ন্যাড়া রিজটার মাথায় রনি তার সাদা গেল্ডিংটা থামাল। ওখানে কোন মাটি নেই, বাতাস ঝেঁটিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে। কেবল কয়েকটা সিডার গাছ পাথরের উপরই জায়গা করে নিয়েছে। ওরা যে পাথর থেকে কেমন করে খাবার জোগাড় করে সেটা সত্যিই একটা আশ্চর্যের বিষয়। এক ঘণ্টার মধ্যেই সূর্য ডুবে যাবে। বাতাসটা অসম্ভব রকম পরিষ্কার। এত পরিষ্কার যে সামনের উপত্যকার প্রতিটা খুঁটিনাটি দেখা যাচ্ছে। যদিও উপত্যকাটা কম হলেও দশ মাইল দূরে।

যেখানে সে থেমেছে সেখানে সূর্যের আলোটা উজ্জ্বল। পশ্চিমেই যাচ্ছে রনি। বাম দিকের বিশাল উঁচু উঁচু পাহাড় বাকিগুলোকে বামুন করে দিয়েছে। পুব দিকে মেঘ করেছে। বৃষ্টি আসন্ন। মেঘের দিকে চেয়ে দেখল রনি। ওর ঠিক পছন্দ হচ্ছে না। ভিজতে হবে।

সেভেন পাইনস পশ্চিমের একটা কঠিন জায়গা। ওটা এখনও বারো মাইল দূরে। পাহাড়ের পিছনে। কিন্তু ওখানে পৌঁছানোর আগেই বৃষ্টিতে ভিজে চুপচুপে হতে হবে ওকে। এখন ওর একটা আশ্রয় দরকার। বিশেষ প্রয়োজন।

ঘোড়ার পিঠে চড়ে সে চারদিক খুঁটিয়ে দেখল। স্টেজের রাস্তা মাইল খানেক উত্তরে। কিন্তু ওদিকে কোন আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। আগেই খোঁজ খবর নিয়ে এসেছে সে। পাকা খবর। মেঘ এগিয়ে আসছে। বিজলি চমকাচ্ছে। ভিজতেই হবে-বাঁচোয়া নেই। রক্তরাঙা ট্রেইল

দক্ষিণ আর পশ্চিমে উপত্যকাটা সরু হয়ে পরে আবার চওড়া হয়েছে। বৃষ্টির পর জায়গাটা পিছল, আর কাদাকাদা হয়ে যায়। পথ চলাই বিপদ। পাহাড়ে খাঁজ রয়েছে, কিন্তু এই ঝড়ে ওগুলো নিরাপদ হবে না। রনি জানে, পশ্চিমে অনেক দিন আছে সে। কোথায় বিপদ এটা ওর ভাল করেই জানা আছে।

রওনা হতে যাচ্ছে, এই সময়ে ওর চোখের কোনে একটা নড়াচড়া ধরা পড়ল। থমকে দাড়াল সে। নিচের ক্যানিয়নে কয়েকজন রাইডার দেখা যাচ্ছে। ওদের মাঝে কি যেন একটা বিশেষ কিছু রনিকে সাবধান করল। ঘোড়াটাকে একটা জুনিপার গাছের আড়ালে কিছুটা আড়াল করল। এত দূর থেকে বিনকিউলার দিয়েও সে কোন চেহারা চিনতে পারল না। কেবল একটা ঘোড়ার সাদা নাক ওর চোখে পড়ল। ছয়জন আরোহী। দ্রুত উত্তর দিকে এগোচ্ছে ওরা।

ওরা অদৃশ্য হওয়া পর্যন্ত ওদের লক্ষ করল রনি। একটু বিকৃত মুখে-কারণ এই দেশটাকে সে ভাল করেই চেনে। এই এলাকায় যদিও সে নতুন তবু ওর বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না যে লোকগুলোর মতলব খারাপ। পাহাড়ের কোল ঘেঁসে ওরা স্টেজ রাস্তার দিকে এগোচ্ছে। নিজেদের অবস্থান যতদূর সম্ভব লুকাবার চেষ্টা করছে।

ঠিক আছে, টপার, শান্ত স্বরে ঘোড়াটাকে বলল রনি। চলো দেখা যাক ওদের কি মতলব। আমাদের মত ওদেরও ভেজার শখ নেই।

সাদা ঘোড়াটা দ্রুতবেগে কোনাকুনি উত্তর দিকে ছুটে চলল। আর একবার কাছিয়ে আসা মেঘের দিকে চেয়ে রনি তার পিস্তল দুটো বের করে ধুলো মুছল। দুটোই বহুল ব্যবহৃত কোল্ট ৪৫। ওগুলোর হাড়ের হাতলে চিকন ফাটল ধরেছে, কিন্তু চমৎকার ব্যালেন্স। বেশ কিছুদিন হলো সে পিস্তল ব্যবহার করেনি, কিন্তু ওগুলোর ব্যবহারে ওর পাকা হাত।

