পিয়ারে যখন উপস্থিত হলো পাশা, জ্বলন্ত লাল সূর্যটা তখন আকাশের পশ্চিম সীমান্তে। উপসাগরের শান্ত পানিতে রোদেপোড়া টুরিস্টরা সারাদিন সাগরে কাটিয়ে ফিশিং বোটে করে ফিরে আসছে। বড় বড় ফুল ছাপা কাপড়ের শার্ট পরা গোলগাল একজন মানুষ একটা বোটের কিনারে গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে দড়িতে ঝোলানো একটা হাওরের প্রায় গা ঘেষে, স্ত্রীকে ছবি তোলার পৌজ দিচ্ছে। মাথার ওপরে গাল উড়ছে। কিছু কিছু দুঃসাহসী পাখি মানুষের একেবারে কাছে চলে আসছে খাবারের লোভে, বিরক্ত করছে রীতিমত।

ডকের কিনার ধরে হাটছে পাশা। একট উচু প্ল্যাটফর্মওয়ালা প্রায়  নতুন পাওয়ারবোটের কাছে এসে থমল। বোটটার নাম ‘সি কুইন’।

একটা ফাইটিং চেয়ারে বসে আছে হাফপ্যান্ট আর স্যাঞ্জেল পরা একজন ব্রোঞ্জ রঙের মানুষ। মাথায় কালো চুলের বোঝা আর কালো ঘন ভুরু। চেহারা বলছে, লোকটা স্প্যানিশ। পাশার ওপর চোখ পড়তে হেসে বলল, ‘হ্যালো, সেনিয়র। দেরি করে ফেলেছেন।’

‘হ্যাঁ, একটা জরুরি কাজ সেরে আসতে হলো,’ বোটের কিনার দিয়ে ডিঙিয়ে ককপিটে উঠল পাশা। ফ্রিজারের কাছে রাখল ওর মোটা কাপড়ের ব্যাগটা।

লম্বা সবুজ ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে বলল রসি পিন্টো, তৈরি হয়েই এসেছেন মনে হচ্ছে?’

‘হ্যাঁ,’ জবাব দিল পাশা। ‘যেতে কতক্ষণ লাগবে আমাদের?’

উঠে দাঁড়াল পিন্টো। ‘এই ঘন্টাখানেক। রাতের বেলা খুঁজে বের করা কঠিন, আর মাত্র একবার গিয়েছি ওখানে, আপনাকে তো বলেছিই।

‘তা বলেছেন। আপনার মত একজনকে যে খুঁজে পাওয়া গেছে, আমাকে নিয়ে যেতে রাজি হয়েছেন, এতেই আমি খুশি। কোন চার্টার বোটের মালিকই তো রাজি হলো না।’

হ্যাঁ, কেন রাজি হয়নি, নিশ্চয় বুঝতে পারছেন, বোটের নোঙর তুলতে এগোল পিন্টো। নাবিকরা অতিরিক্ত কুসংস্কারে বিশ্বাসী আর ডোমিনিক আইল্যান্ডের কুখ্যাতি প্রচুর। ওটার চারপাশ ঘিরে ডুবোপাথরের ছড়াছড়ি। পানিতে গিজগিজ করে হাঙর। কেউ ওটার কাছে যেতে সাহস করে না।’

‘আপনি ভয় পান না?’ পাশা জিজ্ঞেস করল।

‘টাকা পেলে, সেনিয়র পাশা, সব করতে রাজি আছি আমি। আর আপনি অনেক টাকা দিয়েছেন আমাকে।’

বোটের মালিকের পিছন পিছন মই বেয়ে ফ্লাইং ব্রিজে উঠে এল। পাশা একটা বেঞ্চে বসল। কন্ট্রোল কনসোলের দিকে মনোযোগ দিল পিন্টো।

‘এখন একটা কথা আমার জানা দরকার, সেনিয়র,’ বলল ও, ‘আপনি ওখানে কেন যেতে চান, সেটা কিন্তু এখনও বলেননি আমাকে। কেন জানতে চাই, বুঝতে পারছেন নিশ্চয়-কোনও সমস্যা হলে আমাকেই তো সামাল দিতে হবে।’

‘আমি ফেডারেল গভর্নমেন্টের কাজ করি,’ পাশা বলল।

পাক খেয়ে ঘুরে দাঁড়াল পিন্টো। ভয় দেখা যাচ্ছে মুখে। ’কার কাজ করেন?’

