অন্ধ না-ও হতে পারে, রবিন বলল। চোখে না দেখলে এত তাড়াতাড়ি পালাল কি করে?

কেউ কেউ পারে, বলল কিশোর। চোখ হারালে কানের ক্ষমতা বেড়ে যায়। প্রায় চোখওয়ালা লোকের মতই চলতে পারে তখন। চোখওয়ালাদের অন্ধকারে চলতে অসুবিধে, অন্ধের সেই অসুবিধেও নেই।

পরদিন সকালে, পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডে আগের দিন সন্ধ্যার কথা আলোচনা করছে তিন গোয়েন্দা। বৃষ্টি শেষ। উজ্জ্বল, পরিষ্কার সকাল। যে মানিব্যাগটা কুড়িয়ে পেয়েছিল রবিন, সেটা পড়ে আছে ওঅর্কশপের ওঅর্কবেঞ্চের ওপর।

ধরে নিলাম অন্ধ নয়। তাহলেও দৌড় দেবে কেন? রবিনের প্রশ্ন। এমন ভাব দেখাল, যেন আমাদের ভয় পেয়েছে। এক মুহূর্ত ভাবল সে। সবাই বোধহয় কাল বোকামি করেছি আমরা। গলি থেকে ফিরে এসে দেখি মহিলা চলে গেছে। বাস আসতেই হয়ত উঠে পড়েছে। কারের ড্রাইভার তখনও দাঁড়িয়ে ছিল। অন্ধকে পাইনি, একথা জানাতেই গাড়িতে উঠে চলে গেল। হাতে মানিব্যাগটা নিয়ে গাধার মত দাঁড়িয়ে রইলাম আমি। একবারও মনে হয়নি, আমার নাম, অন্ধ লোকটার নাম তাকে জানিয়ে রাখা উচিত ছিল।

একে বোকামি বলা যায় না, কিশোর বলল। ওরকম জরুরি পরিস্থিতিতে অনেকেই অমন করবে।

কাজ করতে করতে রবিনের কথা শুনছে সে। হপ্তাখানেক আগে পুরানো একটা নষ্ট টেলিভিশন সেট কিনে এনেছিলেন রাশেদ পাশা, সেটা মেরামত করছে। বাতিল পার্টসগুলো বদলে নতুন লাগাচ্ছে। কদিন ধরেই করছে কাজটা, এখন শেষবারের মত ফাইন টিউনিং করে সকেটে ঢোকাল প্লগ।

সুইচ অন করতেই মৃদু গুঞ্জন শোনা গেল। হুঁ, ঠিক হয়েছে মনে হয়।

হবেই, হেসে বলল মুসা। কার হাত লেগেছে দেখতে হবে না।

জবাব না দিয়ে একটা নবে মোচড় দিল গোয়েন্দা প্রধান। পুরানো যন্ত্রপাতি মেরামতের হৰি আছে কিশোরের, অসাধারণ মেধার পরিচয় দেয়। তিনটে মিনি ওয়্যারলেস সেট বানিয়েছে, যেগুলো অনেক কাজে লাগে তিন গোয়েন্দার। ওঅর্কশপের এক কোণে দাঁড়ানো ছাপার মেশিনটাও বাতিল হিসেবে কিনে আনা হয়েছিল, সারিয়ে নেয়ার পর এখন দিব্যি কাজ চলে। হেডকোয়ার্টারের ছাতে লাগানো পেরিস্কোপ সর্বদর্শন তৈরির কৃতিত্বও অনেকখানিই তার। ট্রেলারে ঢোকার গোপনপথগুলোর পরিকল্পনাও সে-ই করেছে।

মনে হচ্ছে, আবার বলল মুসা। হেডকোয়ার্টারের জন্যে একটা টিভিও হয়ে গেল আমাদের।

তাঁর কথায় বাধা দিল টেলিভিশনের ঘোষকঃ …সকালের খবর নিয়ে। উপস্থিত হচ্ছি আপনাদের সামনে।