বর্তমানে ওর গন্তব্য স্থান সেভেন পাইনস। কিন্তু আসলে সে ঘুরতে বেরিয়েছে। উত্তরে তার এক বন্ধু আছে, নাম মরিসন। থ্রী এম র‍্যাঞ্চে সে তার বিধবা মেয়ের সাথে থাকে। ওদের সাথে কিছুদিন কাটিয়ে উত্তরে মনট্যানা যাওয়ার ইচ্ছা আছে তার।

সামনের আরোহীরা রনিকে কিছুটা বিব্রত করছে। কিন্তু ওদের সাথে বিরোধে যাওয়ার ইচ্ছে ওর নেই। ওর এই যাত্রাটা কেবল দেশ দেখার জন্যে। সাথে যথেষ্ট টাকা আছে, কোন তাড়া নেই।

কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি পড়ল হ্যাটের উপর। পানি ঝেড়ে ফেলে, বর্ষাতি বের করল রনি। ঘোড়ার গতি একটুও না কমিয়ে বর্ষাতি পরে নিল সে। রিজ থেকে নেমে ব্যস্ত চোখে আশ্রয় খুঁজছে। একটা মাইন চোখে পড়ল, কিন্তু টানেলটা ধসে পড়েছে। দালানও ভেঙে গেছে।

পাহাড়ের ধারে এসে সামনের মানুষগুলোর ট্রেইল দেখতে পেল রনি। বইয়ের পাতার মতই সহজে দাগগুলো পড়ল সে। ঘোড়াগুলো তাজা-একটার খুর কেটে সরু করা হয়েছে। আবার এক পশলা বৃষ্টি এল। তারপর বেগ বেড়ে মুষল ধারে বৃষ্টি শুরু হলো।

মাইন থেকে একটা ক্ষীণ ট্রেইল নিচের দিকে নেমেছে। এতে কিছুটা জোরে ঘোড়া ছুটাবার সুযোগ পেল রনি। পাহাড়ের গা বেয়ে মেইন রাস্তায় নেমে এল সে। ক্ষণিকের জন্যে থেমে আবার আরোহীদের ট্রাকগুলো দেখতে পেল। বৃষ্টিতে এখনও মুছে যায়নি। রাস্তা পার হয়ে ঝোঁপের ভিতর দিয়ে রাস্তার সমান্তরাল ভাবে এগিয়েছে ওরা।

বৃষ্টির বেগ কিছুটা কমে এল। বৃষ্টির ফোঁটা অনেক দিনের শুকনো ধুলোর ওপর পড়ার পরিচিত গন্ধ ওর নাকে এল। তারপর প্রচণ্ড শব্দে একটা বাজ পড়ার সাথে আবার বৃষ্টি শুরু হলো। বাতাসের বেগও বেড়েছে। মেঘে সূর্য ঢাকা পড়ার পর এখন বেশ অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। কেবল বারবার বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় কিছুটা দেখা যাচ্ছে।

স্টেজের রাস্তায় উঠল রনি। ঘোড়াটা তার স্বাভাবিক গতি বজায় রেখেছে। হঠাৎ করেই ঝড়ের বেগ শান্ত হয়ে এল। নীরবতার মাঝে কতগুলো গুলির আওয়াজ রনির কানে এল।

দুটো…আরও তিনটে…তারপর আরও একটা। শেষটা একক, ফাইনাল শট। কিছুর যেন সমাপ্তি ঘটল।

লাগাম টেনে থেমে দাঁড়িয়ে কান পেতে শোনার চেষ্টা করল রনি, কিন্তু কিছু শোনা গেল না। আবার বৃষ্টি শুরু হলো। প্রথমে ধীরে তারপর প্রচণ্ড ধারায়। হ্যাটটা সামনের দিকে কিছুটা টেনে নামিয়ে, বর্ষাতির কলার উঁচিয়ে কান দুটো প্রায় ঢেকে, গুলির শব্দ সম্পর্কে ভাবছে সে। একটা ঠাণ্ডা পানির ফোঁটা ওর ঘাড়ের পিছনে পড়ে শিরদাঁড়া বেয়ে নিচে নামল। শিউরে উঠে অন্ধকারের ভিতর সামনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ঠাহর করে দেখার চেষ্টা করল সে।

অন্ধের মত গোলাগুলির এলাকায় হাজির হওয়াটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এই এলাকাটা তার কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত, যেটুকু জানে সেটাও লোকের মুখে শোনা। এখন ট্রেইল ছেড়ে সরে গেলে হারিয়ে যাওয়াটা মোটেও বিচিত্র হবে না। হঠাৎ সে অনুভব করল ঘোড়ার পেশীগুলো শক্ত হয়ে উঠেছে। বিদ্যুতের চমকে দেখতে পেল একটা গাঢ় আকারের কিছু কাদার মধ্যে হাত-পা ছড়িয়ে পড়ে আছে।

