গল্পটি বলছে কিশোর জিম। ওদের সরাইখানা অ্যাডমিরাল বেনবোয় এসে উঠল বেয়াড়া, কর্কশ স্বভাবের এক নাবিক। কাদের ভয়ে যেন আতঙ্কিত হয়ে রয়েছে লোকটা সারাক্ষণ। জিমকে বলল, এক-পা খোঁড়া কোন নাবিক দেখলে যেন চট করে খবর দেয় তাকে। কিন্তু কিছুতেই কোন লাভ হল না। বেশিদিন লুকিয়ে থাকতে পারল না বেচারা, ঠিকই খুঁজে বের করল ওকে দুর্ধর্ষ একদল জলদস্য।

এরপর থেকে আশ্চর্য সব ঘটনা ঘটতে শুরু করল জিমের জীবনে। শেষে জাহাজে চেপে চলল সে রত্নদ্বীপে। এমন সব অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করল, যা বর্ণনা করে অমর হয়ে গেছেন স্টিভেনসন।

জিম হকিন্সের বিবৃতি

০১. বুড়ো নাবিক

অনুরোধ এড়াতে পারলাম না কিছুতেই। হাজার হলেও স্কয়ার ট্রেলনী এবং ডাক্তার লিভসী ভদ্র, গণ্যমান্য লোক। আমারও যে লেখার ইচ্ছে একেবারেই নেই, তা নয়। এমন ঘটনা তো আর হরহামেশা ঘটে না। অনেক রোমাঞ্চকর মজার মজার গল্প-কেচ্ছা শুনেছি, কিন্তু গল্পের চেয়েও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা বাস্তবে সঞ্চয় করে বসব, ভাবিনি।

সত্যিই কিন্তু কিছু ধনরত্ন এখনও রয়ে গেছে ট্রেজার আইল্যান্ডে। লোভের হাত বাড়িয়ে আবার গিয়ে সেই দ্বীপে পাইকারি খুনখারাবি করুক রহসন্ধানী মানুষ, কিছুতেই চাই না। আর চাই না বলেই ঠিকানাটা গোপন রাখতে বাধ্য হচ্ছি। সতেরোশো সালের-তারিখ। এক অশুভক্ষণে আমাদের সরাইখানা অ্যাডমিরাল বেনবো-য় এসে হাজির হল বুড়ো।

হঠাৎ, নিতান্ত অস্বাভাবিকভাবেই আমাদের সরাইখানায় এসে উঠল বুড়ো নাবিকটি। গালে একটা গভীর কাটা দাগ। লম্বা, বলিষ্ঠ দেহ। চামড়ার রঙ রোদে পোড়া তামাটে। কাঁধ পর্যন্ত নেমেছে কালো চুলের খাটো করে বাঁধা বেণী। রুক্ষ দুই হাতে ক্ষয়ে যাওয়া আঙুল। নখগুলো ভাঙা, কালো। ধারাল তলোয়ারে কেটে যাওয়া গালের দাগটা বীভৎস রকমের সাদা। গায়ে পুরানো ময়লা নীল কোট।

যেন মাত্র গতকাল ঘটেছে ঘটনাটা। পরিষ্কার মনে পড়ছে, এদিক-ওদিক তাকাতে তাকাতে সরাইখানার দরজার দিকে এগিয়ে আসছে সে। পেছনে ঠেলা গাড়িতে বয়ে আনা হচ্ছে তার সিন্দুকটা। শিস্ দিতে দিতে আসছে বুড়ো। সুরটা অচেনা। কিন্তু ওই অচেনা সুরই পরে দারুণ চেনা হয়ে গিয়েছিল আমার। গানটাওঃ

মরা মানুষের সিন্দুকটায়
চড়াও হল পনেরো নাবিক
আরেক বোতল রাম নিয়ে আয়
ইয়ো-হো-হো কী যে মজা।।

ভাঙা ভাঙা কিন্তু চড়া বুড়োটে গলায় সে গায় এই গান। জাহাজীদের গান।

দরজার কাছে এসে হাতের ছোট লাঠি দিয়ে পাল্লায় ঠক ঠক আওয়াজ তুলল লোকটি। বাবা উঁকি দিল। কর্কশ গলায় এক গ্লাস রামের অর্ডার দিল সে। পানীয়টা এলে গেলাসে চুমুক দিতে দিতে পাহাড়ের চুড়োর দিকে তাকাল। তাকাল আমাদের সাইনবোর্ডটার দিকেও।

দারুণ জায়গা! মন্তব্য করল লোকটি, তা এখানে লোকজন আসে কেমন?