‘ফেডারেল গভর্নমেন্ট,’ আবার বলল পাশা। ‘ফ্লোরিডা কী-র সমস্ত দ্বীপে আদমশুমারি করছি।’

‘আদমশুমারি?’ ভুরু কুচকে পাশার কথার প্রতিধ্বনি করল যেন পিন্টো। পুরো পাঁচ সেকেও লাগল হজম করতে। তারপর হেসে উঠল। ‘ও, বুঝেছি! আসলে বলতে চাইছেন দ্বীপশুমারি। উরুতে চাপড় দিয়ে হা-হা করে হাসছে। নাহু, আপনার রসবোধ আছে, সেনিয়র। যাকগে, ইঙ্গিতটা বুঝতে পেরেছি আমি।’ নিজের বিষয় নয়, এমন কোন ব্যাপারে নাক গলায় না রসি পিন্টো।

চাবিতে মোচড় দিল ও। চালু হয়ে গেল ইঞ্জিন। বোটের পিছনে আলোড়ন তুলল প্রপেলার। নড়ে উঠল সি কুইন। বার্থ থেকে এগিয়ে চলল খোলা সাগরের দিকে। উল্টোদিক থেকে আসা আরেকটা বোটের মোটাসোটা একজন মানুষের উদ্দেশ্যে হাত নাড়ল পিন্টো, তারপর থ্রটল ধরে টান দিল। তেজী ঘোড়ার মত লাফিয়ে উঠে ছুটতে শুরু করল সি কুইন।

সাগরের পানির নোনা গন্ধ নাকে ঢুকল পাশার। ভাল লাগছে। ভারী দম নিয়ে তাজা বাতাসে ফুসফুস ভরে নিল। বোটের পাশে কিছুটা দূরে খেলাচ্ছলে লাফিয়ে উঠে পানিতে পড়ে আবার ডুবে গেল দুটো ছোট আকারের মাছ। মাথার ওপরে চক্কর দিয়ে উড়ছে কয়েকটা গাল, তাকিয়ে আছে টুকরো খাবারের আশায়।

‘আহ্, এই তো জীবন, তাই না, সেনিয়র?’ পিন্টো বলল। ‘এই সাগর, এই সূর্য, পেট ভর্তি খাবার; আর কী প্রয়ােজন একজন মানুষের বলুন তো?’

পিছনে হেলান দিল পাশা। দুই হাত পিছনে নিয়ে গিয়ে আঙুলে আঙুল ঢুকিয়ে তালুতে মাথা রাখল। আগামী দুটো ঘণ্টা পিন্টোর বকবক শুনতে তৈরি হলো। প্রচুর টাকা দিয়ে কিনেছে এই বকবকানি, কাজে লাগলে হয়।

সূত্র জোগাড়ের জন্য টাকা দিতে কার্পণ্য করেনি পাশা। পিন্টোর মতই টাকা ভালবাসে, এমন একজন বারটেন্ডারের কাছে টাকার বিনিময়ে জেনেছে, কী-ওয়েস্টের অপরাধ জগতে নাকি গুজব রয়েছে, ডোমিনিক আইল্যাণ্ডে ডুয়েরোর মাদক পাচারের ঘাঁটি আছে। কীভাবে কাজটা করা হয়, কেউ জানে না। তবে বেশ কয়েকটা সূত্র থেকে পাশাকে সাবধান করে দেয়া হয়েছে, দ্বীপটার কাছে যাওয়া আর নিশ্চিত মৃত্যুকে বরণ করে নেয়া একই কথা-আত্মহত্যার সামিল।

রেডিও চালু করল পিন্টো। একটা স্টেশন ধরল যেটাতে স্প্যানিশ পপ মিউজিক বাজানো হচ্ছে। মাথা দুলিয়ে গুনগুন করতে লাগল ও, বাজনার তালে তালে চাপড় দিচ্ছে হুইলে।

সেদিন সকালেই স্টিফেন হান্টারকে ফোন করে পিন্টোর সম্পর্কে যা যা জানে, জানাতে অনুরােধ করেছিল পাশা। জানিয়েছে হান্টার। রেকর্ড বলছে, সারাটা জীবনই দক্ষিণ ফ্লোরিডায় কাটিয়েছে লোকটা। অনেক লম্বা রেকর্ড। বহুবার গ্রেপ্তার হয়েছে পুলিশের হাতে, সবই ছোটখাট অপরাধের জন্য, এই যেমনঃ চুরি, জালিয়াতি, মাতলামি আর আইন না মানা। বছর তিনেক আগে কী-ওয়েস্টে চলে এসেছে, তারপর থেকে আর একটা অপরাধও করেনি, অর্থাৎ পুলিশের রেকর্ডে নেই। তারমানে হয় লোকটা ভাল হয়ে গেছে, নয়তো পুলিশের নজর এড়িয়ে অতি সাবধানে নিজের কুকর্মগুলো করে চলেছে।

কথা বলার মেজাজে রয়েছে পিন্টো। ‘আপনি কি জানেন, সেনিয়র, একটা সময় জলদস্যুদের দখলে ছিল এখানকার সাগর? মাঝে মাঝেই কেউ না কেউ সেসব পুরানো জাহাজ পানির নীচ থেকে খুঁজে বের করে এখন, কোন কোনটাতে গুপ্তধনও পেয়ে যায়।’ লোভীর দৃষ্টিতে মেক্সিকো উপসাগরের দিকে তাকিয়ে বলল, ‘ইস্, ওরকম একটা জাহাজ যদি আমি পেয়ে যেতাম!’