থেমে দাঁড়িয়ে আবার বিদ্যুৎ চমকাবার অপেক্ষায় রইল রনি। বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হলো না। লোকটার পিছনে যতদূর দেখা যায় দেখল-ট্রেইলটা খালি। এখানে যা ঘটেছে সেটা এখন শেষ। লোকটার পাশে নেমে ওকে চিত করল। মৃত সাদা একটা মুখের ওপর বৃষ্টির ফোঁটা পড়ল। দেহটা বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। একটা ম্যাচের কাঠি জ্বেলে বৃষ্টির থেকে আড়াল করে দেখল, আগের গুলিগুলোর আঘাতেই লোকটা পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু শেষ গুলিটা করা হয়েছে। খুলির সাথে পিস্তল ঠেকিয়ে। গুলিতে লোকটার চামড়া আর চুল পুড়ে গেছে। লোকটার মৃত্যু ওরা একেবারে নিশ্চত করেছে।

লোকটার পকেট হাতড়ে কাগজ-পত্র টাকা পয়সা যা ছিল বের করে নিল রনি। ওগুলো তার আত্মীয়-স্বজন কেউ থাকলে তাদের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। কাগজ-পত্র থেকে হয়তো ওর পরিচয়টাও জানা যাবে। এই বৃষ্টির পানিতে ভিজে লেখাগুলো দুর্বোধ্য হয়ে যাবে রক্ষা করা না হলে।

লোকটা নিজের জীবন রক্ষা করার চেষ্টা করেছিল। পিস্তলটা এখনও ওর হাতেই ধরা রয়েছে। ওটা থেকে একটা গুলিও ছোঁড়া হয়েছে।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওখানে দাঁড়িয়ে পরিস্থিতিটা বোঝার চেষ্টা করল রনি। লোকটাকে স্টেজ থেকে জোর করে নামিয়ে নেয়া হয়েছিল। কারণ লোকটা ট্রেইলের একপাশে পড়ে আছে। দেখে মনে হচ্ছে ওকে তার সুযোগ দেয়া হয়েছিল। সুযোগ নিয়ে হেরে গিয়েছে। স্টেজের চাকার দাগ গভীর হয়ে ট্রেইলের ওপর বসে গেছে। হোল্ডআপ, বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল রনি। লোকটা হয়তো নিজেই লাগতে গেছিল কিংবা জোর করে ওকে লাগতে বাধ্য করা হয়েছে। ওকে ঠিক কাঁচা বলা যাবে না, আগেও সে গান-ফাইট করেছে।

ঘোড়ার পিঠে চেপে ট্রেইল ধরে কিছুদূর এগিয়ে গিয়ে বিজলীর চমকে আরও একজনকে পড়ে থাকতে দেখে থামল। নেমে ঝুঁকে লোকটাকে ছুঁতেই সে ককিয়ে উঠল। সোজা হয়ে আবার বিদ্যুৎ চমকালে পাহাড়ের গায়ে একটা ছোট গুহা ওর চোখে পড়ল।

ঘোড়াকে জুনিপার গাছের সাথে বেঁধে রেখে লোকটাকে তুলে গুহায় নিয়ে এল রনি। ভিতরটা শুকনো। মরা একটা উপড়ে পড়া গাছের থেকে শুকনো কাঠ সংগ্রহ করে আগুন জ্বালাল সে। ভাল করে জ্বলে উঠলে কিছু পানি গরম করতে দিয়ে আহত লোকটার কোট আর শার্ট খুলে ফেলল। এক নজরেই বোঝা গেল লোকটা গুরুতর ভাবে আহত হয়েছে।

প্ৰথম গর্তটা বাম পাশে নিচের দিকে কিছুটা মাংস কেটে নিয়ে বেরিয়ে গেছে। ওটার থেকে অনেক রক্ত বেরিয়েছে। পুরো জামা রক্তে ভেজা। কিছুটা উপরে আরেকটা জখম, ওটা মারাত্মক। ঠিক হার্টের একটু উপরে।

পানি গরম হলে, সময় নিয়ে ক্ষতগুলোকে ভাল করে ধুয়ে কিছুটা রোস্ট করা প্রিকলি-পেয়ার পাতা ছিলে শক্ত করে বেঁধে দিল। ফোলা কমানোর জন্যে ইণ্ডিয়ানরা এই ওষুধ ব্যবহার করে। বুলেটের ক্ষত রনির কাছে নতুন কিছু নয়, কিন্তু সে জানে লোকটার বাঁচার সম্ভাবনা খুব কম। তবু লোকটার বয়স কম, শক্ত গড়ন, স্বাস্থ্যও ভাল, তাই বলা যায় না।

আরও কিছু কাঠ সংগ্রহ করে ঘোড়াটাকে গুহার ভিতরে এনে জিন খুলে দিল। ফিরে আসার সময়ে লক্ষ করল তার রুগীর চোখ খোলা। অবাক বিস্ময়ে লোকটা চারপাশে দেখছে। আরও এগিয়ে এসে রনি বলল, বিশ্রাম নাও, বন্ধু, খারাপ দুটো চোট পেয়েছ তুমি।

লোকটা ভুরু কুঁচকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে প্রশ্ন করল, কে, কে তুমি?

