অনেক পথ চলেছে জুলিয়াস দত্ত। গত তিনটে মাস বলতে গেলে ঘোড়ার পিঠেই কেটেছে ওর। কয়শো মাইল পথ যে চলেছে তার কোন হিসেব রাখেনি সে। অনেক দিন থেকেই তার ভিতরে ভিতরে একটা অস্থিরতা, তাই বেরিয়ে পড়া একান্ত জরুরী হয়ে উঠেছিল। কিছুদিন নতুন মানুষ, নতুন দৃশ্য, নতুন পরিবেশে। সময় কাটিয়ে এবার সে বাড়ি ফিরছে। স্থির হয়ে আবার নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে পুরোনো রুটিনে।

কিন্তু কথাটা ভেবে মোটেই স্বস্তি পাচ্ছে না সে। মানুষের মনে এমন অস্থিরতা কেন আসে? নিয়মের মধ্যে চলতে চলতে কেন মানুষ সন্দিহান হয়ে। পড়ে? অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে? নিজেকে অসম্পূর্ণ মনে হয়? মন কেন নিয়ম ভেঙে বাইরে বেরিয়ে পড়তে চায়? তার বাড়ি ছাড়ার সাথে অবশ্য একটা মর্মান্তিক দুর্ঘটনাও জড়িত ছিল-কিন্তু আসলে মনের ভিতরেই তার সেই অস্থিরতা। তার বাবা ব্যাপারটা ঠিকই টের পেয়েছিলেন। বলেছিলেন, তুই মিছেই এত বেশি। খেটে মরছিস, জু, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। আজ বাদে কাল তুই বিয়ে করবি, তখন তোর মাথায় চিন্তার বোঝা আরও বাড়বে। তার আগেই তোর বেরিয়ে পড়ে দুনিয়াটা একবার ভাল করে দেখে আসা উচিত। তাতে তোর মনটা অনেক শান্ত হবে।

মন কতটা শান্ত হয়েছে জানে না সে, তবে অস্থিরতা কিছুটা দূর হয়েছে। বাড়ি ফিরে যাচেছ বলে মনটা বেশ উৎফুল্লই লাগছে ওর। নিজের এলাকা পার্কে ফিরে যাচ্ছে সে। আগামীকালই পৌঁছে যাবে ও। এতদিন পরে আবার বাবার সাথে দেখা হবে ভাবতেই খুশি লাগছে। তার বাবা সেবাস্টিন দত্ত, খুব ভালবাসেন ওকে। জারভিস আর পেপিকেও আবার দেখতে পাবে সে। আর দেখা হবে জিনার সাথে-শেষ সাক্ষাতে রূঢ় ব্যবহার করেছিল মেয়েটা, অবশ্য সেটা প্রত্যাশিত; ভাইয়ের অকস্মাৎ মৃত্যুতে খুব মুষড়ে পড়েছিল সে।

সাধারণ বাঙালীর মতই মাঝারি গড়নের যুবক জুলিয়াস। তীক্ষ্ণ চেহারা, গায়ের চামড়া রোদে পোড়া। গত তিন মাসে তার মুখ কিছুটা শুকালেও দেহটা একেবারে লোহার মতই আছে। দড়ির মত পেশী আর চওড়া কাধ তার। কালো চুল, চোখ দুটোও কালো। চোখে তার কেমন একটা বিষণ্ণতার ছায়া। বেশ কয়েকটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা ইতোমধ্যেই ঘটে গেছে তার জীবনে। কিন্তু অনুশোচনা করে কোন লাভ নেই, অতীতকে আবার নতুন করে নিজের ইচ্ছা মত লেখা যাবে না, নিজের দুঃখকে সহ্য করে বুকে পুষে বয়ে বেড়াতে হবে তাকে চিরকাল।

পাহাড়ের আরও উপরের দিকে উঠছে জুলিয়াস। সূর্য ডুবে গেছে, আরমান্ডের তেমাথার কাছাকাছি চলে এসেছে সে। দিনের আলো নিভে অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে। অল্পক্ষণের মধ্যেই সে স্টেজ-স্টেশনের উঠানে পৌঁছে গেল। এখন কোন স্টেজ নেই। তাই ভিতরে কাউকে আশা করেনি জুলিয়াস। কিন্তু দেখল স্টেজ এজেন্ট হ্যাঙ্ক ক্লার্কের সাথে আরও দু’জন লোক একটা ছোট টেবিলে বসে ব্ল্যাক জ্যাক খেলছে। ওকে ঢুকতে দেখে সবাই চোখ তুলে চাইল। একমাত্র হ্যাঙ্কই তার পরিচিত। জুলিয়াসের মনে হলো হ্যাঙ্ক যেন তাকে দেখে একটু চমকে উঠল।

মাথা ঝাঁকাল জুলিয়াস। গুড ইভনিং, হ্যাঙ্ক, খাবার কিছু আছে?

