একটা টেবিলের উল্টোদিকে বসে আছে বারউইক, নোংরা স্থূলদেহী এক লোক। খোঁচা খোঁচা দাড়ির আড়ালে গাল আর থলথলে চিবুক ঢাকা পড়েছে। মাথার তুলনায় ছোট নাকটার দুপাশে খুব কাছাকাছি ভুরুহীন কুতকুতে চোখ দিয়ে দেখছে কেড্রিককে, অস্থির দৃষ্টি। বুক অবধি শার্টের বোতাম খোলা, কলারের পেছনে ঘামের কালচে দাগ স্পষ্ট। ময়লায় ভরাট প্রতিটি আঙুলের নখ।

কর্নেল কীথ আর গুন্টারের দিকে একবার তাকিয়ে আবার কেড্রিকের দিকে চোখ ফেরাল সে। বসো! বলল, এত দেরি হলো কেন? কাজের সময় দেরি করলে চলে! বিশাল মাথা, এবার গুন্টারের দিকে ফিরল। জন, এ লোকই আমাদের জমি থেকে হারামজাদাগুলোকে দূর করবে?

হ্যাঁ, ও-ই কেড্রিক, হড়বড়িয়ে বলল গুন্টার। বারউইককে রীতিমত ভয় করে বলে মনে হচ্ছে। কামরায় পা রাখার পর মুখ খোলে নি কর্নেল কীথ। গুটিয়ে নিয়েছে নিজেকে, যেন এখানে সে উপস্থিত নেই।

ও ছাড়া আর কেউ পারবে না! আবার বলল গুন্টার।

এক মুহূর্ত পর কেড্রিকের দিকে তাকাল বারউইক। মাথা দুলিয়ে গুন্টারের কথায় সায় দিল যেন। তোমার কথা অনেক শুনেছি। আন্তরিক কণ্ঠে বলল সে। ওদের প্রতি দরদ না দেখালে কাজটা তোমাকে দিয়ে হবে। আমাদের হাতে কিন্তু মোটেই সময় নেই! বুঝতে পারছ? আগেই ওদের একবার নোটিশ দেয়া হয়েছে। তুমি আরও একবার নোটিশ দাও, তার পরও যদি না যায়, ঝেঁটিয়ে বিদায় করো কিংবা কবর দিয়ে দাও। কোনটা করবে, তোমার ইচ্ছে; আমার কিছু বলার নেই। আমি কিছু জিজ্ঞেস করতে যাব না। একটু থেমে আবার খেই ধরল সে। কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেদিকেও খেয়াল, রাখব; এখানে কী ঘটবে না ঘটবে, আমাদের ওপরই নির্ভর করছে।

মন থেকে কেড্রিককে ঝেড়ে ফেলে এবার জন গুন্টারের দিকে মনোযোগ দিল বারউইক। জন, তোমাকে যে কাজ দিয়েছিলাম করেছ? পঞ্চাশজন লোকের দুমাসের মতো খাবারের ব্যবস্থা হচ্ছে? জায়গাটা খালি হওয়ামাত্রই আমি কাজে নামতে চাই। যত দ্রুত কাজ শুরু করা যায় ততই আমাদের লাভ। মুহূর্তের জন্যে কাজে বাধা পড়ক চাই না আমি।

ঝট করে ঘাড় ফিরিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে কেড্রিকের দিকে তাকাল বারউইক। দশ দিন! দশ দিন সময় দিচ্ছি তোমাকে! কিন্তু পাঁচ দিনের বেশি লাগলৈ আমি কিন্তু দুঃখ পাব। তোমার পক্ষে যদি না কুলোয়, ডরনি শকে ছেড়ে দিয়ো, এক হাত দেখিয়ে দেবে ও! আচমকা সশব্দে হেসে উঠল বারউইক। হ্যাঁ, ডরনি শই দেখিয়ে দেবে!

হাসি থামিয়ে ডেস্কের কাগজপত্রে মনোযোগ দিল ও, কেড্রিকের দিকে না তাকিয়েই বলল, তুমি এবার যেতে পারো, কেড্রিক। ডরনি, তুমিও!

একটু ইতস্তত করে উঠে দাঁড়াল কেড্রিক। মোট কতজন, লোক আছে ওখানে? হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসল ও, ছেলে-মেয়ে আছে কারও?