ভেসে বেড়াচ্ছি। আমার সামনে কিছু গোলাগুলির শব্দ পেলাম। যখন এগিয়ে এলাম একটা লাশ দেখতে পেলাম, তারপর তোমাকে।

তাহলে একজনকে আমি ঘায়েল করতে পেরেছি?

মনে হয় না। লোকটার পরনে একটা ফ্রক কোট ছিল। টুপিটা কালো। কঠিন চেহারা, গোঁফ লালচে।

ওহ। সে ছিল একজন যাত্রী। কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল সে। শ্বাসটা ভারি। লোকটা পরিচ্ছন্ন, সুদর্শনই বলা যায়। কোমরে দুটো পিস্তল ঝুলছে, এবং মনে হয় ওগুলোর ব্যবহার সে জানে।

কি ঘটেছিল? রনি প্রশ্ন করল।

ডাকাতি। আমি স্টেজের ছাদে শটগান নিয়ে পাহারায় ছিলাম। ওরা প্রথমেই আমাকে গুলি করেছিল, কিন্তু আমি টিকে রইলাম। ধারণা করেছিলাম ওদের একজনকে খতম করেছি। ওরা আবার আমাকে গুলি করলে আমি স্টেজকোচ থেকে পড়ে যাই। ওরা মুখোশ পরা ছিল। প্রত্যেকবারই তাই ঘটে।

সব সময়ে?

তিন মাসে এটা চতুর্থবার…এটা ছিল আমার প্রথম ট্রিপ। আগের গার্ডগুলো সবাই মারা পড়েছে। একটু ক্ষীণ হাসি দেখা দিল আহত লোকটার মুখে। যারা এই কাজ করছে তারা শটগান মেসেঞ্জারদের মোটেও পছন্দ করে না।

শুকনো মাংস আর ময়দা দিয়ে ব্রথ তৈরি করছিল রনি। এখন সেটা গরম হয়েছে। আহত লোকটাকে একটু একটু করে খাওয়াল সে। আশা করছে এতে লোকটা একটু বাড়তি শক্তি পাবে। অনেক রক্ত হারিয়েছে

তোমার নামটা কি, বন্ধু? আমার জানা দরকার।

যুবক রনির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকল। অবস্থা তাহলে এত খারাপ? ভাল, আমার নাম জেমস হার্ট। আমার জন্যে কেউ দুঃখ করবে বলে মনে হয় না। তবে তুমি আমার ভাইকে একটা খবর দিতে পারো। সে রবার্টস মাউনটিনসে থাকে। ওর নাম ফিনলে হার্ট।

বৃষ্টি কমতে কমতে, এখন শুধু সরু ধারায় পানি বয়ে যাওয়ার শব্দ, আর গাছ থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় পানি পড়ার শব্দ হচ্ছে। আহত লোকটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। ওর টেনে-টেনে শ্বাস নেয়া দেখে রনির দুশ্চিন্তা হচ্ছে। স্টেজটা সেভেন পাইনসে পৌঁছে থাকলে ওখান থেকে লোকজন ডাকাতিতে যারা চোট পেয়েছে তাদের খুঁজতে আসবে। কিন্তু ওরা হয়তো দুজনই মারা পড়েছে বলে ধরে নিতে পারে। টপারের পিঠে জিন চাপিয়ে শক্ত করে পেটি এটে দিল রনি। সাহায্য আসার অপেক্ষায় বসে থেকে, জেমসকে একা রেখে, তাকেই যেতে হবে।

জেমস যখন আবার চোখ খুলল তখন আকাশটা মেঘাচ্ছন্ন হয়ে উঠেছে। প্রথমেই সে খেয়াল করল সাদা ঘোড়াটার ওপর জিন আঁটা হয়েছে। রনির দিকে চেয়ে সে ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বলল, আমার অবস্থা খুব সুবিধের মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে খারাপের দিকেই যাচ্ছি।

হ্যাঁ। আহত লোকটাকে তুলে একটু আরামদায়ক ভাবে বসাল সে। সেভেন পাইনসটা কত দূরে? তোমার একজন ডাক্তার দরকার।

বারো মাইল। ডাক্তার হ্যাডলের খোঁজ কোরো লোকটা ভাল।

ক্ষতগুলো আবার ধুয়ে দিল রনি। তারপর প্রিকলি-পেয়ারের পাতা দিয়ে বেঁধে দিল। ক্ষতগুলো এখন আর ততটা খারাপ দেখাচ্ছে না।

আমি ডাক্তারকে আনতে যাচ্ছি। তুমি ঠিক থাকবে তো? জেমসের চোখে হাসিমাখা বিদ্রুপের ছায়া পড়ল। মনে হয় না এই অবস্থায় কোথাও গিয়ে আমার হাত-পা ভাঙার সম্ভবনা আছে। আর ডাক্তার ছাড়া আমার ভাল হওয়ার সুযোগ কম। আশাপূর্ণ দৃষ্টিতে রনির দিকে চেয়ে সে বলল, তোমাকে যেতে দেখে আমার খুব খারাপ লাগছে, বন্ধু।

