পর্বতমালা পেরিয়ে, দিনে গা ঢাকা দিয়ে রাতে পথ চলে ইণ্ডিয়ান এলাকার ভিতর দিয়ে এসেছে ও–লম্বা, সুঠামদেহী এক-তরুণ, রোদে পোড়া তামাটে চেহারা, অবসাদের ছাপ চোখেমুখে। শক্তিশালী একটা মাসট্যাং ওর সঙ্গী। স্টোনি রিভার বেসিনের উত্তরের ঢালে ডাই ক্রীকে থামলো ও, নাশতা করার জন্যে। বারবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে ব্যাকট্রেইলের দিকে তাকাচ্ছে। গতকাল সকাল থেকে তিনজন মেসকেলারো অ্যাপাচী ক্রমাগত অনুসরণ করে আসছে ওকে। অবশ্য পর্বতমালা পেরিয়ে আসার পর এখন আর ওদের দেখা পাবার সম্ভাবনা ক্ষীণ, তবু অ্যাাপাচীদের বোঝা কঠিন।

এক ঘণ্টা কাটলো, ইনডিয়ানদের দেখা নেই। উত্তপ্ত আর একটা দিনের প্রতিশ্রুতিসহ সূর্য উঠলো পুব দিগন্তে। প্রচুর সময় নিয়ে দাড়িগোঁফ কামালো ও। এখন ইনডিয়ানদের ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হওয়ার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। স্টোনি রিভার বেসিনে নতুন প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় নামতে হবে ওকে, এখানে সতর্ক থাকতে হবে রবার্ট ওয়ারেন আর তার দলের বিরুদ্ধে।

পাইপে তামাক ভরে আগুন জ্বাললো ও, আরাম করে বসলো। তারপর একটা চিঠি বের করলো পকেট থেকে, দিন দশেক আগে হাতে এসেছে। চিঠিটা পেয়েই তড়িঘড়ি স্টোনি রিভার বেসিনে ফিরে এসেছে ও। বেশ কয়েকবার পড়া হয়ে গেছে, তবু আবার পড়তে শুরু করলো ওটা।

প্রিয় ফোর্বস,

এ-চিঠি তুমি পাবে কিনা জানি না, তবু পাবে আশা করেই লিখছি। খবরটা তোমাকে না জানিয়ে পারছি না। তোমার বাবার সঙ্গে উপত্যকায় নবাগত র্যাঞ্চার রবার্ট ওয়ারেনের বিবাদ শেষ পর্যন্ত সশস্ত্র সংঘাতের রূপ নিয়েছে। কাল রাতে তোমা দের ব্ল্যাঙ্কে এক প্রচণ্ড সংঘর্ষে আহত হয়েছে তোমার বাবা, ওর অবস্থা সংকটজনক। মারা গেছে এডি।

মাত্র কদিন আগে তোমার বাবার সাথে আমার কথা হয়েছে, উদ্বিগ্ন মনে হয়েছে ওকে আমার, যেন খারাপ কিছু আশঙ্কা করছে। সেদিনই তোমার বাবা আমাকে বলেছে যদি কোনো কারণে ওর বা এডির মৃত্যু ঘটে, আমি যেন র‍্যাঞ্চ আর গরু বিক্রি করে টাকাগুলো তোমার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা নিই, যাতে তোমাকে আর ওয়াইওমিং থেকে এখানে আসতে না হয়। লড়াইটাকে ফিউডে পরিণত করা মারাত্মক বোকামি হবে বলে ভেবেছে সে, আমি ওর সংগে সম্পূর্ণ একমত।