সন্ত্রস্ত চেহারায় ওর দিকে তাকাল গুন্টার। আমি তোমাকে সব কিছু খুলে বলব, পল! পরে তোমার সঙ্গে কথা বলব।

কাঁধ ঝাঁকাল কেড্রিক, টুপি তুলে নিয়ে কামরা থেকে বেরিয়ে এল। ইতিমধ্যে উধাও হয়েছে ডরনি শ। বারান্দায় এসে কেড্রিক দেখল সামান্থা ফক্স তখনও বসে, বইয়ের ওপর দিয়ে ধূলি-ধূসর রাস্তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে।

টুপি হাতে থমকে দাঁড়াল কেড্রিক। মাস্ট্যাংয়ে এসেছ কদিন হলো, ম্যাম?

চোখ তুলে তাকাল সামান্থা, অনেকক্ষণ ধরে জরিপ করল ওকে, তারপর বলল, এই তো কয়েকদিন। কিন্তু এরই মধ্যে, কাকে পছন্দ করা উচিত আর কাকে ঘৃণা, শিখে ফেলেছি। পর্বতমালার দিকে একনজর তাকিয়ে আবার কেড্রিকের দিকে ফিরল সামান্থা। এই দেশটাকে আমি পছন্দ করি, ক্যাপ্টেন, আমার কথা বুঝতে পারছ?

আমি শহুরে মেয়ে, শহরেই জন্ম, বেড়ে ওঠা; কিন্তু এখানে আসার পর লাল পাহাড়, মেসা, মরুভূমি আর ইন্ডিয়ান পনি দেখে-বিশ্বাস করো, এ দেশের প্রেমে পড়ে গেছি! এখন মনে হয় এটাই আমার দেশ। ইচ্ছে করছে চিরদিন এখানে থেকে যাই। অবাক দৃষ্টিতে আবার সামান্থাকে জরিপ করল কেড্রিক। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, সামান্থাকে ওর ভালো লেগেছে। মাঝে মাঝে আমারও এ-রকম ইচ্ছা করে। কিন্তু কী যেন ঘৃণা করার কথাও বলছিলে? এই-দেশকে পছন্দ করো, এবার বল, ঘৃণা করো, কাকে?

যারা দেশটার ক্ষতি করছে। এদের কেউ এখানেই জন্ম নিয়েছে, কেউ ভিনদেশী, একসঙ্গে হাত মিলিয়ে, নিরপরাধ কিছু লোককে ঘরবাড়ি থেকে উৎখাত করে তাদের জমিজমা কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করছে অথচ ওরাই সত্যিকার মানুষ, ওদের মাঝে ঘোরপ্যাঁচ বা জটিলতা নেই। বিস্ময়ের মাত্রা ক্রমেই বাড়ছে কেড্রিকের, রেলিংয়ে ভর দিয়ে দাঁড়াল ও। তোমার কথা ঠিক বুঝতে পারলাম না, মিস ফক্স। আমি এখানে নতুন এসেছি বটে, কিন্তু এমন কারও দেখা তো পাই নি!

আবার সহজ শান্ত দৃষ্টিতে কেড্রিকের দিকে তাকাল সামান্থা ফক্স। বই বন্ধ করে আস্তে আস্তে উঠে দাড়াল, তারপর পা বাড়াল দরজার দিকে। তাই নাকি, ক্যাপ্টেন? ঠাণ্ডা কণ্ঠে বলল সে। ঠিক জানো? এই মুহূর্তে তোমাকেই তো তাদের একজন বলে মনে হচ্ছে আমার! কথা শেষ করেই ঘরে ঢুকে, পড়ল মেয়েটা।

সামান্থার গমনপথের দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল কেড্রিক। চোখে মুখে চিন্তার ছাপ পড়ল। অবশেষে সিঁড়ি বেয়ে বারান্দা থেকে নেমে এল ও। কী বোঝাতে চাইল মেয়েটা? ওকে সে কতখানি চেনে? কী করে ওর সম্পর্কে এরকম অদ্ভুত ধারণা জন্ম নিল তার মনে? অস্বস্তি, বিরক্তি বোধ করছে কেড্রিক। পিটার্সের ক্রুদ্ধ চেহারা মনে পড়তেই নতুন উপাদান যোগ হলো ওর ভাবনায়। জন গুন্টারের ভাগ্নী হওয়া সত্ত্বেও সামান্থা ফক্স পিটার্সের মতো কথা বলছে কেন? তবে ওদের মতামত যে ভিন্ন সূত্র থেকে জন্ম লাভ করেছে তাতে সন্দেহ নেই।

চিন্তিত মনে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় উঠে এল কেড্রিক, থেমে এদিক-ওদিক তাকাল।

এখনও পশ্চিমা পোশাক পরে নি ও। ফ্ল্যাট-ক্রাউন, ফ্ল্যাট ব্রীমের টুপি রয়েছে মাথায়, পরনে নিখুঁত ছাঁটের ধূসর স্যুট, পায়ে কালো পশ্চিমা তোর বুট। মোড়ে দাঁড়িয়ে ধীরে সুস্থে সিগারেট রোল করে ঠোঁটে ঝোলাল ও, দেশলাই জ্বেলে ধরাল। দুচোখে সতর্ক দৃষ্টি।