খুবই কম আসে, আফসোস করে জানাল বাবা।

ভাল, বলল লোকটি। আমার উপযুক্ত জায়গা। ঠেলাওয়ালার দিকে ফিরল সে, সিন্দুকটা তুলে দাও। এখানে কিছুদিন থাকব। বাবাকে বলল, সাদাসিধে মানুষ আমি। শুয়োরের মাংস, ডিম আর রাম হলেই চলে যাবে। ঘর কিন্তু ওপরতলায় চাই। জাহাজের আসা-যাওয়া দেখব। আর হ্যাঁঁ, আমাকে ক্যাপ্টেন বলে ডাকবে… পকেট থেকে গোটা চারেক মুদ্রা বের করল। মেঝেতে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, শেষ হয়ে গেলেই জানাবে। জাদরেল কমান্ডারের ভঙ্গি তার।

পোশাকের দুরবস্থা দেখে ক্যাপ্টেন গোছের অফিসার বলে মনে হয় না তাকে। কিন্তু কর্কশ গলা আর বাচন-ভঙ্গিতে বোঝা যায় আদেশ দিতে এবং দুর্ব্যবহার করতেই অভ্যস্ত এই লোক। ঠেলাওয়ালার কাছ থেকে জানতে পারলাম ডাকগাড়িতে করে সকালে এসে রয়াল জর্জে নেমেছে বুড়ো। সৈকতের কাছাকাছি নির্জন সরাইখানার খোঁজ করছিল। অ্যাডমিরাল বেনবোর নাম শোনে ওখানেই এবং পছন্দ করে ফেলে। এর বেশি আর কিছু জানে না ঠেলাওয়ালা।

সময় যায়। লোকটার ব্যবহারে অবাকই হচ্ছি শুধু। সাংঘাতিক চাপা স্বভাবের মানুষ। সারাটা দিন দোতলার বারান্দায় কিংবা কাছের পাহাড়ের চূড়ায় উঠে বসে থাকে। পিতলের দূরবীন দিয়ে চেয়ে থাকে সাগরের দিকে। সন্ধ্যা হলেই এসে ঢোকে সরাইয়ের হলে। একেবারে আগুনের পাশে এসে বসে। কড়া মদ গেলে। কারও সঙ্গেই কথা বলে না। কেউ কোন প্রশ্ন করে ফেললে চোখ পাকিয়ে তার দিকে তাকায়। মানে মানে সরে যায় কৌতূহলী প্রশ্নকর্তা। সরাইখানায় যারা আসর জমাতে কিংবা অন্য কাজে আসে, শিগগিরই বুঝে গেল, এই বিশেষ লোকটিকে না ঘটানই সবদিক থেকে নিরাপদ।

আমার সঙ্গে অবশ্য একআধটা কথা বলে আজব নাবিক। রোজই পাহাড় থেকে বেরিয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে, অন্য কোন নাবিক সরাইখানায় এসেছে কিনা। কিংবা এই পথ ধরে গেছে কিনা।

প্রথমে অনুমান করেছি, বুঝি তার কোন সঙ্গীর আসার কথা আছে, তারই কথা জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু তা নয়, পরে বুঝতে পেরেছি। ব্রিস্টলে যাবার পথে কিছুক্ষণের জন্যে আমাদের সরাইতে কোন নাবিক এলে খেয়াল করেছি, হলঘরের পর্দা ফাঁক করে দেখে নেয় ক্যাপ্টেন। এমনিতেই সে কথা বলে কম, তখন একেবারে চুপ মেরে যায়।