সংবাদ-পাঠকের ছবি ফুটল পর্দায়। গুড মর্নিং জানিয়ে শুরু করল। প্রথমেই জানাল ঝড়ের খবর। প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপটি বিশেষ কোন ক্ষতি না করে লস অ্যাঞ্জেলেস আর দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়া থেকে দূরে সরে গেছে। তবু আগামী কিছুদিন আবহাওয়া অস্থির থাকবে।

…ম্যালিবুর পাহাড়ে ধস নেমেছে, বলে চলেছে সংবাদ পাঠক। কাদাপানিতে একাকার হয়ে গেছে বিগ টুজুংগা ক্যানিয়ন। ময়লা সাফ করতে ব্যস্ত এখন ওখানকার অধিবাসীরা।

এক দুঃসাহসী ডাকাতি সংঘটিত হয়েছে সান্তা মনিকার খ্রিফট অ্যাণ্ড সেভিংস কোম্পানিতে। ঝাড়ুদারের ছদ্মবেশে কাল সন্ধ্যায় ব্যাংকে ঢুকে বসেছিল ডাকাত। ব্যাংকের সিকিউরিটি গার্ডকে বোর্ড রুমে আটকে রেখে অপেক্ষা করছিল ওরা। আজ সকালে আটটা পঁয়তাল্লিশ মিনিটে টাইম লক খুলে দেয়া হয়, কর্মীদের ঢোকার জন্যে, ব্যাংকের একজিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক জনসনকে ভল্ট খুলতে বাধ্য করে ওরা। নগদ প্রায় আড়াই লক্ষ ডলার আর সেফ-ডিপোজিট বক্সে রাখা দামি মালামালসহ নিরাপদেই পালিয়ে গেছে ডাকাতেরা। আমাদের সাংবাদিকেরা চলে গেছে ঘটনাস্থলে। দুপুরের খবরে বিস্তারিত জানাতে পারব আশা করি।

সুইচ অফ করে দিল কিশোর।

সর্বনাশ! প্রায় চেঁচিয়ে উঠল রবিন। দি সান্তা মনিকা খ্রিফট অ্যাণ্ড সেভিংস! ওখানেই তো ছিলাম কাল সন্ধ্যায়, অন্ধ লোকটা রাস্তা পেরোচ্ছিল… থেমে গেল সে। উত্তেজিত। কিশোর, একটা ডাকাতকে বোধহয় দেখেছি!

রবিনের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করছে অন্য দুজন।

হ্যাঁ, দেখেছি। বাস স্টপ থেকে ব্যাংকের ভেতরটা দেখা যাচ্ছিল। ঝাড়ুদার দুজন বেরিয়ে গিয়ে এলিভেটরে উঠল, একজন পুরুষ, একজন মহিলা। কিছুক্ষণ পর লোকটা এসে খটখট করলে দরজা খুলে দেয় সিকিউরিটি গার্ড।

ফিরে এল? জিজ্ঞেস করল কিশোর। সেই ঝাড়ুদার লোকটাই?

মনে তো হল… সেরকমই লাগল…, সন্দেহ জাগল রবিনের চোখে। নাহ, শিওর না।…হাত থেকে মগ ফেলে দিল অন্ধ, পয়সাগুলো সব ছড়িয়ে পড়ল। আমি আর মহিলা কুড়িয়ে তুলে মগটা দিলাম লোকটার হাতে, তখন ব্যাংকের দরজায় দাঁড়াতে দেখলাম ঝাড়ুদারকে।

তারমানে অন্য লোকও হতে পারে?

কি বুদ্ধি করেছে ব্যাটারা! খাইছে! মুসা বলল। ঝাড়ুমোছা শেষ করে ওপরতলায় চলে গেল ঝাড়ুদারেরা। তখন লোকটার ছদ্মবেশে অন্য কেউ এসে দরজায় দাঁড়ালো। সিকিউরিটি ম্যান দরজা খুলে দিল। তারপর তাকেই আটকে রেখে ডাকাতেরা ব্যাংকটাকে একেবারে নিজের বাড়ি বানিয়ে ফেলল। অ্যালার্ম বাজল না। আরামসে কাটিয়ে দিল সারাটা রাত, পরদিন সকালে কর্মচারীরা আসার, অপেক্ষায় রইল।

রবিন, ঝাড়ুদার লোকটা কোত্থেকে এসেছিল দেখেছ? কিশোর জানতে চাইল। এলিভেটর থেকে বেরিয়ে লবি দিয়ে, নাকি রাস্তা থেকে?