রাস্তার প্রতিটি মানুষ, নারী-পুরুষ একাধিকবার দেখছে ওকে। ওর মিলিটারি-সুলভ ঋজুতা, চওড়া কাঁধ, প্রশান্ত চেহারা আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েছে ওকে। হাতের কাজের কথা ভুলে গিয়ে কর্মব্যস্ত রাস্তার সীমাহীন উত্তেজনায় নিজেকে হারিয়ে ফেলল কেড্রিক। অসংখ্য নারী-পুরুষ যেন অজানা কারণে একই স্রোতে মিশে গেছে এখানে এসে।

আর কিছু না হোক, পশ্চিম যেন মানুষের অপরূপ এক মিলন ক্ষেত্র। সোনা, নতুন জমি আর রোমাঞ্চের অন্বেষায় অভিযাত্রীরা আসছে এখানে; আসছে জুয়াড়ী আর পৃথিবীর প্রাচীনতম পেশার নারী, চোর-ডাকাত, বন্দুকবাজ, গরু-চোর, ঘোড়াচোর, মাইনার, কাউহ্যান্ড, ফ্রেইটার আর ভবঘুরে। সব রকম মানুষের উপস্থিতি রয়েছে রাস্তায়।

সবাই প্রকাশ্যে কোমরে পিস্তল ঝুলিয়ে রেখেছে। প্রয়োজনে ওগুলো ব্যবহার করবে ওরা। খালিহাতে মারপিট করার মতো লোকও আছে এখানে, যদিও সংখ্যায় কম।

আচমকা দীর্ঘদেহী এক লোক জনস্রোত থেকে ছিটকে বেরিয়ে এল। কেড্রিক তাকাতেই চোখাচোখি হলো ওর সঙ্গে। নিঃসন্দেহে, এতক্ষণ মদ গিলছিল লোকটা, এখন ঝামেলার খোঁজে বেরিয়েছে। বেছে নিয়েছে কেড্রিককে। হঠাৎ উত্তেজনার আঁচ পেয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল পথিকেরা। দেখতে দেখতে ভিড় জমে উঠল।

আচ্ছা? দুপা ফাঁক করে দাঁড়াল লোকটা। শার্টের হাতা গুটিয়ে কনুই অবধি তোলা, পেশীবহুল দুটি লোমশ হাত দেখা যাচ্ছে। তুমিও ওদের সঙ্গে যোগ দিয়েছ! আমাদের জমি দখল করতে চাও! হঠাৎ সশব্দে হেসে উঠল লোকটা। কিন্তু এখন খুনীর বাচ্চাটা সঙ্গে নেই, তোমাকে পিটিয়ে লাশ করব আমি। কই, লাগো।

মুখের ভেতরটা খটখটে লাগছে, কিন্তু কেড্রিকের দৃষ্টি স্থির। ডান হাতে, সিগারেট ধরে ঠোঁটে ঝোলানোর ভঙ্গি করল ও। দুঃখিত আমার কাছে পিস্তল নেই, আর থাকলেও শুধু শুধু তোমাকে হত্যা করতাম না। জমির ব্যাপারে ভুল হচ্ছে তোমার। কোম্পানির দাবীই বৈধ।

তাই নাকি? এক কদম সামনে বাড়ল লোকটা, পিস্তলের বাঁট স্পর্শ করল তার হাত। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আবাদী জমি গড়েছি আমরা, সেখান, থেকে বৌ-বাচ্চাসহ আমাদের উত্থাত করে পথে বসানোকে বৈধ বলছ?

মাতাল হলেও লোকটার চেহারায় স্পষ্ট ভীতি আর আতঙ্কের ছায়া দেখতে পাচ্ছে কেড্রিক। কিন্তু ওকে কিংবা ডরনিকে ভয় করছে না সে, ভীতু নয় লোকটা, আসলে পরিবারের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। কথাটা মনে হতেই চমকে উঠল কেড্রিক, অস্বস্তি ভর করল ওর ওপর। কাজটা হাতে নিয়ে ভুল হলো না তো?

ভিড় থেকে অশ্রাব্য গালিগালাজ ভেসে এল। বোঝা যাচ্ছে, জনতা কেড্রিকের নয়, বিশালদেহী লোকটার পক্ষে।

হঠাৎ গুঞ্জনের মাত্রা বেড়ে গেল, আলোড়ন দেখা দিল ভিড়ে। তার পর আচমকা নীরবতা নামল। চাপা কণ্ঠে পাশ থেকে কে যেন বলে উঠল, সাবধান, বার্ট! ডরনি শ আসছে!

