পরিস্থিতি বুঝে নিতে দেরি হলো না অশ্বারোহীর। বিশগজ দূরে থাকতেই ঘোড়ার গতি কমিয়ে হাঁটার সমান করে ফেলল সে। যেকোন সময়ে কিছু একটা করে বসবে।

এগিয়ে আসতে থাকো, ডাক দিল ব্যাগলে। কোমরের কাছ থেকে হাত সরিয়ে রাখবে।

ঘোড়াটা একেবারেই থামিয়ে ফেলল যুবক। ওখান থেকেই হাঁক ছাড়ল, আমি বরং এখান থেকেই সুযোগ নেব।

মাথা দোলাল ব্যাগলে। নিতে পার, কিন্তু যদি নাও, লিউ ডিলনকে খতম করে দেব আমি। শুনলাম ও নাকি এই শহরের সবচেয়ে দামী লোক। ঝুঁকিটা নেবে তুমি?

গলা ছেড়ে হেসে উঠল যুবক। আন্তরিক উদার হাসিতে কাঁপছে তার দেহ। বেনন আর ব্যাগলেকে অবাক করে দিয়ে দরাজ গলায় বলে উঠল, ওকে যদি খতম করে দাও তাহলে বিরাট এক ঋণের হাত থেকে বেঁচে যাব আমি। আজকেই টাকাটা ওকে দিতে শহরে এসেছি, বুঝলে? হাত বাড়াব নাকি অস্ত্রের দিকে?

প্রথম দর্শনেই বেনন আর ব্যাগলের ভাল লেগে গেল আন্তরিক যুবককে। সতর্কতায় ঢিল না দিয়ে আরও ভাল করে লক্ষ করল ওরা তাকে। বয়স হবে। বড়জোর পঁচিশ। মাঝারি আকৃতি, দড়ির মতো পাকানো দেহ, কালো চুল, চোখ দুটো নীল, অলস দৃষ্টি তাতে। মুখে রসিকতার ছাপ, কিন্তু চিবুকটা দেখলে বোঝা যায় এই লোকের ওপর জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয়া যায় না। পিছু হটার লোক নয় যুবক।

ব্যাপার কি আসলে? জানতে চাইল যুবক। শহরের মানুষ গেছে কোন্ জাহান্নামে? আমি মনে করি না ওই দুটো সিক্সগান দিয়ে সবাইকে ভাগিয়ে দিতে পেরেছ তোমরা।

আমরাও এসে দেখি শহর খালি, জবাব দিল বেনন। কারা যেন ব্যাঙ্কে ঢুকে দু’জন লোককে খুন করে সেফ খালি করে নিয়ে ভেগেছে। এই মোটা মার্শাল আর ডিলন জোর করে আমাদের দোষী বানাতে চাইছিল।

ব্যাঙ্ক ডাকাতির কথায় একটু চমকে মতো উঠল যুবক। ধীরে ধীরে ঘোড়া থেকে নামল, ভাব দেখে মনে হলো না বেনন বা ব্যাগলের তরফ থেকে বিপদের ভয় পাচ্ছে। বেনন আর ব্যাগলে বাধা দিল না, ব্যাঙ্কে গিয়ে ঢুকল সে, এক মিনিট পরই বেরিয়ে এলো, আবার। মুখটা একটু ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। তীক্ষ্ণ চোখে কিছুক্ষণ দেখল বেননদের দুজনকে। গানবেল্টের ওপর থেকে ঘুরে এলো তার দৃষ্টি, তারপর তাকাল ডিলনের দিকে।

ব্যাঙ্ক ডাকাতদের ধরার আগে পর্যন্ত টাকা না চাওয়াই উচিত হবে বলে মনে করি আমি, ডিলন, শান্ত গলায় বলল সে।

কঠোর চেহারায় মাথা নাড়ল ডিলন। না, ক্লিন্ট। তোমার চেয়ে আমার টাকা ওই সেফে বেশি ছিল, কিন্তু তাতে আমার ব্যবসায় কোন অসুবিধে হবে না। যারা আমার কাছে টাকা পায় তাদের টাকা নিদিষ্ট সময়েই শোধ করব আমি। আমি আশা করছি তুমিও তাই করবে। আগামীকাল যদি টাকা শোধ করতে না পারো তাহলে ট্রিপল বার আমার হয়ে যাবে। কথা থামিয়ে বেনন আর ব্যাগলেকে দেখাল ডিলন। এদের ওপর থেকে যদি চোখ না সরাও তাহলে তোমার ব্যাঙ্কে রাখা টাকা বোধহয় ফেরত পাবে।

আমারও তাই ধারণা, বলল মার্শাল জেস। তার গলায় কোন উৎসাহ নেই। বুঝেছে যে চিপিতে পড়েছে সে আর ডিলন, বেনন আর ব্যাগলেকে হারিয়ে দিয়ে তাদের উদ্ধার করতে পারবে না ক্লিন্ট চাইলেও।

মার্শালকে অগ্রাহ্য করে ডিলনের দিকে তাকাল ক্লিন্ট। গম্ভীর গলায় বলল, ট্রিপল বার দখল করতে চেষ্টা করলে ভুল করবে, ডিলন। আমি চাই না খুনোখুনি হোক। কিন্তু পিছিয়েও যাব না আমি।

ডিলনের মুখটা কালো হয়ে গেল। আমাকে থামাতে চেষ্টা করলে খুনোখুনির দায় তোমাকেই নিতে হবে, ক্লিন্ট, চিবিয়ে চিবিয়ে বলল সে। আগামীকাল, ক্লিন্ট। তার আগেই তোমাকে টাকা শোধ করতে হবে। না যদি করো, আইন আমার পক্ষে থাকবে, মার্শালের দিকে তাকাল সে। আমি কি ঠিক বলছি, জারম্যান?