মাথা নাড়ল রবিন। দেখিনি। দরজায় দাঁড়ানো দেখলাম। ভেবেছি, এলিভেটর থেকে নেমেই বুঝি এসেছে। এখন মনে হচ্ছে, রাস্তা থেকেও এসে থাকতে পারে। আমার ধারণা, ঝাড়ুদারদের কেউ নয়।

চমৎকার, খুশি হল কিশোর। ভাবনার খোরাক পাওয়া গেল। ওঅর্কবেঞ্চে পড়ে থাকা মানিব্যাগটা তুলে নিল। তুমি বললে, রাস্তা ধরে এসেছিল অন্ধ লোকটা। মগটা ফেলল এমন সময়, যখন ঝাড়ুদার আসছে। ওর পয়সা কুড়াতে ব্যস্ত হলে তোমরা, অবশ্যই মাথা নুইয়ে রাখতে হয়েছে। মাটি থেকে কিছু তুলতে গেলে নোয়াতেই হবে। তোমরা পয়সা কুড়ানোয় ব্যস্ত, ডাকাতটা ঠিক সেই সময় এল। কিছু বুঝতে পারছ।

ঢোক গিলল রবিন। অন্ধও ডাকাতের দলের!

মানিব্যাগটা উল্টেপাল্টে দেখছে কিশোর। সুন্দর। উটপাখির চামড়ায় তৈরি। নেইম্যান-মারকাস কোম্পানির জিনিস। শহরের সব চেয়ে দামি স্টোরগুলোর একটা।

এটা তো খেয়াল করিনি, রবিন বলল। আমি শুধু দেখেছি, ভিখিরি লোকটার কোন টেলিফোন আছে কিনা। যাতে ফোন করে তার ব্যাগটা ফিরিয়ে দিতে পারি। নেই।

ব্যাগটার ভেতরে কি আছে বের করতে লাগল কিশোর। একটা ক্রেডিট কার্ড, নগদ বিশ ডলার, একটা টেমপোরারি ড্রাইভিং লাইসেন্স। অন্ধ এক ভিখিরি ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে কি করে?

মাথা ঝাঁকাল রবিন। ঠিক। অন্ধ নয় লোকটা। ভিখিরিও নয়।

ভিকটর সাইমন, লাইসেন্সে লেখা নামটা পড়ল কিশোর। একশো বিরাশি সাইপ্রেস ড্রাইভ ক্যানিয়ন। ম্যালিবু।

সুন্দর জায়গা, মুসা বলল। ওখানে থাকে। খুব ধনী ভিখিরি মনে হচ্ছে।

অন্ধের ঠিকানা না-ও হতে পারে এটা, বলল কিশোর। হয়ত সে পকেটমার, চুরি করেছে। কিংবা পথে-টথে পেয়েছে কোথাও। রবিন, টেলিফোন ডিরেক্টরিতে, ভিকটর সাইমনের নাম আছে?

খুঁজেছি। পাইনি।

উঠে দাঁড়াল কিলোর। ব্যাগটা নাড়তে নাড়তে বলল, এটার ব্যাপারে আগ্রহী হবে পুলিশ। হয়ত, এই ব্যাগ ফেলে যাওয়াটা তেমন কিছু নয়। অন্ধের তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে যাওয়াটাও কিছু মিন করে না। আর সাইপ্রেস ক্যানিয়নও এখান থেকে দূরে নয়। পুলিশকে জানানোর আগে ওখানে গিয়ে একবার খোঁজ করা দরকার, কি বল?