‘পেলে কী করতেন?’ একেবারে চুপচাপ থাকার চেয়ে কথা বলে সময় কাটানোর জন্য জিজ্ঞেস করল পাশা।

‘আবার রসিকতা করছেন না তো?’ এমনভাবে ঠোঁট দিয়ে শব্দ করল পিণ্টো, যেন লোভনীয় খাবার দেখেছে। ‘পেলে কী করতাম? দক্ষিণ আমেরিকায় গিয়ে চিলি, বলিভিয়া কিংবা ব্রাজিলে রাজার হালে কাল কাটাতাম। দামি দামি কাপড় পরতাম, দামি গাড়ি চালাতাম। স্বর্গে বাস করতাম।’

‘দক্ষিণ আমেরিকায় গেছেন কখনও?’

‘সি, সেনিয়র। কলাম্বিয়ায় তিনবার গেছি…’ বলেই থেমে গেল পিণ্টো। সতর্ক চোখে পাশার দিকে তাকাল। ‘কেন জিজ্ঞেস করছেন?’

শ্রাগ করল পাশা। ‘কোন কারণ নেই।’ এক মুহূর্ত থেমে জিজ্ঞেস করল, ‘কলাম্বিয়ায় এতবার গেলেন, ওখানে থেকে গেলেন না কেন? আমিও শুনেছি, দেশটা নাকি চমৎকার।’

‘বেড়ানাের জন্য ভালই। কিন্তু যে পরিমাণ খুনখারাবি হয়, নিশ্চয় শুনেছেন? মাদকসম্রাটরা নিজেদের ইচ্ছেমত চলে ওখানে, যা খুশি করে বেড়ায়। কিছু কিছু পুলিশ তো ওখানে গুণ্ডাদের চেয়ে খারাপ। তার ওপর রয়েছে পলিটিশনদের অত্যাচার। যে কোন সময় ওদের খুনে গুণ্ডাবাহিনী মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়, কেউ কিছু বলতে পারে না।’ হাত নাড়ল পিন্টো। ‘না, সেনিয়র, আমার কোটি কোটি টাকার গুপ্তধন নিয়ে এমন জায়গায় বাস করতে চাই, যেখানে আইনের শাসন আছে।’

এমন একজন মানুষের মুখ দিয়ে এরকম দার্শনিক উক্তি বেরোল, যে একজন পুলিশ অফিসারের ওপর হামলা চালানোর অপরাধে গ্রেপ্তার হয়েছিল, মাত্রাতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্য ওকে জরিমানা করেছিল অফিসারটি। পিন্টোর কলাম্বিয়া যাওয়ার ঘটনাটা আগ্রহী করে তুলল পাশাকে। ওখান থেকেই কোকেইনের বড় বড় চালানগুলো আসে। তার সন্দেহ, মুখে যত বড় বড় কথাই বলুক, এই লোকটাও মাদক পাচারের সঙ্গে কোন না কোনভাবে জড়িত।

একটা ম্যাপ দেখে কোর্স বদল করল পিন্টো। পূর্ব দিকে চলল।

স্বাভাবিক নৌপথ থেকে অনেকটাই দূরে ডোমিনিক আইল্যাণ্ড। এতটাই দূরে, কুসংস্কারাচ্ছন্ন হোক বা না হোক, সাধারণত ওটার কাছাকাছি কারোর যেতে হয় না। নামটা জানার পর ম্যাপে ভাল করে দেখে নিয়েছে পাশা। গ্রেট হোয়াইট হিরন ন্যাশনাল ওয়াইল্ডলাইফ রেফিউজের সীমান্তে। আকারে ছোট, চৌহদ্দি বড়জোর দুই একর, দেখতে অনেকটা অশ্রুফোঁটার মত, আর এগোতে হয় উত্তর দিক থেকে-রিফ বা ডুবো শৈলশিরা এড়ানোর জন্য। খুব তাড়াতাড়িই সূর্যটাকে গিলে ফেলল যেন সাগর। গোধূলির আলো অদ্ভুত রঙের আভা সৃষ্টি করল। একটা দুটো করে তারা ফুটল আকাশে। এক সময় দেখা গেল তারায় তারায় ভরে গেছে পুরো আকাশটা। গোধূলির আলো মিলিয়ে গেল। শুধু যন্ত্রের ওপর নির্ভর করে বোট চালাচ্ছে পিন্টো। বোটের শক্তিশালী টুইন ইঞ্জিন দুটো একটানা গরগর করে চলেছে যেন তৃপ্ত বিড়ালের বাচ্চার মত।