সহসা পাশে ডরনি শয়ের উপস্থিতি অনুভব করল কেড্রিক। আমার হাতে ওকে ছেড়ে দাও, ক্যাপন, নিচু কণ্ঠে বলল ডরনি, ব্যাটাকে শায়েস্তা করে দিচ্ছি।

সহজ কণ্ঠে জবাব দিল কেড্রিক। না! তুমি সরে যাও, শ। এটা আমার লড়াই, আমাকেই সামলাতে দাও!

কিন্তু তোমার কাছে পিস্তল নেই! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে প্রতিবাদ করল ডরনি শ।

পিছিয়ে যাবার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বার্টের মাঝে। ডরনি শয়ের উপস্থিতি তাকে থমকে দিলেও ভয় পায় নি। পিটার্সের মতো হার মানতে রাজি নয় ও সতর্ক দৃষ্টিতে একবার উরনি শ আরেকবার কেড্রিকের দিকে তাকাচ্ছে বাট। সহজভাবে এক কদম সামনে বাড়ল কেড্রিক। হাত বাড়ালেই এখন ওকে। ছুঁতে পারবে বার্ট।

শ এই লড়াইয়ের বাইরে, বার্ট, শান্ত কণ্ঠে বলল পল কেড্রিক। তোমার সঙ্গে আমার কোনওরকম শত্রুতা নেই, কিন্তু তোমাকে নিরাশ করব না। আমার সঙ্গে অস্ত্র ছিল না বলে লাগতে পারছ না-এ কথা মনে ঠাই দিয়ো না। অস্ত্র ছাড়াও লড়াই করা যায়। আমি মারপিট করতে চাই নি, তুমিই যখন সেধে লাগতে এসেছ-তা হলে আর দেরি কেন?

বার্টের চোখে সন্দেহ ফুটে উঠেছে। এ ধরনের ধোপদুরস্ত পোশাক পরা লোকদের হাতে হাওয়া থেকে পিস্তল উঠে আসে, বহুবার দেখেছে সে। নিরস্ত্র অবস্থায় কেড্রিক ওকে মোকাবিলা করতে আসবে, ভাবে নি!

তোমার কাছে নিশ্চয়ই লুকোনো পিস্তল আছে! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল বার্ট।

ঝট করে হোলস্টার থেকে পিস্তল বের করল সে, সাথে সাথে নড়ে উঠল পল কেড্রিক। বাঁ হাতের প্রান্ত দিয়ে কোপ মারার ভঙ্গিতে আঘাত করল লোক্টার পিস্তল ধরা কজিতে। আরও একটু সামনে এগোল, পরক্ষণে শরীরের সব শক্তি এক করে আধমণি এক ঘুসি ঝেড়ে দিল প্রতিপক্ষের চোয়ালে। চোখ ধাঁধানো মাপা ঘুসি, ঘোড়ার পিঠে সপাং করে চাবুকের বাড়ি পড়ল যেন। পিস্তলের সঙ্গে পটকান খেয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ল বার্ট

সহজ ভঙ্গিতে সামনে ঝুঁকে বার্টের পিস্তল তুলে নিল কেড্রিক, ১৮৫১ মডেলের নেভী রিভলবার। বার্টের সামনে দাঁড়িয়ে জনতার ওপর সন্ধানী দৃষ্টি বোলাল ও। নিরাবেগ, কঠিন চেহারায় ওকে দেখছে প্রতিটি লোক। আবার রার্টের দিকে চোখ ফেরাল কেড্রিক। আস্তে আস্তে উঠে বসেছে লোকটা, প্রবল বেগে মাথা নাড়ছে। ডানহাতে ভর দিয়ে উঠতে গিয়ে হঠাৎ যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠল। বিস্ফারিত চোখে একবার হাতের দিকে তাকিয়ে কেড্রিকের দিকে চোখ ফেরাল বার্ট। আমার হাত ভেঙে দিয়েছ তুমি! বলল সে, গুঁড়িয়ে গেছে। এখন লাঙ্গল চালাব কী করে!

ওঠ, আস্তে করে বলল কেড্রিক। আমার দোষ নেই, তুমিই গায়ে পড়ে লাগতে এসেছিলে।

উঠে দাঁড়াল বার্ট। পিস্তলটা বাড়িয়ে ধরল কেড্রিক। সিক্স-শুটারের মালের ওপর দিয়ে কেড্রিকের দিকে তাকাল বার্ট। কেড্রিক মুচকি হাসল।

ধরো, হোলস্টারে ঢোকাও। জানি, আমার ভয় পাবার কিছু নেই। আর যাই হও, অন্তত পেছন থেকে গুলি করার মতো খারাপ তুমি নও।

ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াল কেড্রিক। হাঁটতে শুরু করল। সেইন্ট জেমস-এর সামনে এসে থামল। কাগজ তামাক বের করে সিগারেট রোল করতে শুরু করল, মৃদু কঁপছে আঙুলগুলো।

দারুণ! ডরনি শয়ের নরম গলা। কৌতূহলী দৃষ্টিতে কেড্রিককে মাপছে সে। জীবনে এই প্রথম দেখলাম! এক থাপ্পড়ে কাজ সারা!