নিশ্চয়ই, রবিন একমত।

সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়ল তিন গোয়েন্দা। প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়ে ধরে চলল উত্তরে, ম্যালিবুর দিকে। বিখ্যাত বীচ কমিউনিটির প্রধান বাজার এলাকা পেরোল আধ ঘন্টার মধ্যেই।

সরু একটা পথ সাইপ্রেস ক্যানিয়ন ড্রাইভ, কোস্ট হাইওয়ে থেকে বেরিয়ে এঁকেবেঁকে সরে গেছে দুশো মিটার। তারপর হাইওয়ের সঙ্গে প্রায় সামান্তরালে এগিয়েছে। ওটা ধরে সাইকেল চালাতে চালাতে হাইওয়ের যানবাহনের শব্দ কানে আসছে ছেলেদের। বায়ে গাছের ফাঁকে ফাঁকে চোখে পড়ছে সমুদ্র। ডানে পাহাড়ের ঢাল নেমে গিয়ে পথ পেরিয়ে আবার উঠেছে ওপাশে। পর্বতের চূড়ার ওপরে ঝকঝকে আকাশ ঘন নীল।

এখানে কেউ থাকে বলে তো মনে হয় না, কাদাভরা পথ ধরে বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর বলল রবিন। একটা বাড়িও দেখলাম না। লাইসেন্সের ঠিকানাটাও নকল না তো?

জমাট বাঁধছে রহস্য, গোয়েন্দাপ্রধানের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসল মুসা। অন্ধের কি দরকার ড্রাইভিং লাইসেন্স? তা-ও ভিখিরি। তার পরেও আবার নকল।

হঠাৎ ঝুপ করে যেন নিচে পড়ে গেছে পথটা। জায়গাটাকে দেখে মনে হয় পাহাড়কে আঙুল দিয়ে টিপে ওখানটায় বসিয়ে দিয়েছে কোন মহাদানব। সরু একটা নহর বইছে ওখানে। খাদের মত জায়গাটার ওপাশ থেকে আবার উঠে গেছে পথ। ওখানে উঠে থামল ছেলেরা। সামনে একটা গিরিখাত। শুকনো মৌসুমে। বোধহয় শুকনোই থাকে, কিন্তু এখন বাদামী ঘোলাটে পানির তীব্র স্রোত বইছে। পথের বাঁয়ে গিরিখাতের একেবারে ধার ঘেঁষে পুরানো একটা গোলাবাড়ি জাতীয় বাড়ি, দোতলায় বড় বড় জানালা। ছাঁইচে লাগানো একসারির টিউব লাইট। এক প্রান্তে বড় করে সাইনবোর্ড লেখাঃ নুমেরি ইন।

নুমেরির সরাইখানা, বাংলায় বিড়বিড় করল কিশোর।

রেস্টুরেন্ট মনে হচ্ছে? রবিন বলল।

পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে লাইসেন্সে লেখা ঠিকানাটা দেখল আবার কিশোর। একশো বিরাশি নম্বর। হ্যাঁ, ঠিকই আছে। ওই যে, নতুন মেইলবক্সটার নম্বর লেখা রয়েছে।

পেছনে গাড়ির শব্দ শোনা গেল। নিচু জায়গায় জমে থাকা পানি ছিটিয়ে এল একটা লাল স্পোর্টস কার? গাড়ির চালক হালকা পাতলা, ধূসর চুল, বিষণ্ণ চেহারা, ছেলেদেরকে যেন চোখেই পড়ল না। মুমেরিজ ইন-এর কঁচা চত্বরে কাদা জমে আছে। সেখানে গিয়ে থামল গাড়ি। নেমে একটা লাঠি বের করল চালক। তাতে ভর দিয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে উঠল বাড়ির সিঁড়িতে। প্রায় ভাঙা একটা স্ক্রীন ডোর টান দিয়ে খুলে চলে গেল ওপাশে, পেছনে বন্ধ হয়ে গেল পাল্লা।

খোঁড়া! ফিসফিসিয়ে বলল মুসা। কাল রাতে খোঁড়াতে দেখেছ না লোকটাকে?