একটানা অনেকক্ষণ বসে থেকেছে, তাই সামান্য পা নাড়ানোর কথা বলে, মই বেয়ে নিচে নামল পাশা। ককপিটে পায়চারি করল কিছুক্ষণ। তারপর ফাইটিং চেয়ারটায় বসল।

আসলে, বোঝার চেষ্টা করছে, ওদের অনুসরণ করা হচ্ছে কি না। পাশা যে বোট ভাড়া করেছে, এব্রো ডুয়েরো জেনে যাবেই। আগে হোক পরে হোক, আরেকবার ওকে শেষ করে দেয়ার জন্য হামলা চালাবে, জানা কথা।

বিশ মিনিট ধরে তীক্ষ্ণ নজর রেখেও আর কোন বোটের অস্তিত্ব টের। পেল না পাশা। কিন্তু একেবারেই নেই, এটাও মেনে নিতে পারল না। রেডার থাকলে অনেক দূর থেকেও বোট নিয়ে ওদের অনুসরণ করতে পারবে।

পিণ্টো বলেছে পৌঁছতে ঘণ্টাখানেক লাগবে। কী-ওয়েস্ট ছাড়ার ঠিক এক ঘণ্টা চার মিনিট পর থ্রটল ঠেলে দিয়ে ঘোষণা করল ও, ‘কাছে চলে এসেছি আমরা, সেনিয়র পাশা।’

ফ্লাইং ব্রিজে উঠে এল আবার পাশা। সামনের অন্ধকারের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে পিন্টো।

‘কতটা কাছে?’ পাশা জিজ্ঞেস করল।

একটা স্পটলাইট জ্বেলে দিলে পিন্টো। অন্ধকারের চাদর ফুড়ে বেরোল যেন তীব্র সাদা আলোর রশ্মি। আলোর শেষ মাথায়, অস্পষ্টভাবে দেখা গেল ঘন কালো রঙের একটা বিশাল বস্তু যেন পানিতে পিঠ ভাসিয়ে রয়েছে।

‘আপনার প্রশ্নের জবাব পেলেন?’ হুইল অনেকখানি ঘুরিয়ে দিয়ে পিণ্টো বলল, ‘উত্তর ধার ঘুরে যাব। তাহলে হয়তো কিনারে ভিড়তে পারব। ডুবো পাথরের দিকে নজর রাখবেন, সেনিয়র।’

সেফটি রেইলে উঠে এল পাশা। পানিতে স্পটলাইটের আলো ফেলেছে পিণ্টো। সেদিকে তাকিয়ে রইল ও। পানির নিচে কালো একটা বড় জিনিস চোখে পড়ল। সামনে ডানদিকে হাত তুলে দেখাল, ‘ওদিকে আছে একটা।’

‘সর্বনাশ!’

গতি কমিয়ে দিল পিন্টো। সাঁই-সাঁই করে বাঁয়ে কাটল স্টিয়ারিং। অল্পের জন্য লাগল না ডুবোপাহাড়ের গায়ে।

পাশার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল, হিসেবে ভুল করেছে পিন্টো। দেরি করে বোটের নাক ঘুরিয়েছে, আরও আগেই উত্তরে মোড় নেয়া উচিত ছিল ওর। মারাত্মক বিপদের মধ্যে ঢুকে পড়েছে এখন। যে কোন মুহূর্তে পানির নীচের ধারাল পাথরে লেগে তলা ফুটো হয়ে কিংবা চিরে গিয়ে ডুবে যেতে পারে বোট।

আরেকটা শৈলশিরাকে মাথা তুলতে দেখল পাশা, এবার বাঁয়ে। পাগলের মত হুইল ঘুরিয়ে চলেছে পিন্টো। প্রচণ্ড ঘষার শব্দ শুনে ভাল করে দেখার জন্য রেলিঙের ওপর দিয়ে গলা বাড়িয়ে নিচে তাকাল পাশা। কাটাঝোপের মত দেখতে প্রবালের গায়ে ঘষা খেয়ে রঙ উঠে গেছে বোটের তলার, তবে আঁচড় লেগেছে শুধু, গভীরভাবে বসে গিয়ে চিরে ফাক হয়ে যায়নি।