আহত লোকটার একটা পিস্তল বের করে ওর হাতে দিয়ে সে বলল, সাবধানের মার নেই। তুমি কিছু জানো মনে করে ওরা হয়তো আবার ফিরে আসতে পারে। কিন্তু আমার ধারণা হচ্ছে ওরা আর ফিরবে না। তোমার ভয়ের কিছু নেই।

ট্রেইল ধরে দ্রুতবেগে ঘোড়া ছুটিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে রনি। টপার দৌড়াতে ভালবাসে। এখন সে দৌড়াচ্ছে। চার মাইলের বেশি এগোয়নি-ট্রেইলের ওপর দূরে একটা কালো কি যেন ওর চোখে পড়ল। দ্রুত ওটা একটা বাকবোর্ডের রূপ নিল। পিছনে ছয়জন আরোহী। বাকবোর্ডে দুজন আরোহী, শক্ত গড়নের একজন কালো চুল আর কালো গোঁফের অধিকারী; অন্যজন লম্বা গড়নের যুবক, ওর সোনালি গোফ ছোট করে ছাটা। নীল চোখ দুটো ঠাণ্ডা কিন্তু বন্ধুসুলভ। রনি হাত তুলে ইশারা করায় ওরা থেমে দাঁড়াল।

সামনে একজন আহত মানুষ রয়েছে, বলল সে। তাড়াতাড়ি যাওয়া দরকার। ডাক্তার হ্যাডলে কি এখানে আছে?

সোনালি চুলের যুবক মাথা ঝাঁকাল। আমি হ্যাডলে।

ঘোড়া ঘুরিয়ে ফিরতি পথে এগোল রনি। ওদের একজনের বুকে স্টার শোভা পাচ্ছে। লোকটা বয়স্ক, লম্বা গড়ন। ওর গোঁফ ঠোঁটের দুপাশ দিয়ে নিচে নেমেছে। জীবিত লোকটা কে?

হার্ট নামের একজন।

সে কিছু বলেছে?

রনি অনুভব করছে চারপাশ থেকে সবাই ওকে ঘিরে রেখেছে–মনোযোগ দিয়ে ওরা কথা শুনছে। খারাপ ভাবে আহত হয়েছে সে। প্রশ্নের উত্তরটা এড়িয়ে গেল ও। ওরা কিছু নিতে পেরেছে?

সবই নিয়েছে, বাকবোর্ডের শক্ত গড়নের মানুষটা জবাব দিল। আমাকে প্রায় দেউলে করে দিয়েছে। আমার তিরিশ হাজার ডলারের সোনা নিয়ে গেছে। এমন আর একটা ডাকাতি হলে আমি শেষ হয়ে যাব।

ক্যানিয়নের ভিতর ঢুকে রনির ইশারায় সবাই থামল। পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর রনি হঠাৎ থমকে দাঁড়াল। ওর চেহারাটা ফ্যাকাসে হলো।

মারা গেছে জেমস হার্ট। পিস্তলটা ওর হাতেই ধরা। নলটা কপালের ওপর।

আত্মহত্যা! একজন বলে উঠল। নিজেকে গুলি করেছে সে।

দেখে তাই মনে হচ্ছে, আর একজন বলল। ধীরে মাথা তুলে বক্তার দিকে তাকাল রনি। লোকটার স্বরে যেন সন্তুষ্টি প্রকাশ পেল।

কিন্তু এমন একটা কাজ সে কেন করল? এই লোকটাই আত্মহত্যার কথা প্রথম উল্লেখ করেছিল। এর কোন মানেই হয় না।

রনি ওদের পাশ থেকে সরে গেল। তার কঠিন নীল চোখ মেঝেটা খুঁটিয়ে দেখছে। ব্যর্থতায় ওর ঠোঁট বাঁকা হয়ে গেছে। কিন্তু সে কি করতে পারত? লোকটার ডাক্তারের চিকিৎসার প্রয়োজন ছিল।

নিশ্চয় দারুণ যন্ত্রণার মধ্যে ছিল সে, একজন মন্তব্য করল। মনে হয় সে আর সহ্য করতে পারেনি।

শেরিফ কোন মন্তব্য করেনি। রনি ওর দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাল। বুড়ো যখন কোন কথা বলল না, রনি শান্ত স্বরে বলল, আত্মহত্যা করেনি সে। ওকে খুন করা হয়েছে।

খুন? সবাই ওর দিকে চোখ ফেরাল।

হ্যাঁ, খুন, পুনরাবৃত্তি করল রনি। আমি যখন ওকে ছেড়ে যাই তখন সে জীবিত আর আশাবাদী ছিল। নিজেকে সে হত্যা করেনি।

তোমার কাছে কি মনে হচ্ছে, রবার্ট? বক্তা একজন পুষ্ট, লম্বা মানুষ, চওড়া লাল মুখ ওর। যদি আত্মহত্যা না হয় তবে এটা কি? পিস্তলটাও ওর হাতেই রয়েছে।

রবার্ট চতুর চোখে রনির দিকে চেয়ে চিন্তিত ভাবে নিজের গোঁফ টানল। তুমি যখন যাও তখন সে জীবিত ছিল? পিস্তলটা কি ওর হাতের কাছে ছিল?