চিঠি লিখতে কলম সরছে না, তোমার বাবা আমার কতখানি ঘনিষ্ঠ ছিলো তোমার তো অজানা নয়! ও খানিকটা সেরে উঠলে আমিতোমাকে খবর দেবে। আর যদি খোদার ইচ্ছে ভিন্ন হয়, যত দ্রুত সম্ভব তোমাদের র‍্যাঞ্চ আর গরু বিক্রির ব্যবস্থা নেবো আমি, তোমার স্বার্থ রক্ষার আপ্রাণ চেষ্টা করবো। সম্পত্তি বিক্রি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব টাকা তোমার কাছে পাঠিয়ে দেবো, তোমাকে আর কষ্ট করে ওয়াগোনারে আসতে হবে না।

এখানে বাজারের হালচাল বিশেষ সুবিধের নয়, রাঞ্চের ন্যায্য দাম পাওয়ার আশা কম, তবু যাতে তোমার লোকসান না হয় সেজন্যে আমি চেষ্টার ত্রুটি করবো না। এ ব্যাপারে তোমার যদি কোনো আপত্তি না থাকে চিঠি লিখে জানিয়ে।

                                                          শুভ কামনায়
                                                                  অ্যারন হেলার।

পর পর দুবার চিঠিটা পড়লো ও, তারপর ভাঁজ করে আবার পকেটে রাখলো। চুপচাপ বসে ভাবতে শুরু করলো এর অন্তর্নিহিত অর্থ নিয়ে। নিরাবেগ ভাষা, যেন কোনো ব্যবসায়ীর হাতে লেখা। ওর কৌতূহল মেটানোর মতো কিছু নেই চিঠিটায়, বাবার র‍্যাঞ্চে গোলমাল বাধার কারণ, লড়াই কেন হলো–তার ব্যাখ্যা নেই। লড়াই শেষে ওয়ারেনের কি হয়েছে তাও বলেনি হেলার। বাবার মৃত্যুর পর র‍্যাঞ্চের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব থেকে ওকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আবার একই সঙ্গে বেসিন থেকে দূরে থাকতে বলে আবার ফিরে আসার জন্যে চ্যালেঞ্জও করা হয়েছে ওকে।

হঠাৎ অস্থির বোধ করলো ও, উঠে দাড়ালো, নজর বোলালে। নিচের বিস্তীর্ণ উপত্যকায়। পর্বতমালার কাছাকাছি হওয়ায় আশ পাশের এলাকা এবড়োখেবড়ো, ছোট বড় অসংখ্য টিল; ঢিবিতে ভরা, কিন্তু নদীর কাছে আস্তে আস্তে সমতলে রূপ নিয়েছে তুমি।

বেসিনের উঁচু এলাকায় ছ’ থেকে আটটি র‍্যাঞ্চ আছে, নিচু অঞ্চলের র‍্যাঞ্চের সংখ্যাও প্রায় তাই। ফোর্বস র‍্যাঞ্চের অবস্থান উঁচু এলাকায়, সামনে, রেড ফিলডের রেনজ পেরিয়ে। পুবে একটা হগব্যাকের চূড়ায় ম্যাকমিলান র‍্যাঞ্চ; গ্রেবার, ডেনিস স্মিথসহ আরো কয়েকজনের র‍্যাঞ্চ ওদিকে পড়েছে, ওগুলোর কোনো একটাতেই এখন রবার্ট ওয়ারেনের বাস।

পাইপ নিভিয়ে ফেললো ও, সাফ করে পকেটে রাখলো, কি করবে ভাবছে। ওয়াগোনার আর চার ঘণ্টার পথ। ভাগ্য ভালো হলে কারো চোখে ধরা না পড়ে নদীর কাছে পৌঁছে যেতে পারবে। তার পর শহরসীমান্তে গাছপালার আড়ালে রাত পর্যন্ত গা ঢাকা দিয়ে অন্ধকারে অ্যারন হেলারের সঙ্গে দেখা করতে যেতে পারে ও। পরি স্থিতির আসল চেহারা বোঝার আগে উপত্যকায় ওর প্রত্যাবর্তনের খবর জানাজানি হওয়াই ভালো।