কীথকে সঙ্গে নিয়ে জন গুন্টারও হাজির হয়েছে। উঁত বের করে হাসল গুন্টার। আমরাও দেখেছি। এমন হলে আর কাউকে মারতে হবে না। টম স্মীথের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে আমার। ওল্ড বীয়ার ক্রিক টম ট্রেইলে খালিহাতে বহু গুণ্ডা পাণ্ডাদের মোকাবিলা করেছে। ও কখনও অস্ত্র ব্যবহার করত না।

লোকটা পিস্তল কেড়ে নিয়ে গুলি করত যদি? জিজ্ঞেস করল কীথ।

কাঁধ ঝাঁকাল কেড্রিক, কথা বাড়াতে ইচ্ছে করছে না। সুযোগই পেত না, শান্ত কণ্ঠে বলল ও, তবে তারও ওষুধ আছে।

রাতে ওরা তোমার সঙ্গে দেখা করতে আসবে, পল, জানাল জন গুন্টার। ডরনিকে দিয়ে শ্যাড, ফেসেনডেনসহ সবাইকে খবর দিয়েছি। কাল একবার ওখানে যাচ্ছ তোমরা। কাজটা শুরু করা আরকি। চার-পাঁচজন সঙ্গী নিয়ে একটা চক্কর মেরে আসবে। যাতে ওরা বুঝতে পারে, মিথ্যে হুমকি দেই নি আমরা।

মাথা দোলাল কেড্রিক। আরও কিছু সময় গুন্টারের সঙ্গে আলাপ করে বিদায় নিয়ে হোটেলে নিজের কামরায় চলে এল ও। আসলে, ভাবল কেড্রিক, পশ্চিম এখনও আগের মতোই আছে;, সব কিছু এখনও চোখের পলকে ঘটে যায় এখানে।

একে একে কোট, ওয়েইস্ট কোট, ভেস্ট, বুট খুলে ফেলল কেড্রিক। শুধু প্যান্ট পরে বিছানায় বসল। ব্যাগটা খুলল টেনে নিয়ে। একটু খুঁজতেই বেরিয়ে পড়ল চকচকে দুটো হোলস্টার আর গানবেল্ট; দুই হোলস্টারে দুটো পয়েন্ট ফোর-ফোর রাশান পিস্তল, রুশ সেনাবাহিনীর জন্যে বিশেষ ফরমাশে স্মীথ অ্যান্ড ওয়েসন তৈরি করেছিল এগুলো; এই মুহূর্তে বাজারের সেরা অস্ত্র। যত্নের সঙ্গে পিস্তলজোড়া পরখ করে আবার হোলস্টারে ঢোকাল কেড্রক, তার পর হোলস্টারে ভরে একপাশে সরিয়ে রাখল। এবার ব্যাগ থেকে গানবেল্ট আর হোলস্টারসহ আরও দুটো পিস্তল বের করল। পয়েন্ট-থ্রি-সিক্স ক্যালিবারের ওয়েলশ টুয়েলভূ-শট-নেভী-পিস্তল। দেখতে হুবহু ফ্রন্টিয়ার কোল্ট কিংবা পয়েন্ট-ফোর-ফোর-রাশানের মতোই।

এই জিনিস পশ্চিমে তেমন চোখে পড়ে না, পছন্দ করে না কেউ; কিন্তু বেশ কয়েকবার এগুলো ব্যবহার করতে হয়েছে কেড্রিককে, চমৎকার কাজ দেয়। অতিরিক্ত গুলি থাকায় প্রায়ই বিশেষ সুবিধে লাভ করেছে ও। ভালো মার্কসম্যানের হাতে পড়লে পয়েন্ট-ফোর-ফোর-রাশানের মতোই নির্ভুল লক্ষ্য ভেদ করতে পারে।