ওপর-নিচে মাথা দোলাল মার্শাল।

আমি সত্যিই দুঃখিত, শার্লি, মৃদু গলায় বলল ক্লিন্ট। এখন ব্যবসার কথা আলোচনার সময় নয়, অথচ অভদ্রের মতোই তা-ই করতে হলো। ক্ষমা করো। আর একটা কথা, আমার টাকা শোধ করার জন্যে তোমাকে ভাবতে হবে না।

আস্তে করে মাথা দোলাল হতচকিত শার্লি।

ঘোড়ায় চড়ল ক্লিন্ট, ছুটতে শুরু করল স্ট্যালিয়নটা, এবার দক্ষিণে যাচ্ছে। ওদেরও এখানে অপেক্ষা করার কোন কারণ নেই, শেষবারের মতো চোখে নীরব নিষেধ নিয়ে দুজনকে দেখল বেনন, তারপর ব্যাগলেকে আসতে বলে ছুটল ক্লিন্টের পিছু পিছু। বুঝতে পারছে ঝামেলায় জড়িয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও খুশি, যেকাজে এখানে এসেছিল সেই কাজের রূপ কি হতে পারে তার একটা অস্পষ্ট ধারণা পেয়ে গেছে।

শহর থেকে মাইল খানেক দূরে আসার পর ক্লিন্ট টের পেল যে তাকে অনুসরণ করা হচ্ছে। রাশ টেনে, ঘোড়া থামিয়ে ফিরে তাকাল সে, হাত ঝুলিয়ে দিল হোলস্টারের পাশে। অপেক্ষা করল বেনন আর ব্যাগলে সামনে এসে থামা পর্যন্ত, তারপর বলল, আমার পিছু নাওনি তো, বন্ধুরা?

বোধহয় রলিন্সে যাচ্ছি, বলল ব্যাগলে। টুইন স্প্রিংস বড় বেশি গরম হয়ে উঠেছিল।

তোমরাই যদি খুন করে থাকো তাহলে বলিঙ্গে গিয়ে বাঁচবে না। স্টেজটা রলিন্সে গেলেই খবর ফাঁস হয়ে যাবে। তাছাড়া পাসি নিয়ে খুঁজতে বেরবে। জারম্যান।

টুইন স্প্রিংস থেকে পাসির লোক জোগাড় করতে হচ্ছে না জারম্যানকে। একটা সিগার ধরাল বেনন। অবশ্য ওসব নিয়ে আমরা ভাবছি না এখন। তীক্ষ্ণ চোখে যুবক র‍্যাঞ্চারকে দেখল, জরুরী কিছু নয় এমন সুরে বলল, তুমি শহরে ঢুকেছিলে উত্তর থেকে, এখন দেখছি দক্ষিণে যাচ্ছ।

জবাব না দিয়ে ঘোড়া সামনে বাড়াল ক্লিন্ট। তার দু’পাশে চলেছে বেনন আর। ব্যাগলে। কিছুক্ষণ নীরবে পথ চলল ওরা, তারপর মুখ খুলল র‍্যাঞ্চার। এখন যাচ্ছি রলিন্সে। ওখানে কয়েকজন বন্ধু আছে, চেষ্টা করে দেখব তাদের কাছে ধার। পাওয়া যায় কিনা। যাবে বলে মনে হয় না। অনেক টাকা পায় ডিলন আমার কাছে।

খুকখুক করে কাশল,বেনন। কেন:পায় জানতে পারি কি? অবশ্য তোমার যদি বলতে কোন আপত্তি না থাকে।

অন্য র‍্যাঞ্চারা যা করত তাই করল ক্লিন্ট, চোখে রাগ নিয়ে বোনকে দেখল। ব্যক্তিগত ব্যাপারে প্রশ্ন করাটা, পশ্চিমে রীতি বিরুদ্ধ। তবে বেননের হাসিটা আন্তরিক রাগ কমিয়ে দিল ক্লিন্টের। বেনন আর ব্যাগলেকে কৌতূহলী চোখে। আরেকবার দেখল সৈ। টুইন স্প্রিংসে যে সিদ্ধান্তে এসেছিল সেই একই সিদ্ধান্তে পৌঁছুল আবার। এরা লোক ভাল, কোন কথা দিলে তা রাখতে জানে। সহজ হয়ে এলো যুবক। ভালই তো, নিজের সমস্যা নিয়ে আলাপ করলে হয়তো কোন সমাধান বেরিয়ে আসতে পারে।

লুক ডিলন, আর আমার বাবা একই সময়ে এই অঞ্চলে আসে, শুরু করল সে। বন্ধু ছিল দু’জন, তাই ঠিক করেছিল পাশাপাশি র‍্যাঞ্চ করবে। র্যাঞ্চিং ব্যবসায়ে দুজনই সফল হয়। বিয়েও করেছিল একই সঙ্গে। সেই সময়ে অরিগনে যাবার পথে একটী ওয়াগন ট্রেইন থেমেছিল এখানে। সেই ওয়্যাগন ট্রেইনের দুটো মেয়েকে বিয়ে করে তারা একটু থামল ক্লিন্ট, একটা সিগারেট রোল করে নিয়ে আবার বলতে লাগল।