‘আরও আস্তে চালান,’ পাশা বলল।

ফ্যাকাশে হয়ে গেছে পিন্টোর মুখ। ‘আর বলতে হবে না,’ এমনভাবে হুইল ঘোরাচ্ছে, যেন চিনামাটির অতি ঠুনকো জিনিস, জোরে চাপ লাগলেই ভেঙে যাবে। বিড়বিড় করে বলল কিছু, বোধহয় নিজেকেই গালি দিল, তারপর পাশাকে শুনিয়ে বলল, ‘আপনার কাছ থেকে আরও বেশি টাকা নেয়া উচিত ছিল, সেনিয়র। এখানে বোট ডোবালে ইনসিওরেন্স কোম্পানি টাকা দেবে না।’

‘ডুববে না,’ পিন্টোর আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর জন্য বলল পাশা। বোটের কাণ্ডারি এখন ভড়কে গেলে বিপদ এড়ানো অসম্ভব হবে, দুজনের কেউই সেটা চায় না।

নিরাপদেই শৈলশিরাটা পেরিয়ে এল সি কুইন। এঁকেবেঁকে পেরিয়ে এল আরও কয়েকটা পাহাড়ের শিরা। আরও কয়েকশো ফুট এগোনোর পরও যখন আর কোন ডুবোপাহাড় চোখে পড়ল না, পূর্ব দিকে বোটের মুখ ঘোরাল পিন্টো। অল্প কিছুদূর এগিয়ে দক্ষিণমুখো হয়ে এগোল।

উদ্বেগ সামান্য কমেছে পাশার। উত্তর দিক থেকে দ্বীপের দিকে এগোচ্ছে এখন বোট, যা ওরা চেয়েছিল! কনসোলের কাছে এসে দাঁড়াল ও। ‘আলোটা এখন তীরে ফেলুন।’

আলো ঘোরাল পিন্টো। দ্বীপের কিনারে ফেলল। ফিতের মত এক চিলতে পাথুরে সৈকতের ওপাশে বেড়া তৈরি করে রেখেছে যেন গাছপালা।

কিছুটা অবাকই হলো পাশা। জঙ্গল দেখা যাচ্ছে। ও ভেবেছিল শুধু চ্যাপ্টা, রুক্ষ পাথরের শিরা দেখবে। যাক, ভালই হলো। জঙ্গল থাকায় হামলা এলে লুকাতে পারবে, পাল্টা আক্রমণ সহজ হবে।

‘এখন কী করব, সেনিয়র?’ পিন্টো জিজ্ঞেস করল। ‘আপনি বলেছিলেন, এখানে নিয়ে আসতে। এনেছি। আর কী করব?’

মাথা নেড়ে তীরের দিকে ইঙ্গিত করল পাশা। ‘ওখানে নামিয়ে দিয়ে চলে যান। তিন দিন পর ফিরে এসে নিয়ে যাবেন আমাকে।’

অবাক হলো পিন্টো। সেটা চেপে রাখতে পারল না। ‘সত্যি বলছেন! জায়গাটা খারাপ। সাপ আর বিষাক্ত পোকামাকড় আছে ওখানে।’

‘আপনি জানলেন কী করে? আমি তো ভেবেছিলাম, আপনি নামেনইনি ওই দ্বীপে।’

কাঁধ বাঁকাল পিন্টো। ‘না, নেমেছি, আপনার কাছে অস্বীকার করব না। ওখানে পানি নেই। খাবারও পাবেন না। বোকামি করে মরার চেয়ে, ওসব দুর্বুদ্ধি বাদ দিয়ে, আমার সঙ্গে ফিরে চলুন।’

মই বেয়ে নামতে শুরু করেছে ততক্ষণে পাশা। ‘ডাঙার যতটা সম্ভব কাছে নিয়ে যান।’ মইয়ের তৃতীয় ধাপটা থেকে লাফিয়ে নামল ও। বোটের কিনারে এসে দাঁড়াল। আকাশের অগণিত তারার আলো ছাড়া আর কোন আলো নেই কোথাও। ভাবছে, পিন্টো কি ওর কথা শুনবে? না শুনলে কোনরকম তথ্য ছাড়াই এখান থেকে বিদেয় হতে হবে পাশাকে কোন লাভ হবে না।

বোটের মুখ সাগরের দিকে ঘুরিয়ে দিল পিণ্টো। তারপর ইঞ্চি ইঞ্চি করে পিছিয়ে নিয়ে চলল তীরের দিকে। এদিকে সম্ভবত কোন ডুবোপাহাড় নেই, তবু ঝুঁকি নিল না ও। তীরের কাছ থেকে ছয় ফুট দূরে থাকতে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিল। নোঙর ফেলে বলল, ‘ডাঙায় পৌঁছতে আপনাকে সাহায্য করি, সেনিয়র।’

‘লাগবে না।’

