একজন হিসেবে ধরে নিয়েছে ওকে। পরিবারটা নির্ভর করে ওর ওপর, অথচ বেতন আর থাকা-খাওয়ার বিনিময়ে শ্রম দিচ্ছে ও। আন্তরিকতাটুকু টের পায় জেমস। মায়াটা কাটাতে কষ্ট হবে, একদিন তো ওকে চলে যেতেই হবে।

জেমস, মিসেস বার্থেজের সাপ্লাই দেয়ার কথা আজ, দিন পনেরো পরে এক বিকেলে ওকে ডেকে বলল প্রাইস। তোমাকেই নিয়ে যেতে হবে, হিসেবপত্র নিয়ে বসব আমি। ক্যাফের পেছনের দরজা দিয়ে যাবে, পাররে তো

আমিও যাব, বায়না ধরল মার্ক।

চোখ ছোট করে ছেলের দিকে তাকাল কাঠ ব্যবসায়ী, হেসে ফেলল একটু পর। দেখো, জেমস, ও তোমার ন্যাওটা হয়েছে কেমন। অথচ কদিন হলো এসেছ! তুমি চলে গেলে কষ্ট পাবে ছেলেটা।

কেন ভাবছ আমি চলে যেতে পারি?

লরা বলছিল, পরে আমারও তাই মনে হলো। তোমার মত লোক এখানে থাকতে আসবে না, এটুকু পরিষ্কার। লুকিয়ে থাকার জন্যে লিয়ন সিটি একটা আদর্শ শহর। সবচেয়ে কাছের শহর একশো মাইল দূরে, একপাশে মরুভূমি আর অন্য তিনদিকেই দুর্গম ট্রেইল। কোন টেলিগ্রাফ অফিস নেই যে বাইরের কোন শহরের সাথে যোগাযোগ করা যাবে। এখানে লুকিয়ে থাকা কোন ব্যাপারই নয় যদি রিক স্যাভেজকে সমঝে চলা যায়। থামল সে, হাল, তীক্ষ্ণ হয়ে উঠেছে দৃষ্টি। হয় তুমি কাউকে খুঁজছু নয়তো নিজে লুকিয়ে থাকতে এসেছ।

লরা প্রাইসের চিন্তার গভীরতা জানতে পেরে বিস্মিত হলো জেমস।

আমার অবশ্য অত চিন্তা নেই, ক্ষীণ হেসে যোগ করল সে। আমাকে খোঁজার মত নেই কেউ, আর…

পরে একসময় এ নিয়ে আলাপ করব আমরা, নিক, শান্ত কণ্ঠে বাধা দিল জেমস। তোমাদের বেশি না জানাই ভাল। তবে এটুকু নিশ্চিত থাকতে পারো আমার দ্বারা তোমাদের কোন ক্ষতি হবে না।

আমরা জানি, জেমস। ধন্যবাদ। ঘুরে কেবিনের ভেতরে ঢুকে পড়ল সে।

ওয়াগনে কাঠ ভোলা হয়ে গেছে, আগেই। জেমস দেখল চালকের আসনে উঠে বসেছে মার্ক। ও উঠতে সরে বসল ছেলেটা, ওয়াগন চলতে শুরু করতে ওর একটা বাহু চেপে ধরল। তুমি চলে যাবে? চাপা স্বরে জানতে চাইল।

খুব শিগগিরই নয়, বাছা।

মা বলছিল গতকাল। ঘুমিয়ে পড়ার আগে শুনেছি আমি।

হয়তো বেশ কিছু দিন থাকব।

তারপর?

আমার বাড়িতে ফিরে যাব।

কি যেন ভাবল ছেলেটা। কারসনদের বাসা পেরিয়ে যাওয়ার সময় পোর্চে দাঁড়ানো একটা ছেলের উদ্দেশে হাত নাড়ল। ওখানে তোমার কে আছে?