দুর্দান্ত লোক ছিল ডিলন, তবে আমার বাবাও যথেষ্ট কঠোর ছিল। পরবর্তী বছরগুলোয় প্রতিবেশী হওয়াতেই সম্ভবত বাবা আর লুক ডিলনের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। দু’জনের বউ যদি বান্ধবী না হতো তাহলে হয়তো বিবাদ এড়ানো যেত না। অবশ্য তাদের জীবিত অবস্থাতেই বাবা আর লুক নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করার জন্যে প্রতিযোগিতা শুরু করে দিয়েছিল। ডিলনের বউ একটা ঘোড়া থেকে পড়ে মারা যাওয়ার এক বছর পর মারা যায় আমার মা। এরপর থেকেই ডিলন আর ডসনদের মুখ দেখাদেখি প্রায় বন্ধ।

ছবিটা এখন বেনন আর ব্যাগলের কাছে পরিষ্কার। গভীর মনোযোগে শুনছে ওরা।

বাবা ঠিক করল আমাকে শিক্ষিত করে তুলবে, কাজেই পুবে কলেজে পড়তে গেলাম আমি। ওখানে তিনবছর থাকলাম। আমি অবশ্য জানতাম না যে এই বছরগুলোয় বাবার স্বাস্থ্য খুবই খারাপ মোড় নিয়েছে। ফাইনাল পরীক্ষার দুমাস আগে খবর পেলাম বাবা মারা গেছে। তার শেষ কথা ছিল আমি যাতে লেখাপড়া শেষ করে তারপর এখানে আসি। তাই করলাম আমি। এখানে এসে দেখি কারা যেন আমাদের গরু চুরি করে র‍্যাঞ্চের অবস্থা খারাপ করে তুলেছে। আমাদের ফোরম্যান ডারকিন অ্যাম্বুশে মারা গেল। তার পর পরই মারা গেল আরও কয়েকজন শক্ত কাউবয়। কয়েকজন চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে গেল। সিগারেটে কষে টান দিয়ে শেষটুকু ফেলে দিল ক্লিন্ট।

রাউন্ডআপের সময় গরু জড় করতে গিয়ে টের পেলাম র‍্যাঞ্চের অবস্থা কতখানি খারাপ। রেলরোডের খরচা উঠবে না বুঝে শেষ পর্যন্ত ড্রাইভ করিনি। লিউ ডিলনের কাছ থেকে ধারটা তখনই নিই। মোটামুটি ভাল বন্ধু ছিলাম আমরা ছোটবেলা থেকেই। ও যখন আমাকে খারাপ সময়টা পার করার জন্যে বেশ কিছু টাকা সাধল, নিতে দ্বিধা করলাম না আমি। তখনও জানি না ওর বাবার মতোই হয়েছে ও। পরের কয়েকবছরে আমাদের বন্ধুত্বও শেষ হয়ে গেল। বাজি ধরে বলতে পারি আমার গরু রাসলিঙের পেছনে ওর হাত আছে, ওর লোকরাই করছে কাজটা। যাই হোক, দিনরাত খেটে র‍্যাঞ্চটা আমি মোটামুটি লাভজনক করে তুলতে পারলাম। ব্যাঙ্কে যে টাকা রেখেছিলাম তা দিয়ে ডিলনের ঋণটা আমি শোধ করে দিতে পারতাম, কিন্তু ডাকাতি হয়ে গেল ব্যাঙ্ক।

ব্যাঙ্ক তোমার ক্ষতি পূরণ না করা পর্যন্ত ডিলন অপেক্ষা করতে পারে, বলল ব্যাগলে।

মাথা নাড়ল ক্লিন্ট। ব্যাঙ্কের মালিক রাশল্যান্ড মারা গেছে। আমি মিস রাশল্যান্ডের কাছে টাকা ফেরত চাইব না। তাছাড়া টাকাটা আমি ব্যাঙ্কে জমা রাখিনি, রাশল্যান্ডের জিম্মায় রেখেছিলাম, যাতে ঋণ শোধের সময় ও সাক্ষী থাকে। সচ্ছল ব্যাঙ্কও নয় ওটা। মূল ব্যবসা জমাকারীর টাকা রলিন্সের বড় ব্যাঙ্কে রাখা। রলিন্সের ব্যাঙ্কের দেয়া সুদ আর জমাকারীদের রাল্যান্ড যে সুদ দেয় তার পার্থক্যই ছিল ব্যাঙ্কটার মুনাফা।

কে জানত যে টাকাটা ব্যাঙ্কে আছে? জানতে চাইল বেনন।

রাশল্যান্ড আর ক্রিসি। ওরা দুজনই মারা গেছে কাজেই সন্দেহের বাইরে। এছাড়া জানত লিউ ডিলন আর তার ফোরম্যান কেল। ওরা জানে কারণ কেগকে আমি বলেছিলাম, যাতে ডিলনকে জানিয়ে দেয়।

কেগ হয়তো ডাকাতি করেছে, বলল বেনন। যদি করে থাকে, তাহলে ডিলনকে সে কিছু বলবে না, নিজের স্বার্থে।

দ্বিধান্বিত দেখাল ক্লিন্টকে। মাথা নাড়ল একটু পরে। না। কেগল গানম্যান, নীচ লোক সন্দেহ নেই, কিন্তু ডিলনের পকেটে আছে, সে এরকম কিছু করবে বলে মনে হয় না।

সেটা খোঁজ নিয়ে জানতে হবে, বলল বেনন।

বিস্মিত চোখে ওকে দেখল ক্লিন্ট, তারপর বলল, তোমার বলার ভঙ্গিতে মনে হয়েছিল তোমরাই খোঁজ নেবে। আসলে তো বলতে চাইছ আমার খোঁজ নেয়া উচিত, তাই না?