আ…আমার মনে হয় আছে, ঢোক গিলে জবাব দিল সে।

টেবিলের আর দুজনের একজন মাঝারি গড়নের, দেখে মনে হয় কোন খামারের কর্মচারী হবে। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি। মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি, ইদানীং সে স্নান করছে বলে মনে হয় না। অন্যজন তারই সমবয়সী, তীক্ষ্ণ চোখ আর বাদামী রঙের কোঁকড়া চুল। লোকটার পোশাক বেশ পরিচ্ছন্ন।

উঠে দাঁড়িয়ে হাঁক দিল হ্যাঙ্ক, শুনছ, কিছু খাবার গরম করো।

রান্নাঘরের দরজায় ছোটখাট একজন মহিলাকে দেখা গেল, হাতে প্লেট মোছার তোয়ালে। সাদামাঠা গলায় সে জানাল, একটু বসো, এখনই খাবার নিয়ে আসছি আমি।

কষ্ট করে বিশেষ কিছু করার দরকার নেই, মিসেস ক্লার্ক, আছে তা-ই দিলেই চলবে। ততক্ষণ একটা ড্রিঙ্ক নিয়ে নিচ্ছি আমি।

পাশেই বার। বারের ওপর রাখা বোতল থেকে নিজেই একটা ড্রিঙ্ক ঢেলে নিয়ে ওদের টেবিলেই বসল জুলিয়াস।

হ্যাঙ্কের তেরো বছরের এলোমেলো চুলের ছেলেটা বাইরে জুলিয়াসের ঘোড়া দেখে টু-পাইস ইনকাম করার আশায় ঘরে ঢুকে জিজ্ঞেস করল, জিন নামিয়ে আপনার ঘোড়াটাকে কিছু খেতে দেব?

না, জিন খোলার দরকার নেই, জবাব দিল জুলিয়াস। আমি খাওয়া সেরেই আবার রওনা হব। তুমি বরং ওকে কিছু ওট (oat) আর পানি খাইয়ে দাও।

এখনি যাচ্ছি আমি, খুশি মনে বেরিয়ে গেল ছেলেটা।

হ্যাঙ্ক এগিয়ে এল, তুমি তো বাইরে কাটালে বেশ কিছুদিন, তাই না?

হ্যাঁ, একটু বেড়িয়ে এলাম।

এবার ঘরে ফিরছ?

হ্যাঁ, পার্কের কি খবর?

ভাল, খুব ভাল, বলল হ্যাঙ্ক। আমি দেখি তোমার খাবার ব্যবস্থা কতদূর হলো।

ঘুরে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল হ্যাঙ্ক। গ্লাসে একটা চুমুক দিয়ে অন্য দু’জনের দিকে ফিরল জুলিয়াস। হ্যাঙ্ক উঠে যাওয়ায় ওদের ব্ল্যাক জ্যাক খেলা ভণ্ডুল হয়ে গেছে। কমবয়সী লোকটা তাসগুলো তুলে নিয়ে সলিটেয়ার খেলছে, অন্যজন দেখছে।

অল্পক্ষণ পরেই খাবার নিয়ে এল হ্যাঙ্ক-গিন্নী। রান্না এমন কিছু চমৎকার হয়নি, তবে খাবারটা গরম, তার ওপর প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে জুলিয়াসের। খাওয়ায় মন দিল সে। বারের কাছে গিয়ে কি যেন করছে হ্যাঙ্ক। জুলিয়াস শুনেছে লোকটা বিশেষ সুবিধার নয়, কিন্তু এখন আর সেদিকে খেয়াল করার সময় নেই। একটু পরেই সে চলে যাবে নিজের পথে।

জুলিয়াস বেরুবার কিছু আগেই উঠল অপেক্ষাকৃত বয়স্ক লোকটা। হঠাৎ করে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার দিকে যেতে যেতে বলল, চলি, হ্যাঙ্ক, আবার দেখা

হ্যাঙ্ক বারের পিছনে ব্যস্ত। অন্য লোকটার নজর তাসের দিকে। নীরবে খাওয়া শেষ করে চেয়ার ঠেলে উঠে দাঁড়াল জুলিয়াস। জিজ্ঞেস করল, কত হয়েছে?