আচমকা আমাকে একদিন ডেকে বলল ক্যাপ্টেন, কোন খোঁড়া নাবিকের দেখা পেলে যেন তাকে অবশ্যই জানাই। এর জন্যে মাসে চার পেনি করে বেতন দেবে সে আমাকে।

যতটা না পয়সার জন্যে, তার চেয়ে অনেক বেশি কৌতূহল মেটাবার জন্যে একুপেয়ে নাবিকের সন্ধানে রইলাম। সরাইখানায় লোক আসে, লোক যায়। কিন্তু খোঁড়া নাবিক আর আসে না।

সারাক্ষণই খোঁড়া নাবিকের কথা ভাবি। তার চেহারা চালচলনের নানারকম ছবি আঁকি মনে মনে। ফল যা হবার হল। দুঃস্বপ্নে দেখা দিতে আরম্ভ করল এক ভয়ানক চেহারার একপেয়ে নাবিক। এই দুঃস্বপ্ন বেশি দেখি দুর্দান্ত ঝড়ের রাতে। প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়ার তাড়া খেয়ে পাহাড়প্রমাণ ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে পাথুরে পাহাড়ের গোড়ায়। কেঁপে কেঁপে উঠে যেন গুটিসুটি মেরে যায় আমাদের দ্বিতল বাড়িটা। কাঁপতে কাঁপতে গিয়ে কম্বলের তলায় লুকোই আমি। দুঃস্বপ্নে ভয়াল দানবের মতই ক্রাচে ভর দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এসে তাড়া করে আমাকে খোঁড়া নাবিক। প্রাণপণে দৌড়াতে চেষ্টা করি, কিন্তু পারি না-পা পিছলে যায়; এদিকে এগিয়ে আসতে থাকে সে, কোন বাধাকেই বাধা মনে করে না। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার, এতসব দুঃস্বপ্নের পরিবর্তে মাসিক চার পেনি কিছুই না।

ক্যাপ্টেনকে আমি তেমন ভয় না করলেও আর সবাই করে। প্রায় প্রতি রাতেই প্রচুর রাম খেয়ে মাতলামি শুরু করে সে। কাউকে পরোয়াই করে না এই সময়। বিচ্ছিরি সব গান ধরে। কখনও কখনও উপস্থিত শ্রোতাদের জন্যে মদের অর্ডার দেয়, তারপর শঙ্কিত লোকগুলোকে গল্প শুনতে কিংবা তার সঙ্গে গলা মিলিয়ে কোরাস গাইতে বাধ্য করে। তার সেই গান ইয়ো-হো-হো, কী যে মজার ঝংকারে কেঁপে ওঠে আমাদের বাড়ি। ভয়ে ভয়ে তার সঙ্গে গানে যোগ দেয় সবাই। কার চেয়ে কে বেশি চেঁচাতে পারে যেন তারই প্রতিযোগিতা চলে। আচমকা হয়ত থেমে যায় নাবিক। জোরে টেবিলে চাপড় মেরে শব্দ করে থামিয়ে দেয় অন্যদেরও। তারপর শুরু হয় গল্প। তার কথার মাঝে কেউ প্রশ্ন করে বসলে খেপে যায়। আবার সবাই চুপচাপ থাকলেও রেগে ওঠে সে-ধরে নেয় তার গল্পের প্রতি অবহেলা দেখানো হচ্ছে। কাউকেই ঘর থেকে বেরোতে দেয় না সে এই সময়। গেলাসে চুমুক দিতে দিতে একটানা গল্প বলে যায়, যতক্ষণ না নেশায় জড়িয়ে আসে তার কণ্ঠ, যতক্ষণ না ঢলে পড়ে যায়। তারপর ছুটি পায় শ্রোতারা।