না, ধীর গলায় বলল বেনন, প্রথমবারই তুমি ঠিক বুঝেছ। আমাদের ফাঁসিয়ে দেয়া হয়েছে। কে ফাঁসিয়েছে, কেন ফাঁসিয়েছে ইত্যাদি জানার আগে এই এলাকা থেকে নড়ব না আমরা।

বেনন আর ব্যাগলেকে বারকয়েক দেখল ক্লিন্ট। ল-ম্যান তোমরা?

বেনন বলল, জারম্যানের উদ্ধত আচরণ আমাদের পছন্দ হয়নি, তাছাড়া ডিলন আমাদের ঘাড়ে খুনের দায় চাপিয়ে দিতে উদগ্রীব হয়ে উঠেছিল-কারণ জানতে চাই। এমনিতে এখান থেকে চলে গেলে আমাদের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগটা রয়েই যাবে। মাথা নাড়ল বেনন। তাড়া খেয়ে এখানে ওখানে পালিয়ে বেড়াতে চাই না আমরা।

আরেকটা ব্যাপার, বলল ব্যাগলে। এটাও জানতে হবে যে আমরা যখন টুইন স্প্রিংসে ঢুকলাম শহরটা তখন খালি ছিল কেন।

মাথা চুলকাল ক্লিন্ট, খানিকক্ষণ ভেবে ক্ষান্ত দিল এই চিন্তা করে যে তার নিজের ঝামেলারই শেষ নেই।

বুড়ো ডিলন এখনও বেঁচে আছে? কথাবার্তা চালিয়ে যাবার জন্যে জানতে চাইল বেনন।

না। বছর খানেক আগে বারান্দার ওপর থেকে উঠানে পড়ে মারা গেছে। হাতে একটা বন্দুক ছিল, ওটার গুলি ছুটে যায়, বুড়োর মাথার অর্ধেকটা উড়ে গিয়েছিল।

অদ্ভুত মৃত্যু, বিড়বিড় করল ব্যাগলে। মনে মনে দৃশ্যটা ভাবার চেষ্টা করল।

এব্যাপারে আর কিছু বলল না ক্লিন্ট।

আগামীকাল ট্রিপল বার কেড়ে নিতে আসবে ডিলন, বলল বেনন। ওকে ঠেকাতে পারবে তোমরা?

জানি না, ঘোড়র গতি কমিয়ে কিছুক্ষণ কি যেন ভাবল ডসন। দুই বন্ধু দেখল কপালে চিন্তার গভীর ভঁজ পড়েছে যুবকের। আসলেই জানি না, আবার বলল, রলিঙ্গে গিয়ে যদি টাকা জোগাড় করতে না পারি তাহলে ফিরে এসে ছেলেদের বলতে হবে ফতুর হয়ে গিয়েছি আমরা, বলতে হবে ট্রিপল বারে থাকলে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হবে। আমার ধারণা শেষ পর্যন্ত তিনজন থেকে যাবে আমার সঙ্গে। ওদের নিয়ে ডিলনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে টিকব না আমি।

বেনন আর ব্যাগলে নিজেদের ভেতরে দৃষ্টি বিনিময় করল। যুবককে আরও ভাল লেগে গেছে ওদের। যেভাবে পরিস্থিতি বিচার করল তাতে বোঝা যায় বুদ্ধি আছে। গর্বে অন্ধও নয়, ক্রুদের খুলে বলবে নিজের অর্থনৈতিক দৈন্য। তাছাড়া ক্লিন্ট বিশ্বাস করেনি ওরা টুইন স্প্রিংসের ব্যাঙ্কে ডাকাতি করেছে।

আমরা তোমার পক্ষে, সোজাসুজি ঘোষণা দিল ব্যাগলে। আপাত দৃষ্টিতে সরল লোক মনে হয় ওকে, কিন্তু যারা ওর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে তাদের কাছে ওর একটা ভিন্ন রূপ আছে। এই লোকটা হাসি মুখে মরতে তৈরি হয়ে যায়। মৃত্যু ভয়ে পিছায় না কখনও, সে শত্রু তিনজনই হোক বা চারজন।

আমরা দুজন আর তোমার তিন কাউবয় আর তুমি, বলল বেনন। হয়তো আমরা ডিলনকে ঠেকিয়ে রাখতে পারব।

বিপদে আমাকে সাহায্য করতে চেয়েছ সেজন্যে ধন্যবাদ, বলল ক্লিন্ট, কিন্তু আমি তোমাদের সাহায্য এমনি এমনি নিতে পারি না। তোমরা যদি ট্রিপল বারে কাজ নাও তাহলে আমি রাজি আছি।

ঠিক আছে, রাজি হলো বেনন। মাসের শেষে আমাদের দশ ডলার করে দেবে তুমি। কিন্তু একটা কথা, আমাদের ওপর কোন বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে না। নিজেদের ইচ্ছে মতো কাজ করব আমরা।