তবে যে কোনও জিনিস ব্যবহারের উপযুক্ত সময় এবং স্থান আছে; এ দুটো পিস্তল বিশেষ অবস্থার জন্যে তুলে রেখেছে ও। সাবধানে পিস্তল দুটো আবার কাপড় জড়িয়ে ব্যাগের একেবারে তলায় লুকিয়ে রাখল কেড্রিক। কোমরে ঝোলাল পয়েন্ট ফোর-ফোর রাশানজোড়া। উইনচেস্টারটা বের করে সাফ করার পর গুলি ভরে নিল। তারপর বিছানায় বসে গানবেল্ট খুলে শোবার আয়োজন করবে, হঠাৎ মৃদু টোকা পড়ল দরজায়।

এসো, বলল কেড্রিক। শত্রু হলে তোমার চেহারাটা একবার দেখতে চাই।

চোখের পলকে দরজাটা খুলেই আবার বন্ধ হয়ে গেল। দরজার সামনে কেড্রিকের মুখোমুখি দাঁড়াল আগন্তুক, লম্বায় পাঁচ ফুট ইঞ্চিচারেক হবে, চওড়াও বিশাল; মেদহীন পেশীবহুল শরীর; প্রশস্ত বাদামি মুখটা দেখে মনে হয়, গাছের গুঁড়ি কুঁদে বের করা হয়েছে; ছোট করে ছাঁটা কালো চুল সেঁটে আছে খুলির সঙ্গে; মোটাসোটা গর্দান চওড়া কাঁধের সঙ্গে মিশে গেছে। কোমরের বাম দিকে একটা পিস্তল ঝোলানো, হাতে চিকন কিনারার টুপ। ঘোরাচ্ছে।

এক লাফে উঠে দাঁড়াল কেড্রিক। ডাই! প্রচণ্ড বিস্ফোরণ ঘটল যেন কামরায়। ডাই রীড! তুমি এখানে!

হাহ? তা হলে তুমিই আমাদের এত বিপদের কারণ?

আমি? ইঙ্গিতে ডাই রীডকে চেয়ারে বসতে বলল কেড্রিক। কীভাবে?

ভালো করে ওকে জরিপ করল ওয়েলশম্যান ডাই রীড, তারপর চেয়ারে বসে হাঁটুর ওপর বিশাল থাবা রেখে সামনে ঝুঁকে এল। ঈষৎ বাকানো পেশীবহুল পা দুটো এক নজর দেখল কেড্রিক।

তুমি বারউইকের দলে যোগ দিতে আস নি? ঘর বাড়ি থেকে আমাদের উচ্ছেদ করার কাজ নাও নি? অনেক বদলে গেছ তুমি, পল, নষ্ট হয়ে গেছ!

তুমি ওদের একজন? বারউইকরা যে জমির মালিকানা দাবী করছে। সেখানে থাকে?

হ্যাঁ। গায়ে খেটে সেখানে ফসল ফলিয়েছি। এখন শয়তানের বাচ্চারা দূর করে দিতে চাইছে। কিন্তু তার আগে লড়াইতে নামতে হবে ওদের-আর, পল, ওদের দলে থাকলে তুমিও রেহাই পাবে না, কথাটা মনে রেখো।

চিন্তিত চেহারায় ডাই রীড়ের দিকে তাকাল কেড্রিক। চরমে পৌঁছেছে ওর সন্দেহ…এই লোক ওর পরিচিত। কেড্রিকের বাবা ওয়েলশ ছিলেন, মা ছিলেন আইরিশ-ডাই রীড ওদেরই বন্ধু। বাবার সঙ্গে দেশ ছেড়ে এখানে আসে ডাই রীড। মা আর বাবার যখন বিয়ে হয় বাবার সঙ্গেই কাজ করত ও। মাইকেল কেড্রিকের চেয়ে বয়েস ছোট হলেও তার বন্ধু হিসেবেই পশ্চিমে এসেছিল।

ডাই, আস্তে করে বলল কেড্রিক, স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি, আজ এমন কিছু ঘটনা ঘটেছে, পুরো ব্যাপারটা সম্পর্কে সংশয় জেগেছে আমার মনে। আসলে কি জানো, যুদ্ধের কিছুদিন পর গুন্টারের সঙ্গে আমার পরিচয়, ওর অনুরোধে ওরই এক বন্ধুর গরু নিয়ে গিয়েছিলাম আমি। সেই বছর খুব গোলমাল যাচ্ছিল, ইন্ডিয়ানরা প্রায় প্রতিটি গরুর পালে হামলা চালাত, যত ইচ্ছে গরু কেড়ে নিত; আর ছিনতাইবাজরা চেষ্টা করত পুরো পালটাই ছিনিয়ে নিতে। কেউ কেউ ওদের জমির ওপর দিয়ে গরু যাচেছ বলে মোটা অংকের টাকা দাবী করত। এমন একটা পরিস্থিতিতে আমি ইন্ডিয়ানদের, ওদের দাবী অনুযায়ী নয়, আমার ইচ্ছে মতো অল্প কটা গরু দিয়ে প্রায় বিনা লোকসানে গরুর পাল গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছিলাম।