দুটো মুখ ভেসে উঠল জেমসের মানসপটে-মোনা…ফ্রেড। না, এখন আর নেই কেউ।

তাহলে তোমার বাড়িতে কেউ নেই! বিস্ময় মার্কের কণ্ঠে। আমাদের এখানেই থেকে যেতে পারো তুমি।

জবাব না দিয়ে ওয়াগন চালানোয় মনোযোগ দিল জেমস। মূল রাস্তা ধরে কিছুদূর উত্তরে এগিয়ে জেনারেল স্টোরের পাশের গলি ধরে পেছনের রাস্তায় চলে এল। অপরিসর, নোংরা রাস্তা। খুব কমই ব্যবহার করা হয়। বাড়িগুলোর পেছন দিক সম্পূর্ণ ভিন্নরকম দেখাচ্ছে। এটাই স্বাভাবিক, ভাবল ও, পেছন দিকটা নিয়ে কেউ ভাবে না, দেখেও না।

রোজ আন্টির সাথে দেখা হবে! মৃদু স্বরে নীরবতা ভাঙল মার্ক, উফুল্ল দেখাচ্ছে ওকে।

পৌঁছে গেছে ওরা। আসন থেকে নেমে পড়ল জেমস, খেয়াল করল এ জায়গাটা পরিচ্ছন্ন। বোঝা যাচ্ছে নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়। ক্যাফেটা একজন মহিলা চালায় বলেই বোধহয় সম্ভব হয়েছে এটা। মার্ককে নামিয়ে দিয়ে তাকাতে দরজায় দেখতে পেল মিসেস বার্থেজকে। নড করল জেমস।

আরে, মার্ক যে! উৎফুল্ল শোনল মহিলার গলা। মার্ক কাছে যেতে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমো খেল। চলো, ভেতরে গিয়ে বসবে। ঘুরে এগোতে গিয়েও থেমে ফিরল জেমসের দিকে। ওদের কাজ নিয়েছ তুমি?

মাথা ঝাঁকাল ও।

মার্ককে নিয়ে ভেতরে ঢুকে পড়ল মিসেস বার্থেজ।

ছোট একটা শেডে কাঠ রাখার ব্যবস্থা। ওয়াগন থেকে কাঠ নামিয়ে তাতে সারি করে রাখতে শুরু করল জেমস। মিনিট দশেকের মধ্যে শেষ হলো কাজটা। ওয়াগনের কাছে সরে এল ও। তামাক আর কাগজ বের করে সিগারেট রোল করল। ছেলেটার অপেক্ষায় আছে, মার্ক ফিরে এলেই যেতে পারে।

সিগারেট শেষ হয়েছে, এসময় ফের দরজায় দেখা গেল মারিয়া বার্থেজকে। শেডের দিকে চোখ পড়তে বিস্মিত হলো। আরে, তুমি দেখছি কাঠগুলো তুলে রেখেছ! নিকের সাথে এরকম কথা তো হয়নি। ও শেডের কাছে ফেলে চলে যায়, পরে আমরাই উঠিয়ে রাখি। তোমাকে বলেনি সে?

এটা পুরুষদের কাজ, ম্যাম, ক্ষীণ হাসল জেমস। তাছাড়া নিকও কিছু বলেনি। অবশ্য অন্য জায়গায়ও কাঠ তুলে দিয়েছি আমি।

ওরা তোমাকে মুফতে খাঁটিয়ে নিয়েছে।

মার্ক কোথায়? দেরি করলে ওর মা বোধহয় রাগ করবে।

ও তো রোজের কাছে, কি যেন ভাবল মহিলা। ভেতরে এসো, কফি খাবে।

অনড় দাঁড়িয়ে থাকল জেমস।

সঙ্কোচ করছ কেন? নিক এলেও তো কফি খেয়ে যায়। আর তুমি তো আমাদের কাজ কমিয়ে দিয়েছ। শোনো, আর এমন করবে না।

আধ-খাওয়া সিগারেট বুটের তলায় পিষে এগোল জেমস, খানিকটা আড়ষ্ট ও দ্বিধান্বিত। এ ধরনের সৌজন্য ওর মোটেই পছন্দ নয়। মহিলাকে শুধু শুধু ব্ৰিত করার মানে হয় না। মুফতে কফি খাওয়ার মত কিছুই করেনি সে, এবং মহিলা এখানে ব্যবসা করতে বসেছে।