ক্যাপ্টেনের গল্প শুনে দারুণ ভয় পায় লোকে। ভয়ানক সে-সব গল্প। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারার বিবরণ, দূর সাগরে প্রচন্ড ঝড়ের বর্ণনা, স্পেনীয় সাগরে ভয়াবহ নৃশংসতার কাহিনী, ইত্যাদি হল তার বিষয়বস্তু। বিবৃতি থেকেই বোঝা যায় সাগরবক্ষে ভয়ঙ্কর সব পিশাচ-মানুষের সঙ্গে জীবন কেটেছে তার। ভয়াবহ এসব কাহিনী শুনতে শুনতে ভয়ে সিঁটিয়ে যায় আমাদের গেঁয়ো লোকেরা। বাবার আশঙ্কা, ক্যাপ্টেনের ভয়ে সরাইয়ে খরিদ্দার আসা বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমার ধারণা অন্যরকম। রোমাঞ্চকর গল্প শুনতে ভালবাসে মানুষ। তাছাড়া ক্যাপ্টেনের পয়সায় মদ গিলতে পেয়ে বরং খুশিই হয় গ্রামবাসীরা। কিছু কিছু যুবক তো নাবিকের ভক্তই হয়ে উঠেছে। দুর্দান্ত জাহাজী, পোড়-খাওয়া বুড়ো, ইত্যাদি খেতাব দিয়েছে ক্যাপ্টেনকে তারা। এইসব নাবিকই নাকি ইংল্যান্ডের গৌরব।

সময় যায়। কাটে দিন, পেরিয়ে যায় সপ্তাহ, আসে মাস। একে একে কেটে যায় কয়েক মাস। জমানো টাকা সব খরচ হয়ে গেল ক্যাপ্টেনের। সরাইয়ের বিল বইয়ে তার নামে বাকি পড়তে লাগল। কিন্তু যাবার নাম নেই নাবিকের। টাকাও চাওয়া যায় না। চাইলেই নাক দিয়ে ফোঁস ফোঁস আওয়াজ তুলে চোখ পাকিয়ে তাকায়। হাত কচলে তার ঘর থেকে বেরিয়ে আসা ছাড়া তখন আর কিছুই করতে পারে না বাবা। বাবার অকাল মৃত্যুর এটাও একটা কারণ হতে পারে।

ক্যাপ্টেনের সবকিছুই অদ্ভুত। সরাইয়ে আসা পর্যন্ত কক্ষনও পোশাক বদলাতে দেখলাম না তাকে, কেবল মোজা ছাড়া। এখানে এসে কোন পোশাক কেনেওনি, ওই মোজা ছাড়া। টুপির একটা ধার ভেঙে গেল একদিন, কিন্তু সারাল না। আর কোটের তো চেহারাই বদলে ফেলল তালি মেরে মেরে। ছিড়ে গেলেই সুইসুতো নিয়ে বসে যায়। নিজেই তালি লাগায় ছেড়া জায়গায়। আসা পর্যন্ত কাউকে চিঠি লিখল না সে, কারও কাছ থেকে চিঠি পেলও না। নেশার ঘোরে ছাড়া পারতপক্ষে কথাও বলতে চায় না লোকের সঙ্গে। আর সিন্দুকটা, ঈশ্বরই জানেন কি আছে ওতে-ক্যাপ্টেনকে খুলতে দেখলাম না কখনও।

নতুন ঘটনা ঘটল একদিন। বাবার শরীরের অবস্থা খুবই খারাপ। সাঁঝের পরে তাকে দেখতে এলেন ডাক্তার লিভসী। রাত হয়ে গেল। ডাক্তার চাচাকে খেয়ে যেতে বলল মা। এড়াতে না পেরে আমাদের এখানেই ডিনার সারলেন তিনি। তারপর বিদায় নিয়ে নেমে এলেন হলরুমে। আমাদের আস্তাবল নেই, ঘোড়াও নেই। নিজের ঘোড়া আসার অপেক্ষায় আছেন তিনি। ছিমছাম পোশাক পরা, বুদ্ধিদীপ্ত এই লোকটির উজ্জ্বল কালো দুই চোখের তারায় হাসি যেন উপচে পড়ে। আমাদের গেঁয়ো প্রতিবেশী আর নোংরা, কাকতাড়ুয়ার মত চেহারার নাবিকের পাশে বড়ই বেমানান এই গণ্যমান্য লোকটি। তবে যে কোন লোকের সঙ্গে সহজ ভাবে মেশার ক্ষমতা তার অপরিসীম।