ওটা আমিই ওর হাতে তুলে দিই। আমি যেতে চাইনি, কিন্তু ডাক্তারের প্রয়োজন ছিল ওর। আমার বিশ্বাস সে বাচত।

ডাক্তার রবার্ট ওর দেহটা পরীক্ষা করে মুখ তুলে চাইলেন। কথাটা সত্যি। ক্ষতগুলো বেশ সুস্থ অবস্থাতেই আছে। ওর জখমের ওপর ওটা কিসের পটি?

প্ৰিকলি-পেয়ার, ইণ্ডিয়ানরা ওটা ক্ষতের উন্নতির জন্যে ব্যবহার করে।

দেখো! লাল মুখের লোকটা পিস্তলের অবস্থান দেখিয়ে বলল, এটা যদি আত্মহত্যা না হয় তবে এটা কি?

রনির রাগ তেতে উঠছে। চোখ তুলে চাইল সে-কঠিন শীতল চোখ। আমি যখন যাই তখন লোকটা জীবিত ছিল, পুনরায় বলল সে। ওর জখম কঠিন হলেও ও সামলে উঠতে শুরু করেছিল। ওর মধ্যে, কঠিন সুরে কথাগুলো বলল সে, বিন্দুমাত্র কাপুরুষতার লক্ষণও ছিল না। সে কিছুতেই আত্মহত্যা করেনি।

নিশ্চয় সে আবার জ্ঞান-হারিয়েছিল, কেউ এখানে সেই সুযোগে ঢুকে ওর পিস্তল দিয়েই ওকে খুন করে পিস্তলটা ওর হাতেই ধরিয়ে দিয়ে গেছে। দেখে ওর পিস্তলটা কোথায় আছে। নিজেকে গুলি করলে পিস্তলটা ওর হাত থেকে ছিটকে দূরে গিয়ে পড়ত!

ডাক্তার হ্যাডলে মাথা ঝাঁকালেন। ভদ্রলোক ঠিকই বলেছে, গুলির পিছু-ধাক্কায় ওটা দূরে ছিটকে পড়ত। তাছাড়া এত কাছ থেকে গুলি করলে কপালে বারুদের পোড়া দাগ থাকত। কিন্তু চামড়ার ওপর আমি তেমন কোন দাগই দেখতে পাচ্ছি না।

লাল মুখো লোকটা রনির ওপর নজর রেখেছিল। ধীরে ওর নজর কালো সমব্রেরো, শার্ট, বুটের ভিতরে ঢুকানো প্যান্ট আর উরুর সাথে ফিতে দিয়ে বাঁধা পিস্তল দুটোর উপর পড়ল। এতে তোমার পরিস্থিতি কিছুটা খারাপের দিকেই যাচ্ছে। তুমিই ওকে শেষ জীবিত দেখেছ।

না, বরফ শীতল চোখে ওর দিকে চাইল রনি। খুনীই ওকে শেষ দেখেছে। মাথা ঝাঁকিয়ে ট্রেইলের পিছন দিকটা দেখাল সে। ওখানে আরও একজন আছে। ফ্রক কোট পরা বিশাল দেহ মানুষ।

রনি মানুষগুলোকে চিনতে শুরু করেছে এখন। যে লোকটা বাকবোর্ড চালাচ্ছিল তার নাম হ্যারিংটন। মাইনের সুপার আর আংশিক মালিক। ক্ষতির ভারটা ওর ঘাড়েই পড়বে। লাল মুখো মানুষটার নাম অ্যাডাম। ঘোড়া বেচা-কেনার ব্যবসা ওর। একটা লিভারি আস্তাবলও আছে। তিরিশ মাইল দূরে মাইনে সে গরুও সরবরাহ করে। আরেকজন হলুদ চোখের গাল বসা লোক, উরুর সাথে বাধা ওর পিস্তল, নাম রেড। ফ্ৰককোট পরা মৃত লোকটার খোঁজে গিয়েছিল সে।

ওর সবকিছু লুটে নিয়েছে কেউ, জানাল রেড।

তবে কি আশা করেছিলে তুমি? শুষ্ক স্বরে প্রশ্ন করল রবার্ট। এটা একটা ডাকাতি।

রনি কোন মন্তব্য করল না। জেমস হার্টের কপালে যা ঘটেছে, এরপর নিরিবিলি কাগজ-পত্রগুলো নিজে পরীক্ষা না করে, ওগুলো কারো কাছে হস্তান্তর করতে সে রাজি নয়।

শহর থেকে আরও একজন লোক এসে হাজির হলো। সুগঠিত গড়ন, প্রিয়দর্শন, চল্লিশ মত বয়স। কি খবর, কেসি? মৃত লোকটার দিকে মাথা হেলিয়ে ইঙ্গিত করল রবার্ট। কেউ ওকে আগে দেখেছ?