বেশ। বেনন আর ব্যাগলেকে পালা করে দেখল ক্লিন্ট। কোন যুক্তি নেই, তবু মনের মাঝে আশা জাগল, লোক দুটোকে দেখে মনে হয় পোড় খাওয়া, এরা হয়তো বিরাট সাহায্য হিসেবে দেখা দেবে ভবিষ্যতে।

তাহলে আমার আর ধাগলের রলিঙ্গে যাওয়ার কোন যুক্তি নেই, বলল বেনন। তারচেয়ে বরং তোমার র‍্যাঞ্চে চলে যাই।

ঠিক আছে। ওখানে গিয়ে জিম ডায়ারকে বললেই হবে তোমাদের আমি কাজে নিয়েছি।

ট্রিপল বারটা কোনদিকে? টুইন স্প্রিংস এড়িয়ে যাওয়া যায় না ওখানে? যায়, তবে দশ মাইল বাড়তি ঘোড়া দৌড় করাতে হবে। ওই যে দুটো চুড়ো দেখছ? উত্তর-পশ্চিমের পাহাড়টা দেখাল ক্লিন্ট। ওই চুড়োগুলোর উত্তর-পুবে ট্রিপল বার। পাহাড়ের কাছে গেলেই ট্রেইল পেয়ে যাবে। টুইন স্প্রিংস শহরটা ট্রেইল থেকে অনেকটা দক্ষিণে। ট্রেইল প্রথমে উত্তরে গেছে, তারপর পুবে টিলাটরের ভেতর দিয়ে গিয়ে পৌঁছেছে একটা ক্যানিয়নে, চওড়া ওই ক্যানিয়ন ধরে এগোলেই পৌঁছে যাবে ট্রিপল বারে।

হাত নেড়ে যুবক র‍্যাঞ্চারকে বিদায় জানাল বেনন আর ব্যাগলে, ঘোড়ার মুখ ঘুরিয়ে রওনা হয়ে গেল স্বদন্ত আকৃতির চুড়োগুলোর দিকে। রেঞ্জটা ঝোঁপঝাড়ে ভরা, রুক্ষ জমি, মাঝে মাঝে ঘাস।

ঈগলের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সামনের এবড়োখেবড়ো প্রান্তর দেখল নেন। ব্যাগলে হাসতে হাসতে বলল, আমরা আসছি, মার্শাল, তুমি বললেই তোমার কথা মতো। গলায় ফাঁসির দড়ি পরে নেব।

ভাল কথা মনে করেছ, বলল বেনন। জারম্যান বলেছে আইন ডিলনের পক্ষে থাকবে। তারমানে আসল খুনিদের আমরা যদি ধরতে পারি তাহলেও ওর ওয়ান্টেড লিস্টে নাম থাকবে আমাদের।

শ্রাগ করল ব্যাগলে, একটা সিগারেট ধরাল নিশ্চিন্ত চেহারায়। তারপর বলল, ডিলনকে আমার পছন্দ হয়নি। আইন ওর পক্ষ নিলে ভুল করবে। ক্লিন্ট যা বলেছে তার তুলনায় আরও অনেক খারাপ লোক মনে হয়েছে আমার ডিলনকে।

আমার মনের কথা বলেছ, সায় দিল বেনন। একটা চিন্তা মাথায় আসতে জী কুঁচকে বলল, কথা হচ্ছে ডিলন আর ক্লিন্টের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যাবার ব্যাপারে সুন্দরী মিস রাশল্যান্ডের ভূমিকা কতটুকু।

চট করে একবার বেননকে দেখে নিল ব্যাগলে। গভীর বিশ্বাস আছে ওর বন্ধুর তীক্ষ্ণ বুদ্ধির ওপর। গত কয়েক ঘণ্টার স্মৃতিচারণ করে নিয়ে বলল ও, সম্ভবত বিরোধের মূল কারণই হচ্ছে ওই মেয়ে। মেয়েটাকে খুব খাতির করছিল ডিলন। আর মনে আছে, একটু আগেই ক্লিন্ট বলেছে মিস রাশল্যান্ডের কাছ থেকে টাকা ফেরত চাইবে না?

মেয়েটা সত্যিই সুন্দরী, স্বীকার না করে পারল না বেনন। একজন আরেকজনের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে বলে দোষ দেয়া যায় না ওদের।

তবু মেয়ে তো, মাথা দোলাল বিজ্ঞ ব্যাগলে, ওদের কাছ থেকে যত দূরে থাকা যায় ততই ভাল।

ব্যাগলের বউয়ের চেহারা মনে পড়তে একান ওকান হাসল বেনন। নীরবে এগিয়ে চলল ওরা। মাইলের পর মাইল পেরিয়ে যাচ্ছে, প্রকৃতির চেহারায় কোন পরিবর্তন নেই। পাহাড়, উপত্যকা, অধিত্যকা, টিলা আর ঢেউ খেলানো সমভূমি। গভীর মনোযোগে চারপাশ দেখছে দু’জন। যাদের বিরুদ্ধে লাগতে হবে তারা এই এলাকা নিজেদের হাতের তালুর মতোই চেনে, ওদেরও চিনে রাখা উচিত, বিপদে কাজে দেবে জ্ঞানটুকু।