প্রথম কামরাটা রান্নাঘর। জেমস দেখল উনুনে কফির আয়োজন করেছে মহিলা। একপাশে সরে দাঁড়াল ও। উল্টোদিকের দরজায় ক্যাফের ভেতরটা দেখা যাচ্ছে। দুজন খদের একটা টেবিলে বসে আছে।

ভেতরে গিয়ে বসো, মিস্টার…ওহ, তোমার নামই তো জানা হয়নি। আমি মারিয়া বার্থেজ। হাত বাড়িয়ে দিল মহিলা।

হাতটা ধরে ছেড়ে দেয়ার সময় নাম জানাল ও।

শুধু ওটাই?

জেমস অ্যালেন। চেষ্টা সত্ত্বেও নিজের অস্বস্তি ঢাকতে পারল না জেমস।

ভেতরে গিয়ে বসো, মি, অ্যালেন, ফের অনুরোধ করল মহিলা।

আমি বরং এখানেই দাড়াই। মার্ক এলেই তো চলে যাব।

ঝট করে ঘুরে তাকাল মারিয়া বার্থেজ, চোখে রাগ। তুমি কেমন ভদ্রলোক, অ্যালেন? ঠিক বুঝতে পারছি না। তোমাকে দুবার অনুরোধ করেছি, অথচ তা কানেই তুলছ না!

অপ্রস্তুত বোধ করল জেমস, আনমনে মাথা ঝাঁকাল। এগোতে গিয়ে দেখল মার্কের হাত ধরে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে একটা মেয়ে। উনিশ কি বিশ হবে বয়েস, মিসেস বার্থেজের মতই দেখতে। সাদা পোশাকের পটভূমিতে ভরাট শরীর ফুটে উঠেছে। নিজের ওপর মেয়েটার অনুসন্ধিৎসু দৃষ্টি টের পেয়ে চোখ সরিয়ে নিল ও। দাঁড়িয়ে থাকল।

ঘুরে মেয়েটাকে দেখতে পেল মিসেস বার্থেজ। আমার মেয়ে, রোজালিনা।

নড করল জেমস। দ্বিতীয়বারের মত নিজের পরিচয় জানাল। সত্যিই একটা গোলাপ, ভাবল ও-সুন্দর, সতেজ এবং নিটোল!

মার্কের কাছে তোমার কথা শুনেছি, মিষ্টি গলায় বলল মেয়েটা।

অবাক হলেও কিছু বলল না জেমস, বরং মিসেস বার্থেজের মনোযোগ আকর্ষণ করল। আরেকদিন কফি খাব, ম্যাম, মহিলা উনুনের সামনে থেকে ফিরে তাকাতে বলল। নিক আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছে। চলো, মার্ক।

বাধ্য ছেলের মত এগিয়ে এল মার্ক, ওর হাত ধরল।

বোঝা যাচ্ছে সেদিনের ব্যাপারটা অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে তোমাকে, গম্ভীর দেখাল মহিলাকে। হয়তো সেটা কাটাতে পারছ না।

বেরিয়ে এসে মার্ককে ওয়াগনে তুলে দিল জেমস। নিজে উঠে বসে লাগাম তুলে নিল। পাশ ফিরে তাকিয়ে দেখতে পেল মা-মেয়ে দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। মার্ক হাত নাড়ল ওদের উদ্দেশে, লাগাম ঢিল দেয়ার সময় মৃদু নড করল জেমস। এগোল ওয়াগনটা।

পকেট থেকে চকোলেট বের করে মুখে পুরল মার্ক, দারুণ সুখী দেখাচ্ছে ওকে। রোজ আন্টি দিয়েছে, এখানে এলে কিছু একটা দেবেই আমাকে, বলল ছেলেটা। মা তো আসতেই দেয় না। আজ তোমার সাথে এসেছি, এ জন্যে বোধহয় না করেনি।

আকর্ষণটা তাহলে এখানে, ভাবল জেমস।

তুমি ওকে চিনতে না? বিস্মিত কণ্ঠে একটু পর জানতে চাইল মার্ক। সবাই তো চেনে। মি. ক্রুশারের সাথে বিয়ে হবে।

নীরবে মাথা নাড়ল জেমস, ওয়াগন চালানোয় মনোযোগ।

মা-কে কিন্তু বলতে পারবে না যে চকোলেট নিয়েছি আমি।

তোমার মা ঠিকই বুঝে ফেলবে, বাছা।

বুঝুক। তুমি না বললেই হলো।

মিথ্যে বলব?