আমি দেখেছি। সিগারেট তৈরি করার জন্যে কাগজের আঠার ওপর জিভ ঠেকাল রেড। লোকটার নাম সায়মন। নামকরা একজন গানফাইটার।

সায়মন! লাশটার দিকে চেয়ে বলল বেন কেসি। মারা গেছে! কে করল এই কাজ?

সেটা জানলে অনেক প্রশ্নেরই জবাব মিলত, মন্তব্য করল রবার্ট। মনে হচ্ছে কাজটা যে করেছে সে তাকে পুরো সুযোগই দিয়েছিল, তারপর ওকে ছাদা করে দিয়েছে।

মাথায় পিস্তলের নল ঠেকিয়ে বাকি কাজটা শেষ করেছে, বলল রনি। মনে হচ্ছে ডাকাতের দলটা কোন সাক্ষীই রাখতে চায় না। ভয় পাচ্ছে হয়তো লোকজন ওদের চিনে ফেলবে।

কিছুক্ষণ কেউ কোন কথা বলল না। ডাক্তার হ্যাডলে লাশটাকে পরীক্ষা করে উঠে দাঁড়ালেন। এখানে আমার আর কিছুই করবার নেই, বলল ডাক্তার। তোমার কি মত হ্যারিংটন?

লাশগুলো নিয়ে সেভেন পাইনসের পথে রওনা হয়ে যাওয়াই ভাল, বলল মাইন সুপার।

রনির দিকে ফিরল রবার্ট। তুমি থাকছ তো? আগামীকালের বিচার আর জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে তোমার উপস্থিতি জরুরী।

আমি আছি। ওখানেই যাচ্ছি আমি।

সেভেন পাইনসের পথে আর বিশেষ কোন কথা হলো না। সবাই ওই ডাকাতের দল সম্পর্কে বেশ বিব্রত। গত কয়েকটা স্টেজ ডাকাতিতে ওরা একশো হাজার ডলারেরও বেশি সোনা লুটেছে। সবই ভারি বার। ওগুলো কোথায় খালাস করা যেতে পারে এনিয়ে বেশ কিছু আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বিক্রির সম্ভাব্য সব কয়টা জায়গাকেই খবর দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে।

রনিকে খুঁটিয়ে লক্ষ করছিল হ্যারিংটন। তুমি যেভাবে পিস্তল ঝুলিয়েছ তাতে মনে হয় ওগুলোর ব্যবহার তুমি জানো। জেমসের জায়গায় আমার একজন লোক দরকার।

শব্দ করে হাসল রনি। যা শুনলাম তাতে মনে হয় না ওটা খুব জনপ্রিয় কাজ। শুনেছি শটগান মেসেঞ্জাররা নাকি খুব দ্রুত পটল তোলে।

শান্তভাবে মাথা ঝাঁকাল হ্যারিংটন। তা ঠিক। আমি অস্বীকার করছি না। আমি এমন মানুষ চাই যে সহজে ভয় পায় না। জেমসের গোলাগুলির হাত ভালই ছিল। আমার ধারণা ছিল, এ-সব ডাকাতির পিছনে কারা আছে, তা সে আঁচ করতে পেরেছিল। কিন্তু বেশি কথা বলার অভ্যাস ছিল না ওর। এখন তো সে আর কোন কথাই বলবে না।

ও বলেছিল রবার্টস রেঞ্জে নাকি ওর এক ভাই আছে। খবরটা ওকে পৌঁছাতে বলেছিল।

হ্যাঁ। ফিনলে হার্ট। মাথা নাড়ল হ্যারিংটন। এটা সে সহজ ভাবে নেবে না। বললে ভুল হবে না যে এখন ওই খুনীদের দুশ্চিন্তার কারণ আছে। ভাইয়ের খুনের প্রতিশোধ সে নিয়েই ছাড়বে।

উপত্যকাটা পিছনে ফেলে বাকবোর্ডটা একটা সরু ক্যানিয়ন ধরে এগোল। ছাড়াছাড়া পরিত্যক্ত মাইন আর ছাপরা নজরে পড়ছে। তারপর ট্রেইল শেষ হলো একটা সরু রাস্তায়–দুপাশে ফল্স্ ফ্রন্ট দেয়া বাড়িঘর। ওগুলোর পিছনে সিকি মাইল দূরে পাহাড়টা ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে, দুপাশে প্রচুর বাড়ি-ঘর। কিছু মাইনিঙ ক্লেইম আর কুঁড়ে-ঘরও রয়েছে।

এক্সপ্রেস অফিসটা লিভারি আস্তাবলের ঠিক উল্টো দিকে। এক্সপ্রেস অফিসের পাশেই একটা সেলুন। ওটার বাতির আলো গিয়ে পড়েছে। ওপাশের জেনারেল স্টোরের ওপর। সামনে ঘোড়ার জিনের দোকান, বুটের দোকান, কামারের দোকান, নাপিত আর দাঁতের ডাক্তারের পিছনে আইনজীবীর অফিস রনির নজরে পড়ল। জেল, হোটেল, বিভিন্ন দোকান আর জুয়া খেলার জায়গাও আছে ওখানে। গুনে দেখল মোট নয়টা সেলুন। শেষ মাথায় সোনার আকর মূল্যায়নের অফিস।

লিভারি আস্তাবলের দিকে এগোল রনি। ওর দিকে চেয়ে আছে হ্যারিংটন। ভুলো না! কাজটা এখনও তোমার!