স্যাডলে উঠে বসলো ও, ড্রাই ক্ৰীক ধরে এগোলো বেশ কয়েকমাইল, তারপর হঠাৎ ঘোড়া ঘুরিয়ে পাহাড়ের মাঝে একটা সংকীর্ণ ফাঁক দিয়ে কোণাকুণিভাবে এগোলো দক্ষিণে। কোন দিকে যাবে আগেই ঠিক করে নিয়েছে। এই বেসিনের অন্ধিসন্ধি ওর নখ দর্পণে, এখানে জন্মেছে, বেড়ে উঠেছে, আট বছর আগেও এখানেই ছিলো ও। রাতের নিকষ অন্ধকারেও এখানে পথ চলতে বিন্দুমাত্র কষ্ট হবে না। এবং শিগগিরই হয়তো সেটা জরুরি হয়ে দাঁড়াবে, ভাবলো সে, ক্ষীণ হাসি ফুটে উঠলো। ঠোঁটের কোণে। রবার্ট ওয়ারেন হয়তে। ভেবেছে ফোর্বসদের খতম করে দিয়েছে সে, কিন্তু কদিনের মধ্যেই নতুন কথা ভাবতে হবে তাকে।

নদীর দিকে অর্ধেক দূরত্ব পেরিয়ে এলো ও, এক চিলতে খোলা মাঠের ওপর দিয়ে এগোচ্ছে, হঠাৎ বাম দিকে একটা অনুচ্চ টিলার চূড়ায় দুজন ঘোড়সওয়ারের দেখা পেলো। রাশ টেনে ধরলে ওরা, ইতস্তত করলো মুহূর্তের জন্যে, তারপর এগিয়ে এলো ওর দিকে। স্যাডলে নড়েচড়ে বসলো ফোর্বস। চলার পথে লোকজনের সঙ্গে দেখা হওয়া স্বাভাবিক, তবু এবার অন্তত এড়ানো যাবে ভেবে ছিলো সে। পালিয়ে গেলে অবশ্য এখনো এড়ানো সম্ভব, কিন্তু পালানোর ইচ্ছে বোধ করছে না।

হোলসটারের ফিতে খুলে পিস্তল আলগা করে নিলো ও, গতি না কমিয়ে এগিয়ে চললো। মুখোমুখি হওয়ার পর ওই লোকদুটো কে কি বলতে হবে জানা নেই। অপরিচিত কেউ হলে যা হয় এক টা বলে দিলেই চলবে, আর পরিচিত হলে–তাহলে অন্তত ওদের কাছ থেকে কিছু তথ্য পাওয়া যাবে।

আরো কাছে এলো দুই অশ্বারোহী, লাগাম টেনে ঘোড়া থামালো। একজন মাঝবয়সী, লম্বা ছিপছিপে, একটু যেন কুঁজো হয়ে আছে। চার্লস রেডফিলড, চিনতে পারলে ফোর্বস। চার্লসের সঙ্গী অল্প বয়সী তরুণ, গাঢ় বাদামী তার গায়ের রঙ, চেহারায় কুৎসিত একটা ভাব–যেন সারাক্ষণ ভেঙচি কাটছে। লোকটা ওকে চেনে না বলেই মনে হলো ফোর্বসের, কিন্তু চার্লসের এক মুহূর্তও বিলম্ব হলো না।

ফোর্বস। কলিন ফোর্বস!