ন-না। তুমি বলবে দেখোনি।

কিন্তু তোমাকে চকোলেট খেতে দেখতে পাচ্ছি।

বিমূঢ় দেখাল মার্ককে, ছোট্ট মাথায় সমাধান ভেবে পাচ্ছে না। একটু পর খুশি হয়ে উঠল ও। বলবে তুমি কিনে দিয়েছ।

সেটাও তো মিথ্যে হবে।

চকোলেট খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল, বোকা দৃষ্টিতে ওকে দেখছে মার্ক।

জেনারেল স্টোরের পাশ দিয়ে যাচ্ছে ওরা। ওয়াগন থামিয়ে নেমে পড়ল জেমস। ভেতরে ঢুকে চকোলেটের খোঁজ করল। ফিরে এল কাগজে মোড়া দুই টুকরো চকোলেট নিয়ে।

মার্কের ছোট্ট মাথা কাজ করছে না, বিহ্বল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, হাত বাড়াল না লোভনীয় চকোলেটের দিকে। মা সত্যি আজ বকা দেবে আমাকে, সন্ত্রস্ত স্বরে বলল শেষে।

এবার আর মিথ্যে বলতে হবে না।

তোমার সাথে বের হওয়া বন্ধ করে দেবে। চকোলেট নিল মার্ক।

এত চিন্তা কোরো না, বাছা। তোমার মা-কে বুঝিয়ে বলব আমি।

এবার কিছুটা সন্তুষ্ট দেখাল ছেলেটাকে। চকোলেটের সদ্ব্যবহার শুরু করল পুরোদমে।

রাতে সাপারের টেবিলে এ নিয়ে কথা উঠল। মার্ককে ভেতরের কামরায় পাঠিয়ে দিয়েছে মিসেস প্রাইস।

কিছু মনে কোরো না, নিক, হালকা সুরে বলল জেমস। সমস্যাটা বোধহয় আমি ধরতে পারিনি।

মেয়েটা ওকে পছন্দ করে, উত্তর এল লরা প্রাইসের কাছ থেকে। ক্যাফে চালিয়ে কোনরকমে চলে যায় ওদের, তবু রোজ স্কুলের চাকুরিটা না নিলে বোধহয় সত্যি বিপদে পড়ত। মার্ক ক্যাফেতে গেলে কিছু একটা দেবেই। যে জিনিস বেচে কিছু টাকা পেত ওটাই দিতে হচ্ছে, এটা উটকো ঝামেলা নয়? ওরা হয়তো তা মনে করছে না। তাছাড়া ব্যাপারটা আমাদের পছন্দও নয়। এটা আত্মসম্মানের ব্যাপার। থেমে জেমসের দিকে ফিরল মহিলা। আজও দিয়েছে, তাই না? এ ব্যাপারে ভুল হয় না রোজের।

আমি কিনে দিয়েছি।

তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওকে নিরীখ করল লরা প্রাইস, সন্দেহ ফুটে উঠল দৃষ্টিতে। সহাস্যে তাকিয়ে থাকল জেমস, কিন্তু মহিলাকে প্রভাবিত করতে পারল না। নিজের ধারণায় প্রবল বিশ্বাস যে তার আছে পরের কথাগুলোয় তা বোঝা গেল। বিশ্বাস করি না, রোজ অবশ্যই একটা কিছু দিয়েছে মার্ককে! তপ্ত স্বরে বললেও এবার কোমল হয়ে এল তার দৃষ্টি, প্রত্যাশা ফুটে উঠল চাহনিতে, প্রায় অনুনয়ের সুরে বলল: জেমস, দয়া করে এ কাজটা আর কখনও কোরো না। শেষে অভ্যাসে দাঁড়িয়ে যাবে। ওকে বুঝতে হবে আরেকজন কিছু দিতে চাইলেও সেটা নিতে নেই যদি না ওর পাওনা হয়। শেখার সময় ওর এখন, আমি চাই আমার ছেলে কখনও নিজের আত্মসম্মানবোধ হারাবে না।

ও তো বাচ্চা ছেলে, বলল প্রাইস। এসব বোঝার বয়স ওর হয়েছে নাকি?