‘লাগবে।’ ধাপ বেয়ে না নেমে, মইয়ের দু’পাশের মসৃণ রেইল ধরে পিছলে নেমে এল পিন্টো। চওড়া হাসি হেসে, নিচু হয়ে পাশার ব্যাগের একটা ফিতে চেপে ধরল। ‘আপনি আমার বোট ভাড়া। করেছেন, কাজেই যতক্ষণ আমার এখানে থাকছেন, আপনার সব দায়দায়িত্ব আমার, তাই না? আপনার যাতে কোনরকম ক্ষতি না হয়, সেটা তো দেখতেই হবে আমাকে।’

‘আমার দায়িত্ব আমি নিজেই নিতে পারব,’ পাশা বলল।

ব্যাগটা তোলার জন্য ফিতে ধরে টান দিয়েই থেমে গেল পিন্টো। ‘উহ্, কী ভরেছেন এর মধ্যে? এ তো এক টনের কম হবে না!’ দুই হাতে টেনে ব্যাগটা উঁচু করল ও, ধীরে ধীরে এগোল পাশার দিকে। ‘আপনার গায়ে ভীষণ জোর, সেনিয়র। এক হাতেই বয়ে নিয়ে এসেছিলেন এটা, আমি দেখেছি।’

জেনেশুনেই নিজের জীবনের ওপর ঝুঁকি নিয়েছে পাশা, ডোমিনিক আইল্যান্ডে এসেছে। ও সন্দেহ করেছিল, পিন্টোই কী-ওয়েস্টে ডুয়েরোকে ওর কথা জানিয়ে সাবধান করে দিয়েছে। বারটেন্ডারের কাছে পাশা জেনেছে, গুজব রয়েছে মাঝে মাঝে নাকি পিন্টো মাদক পাচারে ডুয়েরোকে সাহায্য করে। আর ডোমিনিক আইল্যান্ড হলো মাদক হাতবদল করার ঘাঁটি।

আর এ কারণেই পিন্টোর কাছে ভোট ভাড়া করতে গিয়েছিল পাশা। ও ভেবেছিল, পিন্টো ওর বসকে গিয়ে বলবে, আগামী দিন বিকেলে একজন অচেনা লোক এসে আমাকে ডোমিনিক আইল্যান্ডে নিয়ে যেতে বলেছে। তাতে-পাশা আশা করেছিল-গোপন আবাস থেকে খোলা জায়গায় বেরিয়ে আসবে ডুয়েরো, ওর মুখোমুখি হবে। কিন্তু তার বদলে হাসি আর টনিকে ওর পিছনে লেলিয়ে দিল ডুয়েরো।

পাশা দেখল, ককপিট পেরিয়েছে পিণ্টো। উত্তেজিত হয়ে আছে পাশা, টান টান স্নায়ু, যে কোন অঘটনের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তৈরি থেকেও পুরোপুরি সামলাতে পারল না পরিস্থিতি। আচমকা ঘুরে দাঁড়িয়ে ওকে লক্ষ্য করে ভারী ব্যাগটা ঘুরিয়ে বাড়ি মারল পিন্টো। একপাশে সরে যেতে চাইল পাশা, কিন্তু তার আগেই ওর বুকে এসে লাগল ব্যাগটা, ওকে চিত করে ফেলে দিল একটা বরগার ওপর। সোজা হয়ে দাঁড়ানোর আগেই ওর গায়ের ওপর এসে পড়ল পিন্টো, তারার আলোয় স্নানভাবে ঝিলিক দিয়ে উঠল একটা বাটারফ্লাই নাইফের ফলা।

পাশার গলায় পোঁচ মারার চেষ্টা করল পিন্টো। কিন্তু ফলাটা লাগার আগেই মাথা নিচু করে ফেলল পাশা, লাথি মেরে পিছনে সরিয়ে দিল পিন্টোকে। লাফিয়ে উঠে দাঁড়ানোর সুযোগ পেল। জ্যাকেটের ভিতর হাত ঢোকাল বেরেটাটার জন্য। ওর আঙুল সবে পিস্তলের বাট ছুঁয়েছে, এ সময় চিৎকার দিয়ে সামনে ছুটে এল পিন্টো, মরিয়া হয়ে ছুরির ফলাটা এপাশ ওপাশ করে পাশার গায়ে লাগাতে চাইল। এত বেশি নড়াচ্ছে, নেহাত ভাগ্যক্রমেই থাবা দিয়ে ওর ছুরি ধরা হাতটা ধরে ফেলতে পারল পাশা।

থামার কোনও লক্ষণ নেই পিন্টোর, খেপা ষাঁড়ের মত হামলা চালাল পাশার ওপর। ওকে ঠেলে নিয়ে চলল বোটের কিনারে। বোটের গলুইয়ের কিনার ডিঙিয়ে পানিতে পড়ে গেল দুজনে।