করাতের দাঁতের মতো পাহাড় চুড়ো দুটোর মাঝখান দিয়ে পার হলো ওরা, একটু পরেই ক্লিন্টের বলা ট্রেইলটা খুঁজে পেয়ে এগিয়ে চলল। সরু ট্রেইল, দু’পাশে পড়ে আছে বড় বড় কিম্ভুতকিমাকার চেহারার বোল্ডার। শত শত বছর ধরে খসে পড়েছে ওগুলো দু’পাশের ন্যাড়া রুক্ষ টিলাগুলোর গা থেকে। কোন তাড়া নেই বেনন আর ব্যাগলের, ঘোড়া দুটোকে নিজেদের গতিতে চলতে দিচ্ছে ওরা।

আরও কয়েক মাইল এগিয়ে ঘোড়া থামাল ওরা। ট্রেইলটা সামনে উত্তর পশ্চিম থেকে আসা আরেকটা ট্রেইলের সঙ্গে মিশেছে। কয়েকটা ড্রাই ওয়াশের ভেতর দিয়ে যেতে হবে ওই ট্রেইল ধরে এগোলে। পকেট হাতড়াল বেনন আর ব্যাপলে। একটা সিগারেট ধরাল ব্যাগলে, বেনন একটা চুরুট।

টুইন স্প্রিংসের দক্ষিণ দিক দিয়ে এসেছে এটা, বলল ব্যাগলে। টিলা সারি দেখাল হাত তুলে। ক্লিন্টের প্রতিবেশীর রেঞ্জটা ওদিকে।

নড় করল বেনন। ওরা দু’জন, আবার ঘোড়া ছোটাতে যাবে এমন সময় শুনতে পেল ছুটন্ত ঘোড়ার খুরের আওয়াজ। বেশ দূরে আছে ঘোড়াটা, তবে এগিয়ে আসছে দ্রুত। অপেক্ষা করল বেনন আর ব্যাগলে। দুই মিনিট পর একটা ড্রাই ওয়াশ পার হয়ে ট্রেইলে দেখা দিল অশ্বারোহী।

আরে, লোকটা ডিলন, না? ভ্রূ কুঁচকে চিবুকে হাতের তালু ডলল বেনন।

কোন সন্দেহ নেই, সায় দিল ব্যাগলে। বেননকে দেখল চোখে আনন্দ নিয়ে। কি মনে হয়, আমাদের শহরে ধরে নিয়ে যেতে চেষ্টা করবে লোকটা?

না। অযথা ঝুঁকি নেবার লোক না সে। হাতের তাস ভাল না হলে খেলবে না।

নিস্পৃহ চেহারায় এগিয়ে এলো ডিলন, মাত্র দু’গজ বাকি থাকতে ঘোড়া থামাল। দু’জনকে দেখল ভ্রু কুঁচকে। মনে হলো না ভয় পেয়েছে। চেহারা থেকে। সমস্ত অনুভূতির ছাপ দূর হয়ে গেল। আরও জোরে ছুটতে হবে তোমাদের জারম্যানকে ফাঁকি দিতে হলে, বলল বরফশীতল কণ্ঠে।

আমাদের জন্যে চিন্তা করতে হবে না তোমাকে, হাসল বেনন। জারম্যান যখন আমাদের দেখা পাবে তখন নিজেরাই ভেবে নেব কি করব।

শক্ত লোক, না? টিটকারির হাসি হাসল ডিলন। সুন্দর চেহারায় কুটিলতার ছাপ পড়ল। ফাঁসিতে যখন ঝুলবে তখন দেখব তোমরা আসলেই কতটা শক্ত।

ফাঁসিতে ঝোলানোর জন্যে তুমিই ধরে নিয়ে যাবে ভাবছ নাকি? জানতে চাইল বেনন সমান শীতল গলায়।

সতর্ক লোক ডিলন, হাত দুটো হোলস্টার থেকে সরিয়ে রেখেছে। আমি অপেক্ষা করব, থেমে থেমে বলল সে। জারম্যানের কাজ আমাকে করতে হবে , জারম্যান নিজেই করবে। চোখের পাতা না ফেলে টানা এক মিনিট বেননের চোখে তাকিয়ে থাকল ডিলন শীতল রাগ নিয়ে, তারপর স্পার ছোয়াল ঘোড়ার পেটে। সামনে বাড়ল ঘোড়াটা, বেনন আর ব্যাগলেকে পাশ কাটাল। পেছন থেকে বেনন দেখল স্যাডলে পিঠ সোজা করে বসে আছে লোকটা।

ডিলন চোখের আড়ালে যাওয়ার আগে পর্যন্ত নড়ল না দু’জন। ব্যাগলে বলল, ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছ তুমি ওর।

তুমি খেয়াল করোনি, মাথা নাড়ল বেনন, শুকনো গলায় বলল, ভয় পায়নি লোকটা, শুধু সতর্কতা দেখিয়েছে। সমান সুযোগ পেলে পিছিয়ে যেত না ওই লোক।

চলো, ট্রেইল ছেড়ে ডিলনের রেঞ্জের ভেতর দিয়ে ট্রিপল বারে যাই, প্রসঙ্গ পাল্টানোর জন্যে প্রস্তাব দিল ব্যাগলে। হয়তো সন্দেহজনক কিছু চোখে পড়ে যাবে।

হয়তো। রাজি হয়ে গেল বেনন। চলো। মনের মধ্যে খচ খচ করছে। একটা প্রশ্ন, সেটার হয়তো কোন জবাব পাওয়া যাবে বার কিউয়ে। ডিলন কি শুধু টাকা ফেরত চায়, নাকি ট্রিপল বার দখল করাই তার মূল উদ্দেশ্য?