আমার সাফ কথা, ওকে কখনও সাথে নেবে না তুমি! স্বামীর উদ্দেশে চড়া গলায় বলল মহিলা,অধৈর্য দেখাল তাকে। মি. অ্যালেন, তুমিও। এঁটো বাসনকোসন নিয়ে বেসিনের দিকে চলে গেল লরা প্রাইস, সেদিকে তাকিয়ে ত্যাগ করে সিগারেট ধরাল কাঠ ব্যবসায়ী। ব্ৰিত দেখাল তাকে, কিন্তু চোখ দেখে বোঝা গেল স্ত্রীর সাথে তর্কে যেতে নারাজ।

মহিলা অযৌক্তিক কিছু বলেনি, তার চিন্তাধারা পরিষ্কার, ভাবল জেমস। বেরিয়ে এল ও। বোঝা যাচ্ছে রোজালিনা বার্থেজের সাথে মার্কের সম্পর্ক ছাত্রশিক্ষিকার চেয়ে একটু বেশিই। হয়তো মেয়েটা আরেকজন লরা প্রাইস, আন্তরিকতার অভাব নেই। মার্ক অবশ্য যে কাউকে আকর্ষণ করবে।

বিছানায় শুয়ে সিগারেট ধরিয়ে রিক স্যাভেজকে নিয়ে ভাবল ও। মার্শাল হিসেবে লোকটা একগুঁয়ে, কঠিন মানুষ। যতটা না তার ব্যক্তিত্বপূর্ণ দৃঢ়তা তারচেয়ে বিশাল বপু আর বেপরোয়া স্বভাবের কারণে ওকে ভয় করে লোকজন, এ কদিনে এটুকু পরিষ্কার বুঝেছে জেমস। লোকটা শক্তপাল্লা, তারওপর এখানে আইনের প্রতিনিধিত্ব করছে। তাকে টলানো কষ্টকর হবে। তবে এ নিয়ে খুব একটা ভাবছে না জেমস। তিনটে বছর ধৈর্য ধরেছে, আরও কয়েকদিনে এমন কিছু যাবে-আসবে না। তাড়াহুড়ো করা ওর ধাতে নেই। সময় হলে ঠিকই তাকে চেপে ধরবে। তবে তার আগে অন্য দুজনকে খুঁজে বের করা দরকার।

জেমস অ্যালেন ধীরে চলার পক্ষপাতি, জানে অন্যদেরও খুঁজে পাবে। ওদের সম্পর্কে কাউকে কোন প্রশ্ন করেনি। ও খোজ নিলে কানে চলে যাবে তাদের, সতর্ক হয়ে যাবে। ওদের অলক্ষ্যে কাছাকাছি পৌঁছতে চায় জেমস যাতে হাতছাড়া না হয়ে যায় কেউ। একসাথে তিনজনকে শিকার করা কষ্টকর কাজ। কৌশলে একে একে ওদের মোকাবিলা করতে হবে।

লেসলি উইলিয়ামসের কথা মনে পড়ল ওর, অদ্ভুত লোক। একবার দেখা করা দরকার, লোকটা হয়তো কিছু তথ্য দিতে পারবে। রিক স্যাভেজকে ঘৃণা করে সে, সেই সূত্র ধরে লোকটার কাছ থেকে তথ্য বের করতে হবে। হয়তো স্যাভেজ ছাড়াও অন্যদের খোজও জানবে জুয়াড়ী…এ ধরনের লোক খুব সতর্ক হয়, হয়তো মুখই খুলবে না। কিন্তু জেমসের মনে হচ্ছে লেসলি উইলিয়ামসকে পটাতে অসুবিধা হবে না। অন্তত চেষ্টা করতে তো দোষ নেই।