কিছুতেই পিন্টোর ছুরি ধরা হাতটা ছাড়ল না পাশা। ঠাণ্ডা পানিতে ডুবে গেল দুজনে। নোনা পানি জ্বালা ধরাল পাশার চোখে।

কোমর পানিতে পড়েছে ওরা। সোজা হয়ে দাঁড়াল পাশা। টেনে তুলল পিন্টোকে। মুক্ত হাতটা দিয়ে পাগলের মত ঘুষি মেরে চলল লোকটা। একটা ঘুষি লাগল পাশার গালে, আরেকটা চাঁদি ঘেঁষে চলে গেল।

ভয়ানক ধস্তাধস্তি করতে করতে একে অন্যকে বাগে পেতে চাইছে। মারামারি করতে জানে না পিন্টো। বক্সারও নয়, মার্শাল আর্টেরও ট্রেনিং নেই। গায়ের জোরে মরিয়া হয়ে প্রতিপক্ষকে কাবু করার চেষ্টা করছে। তাতে পাশার জন্য আরও বেশি বিপজ্জনক হয়ে গেছে ও।

পায়ের নীচে পিচ্ছিল পাথর। একবার পা পিছলে আরেকটু হলেই চিত হয়ে পড়ছিল পাশা। সুযোগটা কাজে লাগিয়ে ছুরি দিয়ে পাশার গলা কাটার চেষ্টা করল পিন্টো। দুই হাতে ওর কব্জি চেপে ধরে প্রাণপণে ফলাটা গলার কাছ থেকে সরিয়ে রেখেছে পাশা।

জলাতঙ্কে আক্রান্ত নেকড়ের মত ধক্ ধক্ করে জ্বলছে পিন্টোর চোখ। পাশার কলার ধরে মাথাটা ঠেসে ধরল পানির নীচে। পাশার নাকে-মুখে পানি ঢুকে গেল, চোখের ওপর পানি, কয়েকটা সেকেণ্ড শত্রুকে দেখতে পেল না। তবে যত কিছুই ঘটুক, পিন্টোর ছুরি ধরা হাতটা ছাড়ল না।

উঠে দাঁড়াচ্ছে পাশা, এ সময় তীক্ষ্ণ খোঁচা লাগল বাঁ কাঁধে। ভুল করেছে ও। পাশা পানির নিচে থাকার সময়ই সুযোগ পেয়ে ছুরিটা হাত বদল করে ফেলেছে পিন্টো। ধারাল ফলাটা সামান্য ছুঁয়ে গেছে শুধু পাশার কাঁধ, তাড়াহুড়োয় ভালমত পোঁচ দেয়ার সময় পায়নি পিণ্টো।

জুডোর প্যাচ কষে পিন্টোকে মাথার ওপর দিয়ে ছুঁড়ে ফেলল পাশা। বুদবুদে ভরা তীরের অল্প পানিতে গিয়ে বস্তার মত আছড়ে পড়ল পিণ্টো। টলতে টলতে উঠে দাঁড়াল।

পানি ভেঙে ওর কাছে পৌঁছে গেল পাশা। সামলে নিয়েছে পিন্টো। তবে আর মারামারি করতে এল না, বুঝে গেছে পাশার সঙ্গে পারবে না। আচমকা বাঁয়ে ঘুরে, এক দৌড়ে পাথুরে সৈকত পেরিয়ে গিয়ে ঢুকে পড়ল বনের মধ্যে। ‘

‘তোমাকে আমরা ছাড়ব না, গ্রিংগো, দেখে নিয়ো!’ গাছপালার আড়াল থেকে চিৎকার করে বলল পিন্টো। পাশা বুঝল, ওকে আমেরিকান ভেবেছে, সেজন্যই ‘গ্রিংগো’ বলছে।

ওর দিকে কয়েক কদম ছুটে গেল পাশা। তারপর, এভাবে পিছু নেয়াটা ঠিক হবে না বুঝে থেমে দাঁড়াল। পিস্তলটা বের করে নিয়ে পিছিয়ে গেল পানিতে। বোটের কাছে এসে কিনার ধরে ঝুলে পড়ল। ওপরে টেনে তুলল নিজেকে। পিন্টো পালিয়েছে। বোটটাকে নিয়ে এখন যা ইচ্ছে করতে পারে পাশা।

ব্যাগের পাশে বসে ওটার মুখ খুলল ও। প্রথমে বের করল একটা খাপে ভরা ডেজার্ট ঈগল পিস্তল, ডান উরুতে বাঁধল খাপের ফিতে। তারপর বের করল একটা এম-১৬ কারবাইন, ব্যাগে ভরার সুবিধের জন্য নল, বাট, এগুলো আলাদা করে খুলে রেখে দিয়েছিল।