ঠিক চিনেছ, বললে কলিন। কেমন আছে, চার্লস

পিঠ সোজা করে বসলো রেডফিলভ, জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালে। অস্থিরভাবে একপলক তরুণ সঙ্গীর দিকে তাকিয়ে ফের চোখ ফেরালো কলিনের দিকে। তুমি ফিরে আসছো, জানতাম না তো! আমি: কলিন, ওর নাম টেরেন্স মিচেল। এখানকার এক রাঞ্চে কাজ করে।

হ্যালো, মিচেল, বললো কলিন।

মুখভাব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করলো ও, পারলো না। ওর নাম কানে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মিচেলের দুচোখে কুঞ্চন সৃষ্টি লক্ষ্য করেছে সে, অজান্তে বিপদাশঙ্কায় সতর্ক হয়ে উঠলো ফোর্বস, কিঞ্চিৎ উত্তেজিত।

হাউডি, ফোর্বস, বললো মিচেল।

দ্রুত কথা বললো রেডফিলড। কলিন, এখানে যা ঘটে গেছে, বলার নয়, কি বলে যে তোমাকে সমবেদনা জানাবো, জানি না। তোমার বাবা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন ছিলো, এডি ছেলেটাকেও আমি পছন্দ করতাম। তোমার যদি কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয়, আমাকে বলল, আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করবো।

কাঁধে সকালের সূর্যের উত্তাপ অনুভব করছে কলিন ফোর্বস। মুহূর্তের জন্যে রেডফিলডদের অস্তিত্ব ভুলে সোজা সামনে তাকালো। রেডফিলডের কথায় বোঝা যাচ্ছে বাবা আর বেঁচে নেই। অথচ বাবার সঙ্গে শেষ দেখা করার আশাতেই তাড়াহুড়ো করে এখানে এসেছে সে। মনে ক্ষীণ একটা আশা ছিলো বাবার সঙ্গে দেখা হবে, যদিও হেলারের চিঠি পড়েই আঁচ করা গেছে বাবা বাঁচবে না।

কখন ঘটলো ব্যাপারটা? ফাঁকা শোনালো ওর কণ্ঠস্বর।

সপ্তাহ তিনেক আগে।

বাবার মৃত্যুর কথা জিজ্ঞেস করছি।

র‍্যাঞ্চে লড়াইয়ের দুদিন পর, ডাক্তার মারভিন ওকে বাঁচানোর অনেক চেষ্টা করেছে, কিন্তু লাভ হয়নি।

সোজা হয়ে এলো কলিন, লম্বা একটা দম নিলো। এখানকার শেরিফ একবার অনুযোগের সুরে বলেছিলো, ড্যানিয়েল ফোর্বস প্রয়োজনে যেচে লড়াই বাধাবে; শেরিফের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছিলো ও, তবে এটা ঠিক লড়াইয়ের ভয়ে পিছিয়ে যাবার মানুষ ছিলো না বাবা। ড্যানিয়েল ফোর্বস রগচটা, ভয়ঙ্কর এবং একগুয়ে ছিলো, কিন্তু নিজের ভুল বা অন্যায় স্বীকার করতে কখনো দ্বিধা করেনি। স্টোনি রিভারের সবাই জানতো বাবাকে। মুখে এক কথা বলে কাজের বেলায় অন্য রকম করেছে-ড্যানিয়েল ফোর্বসের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলবে না কেউ।

রবার্ট ওয়ারেন লোকটা কে? জানতে চাইলে কলিন। কি ব্যাপারে ঝামেলা হয়েছিলো বলতে পারবে?

আমি যা শুনেছি সেটুকুই কেবল বলতে পারি, কলিন, অস্বস্তির সঙ্গে বললো চার্লস রেডফিলড।

তাই শোনাও।

বছর দুয়েক আগে এখানে এসেছে ওয়ারেন। ম্যাকমিলানের র‍্যাঞ্চটা কিনে নিয়েছে সে। এখানে সে পা দেয়ার পর পরই ড্যানিয়েলের সঙ্গে ওর বিরোধের কথা ছড়িয়ে পড়ে। তারপর, এই ধরো মাসখানেক আগে, হঠাৎ একদিন কারা যেন ওয়ারেনের একপাল গরু ক্লেব্যাংকসের ওপর থেকে ছত্রভঙ্গ করে নিচের ক্যানিয়নে ফেলে হত্যা করে। স্ট্যামপিডের জন্যে তোমার বাবাকে দায়ী করে রবার্ট ওয়ারেন। ড্যানিয়েলের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করায় সে, তারপর শেরিফের সঙ্গে লোকজন নিয়ে তোমাদের র‍্যাঞ্চে হাজির হয়। তোমার বাবা ওদের র‍্যাঞ্চ থেকে বেরিয়ে যেতে হুকুম করে–বোধ হয় প্যসি বাহিনীকে চিনতে পারেনি। তারপর আচমকা কে যেন গুলি ছুড়তে শুরু করে। গোলাগুলি শেষ হওয়ার আগেই এডিসহ মোট তিনজন প্রাণ হারায়, মারাত্মকভাবে আহত হয়। ড্যানিয়েল।