পরদিন সন্ধের পরপরই সেলুনে গিয়ে ঢুকল জেমস। শনিবার বলে সরগরম হয়ে উঠেছে, পাঞ্চারদের সংখ্যাই বেশি। দেদার হুইস্কি আর সিগারেটের সদ্ব্যবহার করছে। জুয়াড়ীকে তার টেবিলে পাওয়া গেল, দুজনের সাথে খেলছে। এদের একজন হেনরী ক্রুশার। খেলায় মগ্ন সে, কোনদিকে তাকানোর ফুরসৎ নেই।

অন্য লোকটিকে দেখল জেমস-লম্বা, সুঠামদেহী। মোটামুটি সুদর্শন বলা চলে। বেশ পরিবর্তন হয়েছে চেহারায়, অন্তত ও যেভাবে জানে ঠিক সে-আদলে নেই আর। ছোট করে ছাঁটা পরিপাটি চুল, ক্ষৌরি করা মুখ। দামী জামাকাপড় তাকে অনেকটাই বদলে দিয়েছে। ভাল করে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। কিন্তু ক্যাল ইনগ্রসের দুর্ভাগ্য তার মুখটা জেমসের কাছে দারুণ আকাক্ষিত-এই মুখটা খুঁজে বের করার জন্যেই তিনটা বছর ঘুরে বেড়িয়েছে নানান জায়গায়।

ড্রিঙ্ক নিয়ে টুলে বসে ধীরে চুমুক দিল ও। ভুলেও তাকাচ্ছে না ওদের দিকে। নিশ্চিত হয়ে গেছে। তৃতীয়টাকেও নিশ্চয়ই আশপাশে পাওয়া যাবে।

লেসলি, তুমি নাকি কোন এক লোকের কাছে হেরে গেছ সেদিন? লোকটা চুরি করছিল? ভরাট গলায় বলল নতুন লোকটা। বেশ জোরের ওপর, জেমসের মনে হলো ওকে শুনিয়েই বলছে।

না, মি. লপার। ও সত্যি ভাল খেলে, উত্তরে বলল জুয়াড়ী।

আমরা তো খেলার লোকই পাচ্ছি না। আফসোস, আমার সাথে খেলতে চায়। কেউ।

ওরা হয়তো নিজেদের হীন অবস্থার কথা আগে ভাবে, তাছাড়া অযথা তোমার পকেট ভারী করা বোকামি মনে করে, হালকা সুরে মন্তব্য করল ক্রুশার। তাই বলে ভেবো না তোমার কাছ থেকে খসানোর খায়েশ ওদের একেবারেই নেই।

তোমার যেমন হয়?

দেখো, কেভ, হতাশ শোনাল ব্যাংকারের কণ্ঠ আমি কেবল আনন্দের জন্যে খেলি। তোমার সাথে খেলে আনন্দ আছে।

এটা নিশ্চয়ই বোঝাতে চাচ্ছ না যে হেরেও আনন্দ পাও তুমি?

কেভিন বা কেভলিন লপার…ক্যাল ইনগ্রস তাহলে এ নাম গায়ে চাপিয়েছে। অহঙ্কারী, আত্মবিশ্বাসী ও বিপজ্জনক—প্রথম দেখায় এটুকু উপসংহারে পৌঁছল জেমস।

আজ বোধহয় কাউকে পাব না, বলল জুয়াড়ী। তোমার কপাল মন্দ, মি. লপার।

ওকে ডাকছ না কেন? সহাস্যে বলল লপার।

কাকে?

তোমার পেছনেই আছে। দেখে সেদিনের বদলা নিতে পারো কি-না।

ঘুরে তাকিয়ে ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে জেমসকে দেখল, লেসলি উইলিয়ামস, তারপর ক্ষীণ হাসল। ইচ্ছে হলে আসতে পারো। অনেকক্ষণ ধরে একটা চেয়ার খালি পড়ে আছে।