সব মিলিয়ে মোট দেড় ডলার, মনে মনে হিসাব করে নিয়ে জানাল হ্যাঙ্ক।

টেবিলের ওপর টাকা রেখে দরজার দিকে এগোল সে। দরজার কাছে। পৌঁছা’র আগেই টেবিলে বসা লোকটা কথা বলে উঠল।

এই যে ভদ্দর লোক, তোমার কি খুব তাড়া আছে?

কেন? থেমে দাড়িয়ে ওর দিকে ফিরে তাকাল জুলিয়াস।

যে লোকটা একটু আগে বেরিয়ে গেল তাকে তুমি চেনো?

সে চেনে। তোমাকে ঢুকতে দেখেই একেবারে আড়ষ্ট হয়ে গেছিল। খাওয়ার সময়ে দু’বার সে তোমার পিস্তলের দিকে হাত বাড়িয়েছিল। চলে যাচ্ছে বলে বিদায় নিয়ে গেল, কিন্তু ঘোড়ার খুরের শব্দ পাইনি-মনে হয় সে এখনও বাইরে কোথাও রয়েছে।

জুলিয়াস অবাক হয়ে চেয়ে আছে-কে লোকটা? কি বোঝাতে চাইছে? হ্যাঙ্কের দিকে চাইল সে। একেবারে পাথরের মূর্তির মত দাড়িয়ে আছে হ্যাঙ্ক। ভয়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে ওর মুখ।

হ্যাঙ্ক! তীক্ষ্ণ কণ্ঠে ধমকে উঠল জুলিয়াস। এসবের মানে কি? মাথা নেড়ে সে জবাব দিল, তুমি কি বলছ কিছুই বুঝতে পারছি না আমি।

যে লোকটা বেরিয়ে গেল সে কে?

সত্যি বলছি, ওকে চিনি না আমি।

টেবিলে বসা লোকটা হেসে উঠে বলল, ডাহা মিথ্যুক তুমি।

আমি কসম… লোকটার দিকে ফিরে চাইল জুলিয়াস। তোমার নাম কি?

এডমন্ড ফিনলে। তোমার?

জুলিয়াস দত্ত।

তাস সরিয়ে রাখল লোকটা। আমিও পার্কে যাচ্ছি। রাতটা এখানেই কাটাব মনে করেছিলাম, কিন্তু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এখন তা না করাই ভাল মনে হচ্ছে। একসাথে যেতে আপত্তি নেই তো তোমার?

না, আপত্তি কিসের? সাথী পেলে বরং খুশিই হব আমি।

হাসল এড। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে নিজের পিস্তল পরীক্ষা করে দেখে নিয়ে জিজ্ঞেস করল, কোন দিক দিয়ে বেরুতে চাও তুমি, সদর দরজা দিয়ে না পিছন দিয়ে?

পিছন দিক দিয়েই বেশি নিরাপদ হবে। হ্যাঙ্ককে নিয়ে কি করা যায়? এমন পাজি লোক…

বারের নিচে হাত বাড়িয়েছিল হাঙ্ক, কিন্তু রাইফেলটা তোলার আগেই এডের পিস্তল বেরিয়ে এসেছে। এত দ্রুত আর কাউকে পিস্তল বের করতে দেখেনি জুলিয়াস। চোখের নিমেষে সে দেখল এডের পিস্তল ধরা হাতটা হ্যাঙ্কের দিকে তাক করা রয়েছে।

রাইফেলটা ফেলে দাও, আদেশ দিল এডমন্ড। এবার দেয়ালের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াও।

তর্ক করতে গেল না হ্যাঙ্ক। সুবোধ বালকের মত রাইফেল ফেলে দিয়ে ঘুরে দাঁড়াল। এগিয়ে গিয়ে পিস্তলের নল দিয়ে ওর মাথায় আঘাত করল এড। হ্যাঙ্কের অজ্ঞান দেহটা মাটিতে লুটিয়ে পড়ল।

এবার বাইরেটা একটু দেখে নেয়া যাক, বলল এড। বিন্দুমাত্র উত্তেজিত হয়নি লোকটা। শান্ত স্বাভাবিক ভাবেই হ্যাঙ্ককে সামলাল সে। ঘটনাটা সত্যিই মনে রাখার মত।

রান্নাঘরে ঢুকল ওরা। মিসেস ক্লার্ককে ওখানে দেখা গেল না। বাইরে বেরিয়ে দরজার পাশে অন্ধকারে একটু দাঁড়াল দু’জন।