হোলসটার স্পর্শ করলো মিচেল, পরমুহূর্তে একপাশে ছেড়ে দিলো হাতটা। আড়চোখে ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো কলিন। হয়তো গুরুত্ব হীন, তবু নিজের প্রকৃত অবস্থা না জেনে কোনো রকম ঝুঁকি নেয়া ঠিক হবে না। ওকে কৌতূহলী করে তুলেছে মিচেল। ওর নাম শুনে চমকে উঠেছিলো সে, কেন? চোখের আড়াল হলে সে কি করতে পারে আন্দাজ করার চেষ্টা করলে কলিন।

আমার বোধ হয় শেরিফের সঙ্গে একবার দেখা করা উচিত, চিন্তিত চেহারায় বললো ও।

হ্যাঁ, সে-ই ভালো, সায় দিলো রেডফিলড।

ঘোড়ার লাগামে টান দিলে কলিন, এগোনোর আগে বললো, তোমার সঙ্গে আবার দেখা হওয়ায় ভালো লাগলো, চার্লস। মিচেল, তোমার সঙ্গে পরিচিত হয়ে খুশি হলাম।

মাথা দোলালো ওরা, কলিনকে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেল, সামনে চার্লস পেছনে মিচেল। ঘোড়া নিয়ে সরে এলো কলিন, মনে মনে এক থেকে পাঁচ পর্যন্ত গুনলো, তারপর ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো পেছনে। রাশ টেনে ধরেছে মিচেল, চোখের পলকে পিস্তল বের করে আনলো সে। নিমেষে স্যাডল থেকে লাফিয়ে পড়লো কলিন, মাটি স্পর্শ করার আগেই পিস্তল উঠে এলো হাতে। গুলি করলো মিচেল। ওর স্যাডলের ওপর দিয়ে বাতাসে শব্দ তুলে চলে গেল বুলেট। মাটিতে উবু হয়ে বসে ঘোড়ার পেটের নিচ দিয়ে গুলি করলো কলিন, একবার, দুবার।

গুলির আঘাতে কেঁপে উঠলো মিচেল, পিছিয়ে গেল তার ঘোড়া, বাতাসে আঁচড় কাটলো সামনের দুই পায়ে। পিছলে স্যাডল থেকে মাটিতে পড়লো মিচেল, উপুড় হয়ে, আর নড়লো না।

আস্তে, সাবধানে উঠে দাড়ালো কলিন, চার্লস রেডফিলডকে কাভার করে রেখেছে ওর পিস্তল। ঘোড়াকে বাগে আনার প্রাণপণ চেষ্টা করছে লোকটা। মিচেলকে পিস্তল বের করতে দেখেছে সে, অথচ ওকে সতর্ক করে দেয়নি। হয়তো তার করার কিছুই ছিলো না। তবে মিচেলের মতলব ঠিকই টের পেয়েছিলো।

শান্ত হলো চার্লস রেডফিলডের ঘোড়া, শক্ত হাতে লাগাম ধরে রেখেছে সে, কাকড়ার মতো পাশে হেঁটে কলিনের দিকে এগিয়ে এলো ওটা। এক হাতে মুখের ঘাম মুছলো রেডফিলড। টেরেন্স মিচেলের নিথর শরীরে দিকে বিস্ফারিত চোখে তাকালো।

হায় খোদা, কি ভয়ঙ্কর। বললো সে। ও এমন কিছু করবে ভাবতেও পারিনি। আমি–

ওকে পিস্তল বের করতে দেখছো তুমি, বিষণ্ণ কণ্ঠে বললো কলিন ফোর্বস। তুমি কি আমার মৃত্যু কামনা করেছিলে, রেডফিলড?