সে কথা গুন্টার ভোলে নি, তা ছাড়া যুদ্ধে আমার কিছু সাফল্যের কথাও তার জানা ছিল। তাই আমার কাছে আবার একটা কাজের প্রস্তাব নিয়ে যায়। নিউ অরলিন্সে সে আমাকে এ কাজের প্রস্তাব দেয়, আমার কাছে তখন মোটেই খারাপ কিছু মনে হয় নি। গুন্টার আমাকে কী বলেছে শোনো।

ওর ফার্ম মানে, বারউইক গুন্টার অ্যান্ড কীথ, তিন হাজার সেকশন জমি জরিপের পর কেনার উদ্দেশ্যে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল। ওরা হলফনামায় বলেছে জায়গাটা জলাভূমি, প্রায়ই এখানে বন্যা দেখা দেয়। ওদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে জেনারেল ল্যান্ড অফিস ঘোষণা করেছে, ফসলের মৌসুমে যেহেতু জায়গাটা পানির নীচে থাকে এবং পরে জলসেচের প্রয়োজন হয়, তাই একে জলাভূমি হিসেবে বিক্রি করে দেয়া যায়।

গুন্টার আরও বলেছে, ওরা জমি কেনার কাজ শেষ করে এনেছিল, কিন্তু হঠাৎ একদল লোক ওখানে এসে জেঁকে বসেছে, কিছুতেই সরানো যাচ্ছে না, ওদের নানাভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু কাজ হয় নি। জায়গাটা ঝামেলামুক্ত করতে কিছু লোকের নেতৃত্ব দিতে হবে আমাকে। গুন্টার আমায় জানায়, স্কোয়ার্টারদের অধিকাংশ লোক গরু চোর, আউট-ল কিংবা দেশদ্রোহী। লড়াই ছাড়া ওদের উৎখাত করার অন্য কোনও উপায় নেই, সে জন্যেই আমাকে দরকার।

মাথা কঁকাল ডাই রীড়। ঠিকই বলেছে, লড়াই ছাড়া উপায় নেই; কিন্তু আমাদের মধ্যে চোর-ডাকাত পাবে না। না, ভুল হলো, পাইপ বরাবর কেড্রিকের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসল সে, পাবে, নেহাত হাতে গোনা এক আধ জন। সব ঝুড়িতেই পচা ডিম থাকে। বলে চলল ডাই রীড। কিন্তু বাকি সবাই সৎ মানুষ, ঘর বানিয়েছি, ফসল ফলাচ্ছি।

আচ্ছা, হলফনামায় যে জায়গাটা জনবসতিহীন বলে উল্লেখ করেছে ওরা, সেটা তোমাকে বলেছে গুন্টার?…বলে নি। তা হলে শোনো। ওখানে চুরানব্বই সেকসন জমির ওপর ঘরবাড়ি আছে, ভাঙা-চোরা হতে পারে, কিন্তু তবুও ঘর।

ভেবে চিন্তে মাঠে নেমেছে ওরা, বুঝলে! খাস জমি কেনার ছমাস আগে নোটিশ জারি করার নিয়ম। ওরা নোটিশ জারি করিয়েছে ঠিকই, কিন্তু এমন জায়গায় আর এত ছোট ছোট হরফে যে, কারও চোখে পড়ার উপায় নেই। এবং সত্যি সত্যি তিনমাস যাবার আগে কারও চোখে পড়ে নি। পরে, নেহাত ঘটনাচক্রে, দেখতে পেয়েছে একজন এখন গায়ের জোরে আমাদের তাড়ানোর চেষ্টা করছে ওরা, যাতে জায়গাটা বিনা বাধায় ওদের হাতে যায়। আর জলাভূমির কথা বললে, দেখলৈ বুঝবে, জায়গাটা আগাগোড়া মরুভূমি। দুএক জায়গায় সামান্য পানি আছে, ওখানেই যা একটু ফসল ফলে।

মাথা দোলাল ডাই রীড, ছোট ডটঅলা পাইপটা থেকে ছাই ঝাড়ল। ওদের মোকাবিলা করব, সে টাকা আমাদের নেই। আমাদের সঙ্গে উকিলও নেই: কাজে লাগতে পারে তেমন মানুষ একজনই আছে, এক খবরকাগজঅলা, কিন্তু খালিহাতে তাকে ওয়াশিংটনে পাঠিয়ে ফায়দা কী?