ডিলন যে-পথে গেছে সেদিকে চলল ওরা ধীর গতিতে। টিলার পর টিলা ঢেউ খেলিয়েছে জমিতে। ঝোঁপঝাড় ভরা অনুর্বর জমি পার হয়ে ঘণ্টাখানেক পর ওরা পৌঁছে গেল ঢেউ খেলানো বিস্তৃত সমতল জমিতে। হাঁটু সমান লম্বা সবুজ ঘাসে ঢাকা জমি, এখানে ওখানে চরছে হেরিফোর্ড গরু।

চারপাশটা ভাল করে দেখার জন্যে উঁচু জমির দিকে চলল ওরা। একটা ঢালের মাথায় উঠে থামল।

উত্তর-পশ্চিমে একটা নদীর পানিতে ঝিলিক মারছে পড়ন্ত সূর্যের ভাল পর্বতমালার ভেতর দিয়ে বেরিয়েছে নদী, একটা পাহাড়কে পাশ কাটিয়ে ট্রশন বারের রেঞ্জ টুকেছে।

অফুরন্ত ঘাসজমি, বনভূমি, টিলার অঞ্চল এটা। শীতে টিলার আড়ালে ভয় পাবে গরু। গ্যাঞ্চিঙের জন্যে অত্যন্ত উপযোগী এলাকা। যত দূর চোখ যায় ডিলনের রেঞ্জে প্রচুর গরু দেখা যাচ্ছে।

চলে যাওয়ার সময় একবারও পেছনে তাকায়নি ডিলন, কিন্তু বেনন জানে, ওরা অনুসরণ করবে এটা না বোঝার মতো বোকা ডিলন নয়। দূরে ডিলনকৈ দেখল ওরা, আবছা ভাবে দেখা যাচ্ছে তাকে। একটা ফোঁটার সমান লাগছে এখান থেকে দেখতে। তাপ প্রবাহের কারণে কাঁপছে দৃশ্যটা। আরও কয়েকটা ফোঁটার সঙ্গে মিলে গেল ঙিলন। কিছুক্ষণ পর দেখা গেল বেশ কয়েকটা ফোঁটা বড় হচ্ছে। এত দূর থেকে ধুলোও দেখা গেল।

ওরা আসছে, শান্ত গলায় জানাল, বেনন।

আইনের হয়ে দায়িত্ব পালন করতে, যোগ করল ব্যাগলে। বেননের দিকে তাকাল। সরে পড়া দরকার।

চলো। রাশ টেনে ঘোড়ার পেটে স্পার ছোঁয়াল বেনন, ঘুরে গেল ওর গেল্ডিং। আধ মিনিট পরই পাশে চলে এলো ব্যাগলে। ওরা যখন পাহাড়ের কাছে পৌঁছুল, থামল বেনন, নিশ্চিত করতে চাইল যাতে ডিলনের রাইডাররা ওদের দেখে। রাইডাররা দিক পরিবর্তন করেছে দেখে চোখে তৃপ্তি নিয়ে ব্যাগলেকে দেখল ও, তারপর ঢাল বেয়ে নামতে শুরু করল। এখন আর বেনন বা ব্যাগলেকে দেখতে পাচ্ছে না লোকগুলো, তবে জানে ওরা কোথায় যেতে পারে।

পুবদিক দিয়ে পাহাড়ের কাঁধে উঠল বেনন। ব্যাগলে পেছনেই আছে। বেশ জোরে ছোটাচ্ছে ঘোড়া। মাইল আড়াইয়েক পেরিয়ে পাহাড় থেকে নামতে শুরু করল ওরা, সামনেই দেখা যাচ্ছে বার কিউ আর টুইন স্প্রিংসের ট্রেইল। বেনন জানে কোথায় যেতে চায় ও, কাজেই থামল না ওরা, পর পর বেশ কয়েকটা ড্রাই ওয়াশ আর গা পার হয়ে ক্যানিয়নে ঢুকল। ক্যানিয়নটা আস্তে আস্তে সরু হয়ে গেছে। দক্ষিণে এসে দেয়াল দুপাশ থেকে এতই চেপে এসেছে যে কষ্টেসৃষ্টে একটা স্টেজকোচ যেতে পারবে। পর পর কয়েকবার বাঁক নিয়েছে ক্যানিয়ন। একটা বাঁক পার হয়ে এসে জায়গাটা পছন্দ হয়ে গেল বেননের। সামনে পথের ধারে পড়ে আছে দুটো বড় বড় বোল্ডার। আড়াল নেয়া যাবে ওগুলোর পেছনে। বাঁক ঘুরে হঠাৎ প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে ডিলনের লোকদের।

বোল্ডারের পেছনে এসে ঘোড়া থেকে নামল ওরা। রাইফেল হাতে বোল্ডারের কোনায় দাঁড়াল বেনন, ব্যাগলে ঘোড়া দুটোকে আরেকটু পেছনে সরিয়ে রেখে ওর পাশে এসে দাড়াল।