তুমি এইদিক দিয়ে এগোও, আমি উলটো দিক দিয়ে যাচ্ছি-আমরা বাড়ির সামনের দরজায় আবার একত্র হব, ফিসফিস করে বলল জুলিয়াস

তাড়াহুড়ো কোরো না, সামনে দেখা হবে।

এগিয়ে গেল জুলিয়াস। সব কটা ইন্দ্রিয়ই সজাগ রয়েছে তার। তবু ঘটনার আকস্মিকতায় একটু বিভ্রান্ত বোধ করছে সে। ওই লোকটা আসলে কে? সত্যিই সে চেনে না ওকে। কিন্তু ব্যাপারটা কি? লোকটা বিনা কারণে তার পিছনে লাগতে যাবে কেন? নাকি মিছেই ভাবছে সে?

একটা গুলির শব্দে চমক ভাঙল তার। বিকট গলায় একটা চিকারের সাথে সাথে আরও দুটো গুলির শব্দ শোনা গেল। ছুটতে শুরু করল জুলিয়াস। বাড়ির সামনের বাকটা ঘুরে দেখল ওপাশের বাকে একজন দাড়িয়ে রয়েছে। এডমন্ড! ঠিক ওর পায়ের কাছেই পড়ে আছে একটা নিথর দেহ।

এখানেই উবু হয়ে অপেক্ষা করছিল লোকটা, সাদামাঠা গলায় বর্ণনা দিল এড। ওকে পিস্তল ফেলে দেয়ার সুযোগ দিয়েছিলাম, কিন্তু শোনেনি।

জুলিয়াস ঝুঁকে পড়ে অসাড় দেহটা পরীক্ষা করল। মারা গেছে লোকটা! বিস্মিত কণ্ঠে বলল সে।

তবে? তুমি কি আশা করেছিলে বেঁচে থাকবে? একটা ম্যাচ জ্বেলে ওর মুখটা ভাল করে দেখল জুলিয়াস সম্পূর্ণ অপরিচিত। পকেট হাতড়েও লোকটার কোন পরিচয় জানা গেল না।

আমার ঘোড়াটা নিয়ে আসছি, বলল এড।

জুলিয়াস ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না এই পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিত। উঠে দাঁড়াল সে। হয়তো ইন্ডিয়ান ব্লাফে শেরিফের কাছে খবর পাঠিয়ে এখানেই তাদের অপেক্ষা করা দরকার, কিন্তু এডের হাবভাবে মনে হচ্ছে না সে রাজি হবে।

আমি যাই, হ্যাঙ্কের সাথে একটু কথা বলে দেখি, ধীরে ধীরে বলল জুলিয়াস, ও-ই শেরিফের কাছে খবর পৌঁছে দেবে।

খুশি তোমার, নির্লিপ্ত গলায় জবাব দিল এড।

চাঁদের আলোয় ওরা চড়াই পথে এগিয়ে যাচ্ছে পার্কে ঢোকার গিরিপথটার দিকে। জুলিয়াসই পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে তার সঙ্গীকে। এদিককার পথঘাট, সবই তার খুব ভাল করে চেনা। একটা বেশ খাড়া চড়াই পেরিয়ে ঘোড়া দুটোকে বিশ্রাম দেয়ার জন্য থামল ওরা। কথা বলার ভাল সুযোগ। বেশ আগ্রহ নিয়েই এতক্ষণ অপেক্ষা করেছে জুলিয়াস। এডের সম্বন্ধে আরও জানার জন্যে

উৎসুক হয়ে আছে সে।

এই পাহাড়ী এলাকাটা বেশ সুন্দর, একটা সিগারেট ধরানোর ফাঁকে বলল এড। কিন্তু এর মধ্যে র‍্যাঞ্চ করার মত সমান জায়গাই তো নেই কোথাও।

গিরিপথটা পার হলেই দেখতে পাবে, জবাব দিল জুলিয়াস। ইডেন পার্কটা অনেকটা মালভূমির মত। সুন্দর ঘাস আর প্রচুর পানি আছে।

কিন্তু পশু আনা-নেয়া করো কিভাবে?

ওপাশে ক্যল্ডওয়েল যাওয়ার পথটা অনেকটা সমতল, ওদিকে রেলরাস্তাও আছে।

শহর আছে পার্কে?

হ্যাঁ, ক্রেস্টলাইন।

কয়টা র‍্যাঞ্চ?

গোটা ছয়েক বড় আর কয়েকটা ছোট র‍্যাঞ্চ আছে-কেন, চাকরি খুঁজছ তুমি?