ভার হয়ে আছে ডাই রীডের চেহারা। ওদের সঙ্গে পেরে ওঠা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। শয়তানদের টাকার অভাব নেই, প্রচুর গুণ্ডা-পাণ্ডা ভাড়া করেছে। কিন্তু দেখো, ওদের অনেকের রক্তে আমাদের মাটি লাল হবে, রক্ত দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে ওদের। আমরা চেষ্টা করব যাতে শুধু ভাড়াটে গানহ্যান্ডরা নয়, দুএকটা রুই কাতলাও মারা পড়ে। ওদের সঙ্গে থাকলে তোমাকেও ছাড়া হবে না, বয়!

ভাবছে, কেড্রিক। তুমি একেবারে উল্টো কাহিনী শোনালে। আমাকে একটু ভাবতে হবে। আর হ্যাঁ, কাল আমরা চেহারা দেখাতে যাচ্ছি ওখানে, এই সুযোগে জায়গাটা নিজের চোখে দেখব।

ঝট করে তাকাল ডাই রীড। ওদের সঙ্গে যেয়ো না! ওখানে গেলে কাউকে জ্যান্ত ফিরতে দেব না, ঠিক করেছি আমরা!

শোনো, ডাই! সামনে ঝুঁকে এল কেড্রিক। আপাতত তোমাদের এই পরিকল্পনা স্থগিত রাখতে হবে। আমরা কেবল শক্তি দেখাতে যাব ওখানে, হুমকি দেব, ব্যস; কিন্তু, কথা দিচ্ছি, আমাদের তরফ থেকে একটা গুলিও ছোড়া হবে না। আমরা যাব, ঘুরে ফিরে চলে আসব। গোলাগুলি হলে সেজন্যে তোমার লোকেরাই দায়ী থাকবে। তুমি জলদি যাও, ওদের শান্ত করো। ওদের বল আমাকে একবার জায়গাটা দেখার সুযোগ দিতে।

আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়াল ডাই রীড। বাব্বাহ, এদ্দিন পর তোমাকে দেখে কী যে খুশি হয়েছি বোঝাতে পারব না। অবস্থা অন্যরকম হলে আগের মতো তোমাকে বাড়ি নিয়ে নিজের হাতে খাওয়াতাম, তাস খেলতাম। আমার বউকে দেখলে অবাক হয়ে যেতে তুমি!।

তুমি বিয়ে করেছ? বলো কী। কেড্রিকের কণ্ঠে অবিশ্বাস! আমার মোটই বিশ্বাস হচ্ছে না।

দাঁত বের করে হাসল ডাই রীড। বিয়ে করেছি এবং খুব সুখে আছি, পল, হঠাৎ বিষণ্ণ হয়ে গেল তার চেহারা। ঘর-দোর বাঁচাতে পারলে আরও অনেক দিন সুখে থাকতে পারতাম। তা বোধ হয় আর হলো না। তবে একটা কথা জেনে রাখো, খোদার কসম বলছি, আমাকে না মেরে কেউ আমার জমি কেড়ে নিতে পারবে না। আর একা মরব না আমি, কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যাব!

ডাই রীড বিদায় নেবার অনেকক্ষণ পরেও বিছানায় বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল কেড্রিক। সামান্থাও কি এরকম কিছু বলতে চেয়েছিল? কোন্ পক্ষে আছে মেয়েটা? সবার আগে বিবাদের জায়গায় গিয়ে নিজের চোখে দেখা দরকার সব কিছু, তারপর আবার গুন্টারের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। মনে মনে লোকগুলোর চেহারা উল্টেপাল্টে দেখল,ও।

কীথ…নেকড়ের মতো হিংস্র ঠাণ্ডা চেহারা। বারউইকথলথলে চেহারা, তাতে কঠোর সর্বগ্রাসী কর্তৃত্বের ছাপ।

গুন্টার বন্ধুসুলভ অমায়িক চেহারা, কিন্তু পাশাপাশি প্রচ্ছন্ন ধূর্ততার ছাপ আছে না?

বাইরে থেকে টিনপ্যানি পিয়ানোর বাজনা ভেসে আসছে, মেয়েলি কণ্ঠের গান শোনা যাচ্ছে। জুয়ার টেবিলে চিপস পড়ার শব্দ হচ্ছে। কানে আসছে বুটের খটখট, স্পারের ঝুনঝুন-ক্রমাগত ঘুরে বেড়াচ্ছে লোকজন।

উঠে দাঁড়াল পল কেড্রিক। শার্ট গায়ে দিয়ে কোমরে গানবেল্ট বেঁধে নিল। তারপর দরজা খুলে বেরিয়ে এল। করিডর ধরে পা বাড়াল লবির উদ্দেশে।

পাশের কামরার দরজা খুলে গেছে। দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ওকে দেখছে এক লোক!

ডরনি শ।

<

Super User