ও কি খেলবে, ওর পকেটে তো টাকাই নেই! তাচ্ছিল্যের সাথে বলল হেনরী ক্রুশার। মিসেস বার্থেজের ক্যাফেতে সবচেয়ে সস্তা খাবারের ফরমাশ দিচ্ছিল সেদিন, ওর জন্যে সেটা এমন চড়া দামের হয়েছে যে ওদিকের পথ মাড়ায়নি আর। তারপর গতকাল কি ঘটেছিল, নবে? সাপ্লাই দিতে ক্যাফেতে গিয়েছিল ও, মিসেস বার্থেজ ওকে কফির আমন্ত্রণ জানিয়েছিল দুবার। ও ঢোকেনি। শেষে মহিলা বিরক্ত হয়ে ওকে আচ্ছামত বকাঝকা করেছে। তারপরও ভয় কাটেনি ওর। আমার সন্দেহ হচ্ছে ও হয়তো ভেবেছে কফি খাওয়ার পর মহিলা আবার টাকা দাবি করে বসে নাকি? সস্তা রসিকতায় নিজেই হেসে উঠল ব্যাংকার!

তুমি কিন্তু এভাবে বলতে পারো না, হেনরী, সহাস্যে অনুযোগ করল লপার। সবার তো আর তোমার মত একটা ব্যাংক নেই।

এই হারামজাদা ভবঘুরেগুলোকে দেখলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়!

ওদের আগ্রহ বোধহয় অন্য কোথাও, ইন্ধন যোগাচ্ছে লপার। বোধ করি কফি খাওয়ার উসিলায় সুন্দর একটা মুখ দেখতে যায়। বেরিয়ে আসার পর কেউ বলে না যে ওদের কফিটা খারাপ। তোমার বাপু কপাল মন্দ, তুমি তো আর মেয়েটাকে বিয়ে করোনি।

দেরিও নেই আর, ব্যাংকারের আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠ।

ওদেরকে বঞ্চিত করার জন্যে তাহলে তোমাকে অভিশাপ দেবে শহরের তাবৎ লোক।

তাতে আমার কি?

মাথা ঝাঁকাল লপার।

বিল মিটিয়ে উঠে দাঁড়াল জেমস, টেবিলের সামনে চলে এল। টের পেল সাবধানী দৃষ্টিতে ওকে দেখছে লপার, জুয়াড়ী ভাবলেশহীন। আর ক্রুশারকে গম্ভীর দেখাচ্ছে, প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে যে ওকে পছন্দ করেনি আক্রোশ ভরা চাহনিতে সেটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। চেয়ার টেনে বসে বারকিপারের দিকে তাকাল ও এক প্যাকেট নতুন তাস দাও, বব।

তুমি ভাবছ আমরা তাসে কিছু করেছি? মুখিয়ে উঠল ব্যাংকার।

আমি কি ভাবছি তাতে কিছু আসে-যায় তোমার, মি. শার? নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল জেমস।, খেলায় ভারসাম্য থাকার জন্যে নতুন তাস। এতে যদি রাজি না থাকো তো উঠে চলে যেতে পারো।

প্রথমে বিস্মিত হয়ে ওকে দেখল সে, তারপর রাগে ফেটে পড়ল। গায়ের জোরে চাপড় মেরে বসল টেবিলে। তুমি কে, অ্যালেন? একটা ভবঘুরে ছাড়া তো কিছু নও, অথচ এমন ভাব করছ যেন আমাদের কিনতে এসেছ?

তাই মনে হচ্ছে তোমার? বিদ্রুপের ভঙ্গিতে হাসল জেমস। শান্ত হয়ে বসো, মি. ক্রুশার। এখানে কোন মহিলা নেই, বুঝতেই পারছ আজ আর তোমাকে ছেড়ে কথা বলব না। তুমি যে-ই হও কেয়ার করি না আমি।

ঝট করে উঠে দাঁড়াল ব্যাংকার, পেছনে হেলে পড়ল চেয়ারটা। ফর্সা মুখ। থমথমে দেখাচ্ছে। নর্দমার কীট! কি পেয়েছ তুমি? তোমার মত লোককে শহর ছাড়া করতে এক ঘণ্টাও লাগবে না! চেচিয়ে বলল সে, সেলুনের সব লোক তাকিয়ে আছে।

বারকিপার তাস দিয়ে যেতে শাফল করতে শুরু করেছে লপার। নির্লিপ্ত দেখাচ্ছে তাকে, চোখ দেখে মনে হচ্ছে দুজনের বাধাবাধি উপভোগ করছে।