হ্যাঁ, একটা কাজ নিয়েই এসেছি।

কোথায়?

আমার এক পুরোনো বন্ধু মেডক লেটনের চিঠি পেয়ে এসেছি। তুমি চেনো ওকে?

হা, চিনি, একটু চিন্তিতভাবে জবাব দিল জুলিয়াস।

মেডক লেটন তার বাবার র‍্যাঞ্চেই কাজ করে। কিন্তু সে সামান্য একজন কর্মচারী মাত্র। তার পক্ষে কাউকে চাকরি দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। হয়তো চিঠিতে র‍্যাঞ্চে লোক দরকার হবে এটুকুই জানিয়েছে সে।

এড তার হাতের সিগারেটটার দিকে একদৃষ্টে চেয়ে বলল, সাধারণত আমি অন্যের কোন ব্যাপারে নাক গলাই না, জুলিয়াস।

আমার ভাগ্য তাহলে ভাল বলতে হবে।

তুমি সত্যিই চেনো না ওই মৃত লোকটাকে?

না।

কোন শত্রু আছে তোমার?

দু’একজন নেই এমন বলা যায় না সব মানুষেরই কিছু শত্রু থাকে। কিন্তু এই ব্যাপারটা আদৌ মাথায় ঢুকছে না আমার।

ভাল করে ভেবে দেখো, বলল এড়। লোকটা যেভাবে খোলা পিস্তল হাতে উবু হয়ে বসেছিল তাতে নিঃসন্দেহে বলা যায় তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছিল সে। পার্কে কোন র‍্যাঞ্চে আছ তুমি?

রকিং এইচ র‍্যাঞ্চ।

তাই নাকি? অবাক হলো এড। তবে তো তুমি মেডকের অধীনেই কাজ করছ।

না। আমার বাবার র‍্যাঞ্চ ওটা।

এডের মুখের ভাবটা দুর্বোধ্য হয়ে উঠল। প্রাণহীন হাসি হাসল সে। চোখ দুটো কঠিন হলো।

আমরা তাহলে একই জায়গায় যাচ্ছি, মন্তব্য করল জুলিয়াস।

হ্যাঁ, একই জায়গায় যাচ্ছি। মেডক আমাকে লিখেছিল মালিকের এক ছেলে বাইরে আছে।

বাইরেই ছিলাম, তিনমাস পরে আবার ফিরছি।

ঝামেলা হয়ে গেল।

মুখোমুখি বসে আছে ওরা দু’জন। হাসি নেই কারও মুখে। আগামীতে কি ঘটবে জানে না জুলিয়াস। স্টেজ-স্টেশনে এড কিভাবে দ্রুত পিস্তল বের করেছিল মনে পড়ল তার। একটা মানুষকেও খুন করেছে সে-কিন্তু কোন রকম মানসিক বিকার নেই, মনে হয় আগেও অনেক মানুষকে হত্যা করেছে ও।

মেডককে কতটা চেনো তুমি? হঠাৎ প্রশ্ন করল এড়।

সামান্যই জানি, জবাব দিল জুলিয়াস।

পছন্দ করো?

না।

মুচকি হাসি হাসল এড। ঠিকই চিনেছ তুমি ওকে। ওর জনপ্রিয়তা কম। পার্কে ফিরে কি করবে তুমি?

জানি না।

চলো ওঠা যাক।

চলো।

ঘোড়া দুটোর যথেষ্ট বিশ্রাম হয়েছে। জুলিয়াসই আবার পথ দেখিয়ে নিয়ে চলল। ঘামে ভিজে উঠেছে সে। ভাবছে এড যদি হঠাৎ পিস্তল বের করে বসত কি করত সে? কি যে ঘটত বলা যায় না। তার বাবা তাকে যত্ন করে হাতে ধরে রাইফেল-পিস্তল চালানো শিখিয়েছেন। দ্রুত পিস্তল বের করাতেও তার জুড়ি নেই। কিন্তু ওর আর এডের মধ্যে কে যে বেশি ক্ষিপ্র তা বলা ভার। তবে জানার খুব একটা আগ্রহও তার নেই।

আর একটা ব্যাপারে বিব্রত বোধ করছে জুলিয়াস। এড একজন বাইরের লোক হয়েও এত জোর পাচ্ছে কোত্থেকে? গত তিনমাসে কি ঘটেছে পার্কে? রকিং এইচ র‍্যাঞ্চেরই বা কি অবস্থা? যতই এগোচ্ছে, সংশয়ে ভরে উঠছে তার মন।

<

Super User