অ্যাডাম আর রেডও ওই দিকে মোড় নিল। অ্যাডাম রনির দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকাল, কিন্তু কিছু বলল না। ঘোড়ার পিঠ থেকে নামল রেড। অ্যাডাম লিভারি স্টেবলে ঢুকলে সে নিচু স্বরে বলল, শটগান মেসেঞ্জারের কাজটা নেয়ার আগে ভাল করে চিন্তা করে দেখো। ওরা বেশিদিন টেকে না।

ঠিক, জবাব দিল রনি। মনে হয় কেউ ওদের মৃত্যু চায়।

এই শহরটায় থাকলে মানুষের ঝামেলাই বাড়ে, মন্তব্য করল রেড। মনট্যানা ভাল জায়গা। কখনও ওখানে গেছ?

হয়তো। অনেক জায়গাই ঘুরেছি আমি।

বুটের মাথা দিয়ে মাটিতে একটা লাথি মেরে টপারের পিঠ থেকে জিন নামানো লক্ষ করল রেড। তোমাকে কেমন যেন চেনা ঠেকছে।

তাই নাকি?

মনে হয় তোমাকে মন্ট্যানায় দেখেছি। কিংবা টেক্সাসে।

কে বলতে পারে? হয়তো। কথাটা হজম করতে রেডের কষ্ট হচ্ছে। এই এলাকায় কঠিন মানুষ হিসেবে ওর নাম আছে। এটা অক্ষুণ্ণ রাখতে চায় ও। ওর প্রশ্নের জবাব কেউ এড়িয়ে যাবে, এটা ওর পছন্দ নয়। কিন্তু ওর ধারণা হচ্ছে এই লোকটাকে জানা ওর দরকার। একান্ত প্রয়োজন। একটা সিগারেট তৈরি করে, আড়চোখে রনির দিকে একবার চেয়ে, এক মুঠো খড় নিয়ে নিজের ঘোড়াটাকে ঘসতে শুরু করল সে।

হার্ট কি অনেক কথা বলেছে? খবর বের করতে চাইছে সে।

বলল ওর এক ভাই আছে, স্বীকার করল রনি। ওকে আমার খুঁজে বের করতে হবে।

জনাব, তোমার কেটে পড়াই ভাল। এই শহরটা মোটেও সুবিধের।

ভাল, রনির চোখ কৌতুকে একটু চিকচিক করে উঠল। আমি কারও সাথে ঝগড়া-বিরোধ করার জন্যে এখানে আসিনি। ঘুরে দরজার দিকে রওনা হলো সে। আবার দেখা হবে।

থামো! রেড এখন খেপে গেছে। আমি তোমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম। সেটার জবাব চাই আমি!

রনি ধীরে আস্তাবলের আধো আলোয় ঘুরে পঁড়াল।

হার্ট কি বলেছে তা আমি জানতে চাই। প্রয়োজন হলে পিটিয়ে আমি তোমার থেকে সেটা বের করব।

কথাটা বলেই সে বুঝতে পারল ভুল কথা বলা হয়েছে। ওর দিকে এক পা এগিয়ে গেল রনি। ঠিক আছে, স্বীকার করে নিল সে। তুমি তাহলে পিটিয়েই তা বের করো। কিন্তু জলদি করো, অপেক্ষা করার সময় নেই আমার।

ঢোক গিলল রেড। জিভ দিয়ে শুকনো ঠোঁট চাটল একবার। সে বুঝে নিয়েছে এই লোককে ধমক দিয়ে কাজ আদায় করা যাবে না–ওর ভয়-ডর বলতে কিছু নেই। পাল্টা চ্যালেঞ্জের মুখে সিঁটিয়ে গেল সে। গোলমাল চাচ্ছে না ও। অন্তত এখন, এখানে নয়।

আরে ছিঃ! বলল সে। তুমি কি আমার কথা সিরিয়াসলি নিলে নাকি? আমি তো ঠাট্টা করছিলাম।

কথার কোন জবাব না দিয়ে রনি ওর দিকে চেয়ে রইল, অপেক্ষা করছে। অস্বস্তিভরে একটা পা সরাল রেড। ওর ছুটে এগিয়ে এসে আঘাত করতে, কিংবা গুলি চালাতে ইচ্ছে করছে। এগুলো চাইছে বটে, কিন্তু ওর সহজাত প্রবৃত্তি ওকে সাবধান করছে, বলছে, এটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

ওকে আর একটা চাহনি দিয়ে রনি বাইরে বেরিয়ে এল। একবারও পিছন ফিরে চাইল না।

কঠিন চোখে ওর প্রস্থান দেখল রেড। তারপর ফিসফিস করে বলল, দেখে নিও! তুমি চব্বিশ ঘণ্টাও টিকতে পারবে না এই শহরে।

<

Super User