ওদিকে আগ্রহভরে ওদেরকে দেখছে জুয়াড়ী।

সিগারেট রোল করে ধরাল জেমস। মি. লপার, দয়া করে ওকে চুপ করতে বলবে? আমার ধৈর্য একেবারেই কম। এখানে আসার প্রথম দিন থেকেই আমার পিছু লেগেছে তোমাদের ব্যাংকার, অথচ সেদিনই ওকে প্রথম দেখলাম। অনর্থক ঝগড়া না করলে হয়তো আমরা বন্ধুও হতে পারতাম।

বন্ধু! তোমার মত হতচ্ছাড়া? রাগে ফেঁসফেঁস করছে ক্রুশার। এগিয়ে এসে হঠাৎ লাথি মারল জেমসের চেয়ারে, নড়েচড়ে উঠল সেটা। কিন্তু জেমসকে বিকারহীন দেখে পিত্তি জ্বলতে থাকল তার, আরেক পা এগিয়ে হাত চালাল এবার।

উঠে দাঁড়ানোর সময় ঘুসিটা কাঁধে নিল জেমস, অটল তার মজবুত শরীর। বাম হাত বাড়িয়ে চেপে ধরল ব্যাংকারের শার্টের কলার। তুমি খুব যন্ত্রণা করছ, মি, ক্রুশার! আমি তোমার ব্যাংক থেকে টাকা চুরি করিনি কিংবা তোমার পা-ও মাড়িয়ে দেইনি। অযথাই খেপছ কেন? এবার ডান হাত চালাল ও, ক্রুশারের চিবুকে লাগল ঘুসিটা। ধরে না রাখলে উড়ে যেত শরীরটা, কিন্তু এত কমে ছাড়তে রাজি নয় জেমস। অরক্ষিত নাকে চালাল পরের ঘুসি। নরম মাংসের সাথে সংঘর্ষের আওয়াজ আর ব্যাংকারের চিৎকার প্রশান্তি এনে দিল ওর শরীরে। পাঁচ হাত দূরে শক্ত মেঝেতে চিৎ হয়ে পড়ল সে, অবিশ্বাস আর আতঙ্কে চোখজোড়া বিস্ফারিত। দরদর করে রক্ত ঝরছে নাক থেকে, তা দেখে নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাল লোকটা। হাত বাড়াল কোমরে, পিস্তল বের করার আগেই তার কাছে পৌঁছে গেল জেমস। ক্রুশারের পিস্তল-ধরা হাতে পায়ের ভর চাপিয়ে দিল। চেঁচিয়ে উঠে অস্ত্র ছেড়ে দিল ব্যাংকার।

ঝুঁকে হেনরী ক্রুশারের শার্ট খামচে ধরে তাকে তুলল জেমস। টেনে নিয়ে চলল দেহটা। ঘিরে থাকা লোকজন সরে গিয়ে জায়গা করে দিল। পোর্চে চলে এল ও, কলার খামচে ধরে দাঁড় করাল ব্যাংকারকে। তারপর সর্বশক্তি দিয়ে ঘুসিটা হাঁকাল। উড়ে গিয়ে ধূলিময় রাস্তায় পড়ল সে, নিথর পড়ে থাকল।

ভেতরে ঢুকল জেমস, বিস্ময় আর সমীহের চোখে ওকে দেখছে অনেকগুলো কৌতূহলী মুখ। বারের কাছে এসে দাঁড়াল ও, ঠোঁট থেকে সিগারেট নামিয়ে ছাই ঝাড়ল।

চাপা হাসি লপারের মুখে! হেনরীর জন্যে দুঃখ হচ্ছে। কঠিন লোকের হাতে পড়ে গেছে ও এবার।

বলার আগেই গ্লাস এগিয়ে দিয়েছে বারকিপার। ওটা টেনে নিয়ে চুমুক দিল জেমস। জানে কিছুক্ষণের মধ্যে হাজির হয়ে পড়বে দানবটা।

রিক স্যাভেজের সাথে খানিক বাতচিৎ হলে মন্দ হয় না, ভাবল ও।

<

Super User