টেলিফোনে কথা বলছেন রবিনের আম্মা মিসেস মিলফোর্ড। কিশোরের চাচীর সঙ্গে। এবারকার বড়দিনে বড় করে একটা পার্টি দিতে চান কয়েক জন বান্ধবী মিলে।
হ্যাঁ হ্যাঁ, শখানেক মাংসের বড়া হলেই
চলবে, মেরিচাচীকে বললেন মিসেস মিলফোর্ড।মুসার আম্মাকে বলেছি অ্যাপল পাই আর কেক আনতে। মুরগী-টুরগী আর বাকি যা যা দরকার, আমি ব্যবস্থা করব।
ফোনে কথা বলতে বলতে অবচেতন ভোবই তার আঙুলগুলো খেলা করছে। বসার ঘরের কোণে বসানো ক্রিস্টমাস ট্রীর একটা ডেকোরেশন নিয়ে।
রবিন তো বলছে, গায়ের সব লোককে দাওয়াত করতে।
বিরাট ডেস্কটার ওপাশে বসে থাকা ছেলের দিকে তাকিয়ে স্নেহের হাসি হাসলেন তিনি। কিন্তু সেটা কি আর সম্ভব? যাই হোক, যত বেশি সম্ভব মানুষকে দাওয়াত করব। চেনাজানা কাউকে বাদ দেব না। ঠিক আছে, রাখি এখন। মুসার আম্মার সঙ্গে কথা বলতে হবে।
লাইন কেটে দিয়ে মুসাদের নম্বরে ডায়াল করলেন তিনি। কে, মিসেস আমান? …
লম্বা নিঃশ্বাস ফেলল রবিন। বসে আছে বাইরে বেরোনোর অপেক্ষায়। কিন্তু সেই যে তখন থেকে বলেই চলেছেন মা, চলেছেনই। থামাথামি আর নেই।
তারপর রবিনের মতে অনন্তকাল পার করে দিয়ে রিসিভার রেখে যেই সরে আসতে যাবেন, ওর দুর্ভাগ্য-আবার বাজল টেলিফোন। ছো মেরে তুলে নিলেন তিনি। কে? ও, মিসেস ডানকান হ্যাঁ হ্যাঁ, দিচ্ছি তো পার্টি..
আবার চলল কথা। রবিন অপেক্ষা করছে বাজারে যাওয়ার জন্যে। পার্টির জন্যে প্রচুর জিনিসপত্র কিনতে হবে। লম্বা লিস্ট করেছেন মা। টাকাও দিয়ে দিয়েছেন। টেবিলে পড়ে আছে ওগুলো। তালিকায় কিছু বাদ পড়ল কিনা শেষ মুহূর্তে আরেকবার চেক করতে হবে। মা না বললে আর বেরোতে পারছে না রবিন।
মিসেস ডানকানের সঙ্গে কথা বলা শেষ করে আসার জন্যে পা বাড়িয়েছেন।এই সময় আবার বাজল টেলিফোন। রিসিভার কানে ঠেকিয়ে হাতের ইশারায় রবিনকে অপেক্ষা করতে বললেন তিনি।
আর কোন কাজ না পেয়ে বিরক্ত হয়ে টেবিলে রাখা একটা কয়েন তুলে নিয়ে দাঁড় করিয়ে ঘোরানো শুরু করল রবিন। কতটা বেশি সময় ধরে ঘোরাতে পারে সেই চেষ্টা। অবসরপ্রাপ্ত বুড়ো-বুড়ি যারা দাওয়াতে আসবেন, তাদের কাকে কি উপহার দেয়া যায়, মা এখন সেই আলোচনা করছেন ফোনে।
আবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে ওজন মাপার ছোট যন্ত্রটার দিকে নজর দিল রবিন।
টেবিলের একপাশে রাখা আছে ওটা। বাবার জিনিস। পোস্ট করার আগে চিঠিপত্র কিংবা পার্সেল মেপে দেখে নেন ওজন কত। সময় কাটানোর জন্যে প্রথমে একটা পেন্সিল মাপল রবিন, অ্যাঢেসিভ টেপ মাপল, তারপর একের পর এক কয়েনের ওজন দেখতে শুরু করল বাজারে নেয়ার জন্যে যেগুলো দিয়েছেন তাকে মা ৷
সব ধরনের মুদ্ৰাই রয়েছে, দোকানদারকে ভাঙতি দেয়ার সুবিধের জন্যে।
পাঁচ, দশ, বিশ, পঞ্চাশ পেন্স-একেকটার ওজন একেক রকম। মাপতে মাপতে হঠাৎ থেমে গিয়ে স্কেলের দিকে তাকিয়ে রইল ভুরু কুঁচকে। দুটো পঞ্চাশ পেন্সের মুদ্রা মাপতে গিয়ে তফাতটা লক্ষ্য করেছে।
ঘটনাটা কি! আনমনে বিড়বিড় করল সে। এটার ওজন বাকিগুলোর চেয়ে কম কেন?
নিশ্চিত হবার জন্যে পঞ্চাশ পেন্সের অন্য মুদ্রাটা আবার মেপে দেখল সে। কোন সন্দেহ নেই। দুটোর ওজন দুই রকম ৷ প্রথমটার চেয়ে দ্বিতীয়টা চার গ্রাম কম। এ ছাড়া আর কোন পার্থক্য নেই। দুটোই অবিকল এক রকম দেখতে। একই রকম নতুন চকচকে।
বিস্মিত ভাবটা প্রকাশ পেতে দিল না মুখে। মার দিকে ফিরে তাকাল। আশা করল, যেখানে দাড়িয়ে আছেন, সেখান থেকে তার ছোট্ট এই পরীক্ষাটি নজরে পড়বে না তার। মিসেস ডানকানের সঙ্গে পার্টি নিয়ে আলোচনায় অতিশয় মশগুল।
তার দৃঢ় বিশ্বাস, অদ্ভুত কিছু রয়েছে মুদ্রা দুটোর মধ্যে। কোন রহস্য।
<