অ্যাক্সিডেন্টের পর। গাড়ির ধাক্কায় পায়ে আঘাত লেগেছিল হয়ত। এই লোকটা কি ওই লোকটার মত? কিশোর জিজ্ঞেস করল। দেখতে?

শ্রাগ করল রবিন। সাইজটাইজ তো একই রকম। বয়েসও এক। একজনের সঙ্গে আরেকজনের এরকম মিল থাকতেই পারে।

বেশ। আমি যাচ্ছি।

গিয়ে কি করবে? মুসা বলল। হ্যামবার্গার কিনবে?

পাওয়া গেলে। কিংবা ঠিকানা জিজ্ঞেস করব। আসলে জানার চেষ্টা করব লোকটা কে? রবিন, লুকিয়ে পড়। তোমাকে চিনে ফেলতে পারে। গণ্ডগোল করতে পারে।

আমিও থাকি, মুসা বলল। গণ্ডগোল করে যারা, তাদের পছন্দ করি না। আমি।

ভয় পাও? হাসল রবিন।

না। বুড়ো হয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু আমার কাম্য।

বাহ্, ভাল কথা শিখেছ আজকাল, কিশোরও হাসল। রাস্তার ধারে দুই বন্ধুকে রেখে সাইকেল ঠেলতে ঠেলতে চলে এল চত্বরে। দেয়ালে ওটা ঠেস দিয়ে রেখে সিঁড়ি বেয়ে উঠে এল বারান্দায়। ছোট বারান্দা পেরিয়ে এসে দাঁড়াল স্ক্রীন ডোরের সামনে। হাতল ধরে টানতেই খুলে গেল পাল্লা।

ভেতরে আবছা অন্ধকার। পালিশ করা শক্ত কাঠের মেঝে, গাঢ় রঙের কাঠের প্যানেলিং। নাক বরাবর সামনে চওড়া দরজার ওপাশে বিশাল একটা ঘর, শূন্য। ওটার সামনের দেয়াল পুরোটাই জানালা। বাইরের গাছপালা, রোদে আলোকিত সাগর, সব চোখে পড়ে। কিশোর অনুমান করল, একসময় ওটা রেস্টুরেন্টের মেইন ডাইনিং রুম ছিল। বোঝা যায়, রেস্টুরেন্ট আর নয় এখন বাড়িটা।

প্রশস্ত একটা প্যাসেজওয়েতে দাঁড়িয়ে আছে সে, যেটাকে বড় ঘরটার লবি বলা চলে। লবির প্রান্তে ছড়ানো একটা জায়গায় অবহেলায় পড়ে রয়েছে কফি বানানোর সরঞ্জাম, কাঠের কাউন্টার, টুল, বুদ, ধুলোয় ঢাকা। কফি শপ ছিল ওটা এককালে। ডানের দেয়ালে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েকটা দরজা। নানারকম বাক্স স্তূপ হয়ে আছে কফি শপ আর লবিতে। বড় ঘরটার কাঠের মেঝেতে রয়েছে আরও কিছু বাক্স। একটা বাক্স খোলা।

ধীরে ধীরে এগোল কিশোর। ডাক দিতে যাবে এই সময় কানে এল ক্রেডল থেকে রিসিভার ওঠানোর শব্দ। স্থির দাঁড়িয়ে কান পাতল। বড় ঘরটায় কেউ রয়েছে, দেখতে পাচ্ছে না সে, টেলিফোন করছে।

কথা শোনা গেল, ভিকটর বলছি।

এক মুহূর্ত নীরবতার পর আবার কথা, হ্যাঁ, জানি, দামি। দাম বেশি তো হবেই, এটা একটা কথা হল নাকি। খরচ করতে রাজি আছি আমি। ঠিক এই সময় কিশোরের পিঠে শক্ত কিছু চেপে ধরা হল।

স্বর্গে যাওয়ার ইচ্ছে না থাকলে নড়ো না, পেছন থেকে ভাঙা ইংরেজিতে বলল কেউ। দুটুকরো করে ফেলব।

<

Super User