পাইপ টানতে টানতে বুড়ো মালি টেলরের দিকে তাকালেন ডাক্তারচাচা। দরজার কাছে একটা চেয়ারে বসে আছে বুড়ো। মালি তাঁর দিকে চাইতেই হাতের ইশারায় কাছে ডাকলেন।

টেবিলে দুহাত, ছড়িয়ে বসে আছে চুর-মাতাল ক্যাপ্টেন। বহুবার গাওয়া সেই গানটি গেয়ে উঠল হঠাৎঃ

মরা মানুষের সিন্দুকটায়
চড়াও হল পনেরো নাবিক,
আরেক বোতল রাম নিয়ে আয়
ইয়ো-হো-হো, কী যে মজা।।

প্রথমে ভেবেছি, তার ঘরের সিন্দুকটার কথাই বলে। এই চিন্তাটা দুঃস্বপ্লে খোঁড়া নাবিকের তাড়া-করা দৃশ্যের সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে যায়। নাবিক আসার পর এতবার শুনেছি, শেষদিকে আর বিশেষ আমল দিই না গানটাকে। কিন্তু ডাক্তার লিভসীর কাছে ব্যাপারটা নতুন। বিরক্ত দৃষ্টিতে একবার তাকালেন ক্যাপ্টেনের দিকে। তারপর বুড়ো মালি টেলরের সঙ্গে কথা বলতে লাগলেন আবার।

এদিকে ক্রমেই গানে মাতোয়ারা হয়ে উঠছে নাবিক। শেষে, জোরে টেবিলে চাপড় মারল। এর অর্থ জানি আমরা। সঙ্গে সঙ্গে চুপ হয়ে গেলাম। কিন্তু ডাক্তার সাহেব জানেন না। কথা বলছেন তিনি, ফাঁকে ফাঁকে পাইপ টানছেন। চোখ পাকিয়ে তার দিকে তাকাল ক্যাপ্টেন, তারপর আরও জোরে চাপড়াল। ধমকে উঠল, চো-ও-ও-প!

আমাকে বলছেন? চোখ তুলে তাকালেন ডাক্তারচাচা।

গাল দেবার ভঙ্গিতে বলল নাবিক, ডাক্তার চাচাকেই বলছে।

একটা কথা না বলে পারছি না আপনাকে, বললেন ডাক্তারচাচা। এভাবে রাম গিলতে থাকলে শিগগিরই একটা শয়তানের হাত থেকে বাঁচবে পৃথিবী।

ভীষণ খেপে গেল নাবিক। লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল। ছুরি বের করে ফেলল! হাতের চেটোর ওপর নিয়ে ভারসাম্য পরীক্ষা করতে করতে হুঁশিয়ার করল, বেশি বাড়াবাড়ি করলে ডাক্তার চাচাকে দেয়ালের সঙ্গে গেঁথে ফেলবে।

বিচলিত হলেন না ডাক্তারচাচা। শান্ত, কিন্তু দৃঢ়কণ্ঠে ঘরের সব লোককে শুনিয়ে নাবিককে বললেন, পকেটে ঢোকান ছুরিটা। নইলে ফাঁসিতে ঝুলবেন।

দুজনের মাঝে দৃষ্টির লড়াই শুরু হল। শিগগিরই হেরে গেল ক্যাপ্টেন। দৃষ্টি নত করল। ছুরিটা রেখে দিল। তারপর বসে পড়ে মার-খাওয়া কুকুরের মত গোঁ গোঁ করতে লাগল।

দেখুন, বললেন ডাক্তারচাচা। আপনার মত একটি জীব এই এলাকায় আছে, জেনে গেলাম। এখন থেকে নজর থাকবে আমার। কেবল ডাক্তার নই, আমি একজন ম্যাজিস্ট্রেটও। কথাটা মনে রাখবেন।

একটু পরেই ঘোড়া এসে গেল। চলে গেলেন ডাক্তার লিভসী। সে রাতে আর কোনরকম গোলমাল করল না ক্যাপ্টেন। পরের কয়েক রাতেও চুপচাপই থাকল।

<

Super User