মাথা নাড়লে রেডফিলড়। আ-আমি…না!

বাকরুদ্ধ হয়ে গেল তার। বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠেছে, কপালে। কলিনের পিস্তল থেকে দৃষ্টি সরাতে পারছে না কিছুতেই।

গানবেলট খুলে ফেলো, আদেশ করলো কলিন, ফেলে দাও মাটিতে।

কিন্তু আমি—

কোনো কথা নয়! চড়া গলায় বললো কলিন ফোর্বস। যা বলছি, করো, এখুনি!

বাকলস খুলে গানবেলটটা মাটিতে ফেললো চার্লস রেডফিলড।

এবার রাইফেল, বললে কলিন। বুট থেকে রাইফেল বের করে মাটিতে ফেলে দিলো রেডফিলড।

এবার ঘোড়া নিয়ে ওই টিলাটার দিকে এগেও, অর্ধেক পথ গিয়ে থামবে, আমি না যাওয়া পর্যন্ত থাকবে ওখানে, তারপর এসে মিচে লের লাশ নিয়ে শহর কিংবা র‍্যাঞ্চে–যেখানে ইচ্ছে যেয়ো। যাওয়ার আগে একটা কথা বলে যাও, এখানকার ঘটনাবলীতে তোমার কি ভূমিকা? কোন্ পক্ষে তুমি?

আমি দলাদলিতে নেই, ভারি গলায় বললো রেডফিলড।

আমার বাবা আর ভাইয়ের মৃত্যুর দিন প্যসিতে ছিলে তুমি?

না।

জাহান্নামে যাক, ভাবলো কলিন, এ-ব্যাপারে পরে খোঁজ করা যাবে। আরো অনেক কিছু জানতে হবে ওকে–যদি প্রাণে বেঁচে থাকে।

নাও, এবার এগোও, বললো ও।

ঘোড়া ঘুরিয়ে সরে গেল রেডফিলড, তারপর লাগাম টেনে পেছনে তাকালো, চিৎকার করে বলে উঠলো, রবার্ট ওয়ারেনের সঙ্গে তুমি পারবে না, কলিন। অনেক শক্তিশালী সে। লোকবলের অভাব নেই তার, আইন ওর পক্ষে। যদি বুদ্ধিমান হও, বেসিন ছেড়ে চলে যাও, আর কোনো দিন ফিরে এসো না।

আমি বুদ্ধিমান নই, বললে কলিন। আবার এগোতে শুরু করলো রেডফিলড।

ঘাড় ফিরিয়ে পাহাড়চূড়াগুলো জরিপ করলো কলিন। গুলির শব্দ আরো কাউকে আকৃষ্ট করে থাকতে পারে, এই মুহূর্তে আর কারো মুখোমুখি হতে চায় না ও। মিচেলের পাশে মুহূর্তের জন্যে হাঁটু গেড়ে বসলো সে, তারপর উঠে দাড়ালো পেটের ভেতর কেমন অস্বস্তিকর একটা অনুভূতি, লালায় ভরে উঠছে মুখ। মিচেল মারা গেছে, সন্দেহ নেই।

নিজের ঘোড়ার কাছে ফিরে এলো কলিন, উঠে বসলো স্যাডলে, লাফিয়ে সামনে ছুটলে। মাসট্যাং। অসুস্থ বোধ করছে ও, কাউকে হত্যা করা মোটেই সুখের ব্যাপার নয়।

<

Super User