আসছে ওরা, আওয়াজ শুনে পাঁচ মিনিট পর বলল ব্যাগলে।

এখনও কোন শব্দ শুনতে পায়নি বেনন, তবে কোন কথা বলল না। ব্যাগলের লোভরা কানে যেকোন আওয়াজ আগে পৌঁছে যায় এটা ও অনেকবার লক্ষ করে দেখেছে। বাতাসের কম্পানে কানের লোম কাপে বলেই কি…এবার বেলনও শুনতে পেল আওয়াজটা। ক্যানিয়নের ভেতরে ভারী বৃষ্টিপাতের মতো। কাছে চলে আসছে, সেই সঙ্গে বাড়ছে আওয়াজ।

পাঁচজন রাইডার। সবকজন ঝুঁকে আছে স্যাডলে। পেছনে ধুলোর মেঘ উড়িয়ে দ্রুত ছুটে এলো বাঁক ঘুরে।

ওদের আসতে দিল বেনন, যাতে গুলি শুরু করলেই বাঁক ঘুরে ওপাশে চলে যেতে না পারে। তারপর পঞ্চাশ গজ দূরে থাকতে রাইফেল তুলে ক্যানিয়নের দেয়ালে গুলি করল। পাথরে পাথরে বাড়ি খেয়ে ছিটকে এদিক ওদিক গেল বুলেট। ঘোড়া থামিয়ে ফেলল কাউবয়রা মাথা নিচু করে নিল বুলেটের ভয়ে।

নড়বে না! আদেশ দিল বেনন। ক্যানিয়নে গমগম করে উঠল ওর ভরাট কণ্ঠ। সাবধান, ধীরে ধীরে গানবেল্ট খুলে মাটিতে ফেলো।

ধূলিধূসরিত পাঁচ কাউহ্যান্ড বোল্ডারটার দিকে তাকাল। তাদের দলনেতা একজন হালকাপাতলা নিষ্ঠুর চেহারার লম্বা লোক, নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার জন্যে স্যাডল পমেলে হাত রাখল। চেঁচিয়ে জানতে চাইল, কি চাও তোমরা!

পাথরের গায়ে রাইফেল ঠেস দিয়ে রেখে বেনন বেরিয়ে এলো বোল্ডারের পাশে। কাউবয়রা নড়ল না। ব্যাগলের রাইফেলের নল দেখতে পাচ্ছে ওরা।

সেটা তো আমরাও জানতে চাই, বলল বেনন। আমাদের ধরতে গিয়ে ঘোড়াগুলোকে অনেক পরিশ্রম করিয়েছ তোমরা। হাসল বেনন। এখন আমাদের ধরতে পেরেছ। কি করবে ভাবছ?

এবার তোমার হাতে ভাল তাস, শান্ত গলায় বলল কাউবয়দের দলনেতা। আরও কয়েক ঘন্টা স্বাধীন ভাবে ঘুরতে পারবে। তবে ভেবো না আমরা হাল ছেড়ে দেব, কাজেই শেষ পর্যন্ত ধরা পড়তে হবে তোমাদের। শহরে ফাঁসিতে ঝুলতে হবে দু’জনকে।

ডিলন যাই বলুক আমরা খুন করিনি। ব্যাঙ্ক ডাকাতির সঙ্গেও আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। দু’পা ফাঁক করে দাঁড়াল, বেনন। দৃষ্টি নিবদ্ধ দলনেতার ওপর। তোমরা খামোকা আমাদের পেছনে লেগেছ। তাড়া খাওয়া আমার ধাতে নেই। ইচ্ছে করলে অস্ত্রের দিকে হাত বাড়িয়ে দেখতে পারো।

নড়ল না কেউ। দলনেতা বেননের দিকে তাকিয়ে আছে। টের পেল অন্য কাউবয়রা তাকে দেখছে, সে কি করবে তার ওপরই নির্ভর করছে ওদের প্রতিক্রিয়া। সিগারেটে কষে টান দিল সে। ঘন ঘন ওঠানামা করল তার কণ্ঠী। বেনন বুঝে গেল গোলাগুলির ইচ্ছে নেই লোকটার।

স্বস্তির শ্বাস ফেলতে গিয়ে চমকে উঠল বেনন। ওকে বোকা বানিয়ে হোলস্টারের দিকে ঝটিতে হাত বাড়িয়েছে লোকটা। পরক্ষণেই একটা গুলির আওয়াজ হলো। ব্যথায় কাতরে উঠল গানম্যান, হাত থেকে ছিটকে বেরিয়ে গেল পিস্তল।

আর কেউ? জানতে চাইল বেনন। নড়ল না কেউ। তাহলে অস্ত্র মাটিতে ফেলো সবাই, নির্দেশ দিল ও।

রাইফেল বাগিয়ে বোল্ডারের আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো ব্যাগলে। ঠোঁটে হাসি ঝুলছে, কিন্তু চোখে হাসি নেই। ওর রাইফেলের নল থেকে চুইয়ে চুইয়ে বেরচ্ছে নীল ধোয়া।

একজন একজন করে গানবেল্ট খুলল কাউবয়রা। তাদের নেতা রাশে দোলা দিয়ে ঘোড়াটাকে ঘুরিয়ে নিল। তার দেখাদেখি অন্যরা। একটু পরেই নেতার পিছু নিয়ে ক্যানিয়নের বাঁক ঘুরে অদৃশ্য হয়ে গেল সবাই, একবারও পেছনে তাকাল না, কেউ। আস্তে আস্তে দূরে চলে গেল ঘোড়ার খুরের আওয়াজ, মিলিয়ে গেল একসময়।

<

Super User