দ্রুত হাত চালাল ও। জোড়া দিয়ে ফেলল রাইফেলটা। ত্রিশ রাউন্ডের একটা ম্যাগাজিন লাগিয়ে পায়ের সঙ্গে ঠেস দিয়ে রাখল অস্ত্রটা। তারপর ব্যাগ থেকে আরও কিছু মারাত্মক অস্ত্র বের করল। যেমন, একটা কা-বার ফাইটিং নাইফ। ডান গোড়ালির সামান্য ওপরে ওটার খাপের ফিতে বাঁধল ও। ব্যাগের মুখ আবার বন্ধ করে রেখে উঠে দাঁড়াল।

ব্যঙ্গভরা হাসি শোনা গেল দ্বীপের দিক থেকে। রাইফেলটা হাতে তুলে নিল পাশা। অন্ধকার জঙ্গলের দিকে তাকাল। কালো দেয়ালের মত লাগছে, কিছুই দেখা যাচ্ছে না তার ভিতরে। যদ্দূর জানে, পিন্টোর কাছে শুধু একটা ছুরি আছে। কিন্তু এই দ্বীপে যদি নিয়মিত যাতায়াত থাকে ওর, তাহলে নিশ্চয় খাবারদাবার, অস্ত্র আর টিকে থাকার অন্যান্য রসদ রেখেছে।

ফ্লাইং ব্রিজে উঠল পাশা। কনসোলে পা দিয়েছে, এ সময় আবার শোনা গেল ব্যঙ্গভরা হাসি। কাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, খুব মজা পাচ্ছে পিণ্টো। ‘চালাও, সেনিয়র! পারলে স্টার্ট দাও! কিছুই করতে পারবে না!’

পাশার ইচ্ছে, তীর থেকে সামান্য সরে গিয়ে বোট থামিয়ে চুপচাপ বসে থাকবে, আর কোন বোট আছে কি না দেখার জন্য। কিন্তু যতই সুইচ টিপল, কাজ হলো না, সাড়া দিল না ইঞ্জিন। সার্কিটে কোন কারসাজি করে রাখা হয়েছে, যেটা জানে শুধু পিন্টো, আর সে-ই শুধু সেটা স্বাভাবিক করে স্টার্ট দিতে পারে। এ ধরনের কারসাজি নতুন নয় পাশার কাছে। ভাবছে ও। আরেকটা বোতাম কিংবা ট্রিগার রয়েছে বোটের কোথাও, স্টার্টার টেপার আগে ওটা টিপে লাইন ‘অন’ করে নিতে হবে। কিন্তু ওটা খুঁজে বের করতে কতক্ষণ লাগবে, জানা নেই পাশার-হয়তো এক ঘণ্টা কিংবা তার বেশিও। কিন্তু বুঝতে পারছে, এত সময় নেই ওর হাতে।

‘কী বলেছিলাম?’ চেঁচিয়ে বলল পিণ্টো। ‘এক কাজ করো। পানিতে নেমে ধাক্কা দিয়ে স্টার্ট করার চেষ্টা করো!’

স্পটলাইটের কন্ট্রোল চেপে ধরে রশ্মিটা তীরের দিকে ঘুরিয়ে দিল পাশা। তীরের গাছপালার দেয়ালের ডান দিক থেকে বাঁ দিকে সরিয়ে আনল একবার আলোটা। পিন্টোকে দেখল না। শুধু একটা ঝোপের ভিতর খুব সামান্য নড়াচড়া চোখে পড়ল। আলোটা ঠিক ওইখানেই স্থির করে রেখে নিচে নেমে এল ও।

ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে নেমে এল বোট থেকে। পানি ভেঙে সাবধানে তীরের দিকে এগোল। আলোটা যেখানে ফেলেছে, সেদিকে চোখ। আশা করল, ওর চোখে পড়ার ভয়ে আলোর মধ্যে নড়াচড়া করবে না পিন্টো, বেরোনোর কিংবা যেখানে আছে সেখান থেকে সরার চেষ্টা করবে না।

গরম আবহাওয়া। তাই ভিজে চুপচুপে হয়ে গিয়েও ঠাণ্ডায় কষ্ট পেতে হলো না পাশাকে। ডাঙায় উঠে, ঝুঁকে বসে, ভালমত চোখ বোলাল একবার ছোট্ট সৈকতটায়, তারপর এক ছুটে ঢুকে পড়ল জঙ্গলের ভিতর। একটা গাছের গায়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইল চুপচাপ। কান পেতে আছে শব্দ শোনার আশায়। স্বাভাবিকভাবে পোকামাকড়ের কর্কশ তীক্ষ্ণ চিৎকার, আর ব্যাঙের ডাক শোনার কথা। কিন্তু নিশ্চুপ হয়ে আছে দ্বীপটা, যেন এক মৃত্যুপুরী। সামান্যতম শব্দ নেই কোথাও।

<

Super User